মেঘলা আকাশে রংধনু হবো পর্ব-২৫+২৬

0
9

#মেঘলা_আকাশে_রংধনু_হবো
#লেখনীতে_তাইয়েবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_২৫( এক কাপ চায়ে তোমাকে চাই).

হৃদান ফোন রেখে হিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা মাথা নিচুঁ করে বসে রয়েছে নিজেই বলে রোমান্স করতে। আর যেই একটু রোমান্টিক হবে ঠিক তখন হয়তো হিয়া কাঁপা কাপি শুরু করবে না হলে কেউ বিরক্ত করবে। তবে অনেক সময় ধরে গাড়ি চালানোর ফলে হৃদানের একটু টার্য়াড ফিল হচ্ছে তাই সে একটু রেস্ট নিতে চাই।

গাড়ির আশেপাশে নজর দিতে গিয়ে দেখে তারা একটা নির্জন জায়গায় এসে পড়েছে তবে এখানে একটা চায়ের দোকান দেখা যাচ্ছে। এইরকম নির্জন রাস্তায় চায়ের দোকান থাকাটা অদ্ভুত কিন্তু মনে হয় রাস্তায় জারর্নি করা যাএীদের জন্য চায়ের দোকান খোলা হয়েছে। হৃদান বলে –

“- হিয়া চলুন চায়ের দোকান আছে সামনে সেখান থেকে একটু চা খেয়ে আসি। অনেক লম্বা রাস্তা তাই একটু রেস্ট নেওয়া দরকার “।

হিয়া হৃদানের কথায় মাথা তুলে তাকায় একটু আগের ঘটনার কথা মনে পড়ে বেশ লজ্জা করছে তার। কিন্তু হৃদানের কথাটা ভুল না একটু রেস্ট নেওয়া যেতে পারে আর হৃদান হয়তো অনেক সময় ধরে গাড়ি চালিয়েছে তাই হাতে ব্যাথা করছে। হিয়া বলে –

“- হুম ঠিক আছে “।

হৃদান গাড়ি থেকে নেমে হিয়ার জন্য দরজা খুলে দেয় হিয়া গাড়ি থেকে গুটিগুটি পায়ে বেরিয়ে আসে। তবে ভালো করে হৃদানের দিকে তাকায় না মেয়ে মানুষ মুখে যায় বলুক লজ্জা জিনিস তার মধ্যে থাকে। আর নারীর ভূষণ হচ্ছে তার লজ্জা হৃদান বেশি কথা বলে না কারণ সে যানে হিয়া কেমন মেয়ে। দূরে থেকে দেখলে সুন্দর আর কাছে আসলে লজ্জাবতী গাছের মতো নুয়িয়ে পড়বে। হৃদান আর হিয়া চায়ের দোকানে চলে যায় তবে দোকানদার নাই।

হৃদান আর হিয়া সকালে বাসা থেকে বের হয়েছে খাওয়া দাওয়া করে তাই আসতে আসতে দুপুর হয়ে গেছে। দোকানদার খাবার খাওয়ার জন্য হয়তো নিজের বাড়িতে গেছে হৃদান বলে –

“- যাহ দোকানে দেখি কেউ নাই এখন কি হবে “।

“- আমার মনে হয় দুপুরে খাবার খেতে বাড়িতে গেছে একটা কাজ করি আমি আপনার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে আসি। পরে যদি দোকানদার আসে তাহলে টাকা দিবেন তাকে না হলে এখানে রেখে চলে যাবো টাকা “।

“- হুম সমস্যা নাই ঠিক বলেছেন কিন্তু আপনার কষ্ট হবে “।

“- যদি আপনার জন্য কোনো কাজ করি তাহলে সেটায় হিয়ার কোনো কষ্ট হয় না “।

হৃদান একটা হাসি দেয় কি সুন্দর সেই হাসি হিয়ার শুধু এইটুকু চাওয়া সারাজীবন যাতে এই মিষ্টি মায়াভরা হাসি দেখে তার জীবন চলে যায়। বিয়ের প্রতি হিয়ার এতো বিশ্বাস ছিলো না কিন্তু হৃদান তার জীবনে আসার পর মনে হচ্ছে আরো আগে কোনো আসলো না তার জীবনে হৃদান। হিয়া গিয়ে চা বানাতে শুরু করে কিন্তু হৃদানতো চা খায় না কফি খায়। আশেপাশে কোনো কফি দেখতে পায নাই তবে দোকানে কিছু কফির পেকেট দেখদে পাই সেটা দিয়ে কফি বানাতে শুরু করে।

