মেঘলা আকাশে রংধনু হবো পর্ব-২৩+২৪

0
11

#মেঘলা_আকাশে_রংধনু_হবো
#লেখনীতে_তাইয়েবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_২৩ (অভিমানী হিয়া)।

অনি মেয়েটার ছবি দেখে অবাক হয়ে যায় কাকার রুমে এইটা কার ছবি যদিও সে বেশি এই রুমে আসে না। কখনো সময়ের সল্পতার জন্য বা বাবা এই রুমে আসতে নিষেধ করে সেইজন্য আসে নাই। কিন্তু এই রুমে আগে কখনো বাচ্চা মেয়ের ছবি দেখে নাই মনে হয় খেয়াল করে নাই। কিন্তু এইটা কে কার ছবি কাকার রুমে ওর কাকা কখনো বিয়ে করে নাই তাই বাচ্চা বা বাচ্চার ছবি থাকা সম্ভব না।

অনির ভাবনার মধ্যে হঠাৎ করে একজন ওর পিছনে দাঁড়িয়ে গম্ভীর গলায় কথা ডাক দেয়। অনি ফিরে তাকিয়ে নিজের বাবাকে দেখে বাচ্চার ছবিটা টেবিলে রেখে দেয় আর বলে –

‘- কিছু বলবে আব্বু “।

অনির বাবা মানে আতাউল হক সে অনির পিছনে দাঁড়িয়ে থাকে ডাক দিয়েছে অনিকে অনেক বার নিষেধ করেছে তার কাকার রুমে যাতে না আসে। কিন্তু ছেলেটা তার কোনো কথা শুনে না আর ওনি যা নিষেধ করবে অনি সেটা আরো বেশি করবে। কারণ এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করার মতো একজন মানুষ হলো আতাউল হক। আতাউল হক বলে –

‘- অনি তুমি এই রুমে কি করো তোমাকে না বলেছি এই রুমে না আসতে। আমার একটা কথা ও কি তোমার কান অবদি পৌঁছায় না শুনতে পারো না “।

“- আপনার কথাগুলো কান অবদি পৌঁছানোর মতো কথা আপনি বলেন না মিস্টার আতাউল হক সো কি করে শুনবো বলুন। আর আমি কোথায় যাবো সেটা কেউ ডিসাইড করে দেখ সেটা আমার পছন্দ না “।

“- তোমার কি পছন্দ সেটা আমি খুব ভালো করে জানি যেটা আমার অপছন্দ সেটা তোমার পছন্দ। এই রুমে আসতে বারণ করেছি তোমাকে কিন্তু তুমি সেই এই রুমে আসবে “।

“- আর আমি আপনার কথা কোনো শুনবো বলুন এইটা আমার কাকার রুম। আর এই বেডে যে মানুষটা কোমায় শুয়ে রয়েছে সে আমার কাকা তাকে দেখতে আমি কি আসতে পারি না। এইটা আমার অধিকার “।

“- ওর সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নাই সো এই রুমে তুমি আর তুমি আসবে না “।

“- কোনো সম্পর্ক নেই কারণ কাকা আপনার কথা মতো চলে নাই শুধু টাকা দিয়ে মানুষকে বিচার করে নাই সেইজন্য। মিস্টার আতাউল হক আপনি না কখনো ভালো স্বামী হতে পেরেছেন না হতে পারলেন ভালো ভাই পুরো জীবনে শুধু একজন বড়োলোক হয়ে কাটালেন। এইজন্য আপনার নিজের ছেলের মুখে বাবা ডাক শুনত পান না “।

অনি কথা বলে চলে যায় আতাউল হক শুধু চোখ বুজে কথাগুলো হজম করে নেয়। নিজের ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে আর বলে –

“- তোর পিছনে কতো টাকা খরচ করেছি রাজপুত্রের মতো বড়ো করেছি তোকে কিন্তু তুই আমার মান সম্মান সব ডুবিয়ে দিলি। তাই এই শাস্তি দিয়েছি তোকে এই আতাউল হকের বিপক্ষে যে যাবে তার এই পরিমাণ হবে সেটা আমার ভাই হোক বা ছেলে “।

