#মেঘবিলাসী
#israt_jahan_arina
#part_25
সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকে তিন্নির মাথা ব্যাথা করছে। কাল ড্রিংক করাটা একদম উচিৎ হয়নি।জিসানের উপর রেগে আর রাইমার পাল্লায় পরে এই কাজ করেছে।পুরো মেয়ে গ্রুপ আলাদা এই বেবস্থা করেছে।তিন্নি একটু বেশি ড্রাংক ছিলো বলে মুন তাকে রুমে দিয়ে গেছে।
সকাল থেকে রাইমা ভয়ে আছে।গতকাল রাইমাই সব চেয়ে বেশি ড্রিংক করেছে।ছাদে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে সাঈদকে ডেকে আই লাভ ইউ বলেছে।সব কাজিনরা তো জেনেছে, সাথে রাইমার মাও শুনেছে।মেয়েকে সকাল থেকে ঝারির উপর রেখেছে।এটাও বলেছে বিয়ের ঝামেলা শেষ হলে তার ক্লাস নিবে।বেচারী এখন ভীষণ ভয়ে আছে। অপর দিকে সায়েদ কল করে এতো গুলা ধমক দিয়েছে।বেচারীর পুরো দিনটাই মাটি।
রাতুল আজ ভীষণ এক্সাইটেড। আলিফার সাথে তার 2 বছরের সম্পর্ক। আলিফার পাগলামি জন্য হুট করে বিয়ে করে বাসায় চলে এসেছে।তবে অবশেষে দুই পরিবারের ইচ্ছায় রিসেপশনের অ্যারেঞ্জ করাহয়।
তিন্নি ভীষণ চিন্তায় আছে।কারণ গত রাতের কথা তার পুরো মনে পড়ছেনা।তবে তার এটা মনে আছে সে জিসানের পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরেছিলো। এর পর কিছুই মনে পড়ছেনা।মানুষটা গেলো কোথায়?
জিসান রুমে এসে দেখে তিন্নি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।সে তার হাতের লেবুপানি তিন্নির দিকে বাড়িয়ে দিলো আর বললো
-“এই পানিটা খাও।মাথা ব্যাথা কমে যাবে।”
তিন্নির মাথা তুলে দেখলো জিসান দাঁড়িয়ে আছে।
-“কি হলো নাও?”
তিন্নি কিছু না বলে আগে পানিটা খেয়ে নিলো। তারপর সে জিসানকে উদ্দেশ্য করে বললো
-“গতকাল রাতে কি আমি আপনার সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করেছি?”
জিসান মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি আসলো।সে বললো
-” মাতাল হয়ে কেয়ামত করেছো।”
তিন্নি কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।সে বললো
-“মানে কি করেছি আমি?”
-“আমার লজ্জা লাগছে বলতে।”
-“আপনি আমার সাথে মজা করছেন?”
-“আমি মজা করবো কেনো? তুমিই তো জোর করে আমাকে চুমু খেয়েছো।”
তিন্নির চোখ কপালে উঠে গেলো।সে দ্রুত বললো
-“আমি মোটেও এমন কিছু করিনি।”
-“তুবার সাথে কথা বলেছি বলে কত হুমকি-ধামকি দিলা।”
এবার তিন্নির কিছুটা মনে পড়ছে। কিন্তু সে এটা সিওর যে কোনো চুমু টুমু খায়নি। এটা বানিয়ে বলছে অসভ্য লোকটা। এমন সময় জিসান উঠলো
-“আচ্ছা তুমি কি জেলাস?”
-“আমি কেনো জেলাস হব? আপনার যার সাথে খুশি তার সাথে কথা বলতে পারেন। আমার তাতে কিছুই আসে যায়না।”
-“কিন্তু আমি তো কেমন পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি?”
