মেঘবিলাসী পর্ব-৩১

0
510

#মেঘবিলাসী
#israt_jahan_arina
#part_31

অদিতি আর অনিক চলে গেলো সন্ধ্যা নাগাত।তিন্নি আর জিসান ও বেরিয়ে পড়লো হসপিটালের উদ্দেশ্যে।তিন্নি ড্রাইভে করছে।জিসান পাশে বসে আছে।তিন্নি ড্রাইভিং খুব ভালো জানে।মূলত হাসবেন্ডরা ড্রাইভে করে,আর ওয়াইফ পাশে বসে থাকে।কিন্তু নিয়মটা উল্টো হলে যে এত ভালো লাগে তা আগে জানা ছিল না।জিসান বিষয়টা খুব এনজয় করছে।হঠাৎ সে তিন্নিকে বললো

-“আচ্ছা তোমার আর অদিতির মধ্যে কি হয়েছিলো বলো তো?আসার পর তোমরা খুব একটা কথা বলনি।কিন্তু যাওয়ার সময় সে তোমাকে হাগ করে গেলো।কাহিনী বুজলাম না।”

তিন্নি মুচকি হেসে বললো
-“কাহিনী কিছুই না।সে একটা ধাঁধার মধ্যে আটকে গেছিলো।আমি জাস্ট সলভড করে দিয়েছি।”

-“কি ধাঁধা?”

-“বলা যাবেনা।সিক্রেট।”

-“তোমরা নারীরা নিজেরাই এক একটা ধাঁধা।আমরা নিরীহ জাতি এই ধাঁধা সমাধান করতে করতে নিঃশেষ হয়ে যাবো।”

তিন্নি শব্দ করে হেসে ফেললো।আর জিসান মুগ্ধ চোখে সেই মনোরম দৃশ্য দেখতে লাগলো।হাসলে তিন্নির চোখ ছোট হয়ে আসে।এই বিষয়টা জিসানের খুব ভালো লাগে।
আজ জিসানের ব্যান্ডেজ খোলা হবে।হসপিটালের করিডোরে বসে আছে তিন্নি।কিছুক্ষন পর জিসান আসলো।তিন্নি দ্রুত তার হাত ধরলো।তিন্নি বললো

-“পায়ের কি অবস্থা?আবার নতুন ব্যান্ডেজ কেনো?ঘা এখনো শুকায় নি?”

জিসান বললো
-” না ফ্র্যাকচার আছে।আরো কিছু দিন লাগবে ঠিক হতে।”

তিন্নিকে ভীষণ চিন্তিত দেখা গেলো।জিসান তিন্নির দিকে আড় চোখে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।আসলে তার ঘা অনেক টা শুকিয়ে গেছে।কিন্তু সে তবুও আবার ব্যান্ডেজ করিয়েছে।সে আরো কিছুদিন তিন্নিকে নিজের কাছে রাখতে চায়।তাকে অসুস্থ রেখে তিন্নি কখনো যাবেনা।তারা সোজা বাসায় চলে আসলো।

রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে তিন্নি পড়তে বসলো।কয়েক দিন তার পরা ঠিক মত হয়নি।জিসান তাকে পড়তে বসতে বলতো।কিন্তু সে মনোযোগ দিতে পারতো না।তাই আজ সে মন স্থির করে পড়তে বসলো।জিসান ল্যাপটপে কাজ করছে।তিন্নি অনেক সময় চেষ্টা করেও পড়ায় মনোযোগ দিতে পারেনি।
তিন্নি বেশ অবাক হলো।আগে কখনো এমন হয়নি।বই হচ্ছে তার সব চাইতে প্রিয় বন্ধু।তবে আজ কাল এই বন্ধুর সাথে তার সখ্যতা কমে যাচ্ছে।তিন্নি তার মনকে কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছে না।তার জিসানের সাথে কথা বলতে মন চাইছে।তিন্নিকে ছটফট করতে দেখে জিসান বললো

-“কোনো সমস্যা তিন্নি?তোমার কোনো অুসুবিধা হচ্ছে?”

