#মেঘলা_আকাশে_রংধনু_হবো
#লেখনীতে_তাইয়েবার_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_০৬
হিয়া পুতুল নিয়ে মেলায় ঘুরতে থাকে পিকু অনেক খেলনার জিনিস কিনেছে হিয়া একটা খেলা খেলে বেলুন ফাটানোর খেলা কিন্তু সে কিছুতেই বেলুনে পিন দিয়ে ফোটা করতে পারছে না। হৃদান দূরে দাঁড়িয়ে এইসব দেখছে মেলায় কতো দামি দামি জিনিস রয়েছে কিন্তু এই মেয়ের বাচ্চাদের মতো এইসব জিনিস পছন্দ হয়। হৃদান কাছে যায় হিয়ার হাত ধরে সুন্দর করে পরে পিনটা জোরে ছুঁড়ে মারে বেলুন ফেটে যায়।
হিয়া খুশি হয়ে যায় আনন্দে লাফালাফি করতে থাকে এই শহরে অনেক মেয়ে রয়েছে তারা শুধু দামি দামি জিনিস নিয়ে খুশি থাকে। কিন্তু কোনো মেয়ে এই ছোট বিষয় নিয়ে খুশি হতে পারে সেটা হৃদান জানতো না সত্যি মেয়েটা অনেক ভালো। পিকু আর হিয়া অনেক মজা করল কিন্তু হৃদান কিছুই না শুধু দূরে দাঁড়িয়ে থাকে একটা মানুষ কতোটা বোরিং হতে পারে সেটা হৃদানকে দেখে বুঝা যায়।
মেলা অনেক সময় কাটানোর পর তারা আবার গাড়িতে উঠে পড়ে যদিও পিকু একটু জেদ করেছে থাকতে বাট বিকেল হয়ে গেছে তাই হৃদান ধমক দেয়। তবুও হিয়া অনেক খুশি কতোদিন পর একটু মন খুলে আনন্দ করতে পারলো মামি ওখানে থাকলে মেলাতো অনেক দূরে বাড়িতে শুধু কাজ করতে হতো এভাবে কোথায় ঘুরে বেড়ায় নাই।
পিকু বলে –
“- আচ্ছা নতুন মামি তোমাদের নিশ্চয়ই অনেক সুন্দর তাই না। গ্রামের একটু গল্প বলো “।
হিয়া পিকুকে গল্প বলতে থাকে গ্রামের সৌন্দর্য নিয়ে আর হৃদান গাড়ি চালাতে থাকে। হৃদান আয়নায় ওর মুখ দেখে বলে –
“- হিয়া আজকের পর থেকে আপনার জীবনে শুধু খুশি থাকবে যেই হাসিটা আপনার মুখ থেকে আমার জন্য বিলীন হয়ে গেছে। তার চেয়ে দুইগুণ সুখ দিয়ে আপনার মুখের হাসি ফিরিয়ে দিতে চাই কিন্তু যদি ভবিষ্যতে সত্যি কথা জানেন তখন এর চেয়ে চারগুণ বেশি ঘৃণা আর কষ্ট পাবেন “।
হৃদান আর হিয়া বাড়ি ফিরে যায় পিকু ওর খেলার জিনিস নিয়ে গিয়ে রুমে গিয়ে দেখতে থাকে। হিয়া ঘরে যায় অনেক গরম করছে ওর যদিও গাড়িতে বা বাড়িতে সব জায়গায় এসি রয়েছে কিন্তু পার্কে অনেক সময় রয়েছে। তাও আবার শাড়ি পড়ে তাই গরম করা স্বাভাবিক বিষয় হিয়া ওয়াশরুমে গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে নেয় শরীর ভীষণ টার্য়াড লাগছে ওর।
তাই একটু বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
বিয়ের বাড়ির কথায় আসি বিয়ের আসর থেকে বউ পালিয়ে গেছে বিষয়টা এতো সহজ না। হিয়ার মামি রাগে ফেটে পড়ছে কতো বড়ো সাহস হিয়া বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে গেছে সবাই মনে করেছে হিয়া নিজে থেকে চলে গেছে। কারণ হৃদানকে নিয়ে যেতে কেউ দেখে নাই মামি বলে –
