মেঘলা আকাশে রংধনু হবো পর্ব-০৮

0
12

#মেঘলা_আকাশে_রংধনু_হবো
#লেখনীতে_তাইয়েবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_০৮

হিয়া রুম থেকে চলে আসে হৃদান আয়নার কাছে যায় তারপর ভালো করে নিজের চেহারা দেখে কিন্তু সে একদম ঠিক দেখতে লাগছে। গোসল করে আরো বেশি কিউট লাগছে দেখতে তাই হিয়ার কথা একদম ভুল। কিন্তু মেয়েটার কি চোখ নাই হৃদানের সাথে কামলা বেডার তুলনা করলো।

হিয়া আবার রান্না ঘরে যায় জুলেখা রান্না করছে হিয়া একটু সাহায্য করলো ওকে হৃদান কফি শেষ করে নিচে নেমে আসে। নিচে নেমে দেখে হিয়া রান্না ঘরে কাজ করছে মেয়েটাকে কি রান্না করার জন্য এই বাড়িতে নিয়ে এসেছে আর কালকে যে বইগুলো কিনে দিয়েছে সেইগুলা কে পড়বে। পড়াশোনা না করে রান্না করে হৃদান হিয়াকে ডাক দেয় –

“- হিয়া এখানে আসেন একটু “।

হিয়া রান্নাঘরে কাজ করছে হৃদানের ডাক শুনে ও রান্নাঘরের কাজ রেখে ওর কাছে আসে। হিয়া বলে –

“- কিছু কি বলবেন “।

“-হুম আপনাকে রান্নাঘরের কাজ করতে কে বলেছে এইসব করার জন্য কি এই বাড়িতে নিয়ে এসেছি আপনাকে। বই এনে দিয়েছি শুধু পড়াশোনা করবেন আর ভালো রেজাল্ট করবেন “।

হৃদানের কথা শুনে হিয়া ওর দিকে তাকিয়ে দেখে ভালো করে পড়াশোনা কোনো করতে বলছে সেটা ও বুঝতে পারে। মাঝে মধ্যে লোকটাকে অনেক ভালো মনে হয়। হৃদানের কেয়ার দেখে মনে হয় হিয়া শুরু ওর দায়িত্ব না অন্য কিছু বাট একটু পরে ওর কথা শুনে সব ভাবনা সব ইচ্ছা মিলিয়ে হতাশা হয়ে। হিয়া বলে –

“- ভালো করো পড়াশোনা করে ভালো রেজাল্ট করে যাতে এই বাড়ি থেকে চলে যায় সেইজন্য কথাটা বললেন তাই না। টেনশন করবেন না আমি আপনার জীবনে সারাজীবন থাকতে চাই না চলে যাবো “।

হৃদান কিন্তু বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার জন্য ভালো করে পড়াশোনা করতে বলে নাই ও চেয়েছে হিয়া নিজের লাইফে ভালো করুক। কিন্তু হিয়া সে অন্যরকম ভেবেছে কিন্তু হিয়া এই মলিন মুখ দেখে হৃদানের একটু খারাপ লাগছে। কিন্তু কোনো খারাপ লাগছে সেটা বুঝতে পারছে না হৃদান বলে –

“- দেখৃন হিয়া আমি চাই আপনার পড়াশোনা শেষ হলে আপনাকে মুক্ত করে দিতে।কথাটা এইরকম মিন করে বলি নাই আর আপনার রান্নাঘরে আসার দরকার নাই “।

হিয়া হৃদানের দিকে তাকায় যদি সত্যি এমন মিন করে কিছু না বলে থাকে চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে পারছে না কোনো। যখন মানুষ মিথ্যা কথা বলে তখন মুখ লুকাতে হয় আর রান্নাকরা হিয়ার পছন্দ মামার বাড়িতে সে রান্না করতো।রান্না করলে যে পড়াশোনা করতে পারবে না বা খারাপ রেজাল্ট হবে এমন না। মেয়ে হয়ে যখন জন্মেছে তখন সব বিষয়ে পারদর্শিতার দরকার আছে হিয়া বলে –