হৃদান বাহিরে তাকিয়ে দেখতে থাকে আকাশ বাহিরে বৃষ্টি পড়ছে এখন বৃষ্টি একটু বেশি হচ্ছে শহরে। হিয়া কফি তৈরি করে হৃদানের কাছে নিয়ে যায় আর বলে –

“- এই নিন আপনার কফি যানি না কতো ভালো হয়েছে আসলে কম দামি কফি তাই “।

“- কফি ভালো হতে হলে আমার হিয়ার হাত লাগে দামের দরকার নাই “।

হিয়া একটা হাসি দেয় হৃদান ওর হাত থেকে কফি নিয়ে ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আর বৃষ্টি উপভোগ করতে থাকে এক ঠান্ডা হিমেল হাওয়া ছুঁয়ে যাচ্ছে পুরো প্রকৃতিকে আর তার সাথে দুইজন দম্পতিকে। হৃদানের কাছে থাকা হিয়ার ভালো লাগছে প্রতিটা বর্ষার ওকে এইভাবে জড়িয়ে ধরে বৃষ্টি দেখতে চাই হিয়া জীবন থেকে আর বেশি কিছু চাই না তার।

“- হিয়া “।

“- হুম “।

“- কথা বলছেন না কোনো “।

“- কি বলবো আর বলে বা কি লাভ এই সুন্দর মুহূর্ত উপভোগ করতে চাই আমি শহরে ফিরে গেলে আপনাকে এইভাবে কাছে পাবে না। আপনার গায়ের এই উষ্ণতা অনুভব করতে পারবো না তাই এখন ভালো করে অনুভব করতে চাই “।

“- আপনি সত্যি চান আমাকে নিজের কাছে রাখতে “।

“- হুম খুব করে চাই আপনার হতে সারাক্ষণ আপনার সাথে এইভাবে মিশে থাকে আপনার বুক জুড়ে নিজের ভালোবাসার ঝড় তুলতে। কিন্তু কবে এইসব আমার কবে থেকে নরমাল হাজবেন ওয়াইফ মতো থাকতে পারব বলুন “।

“- খুব তাড়াতাড়ি থাকবে শুধু আপনার পড়াশোনা শেষ হোক তখন কেউ এই হিয়াকে হৃদানের বুক থেকে আলাদা করতে পারবে না। শুধু কয়েকটা দিন অপেক্ষা করুন জান পাখি “।

হিয়া আর হৃদান একটু সময় কাটিয়ে আবার গাড়িতে বসে যায় গাড়ির বাহিরের জানালা খোলা রয়েছে। সুন্দর বাতাসে হিয়ার চুল উড়ছে হৃদানের নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না হিয়াকে এইভাবে দেখলে। হৃদান তবুও খুব কষ্ট করে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি পৌঁছে গেলো। চৌধুরী বাড়ির গেট দিয়ে একটা গাড়ি ভিতরে ঢুকে গেছে।হিয়া আর হৃদান বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেলো রায়হান চৌধুরী আর বাড়ির সবাই অপেক্ষা করছে।

হৃদান আর হিয়া বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেলো পিকু ওদের দেখে দৌড়ে কাছে আসে আর হৃদানকে জড়িয়ে ধরে বলে –

“- মামা তুমি আসতে এতো দেরি করলে কোনো তুমি আর নতুন মামি ছাড়া বাড়িতে থাকতে ভালো লাগছিলো না। আই মিস ইউ “।

হৃদান হেঁসে পিকুকে জড়িয়ে ধরে হিয়াও হাসে রায়হান চৌধুরী আসে ওদের কাছে আর বলে –

“- হিয়া মা তুমি এসে গেছো যাও ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে যাও একদম শুকিয়ে গেছো “।