“- কি করছো তুমি এখানে বসে বসে হুম দুইদিন ধরে তোমার ভাগ্নি নিখোঁজ হয়ে গেছে আর তুমি শান্ত হয়ে বসে আছো। জানি না কার সাথে পালিয়ে গেছে ও “।
হিয়ার মামা বসে রয়েছে চেয়ারে হিয়ার পালিয়ে যাওয় নিয়ে সবাই বিরক্ত কিন্তু মামা খুব খুশি হয়ে গেছে। কারণ হিয়া অন্য কোথায় গিয়ে ভালো থাকবে এর চেয়ে বেশি আর কি চাই সে এখানে একটা নরকের মধ্যে থাকতে হতো হিয়াকে। মামা বলে –
“- শেনো আমার ভাগ্নি নিয়ে টেনশন তোমার চেয়ে বেশি আছে সেই নিয়ে ভাবতে হবে না তোমার। আর তুমি চাইতে হিয়া বিয়ে করে এই বাড়ি থেকে যেনো বিদায় হয় সেটায় হয়েছে এখন আর কি সমস্যা তোমার “।
“- ওহ তাই আমার কি সমস্যা থাকবে এতোদিন টাকা খরচ করে পড়ালাম আর এখন বড়ো হয়ে নতুন নাগ*র পেয়ে চলে গেছে। এইজন্য প্রতিদিন কলেজ যেতো বিয়ের কথা তুললে রাগে ফেটে পড়ছে। আসলে বিয়তে সমস্যা ছিলো না সমস্যা ছিলো ছেলেতে চরিত্রহীন মেয়ে “।
মামা একটা থাপ্পড় দেয় ওর গালে এতোদিন অনেক কথা সয্য করেছে কারণ যদি কিছু বলতো তাহলে হিয়াকে অত্যাচার করতো ওর মামি। কিন্তু এখন কোনো বাধা নাই মামা বলে-
“- হিয়া আমার মেয়ে আর তুমি আমার মেয়েকে চরিত্রহীন কি করে বললে তুমি হুম। আগে নিজের চরিত্র ঠিক করো এখন আমার সামনে থেকে যাও “।
“- তুমি আমার গায়ে হাত তুললে এতো বড়ো সাহস তোমার হুম দেখে নিবো তুমি আর তোমার মেয়েকে “।
হিয়া অনেক সময় ধরে ঘুমিয়ে থাকে প্রায় রাত হয়ে গেছে বাহিরে আযানের শব্দ শোনা যাচ্ছে শহরে অনেক মসজিদ তাই আযান শব্দে চারদিক মুখোরিতো হয়ে গেছে। হিয়া ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ঔযু করে আসে তারপর মাগরিবের নামাজ পড়ে নেয় পরে টেবিলে পড়তে বসে যায়।
হৃদান ও ঘুমিয়ে ছিলো পড়ে উঠে নামাজ পড়ে নেয় এরপর অফিসের কিছু ফাইল দেখতে থাকে। পাশের রুম থেকে হিয়ার পড়াশোনার আওয়াজ শুনে বুঝতে পারে পড়তে বসেছে সে হৃদান আবার কাগজ দেখতে শুরু করে। হিয়া অনেক সময় ধরে পড়াশোনা করার পর তারপর ওর কাছে পিকু আসে –
“- নতুন মামি তুমি কি পড়াশোনা করছো “।
হিয়া পিকুকে দেখে বই রেখে দেয় অনেক সময় ধরে পড়াশোনা করছে আর ভালো লাগছে না তার। আর পিকু থাকলে পড়াশোনায় মনোযোগ দিবে এইটা কেউ পারবে না হিয়া বলে –
“- হুম পড়াশোনা করছি কিন্তু পিকু এখানে কি করে তার কি পড়াশোনা নাই “।
“- আরে পড়াশোনা করি বাট সেটা টাইম পাস “।
