মুগ্ধতায় মুগ্ধ পর্ব-১৯

0
637

#মুগ্ধতায়_মুগ্ধ❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_19
.
🍁
রাত তিনটা হঠাৎ কারো গেংগানোর আওয়াজ শুনে ধড়ফড়িয়ে উঠলো মুগ্ধতা।মুগ্ধ কে দেখতে দেখতে কখন যে ওর বুকের উপর ঘুমিয়ে পড়েছিলো টেরই পায় নি ও।মুগ্ধ ঘুমের ঘোরে গেংগাচ্ছে।মাথায় হাত দিয়ে শকড।আবারও জ্বর এসেছে জ্বরে মাথা পুড়ে যাচ্ছে।তখন তো একটু কমে ছিলে তাহলে আবার কেন এভাবে জ্বর বাড়ছে।এবার মুগ্ধর উপর খুব রাগ হচ্ছে ওর।কে বলেছিলো উনাকে বৃষ্টিতে ভিজতে।যেখানে নিজে জানেন বৃষ্টির ফোঁটা সহ্য হয় না উনার সেখানে উনি কততা সময় নিয়ে ভিজলেন।এরকম ইরেসপন্সিবল মানুষ জীবনেও দেখেনি মুগ্ধতা।এখন কে কষ্ট পাচ্ছে নিজেই তো।তাহলে এভাবে নিজের ক্ষতি করার খুব কি প্রয়োজন ছিলো!ছিলো না তো।এই অবস্থায় কি করবে বুঝতে পারছে না মুগ্ধতা।মাথায় আবারও জলপট্টি দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।কাউকে ডেকেও লাভ নেই এখন এত রাতের বেলা ডাক্তারই বা কোথায় পাবে।তার চেয়ে থাক দেখি কিছু হয় কি না।কিছুক্ষণ জলপট্টি দিয়ে মুগ্ধ কে ডাকতে লাগলো মুগ্ধতা।
.

~~~~শুনুন!একটু উঠুন না প্লিজ!আপনার শরীর মুছিয়ে দিই তাতে যদি জ্বর টা একটু কমে।

মুগ্ধতার কথা যেন কানেই গেলো না ওর।যেভাবে ছিলো ঠিক সেভাবেই শুয়ে আছে।মাথায় হাত দিতেই ওর হাত চেপে ধরলো মুগ্ধ।ওর গরম হাতের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলো মুগ্ধতা।অজানা এক শিহরণ বইতে লাগলো মনে।।ওর হাত ধরেই অনেক কিছু বলতে লাগলো।মুগ্ধতা কথাগুলো বুঝার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে কিন্তু বুঝতে অক্ষম।তাই মুগ্ধর মুখ বরাবর কান পাতলো মুগ্ধতা আর কথাগুলো শুনে নিজেকে অপরাধী ভাবতে লাগলো……

______তুমি আমাকে কেন ভালোবাসতে পারো না মুগ্ধতা।জানো আমার প্রতি তোমার এই অবহেলাগুলো আর সহ্য করতে পারছি না।খুব কষ্ট হয়।তবুও ভাবি একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।আমাকে মেনে নিবে তুমি।তোমার ভালোবাসা দিয়ে আমার মনে লুকিয়ে থাকা সব কষ্ট দূর করে দিবে কিন্তু না আজও তোমার মনের কোণে এতটুকু জায়গা দখল করতে পারলাম না।হয়তো নিজের অজান্তেই তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।বিশ্বাস করো যদি কখনও বুঝতে পারতাম আমাকে নিয়ে কখনও খুশি হতে পারবে না তুমি তাহলে তোমাকে জড়াতাম না নিজের সাথে।জড়াতাম না কিছুতেই না!

কথাগুলো শুনে চোখ থেকে টুপটাপ পানি পরতে লাগলো মুগ্ধতার।এত কষ্ট বুকে নিয়ে ঘুরছেন কই উনাকে দেখলে তো বুঝাই যায় না। কি নিখুঁত অভিনয়।আহা!এই অদ্ভুত এক জীবনে কাউকেই খুশি করতে পারলাম না।মুগ্ধ কেও না।

কিছুক্ষণ পর মুগ্ধ কে তুলে বসাতে সক্ষম হলো মুগ্ধতা।টেম্পারেচার অনেকটাই কমে গেছে।এখন ঘুমে নেই মুগ্ধ।জেগে গেছে খানিক্ষন আগেই।চোখ তুলে তাকাতে ইচ্ছে করছে না।তবুও মুগ্ধতা কে এক নজর দেখার তীব্র ইচ্ছা নিয়ে তাকালো।কারণ ও দেখতে চায় ওর অসুস্থতায় কতটা উদ্বিগ্ন মেয়েটি ।চোখ পিটপিট করে তাকালো মুগ্ধ।মুগ্ধতা ওর পায়ের কাছে বসে একটা টাওয়াল ভিজাচ্ছে। মেয়েটার চোখ মুখ কেমন যেন হয়ে গেছে।চোখ গুলো কেমন লাল আর ফোলা ফোলা।আচ্ছা মুগ্ধতা কি কেঁদেছে।কিন্তু কেন কেঁদেছে।আমার জন্য!আচ্ছা আমার জন্য কি কান্না পাবে ওর।নাহ!হয়তো ভুল ধারণা আমার।।নয়তো সারারাত ধরে জ্বালিয়ে মারছি।তাই হয়তো স্ট্রেস টা নিতে পারে নি।এই জন্যই এমন দেখাচ্ছে।

.
মুগ্ধর শরীর মুছিয়ে দেবে মুগ্ধতা।কিন্তু কীভাবে দেবে সেটা ভেবে চলেছে।খুব তো বড় মুখ করে মুগ্ধকে তুলে বসালো কিন্তু এখন কি করে কি করবে ভেবেই নখ কামড়াতে লাগলো।মুগ্ধ চুপটি করে ওর কান্ড দেখে চলেছে আর মুখ চেপে হাসছে।অবশেষে মুগ্ধর কাছাকাছি দাঁড়ালো মুগ্ধতা।যখনই মুগ্ধর টি-শার্টে হাত দিতে যাবে তখনই বললো……

