মেঘলা আকাশে রংধনু হবো পর্ব-০৫

0
13

#মেঘলা_আকাশে_রংধনু_হবো
#লেখনীতে_তাইয়্যেবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_০৫

হৃদানের এই কথাটা সবার কাছে কেমন মনে হয়েছে জানি না বাট হিয়ার কাছে হাস্যকর কারণ হৃদান তার কাছে অনুমতি নিতে চাই। হিয়া বলে –

“- বাহ মিস্টার হৃদান চৌধুরী কি সুন্দর আমার কাছে অনুমতি নিতে চান আপনি। কিন্তু আমি যদি আপনার সাথে কথা না চাই তাহলে কি কথা বলবেন না। শুধু শুধু আমার পারমিশন চাওয়ার নাটক করবেন না “।

হৃদানের একটু রাগ হয় কিন্তু হিয়ার সাথে কথা বলা দরকার ওর ভালোর জন্য বলতে হবে। কারণ ওর এইচএসসি পরীক্ষা শেষ কিন্তু এডমিশন টেষ্ট দিতে হবে তাই হৃদান বলে –

“- দেখেন হিয়া আপনি যখন এই শহরে থাকবেন তখন আমি চাই এখানের কোনো ভালো কলেজে আপনার এডমিশন করাতে। আর ভালো কলেজে চান্স পেতে হলে এডিশন চেস্ট দিতে হবে সো এখন থেকে পড়াশোনা শুরু করে দেওয়া উচিত আপনার। তাই রেডি হয়ে থাকবেন আমরা বই কিনতে যাবো “।

হিয়া ওর কথা শুনে কিন্তু লোকটা ওর জন্য এতো ভাবে কোনো হৃদান তাকে ভালোবাসে না। কিন্তু দায়িত্ব নিতে চাই কি অদ্ভুত লোক তবে হিয়া ওর সাথে কোথাও যেতে চাই না। দেখা যাবে অর্ধেক রাস্তায় আমার গাড়িতে আপনি আর যেতে পারবেন না বা কখনো এই গাড়িতে আপনাকে আর দেখতে চাই না বলবে তখন হিয়া বলে –

“- বই কিনতে আমার যেতে হবে কোনো আপনি কিনে নিয়ে আসতে পারেন “।

হৃদান শুধু ওকে বই কিনার জন্য বাহিরে নিয়ে যেতে চাই না এই শহরে হিয়া নতুন তাই। শহরের পরিচিত হওয়া খুব দরকার আর ও গ্রামের মেয়ে ঘরে বসে থাকা পছন্দ হবে না তাই বাহিরে ঘুরতে নিয়ে যেতে চাই। হৃদান বলে –

“- শুধু বই কিনলে হবে না এই শহরে এখন থেকে আপনি থাকবেন তাই বিভিন্ন রাস্তা বা অন্য কিছুর সম্পর্কে জানা দরকার আপনার “।

“- একটা কথা জানেন গ্রামের মানুষ খুব সহজ সরল হয় তাদের মধ্যে এতো জটিলতা থাকে না। কিন্তু শহরের মানুষ বড্ড বেশি ভয়ংকর হয় আর সব মানুষকে জানার দরকার নাই একজনকে দেখেছি আমার চোখে সে সবচেয়ে খারাপ মানুষ। তাই এই শহরের লোকের বিষয়ে ধারণা নেওয়ার দরকার নাই আমার।

হৃদানের এবার রাগ উঠে গেছে এই মেয়েকে ভালো করে বুঝালে কথা কানে যায় না খারাপ করে বলতে হবে। হৃদান গিয়ে ওর হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে এসে বলে –

“- সমস্যা কি হুম আপনার অনেকখন ধরে সুন্দর করে কথা বলছি বাট আপনি ত্যাড়ামি করে যাচ্ছেন। বলেছি বাহিরে যাবো মানে যাবো রেডি হয়ে থাকবেন “।

