#মেঘবিলাসী
#israt_jahan_arina
#part_35
আকাশে আজ কালো মেঘ জমেছে। কিছুক্ষণ পর হয়তোবা সেই মেঘ কান্নার রূপ নিয়ে এই শহরের মাঝে ঝরে পড়বে।বাহিরে এলোমেলো বাতাস বইছে।বাতাসে শিউলী ফুলের ঘ্রাণ ভেসে আসছে।তিন্নির বারান্দায় সে একটা শিউলী ফুল গাছ দেখেছে।ফুলের সুবাস যেনো তার রুমটাকে স্নিগ্ধতায় ছেয়ে রাখে।তাইতো সেও তিন্নির জন্য শিউলী ফুল গাছ এনেছে।বিছানায় এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে জিসান।জিসানের দুই চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।
যেই মেয়েটাকে সারা জীবন আগলে রাখতে চেয়েছিলো,আজ নিজেই তার সাথেই এতটা রুঢ় বিহেভ করেছে।তার চোখে অশ্রু ঝরিয়েছে।ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার।এই মেয়েটার চোখের পানি সে খুব বেশি ঝরতে দেখেনি।মনটা বোধয় পাথরের তৈরি।তবে যত বার এই পাথরের বুক থেকে অশ্রু ঝরেছে,ততবার জিসানের মন ক্ষত বিক্ষত হয়েছে।একজন মেচিউর ছেলে হয়েও কতোবার টিনেজারদের মতো কাজ করেছে।এই মেয়েটার একটা মিষ্টি হাসি তার দিনটাকে উচ্ছ্বাসিত করে তুলতো।
নিজের ভিতরে গিলটি ফিল হচ্ছে। তবে এতো কিছুর মাঝে জিসান একটা জিনিষ খেয়াল করেছে। বিয়ের দিন তার দেওয়া লকেট টা আজ তিন্নির গলায় দেখেছে।আগে কখনো পড়তে দেখেনি।এমনকি তিন্নি সেই টেবিলের ড্রয়ারেই তার দেওয়া লকেট আর দেনমোহরের টাকার খামটা বের করেনি।আজ তার মাথা এতো বেশি গরম হয়েছিলো যে বিষয়টা তখন খেয়াল করেনি।তবে তিন্নি কেনো আজ তা পড়লো?আর এই রূপেই বা কেনো জিসানের কাছে আসলো?
হঠাৎ জিসান সোয়া থেকে উঠে বসলো।তিন্নি তাকে কিছু বলতে চেয়েছিলো। কিন্তু কি?তিন্নি কি বলতে চায় তা শোনা দরকার ছিলো।
তার পর তার চোখ পড়লো খাটের পাশের টেবিলে।তিন্নির রেখে যাওয়া খামটা সেখানেই আছে।কিছু একটা ভেবে জিসান দ্রুত খামটা হাতে নিলো।খাম খুলে সে একটা চিঠি খুজে পেলো।বেশ কয়েক পাতার।তিন্নি কি তার মনের কথা এই চিঠির মাধ্যমে জিসানকে জানতে চেয়েছে?জিসানের গলা শুকাতে লাগলো।কয়েক বার ঢোক গিলে সে চিঠিটা পড়তে শুরু করলো।
ACP সাহেব,
প্রিয় শব্দটি দিয়ে লেখা শুরু করলাম না।কারণ আদো এই শব্দটা ইউজ করা উচিৎ হবে কিনা জানি না।আমার চিঠি পড়ে সেটা আপনিই নাহয় ডিসাইড করবেন?অনেক সাহস নিয়ে এই চিঠিটা লিখতে বসেছি আজ।
আপনি জানেন আমরা সবসময় যে ভাবে জীবনটাকে ভাবি,ঠিক সেই ভাবে সাজাতে পারিনা।অনেক কিছুই আমাদের হাতে থাকে না।যেমন কোনোদিন আমার আপনাকে এমন চিঠি দিতে হবে তা আমিও ভাবিনি।