~~~লাগবে না!আমি এখন ঠিক আছি।রাত প্রায় শেষের দিকে এবার শুয়ে পরো।এমনিতেই সারারাত তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি আর চাই না।

মুগ্ধর কথায় থমকে দাঁড়ালো মুগ্ধতা।এতক্ষণ এটা নিয়ে অস্বস্তিতে ছিলো এবার ঠিক আছে।এখন মুগ্ধ অনেকটাই স্বাভাবিক।এটা ওর কথা বার্তা শুনেই বুঝা যাচ্ছে।তবুও সিওর হওয়ার জন্য মাথায় হাত রাখলো।হুম এখন খুব বেশি জ্বর নেই।তবুও বললো…..

_____ঠিক থাকলেও শরীর মুছে দিলে আরেকটু বেটার লাগবে।আর হ্যাঁ আমাকে কষ্ট দেওয়ার কিছু নেই।আপনি বরং শুয়ে পড়ুন আমি আপনার মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছি।

মুগ্ধতার কথা শুনে খুশিতে জ্বলজ্বল করে উঠলো মুগ্ধর চোখ জোড়া।ওকে তো এভাবেই দেখতে চেয়েছিলো।কিন্তু তার প্রেয়সীকে আর কষ্ট দিতে চায় না সে।তাই বললো……

~~~নাহ!লাগবে না।এখন মাথায়ও তেমন যন্ত্রণা নেই।আমি তো সারারাত ঘুমেই ছিলাম এবার তুমি ঘুমাও।তোমার রেস্টের প্রয়োজন।

_____একদম কথা বলবেন না।আমার রেস্টের প্রয়োজন কিনা সেটা খুব ভালোভাবেই জানি আমি।এখন বকর বকর না করে চুপচাপ শুয়ে পরুন।নইলে……

~~~~কি করবে তুমি…?