হিযা এক ঝটকায় ওর হাত ছাড়িয়ে নেয় রাগে বা এমনি যেভাবে হোক কেউ হিয়াকে টার্চ করবে সেটা ওর পছন্দ না। হিয়া বলে –

“- সমস্যা আমার মধ্যে না আপনার মধ্যে রয়েছে দেখিয়ে দিলেন নিজের আসল রূপ। যখন ভালো করে কথা বলতে যানেন না তখন বলেন কোনো আর একটা কথা কথায় টার্চ করবেন না সেই অধিকার নাই আপনার “।

“- আমার সেই অধিকার চাই ও নাহ সো রেডি হয়ে যান “।

পিকু একটু বসে ওদের কথা শুনছে কি ঝগড়া করতে পারে দুইজনে। যদি আগে জানতো এমন ঝগড়া হবে তাহলে সে আসতো না মনে করেছে হিয়া আর হৃদান একটু রোমান্টিক কিছু করবে তার তা দেখে পিকু কিছু শিখবে। এবং পরে তার গার্লফ্রেন্ড কে সেই ভাবে ভালোবাসবে কিন্তু সব উল্টো হচ্ছে। পিকু বলে –

“- আরে মামা আর নতুন মামি তোমরা কতো ঝগড়া করবে হুম বিরক্ত হয়ে গেছি আমি “।

হৃদান কোনো কথা না বলে ঘর থেকে বের হয়ে যায় পিকুও ঘর থেকে চলে আসে। হৃদানের একটু রাগ হচ্ছে কিন্তু সে হিয়ার সাথে যা করেছে এরপর এইরকম ব্যবহার আশা করা উচিত। হৃদান সাথে থাকা পিকুকে বলে –

“- পিকু আজকে কি তোর স্কুল খোলা “।

“- না আজকে অফ দিয়েছে স্কুল “।

হৃদান পিকুকে ওদের সাথে বই নিয়ে যেতে চাই কারণ পিকু থাকলে হিয়া একটু হাসিখুশি থাকবে। হৃদান বলে –

“- তাহলে ঘরে গিয়ে রেডি হয়ে নে আজকে তুই আমি আর নতুন মামি মিলে বাহিরে ঘুরতে যাবো। আর অনেক মজা করব ঠিক আছে “।

পিকু খুশি হয়ে যায় সে ঘুরতে যাবে বাহিরে যদিও হৃদান পিকুকে মাঝে মধ্যে বাহিরে নিয়ে যায়। তবে আজকে নতুন মামি সাথে যাবে পিকু তাড়াতাড়ি রেডি হতে রুমে চলে যায়। হিয়া নিজের ঘরে বসে আছে কিন্তু বসে থেকে কি কোনো উপায় আছে একজন অর্ডার দিয়ে চলে গেছে সেটা মানতে হবে। তাই হিয়া উঠে আলমারি থেকে একটা শাড়ি বের করে নেয় কারণ শাড়ি ছাড়া তার কোনো কিছু পড়ার নাই। হিয়া রেডি হয়ে নিচে নামে।

হৃদান আর পিকু রেডি হয়ে নিচে হিয়ার জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু রায়হান চৌধুরী ওদের দেখে বলে –

“- হৃদান তুমি আর পিকু কোথায় যাও”।

হৃদান একটু বিরক্ত হয় সব বিষয়ে রায়হান চৌধুরীর কোনো আগ্রহ থাকে সেটা ও বুঝতে পারে না। হিয়া নিচে নেমে এসে ওদের পাশে দাঁড়ায়। হৃদান বলে –

