মুগ্ধতায় মুগ্ধ পর্ব-২২

0
778

#মুগ্ধতায়_মুগ্ধ❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_22
.
🍁
সকালে ঘুম থেকে উঠে মুগ্ধর জন্য কফি হাতে নিয়ে এলো মুগ্ধতা।মুগ্ধর জামা কাপড় বের করে বিছানায় দিয়ে গেছে।ওয়াশরুম থেকে এখনও বের হয়নি মুগ্ধ।সেন্টার টেবিলে কফির কাপ রেখে বিছানায় বসে মুগ্ধর জামা কাপড় নাড়াচাড়া করতে লাগলো।হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ পেয়ে মুগ্ধর দিকে তাকালো।শাওয়ার নিয়ে টাওয়াল জড়িয়ে বেড়িয়ে এলো মুগ্ধ।মুগ্ধতা কে বিছানায় দেখে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করতে লাগলো মুগ্ধ।মুগ্ধতার সেদিকে কোনো হেলদোলই নেই।তাই অস্বস্তি নিয়েই বললো……

~~~তুমি এই অসময়ে এখানে কি করছো…?

মুখ ভেংচি কেটে বললো……

_______নিজের রুমে থাকার জন্য আবার সময় অসময়ের কি আছে।আমার রুমে আমার যখন ইচ্ছে ঢুকবো যখন ইচ্ছে বের হবো।

এক নাগারে কথাগুলো বলে গেলো মুগ্ধতা।ওর কথা শুনে খানিকটা বিরক্তি প্রকাশ করলো মুগ্ধ……

~~~আজকাল বড্ড বেশি কথা বলো তুমি।আচ্ছা একটা কথার জবাবে দশটা কথা না বললে কি হয় না।

________না হয় না!যদি দশটা কথা না বলি তাহলে ঘটনাটা বুঝবেন কি করে।আমিও বলতে চাই না কিন্তু আপনাকে ভালোভাবে বুঝানোর জন্য বলতে বাধ্য হই।

~~~উফফ!এবার থামবে। তখন থেকে ফটরফটর করেই যাচ্ছ।চুপ করো তো।

______ওকে!আর ফটরফটর করবো না।ওই যে বিছানায় ইশারা করে….ওখানে আপনার জামা কাপড় রাখা আছে যান ওয়াশরুম থেকে পরে আসেন।

মুগ্ধতার কথা শুনে চোখ বড় বড় তাকালো মুগ্ধ।আজ মেয়েটার হলোটা কি!কই আগে তো কখনও এমন করে নি।তাহলে আজকে কি হলো।কৌতূহল ভরা চোখে তাকিয়ে আছে মুগ্ধতার দিকে।

~~~তোমার শরীর ঠিক আছে মুগ্ধতা।না মানে জ্বর টর আসে নি তো।

মুগ্ধর কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালো মুগ্ধতা।দু কদম এগিয়ে মুগ্ধর মুখ বরাবর দাঁড়ালো।মাথা এগিয়ে দিয়ে বললো……

______আমার কথা আপনার বিশ্বাস হবে কি না জানিনা।তাই আপনিই দেখে নিন।

মুগ্ধতার কপোলে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর নেই ওর।তাহলে এমন ভাবে কথা বলছে কেন…?আচ্ছা নেশা জাতীয় কিছু সেবন করে নি তো।ওর ভাবনার মাঝেই বলে উঠলো……

~~~~এত ভেবে লাভ নাই!না তো আমি অসুস্থ আর না তো ভুলভাল কিছু খেয়েছি।এইবার ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে আসেন।

মুগ্ধতার কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো মুগ্ধ।বাংলার পাঁচের মতো মুখ করে সাতপাঁচ না ভেবে জামা কাপড় নিয়ে চলে গেলো ওয়াশরুমে।মুগ্ধতা ওর অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে।মুখটা দেখার মতো হয়েছে উনার।
.
.
ড্রয়িংরুমে বসে ফোন ঘাঁটছে তিথি।তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো।আশেপাশে কেউ নেই।সবাই যে যার রুমে আছে।তাই বাধ্য হয়ে বিরক্তি নিয়ে উঠে দরজা খুলে দিলো।দরজা খুলে কিছুটা অবাক হলো তিথি।কারণ দরজায় দাঁড়িয়ে আছে রাতুল।তিথিকে দেখেই ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো।হয়তো এই সময়ে তিথিকে আশা করে নি।তিথি দরজা খুলে ভিতরে চলে আসলো।রাতুলও পেছন পেছন ভিতরে ঢুকলো।তখনই তিথি বললো….

______ভাইয়া তুমি বসো।আমি মুগ্ধ ভাইয়াকে ডেকে দিচ্ছি।

~~~নাহ্ থাক!ওদের ডিস্টার্ব করো না!একটু পর নিজেই আসবে।কারণ জানে আমি এইসময়ে আসবো।তার চেয়ে তুমি এখানে বসো।তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।