_____আচ্ছা আপনি যখন জানেন বৃষ্টিতে আপনার সমস্যা তাহলে ছাদে ভিজতে গিয়েছিলেন কেন…?ভাববেন না আবার আমি জেগে আছি বলে রেগে এসব বলছি।আমি এই কারণে বলছি যে,এই যে সারারাত জ্বরে ভুগলেন কষ্ট পেলেন সেটা কি পাওয়া খুব দরকার ছিলো!ছিলো না তো।তাহলে এভাবে ইনভাইট দিয়ে অসুখ কে ডেকে আনার কোনো মানে হয়।

মুগ্ধতা কে ওকে নিয়ে টেনশন করতে দেখে বেশ আনন্দিত হলো মুগ্ধ।যাক!মেয়েটা একটু হলেও ওর কথা ভাবে।নইলে এভাবে রিয়াক্ট করতো না।মুগ্ধ খুব ভালোভাবেই জানে ওর জ্বর আসলে যে কেউ ভয় পেয়ে যায়।সেখানে মুগ্ধতা তো বাচ্চা একটা মেয়ে।তাও
.
মুগ্ধর এক্সাম শুরু হবে নেক্সট সপ্তাহ থেকে।আফিফের বাবা ওদের ইনভাইট করেছেন তাদের বাসা থেকে ঘুরে আসার জন্য।মুগ্ধ প্রথমে রাজি না হলেও মুগ্ধতার জন্য রাজি হয়ে গেলো।কারণ অনেকদিন হয়ে গেছে ও বাসায় যাওয়া হয় না তাঁর।এবার যদি ওর এক্সাম স্টার্ট হয়ে যায় তাহলে কোথাও যেতে পারবে না।তাই আজ সকালে ওকে নিয়ে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।মুগ্ধতা আজ অনেক খুশী।অনেকদিন পর নিজের কাছের মানুষ গুলোকে দেখতে পারবে।মুগ্ধতার মুখের প্রাণবন্ত হাসি দেখে ভালো লাগছে ওর।মেয়েটা খুশি থাকলে আত্মা জুড়িয়ে যায়।মুগ্ধ বিছানায় বসে ফোন ঘাঁটছিলো তখন মুগ্ধতা কে ওয়াশরুম থেকে বেরুতে দেখে তাকালো।মুগ্ধতা খয়েরি কালারের শাড়ি পরেছে।কিন্তু মুগ্ধর মনে হচ্ছে এই শাড়ি তে একদম মানাচ্ছে না ওকে।তাই নাক সিটকে বললো…….

~~~~এ্যাহ এই তোমার চয়েজ…?এটা পাল্টে এসো।একদম ভালো লাগছে না।
.
মুগ্ধর কথায় কপাল কুঁচকে তাকালো মুগ্ধতা।তাঁর চোখে এটাই বেস্ট।সকলেই বলে এই কালারটায় সবথেকে বেশি ভালো লাগে ওকে।আর আজ কিনা মুগ্ধ বলছে খারাপ লাগছে।তাও এভাবে তাই মুগ্ধ কে উদ্দেশ্য করে বললো…….

_____আমি ড্যাম সিওর আপনার চোখে প্রবলেম আছে।নয়তো কি করে বলছেন এটাতে ভালো লাগছে না যেখানে সবাই বলে এই কালারটায় আমাকে পরীর মতো দেখায মুখ ভেংচি কেটে সেখানে আপনি ধুর….!!

মুগ্ধতার কথার বিপরীতে খিলখিল করে হেসে উঠলো মুগ্ধ।আর বলতে লাগলো…..

~~~~যারা বলে তারা আমার মতো স্পষ্টভাষী নয়।ডিরেক্টলি বললে মন খারাপ করবে তাই উকৃটো টা বলে।মানে! এটাতে তোমাকে পরী না পেত্নী লাগছে পেত্নী।

মুগ্ধর এমন কমপ্লিমেন্ট শুনে বেজায় মন খারাপ হয়ে গেলো তাঁর।আয়নার সামনে ভালোভাবে একবার নিজেকে দেখে নিলো।কই ঠিকঠাক ই তো লাগছে কিন্তু উনি যে বললেন।মুখ গোমড়া করে গাল ফুলিয়ে করুন সুরে বললো…..

