#মেঘলা_আকাশে_রংধনু_হবো
#লেখনীতে_তাইয়েবার_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_০২
” ম্যাজিস্ট্রেট হৃদান চৌধুরী বিয়ের আসর থেকে বউ চুরি করে পালিয়ে গেছে স্যার “।
জাহিদের মুখে এই কথা শুনে হৃদানের বাবা মানে রায়হান চৌধুরী অবাক হয়ে যায়। হৃদান কখনো বিয়ের আসর থেকে বউ চুরি করে পালাতে পারে সেটা তার কল্পনার বাহিরে ছিলো। যে ছেলে আজ অবদি কোনো মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে নাই সে অন্য কারো বউ নিয়ে পালিয়ে যাবে সেটা কখনো সম্ভব। রায়হান চৌধুরী বলে –
“- জাহিদ তুমি বুঝতে পারছো কি বলছো হৃদান কখনো বিয়ের আসর থেকে বউকে নিয়ে পালিয়ে যেতে পারে না।তুমি ঠিক করে খবর নাও সেটা হৃদান কি না “।
জাহিদ কখনো ভাবতে পারে নাই হৃদান এইরকম করতে পারে কিন্তু সত্যি এমন করেছে আগে যদি জানতো হৃদান বউ চুরি করতে গ্রামে এসেছে তাহলে কখনো ওর সাথে আসতো না। জাহিদ বলে –
“- আঙ্কেল আমি যা বলছি সেটা সঠিক। সত্যি হৃদান বউ নিয়ে পালিয়ে গেছে তিনদিন আগে হিয়া নামে একটা মেয়েকে প্রপোজ করেছে আর আজ তার বিয়ে তাই এমন করেছে “।
রায়হান চৌধুরীর চিন্তা করে কে সেই মেয়ে যাকে হৃদান পছন্দ করেছে ও কোনো মেয়েকে ভালেবাসার মতো ছেলে না। আর যদি ওর কোনো মেয়েকে পছন্দ থাকে তাহলে আমার কাছে এসে বলতে পারতো পালিয়ে নিয়ে আসার কি দরকার।রায়হান চৌধুরী বলে –
“- কে এই হিয়া আর কি তার পরিচয় “।
সকাল হয়ে গেছে আকাশে সূর্যটা আজকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে যদিও তেজ একটু বেশি। মিষ্টি রোদের এক ঝিলির গাড়ির কাঁচ বেধ করে হিয়ার মুখের উপর পড়ে তখন হিযার জ্ঞান ফিরে। পিটপিট করে চোখ খুলতে দেখে ওর হাত পা বাঁধা অবস্থায় গাড়িতে বসে রয়েছে পাশে তাকিয়ে দেখে একটা লোক। ভালো করে খেয়াল করে দেখে এইতো সেই
ম্যাজিস্ট্রেট যে তাকে প্রপোজ করেছিলো আর তারপর বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে নিয়ে এসেছে। কিন্তু এখন এর থেকে পালাতে হবে হিয়া যখন হাতের বাঁধন খুলতে থাকে তখন ওর চুড়ির শব্দে হৃদানের ঘুম ভেঙে যায়।
হৃদান ঘুম থেকে উঠে পাশে তাকিয়ে দেখে হিয়া উঠে পড়েছে আর নিজের হাঁতের বাঁধন খুলার চেষ্টা করছে হৃদান ওর হাত ধরে ফেলে। হিয়ার হাত হঠাৎ করে ধরে ফেলায় হিয়া একটু চমকে গিয়ে ওর দিকে তাকায় এরপর বলে –
“- আপনি আমাকে কোনো অপহরণ করেছেন বলুন আমাকে বাসায় যেতে দেন। আমি বাড়ি যাবো “।
হৃদান এবার হিয়ার হাতের বাঁধন খুলে দেয় এরপর ওকে শান্ত করতে বলে –
“- হুম বাড়ি যাবে তবে আপনার বাড়ি না আমার বাড়ি। আজ থেকে সেখানে থাকবে তুমি যতদিন না তোমার পড়াশোনা শেষ হয় “।
হিয়া পড়াশোনা কথা শুনে একটু অবাক হয় কারণ হৃদান ওর পড়াশোনা করাতে চাই বিষয়টা অদ্ভুত। অচেনা অপরিচিত একটা মেয়ের পড়াশোনা নিয়ে তার টেনশন কোনা থাকবে হিয়া জিজ্ঞেস করে –
“- পড়াশোনা শেষ না হয় অবদি মানে আর আমার পড়াশোনা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। এখন আমাকে যেতে হবে বাড়ির সবাই অপেক্ষা করছে আমার জন্য “।
