#মেঘলা_আকাশে_রংধনু_হবো
#লেখনীতে_তাইয়েবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_১২
হৃদান হিয়ার ঘর থেকে বের হয়ে যায় এরপর ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে যায় আর শরীর বেশ দুর্বল লাগছে তাই ঘুমিয়ে পড়ে। হিয়া ঘুমিয়ে যায় বিকালে উঠে একটু পড়াশোনা করে তারপর নামাজ পড়ে তানিয়ার সাথে আড্ডা দেয়। এই বাড়িতে হিয়া ছাড়া আর কোনো মেয়ে নাই তাই তানিয়া এতোদিন বেশ বোর হচ্ছে কিন্তু এখন হিয়ার সাথে কথা বলতে পারে।
হিয়া খুব মিশুক মেয়ে সবার সাথে মানিয়ে নিতে পারে অনেক সময় আড্ডা দিয়ে রাতে পড়াশোনা করতে বসে যায়। আজকে দিনে একটু গরম পড়েছে কিন্তু রাতে বেশ ঠান্ডা করছে বিকেল দিকে বৃষ্টি পড়েছে তাই একটু হিমেল হাওয়া দিচ্ছে হিয়ার ইচ্ছে করছে ছাদে যেতে। তাই ছাদে যায় হাতে একটা কফি নিয়ে হৃদান ঘুম থেকে উঠে বাহিরের পরিবেশ দেখে তারপর ওর ও ছাদে যেতে ইচ্ছা করে।
কিন্তু ছাদে গিয়ে হিয়াকে দেখে আবার নিচে নেমে আসে হিয়া সুন্দর বাতাস উপভোগ করতে থাকে। বাট ঠান্ডা বাতাসের জন্য ওর একটু শীত লাগছে তবুও হাতের কফির উষ্ণতায় শীত কাটিয়ে নেওয়া যায়। হঠাৎ একটা চাদর ওর গায়ে কেউ জড়িয়ে দেয় পিছনে ফিরে হৃদানকে দেখে বলে –
“- আপনি এখানে আর এই চাদর কোনো দিলেন “।
হৃদান ওর গায়ে ভালো করে চাদর দিয়ে মুড়িয়ে দেয় শুধু হাতটা বাকি রাখে কফি খাওয়ার জন্য। এরপর বলে –
“- এইরকম ঠান্ডা বাতাসে ছাদে এসেছেন কোনো জ্বর এসে যেতে পারে যান ঘরে যান “।
হিয়া একটু মন খারাপ করে ঠান্ডা বাতাসে কি কারো জ্বর আসতে পারে যদিও হিয়া খুব দুর্বল শ্রেণির প্রাণী। কিন্তু এই সুন্দর পরিবেশ রেখে ঘরে কি মনে বসে ইচ্ছা করে আকাশের তারার সাথে তাদের দেশে চলে যেতে কিন্তু হৃদান ওকে ঘরে চলে যেতে বলে। কোথায় তারার দেশ আর কোথায় ঘর লোকটার মতো নিরামষ একটা ও নাই পৃথিবীতে। হিয়া বলে –
“- না আমি একটু পরিবেশ উপভোগ করতে চাই আর বৃষ্টির পানির ফোটা না পড়লে জ্বর আসবে না। হিয়া খুব শক্তিশালি মেয়ে “।
হৃদান হিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে এই মেয়ে নাকি শক্তিশালী যা পাতা কাটির মতো শরীর একটা জোরে বাতাস আসলো উড়িয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু তবুও যদি থাকতে চাই তাহলে থাকুক অনেক অর্ডার করেছে হিয়াকে এবার নিজের পছন্দ মতো কিছু করতে দেখ। হিয়া খুশি হলে ও খুশি হৃদান বলে –
“- ঠিক আছে থাকেন কিন্তু যদি জ্বর বা ঠান্ডা লাগে তাহলে বকা একটাও মাটিতে পড়বে না বলে দিলাম “।
হিয়া একটু বাচ্চাদের মতো হাসি দেয় তারপর আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকে। বাতাসে হিয়ার চুলগুলো মুখে উড়ে আসতে হৃদান সামনে গিয়ে সেটা কানের কাছে খুঁজে দেয় এরপর হিয়ার চোখে চোখ রাখে একজন নারীর চোখের মায়ায় পুরুষ আসক্ত হয় জীবনের সব সুখ ভালোবাসা খুঁজে পায়। হিয়া চোখ সরিয়ে নেয় এরপর একটা লাজুক হাসি দেয়।
হৃদানকে প্রথম যেদিন দেখেছে অনেক খারাপ আর রাগী মনে করেছে কিন্তু এখন ভালো লাগছে। বাবা ঠিক বলেছে একবার যদি হৃদানকে বুঝতে পারে হিয়া তাহলে ওকে খারাপ মানুষ মনে করবে না কথাটা সত্যি। অনেক সময় থাকার পড়ে হিয়া নিচে চলে আসে ঘরে গিয়ে পড়াশোনা করতে বসে আর হৃদান ছাদে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে আর বলে –