তিন্নি ভাবছে কি করে বলবে যে সে পড়ায় মন দিতে পারছেনা।তার গল্প করতে মন চাইছে।এই কথা মামনি জানলে নির্ঘাত হার্টফেল করতো।মামনির মতে সে বই ছাড়া কিছু বুজে না।পারলে বই বাথরুমে নিয়ে যায়।আর সেই তিন্নির পড়তে ভালো লাগছে না।ভাবনা থেকে বের হয়ে সে জিসানকে বললো

-“না,কোনো সমস্যা নেই।কফি খাবেন?”

-“দরকার নেই।তুমি আগে পড়া শেষ করো।”

তিন্নির এবার রাগ লাগছে।সে কফির বাহানায় আখান থেকে উঠতে চাইছে।আর এই ফাজিল ব্যাটা তাকে এখানে বসে থাকতে বলছে।এই ফাজিল লোক কি তার চাইতে বেশি পড়ুয়া নাকি?

-“আপনাকে চিন্তা করতে হবে না।আমি পরা কমপ্লিট করে নিবো।”

-“আমি চিন্তা না করলে আর কে করবে বলো?আমার সেবা করতে যেয়ে যদি দেশে একটা ডক্টর কমে যায়,তবে জাতি কি আমায় মেনে নিবে?”

-“আপনাকে জাতির চিন্তা করতে হবে না।নিজের চিন্তা করুন।”

তিন্নি ঝটপট দুই কাপ কফি নিয়ে আসলো।তিন্নি জিসানের ল্যাপটপে চোখ রেখেই আবার ফিরিয়ে নিলো।জিসান বেশ কয়েটা মেয়ের লাশের পিক দেখছিলো।আর কিছু রিপোর্ট পড়ছিলো।তিন্নি চোখ বন্ধ করে ফেললো।জিসান বুঝতে পেরে ল্যাপটপ বন্ধ করে দিলো।আর বললো
-“ভয় পেয়েছ?”

-“না,আমি সহজে ভয় পাইনা।তবে খারাপ লাগে।”

-“এই জব করতে যেয়ে আমার মনের অনেক আফসোস দূর হয়েছে।অন্যদের কষ্ট দেখে মনে হয়েছে আমার লাইফ অনেক ভালো কাটছে।”

-“মেডিকেলে যেহেতু পড়ছি।তাই লাশ দেখাটা আমাদের জন্য সহজ ব্যাপার হয়ে যাবে।তবে একটা মানুষ মারা গেলে তার সাথে পুরো পরিবারই শেষ হয়ে যায়।ব্যাপারটা আমার খারাপ লাগে।যারা অন্যায় করে তারা বুক ফুলিয়ে সমাজে ঘুরে বেড়ায়।আর ভিকটিম আর তার পরিবার সমাজের ভয়ে মুখ লুকিয়ে থাকে।কিন্তু ক্ষমতার কাছে আইন মুহূর্তেই বিক্রি হয়ে যায়।আর জানোয়ার গুলি ছাড়া পেয়ে যায়।”

-“আমরা মানুষরা ওদের জানোয়ারের সাথে তুলনা করে ভুল করি।কারণ মানুষ জানোয়ারের চাইতেও বেশি হিংস্র।আর সবাই ক্ষমতার কাছে বিকে যায়না।”

কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর জিসান মুচকি হেসে বললো

-“জানো আমার দেখা সব চাইতে স্ট্রং পার্সোনালিটি সম্পন্ন মানুষটা তুমি।”

তিন্নি চমকে উঠলো।জিসান হেসে বললো
-“যারা রূপের মোহে পড়ে,তারা একটা সময় সেই মোহ থেকে বেরিয়ে আসে।কিন্তু যদি কেউ কারো গুন বা ব্যাক্তিত্বের প্রেমে পড়ে।তবে তা সারা জীবন রয়ে যায়।”

-“আপনি কিসের মোহে পড়বেন?”

জিসান আবার তিন্নিকে সেই দম বন্ধ করা হয় উপহার দিয়ে বললো

-“আমিতো অলরেডী পরে গেছি,তোমার মোহে।তবে সেটা শুধু রূপে না তোমার ব্যাক্তিত্বের মোহেও।”

তিন্নি ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে পরলো।তিন্নি এবার নিজেকে সামলালো।এই মানুষটার মোহে পড়ে গা ভাসানো মোটেও উচিত হবে না।সে মোটেও এতটা স্পেশাল না। তাই সে বললো

-“আমার মনে হয় আপনার একবার নানুর সাথে দেখা করা উচিত?”

