মেঘলা আকাশে রংধনু হবো পর্ব-২১+২২

0
10

#মেঘলা_আকাশে_রংধনু_হবো
#লেখনীতে_তাইয়েবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_২১

হৃদান যখন ওকে কিস করতে যাবে তখন হঠাৎ করে একটা ঘটনা মনে পড়ে যায় ওর একটা মানুষের চিৎকার। হিয়া চোখ বন্ধ করে রয়েছে হৃদান একটু দূরে সরে যায় ওর মাথায় ব্যাথা করছে। হিয়া কোনো প্রতাশ্যিত ঘটনা ঘটে নাই দেখে চোখ খুলে ফেলে। হৃদানকে মাথায় হাত দিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে –

“- হৃদান কি হয়েছে আপনার মাথায় হাত দিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে থাকলেন কোনো “।

হৃদানের চোখের সামনে শুধু একটা মহিলার চিৎকার শুনতে পায় বুকের ভিতরে একটা ভয় কাজ করছে। সামনে থাকা মেয়েটাকে হারানোর ভয় সত্যি যখন জানতে পারবে তখন হিয়া কি ওকে ছেড়ে চলে যাবে। হৃদান কি পারবে হিয়াকে ছাড়া থাকা কথাটা ভেবে ওর ভয় করছে। হিয়া নিচুঁ হয়ে যায় হৃদানের মাথায় হাত রাখে আর বলে –

“- হৃদান সত্যি করে বলুন কি হয়েছে আপনার মাথায় কি ব্যাথা করছে বাড়িতে চলুন। মেডিসিন নিতে হবে “।

হৃদান হিয়ার হাত মাথায় আরো করে রাখে আর বলে –

“- বাড়ি যেতে হবে না মাথা ব্যাথা করছে একটু হাত বুলিয়ে দেন “।

হিয়া হৃদানের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় কিন্তু লোকটার এইরকম অদ্ভুত ব্যবহার করার কারণ বুঝতে পারে না। হৃদান নিজে ওর কাছে আসতে চেয়েছে তাহলে হঠাৎ কি হলো এমন করছে কোনো। হৃদান হিয়াকে জড়িয়ে ধরে হিয়া একটু অবাক হলেও নিজেকে সামলে নেয় ওর হাত এখনো হৃদানের মাথায়। হৃদান বলে –

“- হিয়া আমি আমার আম্মুকে অনেক ভালোবাসি কিন্তু সে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু আপনি দয়া করে আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন না আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারব না “।

“- কি বলছেন এইসব আমি আপনাকে ছেড়ে কোথায় যাবো হৃদান “।

“- যদি কখনো জানতে পারেন আপনার জীবনে সব কষ্টের কারণ আমি ছোটবেলা থেকে যা হারিয়েছেন সেটা আমার জন্য হারানো হয়েছে। যদি আমি আপনার খুব প্রিয় মানুষের খুনি হয়ে থাকি “।

“- কি বলছেন আপনি কোনো কাউকে খুন করতে যাবেন কাউকে। আমার হৃদান এই কাজ কখনো করতে পারে না যে মানুষটা আমার এতো কেয়ার করে সে আমাকে কষ্ট দিতে পারে না অসম্ভব “।

“- এই বিশ্বাস সারাজীবন থাকবে হিয়া “।

“- সাত জনম থাকবে “।

হিয়া হৃদানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বৃষ্টির তেজ একটু কমেছে পরিবেশটা বেশ শান্ত হয়েছে। এখন বাড়িতে ফিরে যাওয়া দরকার মামা মামি হয়তো টেনশন করছে ওদের জন্য হৃদান উঠে পড়ে কিন্তু হিয়ার দিকে তাকিয়ে একটা ঠান্ডা ঢুক গিলে। বৃষ্টির পানির কারণে হিয়ার শরীর ভিজে গেছে শরীরের প্রায় কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। হিয়া বলে –

“- চলুন যাওয়া যাক “।

হৃদান তার গায়ে থাকা কোর্ট খুলে ফেলে আসলে বাসা থেকে বাহির হওয়ার সময় এইটা পড়ছে। রাতে অনেক বৃষ্টি হয়েছে তাই শীত করছিলো হৃদান সেটা খুলে হিয়াকে দেয় আর বলে –

