মুগ্ধতায় মুগ্ধ পর্ব-১৮

0
653

#মুগ্ধতায়_মুগ্ধ♥
#Labiba_Islam_Roja
#Part_18
.
🍁

ব্যালকোনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে মুগ্ধতা।আজ সারাদিন ধরে আকাশে সূর্যের দেখা মিলে নি।শুধুই মেঘের আনাগোনা।বার কয়েক বড় বড় ফোঁটায় অঝরে ঝরেছে বৃষ্টি।এখন বৃষ্টি নেই।তবে বাতাশ বইছো ভারী।বাতাশ জানান দিচ্ছে আজ আবারও বৃষ্টি হবে।মুগ্ধতা তাকিয়ে থাকতে থাকতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা যেন মন ছুঁয়ে যাচ্ছে তার।আজ-কাল ও বাড়ির কথা বড্ড মনে পড়ে।ছুটে যেতে ইচ্ছে করে কিন্তু যাওয়া আর হয়ে উঠে না।বা যেতে চাইলেও যাওয়া যায় না।মাঝেমধ্যে ফোনে কথা হয়।মুগ্ধ ওকে একটা নতুন ফোন কিনে দিয়েছে।এখন এটা দিয়েই সকলের সাথে কথা বলে।

.
বিশ্বাস অবিশ্বাস এর দুনিয়ায় সবার কাছে ঠকতে ঠকতে একদম কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে।চাচা চাচীর কাছে জীবনে সব থেকে বাজে ভাবে ঠকে গেছিলো।তারপর আশ্রয় পেলো আফিফেদের বাসায়।সেখানে আদনান নামক ব্যক্তির কাছে চুড়ান্ত পর্যায়ে ঠকে গিয়ে মানুষের উপর থেকে বিশ্বাস নামক জিনিসটাই উঠে গেছে।আর কাউকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না।এখন মুগ্ধর সাথে জীবনটা জুড়ে গেছে।মুগ্ধ এখন পর্যন্ত ওর দেখা ভালো আর কেয়ারিং হাসবেন্ড।আদনানও তো এভাবে কেয়ার করতো তাঁর।।কিন্তু একদিন মুখোশ সরে গিয়েছিল।আচ্ছা মুগ্ধ ও কি এরকম কিছু করবে।আদনানের মতো একদিন সুযোগ বুঝে ঠকাবে না তো।এইবার ঠকলে আর সহ্য করতে পারবে না মুগ্ধতা।হয়তো জীবন কে বিদায় জানিয়ে দিতে হবে তাঁর।মুগ্ধ কে দেখে ঠকানোর মানুষ মনে হয় না।এখন পর্যন্ত দু হাত ঢেলে দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু কিঋু চায় নি।এমনকি কোনোদিন নিজের অধিকার ও দাবি করে নি।হয়তো আমার সময় চাই এটা বুঝতে পেরেছে ও।আজ মুগ্ধ অফিস গেছে।কি একটা কাজে যেন ওর প্রয়োজন পড়েছে।আজকাল মুগ্ধ বাসায় না থাকলে কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে।যেন সবার মাঝে থেকেও একা ফিল করি আমি।অফিসে বসে এ পর্যন্ত ছয়বার কল করেছে আমায়।খেয়েছি কিনা কি করছি না করছি।বরাবরই দুই তিন মিনিটের উপরে কথা বলে নি।আসলে কি কথা বলবো যেমন আমি খুঁজে পাইনা তেমনি হয়তো উনিও।হঠাৎ মোহনার ডাকে পিছন ফিরে তাকালাম আমি……

~~~বউমণি এখানে একা একা দাঁড়িয়ে কি করছো….?

______মুচকি হেসে বললাম…..কিছু না!বৃষ্টি দেখছিলাম।

