মেঘমেদুর দিনে পর্ব-০৯

0
75

#মেঘমেদুর_দিনে
লেখনীতে: #মাশফিত্রা_মিমুই
[পর্ব:০৯]

দুলাভাইকে বিদায় জানিয়ে নীলক্ষেত এসেছে শিথিল। বিভিন্ন ব্যস্ততায় অনেকদিন ধরে এ পথে আসা হয়নি তার। আচমকা মেয়েলি কণ্ঠে নিজের নাম শুনে আশ্চর্য হয়ে পেছন ফিরে তাকালো। মিশমিকে দেখতেই অবাক হওয়ার ভান ধরে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল সম্মুখে। মিশমি মিষ্টি হাসলো,“শীতল ভাই! আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন?”

“ওয়া আলাইকুমুসসালাম। নামের সঠিক উচ্চারণ শিখো আগে।”

“উচ্চারণে কী আসে যায়? অনেকদিন পর আপনাকে দেখলাম। অনলাইনে খুব কম আসেন মনে হয়? রিপ্লাই দেন না যে?”

“তোমাকে ইগ্নোর করে চলি।”

পাশে কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আবৃত্তির দিকে গাঢ় দৃষ্টিতে তাকাল শিথিল। নরম স্বরে বলে উঠল,“হাই আবৃত্তি!”

ঘাবড়ে গেলো আবৃত্তি। শির উঁচু করে তাকাতেই অবাধ্য চোখের সাথে দৃষ্টির বিনিময় হলো। শিথিল চমৎকার হেসে জিজ্ঞেস করল,“আমাদের তৃতীয় সাক্ষাৎ। তা কেমন চলছে দিনকাল?”

চমকালো, থমকালো আবৃত্তি।ছেলেটা কী তাকে কোনো ভাবে চিনতে পেরেছে? কীভাবে সম্ভব? উত্তর দেওয়ার আশায় ঠোঁট নাড়ল সে। কিন্তু পারলো না। মিশমি ভ্রু নাচিয়ে বললো,“দুইবার হবে। তাও আমাদের বাসায় কথার ফাঁকে একপলক দেখেছেন হয়তো। তাতেই চিনে ফেলেছেন? কই আমায় দেখলে তো সহজে চিনেন না।”

এবারেও তার কথায় বিশেষ পাত্তা দিলো না শিথিল। তার দৃষ্টি এখনো সামনে অপ্রস্তুত ভঙিতে দাঁড়ানো মেয়েটির দিকেই নিবদ্ধ। তাকে উদ্দেশ্য করে বললো, “রাস্তাঘাট কিছুই তো চিনো না। তাহলে এই পাগলের সাথে এত দূরে কেনো এসেছো? এ মেয়ে যেই চতুর আর পাকনা! তোমায় বেচে দিলেও টের পাবে না।”

মিশমি ফুঁসে উঠল। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,“দেখুন ভাইয়া!”

“বলার আগে থেকেই দেখছি, তুমি বলতে থাকো।”

“আবৃত্তি আপু নয় আমার দিকে তাকান। আপনি আমায় পাচারকারীর সঙ্গে তুলনা দিলেন?”

“তুলনা দেইনি। একেবারে পাচারকারী বলে তোমায় অপমান করেছি।”

হতভম্ব হয়ে গেলো মিশমি। মুখের ওপর এত্ত বড়ো অপমান! শিথিল মুখে গাম্ভীর্য এঁটে জিজ্ঞেস করল, “স্কুল, কলেজ থেকে সোজা দুজনে মিলে এদিকে চলে এসেছো কেনো? আন্টি জানে এই খবর?”

“এমন করে বলছেন যেন আপনি কোথাও যাওয়ার আগে আঙ্কেলকে জানিয়ে যান?”

“আমি তোমার থেকে বড়ো।”

“কখনো কী ছোটো ছিলেন না?”

“আজ আমার দিনটাই মনে হচ্ছে খারাপ। সকাল থেকে যেখানে যাচ্ছি সেখানেই কোনো না কোনো রিলেটিভের সাথে দেখা হচ্ছে। তোমাদের সমস্যা কী অপ্রিয় রিলেটিভ? তোমাদের জন্য কী এখন থেকে মাস্ক পরে বাইরে বের হতে হবে?”

“মাস খানের পর দেখা হয়েছে। কোথায় ট্রিট দিবেন তা না করে বিরক্তি দেখাচ্ছেন? আপনি না বড়ো ভাই হন?”