“- ওহ বাড়ির সবাই বলতে কাকে বুঝতে চান আপনার সেই মামি যে টাকার জন্য আপনাকে একটা বৃদ্ধ লোকের সাথে বিয়ে দিতে চাই। শুনুন আমি আপনার কোনো সমস্যার কারণ হবো না শুধু আপনার পড়াশোনা আর যাবতীয় সব জিনিসের দায়িত্ব নিতে চাই। দ্যাটস ইট “।
হৃদানের কথাগুলো হিয়ার মাথার উপর দিয়ে যায় একটা অপরিচিত মেয়ের সব দায়িত্ব সে নিতে যাবে কোনো আর হিয়া তার দায়িত্ব হৃদানকে দিতে যাবো কোনো। কিন্তু মামি টাকার জন্য হিয়াকে অন্য কারো সাথে বিয়ে দিতে চাই এতাে কিছু হৃদান কি করে জানলো। হিয়া বলে –
“- দেখুন আমার মামি কার সাথে বিয়ে দিবে সেটা আমার পরিবারের বিষয় সেটা নিয়ে আপনাকে টেনশন করতে হবে না। আর কে হন আপনি আমার যে সব দায়িত্ব নিবেন “।
হৃদান হেঁসে গাড়ি থেকে নামে তারপর দরজা খুলে হিয়াকে নামিয়ে আঙুলের ইশারা করে দেখিয়ে দেয় –
“- যাতে কেউ হতে পারি সেইজন্য এই জায়গায় নিয়ে এসেছি আজ থেকে আপনার সব দায়িত্ব আমার। কিন্তু ভালোবাসা ছাড়া “।
হিয়া সামনে তাকিয়ে দেখে কাজী অফিস ওর পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায় লোকটা তাকে বিয়ে করবে। কিন্তু কি ভালোবাসা ছাড়া সব দিতে পারবে মানে হৃদান কি তাকে ভালোবাসে না হিয়া বলে-
“- আপনি ভালোবাসা দিতে পারবেন না মানে তাহলে সেইদিন প্রপোজ করেছিলেন কোনো। আর বিয়ের আসর থেকে তুলে নিয়ে আসলেন বা কোনো “।
“- বলেছি না আপনার দায়িত্ব নিতে চাই আমি “।
হৃদানের কথায় হিয়ার রাগ উঠে যায় মানে একটা লোক কাউকে ভালোবাসে না কিন্তু কলেজে সবার সামনে প্রপোজ করতে পারে বিয়ের আসর থেকে তুলে নিয়ে আসতে পারে। শুধু দায়িত্বের জন্য কথাটা কি বিশ্বাস হওয়ার যোগ্য। হিয়া বলে-
“- আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে মাথায় সমস্যা আছে আপনার ডক্টর দেখান আগে আপনি। আমি এখান থেকে যাবো “।
হিয়া যখন চলে যেতে লাগে তখন হৃদান ওর হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে অনেক সময় ধরে ভালো করে কথা বলছে বাট মেয়েটা শুনছে না। হৃদান হাতে চাপ দিয়ে বলে-
“- আপনার কি মনে হয় হিয়া এই বিয়ের জন্য অনুমতি চাই আপনার থেকে। শুনুন আজকের পর থেকে হৃদান চৌধুরী যা বলবে তাই হবে আপনার জীবনে “।
হিয়ার এবার রাগ উঠে যায় অনেক সময় ধরে শান্ত হয়ে কথা বলছে কিন্তু লোকটা নিজেকে কি মনে করে ওনি যা বলবে হিয়া তাই করবে অসম্ভব। হিয়া হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে –
“- আর হৃদান চৌধুরী কি মনে হয় আপনার অর্ডার শুনার জন্য আমি কোনো চাকর। আমি চলে যাচ্ছি দেখি কি করতে পারেন আপনি “।
হিয়া যখন চলে যেতে থাকে তখন হৃদান হাসে কারণ সে খুব ভালো করে জানে তাকে কি করতে হবে। হৃদান বলে –
“- আজাদ শিকদার আপনার মামা তাই না গ্রাম থেকে একটু দূরে একটা অফিসে চাকরি করে । যদি একদিন রাস্তা পার হয়ে গিয়ে হঠাৎ করে একটা গাড়ি এসে ওনাকে মে*রে দেয় বা যদি ওনার চাকরি চলে যায় তাহলে পুরো পরিবার না খেয়ে মর*তে হবে “।