“- বাহ নিজের ছেলেকে একটু ও মিস করো নাই কিন্তু হিয়ার কথা ঠিক ভাবছো। তোমার এইরকম বদলে যাওয়া ঠিক মনে হচ্ছে না আমার “।

রায়হান চৌধুরী ওর সাথে বেশি কথা বলে না কারণ নিজের ছেলের অভ্যাসের বিষয়ে সে যানে। এখানে তানিয়া আর হিযা রয়েছে তাই যদি কোনো বেফাঁস কথা বলে ফেলে তাহলে ওনি লজ্জা পাবেন। আর হৃদানের কিছু যায় আসবে না। একটু কথা বলে হিয়া আর হৃদান উপরে চলে যায় ফ্রেশ হতে। হিয়া উপরে উঠে যায় হৃদানের রুম আগে পরে হিয়ার রুম।

হৃদান নিজের রুমে ঢুকতে যাবে তখন হিয়া মন খারাপ করে তাকিয়ে থাকে হৃদান সেটা দেখে। হৃদান বলে –

“- যান হিয়া নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেন। পড়াশোনা করতে হবে আপনাকে হিয়া যান “।

হিয়া মন খারাপ করে চলে যায় তার ইচ্ছে করছিলো হৃদানের সাথে থাকতে গ্রামে কতো সুন্দর তারা একসাথে থেকেছে। কিন্তু এখন আলাদা রুমে থাকতে হবে হিয়া মন খারাপ করে নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হতে যায়। হৃদান হিয়ার মন খারাপ বুঝতে পারে কিন্তু কিছু করা নাই ওর হিয়ার থেকে এখন দূরে থাকতে হবে ওর। না হলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না হিযার এখন শুধু পড়াশোনা করা উচিত ওর জন্য এমনি হিয়ার জীবনে অনেক সমস্যা হয়ে গেছে আর কোনো যাতে সমস্যা না হয় সেটা খেয়াল রাখবে সে।

হিয়া ফ্রেশ হয়ে যায় তবে আজকে মনে করেছিলো গ্রাম থেকে এসে কোচিং যাবে কিন্তু এখন দুপুর হয়ে গেছে। তাই আর সম্ভব না যাওয়া এতটুকু জার্নি করে আসার ফলে হিয়া বেশ টার্য়াড তাই বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

#চলবে

#মেঘলা_আকাশে_রংধনু_হবো
#লেখনীতে_তাইয়েবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_২৬ ( বুকের মধ্যে তোমার ঠাই).

হিয়া ঘুম থেকে উঠে পড়ে বিকালে এরপর নামাজ পড়ে পড়তে বসে তবে হৃদানের দেখা সে পায় না। যদিও হৃদানের রুমের দিকে সে যায় না কোনো যাবে শুধু কি তার হৃদানকে দেখতে ইচ্ছে করে। হৃদানের কি ইচ্ছে করে না সে কোনো একবার ও ওর রুমে আসতে পারে না বাজে লোক একটা। তাই হিয়া ঠিক করেছে যতখন না হৃদান ওর কাছে আসবে ততখন ও হৃদানের কাছে যাবে না।

হৃদান ঘুম থেকে উঠে যায় কিন্তু হিয়াকে দেখতে পাই না মেয়েটা অন্য সময় এতোখন রুমে থাকে না কিন্তু আজকে থাকছে। মনে হয় পড়াশোনা করছে এইটা ভেবে নিজের অফিসের জমির কাগজ দেখতে থাকে। হিয়া অনেক সময় ধরে পড়ার পর আর পড়তে ভালো লাগছে না তাই ভাবে তানিয়ার রুম থেকে ঘুরে আসবে।

তানিয়ার রুমে পিকু থাকবে একটু মজা করা হবে ওর সাথে হিয়া নিজের রুম থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু হৃদানের রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দরজা একটু খোলা দেখে হিয়া একটু উঁকি দিতে চাই। কিন্তু নিজের মনকে বোঝায় সে হৃদানের কাছে যাবে না তবে হিয়ার যে মন সেখানে শুধু হৃদান থাকে কি করবে হিয়া।

