মেঘলা আকাশে রংধনু হবো পর্ব-৩৮ এবং শেষ পর্ব

0
9

#মেঘলা_আকাশে_রংধনু_হবো
#লেখনীতে_তাইয়্যেবা_বিনতে_কেয়া
#শেষ_পর্ব(৩৮).

অনিল বাড়ি ফিরে যায় সে গাড়ি থেকে নেমে সোজা নিজের চাচার রুমে চলে যায়। কিন্তু সেখানে ঢুকে যায় সেখানে ঢুকে বাড়ির কাজের মহিলাকে বলে যাতে হাবিবকে একটা গাড়িতে তুলতে সাহায্য করে। হাবিবকে হাসপাতালে নিয়ে যাবে চিকিৎসা করাতে। যেহেতু তখন শাফআন সাহেব বাড়িতে ছিলো না তাই কাজের লোক আর কথা বলে নাই। হাবিবকে কোমায থাকা অবস্থায় একটা গাড়িতে তুলে দেয়।

হৃদান নিজের বাড়ি যায় হিয়া তখন পিঠা তৈরি করছে আবিরের জন্য হৃদান সোজা রান্না ঘরে ঢুকে যায়। রান্নাঘরে তানিয়া ও ছিলো হৃদান বলে –

“- হিয়া চলুন আমার সাথে “।

“- কিন্তু কোথায় যাবো “।

“- আগে চলুন যেতে হবে “।

হৃদান হিয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় তানিয়া কি হয়েছে জিজ্ঞেস করে কিন্তু হৃদান কোনো কথা বলে না। হিয়াকে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দেয় হিয়া বুঝতে পারছে না হৃদান ন কোনো করছে কি হয়েছে। হৃদানের গাড়ি একটা হাসপাতালে এসে পৌঁছায় হিয়া বেশ অবাক হয় তারা এখানে কোনো এসেছে। হিয়া বলে –

“- আমরা হাসপাতালে এসেছি কোনো “।

“- প্রয়োজন আছে চলুন ভিতরে”।

হিয়া হাসপাতালের ভিতরে চলে যায় সেখানে অনিল অপেক্ষা করছে হিয়া প্রথমে অনিলকে দেখে অবাক হয়। অনিল হাসপাতালে কি করছে সে ভেবে পায় নাই। হৃদান হিয়াকে নিয়ে একটা কেবিনের ভিতরে ঢুকে যায় হিয়া হঠাৎ করে সিটে শুয়ে থাকা একটা লোককে দেখে এক পা পিছিয়ে যায় –

“- আপনি আমাকে এখানে কোনো নিয়ে এসেছেন হৃদান আর এই লোকটাকে আমার সামনে কোনো নিয়ে আসলেন। আমি এখান থেকে চলে যেতে চাই হৃদান “।

“- কিন্তু আপনি যেতে পারবেন না হিয়া অনেকদিন ধরে সত্যি লুকিয়ে রেখেছি আপনার থেকে আর পারব না। এইবার সত্যি ঘটনা জানতে হবে আপনাকে “।

“- আমি যা জানি সেটাই সত্যি আর আপনি কি যানেন এই লোকটা আমার কে হয়। ওনি আমার “।

“- হুম জানি ওনি আপনার বাবা হয় হাবিব”।

“- আপনি শুরু এইটুকু যানেন ওনি আমার বাবা বাট এইটা যানেন না ওনি কি করেছেন আমাদের সাথে। আমার মা পুরো পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে এই লোককে বিয়ে করেছিলো কিন্তু এই লোকটা বিয়ের পর থেকে আমার মায়ের উপর নির্যাতন করত। যখন আমি সাত বছরের ছিলাম তখন ওনি আমার মাকে ডিভোর্স দেন। আর সেইজন্য আমার মা আত্মহত্যা করে “।

কিন্তু আপনি যা জানেন সেটা সত্যি না হিয়া হাবিব চাচা আপনার মাকে ডিভোর্স দেয় নাই। সব করেছে ওনার বড় ভাই শাফআন সাহবে। আসলে আপনার মা আর হাবিব যখন বিয়ে করে। সেটা শাফআন সাহেব মেনে নিতে পারে নাই সে একটা গরিবের মেয়েকে নিজের ভাইয়ের বউ করতে চাই নাই। কিন্তু তবুও আপনার বাবা পুরো পরিবারেরর বিরুদ্ধে গিয়ে আপনার মাকে বিয়ে করে। শাফআন সাহেব অনেক চেষ্টা করে যাতে হাবিব চাচা আপনার মাকে ডিভোর্স দিয়ে দেয় কিন্তু দেয় নাই সে। পরে যখন আপনার বয়স সাতবছর তখন সম্পত্তির লোভে শাফআন সাহেব হাবিব চাচাকে মেরে ফেলতে চাই “।