মামার কথা শুনে হিয়া থেমে যায় পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে হৃদানাে মামার সাথে কি করেছেন ওনি। হিয়া গিয়ে কর্লার ধরে বলে –
“- সাহস কি করে হয় আপনার কি করেছেন মামার সাথে বলুন “।
হৃদান শার্ট থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে –
“- আপনার মামা এখনো জীবিত বা সুস্থ আছে কিন্তু কতো সময় অবদি থাকবে সেটা বলতে পারব না আসলে মৃ*ত্যু যেকোনো সময় হতে পারে। তাই কাজী অফিসে চলুন বিয়ে করে ফেলি না হলে ভদ্রতা একটু বেশি আছে আমার মধ্যে “।
“- আই হেট ইউ আমি কখনো মাফ করব না আপনাকে মিস্টার হৃদান চৌধুরী “।
হৃদান হেসে বলে –
“- দয়া করে আমাকে ঘৃণা করেন অনেক বেশি করে ঘৃণা করেন। আর আজ থেকে আপনার সব দায়িত্ব আমার কিন্তু যেদিন আপনার পড়াশোনা শেষ হয়ে যাবে বা চাকরি পেয়ে যাবেন তখন এই কাজী অফিসের মতো ডিভোর্স লেটার থাকবে আপনার সামনে। সেখানে সাইন করবেন আর মুক্তি পেয়ে যাবেন “।
“- বিয়েটা কি ছেলেখেলা মনে হয় আপনার যখন ইচ্ছা বিয়ে করবেন যখন ইচ্ছা ডিভোর্স দিবেন “।
“- বিয়ের বিষয়ে ছোটবেলা থেকে এই অভিজ্ঞতা রয়েছে আমার সো যা বলছি তাই করেন “।
হিয়া কি করবে বাধ্য হয়ে কাজী অফিসে ঢুকে ছোটবেলা থেকে মামি তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে কিন্তু মামা নিজের মেয়ের মতো দেখেছে তাকে। হিয়া চেয়ারে বসে যায় কাজী বিয়ে পড়াতে শুরু করে কিন্তু উকিল হবে কে বিয়ের।
কাজী অফিসে ঠিক তখন জাহিদ আসে হৃদান সকালে তাকে জায়গা মেসেজ করে দেয়। জাহিদকে দেখে হৃদান বলে –
“- কাজী বিয়ের জন্য উকিলের দরকার ছিলো উকিল এসে পড়েছে এখন বিয়ের কাজ শুরু করেন জাহিদ আমার কলিগ এবং বন্ধু। আর জাহিদ সাইন কর কাগজে “।
জাহিদ পুরো অবাক হয়ে যায় ও কি করবে সেটা বুঝতে পারে না কিন্তু হৃদানের ধমকে সে পেপারে সাইন করে। কাজী বলে –
“- মা বলো কবুল “।
“- কবুল কবুল কবুল “।
হৃদান কবুল বলে তারপর ওদের বিয়ে হয়ে যায় গাড়িতে বসে আছে ওর হিয়ার চোখ দিয়ে পানি ঝরছে যদিও হৃদানের সেই বিষয়ে কোনো মাথাব্যথা নাই সে চোখ বন্ধ করে গাড়ির সিটে বসে রয়েছে। আর জাহিদ ড্রাইভ করছে।
হৃদান গাড়ির সিটে বসে রয়েছে সে শুধু একটা বিকেলে দুইটা গাড়ির কথা মনে পড়ছে। এক বিকেল পাহাড়ে একটা গাড়ি চলছে কিন্তু হঠাৎ একটা ট্রাক চলে আসে তারপর একটা চিৎকার। হৃদানের চোখ খুলে যায় তারপর হিয়াকে দেখে বলে –
“- সরি হিয়া আমার জন্য অনেক বড়ো সর্বনাশ হয়ে গেছে আপনার জীবনে তাই এই ভুলের শাস্তি পেতে হবে আমাকে। যেদিন সত্যি জানতে পারবেন আমাকে অনেক ঘৃণা করবেন তাই আমাদের রিলেশন নিয়ে কোনো আশা হোক এমন কিছু যাতে না হয় “।
প্রায় অনেক সময় পর গাড়ি চৌধুরী বাড়ির গেটে পৌঁছায় হিয়া গাড়ি থেকে নেমে যায় কিন্তু বাড়িটা দেখে সে অবাক কি সুন্দর বাড়ি। বাহিরে কতো গাড়ি গার্ড আরো অনেক গ্রামে সাধারণ এতো বড়ো বাড়ি নাই। হিয়া আর হৃদান ভিতরে ঢুকে যায়।
