মেঘলা আকাশে রংধনু হবো পর্ব-০৭

0
12

#মেঘলা_আকাশে_রংধনু_হবো
#লেখনীতে_তাইয়েবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_০৭

হিয়া রায়হান চৌধুরীর কথা শুনে প্রথম যেদিন এই বাড়িতে ঢুকেছে তখন রায়হান চৌধুরীর তাকে পছন্দ করতো না। কিন্তু এখন মাথায় হাত রেখে কথা বলছে আর হিয়া গ্রামের মেয়ে তার সাথে হৃদান চৌধুরীর বিয়ে হয়েছে সেটা কোনো বাবা মেনে নিবে না। হিয়া বলে –

“- কিন্তু বাবা আপনিতো আমাকে পছন্দ করেন না তাহলে হঠাৎ করে এমন কথা বলছেন কোনো “।

রায়হান চৌধুরী কথাটা শুনে হাসে সে কখনো হিয়াকে অপছন্দ করতে না বা এই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে চাই না। কিন্তু হৃদান হঠাৎ করে বিয়ে করে ফেলেছে সেটা মেনে নিতে পারে নাই। রায়হান চৌধুরীর এই শহরের একজন বড়ো ব্যবসায়ী তার ছেলের বিয়ে কাউকে দাওয়াত দেয় নাই সব মিলিয়ে এই বিয়ে নিয়ে একটু রাগ ছিলো তার। রায়হান চৌধুরী বলে –

“- দেখো হিয়া হৃদান আমার একমাত্র ছেলে সব বাবা চাই নিজের ছেলের বিয়ে আয়োজন অনুষ্ঠান করে দিতে। আমি ও তাই চাই কিন্তু হঠাৎ করে এই বিয়ে করে ফেলেছে ও। যদি হৃদান আগে বলতো ও তোমাকে পছন্দ করে তাহলে আমি নিজে গিয়ে তোমার পরিবারের সাথে কথা বলে বিয়ে ঠিক করতাম “।

হিয়া রায়হান চৌধুরীর কথা বুঝতে পারে মানুষটাকে প্রথম দিন খারাপ মনে হয়েছে কিন্তু এখন ভালো লাগছে। হিয়া কখনো বাবার ভালোবাসা পায় নাই আজকে রায়হান চৌধুরীর কথায় বা ওনার মাথায় হাত রাখায় হিয়ার মনে হচ্ছে ওর বাবা থাকলে মনে হয় এমন করে কথা বলতো। রায়হান চৌধুরী চলে যায় এই পরিবারের মানুষ এতো খারাপ না ভালো আছে।

হিয়া যেহেতু ফজরের আযানের সময় উঠে পড়েছে তাই বেলা বেশি হয় না সে পড়াশোনা শেষ করে নিচে নামে। নিজে কখনো ইচ্ছা করে নিচে আসে নাই কিন্তু উপরে কতো বসে থাকা যায় তাই নিচে নামলো সিঁড়ির পাশে রান্নাঘর সেখানে যায় সকাল আটটা বেজে গেছে রান্নাঘরে জুলেখা কাজ করছে। হিয়া সেখানে যায় জুলেখা হিয়াকে দেখে বলে –

“- আরে নতুন মেম সাহেব এখানে কি করেন আপনি। কিছু কি লাগবো আপনার আমাকে বলেন কি লাগবে “।

হিয়ার মেম সাহেব ডাকটা অদ্ভুত লাগে হিয়া বলে –

“- দেখুন আপনি আমাকে হিয়া বলে ডাকতে পারেন মেম সাহেব বলার দরকার নাই। আর আমরা দুইজন গ্রাম থেকে এসেছি তাই একে অপরকে মেমে সাহেব ডাকা উচিত নয় “।

“- আরে কি বলেন আপনি হলেন হৃদান স্যারের বউ মানে এই বাড়ির ছোট মালিক “।

“- কিন্তু আমি আপনার থেকে ছোট হয় সো আমার আপনাকে খালা বলা দরকার “।

হিয়ার এই আপন করা ব্যবহার ওর খুব ভালো লাগে মেয়েটা কতো মিষ্টি। হিয়া একটু কথা বলে জুলেখার সাথে তারপর রান্না কাজে সাহায্য করতে থাকে জুলেখন বারণ করে কিন্তু হিয়া রান্না করতে ভালোবাসে। যেহেতু ও গ্রামে থেকেছে বা মামির কাছে থেকেছে তাই রান্না ও ভালো করতে পারে একদম তার মায়ের মতো। হিয়া বলে –