____সত্যি পেত্নী লাগছে…?নাকি আপনি এমনি বলছেন….?

~~~~এমনি বলতে যাবো কেন…?আরে বাবা হ্যাঁ রে!তাই তো বলছি।এটা চেঞ্জ করে।দাঁড়াও বলে আলমারি থেকে কচু পাতা রঙের একটা শাড়ী ধরিয়ে দিলো ওর হাতে।সেটা নিয়ে মন খারাপ করে ওয়াশরুম ঢুকে গেলো মুগ্ধতা।মুগ্ধ মুখ চেপে হাসছে।কারণ কালারটায় অতিরিক্ত সুন্দর দেখাচ্ছিলো ওকে।রাস্তায় যদি এই সৌন্দর্যে কেউ বিমোহিত হয় তাই আগেই এই পথ বন্ধ করে দিলো মুগ্ধ।কারণ ওকে দেখে একমাএ মুগ্ধই মুগ্ধ হতে চায়।

.
আফিফদের বাসায় এসে সেই যে ভিতরে ঢুকেছে মুগ্ধতা আর তাঁর দেখা নাই।। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যে হতে চললো কিন্তু মুগ্ধতার দেখা পেলো না মুগ্ধ।সেই দুপুরে খাওয়ার সময় দেখেছিলো আর দেখা হয় নাই।ড্রয়িংরুমে বসে গল্পে ব্যস্ত আফিফের বাবা মা’য়ের সাথে।আফিফ এঝনও বাসায় ফিরেনি।এভাবে বসে থাকতে আর ভালো লাগছে না মুগ্ধর।বিরক্ত লাগছে,এদিকে মাথাও ধরেছে প্রচন্ড কিন্তু সেটাও মুখে প্রকাশ করতে পারছে না।হঠাৎ আফিফের বাবা মুগ্ধতা কে ডেকে পাঠালেন।কিছুক্ষণেই দৌড়ে এসে বললো……
.
~~~আঙ্কেল আমায় ডাকছো….?তোমার কিছু লাগবে নাকি…..

_____না রে মা আমার কিছু লাগবে না।তুই এতটা দায়িত্বহীন আগে তো জানতাম না।

আঙ্কেলের কথায় বেশ অবাক হলো মুগ্ধতা।কিছু কি ভুল করেছে সে।তবে কি মুগ্ধ ওর নামে নালিশ করেছে…..

~~~কেন আঙ্কেল আমি কি করেছি….?

______তুই তো জানিস!মুগ্ধর শরীর খুব একটা ভালো না।তাও তুই ওর কোনো খোঁজ নিচ্ছিস না।এখানে এভাবে বসিয়ে রেখেছিস।হঠাৎ ওর অবস্থা দেখে আমার মনে পরলো।এটা কিন্তু ঠিক নয় মা ভারী অন্যায় করছিস তুই।পাশ থেকে আন্টিও একি কথা বললেন।

আঙ্কেলের কথায় জিহ্বায় কামড় কাটলো মুগ্ধতা।সত্যিই তো ব্যাপারটা বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলো। তবে ওর মাথা থেকে যে একেবারে বেড়িয়ে গিয়েছিলো এমন নয়।এতক্ষণ ধরে অধরার সাথে গল্প করছিলো তাও মুগ্ধ কে নিয়ে।সেই কারণেই আর খোঁজ নেওয়া হয় নাই।মুগ্ধর দিকে অপরাধীর চোখে তাকিয়ে আছে মুগ্ধতা।মুগ্ধ সেদিকে তাকালোই না।যেভাবে ছিলো ঠিক সেভাবেই বসে রইলো।আমতা আমতা করে বললো……

~~~~আসলে আঙ্কেল অধরা আপুর সাথে গল্প করছিলাম।তাই আর কি!

_____ঠিক আছে!এখন ওকে নিয়ে ঘরে যাও।ওর রেস্টের প্রয়োজন।

~~~~না আঙ্কেল আমি এখানেই ঠিক আছি।মুগ্ধতা তুমি বরং অধরা আপুর সাথে গল্প করো।অনেকদিন পর দেখা অনেক কথা জমে আছে নিশ্চয়।

মুগ্ধতা বুঝতে পারলো মুগ্ধ রাগ করে কথাগুলো বলছে।সত্যি ভারী অন্যায় হয়েছে ওর। অসুস্থ একটা লোককে এভাবে রাখা উচিৎ হয় নি।করুণ চোখে তাকালো মুগ্ধর দিকে।সেদিকে হেলদোলই নেই মুগ্ধর।

এই ব্যাপারটায় বেশ কষ্ট পেয়েছে মুগ্ধ।যেখানে সবার প্রতি এত কড়া নজর সেখানে একমাএ ওর প্রতিই এতটা উদাসীন।ও অসুস্থ সেটাই ভুলে গেলো।কি করে পারলো মুগ্ধতা।
.
.
#চলবে…….