মেঘলা আকাশে রংধনু হবো পর্ব-০৩

0
12

#মেঘলা_আকাশে_রংধনু_হবো
#লেখনীতে_তাইয়েবার_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_০৩

হিয়াকে ঘরে নিয়ে যায় তানিয়া হিয়া খুব চুপচাপ যদিও বেশি কথা সে বলে কিন্তু আজকে বলছে না কারণ তার মনে মধ্যে আজকে আকাশ পরিমাণ কষ্ট রয়েছে। গ্রামের বাড়িতে মামা মামি কি করছে সেই বিষয়ে টেনশন হচ্ছে তার। তানিয়া হিয়াকে ভালো করে দেখে মেয়েটা গ্রামের হলেও দেখতে কিন্তু বেশ ভালো সুন্দর লম্বা আর চুলগুলো বড়ো। তানিয়া বলে –

“- এইযে এইটা হৃদানের ঘর যেহেতু তুমি ওর বউ তাই আজ থেকে এই ঘরে থাকবে। আর হৃদান বলেছে সব রেডি রাখতে মনে হয় বাসর ঘরের কথা বলেছে ঠিক আছে সব ঠিক করে দিচ্ছি “।

হিয়া ঘরটা ভালো করে দেখে সব ঠিক কি সুন্দর পরিপাটি বড়লোক মানুষের ঘর এমন হওয়া নরমাল বিষয়।হিয়া বেডের পাশে একটা মহিলার ছবি দেখতে পায় তাই জিজ্ঞেস করে –

“-আচ্ছা আপি এই মহিলাটা কে “।

তানিয়া ছবি হাতে নিলে ওর চোখে একটু পানি জমে যায় আসলে সেটা ওর মায়ের ছবি অনেক বছর আগে তার মা মা*রা যায়। এরপর আর রায়হান চৌধুরী বিয়ে করে নাই তানিয়া বলে –

“- আসলে এইটা আমার মায়ের ছবি ওনি ছোটবেলা মা*রা যান। হৃদান তখন অনেক ছোট কিন্তু মা আমার আর হৃদানের মধ্যে হৃদানকে অনেক বেশি ভালোবাসতো তাই মা মারা যাওয়ার পর হৃদান একটু রাগী গম্ভীর হয়ে গেছে “।

হিয়া বুঝতে পারে তানিয়ার কষ্ট তাই আর কিছু জিজ্ঞেস করে না হিয়া এবার ওয়াশরুমে যায় একটু ফ্রেশ হয়ে নেয়। কিন্তু ওর কোনো জামা নাই কি পড়বে তাই তানিয়াকে বলে-

“- আচ্ছা আপি আমার কোনো জমা নিয়ে আসি নাই এই বিয়ের পোশাক অনেক ভারি তাই পড়তে পারছি না। যদি একটা জামা বা শাড়ী দিতে তাহলে ভালো হতো “।

তানিয়া কি বোকা ওর এই বিষয়ে খেয়াল ছিলো না আসলে বিয়ে এতো তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে কিন্তু বুঝতে পারে নাই। তবে শাড়ির কথা শুনে একটু ভালো লাগে শহরের মেয়েটা সাধারণ শাড়ি পড়ে না কিন্তু গ্রামের মেয়েরা শাড়ী পড়ে। হিয়া ও পড়তে পারে। তানিয়া বলে –

“- আসলে আমি একদম ভুলে গেছি তুমি এক কাপড়ে আছো তবে টেনশন করো না পোশাক আছে আমার কাছে। নরমালি আমি শাড়ি পড়তে পারি না বা শাড়ি পড়ি না কিন্তু শাড়ী আছে আমার তাই তুমি চাইলে সেইগুলা ব্যবহার করতে পারো “।

হিয়া কথাটা শুনে বেশ ভালো লাগে শাড়ি বাড়িতে ও পড়ে তাই কোনো অসুবিধা হয় নাই। আর এই একা ঘরে সে বোর হচ্ছে তাই তানিয়ার সাথে তার ঘরে যায় কিন্তু পিকু এই ঘরে আসে। হৃদান সবকিছু রেডি রাখতে বলেছে তাই সবাই মনে করেছে বাসর সাজাতে বলেছে তাই ফুল দিয়ে পুরো রুম সাজাতে বিজি।