“- যানো মা তোমার পর কোনো মেয়ের এতো কেয়ার করছি আমি যতো চেষ্টা করি হিয়ার থেকে দূরে সরতে পারছি না। কি যোনো আছে ওর মধ্যে আমাকে ওর দিকে টানে আচ্ছা আমাদের এই বিয়েটা কি শুধু দায়িত্ব হয়ে থাকতে পারবে না মা “।
হিয়া নিচে যায় খাওয়া দাওয়া শেষ করে এরপর নিজের রুমে চলে আসে রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে হৃদান ওকে ডাক দেয় –
“- হিয়া ঘুম থেকে উঠে পড়ুন “।
হিয়াতো অনেক সকালে উঠে পড়েছে পড়াশোনা করছিলো হৃদানের ডাক শুনে বই রেখে দেয়। এতো সকালে লোকটা তাকে ডাকছে কোনো হিয়া দরজা খুলে দেয় আর বলে-
“- কি হয়েছে কিছু কি বলবেন “।
“- হুম বলবো আমি অফিসে যাচ্ছি তাই কিন্তু আজকে একটা যায়গার জমিনের কাজ দেখতে যেতে হবে তাই একটু দেরি করে গেলে সমস্যা নাই। আপনাকে নিয়ে শপিং মলে যেতে চাই “।
হিয়া বিষয়টি ভাবে আসলে ওর শপিং মলে যাওয়া দরকার কারণ শাড়ি পরে সব জায়গায় যাওয়া যায় না। কোচিং সবাই অন্য পোশাক পড়ে থাকে তার সাথে শাড়ি পড়া যায় না। হিয়া বলে –
“- ঠিক আছে সমস্যা নাই কিন্তু আমি একটু রেডি হয়ে নেয় তারপর যায় “।
হিয়া রেডি হয়ে যায় ওর রেডি হওয়া মানে বাকি মেয়েদের মতো এতো বেশি সেজেগুজে কোথা ও যাওয়া নারমাল একটা সাজ দেয়। এরপর গাড়িতে উঠে বসে আজকে পিকু যাবে না ওদের সাথে কারণ পিকুর স্কুল রয়েছে তাই। হিয়া সামনের সিটে বসে যায় এরপর গাড়ি চলতে থাকে একটা গান বাজে তবে আজকে হিন্দি গান বাংলা গান নাই। মেতো রাস্তসে যা রাহা তা এই গান বেজে উঠে হিয়া পরিবেশ উপভোগ করতে থাকে।
জানালার বাতাসে হিয়ার চুলগুলো কপালে আসে হৃদানের এই জিনিসটা দুর্বলতা কিন্তু এখন চুল সরিয়ে দিতে পারবে।
খুব অল্প সময়ের মধ্যে গাড়ি শপিংমলে পৌঁছে যায় কতো বিশাল জায়গা জুড়ে অবস্থিত এই শপিংমল শহরের অনেক মানুষ রয়েছে তাদের দিকে হিয়া তাকিয়ে থাকে। কি উন্নত তাদের চলাফেরা জামাকাপড় তবে অনেক মেয়েরা যা পোশাক পরে রয়েছে তা দেখে হিয়ার লজ্জা করছে। ছি:ছি: এইসব কি কেউ পড়ে থাকতে পারে।
হৃদান হিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে আর বলে –
“- হিয়া আপনাকে কাউকে দেখে নিজেকে ছোট মনে করতে হবে না সব নারীর আলাদা পরিচয় রয়েছে। আপনি আপনার মতো সুন্দর গ্রামের অপরূপা “।
হিয়া আগচোখে হৃদানের দিকে তাকিয়ে থাকে কি সুন্দর প্রশংসা করতে পারে আর হিয়ার সব গতিবিধির উপর নজর রাখে। এতো সুন্দর করে মনে হয় আগে ও মেয়েদের প্রশংসা করেছে তবে ওনার কোনো প্রেমিকা থাকতে পারে না কি সন্দেহ রয়েছে। যা রাগী মানুষ তবে খারাপ না ভালো আছে।
হৃদান আর হিয়া ভিতরে ঢুকে যায় ওর জন্য জামা কিনতে যায় হৃদান বলে-
“- আপনার কোন জামা পছন্দ হিয়া “।
“- কালো জামাটা সুন্দর “।
“- কালো কোন দুঃখে পড়বেন “।
“- আপনার সাথে বিয়ে হয়েছে এইটা কি কম দুঃখের কথা “।
“- আচ্ছা আমি আপনাকে কোনো পোশাক সিলেক্ট করে দেয় “।
হিয়া এতো জামাকাপড় দেখে সব কিনবে বুঝতে পারে না তবে হৃদান ওকে পছন্দ করে দেয়। একজন পুরুষ মানুষের এতো সুন্দর পছন্দ হতে পারে হিয়া জানতো না সব পোশাক গুলো অসাধারণ হয়েছে অনেক জামা কিনেছে। মামির বাসায় থাকতে শুধু ঈদে নতুন জামা পড়তে পারতো। আর মাসে মাসে মামির পুরানো শাড়ি পড়তে হতো কিন্তু প্রথম বার এতো জামা পেয়েছে।
হৃদান হিয়ার হাসি মুখ দেখে মেয়েটা কতো খুশি ও চাই হিয়া এমন খুশিতে থাকুন। ওর জন্য হিয়ার জীবনে যা শেষ হয়ে গেছে সব ফিরে পাক।
#চলবে