হিয়া একটু উঁকি দিয়ে দেখে হৃদান কি করছে কিন্তু সে সফল হয় না কারণ তার উঁকি দেওযার আগে হৃদান দরজা পুরোটা খুলে দেয়। আসলে হিয়া যখন যাচ্ছিলো তখন ওর পায়ের নুপুর বাজা দেখে হৃদান বুঝতে পারে হিয়া নিজের রুম থেকে বের হচ্ছে। তাই হৃদান হিয়াকে দেখতে আসে আর ঠিক তখন হিয়া উঁকি দেয়। হিয়া হৃদানকে দেখে চলে যেতে চাই কিন্তু হৃদান আটকে দেয় আর বলে –

“- এইভাবে চোরের মতো উঁকি দিয়ে কি দেখছিলেন আমার রুমে যদি আমাকে দেখার এতো ইচ্ছা করে তাহলে রুমে ঢুকে ভালো করে দেখতে পারে। আমি কি কখনো আমার রুমে আসতে নিষেধ করেছি “।

হিয়া একটু ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে দেখে কি অদ্ভুত লোক একটু উঁকি দিয়েছে বলে চোরের অপবাদ দিলো হিয়াকে। আর ওনার রুম থেকে হিয়া কি চুরি করবে একটু দেখতে এসেছিলো শুধু লোকটাকে আর ওনার রুমে আসতে নিষেধ করেনি মানে। ওনি বলেছেন যাতে হিয়া দূরে দূরে থাকে এখন না করছে। হিয়া বলে –

“- সমস্যা কি আপনার একটু রুমে উঁকি দিয়েছি বলে চোর বলবেন আমাকে হুম। আর আপনাকে একটু দেখতে ইচ্ছে করছিলো সেইজন্য উঁকি দিযেছি আর কখনো আপনার রুমে বা আপনার আশেপাশে আসবো না। বয়েই গেছে আমার “।

হিয়ার কথা শুনে হৃদান একটু তাকিয়ে দেখে ওর দেখে হিযা কথাগুলো বলে চলে যেতে যাবে ঠিক তখন হৃদান হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে। মেয়েটা বড্ড বেশি অভিমানী সব কথায় ওনার খারাপ লাগবে হৃদান যে কতো সুন্দর সুন্দর কথা বলে ওইসব কি মনে রাখতে পারে না শুধু একটু বকা দিলে দোষ। হৃদান বলে –

“- কি হয়েছে এতো রাগ কোনো আমি কি আপনাকে দেখতে নিষেধ করেছি কিন্তু নিজের জামাইকে কেউ উঁকি দিয়ে দেখে। যদি দেখার ইচ্ছে হয় তাহলে রুমে এসে মনোযোগ দিয়ে দেখে যাবে যতখন না মন ভরে ততখন দেখবেন। কিন্তু এইভাবে উঁকি দিবেন না “।

হিয়ার কথাটা শুনে মন বেশি গলে গেলো না কারণ তার হৃদানের উপর একটু বেশি অভিমান রয়েছে। আর হৃদানকে মন ভরে দেখলেও তার কখনো আশঁ মিটবে না। হিয়া বলে –

“- কেউ হন না আপনি আমার আর আপনাকে আমি কোনো দেখতে যাবে শুধু কি আপনি আমার জামাই। আমি আপনার বউ না হুম এতোখন পড়াশোনা করছিলাম একবার কি দেখতে গিয়েছেন কি করছি আমি রুমে। যদি আপনি আমার কাছে না আসেন তাহলে আমি ও আপনার কাছে আসবে না ছাড়েন আমার হাত। যেদিন পুরো অধিকার নিয়ে ধরতে পারবেন সেইদিন ধরবেন দুইদিনের জন্য ধরে আবার ছেড়ে দেওয়ার জন্য ধরতে হবে না “।