-“ঠিক বলেছো।তোমার নানুকে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।উনি ভালো টিপস দিতে পারে।”

তিন্নি কপাল কুঁচকে বললো
-“আমি আমার নানুর কথা বলিনি।আপনার নানুর কথা বলেছি।”

-“তিন্নি তুমি জানো আমি কেনো যেতে চাইনা।”

-“মায়ের সাথে নানা ভাই আর মামা সম্পর্ক নষ্ট করেছে।নানু কিন্তু স্বামী আর ছেলের ভয়ে কখনো মায়ের কাছে আসতে পারেনি।”

তিন্নি জিসানের মাকে মা বলে সম্মধন করেছে শুনে জিসান খুশি হলো।সে বললো

-“তোমাকে কে বলেছে?”

-“আমি অদিতির কাছে শুনেছি।নানু আপনাকে একবার দেখতে চায়।অনেক কান্নাকাটি করে অদিতির কাছে।কিন্তু সে ভয়ে আপনাকে বলতে পারেনি।আপনার একবার যাওয়া উচিত।”

-“ভেবে দেখবো।”
_____________________
সকাল সকাল তিন্নির ঘুম ভাঙলো জিসানের ফোনের শব্দে।জিসান তখনও ঘুমাচ্ছে।তিন্নি ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো ‘রিয়াজ ভাই’ লিখা।কলটা রিসিভ করবে কিনা ভেবে পাচ্ছে না।উপায় না পেয়ে কল রিসিভ করলো।
কল ধরার সাথে সাথে ওপর পাস থেকে সূচনা বলে উঠলো

-“জিসান তুই কই?আমাকে এক্ষুনি এই বাসা থেকে নিয়ে যা।এই ফালতু লোকের সাথে আমি থাকবো না।”

তিন্নি কি বলবে বুঝতে পারছে না।তবে সূচনার আর রিয়াজ ভাইয়ের ঝগড়া তার খুব ভালো লাগে।ভীষণ মিষ্টি ঝগড়া তাদের।আচ্ছা সেও কি এই মানুষটার সাথে এমন মিষ্টি ঝগড়া করবে?
সূচনা আবার বললো

-“এই গাধা আমার প্রেগনেন্সির খবর শুনে আধা ঘণ্টা ধরে বেকুবের মতো কাদতেছে। এমনিতেই আমার শরীরটা ভাল না। আর এই বেকুবের কান্ড দেখে আমার মাথা ধরে গেছে।”

তিন্নির ভীষণ হাসি পাচ্ছে। এত ভালো একটা খবর কেউ এভাবে দিতে পারে সেটা সে ভাবতেই পারেনি। জিসান আর সূচনার বন্ধুত্বের এই বন্ডিং টা সচরাচর দেখা যায় না। এবার তিন্নি বললো

-“কংগ্রাচুলেশন আপু।”

-“এই কে তুমি ?জিসানের ফোন তোমার আছে কেন?”

তিন্নি কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো। সে বললো
-“আপু আমি তিন্নি বলছি।”

-“তিন্নি! তুমি এখনো আছ জিসানের বাসায়। এইজন্যেই এই ফাজিল আমার কল রিসিভ করেনা। ব্যাটা বউয়ের সাথে রোমান্স করতে ব্যস্ত।”

তিনি ভীষণ লজ্জা পেলো। সে বুঝতে পেরেছে সূচনার মাথা গরম। তা না হলে সে কখনোই তিন্নি সাথে এভাবে কথা বলে না। হঠাৎ পাশের চোখ পড়তেই দেখলো জিসান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তুমি আবারও লজ্জা পেলো। বিনা অনুমতিতে কারো ফোন ধরা একদমই উচিত না। তিন্নি এবার ফোনটা জিসানের দিকে বাড়িয়ে বললো

-“সূচনা আপু কল করেছে।”

জিসান হ্যালো বলতেই সূচনা ধমক দিয়ে বললো

-“বেটা বউ পাশে থাকলে দুনিয়াতে কিছু চোখে পড়ে না।”

-“কি হয়েছে এত রেগে আছিস কেন?”