~~~এই বউমণি আজ ভাইয়া আর মা কেউ বাসায় নাই।চলো না বৃষ্টিতে ভিজি।

_____সে ভিজাই যায় কিন্তু উনারা থাকলেই বা কি সমস্যা…?

~~~আহা!আম্মু জীবনেও বৃষ্টিতে ভিজতে দেবে না।ছোটবেলার একবার ভিজে আমি আর ভাইয়া অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম সেই থেকে আর ভিজতে দেয় নি।আর ভাইয়া ওই দিনের পর আর কখনও ভিজে নি।এখন সে জীবনেও বৃষ্টিতে ভিজে না আর কাউকে ভিজতেও দেখতে পারে না।

______তাহলে থাক!যদি আবার অসুস্থ হয়ে পড়ো।

~~~ধুর!কিচ্ছু হবে।এখন ওরা বাসায় না থাকলে লুকিয়ে ভিজি প্রবলেম হয় না।তবে আমি বেশিক্ষণ ভিজবো না ১৫-২০ মিনিট ওকে।তাড়াতাড়ি চলো নইলে আবার ওরা ফিরে আসবে।

🥀
মুগ্ধ বাসায় এসেছে একটু আগে।এসে মুগ্ধতা কে রুমে দেখতে পেলো না।মোহনার রুমে খোঁজ করে মোহনাকেও পেলো না।রান্নাঘরে গিয়ে দেখলো ওখানেও নেই।আমিনাকে জিজ্ঞেস করলে ও জানে না বললো।তাই ছাদেের উদ্দেশ্যে গেলো……!!
.
প্রায় অনেকসময় ধরে ভিজে চলেছে মুগ্ধতা আর মোহনা।দুজনেই ভিজছে আর খিলখিল করে হাসছে।আড়াল থেকে মুগ্ধতা কে দেখে চলেছে মুগ্ধ।দুহাতে বৃষ্টির ফোঁটা হাতে নিচ্ছে আর হাসছে।মুগ্ধ চোখই সরাতে পারছে না।ভিজে চিপচিপে হয়ে গেছে।একটু পরই মোহনা চলে গেলো।ও আর ভিজবে না।ওর ঠান্ডা লাগছে।মুগ্ধতা কে যেতে বলল কিন্তু ও যাবে না আরো কিছুক্ষণ ভিজবে।তাই বাধ্য হয়ে চলে গেলো।মোহনাকে আসতে দেখে আড়ালে লুকিয়ে পড়লো মুগ্ধ।
.
মুগ্ধতার দিকে নেশা ভরা চোখে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ।ওকে দেখে একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছে।খুব ইচ্ছে করছে ওকে আজ ছুঁয়ে দিতে।আস্তে আস্তে ধীর গতিতে এগিয়ে চলেছে মুগ্ধতার দিকে।মুগ্ধতা চোখ বুঝে বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা অনুভব করে চলেছে।হঠাৎ সামনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ খুলে তাকালো।মুগ্ধ কে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকে উঠলো।সাদা শার্ট পানির ছোঁয়ায় লেপ্টে গেছে তার শরীরের সাথে।এতক্ষণে ভিজে একাকার মুগ্ধ।।বৃষ্টির পানিতে কাজল লেপ্টে গেছে মুগ্ধতার।ঠোঁট জোড়া ঈষৎ কাঁপছে।এই ঠোঁট জোড়া আজ খুব টানছে মুগ্ধ কে।মুগ্ধতা কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বললো……

____আপনি এখানে…..?

মুগ্ধ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না।কিছু বুঝে উঠার আগেই আচমকা মুগ্ধতার ঠোঁট জোড়া নিজের দখলে নিয়ে নিলো।মুগ্ধতা পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে।কিছু বুঝতে পারছে না।নিজেকে ছাড়াতে গিয়েও ব্যর্থ।কিছুক্ষণ পর ওকে ছেড়ে দিলো মুগ্ধ।মুগ্ধতা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।চোখ দিয়ে পানি ঝরছে কিন্তু বৃষ্টির কারণে বোঝা যাচ্ছে না।বৃষ্টির ফোঁটাগুলোর সাথে চোখের পানিগুলো বিলিন হয়ে যাচ্ছে।কিছুক্ষণ মুগ্ধতার দিকে তাকিয়ে দৌড়ে নিচে নেমে এলো মুগ্ধ।এখন বুঝতে পারছে সে কি ব্লান্ডার করেছে।ছিঃ এখন মুগ্ধতা কি ভাববে।ওকে দেখে এতটাই দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম যে কি করছি না করছি বুঝতেই পারিনি।যদি নিজের মধ্যে থাকতাম তাহলে এমনটা হতো না।রুমে এসে টাওয়াল নিয়ে আক্ষেপ করতে করতে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো মুগ্ধ।