আমি জানি বিয়ের পর থেকে আমাকে নিয়ে আপনার মনে অনেক প্রশ্ন জেগেছে।আমি কেনো আপনাকে মেনে নিতে পারিনি? কেনো আমি সম্পর্কটাকে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারিনি?কেনো আমার দিক থেকে আমি কোনো এফোর্ড দেইনি?আপনার সব প্রশ্নের জবাব আমি দিবো।অনেক কথা আমি হয়তো মুখে বলতে পারবো না।তাই লিখে জানাচ্ছি।
বাবা মায়ের ভীষণ আদরের মেয়ে আমি।তবে এই পৃথিবীতে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হলো আমার পাপা।জীবনে কোনো কিছুর অভাব আমি কোনোদিন পায়নি।ছোট বেলা থেকে সব সময় আত্মীয়দের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি।তবে আমি অনেক বেশি চুপচাপ ছোট বেলা থেকে।নতুন মানুষদের সাথে আমি মিশতে পারিনা।তবে ছোট বেলা থেকেই আমি প্রচন্ড জেদি।হয়তো পাপার অধিক ভালোবাসা পেয়ে এমন হয়েছে।
একটু বড় হওয়ার পর থেকেই আমি আমার এলাকাতে অনেক পরিচিত মুখ হয়ে যাই।তার এক মাত্র কারণ হয়তো আমার বাহ্যিক সৌন্দর্য।আমাকে নিয়ে মামনি অনেক বেশি চিন্তিত থাকতো।আমার স্কুলের সকল টিচারের প্রিয় ছাত্রী ছিলাম আমি। এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি আমার সুন্দর্য দায়ী না।ক্লাসে অলওয়েস টপ করতাম হয়তো তাই।তবে আমি কোনো দিন বাহ্যিক রূপকে প্রাধান্য দেই না।কারণ যার মন সুন্দর নয় তার সকল রূপও ফিকে হয়ে যায়।
আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি।আমি কৈশোর বয়স শেষে যৌবনে পদার্পণ করেছি।এই সময়টা অনেক মেয়ের জন্য আবেগপ্রবণ হলেও আমার ক্ষেত্রে তা ছিল না। পাপা বরাবর আমাকে রিয়েলিস্টিক হতে শিখিয়েছে।আবেগে ভেসে যাওয়া মেয়ে আমি কখনো ছিলাম না।
প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময় একটা ছেলে আমাকে প্রতিদিন ফলো করতো।প্রথম প্রথম না বুঁজলেও পড়ে ঠিক বিষয়টা খেয়াল করতে পেরেছি।ছেলেটার সাথে তার দুইজন ফ্রেন্ডও থাকতো।
একদিন স্কুলে যাওয়ার পথে ছেলেটা আমার রাস্তা আটকায়।আমি মোটেও ভীতু মেয়ে নই।তাই আমি রেগে বলি
-“কি সমস্যা? রাস্তা আটকে রেখেছেন কেনো?”
ছেলেটা মুচকি হেসে বললো
-“তুমি তিন্নি তাইনা?”
আমি মোটেও অবাক হইনি।এই মর্ডান যুগে কারো নাম বের করা খুব সহজ।যেমন আমি জানি তার নাম রাকিব আজমীর।আমাদের এখানকার কোনো এক বড়ো নেতার ছেলে।নিজেও রাজনীতির সাথে জড়িত।ভার্সিটিতে লেখাপড়া না করে ক্ষমতা দেখিয়ে বেড়ায়।সে এবং তার বন্ধুরা তার বাবার ক্ষমতার জোরে এলাকাতে যা খুশি করে বেড়ায়।আমি বিরক্ত হয়ে বললাম
-“হে,তো?”
-“তো কিছু না।আমি রাকিব আজমীর।তোমরা সাথে আমার কথা আছে।”
-“সরি আমি অপরিচিত কারো সাথে কথা বলিনা।”
-“সমস্যা নেই কথা বললেই পরিচিত হয়ে যাবে।”
-“মানে?”