-“বাইরে যেয়ে চেক করুন। এখানে কিছু পুড়ছে না।”
জিসান মুচকি হেসে চলে গেলো।
সকল মেয়েরা চলে গেলো পার্লারে।আর জিসান বেচারার উপর চলছে জামাই আদরের অত্যাচার।তিন্নির মা এবং তার দুই মামী জিসানকে নানা রকম খাবার খাওয়াতে ব্যাস্ত।
দুপুরে জিসান রেডি হয়ে রাতুলকে দেখতে গেলো।বেশ কিছুক্ষন পর সে রুমে আসতেই দেখতে পেলো তিন্নি আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুড়ি পড়ছে।তিন্নি নেভি ব্লু কালারের গাউন পড়েছে।এমন কোনো কালার মনে হয় নেই যা তার বউকে মানায় না।জিসান কিছুতেই চোখ ফেরাতে পারছে না।
দরজায় শব্দ পেয়ে তিন্নি ফিরে তাকালো।জিসান এসেছে।কে বলেছিলো এতো মাঞ্জা মারতে।দেখলেই কেমন চোখ জ্বলসে যায়।ওই ফালতু তুবার জন্য এতো সাজার কি আছে?আচ্ছা উনি আজও আমার সাথে ম্যাচিং করে কি ভাবে পড়লো?এক মিনিট উনার পাঞ্জাবীর গলার কাজ আর তার জামার গলার কাজ এক কেনো?তিন্নি বললো
-“আমার এই ড্রেস গুলি আপনি কিনে মামনিকে দিয়ে পাঠিয়েছেন তাই না?”
-“যা ভাবো তাই।কেনো পছন্দ হয়নি?”
-“আমার এইসব পছন্দ না। নেক্সট টাইম এমন করবেন না।”
জিসান ভাবছে”আমার বাসায় যাওয়ার পর তোমাকে শাড়ি ছাড়া আর কিছুই কিনে দিবো না।কি কপাল আমার বউকে শাড়ি পরা দেখলাম না।জিন্স আর টপস পরা একদম নিষেধ।অন্তত আমার সামনে না। এখন শাড়ি দিলে পড়তে না।তাই দেইনি।
-“সেটা পরা দেখা যাবে। এখন চলো। সবাই অপেক্ষা করছে।”
কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছে সবাই নিজেদের মতো মজা করছে।রাতুলের আবার কবুল পড়ানো হবে।যেহেতু আগের বার পরিবারের কেউ ছিলো না।রাতুলকে কবুল বলানো হচ্চে,আর তিন্নি অপলক তাকিয়ে আছে। হঠাৎ জিসান তিন্নির কাছে এসে বললো
-“ওইটা জাস্ট ইনফ্যাচুয়েশন ছিলো।”
জিসানের কথায় তিন্নির ধ্যান ভাঙ্গলো।সে বললো
-“মানে?”
-“মানে রাতুলের প্রতি তোমার যা ছিলো সেটা ইনফ্যাচুয়েশন ছিলো।”
তিন্নি বেশ অবাক হলো।কাউকে সে রাতুলের বিষয়টা বলেনি।তাহলে উনি বুজলো কি ভাবে?সে বললো
-“আপনার এমন কেনো মনে হলো?”
-“কারণ সেটা যদি ভালোবাসা হতো তা হলে তুমি এই জায়গাতে এতো ইস্থির ভাবে থাকতে পারতে না।তোমাকে মোটেও অস্থির লাগছে না।”
-“আপনি ঠিক বলেছেন।ভালোবাসা জিনিসটা আমার সাথে ঠিক যায় না।এইগুলা আমার জন্য না।”
-“কে বললো ভালোবাসা তোমার জন্য না?ভালোবাসা সবার জন্য।তুমিও একসময় গভীর প্রেমে পড়বে।”
তিন্নি একটা তাচ্ছিল্য হাসি দিলো।
কয়েকটা দিন তিন্নি এবং জিসান খুব ভালো সময় কাটিয়েছে।তিন্নির পুরো পরিবার জিসানকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছে।
আরো দুইদিন পর তারা সকলে বাসায় ফিরে এলো।তিন্নিও নিয়মিত ক্লাস শুরু করেছে।সকল প্রফেসরই তিন্নিকে ভীষণ পছন্দ করে।কারণ তিন্নি অনেক মেধাবী একজন স্টুডেন্ট।
রাত 12টার দিকে তিন্নি বসে পড়ছিলো।সামনে তার এক্সাম।এমন সময় তার ফোন কল আসলো।জিসান কল করেছে।তিন্নির ফোন জিসানের নম্বরটা ACP সাহেব দিয়ে সেভ করা।তিন্নি কলটা রিসিভ করতেই জিসান বললো
-“একটু নিচে আসো।”
-“এই সময় নিচে কেনো যাবো?এক মিনিট আপনি নিচে এসেছেন?”