হিয়ার কথাগুলো অভিমানী হলেও মনের ছিলো সত্যি হৃদান কি কোনো দায়িত্ব পালন করে ওদেন রিলেশনে তাহলে হিয়া কোনো একা করতে যাবে।হিয়া হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চলে যায় হৃদানের কাছে হিযার এই ব্যবহার অদ্ভুত লাগলো। আগে হৃদান কথায় হিযার মন গলে যেতো তাহলে আজকে হলো না কোনো। হৃদান সেইভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে হিয়া তানিয়ার রুমে চলে যায়।

তানিয়া তার বরের সাথে কথা বলছে পিকু ঘরে নাই হিয়া গিযে দরজার সামনে দাড়াঁয়। তানিয়ার কথা বলা শেষ হযে যায় হিয়া রুমে যায না কারণ কারো প্রাইভেসি নষ্ট করা হিযার পছন্দ না তাই রুমের বাহিরে অপেক্ষা করে। তানিয়া ফোন রেখে দেখে হিয়া বাহিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে তানিয়া বলে –

“- আরে হিয়া তুমি বাহিরে কোনো দাঁড়িয়ে রয়েছো ভিতরে এসে বসে যাও “।

হিয়া রুমে ঢুকে যায় তানিয়ার কাছে গিয়ে বসে তবে পিকুকে আশেপাশে দেখতে না পেয়ে জিজ্ঞেস করে।

“- তানিয়া আপি পিকু কোথায় ওকে দেখতে পারছি না কোথায় গেছে “।

“- ওহ পিকুতো একটু বাহিরে খেলতে গেছে আসলে এখন বিকেল তাই অন্য বাসার বাচ্চাদের সাথে দেখতে গেছে। এখুনি চলে আসবে কোনো দরকার পিকুকে দিয়ে “।

“- না তেমন দরকার নাই আসলে বিকালে ঘরে বসে বসে বোর হচ্ছি তাই তোমার সাথে আড্ডা দিতে আসলাম। আচ্ছা ফোনে কার সাথে কথা বলছিলে “।

“- ওহ সেটা পিকুর বাবা আকাশ আসলে ও বিদেশে বিজনেসর কাজে থাকে আমার আর পিকু সেখানে নিয়ে যেতে চাই। কিন্তু বাবা যেতে দেয় না বাসায় লোক নাই বলে এখন ওর কাজ শেষ হয়েছে তাই দেশে ফিরবে কালকে সেটা বলছিলাম “।

“- ওহ তাহলে খুব ভালো হবে এমনি আকাশ ভাইয়ের সাথে কখনো দেখা হয় নাই তবে জুলেখা খালার কাছে শুনেছি ওনি অনেক ভালো মানুষ। তাই কালকে আসলে দেখা হবে কথা হবে আশা করি ভালো লাগবে “।

হিয়া তানিয়ার সাথে কথা বলে নিজের রুমে চলে আসে হৃদানের রুমের দিকে আর আমি যায় না। তবে হিয়াযে নিজের রুমে এসেছে সেটা হৃদান বুঝতে পারে কারণ ওর নুপুরের শব্দে হৃদান বুঝতে পেরেছে। তবে হৃদান আর হিয়ার কাছে যায় না নিজের রুমে বসে থাকে।

হিয়া নিজের রুমে আসে মাগরিবের আযান দিয়ে দিছে তাই নামাজ পড়ে নেয় আর পরে পড়াশোনা করে। কোচিং বন্ধ হওয়ার আগে অনেক পড়াশোনা দিয়েছে কিন্তু মামার বাড়িতে থাকার ফলে হিয়ার তা পড়তে পারে নাই। কিন্তু কোচিং শেষ হলে নিশ্চয়ই পড়া ধরবে তাই হিয়া পড়তে বসে অনেক পড়া জমে রয়েছে।

হৃদান নিজের ঘরে কাজ শেষ করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে তারপর একটু বাহিরে যায়। পুরুষ মানুষের ঘরে বেশি সময় বসে থাকতে ভালো লাগে না তাই বাহিরে যায়। জাহিদ গ্রাম থেকে চলে এসেছে আর ওর বাড়ি বেশি দূরে না তাই ওরা একসাথে আড্ডা দেয়।