-“আমি এই গাধার সাথে সংসার করব না তোর বাসায় আমাকে নিয়ে যা।”

-“আবার কি হয়েছে? তোরা কি দুই দিনও শান্তিতে সংসার করতে পারিসনা?”

-“আমার প্রেগনেন্সির খবর শুনে এই গাধা আধাঘণ্টা ধরে কানতেছে। মনে হচ্ছে আমি প্রেগনেন্ট না আমি ক্যান্সারের রোগী।”

জিসানের মুখে হাসি ফুটে উঠল। সে বললো

-“এমন একটা খবর তুই এভাবে দিচ্ছিস।”

-“তো কি করব। এই বেকুব কান্নাকাটি করে আমার সমস্ত আনন্দটাই নষ্ট করে দিলো।”

-“এখন ঝগড়া ঝাটি বন্ধ কর,বিকেলে আসছি।”

-“অসুস্থ শরীর নিয়ে কেমনে আসবি?”

-“আরে এখন অনেকটা সুস্থ আছি, আমি বিকেলে আসছি।”

-“সাথে তিন্নিকে নিয়ে আসবি।”

-“আচ্ছা ঠিক আছে।”

কল কাটার পর জিসান আর তিন্নি একসাথে হেসে উঠলো।
বিকেলে জিসান তিন্নি রেডি হচ্ছে। সূচনার বাসায় যাবে।
তিন্নি একটা সুন্দর সালোয়ার কামিজ পড়েছে। লাইট পার্পল কালারের জামাটা তিন্নির রূপকে যেন দ্বিগুন বাড়িয়ে দিলো।তিন্নি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আচড়াচ্ছে। আর জিষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে। জনমানবহীন এই বাসাটা আজ জান্নাতের বাগিচা মনে হচ্ছে। আর তার ঠিক সামনে বসে আছে জান্নাতের হুর।
হঠাৎ তিন্নি বললো

-“আমাদের তো কিছু গিফট নিয়ে যাওয়া উচিত?”

-“আচ্ছা চলো, যেতে যেতে দেখা যাবে কি নেওয়া যায়।”

সন্ধ্যা নাগাদ তারা সূচনার বাসায় পৌঁছলো।কিন্তু বাসায় পৌছে আরেক কাণ্ড।রিয়াজ রান্না করছে আর সূচনা মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। তাদেরকে বসতে বলেই সূচনা বললো

-“এই লোকের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। সকাল থেকে আমাকে একটা কাজও করতে দেয়নি। আজকের সব রান্নাবান্না সে নিজেই করছে।”

জিসান হেসে বললো

-“ভালো তো। তোর জামাই আমাদের দিয়ে অনেক খাটায়। বাসায় ওকে বেশি করে খাটা।”

এদের কথা শুনে তিন্নি চোখ বড় করে তাকালো। হঠাৎই রিয়াজ ভাইয়ের জন্যও তিন্নির ভীষণ মায়া হচ্ছে। এই দুই ফ্রেন্ড মিলে বেচারাকে ভীষণ চাপে রেখেছে।
রিয়াজ রান্নাঘর থেকে এসে তিন্নির উদ্দেশ্যে বললো

-“তিন্নি তুমিতো মেডিকেল স্টুডেন্ট। প্লিজ ওকে বোঝাও এই সময় সাবধানে থাকতে হবে।”

-“আপু ভাইয়া কিন্তু ঠিক বলেছেন। আপনাকে এখন অনেক সাবধানে থাকতে হবে। তবে ভাইয়া আপনাকেও বলি। প্রেগনেন্সি খুবই স্বাভাবিক একটা জিনিস। আপু কিন্তু স্বাভাবিক সব কাজকর্ম করতে পারবে। বরং একদম বসে পড়লে সমস্যা।”

সূচনা রেগে বললো

-“এই কথাটা এই লোকটাকে কে বোঝাবে। এমন একটা ভাব করছে যেন আমি অসুস্থ। এখানে শুধু শেষ না। বিকেলের দিকে সে বাচ্চার জন্য জামা কাপড় এমনকি দোলনা ও কিনে নিয়ে আসছে।”

তিন্নি হেসে দিলো। আর বললো

-“ইটস ওকে আপু। ভাই আসলে ভীষণ এক্সাইটেড। তাই এমন করছে।”

এবার রিয়াজ বললো

-“আরে আমি আমার বেবির জন্য জামা কাপড় এনেছি তাতে তোমার সমস্যা কি?”আগে থেকে একটা প্রিপারেশন রাখতে হবে না।”

সূচনা রেগে বললো

-“তাই বলে তুমি সাত মাস আগে থেকেই সব কিনে রাখবে?”