-“হে। এখন দ্রুত আসো?”
-“আপনি এতো রাতে নিচে কি করছেন?বাসা আসুন।”
-“এতো কথা কেনো বলো বউ?নিচে আসো না?”
‘বউ’ শব্দটা শুনে তিন্নি কয়েকবার তার হার্টবিট মিস করলো।এতো মিষ্টি করে কেনো ডাকে?তিন্নি কয়েকবার শুকনো ঢোক গিলছে।সে তার মনের গহীনে শীতল অনুভব করলো। তিন্নি আর কিছুই বলতে পারলো না।কলটা কেটে দিলো।
পাঁচ মিনিটের মাথায় তিন্নি নিচে নামলো।নিচে এসে দেখলো জিসান বাইকের হেলান দিয়ে দাড়িয়ে ফোন টিপছে।তিন্নিকে দেখেই সে সামনে আসলো। হাতে বড় একটা ব্যাগ।তিন্নি বললো
-“এতো রাতে এখানে কি করছেন?”
-“কয়েকদিন ধরে সমস্যায় আছি।তাই ভাবলাম ডক্টর বউকে দেখিয়ে আসি।”
আবার বউ?এই লোকটার আসলেই সমস্যা আছে।ইদানিং বেশি বউ বউ করে।
-“কি সমস্যা?”
-“ইদানিং রাতে ঘুম হয় না।কি করা যায় বলোতো?”
তিন্নি কি বলবে বুঝতে পারছে না।আজকাল জিসানের সামনে আসলে সে খুব নার্ভাস ফিল করে। মানুষটা তাকে কেমন দুর্বল করে দিচ্ছে।সে বুঝতে পারে জিসান তার প্রতি দূর্বল।কিন্তু সে কিছুতেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছে না।
-“আপনি একজন ভালো বিশেষজ্ঞ দেখাতে পারেন।”
জিসান হঠাৎ তিন্নির কাছে এসে এক হাত তিন্নির কোমল গালে রাখলো।আর বলতে শুরু করলো
-“আমার এই অসুখ একমাত্র তুমি সারাতে পারবে।”
তিন্নির নিশ্বাস ঘনো হতে শুরু করলো।তার হাত পা কাপছে।জিসান বুঝতে পেরে দূরে এসে হেসে বললো
-“আরে জাস্ট মজা করছিলাম।এইদিকে কাজ ছিলো।তাই ভাবলাম তোমার সাথে দেখা করে যাই।”
তারপর সে তিন্নির হাতে ব্যাগটা দিয়ে দিয়ে বললো
-“এখানে তোমার আর তামিমের পছন্দের আইসক্রিম আছে।”
তিন্নি কিছু না বলে ব্যাগটা হতে নিলো।জিসান বললো
-“এতো রাত জেগে লেখাপড়া করোনা।অসুস্থ হয়ে পড়বে।”
তিন্নি শুধু মাথা নেড়ে হ্যা বললো।জিসান বললো
-“অনেক রাত হয়েছে, এখন বাসায় যাও।”
-“আপনিও চলুন।”
-“আজ না, আরেক দিন আসবো।”
জিসান আর কিছু না বলে তিন্নির কপালে তার ওষ্ঠ জোড়া ছুয়ে দিলো।
মুহূর্তেই তিন্নির পুরো শরীর কেঁপে উঠলো। এ কেমন অনুভূতি?তিন্নির মন চায়ছে জিসানকে ঝাপটে ধরতে।কিন্তু সে এমন কিছু করলো না।জিসান তার বাইকে উঠে তিন্নিকে বাসায় যেতে ইশারা করলো।তিন্নি চলে যেতে নিলেই জিসান বললো
-“বউ উপরে উঠে একটু বারান্দায় এসো?”