হিয়া আর পিকু অনেক গল্প করে পরে পিকু চলে যায় হিয়া পড়াশোনা করতে থাকে। বাট ওর একটা সমস্যা হলো বন্ধ ঘরে পড়াশোনা করতে পারে না তাই একটু বাহিরে গিয়ে হাঁটতে থাকে আর পড়তে থাকে। হৃদান পাশের রুমে রয়েছে কিন্তু হিয়ার হাঁটার কারণে তার পায়ের নুপুর বাজছে এর শব্দে তাকে বিরক্ত করছে। হৃদান বাহিরে বের হয়ে আসে –
“- কি সমস্যা আপনার হিয়া নুপুরের শব্দ কোনো করছেন “।
হিয়া পড়াশোনা রেখে হৃদানের দিকে তাকায় লোকটার সব বিষয়ে এতো সমস্যা কোনো হিয়া করে তাতে অভিযোগ থাকে তার। হিয়া বলে –
“- আসলে পড়াশোনা সময় হাঁটাহাঁটি না করলে আমার পড়া মুখস্থ হয় না “।
“- এই পৃথিবীতে কি আপনি শুধু পড়াশোনা করেন হৃম যান ঘরে গিয়ে পড়েন। আর হ্যা ঘরে গিয়ে নুপুর খুলে রাখবেন বিরক্ত লাগছে আমার এর শব্দ শুনে “।
“- তাহলে আপনি ঘরে গিয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে রাখেন “।
হৃদান মেয়েটার সাহস দেখে মাঝে মধ্যে অবাক হয়ে যায় হিয়া নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায় কিন্তু হঠাৎ করে হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে গেলে হৃদান ধরে ফেলে। কিন্তু একটু পায়ে ব্যাথা পায় হিয়া –
“- আহ ব্যাথা করছে “।
হৃদান ওর পায়ের ব্যাথার কথা শুনে ওকে সামলে নিয়ে একটু নিচুঁ হয়ে পায়ে হাত দেয়। হিয়া তখন বলে –
“- আরে কি করছেন পায়ে হাত দিবেন না “।
“- দেখতে দেন পায়ে কেমন ব্যাথা পেয়েছেন “।
হিয়া গ্রামের মেয়ে তাই কিছু জিনিসে সে বিশ্বাস করে যেমন যদি স্বামী পায়ে হাত দেয় তাহলে পাপ হয়। যদিও সে এই বিয়ে মানে না কিন্তু বিয়েতো হয়েছে হিয়া বলে –
“- দেখুন যদিও আমি এই বিয়ে মানি না বাট আপনি আমার পায়ে হাত দিবেন না। আমার পাপ হবে “।
হৃদান ওর কথা একটু অদ্ভুত লাগে পায়ে হাত দিলে পাপ হবে কোনো কিন্তু হৃদান ওর কোনো কথা শুনে না পায়ে হাত দেয় ওর। দেখে একটু ফুলে গেছে মনে হয় মোচড় খেয়েছে তাই হিয়াকে কোলে তুলে নেয়। হৃদানের এই কাণ্ডে হিয়া পুরো অবাক তাকে ও কোলে তুলেছে। হিয়াকে খাটের উপর বসিয়ে দেয় তারপর বরফ নিয়ে এসে বরফ লাগিয়ে দেয়।
হিয়া ওর দিকে তাকিয়ে থাকে এতো কেয়ার এতো যত্ন কি শুধু দায়িত্ব থেকে হতে পারে। আমার পায়ে ব্যাথা লাগলে ওনার কি যে নিজের ঘরে থাকতে দিতে চাই না সেই মানুষ একটু পায়ে ব্যাথা লাগলে কোলো তুলে নিয়ে আসতে পারে। এতো কেয়ার করে কিন্তু ভালোবাসে না কি অদ্ভুত মানুষ।