আতাউল হক যখন চলে আসতে যাবে তখন টেবিলে থাকা বাচ্চা মেয়ের ছবির উপর দৃষ্টি যায় ওর। আর সেই ছবি দেখে রেগে চোখ মুখ লাল হয়ে যায় তার পরে ছবিটা ছুঁড়ে ফেলে দেয়। যেহেতু ছবিটা কাঁচের ছিলো তাই ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায় বেডে থাকা হাবিব যে কোমায় রয়েছে তার কানে কাঁচের টুকরো গুলো যায়। হাবিবের চোখ বেয়ে জল পড়তে থাকে।

হিয়া আর হৃদানের ব্যাগ গুছানো শেষ হয়ে গেছে ওর কালকে ফিরে যাবে পূজার ছুটি শেষ। রায়হান চৌধুরীর কল করেছিলো একটু আগে বাড়িটা একলা একলা লাগছে তার তবে হৃদান এবারে ওনাকে আজেবাজে কথা বলে নাই। কারণ কণ্ঠে শুনে বুঝতে পারে তাদের মিস করছে সে তাই হৃদান নরমাল হয়ে কথা বলে।

হিয়া কাপড় গুছিয়ে নিয়ে আয়নার সামসে গিয়ে মাথার চুলের বেনি করে নেয়। হৃদান কোনো কথা না বলে শুয়ে পড়ে দুপুরের পর থেকে একটু কম কথা বলছে হিয়ার সাথে কি হচ্ছে হিয়া সেটা বুঝতে পারছে না। দুপুরো হৃদানের অদ্ভুত ব্যবহার সবকিছু মিলিয়ে মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তার হৃদানকে বোঝা। হিয়া যতখন চুলের বেনি করছে ততখন শুধু এইসব ভাবছে।

যদিও হিয়ার এই ছোট মাথায় এইসব কোনো জিনিস ঢুকছে না তাই হিয়া এসে বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে। হৃদান অন্য দিকে ঘুরে শুয়ে রয়েছে লোকটা কি ঘুমিয়ে পড়েছে নাকি বুঝতে পারে না হিয়া তাই জিজ্ঞেস করে –

“- আপনি কি ঘুমিয়ে পড়েছেন “।

“- না কোনো “।

“- না মানে কোনো কথা বলছেন না দুপুর থেকে কিছু কি হয়েছে “।

“- আমাকে বুঝতে হবে না আপনার ঘুমিয়ে পড়ুন আর ভালো করে পড়াশোনা করেন রেজাল্ট ভালো করতে হবে। তারপর আমাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে আপনার অন্য কোথাও “।

ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা শুনে হিয়া পিছনে ফিরে তাকায় কিন্তু হৃদান এখনো অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে রয়েছে।হিয়ার ছেড়ে যাওয়ার কথা শুনে কষ্ট হয় সবকিছু ভালো চলছিলো তাহলে হঠাৎ এইসব কথা কোনো হিয়া এমন কি বলেছ৷ দুপুরে যার জন্য এইসব কথা বলতে হবে। হিয়ার চোখে জল চলে আসে যদি হিয়াকে চলে যেতে হবে তাকে হৃদানের জীবনে রাখতে না চাই তাহলে ওর সাথে এমন ব্যবহার কোনো করে যেনো ওকে ভালোবাসে।

হৃদানের এইসব কথার কোনো মানে বুঝতে পারে না হিয়া কিন্তু রাগ হয় ওর সেই কোনো সবসময় হৃদানের ভালেবাসার জন্য মুখিয়ে থাকবে। হিয়া অভিমানি কণ্ঠে বলে –

“- যখন চলে যেতে হবে তখন মায়া বেশি বাড়ানোর দরকার নাই দুরত্ব মিটানোর দরকার নাই। দয়া করে আমার থেকে দূরে থাকবেন আপনি প্লিজ যাতে আমার মনে কোনো আশা না জন্ম। জীবনে ভালোবাসা আমার কপালে কোনোদিন ছিলো না তাই সেটার আশা কখনো করি নাই। কিন্তু যখন আপনি এসেছিলেন জীবনে হয়তো একটু বেশি চেয়ে ফেলেছি জীবন থেকে তাই ভবিষ্যতে আমার আর আপনার দূরে থাকলে ভালো হবে “।

হিয়া প্রতেকটা কথা হৃদানের কান অবদি পৌঁছে যায় কেমন যোনো বুকে ব্যাথা অনুভব করে মনে হয় খুব কষ্ট হচ্ছে সেখানে ওর। হিয়া আবার অন্য দিকে ঘুরে যায় ওর চোখ বেয়ে পানি ঝরছে কোনো হৃদান ওকে একবার কাছে একবার দূরে রাখে। আগে যখন দূরে থেকে চলে যাওয়ার কথা বলতো তখন কষ্ট কম হতো কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বুকের ভিতরে শত শত দুঃখের হাতছানি রয়েছে। হিয়া কান্না করতে থাকে চোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকে।