জিসান তাদের থামিয়ে বললো

-“প্লিজ এবার তোরা থাম। সামান্য কিছু নিয়ে ঝগড়া করা লাগবে।”

এবার রিয়াজ বললো

-“যখন নিজে বাবা হবি তখন আমার ফিলিংসটা বুঝতে পারবি।”

এবার তিন্নি অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। জিসান আড়চোখে তিন্নিকে দেখছে আর মুচকি হাসছে।
সবাই মিলে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিলো।রিয়াজ তাদের জন্য স্পেশাল তেহেরী রান্না করেছে। এটা নাকি সে মেসে থাকতে শিখেছে।
সূচনা তিন্নিকে নিয়ে তার রুমে আসলো।আর একটা ব্যাগ বাড়িয়ে বললো

-“এই সালটা তোমার জন্য। দেখে মনে হলো তোমাকে খুব মানাবে।”

-“আসলেই খুব সুন্দর থ্যাংক ইউ আপু।”

-“বুঝলে আমি এক পাগলের সাথে সংসার করি। না হলে বাচ্চার কথা শুনে কেউ এভাবে কাঁদে।”

-“বেবি কথা শুনে ভাইয়া ভীষণ খুশি হয়েছে।”

-“আমি জানি। মানুষটা স্ট্রিক অফিসার হলে কি হবে। সে আসলে ভীষণ ইমোশনাল। এই এতিম মানুষ গুলো খুব অল্পতেই খুশি হয়ে যায়। আমাকে যেদিন বিয়ে করেছে সে দিনও কেঁদেছে। আমার ভাইটাও কিন্তু এতিম। ওকে কখনো কষ্ট দিওনা। তুমি অনেক বুদ্ধিমতী একটা মেয়ে। নিশ্চয়ই নিজের স্বামীর চোখের ভাষা পড়ার ক্ষমতা তোমার আছে। আমি জানি যেকোনো পরিস্থিতি আসুক না কেন রিয়াজ কখনো আমার হাত ছাড়বে না। আর তোমাকেও গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, সকল পরিস্থিতিতে জিসান তোমার পাশে থাকবে।”

তিন্নির চোখ থেকে দুই ফোঁটা অশ্রু ঝড় গেলো।তার পাপা ছাড়া এই একটা মানুষের সামনে সে তার ইমোশন ধরে রাখতে পারে না।সে সূচনা বললো

-“আসলেই কি সে আমার পাশে থাকবে?”

-“অবশ্যই থাকবে।আমি ওকে চিনি।তবে তুমি বিশ্বাস করো বা না করো এই কথা সত্যি যে তুমি জিসানকে ভালোবেসে ফেলেছো।”

তিন্নি অবাক হয়ে তাকালো।সূচনা হেসে তিন্নির গালে হাত ছুঁয়ে বললো

-“তোমার মনে কিছু একটা চলছে।যা তুমি জিসানকে বলতে চাও but পারছনা।তাইনা?”

তিন্নি এবার আরেক দফা অবাক হলো।সূচনা আপু কি মানুষের মন পড়তে জানে?সে কেনো তার মায়ের পেটের বোন হলনা।তাহলে জীবনটা তার জন্য অনেক সহজ হয়ে যেত।সূচনা বললো

-“সম্পর্কের ভিত্তি হলো বিশ্বাস।তুমি চোখ বন্ধ করে জিসানকে বিশ্বাস করতে পারো।সে তোমাকে নিরাশ করবে না।”

তিন্নি ছলছল নয়নে সূচনা দেখে বললো

-“আমার জীবনে আপনি আরো আগে কেনো আসেননি?”

সূচনা হেসে বললো

-“জিসান আসেনি তাই।”