“- দেখুন আমি এই বাড়িতে শুধু আপনার দায়িত্ব হয়ে এসেছি কিন্তু তারমানে এইটা না সারাদিন ঘরে বসে থাকবে। মামার বাড়িতে আমি রান্না করতান পাশাপাশি পড়াশোনা করেছি তখন যদি ভালো রেজাল্ট করতে পারি তাহলে এখনো পারব “।

হৃদান ওর কথা শুনে নরমাল মেয়েরা রান্নাঘর থেকে দূরে থাকতে চাই আর হিয়া রান্না করতে পছন্দ করে। কি অদ্ভুত মেয়ে জীবনে শহরের অনেক মেয়েকে দেখেছে কিন্তু এইরকম মেয়ে দেখে নাই। হৃদান বলে –

“- গ্রামের কলেজে পড়াশোনা করে সবাই ভালো রেজাল্ট করতে পারে বাট শহরের চান্স পাওয়া এতো সহজ না “।

“- গ্রামের আর শহরের বোর্ড এইচএসসির পেপার একই হয় নিশ্চয়ই আলাদা হয় না। আর ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে সেটা আশা করি খুব ভালো করে জানেন “।

হৃদান আর হিয়ার সাথে কথা বাড়াতে চাই না তাই যে কথা বলার জন্য আসলে তাকে ডেকেছে সেটা বলা উচিত। হৃদান বলে –

“- ওকে আমি চাই ভালো করে পড়াশোনা আর ভালো রেজাল্ট। ওহ আপনার জন্য এডমিশন টেষ্টের বই কিনা হয়েছে কিন্তু শুরু বই পড়লে হবে না কোচিং করতে হবে। কারণ শহরের এডমিশন টেষ্ট অনেক কঠিন হয়ে থাকে আমার বন্ধু রাব্বির একটা কোচিং রয়েছে সেখানে আপনি জয়েন করবেন “।

“- হুম ঠিক আছে আপনি যা বলবেন তাই হবে আমার জীবনে “।

“- হুম সেটা হবে তাই একটা কাজ করেন এখন রেডি হয়ে যান আমি অপেক্ষা করছি। আপনাকে আজকে কোচিং নিয়ে যাবো “।

হিয়া কোনো কথা না বলে উপরে চলে যায় হৃদান টেবিলে খাবার খেতে বসে যায় হিয়া উপরে গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়। রান্না ঘরে ছিলো সে তাই গামে শরীর ভিজে গেছে তাই গায়ের শাড়ি বদলে একটা নতুন শাড়ি পরে নেয়। কারণ শাড়ি ছাড়া তার পড়ার কিছু নাই হিয়া রেডি হয়ে কয়েকটা বই নিয়ে নিচে নেমে আসে।

হৃদান খাওয়া শুরু করে সিঁড়ি দিকে তাকিয়ে দেখে একটা সুন্দরী মায়াবী পরী নিচে নামছে শাড়ী পড়ে। হৃদান হা করে তাকিয়ে রয়েছে ওর দিকে হিয়া নিচে নামে। জুলেখা খেয়াল করে হৃদান তাকিয়ে রয়েছে হিয়ার দিকে। জুলেখা একটু হেঁসে বলতে থাকে –

“- আরে হৃদান স্যার মুখের হা করা বন্ধ করেন মশা ঢুকে যাবে তো “।

জুলেখার কথা শুনে হৃদানের ধ্যান ভাঙে সে আবার নিজের খাওয়ার দিকে মনোযোগ দেয়। হিয়া কিছু না বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে জুলেখা পিটপিট করে হাসতে থাকে। হৃদান একটা ধমক দেয় –