হৃদান হিয়ার কান্না করা বুঝতে পারে শত চেষ্টা করলো হিয়ার চোখের পানি এখন সয্য করতে পারে না সে। হৃদান পিছনে ঘুরে হিয়ার মাথায় হাত রেখে একটু চুলে হাত বুলিয়ে দেয় আর বলে –

‘- হিয়া কি হয়েছে কান্না করছেন কোনো হিয়া কান্না বন্ধ করুন “।

হিয়া কান্না করা অবস্থায় পিছনে ফিরে এক লাফে হৃদানের বুকে মাথা রাখে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। ঘটনাটা এতো তাড়াতাড়ি হয় যে হৃদান কিছু বুঝতে পারে না তবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রেখে হিয়ার মাথায় হাত রেখে অন্য হাত দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে। হিয়া কান্না করতে থাকে আর বলে –

“- আপনি এমন কোনো করেন আমার সাথে হুম সবসময় শুধু ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলেন কোনো। যদি ছেড়ে দিবেন তাহলে কাছে আসতে গেলেন কোনো এখন আমার কষ্ট হচ্ছে।আপনার মুখ থেকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা শুনলে আমার কষ্ট হয় আর যদি চলে যাবেন তাহলে আমার এতো কেয়ার কোনো করেন। কোনো আমার চোখের জল আপনার সয্য হয় না “।

হিয়ার কথার কোনো জবার নাই তার কাছে সত্যি হিয়া কান্না করলে হৃদানের কোনো কষ্ট হয় সে বুঝতে পারে না। কিন্তু কান্না থামানো দরকার তাই বুকের উপর থেকে ওর মাথা তুলে বলে –

“- আর কখনো এইসব কথা বলবো না ছেড়ে চলে যাবো না আমি। যতদিন আপনি আমার কাছে থাকবেন ততদিনে আমি ও থাকবো কিন্তু যদি ভবিষ্যতে আপনি আমার থেকে দূরে চলে যান তাহলে তখন মুক্ত দিয়ে দিবো আপনাকে। কখনো নিজ থেকে ছেড়ে যাবো না প্রমিজ “।

“- সবসময় আমার পাশে থাকবেন আর এই জীবন থাকতে আপনাকে ছেড়ে যাবে না প্রমিজ “।

“- হুম সবসময় বুকের ভিতরে আগলে রাখবে “।

“- তাহলে এখন ঘুম পাড়িয়ে দেন ঘুম পাচ্ছে সুন্দর করে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিবেন “।

“- আচ্ছা আমার বাচ্চা বউ “।

“- বউ কথা কি বুঝে বললেন আচ্ছা আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন ম্যাজিসটেড মশাই “।

#চলবে

#মেঘলা_আকাশে_রংধনু_হবো
#লেখনীতে_তাইয়েবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_২৪

হৃদান একটু হেঁসে ওর মাথায় হাত বুলাতে থাকে হিয়া একটু জানতে চাই হৃদান সত্যি ওকে ভালোবাসে না কি। কিন্তু হৃদান জবার দেয় না তাই হিয়া আবার জিজ্ঞেস করে –

“- সত্যি করে বলুন আমাকে কি বউ হিসাবে মানেন ভালোসেন আমাকে “।

“- চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ুন বাসায় ফিরে যেতে হবে আর দুপুরে কোচিং সেন্টারে যেতে হবে। বেড়াতে এসে সব পড়াশোনা ভুলে গেছেন ঘুমান “।

হৃদানের ধমকে হিয়া চুপ করে যায় কি বাজে লোক একটা বার বলে দিলে কি হয় হুম হিয়া আমি তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু বলবে না হিয়া একটু শক্ত করে হৃদানকে জড়িয়ে ধরে কি সুন্দর একটা অনুভূতি নিজের বুকে ঘুমিয়ে রাত কাটানো কতজন বউয়ের ভাগ্য থাকে। হিয়ার ভাগ্যে রয়েছে ছোটবেলা থেকে ভালো বলতে কিছু হয় নাই ওর সাথে কিন্তু হৃদান আসার পর জীবন অনেক সুন্দর হয়ে গেছে হিয়ার।