-“মনে খুব সোজা।আমি তোমাকে পছন্দ করি।”
বিষয়টা আমি আগেই আঁচ করতে পেরেছিলাম।তাই খুব বেশি অবাক হইনি।আমি বললাম
-“কিন্তু আমি আপনাকে পছন্দ করি না।”
-“সমস্যা নেই,পছন্দ হয়ে যাবে।”
-“কখনোই এমন হবে না।”
-“তা দেখা যাবে।”
এর পর থেকে সে আমাকে রাস্তা ঘাটে বিভিন্নভাবে উত্যক্ত করতে শুরু করে।আমি বাসায় কাউকে কিছুই জানায় নি।পাপা চিন্তা করবে তাই।অন্যায় সহ্য করা আমার ধাঁচে নেই।মেয়ে বলে চুপ করে থাকবো তেমন আমি নই।কাউকে পছন্দ করার অধিকার যেমন আমার আছে,তেমনি কাউকে না বলার অধিকার ও আছে।
প্রতিদিনের মতো রাকিব আমার পিছু নিয়েছিলো।আমাকে নানা ভাবে উত্যক্ত করতে শুরু করে।একসময় রাস্তার মধ্যে আমার হাত ধরে ফেলে। রাস্তার আশেপাশে হাজারো মানুষ ছিল কিন্তু কেউ আমাকে হেল্প করতে আসেনি।আমি প্রচন্ড রেগে যাই।এবং রাস্তার মধ্যেই তাকে থাপ্পড় মারি।সেদিন রাগে আমার সারা শরীর কাপছিল।কাউকে পছন্দ করলে এইভাবে উত্যক্ত করা যায়?
আমার সেই থাপ্পড়ের পর বেশ কয়েকদিন আর আমাকে ডিস্টার্ব করেনি। আমি অনেকটা রিলাক্স হয়ে যাই। বিষয়টা মিটমাট হয়ে গেছে ভেবে আমি আর পাপাকে কিছু জানায়নি।
একদিন আমি বিকেলে শপিংয়ে বের হয়েছিলাম। শপিং শেষ করে বাইরে এসে দেখি সন্ধ্যা হয়ে গেছে।সেদিন আমি গাড়ি নিয়ে যাইনি।তাই রিকশা করে বাড়ি ফিরছিলাম।কিছুদুর আসার পর হঠাৎ একটা গাড়ী সামনে এসে দাড়ালো।কিছু বুজে উঠার আগে গাড়ী থেকে তিনজন বের হয়ে আমাকে টেনে হিচড়ে তাদের গাড়িতে উঠালো।ততক্ষণে আমি বুজে গেছিলাম তারা কারা,আর আমার সাথে কি হতে চলছে।
তারা আমাকে একটা বাড়িতে নিয়ে যায়।ততক্ষণে আমার হাত পা তারা বেধে দিয়েছিলো।ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে আসছে।কি করবো কিছু বুজে উঠতে পারিনি।রাকিব সামনে এসে আমাকে অনেক গুলো থাপ্পড় দিতে লাগলো।হয়তো সেই দিনের থাপ্পড়ের প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করছে।”
এতো টুকু পরেই জিসানের শরীর কাঁপতে লাগলো।চোখের সামনে চিঠিটা ঝাপসা দেখতে লাগলো।চিঠিটা আগে পড়ার শক্তি সে কিছুতেই পাচ্ছেনা।তবুও সাহস যোগাড় করে চিঠিটা পড়তে শুরু করলো।
“আজও সেই বিভিৎস রাতের কথা মনে হলে আমার শরীর এখনো কাপে।গলা শুকিয়ে আসে।আমার পুরো পৃথিবীটা ঘুরতে থাকে।
আপনি এখন যা ভাবছেন তাই! হে সেদিন ধর্ষনের শিকার হয়েছিলাম।গণধর্ষণ!রাকিব আর তার দুই বন্ধু।একটা মেয়ের সবচাইতে মূলবান জিনিস সতীত্ব আমি হারিয়েছি সেইদিন।আমি কখনো আপনাকে সেই রাতের বর্ণনা দিতে পারবনা।আমার বুকটা জ্বলে যায় সেই রাতের কথা মনে পড়লে।