হৃদান আরো বলে –

“- হাবিকে ওনি কিডনাপ করে নিয়ে আসে আর ওনাকে অজ্ঞান হওয়ার ইনজেকশন দিয়ে। সব সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নেয় আর আপনার মাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেয় তবে আপনার মা আত্মহত্যা করতে চাই নাই। তাই ওনি ট্রাক দিয়ে ওনার গাড়ির দুর্ঘটনা করিয়ে মেরে ফেলে”।

“- আপনি এইসব কি বলছেন এইসব সত্যি না হৃদান “।

“- এইসব সত্যি এই দেখুন পুলিশ আপনার মায়ের কেস তদন্ত করে বের করেছে এইসব “।

হিয়া ভিডিওটা দেখে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো তাহলে সত্যি এতোদিন নিজের বাবাকে ভুল বুঝেছে।হিয়া বাবা বেঁচে ছিলো কিন্তু হিয়া চিনতে পারে নাই। হিয়া সিটের কাছে গিয়ে নিজের বাবার হাত ধরে কান্না করে দেয়। হিয়া বলে –

“- আমাকে মাফ করে দেও বাবা বুঝতে পারি নাই তুমি নির্দোষ ছিলে সরি বাবা “।

হৃদানের ফোনে একটা কল আসে পুলিশ কল করেছে –

“- স্যার শাফআন সাহকে গ্রেফতার করদে পেরেছি। ওনি যে হিয়ার মাকে খুন করেছে সেটা বলে দিবে “।

“- হুম ঠিক আছে ধন্যবাদ “।

হৃদান ফোন কেটে দেয় এখন কান্নাকরা অবস্থায় হিয়াকে সামলানো বেশি জরুরি। হৃদান বলে –

“- হিয়া যাহ হয়ে গেছে ভুলে যান আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে “।

“- কিন্তু বাবা কি কখনো আমার সাথে কথা বলবে না “।

” – হুম অবশ্যই বলবে একদিন না একদিন ওনি নিশ্চয়ই কোমা থেকে বেরিয়ে আসবে “।

হৃদান আর হিয়ার সংসার ভালো চলতে থাকে প্রায় ছয় মাস কেটে যায় হিয়ার পরীক্ষা রেজাল্ট দেয় । হিয়া মেডিকেলে এডমিট হয় অনিল এখন খুশি তার বাবা তার মাকে মেরেছে সেই প্রতিশোধ নিতে পেরেছে। হৃদান অনেক খুশি হিয়ার জন্য সেইদিন যখন হিয়াকে প্রথম দেখেছিলো তখন ওর এডমিট কার্ডে ওর মায়ের নাম দেখে চিনেছে।

কিন্তু আজকে হিয়া ওর সবকিছু হয়ে গেছে আর তানিয়া এখন গর্ভবতী ডক্টর বলেছে মেয়ে বাবু হবে। আর হিয়ার বাবা এখন আসতে আসতে সুস্থ হচ্ছে আসলে ঔষধের চেয়ে ভালোবাসা বেশি জরুরি। আজকে হিয়ার কলেজে যাবে।

রায়হান চৌধুরী হৃদান আর হিয়াকে ডাক দেয়। রায়হান চৌধুরী বলে –

“- শোন হৃদান আর হিযা তােমাদের বিয়েটা তো ভালো করে হয় নাই কোনো অনুষ্ঠান হয নাই। তাই আমি চাই আবার তোমাদের বিয়ে দিয়ে বড়ো অনুষ্ঠান করতে “।

“- ঠিক আছে আব্বু তুমি যা চাও “।

“- ওকে ডান “।

হিয়া গিয়ে হৃদানের কানে ফিসফিস করে বলে –

“- অনেক পালিয়ে থেকেছেন আমার থেকে জামাই সাহেব। বাসর ঘরে আমার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না আপনাকে “।

“- তাই সেটা সময় বলে দিবে কে বাঁচে কার থেকে। বাই দ্যা ওয়ে আই লাভ ইউ “।

“- আই লাভ ইউ টু জামাই “।

শেষ পর্ব