পিকু ঘরে এসে এতো ফুল দেখে অবাক কারণ মামা ঘরে এতো ফুল কখনো দেখে নাই সে। পিকু জিজ্ঞেস করে –

“- আচ্ছা জুলেখা খালা তুমি ফুল দিয়ে ঘর সাজালে কোনো “।

“- আরে পিকু তুমি জানো না তোমার মামা বিয়ে করেছে তাই তার বাসর সাজাতে হবে। বিয়ে করলে বাসর করতে হয় “।

পিকু কথাটা খুব মনোযোগ সহকারে ভাবে কথাটা কিন্তু ভুল না বিয়ে করলে বাসর করতে হয় তারমানে তাকে ও বাসর করতে হবে। কিন্তু যেদিন সে প্রথম বাসর করবে তখন যদি ঠিক করে করতে না পারে তাই একবার রিহার্সেল করা দরকার। হিয়াকে তানিয়া সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়।

হৃদান তার মিটিং শেষ করে বাসায় ফিরার জন্য রেডি হয় কিন্তু আজকে তাকে একটা জায়গায় যেতে হবে হৃদান গাড়ি নিয়ে সেখানে রওনা দেয়। আর অন্যদিকে হিয়া যখন বসে থাকে ঘরে তখন কেউ একজন গান ছেড়ে ওর রুমে প্রবেশ করে। হিয়া তাকিয়ে দেখে পিকু একটু আগে ড্রয়িং রুমে যে বাচ্চাটা ছিলো সে।

পিকু একটা গান ছাড়ে চোখ তুলে দেখো না কে এসেছে এই গান আর ও সুন্দর জামাইয়ের মতো শেরওয়ানি পরে আসে। কিন্তু হিয়াকে এভাবে দেখে পিকু মন খারাপ করে বলে –

“- এইটা কি করলে তুমি মামি ঘোমটা দেও না কোনো আমি মনে করেছি তুমি ঘোমটা দিয়ে থাকবে আর আমি এসে ঘোমটা খুলে দেখবো তারপর একটা কবিতা বলবো। আর বাসর করব কিন্তু তুমি কিছু করো নাই এখন আমি বাসর কি করে করব হুম। যদি ভবিষ্যতে কোনো ভুল করি তাহলে আমার লাল টুকটুকে বউতো রাগ করবে “।

হিয়ার ওর পাকা পাকা কথা শুনে অবাক পুরো মামার উপর গিয়েছে বাচ্চাটা যদিও হিয়ার হৃদানের উপর রাগ রয়েছে । কিন্তু এই বাড়ির কারো উপর কোনো রাগ নাই তাই হিয়া বলে –

“- ওহ তাই বাসর ঘরে এইসব করতে হয় বুঝি কিন্তু তুমি কি করে জানলে আগে বুঝি বাসর করেছো “।

” – না করি নাই কিন্তু করবো আমার তিনটা গার্লফ্রেন্ড আছে ওদের সাথে যদি বিয়ে হয় তাহলে বাসর করতে হবে “।

“- ওহ তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে তাও তিনটা তা এতগুলো গার্লফ্রেন্ডকে কি করে সামলে রাখো শুনি “।

“- সেটা তেমন বিষয় না শনিবার রিথির জন্য সোমবার মিতুর জন্য আর বৃহস্পতিবার জেরিনের জন্য। আর বাকি তিনদিন পড়াশোনা করি ভালো ছাত্র হতে হবে তো “।

হিয়া হাসে কি দুষ্ট বাচ্চা এই বয়সে সে প্রেম করে তবে হিয়ার ওর সাথে কথা বলে সারাদিনে এতো কিছু হয়েছে হাসতে ভুলে গেছে। কিন্তু এই পিকুর জন্য আমার হেসেছে সে। পিকু একটা জেদ করে –

“- নতুন মামি তাহলে তুমি আবার লাল টুকটুকে বউ সাজো আমি ঘোমটা খুলে তোমার মুখ দেখবো “।