“- আচ্ছা এই বাড়িতে কি তানিয়া আপি, বাবা আর ওনি ছাড়া কেউ থাকেন না “।

“- না তেমন কেউ থাকে না তবে হৃদান স্যারের দাদা দাদু দূরে থাকে ওনারা মাঝে মধ্যে আসে। আর তানিয়া মেডামের জামাই মানে রাকিব স্যার বিদেশে থাকেন অনেক বড়ো বিজনেস তার। সপ্তাহে বা মাসে একবার পিকু আর তানিয়া মেমকে দেখতে আসেন “।

“- ওহ “।

হিয়া আর জুলেখা কিছু কথা বলতে থাকে আর হিয়া ওকে সাহায্য করতে থাকে। হিয়ার রান্নার হাত ধরে জুলেখা বেশ খুশি হয় খুব সুন্দর পরিপাটি করে সব কাজ করতে পারে সে। কিন্তু জুলেখার কমোড়ে আজকে একটু ব্যাথা রয়েছে তাই উপরে উঠতে পারবে না তাই হিয়াকে বলে –

“- হিয়া আজকে আমার কমোড়ে খুব ব্যাথা তাই উপরে উঠতে পারব না তুমি গিয়ে একটু হৃদান স্যারের কফি দিয়ে আসো। তোমার আর ওনার রুমতো একসাথে প্রায় “।

জুলেখার কথা শুনে হিয়ার ভয় পায় হৃদানের ঘরে যাবে সে কফি দিতে হৃদানের সেইদিনের কথা মনে পড়ে যায় ওর। যদি আর কখনো তার রুমে ঢুকে তাহলে পা ভেঙে রেখে দিবে ছায়া দেখতে চাই না তার রুমে। হিয়া বলে –

“- জুলেখা খালা তুমি যদি যেতে না পারো তাহলে বাড়িতে অনেক কাজের লোক আছে তাদের পাঠাও। আমি ওনার রুমে যাবে না যা রাগী লোক “।

“- আরে হৃদান স্যারের রুমে সবাই যেতে পারে না ওনার রুমে ঢুকার অনুমতি শুধু আমার আর বাড়ির লোকের আছে। তাই অন্য কেউ যেতে পারবে না কিন্তু তুমি ওনার বউ যেতে কোনো পারবে না সেটাতো তোমার ও রুম “।

হিয়া কি করবে জুলেখার কষ্টটা বুঝতে পারছে এই ব্যাথা নিয়ে এতো সিঁড়ি কি করে উঠবে। কিন্তু হিয়া যদি হৃদানের ঘরে যায় পরে যদি ওকে বকা দেয় বা সত্যি সত্যি টা ভেঙে রেখে দেয় তখন কি করবে হিয়া। হৃদানের কখন কেমন মুড থাকে কে যানে হিয়া তবুও মনে মনে বলে –

“- হিয়া মনে সাহস রাখ কি করে ফেলবে লোকটা তোর ওনি তোর রুমে আসতে পারে। আর তুই ওনার রুমে যেতে পারবি না “।

হিয়া অনেক সাহস নিয়ে হৃদানের রুমে যেতে থাকে দরজার সামনে গিয়ে ওর সাহস শূন্যর কোটায় পৌঁছে যায়। কিন্তু দরজাটা খোলা ছিলো একটু উঁকি দিয়ে দেখে ঘরে কেউ নাই ওয়াশরুম থেকে পানি ছাড়ার শব্দ আসছে তাই হিয়া বুঝতে পারে হৃদান গোসল করছে। আজকে অফিস আছে তাই মনে হয় গোসল করছে হিয়া তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকে চায়ের কাপ রেখে বের হয়ে আসতে যায় এমন সময় পিছন থেকে কেউ বলে –

“- হিয়া আপনি আমার রুমে কি করবেন। এমন চোরের মতো ঢুকে বের হয়ে যাচ্ছেন “।

হিয়া শেষ অবদি আর বাঁচতে পারলো না যেখানে বাঘের সেখানে সন্ধ্যায় হয় কিন্তু এখন হিয়া বাঘের আস্তানায়। হিয়া পিছনে ফিরে বলে –