“- জুলেখা এইসব অদ্ভুত কথা বলা বন্ধ করে পানি দাও “।

জুলেখা হৃদানরের ধমক শুনে হাসি বন্ধ করে দেয় পানি টেবিলে আছে কিন্তু আসলে কোনো ধমক দিয়েছে সেটা ও বুঝতে পারে। নিজের বউকে দেখতে পারবে কিন্তু জুলেখা বলতে পারবে না কি অদ্ভুত। জুলেখা কোনো কথা না বলে টেবিলে থাকা জগ থেকে পানি দেয়। হৃদান হিয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে –

“- কি হলো এইভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কোনো টেবিলে বসে খাওয়া শুরু করেন। তাড়াতাড়ি বের হতে হবে আপনাকে কোচিং দিয়ে আমি অফিসে যাবো “।

হিয়া কখনো কারো সাথে টেবিলে বসে খাবার খায় নাই মামন বাড়িতে থাকার সময় সবসময় সবার শেষে খেতো।শেষে যদি কিছু থাকত হাঁড়িতে তাহলে খেতো না হলে না খেয়ে থাকতে হতো অনেক দিন। হিয়া চুপচাপ টেবিলে বসে যায় হৃদান সামনে থাকা বাটি থেকে খাবার দেয় হিয়াকে। হিয়া অবাক নয়নে তাকিয়ে দেখে হৃদানকে সে হিয়াকে খাবার সারর্ফ করছে। হৃদান বলে –

“- কি হলো খান “।

জুলেখা সব দেখছে আর হাসছে শুধু শুধু বলে হিয়াকে ভলোবাসে না কিন্তু ঠিক ওর যত্ন নেয়। হৃদান কখনো কাউকে খাবার সারর্ফ করে নাই কিন্তু হিয়াকে করছে এইটা কি শুধু ওর দায়িত্ববোধ। হিয়া চুপচাপ খেতে থাকে জুলেখার রান্নার হাত খারাপ না ভালো আছে।

হিয়া আর হৃদান খাবার শেষ করে বাহির হয়ে যায় গাড়িতে উঠে বসে তবে এবার হিয়া পিছনে বসতে চাইলে হৃদান ওকে সামনে বসতে বলে। কারণ হিয়া পিছনে বসলে বোর হতে পারে যদিও ওর সাথে সামনে বসলো ও বোর হবে তবুও সামনে বসতে বলে। অনেক সময় ধরে গাড়ি চলছে হিয়া বাহিরে থাকা শহরের দৃশ্য দেখছে কতো বাড়ি কিন্তু ওদের গ্রামের চেয়ে বেশি সুন্দর না। হৃদান বলে –

“- আপনি চাইলে গান শুনতে পারেন গাড়িতে “।

“- হুম ঠিক আছে “।

হৃদান একটা ইংরেজি গান বাজায় এইসব গান শুনা হিয়ার একদম পছন্দ না। হিয়া বলে –

“- আমি এইসব গান শুনি না বাংলা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান শুনি “।

হৃদান ওর গানের কথা শুনে ওর মায়ের কথা মনে পড়ে মা ও রবীন্দ্রনাথের গান অনেক পছন্দ করতো। হিয়ার সাথে ওর মায়ের অনেক মিল রয়েছে তাই মনে হয় হৃদান ওর দিকে একটু একটু করে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। হৃদান ওর দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকে হিয়ার হঠাৎ করে দৃষ্টি পড়ে হৃদান ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। কতো সীমাহীন মুগ্ধতা ভরা নয়ন দুটি এখানে কি এক বিন্দু ভালোবাসা নাই।

হৃদানকে এখন মনে করানো দরকার সে গাড়ি চালাচ্ছে হিয়া বলে –

“- গাড়ি ভালো করে ড্রাইভ করেন কোনো দুর্ঘটনা হতে পারে “।

হৃদান ওর দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে এরপর আবার গাড়ি চালাতে শুরু করে হিয়া একটু হেসে বাহিরে তাকিয়ে দেখতে থাকে।

এইটা বোর্নাস পার্ট যদি কারেন্ট থাকে তাহলে রাতে আরেক পর্ব আসতে পারে।

#চলবে