হিয়া কি বলবে সে রাজি হয়ে যায় পিকু পুরো সুন্দর করে বসে যখন হিয়ার ঘোমটা খুলতে যাবে ঠিক তখন তানিয়া রুমে ঢুকে। আর পিকুকে এই জামাইয়ের মতো সাজতে দেখে বলে –

“- এই পিকু তোর এই রুমে কি আর এইরকম জামাইয়ের মতো শেরওয়ানি কোনো তোর গায়ে “।

পিকু এবার বিরক্ত হয় কতো শখ ছিলো বাসন করার কিন্তু মা এসে সব শেষ করে দিলো পিকু বলে –

“- মম তুমি কি করলে এইটা আমার বাসর নষ্ট করে দিলে। আমি কি তোমার বাসর ঘরে গিয়ে সমস্যা করেছি না তোমার বিয়তে কোনো সমস্যা করেছি। আর তুমি আমার বাসর ঘরে কোনো ঢুকলে “।

তানিয়া এই ছেলের সাথে কথায় পারবে না রায়হান চৌধুরী ঠিক বলে ওকে বেয়াদব। তানিয়া বলে –

“- এই তুই আমার বাসর ঘরে কোথা থেকে আসবি তখন কি তুই ছিলি “।

“-৷ আমি যখন তোমার বাসর ঘরে ছিলাম না তাহলে তুমি আমার বাসর করে কি করছো।তোমার আর বাবার বিয়েতে অবদি আমাকে দাওয়াত দেও নাই আর এখন আমার বাসর ঘরে ঢুকছো “।

“- তোর সাথে কথায় বলতে চাই না আমি। যখন বিয়ে করবি তখন বাসর করবি যা পড়তে বস “।

পিকু বিরক্ত হয়ে চলে যেতে থাকে আর বলে –

“- বয়সতো আর কম হলো না বিয়েতো একদিন করতে হবে বাসর ও করতে হবে একটু রিহার্সাল করলে কি সমস্যা হতো “।
হিয়া এইসব দেখে হাসতে হাসতে শেষ তানিয়া দুধ নিয়ে এসে টেবিলে রাখে। হৃদানের গাড়ি একটা কবরের পৌঁছে যায় গাড়ি থেকে নামে আর বলে –

“- আম্মু প্রতিদিন এখানে এসে তোমার কাছে অনেক কান্না করি কিন্তু আজ করব না কারণ আমি আজকে অনেক খুশি। আমার বিয়ে নিয়ে তোমার কতো আশা ছিলো বউমা হবে তোমার তার সাথে গল্প করবে একসাথে খাবার বানাবে কিন্তু এইসব হওয়ার আগে তুমি। তবে বিয়ে আমি করেছি কিন্তু সেটা শুধু একটা ভুলের মাশুল ছাড়া আর কিছু না হিয়াকে আমি ভালেবাসতে পারব না। আমার জন্য হিয়া ওর একজন প্রিয় মানুষকে হারিয়ে ফেলেছে “।

হৃদান অনেক সময় ধরে কবরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলো এরপর রাত হয়ে গেছে দেখে বাড়ি ফিরে যায়।কিন্তু নিজের ঘরে গিয়ে দেখে ফুলে ফুলে ঢাকা এইসবের মানে কি তার ঘরে কি হচ্ছে এইসব। হিয়াকে দেখে বিছানায় বসে রয়েছে হৃদান ওর হাত ধরে বিছানা থেকে নামিয়ে আনে

“- হিয়া আপনি আমার রুমে কি করছেন। আমিতো তানিয়াকে অন্য রুমের কথা বলেছি “।

হিয়া একটু ভয় করে কিন্তু সে বলে –

“- তানিয়া আপি বলেছে আপনি নাকি সব রেডি করতে বলেছেন তাই তারা বাসর ঘর সাজিয়েছে “।

হৃদানের নিজের উপর রাগ হয় এখন কোনো সে তানিয়াকে সুন্দর করে বলে নাই। হিয়ার হাত ধরে নিজের রুমে থেকে বের করে অন্য রুমে নিয়ে যায় আর দরজা খুলে দেয় –

“- আজ থেকে এই রুমে থাকবেন আপনি আর কখনো আমার রুমে ঢুকবেন না মনে থাকবে। আমার রুমে আপনার ছায়া দেখতে চাই না “।

#চলবে