“- এইটা পড়ে আসেন দরকার “।

হিয়া কিছু বুঝতে পারে না পরে নিজের দিকে তাকায় বৃষ্টির কারণে ওর জামাটা শরীরের সাথে একদম লেপ্টে রয়েছে। হিয়া দেখে ওর লজ্জা করছে তাই হৃদানের কোর্ট শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখে নিজের সাথে। কি সুন্দর একটা সুগন্ধি রয়েছে তার প্রিয় মানুষের শরীরের ঘ্রাণ কথাটা ভেবে হিয়া হেঁসে দেয়।

“- কি হলো হিয়া চলেন বাসায় ফিরে যায় “।

“- হুম চলেন “।

আজকে চৌধুরী বাড়িতে অনেক কম মানুষ হৃদান আর হিয়া নাই রায়হান চৌধুরী বসে রয়েছে। তানিয়াকে ডাক দেয় –

“- তানিয়া হৃদান আর হিয়া কবে বাড়ি ফিরবে তোমাকে কি কিছু বলেছে “।

“- না বাবা কিছু বলে নাই তো “।

“- ওহ “।

“- সকালে পিকুর সাথে কথা হয়েছে হৃদান আর হিয়ার ওকে কিছু বলতে পারে হয়তো “।

হিয়া হৃদান বাড়ি পৌঁছে যায় মামি আর মামা অপেক্ষা করছে ওদের জন্য। হৃদানকে ফিরতে দেখে ওনারা একটু শান্তি পায় মামা জিজ্ঞেস করে –

“- হৃদান তোমারা এতোখন বৃষ্টির মধ্যে কোথায় ছিলে “।

“- আসলে মামা একটা কুঁড়েঘরে আশ্রয় নিয়েছি তবুও ভিজে গেছি হিয়া আসছে। তাহলে আমরা ঘরে গিয়ে জামা পাল্টে নেয় “।

“- হুম যাও না হলে আবার জ্বর চলে আসবে “।

#চলবে

#মেঘলা_আকাশে_রংধনু_হবো
#লেখনীতে_তাইয়েবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_২২ (শহরে ফিরে আসা).

হৃদান আর হিয়ার ছুটিতে গ্রামে ঘুরে বেড়ানো খারাপ হয় নাই অনেক মজা করছে ওরা। তবে এখন শহরে ফিরে আসতে হবে সরকারি ছুটি হৃদানের তাই বেশিদিন নাই কিন্তু ওরা যে কাজে এসেছে সেটা করা হয় নাই। হিয়ার জন্ম নিবন্ধন জন্য। হৃদান ঘরে ঢুকে হিয়া আয়নায় চুল আঁচড়াতে বিজি রয়েছে হৃদান বলে –

“- হিয়া সময় প্রায় শেষ ছুটির আমাদের কালকে বাসায় ফিরে যেতে হবে কিন্তু এখনো আপনার জন্ম নিবন্ধন হাতে পাওয়া যায় নাই। আপনার জন্ম নিবন্ধন কোথায় রয়েছে “।

হিয়া চুল আচঁড়ে ফেলে সত্যি এই কথা একদম ভুলে গেছে এই জন্য তারা গ্রামে এসেছে। হিয়া খাটের নিচ থেকে একটা বাক্স বের করে বেশ পুরানো জিনিস রয়েছে এখানে হিয়া সেখান থেকে একটা কাগজ বের করে হৃদানের হাতে ধরিয়ে দেয় আর বলে –

“- এইযে আপনার জন্ম নিবন্ধন কাগজ “।

হৃদান সব মিলিয়ে দেখে তবে হিয়ার বাবার নাম হিসাবে তার মামার নাম ব্যবহার করা হয়েছে দেখ বেশ অদ্ভুত হয়। হিয়া কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করে –

“- আচ্ছা এখানে বাবার নাম হিসাবে আপনার মামার নাম কোনো ব্যবহার করা হয়েছে “।

“- আসলে আমি যখন খুব ছোট তখন বাবার সাথে মায়ের ডিভোর্স হয়ে যায় এরপর থেকে আমার অভিবাবক হিসাবে মামার নাম দেয়। এই বিষয়ে মামা বা আম্মু কোনোদিন কিছু জিজ্ঞেস করে নাই “।

“- ওহ “-

হিয়া কাগজ বের করে যখন বাক্স রাখতে যাবে তখন ওর মায়ের সাথে ওর একটা ছবি বের হয়ে আসে। হিয়া সেটা হাতে নিয়ে নেয় আর ভালো করে দেখতে থাকে ওর চোখে বিন্দু বিন্দু জল চলে আসে। হিয়া বলে –

