মেঘলা আকাশে রংধনু হবো পর্ব-২৭

0
9

#মেঘলা_আকাশে_রংধনু_হবো
#লেখনীতে_তাইয়েবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_২৭

হৃদান নিজের রুমে চলে যায় সেখানে গিয়ে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে কিন্তু হিয়াকে ছাড়া সত্যি হৃদানের ঘুম আসে না। কোনো সেই রুম থেকে চলে আসলো এইটা নিয়ে ওর এখন অনুপ্ত ফিল হচ্ছে। রাযহান চৌধুরী ছেলের কথা শুনে নিজের রুমে চলে যায় ভাগ্যিস এখানে তার নাতিটা নাই না হলে সেটার এইরকম ঠোঁট কাটা কথা সয্য করতে হতো।

সকাল হয়ে গেছে রোদের আলোর এক ঝিলিক হিয়ার চোখে পড়তে ঘুম ভেঙে যায় ওর। একটু একটু করে ঘুম ভাঙে হিয়া পাশে তাকিয়ে হৃদানকে খুঁজতে থাকে কিন্তু কেউ নাই। হিয়া দেখে সে একটা বালিশ জড়িয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে তাই ভাবে হয়তো সে কালকে সপ্ন দেখেছে হৃদান তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে রয়েছে।

হৃদান কোনো ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে যাবে সেতো হিয়ার কাছে আসতে চাই না নিজের রুমে হিয়াকে নিয়ে যেতে চাই না।হিয়া উঠে পড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয় এরপর পড়াশোনা করে নিচে নামে জুলেখা খালার শরীর সুস্থ হয়েছে মোটামুটিভাবে কিন্তু তাকে কয়েকদিন ছুটি দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। তাই রান্না হিয়াকে করতে হবে সকালের খাবার বানাতে নিচে নামে।

সকালে খাবার বানানোর জন্য রান্না করতে থাকে আর অন্য চুলায় পানি গরম দেয় চা বানাতে হবে। হিয়া রান্না করতে থাকে এরমধ্যে পিকু আসে ওর কাছে সে কোনোদিন হিয়াকে রান্না করতে দেখে নাই তাই জিজ্ঞেস করে –

“- নতুন মামি তুমি রান্না করতে পারো “।

হিয়া পিকুর কথা শুনে হাসে পিকুকে বাড়ি ফিরে আসার পর দেখে নাই সেই দরজার সামনে দেখেছে।তাই হিয়া বলে –

“- হুম রান্না করতে পারি সব রান্না করি তোমার কি কিছু লাগবে পিকু “।

“- না আমার কিছু লাগবে না তবে স্কুলে যাবো তাই মনে হয় টিফিন লাগবে “।

“- তুমি চিন্তা করো না বানিয়ে দিবো তোমাকে মজার টিফিন “।

হিয়া আর পিকু কথা বলতে থাকে তবে হিয়ার চা বানানো শেষ রায়হান চৌধুরী নিচে এসে চা খেয়ে যায়। হিয়া হৃদানের জন্য কফি বানায় কিন্তু তাকে দিতে যাবে কে হিয়াতো যাবে না কোনো যাবে ওনিতো হিয়াকে নিজের রুমে যেতে বারণ করেছে তাই হিয়া পিকুকে বলে –

“- পিকু তুমি তোমার মামার জন্য কফি নিয়ে যাও আসলে আমি এখন রান্না করছি তাই যেতে পারব না। তুমি দিয়ে আসবে একটু “।

“- ঠিক আছে মামি দাও এমনি মামার ঘরে এখন আমি যেতাম তাই কফি নিয়ে গেলে সমস্যা হবে না “।

হিয়া পিকুকে কফি দিয়ে দেয় তবে গরম কফি যদি পিকু ফেলে দেয় তাই যতোখন পিকু সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে থাকে ততক্ষণ দেখতে থাকে। কিন্তু পিকু খুব সাবধানে কফি নিয়ে উপরে উঠে যায় তাই
হিয়া আবার রান্নার কাজে মনোযোগ দেয়। পিকু হৃদানের রুমে যায় দেখে হৃদান একটু বসে ফোন চালাতে থাকে। পিকু বলে –

“- মামা এই নাও তোমার কফি নতুন মামি দিয়েছে “।

পিকুর কথা শুনে হৃদান ফোন থেকে মাথা তুলে পিকুকে দেখে তারপর ওর হাত থেকে কফি নেয়। কিন্তু কফি দিতে পিকু আসলো কোনো হিয়া নিজে আসতে পারলো না সেইদিন জুলেখা খালা যখন রান্না করছিলো তখন হিয়া ওকে কফি দিতে আসে তাহলে আজকে কি সমস্যা হয়েছে হিয়ার। হৃদান বলে –

“- আচ্ছা পিকু তুই কফি দিতে এলি কিন্তু তোর মামি আসলো না কোনো “।

“- মামি রান্না ঘরে কাজ করছে সকালের নাস্তা বানাতে হবে সবার জন্য তাই আসে নাই। আমাকে দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে “।

“-ওহ “।

হৃদান আর পিকু বেশ অনেক সময় কথা বললো পরে পিকু চলে গেলো ওকে স্কুলে যেতে হবে। আর হৃদানকে অফিসে যেতে হবে অনেকদিন পর অফিস খোলা হয়েছে তাই বেশ কাজ থাকবে হৃদান রেডি হয়ে যায়। খাবার খেতে নিচে নামে হিয়া রান্না শেষ করে টেবিলে খাবার দেয় রায়হান চৌধুরী একটু পরে খাবার খাবে পিকুর টিফিন রেডি করে দেয়। পরে তানিয়া ওকে নিয়ে স্কুলে যায়। হৃদান নিচে নামে টেবিলে বসে।