“- আসলে জুলেখা খালার কমোড়ে খুব ব্যাথা তাই ওনি কফি দিতে পারবেন না তাই আমাকে পাঠিয়েছেন “।

“- আপনাকে রান্না ঘরে যেতে কে বলেছে শুধু পড়াশোনা করবেন। বাড়িতে কি কাজের লোকের অভাব রয়েছে “।

হিয়া এতোখন ভালো করে দেখি নাই বাট হৃদান শুধু টাওয়াল পড়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে। ওর শরীরে আর কিছু নাই হিয়া সেটা দেখে চোখ বন্ধ করে ফেলে আর বলে –

“- আপনি এই শার্ট ছাড়া শুধু একটা টাওয়াল পড়ে আছেন কোনো হুম। ছি ছি “।

হৃদান ওর দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি ও আর কিছু পড়ে নাই ও পাশে থাকা একটা শার্ট৷ পড়ে নেয় আর বলে –

“- ছি ছি করছেন কোনো আমাকে দোষ আপনার। একজন মানুষের রুমে ঢুকতে হলে দরজায় নক করে ঢুকতে হয় “।

হিয়া চোখ খুলে যদিও হৃদান শার্ট পড়ে নেয় কিন্তু ওর বডি দেখতে দারুণ ভালো কি সুন্দর দেখতে। মনে হয় প্রতিদিন জিমে যায় একদম ছবির নায়কের মতো হিয়া বলে –

“- দেখুন আপনি ওয়াশরুমে ছিলেন তাই দরজা নক করি নাই সরি বুঝতে পারি নাই “।

“- আপনাকে না বলেছি আমার রুমে না আসতে আপনার ছায়া দেখতে চাই না৷ তাহলে কোনো এসেছেন আমার রুমে “।

“- আপনার মতো একটা রাগী মানুষের রুমে ঢুকতে বয়েই গেছে আমার। জুলেখা খালার জন্য এসেছি আমি না হলে আপনার চেহারা দেখতে চাই না আমি “।

“- কে বলতে পারে আসল সত্যি কি আমার মনে হয় জুলেখা খালা একটা বাহানা। আসলে আমি সকালে আমার রুমে এসে আমার গোসল করা দেখতে চান ছি ছি হিয়া “।

হিয়ার হৃদানের কথা শুনে রাগ হয় লোকটা কি বলে হিয়া ওর গোসল দেখতে এসেছে। ছি এইসব কথা উচ্চারণ করে কিরে মানুষ মুখ দিয়ে অবশ্য যে নিজের বাবাকে এইসব বলতে পারে সে হিয়াকে বলতে পারবে কোনো। হিয়া বলে-

“- আপনার গোসল দেখার কোনো ইচ্ছা নাই আমার হুম। আর গ্রামে যখন কলেজে যেতাম তখন পুকুর থেকে কতো কামলা উঠে গোসল করতে যেতো তাদের দেখে কিছু ফিল হতো না আমার”।

হৃদান ওর কথা শুনে মানে গ্রামের কামলাদের সাথে ওর বাডির তুলনা দিলো প্রতিদিন কতো জিম করে এই বডি তৈরি করেছে। হৃদান বলে –

“- গ্রামের কামলার সাথে আমার তুলনা দিলেন আপনি যানেন কতো কষ্ট করে এই বডি তৈরি করেছি। কতো মেয়ে আমার বডি দেখ আমার উপর ফিদা হয়ে গেছে “।

“- হিয়া কারো বডি দেখে ফিদা হয় না হিয়া দেখে মানুষের মন। আপনার এই চেহারার চেয়ে গ্রামের কামলা বেডার চেহারা আরো সুন্দর বিশ্বাস না হলে আয়নায় গিয়ে মিলিয়ে দেখেন “।

হিয়া কথাটা শেষ করে এক দৌড় চলে আসে হৃদান ওকে কি করে ধরতে পারবে। তবে সত্যি বলতে হৃদানের চেহারা বা বডি কিন্তু খারাপ না হিন্দি সিনেমায় নায়কের চেয়ে কম না বড়োলোক থাকলে যা হয়।

#চলবে