“খাওয়ার সময় শুধু বড়ো ভাই মনে পড়ে?”—বিদ্রুপ করে পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করল শিথিল।

মিশমির মুখে স্বচ্ছ হাসি ফুটে উঠল। দু হাত ঘষতে ঘষতে তাকিয়ে রইল সেদিকে। বেশ কতক পাঁচশ আর হাজার টাকার ভেতর থেকে দুইটা পঞ্চাশ টাকার নোট হাতে ধরিয়ে দিয়ে শিথিল বললো,“দুজনে দুই প্লেট ফুচকা আর পটেটো চিপস খেয়ে বাড়ি যাও।”

“ছিঃ ভাইয়া! আজকালকার বাজারে পঞ্চাশ টাকায় একজন মানুষ চলতে পারে?”

“আজও নিশ্চয়ই কোনো অপকর্ম করতে এসেছিলে? তা কী করলে? হাতুড়ে ডাক্তারকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করবো?”

দাঁত কেলিয়ে অপ্রস্তুত হাসলো মিশমি। ঘাড় চুলকে মিনমিন করল,“একশ টাকা! হে হে, এ তো অনেক! এত টাকা দেওয়ার কী প্রয়োজন ছিল? থাক দুটো মিনি বার্গার কিনে খেয়ে নিবো না হয়।”

মুচকি হাসলো শিথিল। পকেট থেকে আরো একটি একশ টাকার নোট বের করে ধরিয়ে দিলো,“যাও বড়োটাই কিনে নিয়ে এসো।”

“আচ্ছা, বাই।”

আবৃত্তিকে সঙ্গে নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল মিশমি কিন্তু তাকে যেতে দেওয়া হলো না। পথ রোধ করে দাঁড়াল শিথিল। আশেপাশে তাকাতে তাকাতে ব্যস্ত ভঙিতে বললো,“ছেড়ে দিলেই কোথায় কোথায় ঘুরবে তার ঠিক নেই। তুমি যে বয়সের আগেই পেকে গিয়েছো তা আমি জানি। ওকে এখানে বন্ধক রেখে তুমি গিয়ে কিনে নিয়ে এসো। এরপর আমার চোখের সামনে বাড়ির রাস্তা ধরবে।”

মুখ ভার হলো মিশমির। এই ব্যাটার মুখোমুখি হওয়া ভুল হয়েছে তার। চরম ভুল!ভেবেছিল বড়ো মগবাজার দিয়ে ঘুরে তারপর বাড়ি ফিরবে কিন্তু সেই আশা ভেস্তে গেলো। আবৃত্তির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করল,“ফেঁসে গেছি আবৃত্তি আপু। কিছু করার নেই। অবাধ্য হলে আপুর কাছে বলে দিবে। তুমি বরং এখানে দাঁড়াও আমি বার্গার নিয়ে ফিরে আসছি।”

আবৃত্তি অস্বস্তি বোধ করল। এভাবে একটা ছেলের সাথে একা দাঁড়িয়ে থাকবে রাস্তায়? যদিও এর আগে একবার সাহস করে এই ছেলেটার সাথেই সে পাড়ি দিয়েছিল নিজের অচেনা গন্তব্যে। কিন্তু!

“কোন ইয়ারে পড়ছো?”

শিথিলের প্রশ্নে একপলক তার দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো আবৃত্তি। উত্তর দিলো,“ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ার।”

“ওহ, বাচ্চা মেয়ে।”

সে কথা মেয়েটির শ্রবণালী পর্যন্ত পৌঁছাল না। পাল্টা প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করল, আর আপনি? কিন্তু তাও আর করতে পারলো না। কণ্ঠনালী পর্যন্ত এসেই এলোমেলো হয়ে গেলো সব। নিজের এমন স্বভাবের সাথে বিরক্ত আবৃত্তি। খুব বেশি কাছের মানুষ না হলে কারো সাথে সরাসরি জড়তাহীন কথা বলতে পারে না সে। শিথিল নিজেই পুনরায় জিজ্ঞেস করল,“কথা কম বলো?”

জোরপূর্বক হেসে মাথা নাড়ল আবৃত্তি। মিইয়ে যাওয়া কণ্ঠে জানতে চাইল,“আমায় চিনেছেন, আপনি? সেদিন রাতে….

“হ্যাঁ।”

“আজ?”