এখনও বৃষ্টিতে ভিজে চলেছে মুগ্ধতা।মুগ্ধ চলে গেছে অনেক্ষণ হবে কিন্তু মুগ্ধতা এখনও নামে নি।ছাঁদের এক কোণে হাঁটু ভাঁজ করে বসে কেঁদে চলেছে।বৃষ্টির সাথে ভাসিয়ে দিচ্ছে চোখের অশ্রুকণা।মুগ্ধ এমন কেন করলো।তাঁর জীবনটাই বা কেন এমনভাবে মোড় নিলো।আর সবার মতো স্বাভাবিক হতে পারতো মুগ্ধতার জীবন কিন্তু না হয়নি।কি দোষ করেছিলো সে যে একে একে সবাই ছেড়ে চলে গেলো।কেন এমন হলো!

প্রায় আধঘন্টা পর রুমে ঢুকলো মুগ্ধতা।বিছানায় ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে মুগ্ধ।মুগ্ধতার লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। কীভাবে মুগ্ধর সামনে যাবে সেই চিন্তায় অস্থির।এদিকে মুগ্ধও পরেছে সেইম অবস্থায় কি করে মুখ দেখাবে মুগ্ধতা কে।মুগ্ধতার উপস্থিতি টের পেয়ে বললো……

~~~বাইরে দাঁড়িয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি এসে চেঞ্জ করে নাও নইলে ঠান্ডা লেগে যাবে।

মুগ্ধর কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালো মুগ্ধতা।উনি জানলেন কি করে আমি এখানে।কোনো কথা না বলে চুপচাপ ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো মুগ্ধতা।
.
.
ড্রয়িংরুমে গল্পের আসর জমেছে।গরম গরম খিচুরি খাচ্ছে সবাই।ইতিমধ্যে মুগ্ধর মা ফিরে এসেছেন বাসায়।রাতুল আর হৃদয়ও এসেছে।মুগ্ধদের ফাইনাল এক্সামের আর হাতে গোনা ক’দিন বাকি মাএ।তাই এর আগে কিছু মজা মাস্তি করতেই মূলত এখানে আসা।কারণ এক্সাম টাইমে পুরো মনযোগ থাকবে বইয়ের পাতায়।সকলের মধ্যে হঠাৎ হাঁচি দিয়ে উঠলো মুগ্ধ।একের পর হাঁচি দিয়েই চলেছে।ওকে হাঁচি দিতে দেখে সকলেই অবাক চোখে তাকালো মুগ্ধর দিকে।মুগ্ধ কখনও বৃষ্টিতে ভিজে না এটা প্রায় সবাই জানে কারণ বৃষ্টির পানি গায়ে লাগলেই জ্বর আসে ওর।তাহলে!নিজের কৌতুহল দমাতে না পেরে মোহনা বলেই ফেললো……

______ভাইয়া তুমি কি বৃষ্টিতে ভিজেছো নাকি….?

কথাটা শুনেই চুপসে গেলো মুগ্ধতা।এখন উনি কি বলবেন।আবারও মুগ্ধর জন্য সবার সামনে লজ্জায় পরতে হবে ওকে ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে রান্নাঘরে চলে গেলো।