তিন্নি কিছুক্ষণ থমকে দাড়িয়ে পরে চলে আসলো।তার চোখ জোরা অজানা কারণে ভিজে উঠলো।সে দ্রুত বারান্দায় আসলো।তিন্নিকে দেখেই জিসান মুচকি হেসে চলে গেলো।তিন্নি অপলক সেই দিকে তাকিয়ে থাকলো।
#মেঘবিলাসী
#israt_jahan_arina
#part_26
তিন্নি তার নিজের লাইফে অনেক বেশি ডুবে আছে। কলেজে তার রেগুলার ভাইবা আইটেম এমনকি রিটেন আইটেম হচ্ছে। দু মিনিট দম নেওয়ার সময় নেই তার। অবনী রহমানের আজকাল ভীষণ আফসোস হয়। ইসস!! মেয়েটা মেডিকেলে পড়তে যেয়ে একদম শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। তিন্নির লেখাপড়ায় যাতে খুব একটা ক্ষতি না হয় তাই জিসান এবাসায় খুব কম আসে। কিন্তু আজ তার তিন্নি কে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছিলো। তাইতো এত রাতে বাসা থেকে ছুটে এসেছে। কিছুদিন যাবত তার একদমই ঘুম হচ্ছে না। তিন্নিকে একটা বার দেখার জন্য অস্থির হয়ে আছে সে। দিনের বেলাতে সে নিজেও ভীষণ ব্যস্ত থাকে। তিন্নিকে দেখে মনের অস্থিরতা অনেকটা কমে আসলো।
তিন্নি এখনও বারান্দায় আনমনা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আজ মনে হয় আমাবস্য চলছে। চারপাশ কেমন ঘুটঘুটে অন্ধকার। তার জীবনটা তো ঠিক এমনই অন্ধকার। তার এই অন্ধকার জীবনে জিসান নামক মানুষটি ভোরের আলো হয়ে চারপাশ আলোকিত করে তুলছে। কিন্তু তিন্নির ভীষণ ভয় হয়। সেকি পারবে এই আলো সহ্য করতে। অজান্তেই তার চোখ বেয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল।
হঠাৎ এমন সময় কেউ তার কাঁধে হাত রাখলো। তিন্নি চোখ ফিরিয়ে দেখলো তার বাবা দাঁড়িয়ে আছে।আনিসুর রহমান মেয়ের চোখে পানি দেখে অস্থির হয়ে গেলেন আর বললেন
-“জিসানের সাথে কিছু হয়েছে?এতো রাতে ও এসে আবার চলে গেলো কেনো?”
তিন্নির আনমনা হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো
-“জানিনা পাপা।”
-“তোমার চোখে পানি কেনো মা?”
-“তেমন কিছুই না।তুমি ভুল দেখেছো?
তিনি বুঝতে পারলেন তিন্নি এখন কিছুই বলবে না।মেয়েটা নিজের মনের অবস্থা কাউকে বুঝতে দেয়না।তিনি আবার বললেন
-“এতো রাত জেগে থেকোনা।আমার বিশ্বাস তুমি এক্সাম গুলিতে অনেক ভালো করবে।এতো স্ট্রেস না নিয়ে রেস্ট করো।”
-“পাপা মামনি কিন্তু তোমার আর আমার চাইতেও বেশি ভালো অভিনয় করে।”
-“তোমার মামনি তোমাকে অনেক ভালোবসে।সে তোমাকে সব সময় হ্যাপী দেখতে চায়।”
-“পাপা আমার মাথা ব্যাথা করছে।একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দাও।”
আনিসুর রহমান মলিন হেসে বললো
-“রুমে চল।আমি হাত বুলিয়ে দিবো।”
অনেক্ষন যাবত তিনি মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।ঘুম ঘুম চোখে তিন্নি বললো
-“মামনিকে প্রতিদিন এতো রাতে আমার রুমে আসতে মানা করে দিও।আমি ঠিক আছি।
আনিসুর রহমান কিছু বললো না।তিন্নি আবার বললো
-“আর তুমিও আসা বন্ধ করো।রাতে তোমার প্রপার ঘুম প্রয়োজন।”
তিনি এবারও কিছু বললেন না।পরম আদরে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।কিছু সময় পর তিন্নি ঘুমিয়ে পড়লো।
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে জিসান রেডি হয়ে নিলো।গত রাতে তার বেশ ভালো ঘুম হয়েছে।ডাইনিং এ আসতেই রোজিনা খালা জিসানের নাস্তা দিলো।
জিসান নাস্তা করা প্রায় শেষ।রোজিনা খালা জিসানের কফি এগিয়ে দিতে দিতে বললো
-“বাবা কেমন বিয়া করলা,বউ বাইত আহেনা?বউ থাকতো আমার হাতো খাওন লাগে?