রাতুলের হাবভাব কিছুদিন যাবত ভালো টেকছে না তিথির।কেমন একটা করে যেন কথা বলে ছেলেটা।ওর কথাবার্তা কেমন রহস্যময় মনে হয়।কোনোকথা না বলে চুপচাপ বসে পরলো তিথি।রাতুলের কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেছে।আজ তিথিকে মনের কথাটা বলার জন্যই এই বাড়িতে আসা।কারণ এক্সামের পরপরই লন্ডন পাড়ি জমাবে ও।দুইবছর সেখানে থেকে তবেই ফিরবে।তাই যদি তিথি রাজি থাকে তাহলে ওকে বিয়ে করে সাথে নিয়ে যাবে নইলে অপেক্ষা করতে পারলে এনগেজমেন্ট করে চলে যাবে।কারণ দুইবছর পর যদি ফিরে এসে আর না পায়।সেই আশংকায় ভুগছে সে।শুকনো কয়েকটা ডুক গিলে আমতা আমতা করে বললো রাতুল…..

_______তোমাকে আমি কিছু কথা বলতে চাই তিথি।অনেকদিন ধরে বলবো বলবো বলে আর বলা হয়ে উঠে নি।কিন্তু আজ বুঝতে পারছি যেভাবেই হোক কথাগুলো তোমাকে বলতেই হবে আমায়।খুব আর্জেন্ট!

রাতুলের কথায় কপাল কুঁচকে তাকালো তিথি।কি বলতে চাইছে রাতুল ভাইয়া।আর আজই বলা জরুরি।

~~~~জ্বী ভাইয়া বলো কি কথা!তাছাড়া আমার সাথে তোমার কিই বা জরুরি কথা থাকতে পারে।

কিছুটা ইতস্ততবোধ করে বললো রাতুল…..

____আছে তিথি অনেক কথা বলার আছে আমার।কিন্তু কিভাবে বলবো বা শুরু করবো ঠিক বুঝতে পারছি না।তুমিই বা কথাগুলো কিভাবে নেবে সেটাও বুঝতে পারছি না।

কি এমন কথা যার জন্য এতটা ভাবছে রাতুল ভাইয়া।কই কখনও তো আমার সাথে এতটা সিরিয়াসলি কথা বলে নি তাহলে আজ কি হলো।

~~~আরে ভাইয়া এত হেজিটেইট না করে বলেই ফেলুন না কি বলতে চান।

_______আসলে তিথি আমি দুই বছরের জন্য লন্ডন চলে যাচ্ছি।আগামী দুই বছর আমি ওখানেই থাকবো।

রাতুলের কথা শুনে মৃদু হাসলো তিথি।ভাইয়া লন্ডন যাবে।সেটা তো খুবই ভালো।

~~~তা তো ভালো কথা ভাইয়া।তা এটা আমাকে এভাবে বলার কি আছে সেটাই বুঝতে পারছি না আমি।

______দরকার আছে তিথি!আচ্ছা তিথি তুমি কি সত্যি কিছু বুঝতে পারছো না।আমি তোমাকে কিসের জন্য কেন এসব বলছি।

ভাইয়ার কথা শুনে চোখ পিটপিট করে তাকালাম আমি।আরে আমি কি করে বুঝবো কি জন্য আমায় বলছেন।

~~~কি জন্য মানে!এটা তে ভালো কথা।তা এমনিতেই বলতে পারেন এখানে সত্যি মিথ্যা কারণ অকারণের কি আছে।

এই মেয়ে এত বোকা দেখে তো মনে হয় না।সকলের ব্যাপারে পাক্কা।খালি আমার ব্যাপারেই এত উদাসীন কেন…?চব্বিশ গজ দূরে দাঁড়িয়ে ও বলতে পারে কার প্রতি কার কি নজর আর আমার থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে বসে বুঝতে পারছে না স্ট্রেঞ্জ!ঘেমে একাকার রাতুল।খুব নার্ভাস হয়ে পরেছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না।

_____আরে ভাইয়া আপনি ঘামছেন কেন….?আর এতটা নার্ভাসই বা হচ্ছেন কেন….?

~~~আআসলে তিথি আমি……

_____আপনি……

~~~~আমি ততোমাকে…..ভা….