হিয়া এইসব কথা ভাবতে থাকে তবে এইটা মনে থাকে ওর বাসায় পৌঁছে গেলে আর হৃদানকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে পারবে না। কারণ হিয়া আলাদা রুমে থাকে আর হৃদান অন্য রুমে ওরা যখন এখানে একসাথে থাকতে পেরেছে তাহলে বাসায় থাকতে কি অসুবিধা। হিয়া জিজ্ঞেস করে –

“- একটা কথা বলি “।

“- হুম বলেন “।

“- আচ্ছা আমারা এখন এক রুমে থাকি তাহলে বাসায় গিয়ে কি আলাদা রুমে থাকবো। মানে একসাথে থাকলে ভালো হয় তাহলে আপনি রোজ রাতে এমন করে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিবেন “।

“- না সম্ভব না পরীক্ষা শেষ হোক পরে এইসব “।

হিয়ার মন খারাপ হয়ে যায় বাসায় গেলে হৃদানকে আর নিজের কাছে পাবে না সে। হৃদান হিয়ার মন খারাপ দেখে হেসেঁ ফেলে আসলে হিয়া বড্ড অবুঝ মেয়ে কোনো বুঝতে পারে না সে পুরুষ মানুষ কিছু কিছু মানুষ বিষয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে না। এমনি হিয়ার প্রতি দিন দিন হৃদান বেশি দুবর্ল হয়ে যাচ্ছে যদিও হিয়া এমন মেয়ে যার কাছে গেলে যেকোনো মানুষ ওকে ভালোবেসে ফেলবে। কিন্তু হৃদান এখন কোনো সমস্যা হোক সেটা চাই না হিয়া আর হৃদান এক রুমে থাকলে যদি হৃদান নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে তাহলে সমস্যা হয়ে যাবে।

পুরুষ মানুষ সে তাই হিয়ার থেকে দূরে থাকা ভালো পড়াশোনা ভালো করে করুক পরে সবকিছু হবে। হিয়া সুন্দর করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে বাচ্চা বিড়াল ছানার মতো কিউট বিড়াল। হৃদান ও ঘুমিয়ে পড়ে সকালে ঘুম ভাঙে হিয়া নিজেকে কারো শক্ত বাহুডোরে বন্ধ হয়ে আছে। সাথে সাথে ওর মুখে একটা হাসি ফুটে উঠে কি সুন্দর ঝলমলে হাসি হিয়া হৃদানকে দেখতে থাকে। কি সুন্দর ঘুমিয়ে আছে পুরুষ মানুষ এতো সুন্দর দেখতে হতে পারে সেটা হৃদানকে না দেখলে হিয়া জানতে পারত না।

হিয়ার মাথায় একটা দুষ্টামি বুদ্ধি আসে সে হৃদানের সারা মুখ মণ্ডল জোরে কিস করতে থাকে। আর হৃদানের কানে কাছে গিয়া হিয়া ফিসফিস করে বলতে থাকে –

“- এইযে মিস্টার হিয়ার জামাই আই লাভ ইউ “।

কথাটা কান অবদি যেতেই হৃদানের ঘুম ভেঙে যায় পিটপিট করে চোখ খুলে হিয়াকে দেখে একটা হাসি দেয়। হিয়া বুঝতে পারে হৃদান কথাটা শুনে ফেলেছে তার লজ্জা করছে সে তাই চলে যেতে চাই তখন হৃদান হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে আর ঘুমঘুম চোখে জিজ্ঞেস করে –

“- কি বলছিলেন একটু আগে আবার বলুন “।

“- আমি কিছু বলি নাই এখন যাওয়া দরকার আমার বাই “।

হিয়া হাত ছাড়িয়ে এক দৌড়ে রুম থেকে বাহির হয়ে যায় হৃদান হেঁসে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে মামার থেকে বিদায় নিয়ে ওরা গাড়িতে ফিরে আসে হিয়ার একটু মন খারাপ হয়ে যায় মামার চোখের পানি দেখে কিন্তু তবুও তাকে যেতে হবে। হৃদান গাড়ি চালাতে থাকে তবে হিয়া আজকে সুন্দর দেখে একটা শাড়ি পড়েছে ওর মায়ের শাড়ি আর বেশ মিষ্টি করে সেজেছে। হৃদান ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে আড়চোখে সেটা হিয়া বেশ বুঝতে পারছে সেইজন্য এতো সাজগোছ জামাইকে ইমপ্রেস করার জন্য।