জিসান হেসে বললো
-“খালা আমার বউ ভবিষ্যৎ ডাক্তার।তার অনেক লেখাপড়া থাকে।আর তাছাড়া আমি আমার বউকে দিয়ে রান্না বান্না করবো না।আমি নিজে তাকে রেধে খাওয়াবো।”
-“তোমার বউয়ের কফাল ভালা।তোমার মতন সোয়ামি ফাইছে।”
জিসান মুচকি হেসে বললো
-“আমার কপালটাও কিন্তু ভালো।
________________
তিন্নি আর তার সব ফ্রেন্ডরা মিলে আজ রেস্টুরেন্টে এসেছে।কয়েক দিন তারা এক্সাম নিয়ে ব্যাস্ত ছিলো।আজ তাই একটু রিফ্রেশমেন্ট এর জন্য এসেছে।
চেয়ারে বসে সীমা বললো
-“আজ জম্পেশ খাওয়া দাওয়া হবে।কয়দিন টেনশন এ ঠিক মত খেতে পারিনি।”
সুমাইয়া মুখটা মলিন করে বললো
-“আরে এই কয়দিন আদনান আমাকে রান্না করে খাইয়েছে।বেচারা একদিকে অফিসে সামলেছে আর একদিক দিয়ে আমাকে।”
রত্না বিরক্ত মুখ নিয়ে বললো
-“আমার অবস্থা বেশি খারাপ।বাবা বলে দিয়েছে রেজাল্ট ভালো না করলে ধরে আমার কাজিন ইনাদের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে। ওকে আমার একটুও পছন্দ না।”
তিন্নি এবার বললো
-“আংকেল কে বল যে তুই ওকে পছন্দ করিস না।”
-“বাবা আমার কথা জীবনেও শুনবে না।”
-“এক কাজ কর আমাদের কলেজের কোনো সিনিয়র ভাইয়াকে পটিয়ে ফেল।ডক্টর ছেলে দেখলে তোর বাবা মানা করবে না।”
-“আইডিয়া ভালো।কিন্তু কোন ছেলেকে পটাবো?তোর জামাইর মতো কোনো হিরো টাইপ ছেলে খোঁজে দে।”
তিন্নি বিরক্ত হয়ে বললো
-“ওই রাব্বিকে পটিয়ে ফেল।”
-“আমার খেয়ে দেয় আর কাজ নাই।তাছাড়া ওই ছেলে তোর পিছনে লাট্টু।”
-“আরে ট্রাই করে দেখ।সে কিন্তু ভালো স্টুডেন্ট।ভবিষ্যতে ভালো ডক্টর হবে।”
রত্না কিছু বলার আগেই সীমা বললো
-“তিন্নি ওইটা জিসান ভাই না?”
জিসান নামটা শুনে একটু চমকে উঠলো।সাথে সাথে পিছনে ফিরে দেখলো সত্যি জিসান।
জিসান দিকে তাকিয়ে তিন্নির মেজাজ খারাপ হলো।জিসানের পাশের মেয়েটা কে? যেই হোক তাতে আমার কি?