“- হিয়াকে নিয়ে বই কিনতে যাবো “।

“- তুমি তোমার বউকে নিয়ে বই কিনতে যাবে “।

“- তাহলে কি ঘরে বসে বউয়ের গালে চুমো খাবো “।

কথাটা বলে হৃদান হিয়াকে ইশারা দেয় চলে আসতে আসলে হৃদানের ওর বাবার উপর একটু রাগ রয়েছে ছোটবেলা থেকে। কারণ রায়হান চৌধুরীর আগে ব্যবসা নিয়ে এতো বিজি ছিলো কখনো হৃদান বা তার মাকে সময় দিতে পারে নাই। যখন তার মা মারা যায় তখন রায়হান চৌধুরী ব্যবসার কাজে বাহিরে ছিলো তাই ওনার প্রতি হৃদানের রাগ রয়েছে।

রায়হান চৌধুরী ছেলের কথা শুনে কান গরম হয়ে গেছে এভাবে বাবার সামনে এইসব কথা কি কেউ বলে বেয়াদব। হিয়া এইসব কথা শুনে বলে –

“- আচ্ছা আপনার মুখে কি কিছু আটকায় না হুম নিজের বাবার সামনে কি কথা বললেন আপনি। ছি: “।

“- কোনো কি ভুল বলেছি বউকে কি চুমো খাওয়া অন্যায় “।

“- বাবার সামনে তাই বলে এই কথা বলবেন “।

“- কোনো আব্বু কি তার বউকে চুমো খায় না “।

“- আপনি যার কথা বলছেন সে আপনার মা হয় “।

“- বাবা চুমো খেয়েছে বলে সে আমার মা হয়েছে না হলে আমার জন্ম হতো না “।

একজন ম্যাজিস্ট্রেট কি করে এইরকম লাগাম ছাড়া কথা বলতে পারে সেটা হৃদানকে না দেখলে হিয়া বুঝতে পারতো না। মুখে কিছু আটকায় না লোকটার হিয়া কোনো কথা না বলে গাড়িতে উঠে বসতে গেলো কিন্তু যখন গাড়িতে উঠতে যাবে তখন গাড়িতে একটু ব্যাথা পাবে এর আগে হৃদান হাত ধরে ফেলে। হিয়া ওর দিকে তাকায় লোকটা যদি শুধু ওর দায়িত্ব নিতে চাই তাহলে এতো কেয়ার কোনো করে ওর।

হৃদান গাড়িতে উঠে বসে পিকু সামনে বসতে চাইলে হৃদান ওকে পিছনে বসতে বলে। পিকু পিছনে বসে যায় হিয়া হেসে বলে –

“- আচ্ছা পিকু আমিতো তোমার সাথে ভালো করে পরিচিত হতে পারি নাই তোমার বিষয়ে বলো আমাকে “।

পিকু আর হিয়া কথা বলতে থাকে হৃদান ওদের কথা শুনে আর গাড়ির সামনের দিকের আয়না দিয়ে ওকে দেখে। পিকুর কথা শুনে হিয়া হাসছে কি সুন্দর লাগে মেয়েটাকে হাসতে দেখলে কিন্তু এই কয়েকদিনে হাসতে ভুলে গেছে সে। হৃদান এইজন্য পিকুকে ওদের সাথে নিয়ে এসেছে।

পিকু আর হিয়া কথা বলতে থাকে আর ওরা লাইব্রেরিতে পৌঁছে যায় সেখানে অনেক ধরনের বই রয়েছে। শহরের লাইব্রেরি বড়োতো হবে অনেক মানুষ রয়েছে সেখানে হিয়া গাড়ি থেকে নেমে যায়। পিকু গাড়ি থেকে নেমে যায় এই লাইব্রেরিতে সে কি করবে।