হিয়া একটু হেঁসে বলে –

“- গাড়ি ভালো করে চালান এতো তাড়াতাড়ি মরতে চাই নাহ মাএ বিয়ে হয়েছে। এখন মরে গেলে আমার জামাই কান্না করবে তাই ভালো করে গাড়ি চালান “।

“- তাহলে আপনার জামাইয়ের সাথে বাড়ি ফিরা উচিত ছিলো কোনো আমার সাথে আসতে গেলেন। আমি কি আপনার কিছু হয় “।

“- হুম জামাইয়ের সাথে আসা উচিত ছিলো কিন্তু কি করব বলুন আমার জামাই বড্ড বেশি আনরোমান্টিক তাকে দিয়ে কিছু হবে না। তাই আপনার সাথে প্রেম করতে বাধ্য হয়েছি “।

“- আচ্ছা আপনার জামাই আন রোমান্টিক “।

“- হুম অবশ্যই এতো সুন্দর বউকে যে নিজের সাথে রাখে না সে আন রোমান্টিক “।

হৃদান হিয়ার কথা শুনে হাসে বুঝতে পারে হিয়া আজকে ওর জন্য সেজেছে তবে আর এইসব কথা এইজন্য বলছে কারণ সে তার সাথে থাকতে চাই। কিন্তু হৃদান হিয়াকে নিজের রুমে রাখতে পারবে না ও চাই হিয়া এখন শুধু পড়াশোনার উপর মনোযোগ দেখ এইটা ভালো হবে। হৃদান একটু সময় পর গাড়ি থামিয়ে দেয় কারণ হিয়া সিট বেল্ট লাগায় নাই এই মেয়েটা কোনো কাজ ঠিক করে করতে পারে না সব কাজ ওর করতে হয়।

হৃদান হিয়ার কাছে গিয়ে সিট বেল্ট লাগাতে যায় কিন্তু হিয়া অন্য কিছু মনে করে। হিয়া লজ্জা পেয়ে বলে –

“- আমি আপনাকে রোমান্টিক হতে বলেছি বাসায় গিয়ে গাড়িতে না “।

“- এইসব কথা মনে না করে গাড়ির সিট বেল্ট লাগান মাথায় শুধু অদ্ভুত জিনিস থাকে তাই না “।

“- হুম আপনার থেকে এর চেয়ে বেশি কি আশা করা যায় নিরামিষ লোক একটা “।

হৃদান হিয়ার কথা অনেক সময় ধরে শুনছে মেযেটা ওকে ইচ্ছে করে কথা শুনায় কিন্তু এবার বেশ হয়ে গেছে। হৃদান হিয়ার কাছে যায় ওর মুখের সামনে থাকা চুলগুলো সুন্দর করে সরিয়ে দেয় ওর গালে হাত দুটো দিয়ে যখন কিস করতে যাবে হিয়া চোখ বন্ধ করে ফেলে। ঠিক তখন মোবাইলে একটা কল আসে হৃদান এবার বিরক্ত হয়ে ফোন ধরে –

“- হ্যালো কে “।

“- হৃদান আমি জাহিদ যানো পূজা ছুটিতে আমি বাড়িতে এসেছি আমাদের একটা গরু আছে সেটার একটা বাচ্চা হয়েছে। আচ্ছা ওর নাম কি রাখব “।

হৃদানের কথাটা শুনে জাহিদকে ইচ্ছে করছে নদীর পানিতে চুবিয়ে চুবিয়ে মারতে মানে গরুর নামের জন্য কেউ ফোন করে। হৃদান বলে –

“- তুমি আমার থেকে গরুর নাম জিজ্ঞেস করছো তুমি যানো আমি এখন কি করছিলাম। যদি তুমি বিরক্ত না করতে এতোখনে হয়ে যেতো “।

“- কি এমন জরুরি কাজ করছিলে “।

“- বিয়ে করো তারপর বুঝতে পারবে আর গরু*র নাম জাহিদ রেখে দাও খুব সুন্দর হবে। দুইজনের মধ্যে কোনো তফাত নাই “।

“- আমি কি করেছি “।

“- আমার ভবিষ্যতের বাচ্চাদের আসতে বাধা দিয়েছো আর এই শাস্তি হিসাবে বউ ছাড়া একা হানিমুনে পাঠাবো তোমাকে। পরে বুঝতে পারবে কেমন লাগে “।

জাহিদ কি করেছে সেটা বুঝতে পারলো না।

#চলবে