আসলে তিথি রাতুল তোকে ভালোবাসে।আর সেটা বিগত তিন মাস ধরে তোকে বুঝাতে গিয়েও বুঝাতে অক্ষম।আর তুই এমনই এক গাধী যে এতদিন ধরে এই কথাটাও বুঝতে পারছিস না।আর এই গাধাটাও এতদিন ধরে বলতে পারছে না।আধঘন্টা ধরে আমি আর মুগ্ধতা ওখানে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু আআমি ততো….আর বের হচ্ছে না।তাই বাধ্য হয়ে এখন আমাকেই বলতে হলো।

মুগ্ধর কথা শুনে হা হয়ে বসে আছে দুজনে।কারো মুখে কোনোকথা নেই।রাতুলের মাথায় একটাই কথা ঘুরছে মুগ্ধ কি করে জানলো।এই ব্যাপারে একমাএ স্নেহা জানে তাও সিওর হয়ে কিছু বলতে পারবে না।তবে কি স্নেহা।রাতুল তিথিকে ভালোবাসে এটা ভাবনারও বাহিরে ছিলো মুগ্ধতার।মুগ্ধর মুখে কথাটা শুনে থম মেরে আছে।কিছুক্ষণ পরই মাথা নিচু করে কিছু না বলে চুপচাপ রুমে চলে গেলো তিথি।অন্যদিকে হতাশ হয়ে বসে রইলো রাতুল।তবে কি তিথি একসেপ্ট করলো তাঁকে।দূরে চলে গেলো।
.
.
রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা।সকলের রাতের খাবার খাওয়া শেষ।মুগ্ধ খেয়েই ও ঘরে চলে গেছে।মুগ্ধতা অনেক্ক্ষণ ওয়েট করে ও ঘরে ছুটলো।আজ খুব করে কথা শুনাবে মুগ্ধ কে।এতদিন কিছু বলেনি বলে সাপের পাঁচ-পা দেখেছে।আজ বুঝবে বউ কি…?বউ কাকে বলে….?তাকে অবহেলা করার শাস্তি কি….?
.
মুগ্ধর দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।মুগ্ধর সেদিকে কোনো হুশই নেই।সে বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে বসে আছে।অনেক্ক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও তাঁর নজরে আসতে পারলো না।তাই রেগে মেগে বললো……

~~~এই যে কি এত বই নিয়ে পরে আছেন।আধ ঘন্টা ধরে আপনার কফি হাতে দাঁড়িয়ে আছি সেই হুশ কি আছে আপনার….?

মুগ্ধতার চিৎকার শুনে বই থেকে চোখ তুলে ওর দিকে তাকালো।মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো…..

______কিছু কি হয়েছে…?আর তুমি এত রাতে না ঘুমিয়ে এখানে কফি নিয়ে এসেছো কেন…?

~~~আপনি রাত জেগে পড়াশোনা করছেন তাই ভাবলাম এক কাপ কফি হলে মন্দ হবে না।তাই খাওয়ার জন্য নিয়ে এসেছি বুঝেছেন।
.
______হুম বুঝালাম!তা এত রেগে যাচ্ছ কেন….?

~~~~রাগছি কি আর সাধে।আচ্ছা আপনি এই রুমে এসে পড়াশোনা করেন কেন….?ওই রুমে থাকলে কি সমস্যা।

মুগ্ধতার কথায় একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মুগ্ধ।

_____তোমাকে ডিস্টার্ব দিতে চাই না তাই।আমি ওখানে থাকলে তোমার ঘুম হবে না।তাই ভাবলাম দূরে থাকাই বেটার।তাছাড়া আমার থাকা না থাকা কোনোটাই তোমার উপর এফেক্ট ফেলে না।না থাকলে বরং ভালোই হয়।নিজের মতো থাকতে পারো।

মুগ্ধর কথায় ভেতরে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হলো মুগ্ধতার।মুগ্ধতার কথা ভেবেই ও ঘর ছেড়েছে মুগ্ধ।নিজের অজান্তেই কত কষ্ট দিয়ে ফেলেছে ওকে।আর কোনো কষ্ট দেবে না।এবার সব ঠিক হয়ে যাবে।সব ঠিক করে দেবে মুগ্ধতা।নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে বললো……

~~~আমার কোনো সমস্যা হবে না।আপনি চলুন আজ থেকে ওখানেই থাকবেন।

_____নাহ্ থাক!তুমি আমার কথা ভেবে এমন বলছো।আমার কোনো সমস্যা হয় না।আর মাএ তো দুইটা এক্সাম ঠিক চলে যাবে।

আর কিছু না বলে মুগ্ধর পাশের চেয়ার টেনে ধুম করে বসে পরলো মুগ্ধতা।যদি ঘুমিয়ে পরে তাহলে যেন যাওয়ার সময় তাঁকে এখান থেকে নিয়ে যায়। বলেই টেবিলে মাথা রেখে চোখ বুজে রইলো।মুগ্ধতার এহেন আচরণে হতবাক মুগ্ধ।মেয়েটা পাগল হয়ে গেলো নাকি!আজ ক’দিন ধরে কি করছে নিজেই বোধহয় বুঝতে পারছে না।ওর আচরণে আমূল-পরিবর্তন এসেছে।ওর প্রতি কেয়ার,চিন্তা ভাবনা কেমন সন্দেহজনক।আচ্ছা ও কেন এমন করছে।মনের টানে নাকি দায়িত্ববোধ থেকে….!!
.
.
#চলবে……