“- যানেন আমার মা সবসময় আমাকে রাজকন্যার মতো বড়ো করেছে কখনো কষ্ট পেতে দেয় নাই। আমরা ছোটবেলা শহরে থাকতাম আম্মু একটা স্কুলে চাকরি করতো যা বেতন পেতো তাতে আমাদের মা মেয়ের ভালো চলতো। কিন্তু হঠাৎ করে একদিন মা মারা যায় এই পৃথিবীতে আমার আর কেউ থাকে না তাই বাধ্য হয়ে মামা বাড়িতে চলে আসতে হয়। এরপর জীবন সম্পর্কে আপনি ভালো যানেন “।

হৃদান কাগজ দেখছিলো হঠাৎ হিয়ার কথা শুনে ওর ধ্যান ফিরে। হিয়ার চোখের পানি দেখে পানি দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে ওর মনে হয় বুকের মধ্যে কষ্ট হচ্ছে। হৃদান হাটুঁ গেড়ে নিচে বসে যায় আর হিয়ার গালের ভাঁজে হাত রেখে চোখ থেকে বয়ে যাওয়া অশ্রু ধারা মুছে দেয় আর বলে –

“- হিয়া অতীত মনে করে কান্না করলে কি হবে বলুন এই পৃথিবীতে আপনজন হারানোর কষ্ট আমি বুঝতে পারি। আর মা ছাড়া একটা সন্তান কি বেঁচে থাকে সেটা আমার চেয়ে ভালো করে কেউ জানে না। আর এক্সিডেন্ট এখন অনেক মানুষ মারা যায় আপনার মা হয়তো তাদের মধ্যে একজন।

হিয়া সব কথা বুঝতে পারে কিন্তু একটা জিনিস অদ্ভুত হিয়ার মা এক্সিডেন্ট মারা গেছে সেটা হৃদান কি করে জানলো। হৃদানকে শুধু বলেছে তার মা মারা গেছে আর বেশি কিছুতো বলে নাই হিয়া। হিয়া জিজ্ঞেস করে –

“- আপনি কি করে জানলেন আমার মা এক্সিডেন্ট মারা গেছে আমি কখনো এই বিষয়ে আপনাকে কিছু বলি নাই “।

হৃদান উপরে উঠে পরে একটা শুকনো ঢুক গিলে এরপর চোখ বন্ধ করে একটা চিৎকার কথা মনে পড়ে। হৃদানের এইরকম অদ্ভুত ব্যবহার দেখে হিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আর বলে –

“- কি হয়েছে আপনি এমন ঘামছেন কোনো কিছু হয়েছে “।

“- না কিছু হয় নাই আপনি একটু পানি নিয়ে আসেন গরম পড়েছে তাই ঘামছি “।

হিয়া পানি আনতে যায় কিন্তু গরমতো বেশি পড়ে নাই একটু আগে বৃষ্টি হয়েছে বেশ ঠান্ডা পরিবেশ। আর টিনের চালে বেশি গরম থাকে না তাহলে হৃদান এইরকম ঘামছে কোনো হিয়া কি এমন বললো। হিয়া পানি নিয়ে আসে হৃদান পানি খেয়ে গ্লাস টেবিলে রেখে দেয়। হিয়া বলে –

“- আপনি তাহলে একটু ঘুমিয়ে পড়েন বিকাল হয়ে গেছে “।

হিয়া চলে যেতে যাবে তখন হৃদান ওর হাত ধরে ফেলে তাকে পাশে বসিয়ে দেয় আর বলে –

“- হিয়া জানেন ছোটবেলা যখন মন খারাপ থাকতো তখন আমার মা মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো। সব মন খারাপ চলে যেতো আর আমি শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়তাম একটু মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিবেন হিয়া প্লিজ “।

হিয়ার হৃদানের মুখে তাকিয়ে দেখে কি সুন্দর মায়া ভরা মুখে হিয়া কোনো কথা না বলে ভালো করে বসে যায়। হৃদান ওর কোলে মাথা রাখে হিয়া হাত বুলিয়ে দেয় খুব তাড়াতাড়ি হৃদান ঘুমিয়ে পড়ে। হিয়া ঘুমন্ত হৃদানকে দেখতে থাকে আর বলে –

“- লোকটা কি বাচ্চাদের মতো ঘুমাচ্ছে কেউ কি বললে ওনি সেই হৃদান চৌধুরী বিয়ের দিন যে আমাকে কিডন্যপ করেছিলো। বুঝতে পারি নাই জীবনে কি করে এসে গেলেন আপনি “।