“না, তোমার মামা বাড়িতে যেদিন দেখা হয়েছিল সেদিনই।”

অবাক হলো আবৃত্তি,“কীভাবে? মুখ তো ঢাকা ছিল।”

“চোখ দেখে, নাম শুনে।”

তৃতীয়বারের সাক্ষাতে এতটুকু কথাই শুধু হলো দুজনার। মিশমি নিজের কাজ সেরে ফিরে এলো। তারপর বিদায় নিয়ে চলে গেলো বাড়ির উদ্দেশ্যে। শেষবারের মতো ফের দুজনার চোখাচোখি হলো।খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে এত এত মানুষের ভিড়ে হঠাৎ করেই শিথিল আবিষ্কার করল, মেয়েটার চোখের ভাষা জটিল। কুয়োর থেকেও তা অত্যন্ত গভীর। শ্যামবর্ণের হলেও ওই চোখেই যেন ঘাপটি মেরে রয়েছে দুনিয়ার অবাধ সৌন্দর্য।
___________

বাসার ভেতরে একসাথে প্রবেশ করল আবৃত্তি আর মিশমি। শাহিনূর তখন ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছেন। মিতাও সেখানেই বসা। চলমান সিরিয়াল নিয়ে ক্ষণে ক্ষণে একে অপরের মধ্যে আলোচনা চলছে। দুজনকে একসঙ্গে দেখে বাঁকা দৃষ্টিতে তাকালেন তিনি। সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন,“স্কুল, কলেজ অনেক আগেই ছুটি হয়ে গিয়েছে। তাহলে বাড়ি ফিরতে দেরি হলো কেনো? আর দুজনে একসঙ্গেই বা কীভাবে?”

আবৃত্তি আবার গুছিয়ে মিথ্যা বলতে পারে না। সত্যও অবশ্য বলতে পারে না। তাই মুখে কুলুপ এঁটে মিশমির দিকে তাকিয়ে রইল। মিশমি এসবে অভ্যস্ত। তাই সুদৃঢ় কণ্ঠে প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললো,“আবৃত্তি আপুর কলেজে প্রোগ্রাম চলছে। স্কুল শেষে ওখানেই দেখতে গিয়েছিলাম। কি যে সুন্দর হচ্ছে না আম্মু! মোবাইল সঙ্গে থাকলে ভিডিও করে এনে তোমায় দেখাতাম।”

কয়েক সেকেন্ড তাদের দিকে তাকিয়ে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে টিভিতে স্থির করলেন শাহিনূর। সম্ভবত মেয়ের কথা বিশ্বাস করেছেন। ব্যস্ত কণ্ঠে বললেন,“রান্নাঘরে ডাল পুরি রাখা আছে। হাত-মুখ ধুয়ে দুজনে খেয়ে নাও।”

মিশমি গলা ঝাড়ল,“একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিল, আম্মু।”

“কী কথা?”

“বাবাকে বলবে আবৃত্তি আপুকে যেন একটা নতুন মোবাইল কিনে দেয়।”

শাহিনূর চট করে মেয়ের দিকে একপলক তাকিয়ে ফের আবৃত্তির দিকে তাকান। আবৃত্তির মনে ভয় জমে। মাথা নাড়িয়ে বলে,“আমি চাইনি।”

মিশমি নিজের কথা সম্পন্ন করল,“আবৃত্তি আপু কিছু বলেনি। ও মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে? আসলে এই যুগে মোবাইল ছাড়া চলা যায় না, আম্মু। কলেজে সবার হাতে মোবাইল আছে। লেখাপড়ার বিভিন্ন বিষয় থেকে শুরু করে অনলাইন ক্লাস, নোট, রুটিন সব আজকাল মোবাইলের ভেতরেই। তাই মোবাইল ছাড়া লেখাপড়া কঠিন ব্যাপার। তুমি তো বোঝোই নাকি?”

মাথা নাড়ালেন শাহিনূর। হ্যাঁ, না কিছু বললেন না। দুজনে নিজেদের ঘরের দিকে পা বাড়াল। মিশমি ফিসফিস করে বললো,“দুনিয়াতে অনেস্টির কোনো ভ্যালু নেই, বুঝেছো? তাই নিজের স্বার্থের জন্য মাঝে মধ্যে মিথ্যা বলতে হয়। এটা খারাপ কিছু নয়। চিন্তা করো না। তোমাকেও না হয় শিখিয়ে দিবো।”

আবৃত্তি চুপচাপ শুধু শুনলো। ঘরে আসতেই দেখা মিললো সুশ্রীর। মেঝেতে ভাঙাচোরা কঙ্কাল নিয়ে বসে আছে সে। পাশেই খাতার মধ্যে কিছু লিখছে। তাকে দেখে চমৎকার হেসে জিজ্ঞেস করল,“আজকের দিনটা কেমন কাটলো?”