~~~আরে নাহ!ওই যে বাসায় ঢুকার সময় গেইটের কাছে গাড়ী রেখে দৌড়ে এসেছিলাম না তাই হয়তো ঠান্ডা লেগে গেছে।
.
.
রাত বারোটা হঠাৎ ঘুমের মধ্যে গরম কিছু অনুভব হওয়ায় চোখ খুলে তাকালো মুগ্ধতা।গরমের চোটে ঘেমে একাকার।যেখানে এসি চলছে সেখানে তো এত গরম লাগার কথা না।তার উপর আজকের ওয়েদার ও বেশ ঠান্ডা তাহলে। হঠাৎ বুঝতে পারলো মুগ্ধর শরীর মাএাতিরিক্ত গরম।সেই গরম বুকে ওকে জড়িয়ে শুয়ে আছে মুগ্ধ।আর মাঝে মাঝে কিসব বলে চলছে।সেগুলো বুঝার অনেক চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুই বোধগম্য হলো না তাঁর।মুগ্ধ কে ছাড়াতে গেলে আরও বেশি চেপে ধরছে মুগ্ধ।কপালে হাত দিয়ে টেম্পারেচার চেক করলো।ওমা!এ তো অনেক জ্বর।তাই জন্যই আবোল তাবোল বকছেন উনি।অনেক চেষ্টার পর মুগ্ধ কে ছাড়িয়ে উঠে বসতে সক্ষম হলো মুগ্ধতা।হালকাভাবে ডাকতে লাগলো…..

______এই যে শুনুন!শুনুন না।আপনার কি জ্বর এসেছে নাকি…?তাহলে আমাকে বলেন নি কেন….?

মুগ্ধতার ডাকেও কোনো ভাবান্তর হলো না মুগ্ধর।এখন কি করবে বুঝতে পারছে না।এত রাতে মা কে ডেকে বিব্রত করার কি প্রয়োজন আছে।নাহ!থাক দেখি ঘরে কোথাও ঔষধ পাই কিনা।পুরো ঘর খুঁজেও কোনো ঔষধ পেলো না মুগ্ধতা।এখন নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে। খুব কান্না পাচ্ছে ওর।লাফিয়ে লাফিয়ে জ্বর বেড়েই চলেছে মুগ্ধর।এখন খুব ভয়ও করছে মনে।কারণ জ্বরের ঘোরে কি সব আওরাচ্ছে।উপায় না পেয়ে ছুট লাগালো মোহনার ঘরে।মা কে ডেকে দুশ্চিন্তায় ফেলতে চাইছে না।আবার কি ভেবে যেন রান্নাঘরের দিকে গেলো।একটা বোল নিয়ে ফিরে এলো।রুমে এসে মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে মুগ্ধর মাথায়।মুগ্ধ জ্বরের ঘোরে মিটিমিটি হাসছে দেখে আরও ভয় লাগছে তাঁর।কিছুক্ষণ ভেবে আলমারির দিকে নজর পড়লো।ওখানে যাবতীয় মেডিসিন রাখে মুগ্ধ।তাই উঠে ওখানে খুঁজতে লাগলো।এতক্ষণে মুখে হাসি ফুটলো শেষ পর্যন্ত জ্বরের মেডিসিন পাওয়া গেলো।মুগ্ধ কে মেডিসিন খাইয়ে দিয়ে মাথার কাছে বসে জলপট্টি দিতে ব্যস্ত।হঠাৎ মুগ্ধর মুখের উপর নজর পরলো ওর।আজ প্রথম এতটা কাছ থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে মুগ্ধ কে।ছেলেটার গায়ের রং উজ্জ্বল ফর্সা।।মটুও নয় আবার পাতলুও নয় মাঝারি ধরণের বডি।মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি।সবকিছু মিলিয়ে বেশ মায়াবী একটা চেহারার অধিকারী।যে মায়ায় যে কেউ আকৃষ্ট হবে অনায়াসে।অথচ মুগ্ধতা! সে কি পেরেছে সেই মায়ায় নিজেকে জড়াতে।জানে না মুগ্ধতা!কিচ্ছু জানে না!
.
.
#চলবে……