হৃদান ঘুমিয়ে পড়ে হিয়া কি করবে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে দেয় ওর চোখ লেগে যায় তাই ঘুমিয়ে পড়ে। বিকেল গড়িয়ে প্রায় রাত হয়ে যায় হৃদানের ঘুম ভেঙে যায় উঠে দেখে হিয়া ঘুমিয়ে রয়েছে। হৃদান একটু হাসি দিয়ে ওকে সুন্দর করে শুয়িয়ে দেয় কিন্তু ওর হাত হিয়ার মাথার নিচে পড়ে যায় সে হাত সরাতে যাবে তখন হিয়ার ঘুম ভেঙে যায় হিয়া চোখ খুলে হৃদানকে এতো কাছে দেখ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে –

“- আপনি “।
“- ওহ আসলে আপনি যাতে ঠিক করে ঘুমাতে পারেন তাই ভালো করে শুয়িয়ে দিছিলাম কিন্তু হঠাৎ করে হাত মাথার নিচে পড়ে যায়। ঠিক আপনি উঠে যান “।

হিয়া বুঝতে পারে সে একটু শান্ত হয়ে নিজের উড়না ঠিক করে উঠে পড়ে হৃদান ও উঠে যায়। হিয়া উঠে মামির কাছে যায় সেখানে সে কিছু কথা বলে কালকে তাকে চলে যেতে হবে তাই একটু মন খারাপ হয় কিন্তু কি করার যেতে হবে। মামা বলে –

“- ভাগ্নীর যখন বিয়ে হয়ে গেছে তাকে বিদায় দিতে হবে “।

রায়হান চৌধুরী পিকুকে খোঁজে হৃদান আর হিয়া কবে আসবে সেটা কি ও জানে না কি। সকালে পিকুর সাথে হৃদানের কথা হয়েছে তাই ওকে বলতে পারে যদি রায়হান চৌধুরী ফোন করে তাহলে উল্টো পাল্টা কথা বলবে। নিজের ছেলের বেফাঁস কথার উপর তার একটু ও বিশ্বাস নাই। কিন্তু পিকু বাসায় নাই।

একটু পর পিকু আসে একদম খুশিতে নাচতে নাচতে আসছে তাই রায়হান চৌধুরী জিজ্ঞেস করে –

“- পিকু কোথায় ছিলে তুমি আর এতো খুশি কোনো একদম নাচতে নাচতে বাসায় ফিরছো “।

“- আসলে নানা পাশের বাসায় গিয়েছিলাম তাই এতো খুশি “।

“- পাশের বাসায় কিসের জন্য গিয়েছো “।

“- হুম নানা তুমি দেখি অনেক বুদ্ধিমান ঠিক ধরেছো কিসের জন্য গেছি”।

“- কিসের জন্য মানে “।

“- আরে পাশের বাসার জেরি আমার গার্লফ্রেন্ড হয় ওর কাছে দুইটা কিসের জন্য গিয়েছি “।

রায়হান চৌধুরী কি বলবে যেমন মামা তার তেমন ভগ্নে হৃদানকে ফোন করে নাই কারণ ওকে ফোন করলে আবার কি না কি কথা বলবে সেই ভয়ে। আর এইদিকে পিকু সে কম যায় কোথা থেকে ছি: এই বয়সে এইসব। রায়হান চৌধুরী বলে –

“- বেযাদব “।

পিকু তার নানার রাগের কারণ বুঝতে পারে না সে কি করেছে যতোসব বিরক্তিকর বিষয়। হিয়া রুমে চলে আসে আর নিজের ব্যাগ গুছাতে থাকে আরো কিছুদিন গ্রামে থাকতে ইচ্ছা করছে তার কিন্তু সম্ভব না। কালকে থেকে কোচিং খেলা তাকে যেতে হবে। হিয়া বলে –

“- আচ্ছা কালকে কি এখান থেকে গিয়ে আমরা কোচিং ধরব “।

“- হুম “।

অনি আজকে সকাল থেকে রুম থেকে বের হয় নাই কিন্তু এখন কোনো যোনো ভালো লাগছে না রুমে। তাই রুম থেকে বের হয়ে এই বাড়ির একজন প্রিয় মানুষের রুমে যায় তার কাকা হাবিব ওনি এখন কথা বলতে পারে না কোমায় রয়েছে বলতে পারেন শুধু হাত দিয়ে ইশারা করতে পারে।

অনি সেই রুমে যায় তার কাকার পাশে গিয়ে বসে অনেক কথা বলে পরে সে হঠাৎ খেয়াল করে তার কাকার পাশে একটা বাচ্চা মেয়ের ছবি। কি সুন্দর মেয়েটা কিন্তু কে এই মেয়ে কাকার পাশের ছবির।

#চলবে