হিয়া হৃদানকে দেখে টেবিল থেকে রান্না ঘরে ঢুকে পড়ে আর বিভিন্ন জিনিস গোছাতে থাকে। হৃদানের সব খাবার টেবিলে রাখা হৃদান নিয়ে খেতে থাকে তবে হিয়া ওর সাথে কথা বলতে চাই না সেটা বেশ ভালো করে বুঝতে পারছে। সকাল থেকে একবার ও ওর সামনে আসে নাই আর রান্নাঘরে এমন কোনো কাজ নাই তবুও সেখানে রয়েছে। হৃদান বলে –

“- হিয়া পানি দেন “।

হিয়া দেখে টেবিলে পানি দেয় নাই তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে ভুল হয়ে গেছে কিন্তু এখন হৃদানের কাছে তাকে যেতে হবে। হিয়া পানির জগ নিয়ে হৃদানের কাছে যায় আর দেয়। হৃদান হিযার দিকে তাকিয়ে বলে –

“- খাবার খেয়েছেন আপনি হিয়া “।

“- না খিদে পায় নাই পরে খাবো আপনি খান “।

হিয়া কথাটা বলে রান্নাঘরে চলে যায় হৃদান খাবার শেষ করে আর আড়চোখে হিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। কি হলো বিষয়টা কালকে হৃদান হিয়ার রুমে যায় ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায় তারপর এতো রাগ কোনো হিয়ার কি হয়েছে। হৃদান এইসব ভাবনা নিয়ে খাবার শেষ করে পরে হাত ধুয়ে রান্না ঘরে যায়। হিয়া কাজ করতে থাকে হৃদান হঠাৎ করে পিছন থেকে হিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

হিয়া প্রথম একটু অবাক হলেও এই টার্চটা ওর পরিচিত এই গায়ের পারফিউম ঘ্রাণ হিয়াকে মাতাল করার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু হিয়া কিছুতে গলবে না হিয়া বলে –

“- কি করছেন বাড়িতে মানুষ রয়েছে ছাড়ুন “।

“- ছাড়ার জন্য নিশ্চয়ই ধরি নাই জান পাখি কি হয়েছে সকাল থেকে কথা কোনো বলছেন না আমার সাথে হুম। কালকে রাতে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে বললেন ঘুমিয়েছি তাও এতো রাগ কোনো জানতে পারি “।

হৃদানের কথা শুনে হিয়া অবাক হয়ে তাকায় কালকে রাতে হৃদান হিয়ার ঘরে সত্যি গিয়ে ছিলো। মানে হৃদান ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছে সেটা সত্যি সপ্ন না। তাহলে সকালে উঠে কোথায় চলে গিয়েছে হিয়ার চেয়ে আগে হৃদানতো ঘুম থেকে উঠে না। হিয়া বলে –

“- আপনি কালকে রাতে আমার রুমে এসেছিলেন মানে আমি সপ্ন দেখি নাই। আপনি ছিলেন আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে ছিলেন “.

“- হুম আমি ছিলাম জান পাখি কি করব একটা মাএ বউকে ছেড়ে কি ঘুম আসে। আর আমার জান পাখি এতো সুন্দর করে কালকে বলল আমি তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে তাই বারণ করতে পারি নাই। সরি জান পাখি সকালে তোমার ঘুম ভেঙে যাওযার আগে চলে আসতে হলো “।

হিয়ার সব অভিমান চলে গেলো আর জান পাখি কথাটা শুনে আরো অভিমান চলে যায়। লোকটার মধ্যে জানি কি একটা আছে হিয়াকে যেটা খুব টানে হিয়া পিছনে ফিরে হৃদানের গলা জড়িয়ে ধরে আর বলে –

‘- ওহ আমার জামাইটা কতো কিউট পুরো কিউটের ডিব্বা আমি মনে করেছি আপনি আসেন নাই তাই রাগ করেছি। এখন সব রাগ শেষ “।

“- সত্যি শেষ তাহলে এখন অফিসে যায় না হলে চাকরি চলে যাবে তখন খাবো কি শুনি “।

“- আমার শশুড়ের অনেক টাকা রয়েছে টেনশন করবেন না। আর একটা কথা মনে রাখবেন আমি আপনার শূন্য পকেটে পাশে থাকতে রাজি আছি। কোনো সমস্যা নাই আমার “।

” আমি জানি সেটা “।

“- আচ্ছা চলুন না ঘুরতে যায় কোথাও “।

“- আজকে না অনেক কাজ আছে আজকে কালকে যাবো পূজার পর অফিস খুলছে তাই কাজ রয়েছে প্রচুর। কালকে রেডি হয়ে থাকবেন যাবো “।

“- ওকে ডান “।

“- আচ্ছা রাতে অপেক্ষা করবেন আমার জন্য সুন্দর করে বুকে জড়িয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতে হবেতো। আমার জান পাখিকে “।

হিয়া আর হৃদান আরো কথা বলে হৃদানের অফিসের সময় হয়ে যায় তাই চলে যেতে হয়। হিয়া কিছু কথা বলে রান্না শেষ করে উপরে যায় পড়াশোনা করতে রায়হান চৌধুরী নিচে এসে খাবার খেয়ে চলে যায়।

#চলবে