তবে বাড়ির ড্রয়িং রুমে বসে আছে রয়হান চৌধুরী সহ পুরো পরিবার ওরা যখন বাড়িতে ঢুকতে যাবে তখন রায়হান চৌধুরী বলে, –
“- হৃদান তুমি কি একটা মেয়েকে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে নিয়ে এসে বিয়ে করতে পারলে। কি করে বিয়ে করলে “।
আসলে জাহিদ বিয়ের পর সব রায়হান চৌধুরীকে বলে দেয় কিন্তু রায়হান চৌধুরীর কথায় হৃদানের কোনো যায় আসে নান।হৃদান উত্তর দেয় –
“- বিয়ে করেছি কবুল বলে “।
হৃদানের সাদাসিধা কথাটা রায়হান চৌধুরীর পছন্দ হয় না সে বলে –
“- আমি তোমার বাবা আর আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেললে “।
“- ওহ তাই তাহলে আমি ও আপনার ছেলে হয় তাহলে আম্মুকে যখন বিয়ে করেছিলেন তখন আমাকে জানিয়ে করেছিলেন “।
“- হৃদান ফাইজলামি করো না তুমি বিয়ে করে নিয়ে এসেছো কিন্তু আমি সেটা মেনে নিবো না “।
“- ঠিক আছে মেনে নিতে হবে না “।
রায়হান চৌধুরীর এবার রাগ উঠে যায় হৃদান ছোটবেলা থেকে সব কথার এইরকম আনসার করে। রায়হান চৌধুরীর বলে –
“- তুমি পুরো পরিবারের মুখে চুনকালি মাখিয়ে দিলে হুম আমার ছেলে হয়ে পালিয়ে বিয়ে করতে পারলে “।
হৃদান একটু ভালো করে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে কোথাও চুনকালি নাই তাই হৃদান বলে –
“- সবাই মুখ ফ্রেস আছে আমি কি করে চুনকালি দিলাম আর পরিবারের মুখে চুনকালি দেওয়ার মতো চুনকালি নেই আমার কাছে। বিয়ে করে সোজা গাড়িতে উঠেছি চুনকালি কখন কিনবো “।
” হৃদান তুমি চৌধুরী বংশের সবার মুখে চুনকালি লাগিয়ে এখন এইসব কথা বলছো আর যদি তোমার কোনো মেয়ে পছন্দ হতো তাহলে আমাকে বলতে পারতে। পালিয়ে নিয়ে আসার কি দরকার ছিলো “।
হৃদান এবার একটু শ্বাস ফেলে আর বলে –
“- আগে বললে পুরো পরিবারের মুখে চুনকালি লাগিয়ে দিয়েছি এখন বলছো চৌধুরী বংশের মুখে চুনকানি লাগিয়ে দিয়েছি। গাড়ির মধ্যে চুনকালি কিনার টাইম পাই নাই আর পুরো বংশের মুখে চুনকালি কিনতে কতো চুনকালি লাগবে যানো। আমি কি চুনকালির বিজনেস করি “।
রায়হান চৌধুরী ছেলের কথা শুনে কি বলবে সেটা ভুলে গেছে কিন্তু হৃদানের এখন যেতে হবে তাই ওর ফোন তানিয়াকে বলে –
“- তানিয়া তুই হিয়াকে ঘরে নিয়ে যা আমাকে একটু বাড়ি ফিরবে সব যোনে রেডি থাকে। আর বাড়ির কেউ যদি হিয়াকে বাহির করার চেষ্টা করে তাহলে হৃদান কতো ভদ্র সেটা বাড়ির সবাই জানে। তাই আমার ভদ্রতা কাউকে যোনে দেখাতে না হয় “।
হৃদান কথাটা বলে বের হয়ে যায় ওহ এই বাড়ির একজন জুনিয়ার সদস্য আছে ওর নাম পিকু। তানিযার ছেলে এই বাড়ির সবচেয়ে বুদ্ধিমান মানুষ আর হৃদানের সবচেয়ে প্রিয়। পিকু তার নানার কাছে যায় আর বলে –
“- আচ্ছা নানা তুমি কিন্তু তোমার আর নানুর বিয়েতে আমাকে দাওয়াত দাও নাই। তাহলে কি আমি ও আমার বিয়েতে তোমাকে দাওয়াত দিবো না “।
রায়হান চৌধুরীর রাগী চোখে তাকায় যেমন মামা তেমন ভাগনে একদম ফাযিল। রায়হান চৌধুরীর বলে –
“- বেয়াদব “।
#চলবে