হিয়া পড়াশোনা শেষ করতে করতে অনেক রাত হয়ে যায় কিন্তু ঘুম আসে না। হৃদান বাড়ি ফিরে আসে রাতে কিন্তু নিজের রুমে যাওয়ার আগে হিয়ার রুমের দিকে উঁকি দিয়ে দেখে বাতি জ্বলছে ঘরের। হৃদান মনে মনে ভাবে –

“- কি হলো হিয়া এখনো ঘুমিয়ে পড়ে নাই কোনো বিকালের ঘটনা নিয়ে কি মন খারাপ করেছে। দেখি একবার গিয়ে কি হয়েছে “।

হিয়া পড়াশোনা করতে করতে বইয়ের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে কিন্তু দরজা খোলা ছিলো বন্ধ করতে মনে নাই। হৃদান ঘরে এসে দেখে হিয়া টেবিলে ঘুমিয়ে পড়েছে সেটা দেখে সে হিয়ার কাছে এসে মাথায় হাত রেখে বলে –

“- হিয়া বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন এখানে কোনো ঘুমাচ্ছেন “।

কিন্তু হৃদানের কোনো কথা হিয়ার কান অবদি পৌঁছাতে পারে নাই কারণ হিয়া বেশ ভালো ঘুম দিয়েছে। হৃদান কোনো উপায় না পেয়ে হিয়াকে কোলে নিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দেয় যদিও উঠানোর সময় একটু নড়ে উঠেছে তবুও হৃদান খু্ব সাবধানে কোলে নিয়েছে।

হিয়াকে শুয়িয়ে দিয়ে হৃদান উঠে পড়তে যাবে তখন হিয়া ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে হৃদানকে। আর হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে আর পিটপিট করে তাকিয়ে বলে –

‘- কোথায় যাচ্ছেন হুম একটু ঘুমাতে দেন আপনাকে জড়িয়ে না ধরলে ভালো করে ঘুম আসে না। এখন যদি চলে যান তাহলে কিন্তু আর কোনোদিন কথা বলব না “।

হৃদান আর যায় না বিছানায় শুয়ে হিয়াকে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের মধ্যে রাখে আর ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে। হৃদান কপালে একটা চুমু দেয় আর গালে হিয়ার চোখে ঘুম তবুও বিরবির করে যোনো কি বলছে হৃদান সেটা শুনার চেষ্টা করে –

“- সরি এখন খুব ঘুম পেয়েছে তাই আপনাকে চুমো দিতে পারলাম না তবে জেগে গেলে দিবো। সরি জামাই “।

হিয়ার কথা শুনে হৃদান হাসে মেয়েটা সবসময় বাচ্চা মি করে হেসে ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু বার প্রায় বারোটার সময় হৃদানের ঘুম হালকা হয় ওর ভালো করে তাকিয়ে দেখে হিয়ার দিকে হিয়া এখনো ঘুমিয়ে রয়েছে। হৃদান নিজের রুমে চলে যাওয়ার জন্য হিয়াকে পাশের বালিশে শুয়িয়ে দেয়। এরপর খুব ধীরে ধীরে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

কিন্তু হৃদানের সামনে রায়হান চৌধুরী মূলত ওনি এতো রাতে পানি খেতে রুম থেকে বের হয়েছেন। হৃদানকে হিয়ার রুম থেকে বের হতে দেখে জিজ্ঞেস করে –

“- তুমি এতো রাতে হিয়ার রুমে কি করছো “।

“- বউয়ের দরকার রাতেই হয় আব্বু “।

“- মানে “।

“- ছি: ছি: আব্বু তুমি তোমার ছেলেকে এইসব কথার মানে জিজ্ঞেস করছো। অবশ্যই তুমি কি করে বুঝতে পারবে তোমারতো বউ নাই “।

“- আমি বুঝতে পারব না মানে আর বউয়ের দরকার রাতে হয় মানে “।

“- আব্বু আমার না সন্দেহ আছে আসলে আমি আর তানিয়া কি তোর সন্তান নাকি অন্য কারো। তুমি যে কিছু করতে পেরেছো সেটা বিশ্বাস হচ্ছে না আমার সত্যি করে বলো আমার বাবা কে “।

“- বেয়াদব “।

#চলবে