“আলহামদুলিল্লাহ, তুমি কলেজ যাওনি আজ?”

“গিয়েছিলাম কিন্তু ক্লাস ক্যান্সেল হয়ে গিয়েছে। তাই চলে এসেছি। বাইরে ঘোরাঘুরি করার থেকে বাসায় বসে লেখাপড়া করা ব্যাটার।”

প্রত্যুত্তরে মৃদু হাসলো আবৃত্তি।ব্যাগ রেখে পোশাক নিয়ে চলে গেলো বাথরুমে। সকালে গোসল করা হয়নি তাই এখন গোসল করবে সে।

সুশ্রীর ঘরটা আগের চেয়ে এখন বেশ পরিপাটি। সব নির্দিষ্ট স্থানে গোছানো। আবৃত্তির আবার সূচিবায়ু আছে। ঘরের কাজ করতে তার ভালো লাগে। কোনো কাজে একটু ফাঁক থেকে গেলেই খুঁতখুঁত করে মন। অগোছালো, অপরিচ্ছন্ন কিছু দেখতে পারে না। তাই সুশ্রীর ঘরে থাকার সুবাদে রোজ ঘর পরিষ্কার করা তার স্বভাবে পরিণত হয়েছে।

ক্লাসের নাম করে সকালে হল থেকে বের হলেও ক্লাসে অনুপস্থিত ছিল আরফিন। গিটার হাতে সারাদিন কোথায় কোথায় ঘুরেছে কে জানে? ইদানিং বন্ধু মহলে তার হাবভাব খুব একটা সুবিধার ঠেকছে না। সন্ধ্যার পরে ফিরেও আজ পড়ার টেবিলে বসে বইয়ে মুখ না গুঁজে এককোণে বসে মোবাইলে ফিসফিসিয়ে কারো সাথে কথা বলছে। শান্ত শব্দহীন পা ফেলে পাশে গিয়ে কান পেতে দাঁড়াল। প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো। শোনা যাচ্ছে না কিছুই। বিরক্ত হয়ে মাথায় চাটি মারলো,“কার সাথে ফুসুরফুসুর করছিস?”

একপ্রকার লাফিয়ে উঠল আরফিন। ‘পরে কথা বলছি’ বলে কল কেটে মোবাইল চার্জে বসালো।কক্ষে অবস্থান করা সকলের দৃষ্টি তাদের দিকেই স্থির। শান্তর সন্দেহ আরো বাড়ল। বুকের সাথে দুহাত গুঁজে পুলিশি জেরা শুরু করল,“কোনো মেয়ের সাথে কথা বলছিস? কী নিয়ে কথা হচ্ছিল? এই এই গার্লফ্রেন্ড নাকি?”

আমতা আমতা করল আরফিন,“আরে না এমনি বন্ধু আরকি।”

ধরা খেয়ে মিথ্যা বলতে গেলে আরফিনের চোখের মণি এলোমেলো হয়ে যায়। বারবার ঢোক গিলে। বন্ধুরা সেসব ভালো করেই জানে। তাই সন্দেহ না করার অবকাশ রইল না। সজীব মুখোমুখি বসলো। সিরিয়াস ভঙিতে বললো,“ইংরেজিতে যেটা গার্লফ্রেন্ড বাংলায় সেটা আবার মেয়ে বন্ধু। তাহলে দুটো তো একি হলো।”

এবার যেন বিপাকে পড়ল আরফিন। তাদের বন্ধু মহলে কোনো মেয়ে নেই। মেয়েদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। শিথিল আর স্বাধীনের ভাষ্যমতে, নারী পুরুষের মধ্যে কখনোই স্বাভাবিক বন্ধুত্ব হতে পারে না। প্রত্যেক ক্রিয়ারই যেমন বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে তেমনি নারীর প্রতিও একসময় না একসময় পুরুষের ভেতর থেকে লালসা আর ভালোবাসা চলে আসে। তাছাড়া দুই লিঙ্গের মধ্যেই আলাদা আলাদা অনেক বৈশিষ্ট্য এবং সিক্রেট থাকে যা একে অপরের কাছে প্রকাশ করা অসম্ভব। তাই ডিপার্টমেন্টের সকল মেয়ের সাথে স্বাভাবিক কথাবার্তা চললেও খুব মাখো মাখো বন্ধুত্ব তারা রাখে না।

সেখানে আরফিনের জীবনে কিনা নতুন এক বান্ধবীর আবির্ভাব ঘটেছে! ব্যাপারটা ভাবনার বিষয়। আরফিন ভীষণ চাপা স্বভাবের ছেলে। আগ বাড়িয়ে কারো সাথে বন্ধুত্ব তো দূরে থাক নোট সংগ্রহ পর্যন্ত করতে পারে না। অন্য বন্ধুরা আনলেই তার রক্ষে। সেখানে কিনা মেয়ে পটিয়েছে?