সীমা বললো
-“তুই প্ল্যান করে এই রেস্টুরেন্টে এসেছিস? ওও!! চুপি চুপি প্রেম চলে তোমাদের।এটা আর হচ্ছেনা।আমি এক্ষুনি ডাকছি ভাইয়াকে।”
তিন্নি তাকে কিছু বলার আগেই সীমা দাড়িয়ে জিসান কে ডাকতে লাগলো।
জিসান আর তার কলিকরা মিলে lunch করতে এসেছে। হঠাৎ নিজের নাম শুনে ঘুরে তাকালো।
কিছুটা দূরের টেবিলে সীমা দাড়িয়ে ওকে ডাকছে।তার চোখ পড়লো তিন্নির দিকে।সে সাথে সাথে উঠে দাড়ালো। দ্রুত তিন্নির দিকে এগিয়ে আসলো।সীমাকে উদ্দেশ্য করে বললো
-“কি ব্যাপার শালীকা?তোমরা এখানে কি করছো?
-“আমরা lunch এ এসেছি।”
জিসান আড়চোখে তিন্নিকে দেখলো।তার পর সীমাকে উদ্দেশ্য করে বললো
-“তোমরা প্লিজ আমাদের সাথে জয়েন করো।আমরা কয়েকজন কলিক মিলে এসেছিলাম।”
তিন্নি বললো
-“আপনারা কন্টিনিউ করুন। আমরা ডিস্টার্ব করতে চাইছি না ”
-“মোটেও ডিস্টার্ব হবে না।চলো।”
এ কথা বলে সে তিন্নির হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো।জিসানের এই অধিকার বোধটুকু তিন্নির ভীষণ ভালো লাগলো।
জিসান তিন্নি আর তার ফ্রেন্ডের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।জিসানের পাঁচ জন কলিক আছে।তিন্নির চোখ পড়লো একজনের দিকে।এটাই সেই ছেলেটা যাকে তিন্নি শপিং মলে আহত অবস্থায় দেখেছে।কি নাম যেনো বলে ছিলো সূচনা আপু? হে মনে পড়েছে।ফয়সাল নাম তার।কিন্তু তিন্নির চোখ আটকে আছে ওই মেয়েটার উপর।মেয়েটার নাম অদৃতি।জিসানের সাথে এক টিমে আছে।এতো সুন্দর মেয়ে কিনা চোর বাটপার দের পিছনে দৌড়ায়।এই মেয়ে মিষ্টি করে কথা বললেই আসামিরা মনে হয় গর গর করে সব অপরাধ শিকার করে নেয়।মেয়েটার মডেল হওয়ার দরকার ছিলো।ভুল প্রফেশনে চলে এসেছে।
তিন্নিকে দেখে ফয়সাল বললো
-“কি খবর আপনার ভাবী?আমাকে চিনতে পেরেছেন?”
এতো বড়ো লোকের মুখে ভাবী ডাক শুনে তিন্নি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।মিষ্টি হেসে তিন্নি বললো
-“জী!!আপনাকে চিনতে পেরেছি।একজন আপনার শরীর কেমন আছে?”
-“জী ভাবী ভালো আছি।”
অদৃতা মেয়েটা বললো
-“কি ব্যাপার জিসান?এতো মিষ্টি বউকে এতোদিন লুকিয়ে কেনো রেখেছো?”
-“লুকিয়ে কোথায় রাখলাম?এইযে তোমাদের সামনে নিয়ে এসেছি।”
-“তোমাদের জুটি আমার ভীষণ ভালো লেগেছে।দুই জনই মানব সেবায় নিয়োজিত।”
জিসান অন্য কলিক তাহসান অনেকক্ষণ যাবত সীমাকে দেখে চলছে।সে তিন্নিকে বললো
-“ভাবী আপনি আর আপনার ফ্রেন্ডরা ডক্টর পাস করার পর আমরা কিন্তু ফ্রী ট্রিটমেন্ট নিবো।”
তিন্নি বিষয়টা খেয়াল করে বললো
-“ট্রিটমেন্ট কি আমার কাছ থেকে নিতে চান নাকি আমার অন্য ফ্রেন্ড থেকে?”