হিয়া আর হৃদান বই কিনে কিছু পাশে থাকা পিকুকে জিজ্ঞেস করে –

“- এই পিকু তোর কি কোনো বই কিনতে হবে “।

পিকু একটু চিন্তা করে বলে –

“- হুম কিনতে হবে প্রেমে ফেলার উপায় বিষয়ে যদি বই থাকে তাহলে পড়ব “।

হৃদান ওর মাথায় একটা আস্তে করে চড় দেয় আর বলে –

“- আব্বু না ঠিক বলে তুই আসলে একটা বোয়াদব। ভালো করে পড়াশোনা কর “।

“- হুম ভালো করে পড়াশোনা করলে কি হবে শুনি আব্বুতো ভালো করে পড়াশোনা করেছে পেয়েছে তোমার বোনকে। আব্বুর জীবন থেকে আমি হতাশ “।

“- একবার বাড়িতে চল তোকে দেখাবো মজা “।

হিয়া ওদের মামা ভাগ্নে খুনসুটি দেখে হাসছে কি দুষ্ট অবশ্যই দুইজনে এমন। যেমন মামা তার তেমন ভাগ্নে। সবাই গাড়িতে উঠে বসে হিয় মনে করছে ওরা বাড়ি ফিরে যাবে বাট হিয়াকে ভুল প্রমাণ করে হৃদান একটা পার্কে নিয়ে আসে ওদের। হিয়া দেখে আশেপাশে অনেক মানুষ হিয়া বলে –

“- আমরা পার্কে কোনো এসেছি “।

পিকু গাড়ি থেকে নেমে যায় সে এই পার্কে আরো অনেক এসেছে হৃদানের সাথে। পিকু বলে –

“- আরে নতুন মামি তুমি জানো না এইটা মামার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা। মামা যাকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে তাকে এখানে নিয়ে আসে আমাকে নিয়ে এসেছে। এখন বিয়ের পর তুমি মামার ভালোবাসার মানুষ তাই তোমাকে নিয়ে এসেছে “।

হিয়া মনে মনে ভাবে সে হৃদানের পছন্দের জায়গায় আসতে পেরেছে কিন্তু পছন্দের মানুষ হতে পারে নাই। হিয় একটু হৃদানের দিকে তাকায় এরপর হৃদান বলে –

“- পিকু চল ভিতরে যায় “।

পিকু আর হিয়া ভিতরে যায় যদিও এইটা পার্ক তবে অনেক বড়ো মেলা হচ্ছে এখানে অনেক মানুষ। সবাই বিভিন্ন জিনিস কিনছে হিয়া একটু একটু ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে। ওর একটা পুতুলের বউ খুব পছন্দ হয় সেটা হিযা কিনতে চাই।

হৃদান বলে –

“- এইসব মাটির জিনিস কেউ কিনে ওখানে অনেক সুন্দর জিনিস রয়েছে ওইসব কিনেন “।

“- না আমি এইটা কিনব “।

দোকানদার লোক হিয়াকে বলে –

“- আপা মণি শুধু কি বউ কিনলে হবে জামাই কিনতে হবে না জামাই আর বউ একসাথে থাকলে ওদের সুন্দর দেখায়। এই পুতুলের জামাই বউয়ের মতো আপনারা থাকবেন দেখবেন পাশাপাশি থাকলর কতো সুন্দর দেখাবে “।

হিয়া একটু হৃদানের চোখের দিকে তাকায় এরপর চোখ নামিয়ে ফেলে হিয়া শুধু বউ কিনতে চাই –

“- না মামা শুধু বউ দেন কারণ সব মানুষকে কাছে রাখা যায় না কিছু মানুষ দূরে থাকলে বেশি ভালো “।

হৃদান ওর কথা শুনে পাশে থাকা জামাই পুতুল ও দিতে বলে –

“- আপনি জামাই পুতুল ও দেন আর কিছু মানুষ সারাজীবন আপনার পাশে থাকে না। তবে দায়িত্ব মনে করে সামনের পথ দেখিয়ে দিতে পারে “।

হিয়া ওর কথা শুনে বলে –

“- পুরুষ মানুষ যদি আগলে রাখতে যানে তাহলে শখের নারী থাকতে বাধ্য “।

#চলবে