শান্ত আর তাকে ঘাঁটলো না। ম্যাসেঞ্জারের ফ্রেন্ডস গ্ৰুপে অ্যাটেনশন দিয়ে শুধু লিখলো,“আজকের তাজা খবর! আরফিন প্রেম করছে। কাল ক্লাস শেষে সবাই চলে আসবি লোকেশনে।”

নোটিফিকেশন আরফিনের কাছেও এলো। তা দেখে সে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। হতাশ হয়ে বললো,“ঢাকঢোল পিটিয়ে গ্ৰুপে বলার কী দরকার ছিল? সবকিছু নিয়ে তোর বাড়াবাড়ি।”

সেসবে পাত্তা দিলো না শান্ত। তার হাত চলছে। দ্রুত টাইপিং করছে।
__________

পড়ার টেবিলে বই খুলে উদাস মনে বসে আছে‌ শিথিল। মেয়েদের মতো হুটহাট তার মুড সুয়িং হয়। তখন খেতে ভালো লাগে না। কারো সাথে কথা বলতে ভালো লাগে না। ঘুম আসে না। এমনকি কোনো কিছুতে মনোযোগ পর্যন্ত দিতে পারে না। আনমনে নোটবুকে কলম চালিয়ে কিছু লিখছে সে। ইমন উঁকি দিয়ে দেখলো। ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন ছুঁড়ল,“এই আবৃত্তি আবার কে?”

শিথিলের ধ্যান ভাঙে। শুভ্র পৃষ্ঠায় জ্বলজ্বল করা নামটা দেখে হকচকিয়ে ওঠে। সাইন পেন দিয়ে লেখাটি মুছে ফেলার চেষ্টা চালায়। ইমন পুনরায় জিজ্ঞেস করে,“প্রেমিকা? প্রেম করছিস?”

“কী যা তা বলছিস? তেমন কেউ না। নামটা মাথায় ঘুরছিল তাই ভুলক্রমে…..

“শান্তর মুখে শুনেছিলাম কয়েকদিন আগে নাকি হলে তোর জন্য চিঠি এসেছিল। সিক্রেট রিলেশনশিপ নাকি?”

“চিঠি আমার বাবা পাঠিয়েছিল।”

“বাপ আবার ছেলেকে চিঠি পাঠায়? তাও এই বিংশ শতাব্দীতে, মোবাইলের যুগে?”

“আমার বাবা পাঠায়। বউ নেই তো তাই যখন ইচ্ছে হয় আমাকেই চিঠি পাঠিয়ে দেয়।”

কথাটা যেন হাওয়ায় উড়িয়ে দিলো ইমন।বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এমন সুন্দর, তাগড়া জোয়ান ছেলের প্রেমিকা থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বরং প্রেমিকা না থাকাটাই অবিশ্বাস্য ব্যাপার। এতদিন শিথিলকে নিয়ে তার সন্দেহ হতো। কিন্তু এই মুহূর্তে সেই সন্দেহের সমাপ্তি ঘটেছে।

শিথিল আহাম্মকের মতো বসে রইল কিছুক্ষণ। কিছু একটা ভাবলো। তারপর হঠাৎ জোরে জোরে বেশ কতক নিঃশ্বাস ফেলে নিজের মনকে বোঝ দিলো, “প্রেম কী? প্রেমিকা কী? ভালোবাসা কী? হুদাই কিছু একটা বলে দিলেই হলো? আন্টির থেকে সব শুনে মেয়েটার জন্য শুধু মনে একটু মায়া জন্মেছিল। ব্যস এতটুকুই। মায়া হতেই পারে। আমার মন আবার ভীষণ নরম কিনা!”

ইমন শুনলো কিনা কে জানে? পেছন থেকে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠল,“এটাই পুরুষ মানুষদের মারা খাওয়ার প্রথম ধাপ।”

চলবে ________

(কপি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।)