হৃদান পায়ে বরফ লাগাতে থাকে আর দেখে হিয়া ওর দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে কি যেনো ভাবছে। ওর তাকানো খারাপ লাগে নাই হৃদানের কখনো কোনো মেয়ের চোখে ওর জন্য এতো মুগ্ধতা দেখে নাই । যদিও ও কখনো কোনো মেয়ের চোখের দিকে এভাবে তাকায় নাই কিন্তু হিয়ার দুইটি চোখের মুগ্ধ দৃষ্টি ওকে টানছে চোখ সরাতে পারছে না ওহ। তবুও হৃদান বলে –
“- হুম বরফ লাগিয়ে দিয়েছি আশা করি কোনো সমস্যা হবে না আন যদি কিছুর দরকার লাগে তাহলে পাশের রুমে আছি আমি। ডাকবেন “।
হৃদান ঘর থেকে বের হয়ে গিয়ে নিজের রুমে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে মনে মনে বলে-
“- কামন হৃদান নিজেকে নিয়ন্ত্রণ কর ভুলে যাবি না হিয়া শুধু তোর দায়িত্ব। শুধু দায়িত্ব “।
হিয়া চুপ করে বসে থাকে পায়ে থাকা বরফ দেখে মা মারা যাওয়ার পর কখনো কেউ ওর কেয়ার করে নাই। কিন্তু আজ হৃদান করেছে হিয়ার একটু ঘুমাতে ইচ্ছা করছে বিকালে ঘুমিয়েছে কিন্তু হৃদান পায়ের ব্যাথার জন্য ঔষধ দিয়েছে তাই ঘুম পেয়েছে। হিয়া ঘুমিয়ে পড়ে সকালে নামাজ পড়তে উঠে এরপর কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতে থাকে যদিও কুরআন শরীফ ওর রুমে ছিলো না তানিয়ার রুম থেকে নিয়ে এসেছে।
রায়হান চৌধুরী সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ার জন্য মসজিদ থেকে ফিরে এসে নিজের রুমে যাবে এমন সময় কারো কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত শুনে। ভালো করে শুনে দেখে হিয়ার রুম থেকে আসছে শব্দটা রায়হান চৌধুরী দরজা দিয়ে একটু ভিতরে যায়।
হিয়ার পড়া শেষ ও যখন কুরআন শরীফ গুছিয়ে রাখতে যাবে তখন সামনে রায়হান চৌধুরীকে দেখে। হিয়া বলে –
“- আরে বাবা আপনি কখন আসলেন ভিতরে আসেন “।
বাবা ডাক শুনে রায়হান চৌধুরীর ভালো লাগে মেয়েটা খারাপ নয় যদিও হৃদানের পছন্দ কখনো খারাপ হয় না। রায়হান চৌধুরীর বলে –
“- না বসবো না তোমার ঘর থেকে কুরআন পড়ার শব্দ আসছে তাই একটু দেখতে এসেছি “।
“- ওহ আসলে প্রতিদিন সকালে পড়ি “।
“- যানো হৃদানের মা প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে কুরআন পড়তো সকালের এই বাড়ির সবার ঘুম ওর কণ্ঠ শুনে ভাঙত। কিন্তু ও মারা যাওয়ার পর থেকে এই বাড়িতে এই নিয়ম কেউ মানে নাই সবার ঘুম থেকে উঠতে নয়টা দশটা বাজে। অনেক দিন পর তোমার মধ্যে এই কুরআন পাঠের গুণ দেখতে পেলাম “।
“- ধন্যবাদ বাবা “।
“- একটা কথা সত্যি হৃদান কখনো খারাপ পছন্দ করে না তবে ও তোমাকে বিয়ে করেছে কিন্তু একসাথে থাকে না। যানি না এমন কোনো করছে কিন্তু একটা কথা মনে রাখবে হৃদান খুব ভালো ছেলে একবার ওকে বুঝতে পারলে এই পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ মনে হবে ওকে “।
#চলবে