সৌন্দর্য মেয়েদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ হলেও আমার জন্য ছিল অভিশাপ।সৌন্দর্য্য আমার জীবনটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।সেদিন শুধু আমার সতীত্ব যায়নি,আমার আত্মবিশ্বাস, আত্মমর্যাদা সব হারিয়েছি।সমাজের চোখে আমি হয়ে উঠেছি সবচাইতে ঘৃণার পাত্র।
মাঝরাতের দিকে তারা আমাকে রাস্তায় ড্রেনের পাশে ফেলে যায়।তখনও আমি পুরোপুরি জ্ঞান হারাই নি। আমি আশেপাশের সব কিছু ঝাপসা দেখছিলাম। কোথায় আছি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। পুরো শরীর জুড়ে আমার যত না ব্যথা ছিল তার চেয়ে বেশি ব্যথা হচ্ছিল আমার মনে। আমি চিৎকার করে কাউকে ঢাকতে চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু টু শব্দ টা পর্যন্ত মুখ দিয়ে বের করতে পারছিলাম না। আমার দু’চোখ বন্ধ হয়ে আসছিল। এঅবস্থায় কতক্ষণ সেখানে পড়েছিলাম আমি জানিনা।
একজন মধ্যবয়স্ক লোক তার ওয়াইফ কে নিয়ে হয়তো সকালে হাঁটতে বের হয়েছে। রাস্তার পাশে আমাকে দেখে।আমার গায়ের জামা অনেক জায়গাতেই ছেড়া ছিলো।মহিলাটি তার নিজের গায়ের ওড়না দিয়ে আমাকে ঢেকে দিয়েছিল।তারা দ্রুত আমাকে হসপিটালে নিয়ে যায়। তারপর ঠিক কত সময় পর আমার জ্ঞান ফেরে আমি জানিনা। তবে আমি চোখ খুলে আমার সামনে পাপাকে দেখতে পেয়েছি।ফ্যালফ্যাল চোখে আমার দিকে চেয়ে আছে। দুচোখ বেয়ে তার অশ্রু ঝরছিল।কারণ সারা জীবন তিনি যে মেয়েকে ফুলের মতো আগলে রেখেছে সেই মেয়েরি কষ্ট বেদনা সহ্য করতে পারছিল না। অধিক শোকে হয়তোবা পাথর হয়ে গেছেন। আর আমার মামনি আমার পায়ের কাছে বসে মুখ গুঁজে কাঁদছেন। বিশ্বাস করুন, সেদিন আমার কাছে নিজের শারীরিক যন্ত্রণার চাইতে এই দুজন মানুষের চোখের জল বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছিলো।
আমাকে তিন দিন পর বাসায় আনা হয়।তখন জেনেছি সেই বয়স্ক দম্পতি আমার কাছথেকে নাকি পাপার নম্বর নিয়েছিলো।তবে এমন কিছুই আমার মনে নেই।তখন আমার বাসার পরিবেশ ছিলো অন্যরকম।পাপা মামনি আমাকে সব সময় খুশি রাখার চেষ্টা করেছে ।কিন্তু আমি আমার মধ্যে ছিলামনা।।আমিতো তখন সজ্ঞানে ছিলাম না,তাই কিছুই মনে পড়ছেনা।নিজেকে ঘর বন্ধ করে নিয়েছিলাম।আমার রুমে সূর্যের আলো টুকু সহ্য করতে পারছিলাম।নিজের প্রতি কেমন ঘৃণা হতে লাগলো। আমি অনেক মর্ডান ফ্যামিলিতে বড়ো হলেও ওই সময় গুলিতে আমি অনেক চিপ চিন্তা ভাবনা করতে শুরু করি।
পাপা তার এক বন্ধুর সাথে কথা বলে।তিনি ছিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা।আমার সম্মানের কথা ভেবে পাপা গোপনে রাকিব এবং তার দুই বন্ধুর নামে কেস করে।তাদের গ্রেফতার করা হয়।পাপার বন্ধু পাপকে জানায় রাকিবের বাবা রফিকুল আজমীর বিশাল বড় নেতা।তার ক্ষমতার কাছে আমরা পারবোনা।হলো তাই।রাকিবের বাবা নিজের ক্ষমতার জোড়ে ছেলেকে জেল থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছেন।সেই থানার ওসিকে টাকা দিয়ে কেসটা দামা চাপা দিতে বলেছেন।পাপা অনেক চেষ্টা করেও তার মেয়ের অন্যায়কারীদের শাস্তির আওতায় আনতে পারেনি।সে দিন আমি প্রথম পাপকে অসহায় হতে দেখেছি।ভীষণ ভাবে ভেঙে পড়তে দেখেছি।তবুও চেষ্টা করতে দেখেছি।তারা হসপিটালে যেয়ে পাপকে কেসটা তুলে নিতে হুমকি দিতে শুরু করে।মামনিকে রাস্তা ঘাটে ভয় দেখায়।তখন আমাদের জীবনে দুর্বিসহ নেমে আসে।আমার সম্মান যেনো ক্ষুণ্ণ না হয় তাই কোনো রেলিটিভ এর সাহায্য নিতে পারছিলো না।
এই সব স্ট্রেস নিতে না পেরে আমি একটা খারাপ কাজ করে বসলাম।সুইসাইড আটেম্প নিলাম।অনেক গুলো স্লিপিং পিল নিলাম।কিন্তু মরতে পারিনি মামনি আমাকে সঠিক টাইম হসপিটালে নিয়ে আসে।সে দিন আমি পাপাকে হাউমাউ করে কাদতে দেখেছি।আমার এই কাজে পাপা ভেঙে পড়েছে।নিজেকে কেমন অপরাধী মনে হচ্ছিল।আমার জন্য আমার পুরো পরিবার সাফার করেছে।
আমাদের সমাজের নিয়ম আলাদা।ধর্ষিতাকে সমাজের মানুষের লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়,আর ধর্ষকরা সমাজে বুক ফুলিয়ে বাঁচে।পাপা কখনো চাইতোনা আমি সমাজে নিচু হয়ে বাচি।
পাপা তখন ভীষণ ভাবে ভেঙে পড়েছিল।তখন আমার পুরো পরিবারের সাপোর্ট সিস্টেম হয়ে উঠলো আমার মামনি।সবাইকে স্বাভাবিক লাইফ ফিরিয়ে আনতে নিজেকে শক্ত করে নিলো।আমি তত দিন স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম।করো সাথে কথা বলতাম না।নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম।
পাপা আমার সাথে কথা বলতে পারতনা।আমাকে দেখেই তার চোখ ভিজে উঠতো।ভয়ে আমি বাসার বাহিরে বের হতে পারতাম না।তামিম তখন অনেক ছোট।তামিমকেও আমি সহ্য করতে পারতাম না।পুরো পৃথিবীটা আমার কাছে বিষাক্ত মনে হতো।আমার সাথে এমন কেনো হলো বলতে পারেন? আমার অপরাধ কি ছিলো?এক নিমিষেই আমার সব স্বপ্নকে কেনো ভেঙে দিয়েছিলো তারা?
অনেকটা দিন কেটে যায়। আমার স্কুলের টিচাররা আমার সাথে দেখা করে আবার স্কুলে যাওয়ার কথা বলে।তারা এই বিষয়টা জানেনা।পাপা হয়তো কিছু একটা বুঝিয়েছে।আমি ক্লাস করতে রাজি হয়নি।তবে এক্সাম দিবো বলেছিলাম।আসলে সেই মুহূর্তে আমার জীবনের কোনো লক্ষ্য খুজে পাচ্ছিলাম না।
পাপকে ভীষণ অস্থির দেখাতো তখন।হয়তো আমার পরিস্থিতি তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না।আর রাকিবরাও তখন বাহিরে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল।যা আমি বা আমার পরিবার মেনে নিতে পারছিলাম না।।মামণি সবার সামনে স্বাভাবিক থাকলেও ভিতরে ভিতরে মরে যাচ্ছে।
একদিন সকালে বসে নাস্তা করছিলাম।হঠাৎ টিভিতে একটা সংবাদ শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে যাই।আমার দু চোখ ভিজে উঠে।এটা কি করে হতে পারে?