-“আমার আপনার কাছ থেকে ট্রিটমেন্ট নিতে সমস্যা নেই।কিন্তু আপনি তো জিসান ভাইয়ের রোগ সারাতে ব্যাস্ত থাকবেন।তাই আপনার অন্য ফ্রেন্ডরা ফ্রী থাকলে তাদের দেখাতাম।”
-“সুমাইয়া বাদে বাকি সবাই ফ্রী আছে।ট্রাই করে দেখতে পারেন।”
তিন্নির কথা শুনে সীমা তিন্নিকে খোঁচাতে লাগলো।তিন্নিও তাকে চোখ টিপ দিয়ে দিলো।সীমার ভীষণ লজ্জা লাগছে।
জিসান তিন্নির কানে কানে বললো
-“তুমি একটু ওয়েট করো,আমি তোমাকে বাসায় ড্রপ করে দিবো।”
-“আপনাকে কষ্ট করা লাগবে না।আমি চলে যেতে পারবো।”
-“আমার মোটেও কষ্ট হবে না।তুমি দাড়াও আমি তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসি।”
তিন্নি আর কিছুই বলতে পারলো না।জিসানের সাথে সময় কাটাতে তার খুব ভালো লাগে।মানুষটা সব সময় হাসি খুশি থাকে।আর অন্যকেও হাসাতে পারে।
কিছু সময় পর জিসান তিন্নিকে নিয়ে বাইকের কাছে আসলো।জিসান বলে উঠলো
-“বাইকে উঠতে সমস্যা হবে না তো?আসলে তোমার সাথে দেখা হবে জানলে গাড়ি নিয়ে আসতাম।”
তিন্নি মাঝে মাঝে অবাক হয়।এই মানুষটা এতো কেয়ারিং কেনো?তিন্নি বললো
-“কোনো সমস্যা নেই।আমি বসতে পারি।আগে রাতুল ভাইয়ের বাইকে বেশ কয়েকবার বসেছি।”
জিসান ব্রু কুচকে তিন্নির দিকে তাকালো।তিন্নি জিসানকে পাত্তা না দিয়ে আসে পাশে দেখতে লাগলো।আসলে সে জিসানকে জেলাস ফিল করতে চাইছে।
জিসান মুচকি হেসে বললো
-“রাতুলের বাইকে আমি উঠে ছিলাম।তার ড্রাইভিং খুব একটা ভালো না।নিজের জামাইর বাইকে উঠে দেখো।তোমার জামাই ভালো বাইক রাইডার।”
তিন্নি মনে মনে জিসানকে খারাপ একটা গালি দিলো।এই লোক না জানি কত মেয়েকে বাইক রাইড দিয়েছে।আচ্ছা অদ্রিতা মেয়েটাও কি এই মানুষটার পাশে বসেছে?এমন সময় তিন্নি দেখলো অদ্রিতা রেস্টুরেন্ট থেকে বের হচ্ছে।তাকে দেখেই তিন্নি দ্রুত জিসানের বাইকে উঠে বসলো।অদ্রিতা কে দেখিয়ে জিসানের কাছাকাছি বসলো।
বাইকে কিছুদুর যাওয়ার পর তিন্নি এবার কিছুটা দূরে চলে আসলো।নিজের কাজের জন্য এখন লজ্জা লাগছে। সে কি আসলেই জেলাস ফিল করছিলো।জিসান বলে উঠলো
-“দূরে গেলে কেনো?ধরে বসো,নাহলে পরে যাবে।”
-“সমস্যা নেই পড়বো না।”
জিসান এবার নিজেই তিন্নির হাত ধরে নিজের কোমরে জরিয়ে দিলো।তিন্নি কিছুটা কেপে উঠলো।কেমন অনুভূতি হচ্চে সে বলে বুঝাতে পারব না।মনে হয় বুকের ভিতর কিছু একটা দ্রুত গতিতে ছুটে চলছে।ভীষণ ভালো লাগছে আজ তার।সামনের মানুষটাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করছে।দুই হাত দিয়ে সে জিসানকে ঝাপটে ধরে রাখলো।