মেঘলা আকাশে রংধনু হবো পর্ব-০৯

0
12

#মেঘলা_আকাশে_রংধনু_হবো
#লেখনীতে_তাইয়েবার_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_০৯ (নতুন নায়ক আসছে).

হৃদানের গাড়ি পৌঁছে যায় কোচিং সেন্টারে সে গাড়ি থেকে নেমে যায় পরে হিয়ার জন্য দরজা খুলে দেয়। হিয়া গাড়ি থেকে নেমে যায় সামনে বিশাল জায়গা জুড়ে একটা কোচিং সেন্টার রয়েছে অনেক মানুষ সেখানে। মানুষের ভিড় দেখে বোঝা যাচ্ছে মনে হয় অনেক ভালো কোচিং সেন্টার। কিন্তু এইসব শহরের মানুষের সাথে সে পড়ে কলেজে চান্স পাবে তো।

হৃদান একটু হিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা মনে হয় ভয় পাচ্ছে এতো মানুষের সাথে মনে হয় পড়াশোনা করার অভ্যাস নাই। হৃদান বলে –

“- শুনুন শহরের মানুষের সাথে আগে আপনি কখনো চলাফেরা করেন নাই কিন্তু এখন করতে হবে। আর যদি নিজের চেষ্টা থাকে তাহলে সবার মধ্যে আপনি ও প্রথম হতে পারেন “।

হিয়া একটু হৃদানের দিকে তাকিয়ে দেখে লোকটা কি করে জানলো যে হিয়ার ভয় করছে। কিন্তু হৃদানের কথা শুনে হিয়ার মনে একটু সাহস আসে হিয়া বলে –

“- আশা করি এই শহরের মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যাবো না নিজের জায়গা তৈরি করে নিতে পারব। কিন্তু যদি কখনো হারিয়ে যায় সবার মধ্যে তখন কে হাত বাড়িয়ে আবার জীবনের চলার কঠিন পথ দেখিয়ে দিবে “।

“- আমি আপনাকে হাত বাড়িয়ে জীবনের চলার পথে আবার ফিরিয়ে এনে দিতে পারব হিয়া। কিন্তু কখনো সেই পথে হাত ধরে চলতে পারব না কারণ একদিন সত্যি জেনে আপনি আমার হাত ছেড়ে দিবেন “।

হিয়া হৃদানের দিকে তাকিয়ে দেখে লোকটা সবসময় সত্যি কথা জানার কথা বলে কি এমন সত্যি রয়েছে যার জন্য আমি ওনাকে ঘৃণা করব। হৃদান তার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ওর অফিসে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে আর রাস্তায় যদি জ্যাম থাকে তাহলে লেটা হয়ে যাবে। হৃদান বলে –

“- চলুন ভিতরে চলুন আপনাকে এডমিট করিয়ে দিয়ে আমি অফিসে যাবো “।

হিয়া চোখ সরিয়ে নেয় এরপর কোচিং ভিতরে যায় রাব্বি সবার ক্লাস নিতে বিজি। কিন্তু হঠাৎ হৃদানকে দেখে ওর খুশির সীমা থাকলো না কতোদিন পরে ওকে দেখলো সেই কলেজের পর ওর সাথে ভালো করে যোগাযোগ রাখা হয় নাই। রাব্বি গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে –

“- কি ম্যাজিস্ট্রেট হৃদান চৌধুরী হুম হঠাৎ করে এই অধমকে কি করে মনে পড়লো। পথ ভুলে কি এসে পড়েছেন নাকি আর কোচিং জমির কাগজ ঠিক নাই তাই চেক করতে এসেছেন “।

হৃদান ওকে জড়িয়ে ধরে ওর বন্ধু ওকে দেখে এমন ইমোশনাল হয়ে যায় যেমন এতোদিন পর নিজের হারিয়ে যাওয়া প্রেমিকাকে দেখছে। হৃদান বলে –

“- তোর যদি জমির কাগজ ঠিক না থাকতো তাহলে এতোখন জেলে থাকতি এভাবে জড়িয়ে ধরে না। আর এখানে এইরকম ভাবে জড়িয়ে ধরে থাকলে মানুষ উল্টো পাল্টা ভাবতে পারে তোর মান সম্মান নাই থাকতে পারে কিন্তু আমার আছে “।

রাব্বি ওকে ছেড়ে দেয় ওর ঠোঁট কাটা অভ্যাস এখনো আছে বুঝতে পারে তাই ওকে ইমোশন দেখিয়ে লাভ নাই। ছাএদের সামনে বেফাঁস কথা বলবে সেই লজ্জায় পড়বে তাই জিজ্ঞেস করে –

“- আচ্ছা মিস্টার ম্যাজিস্ট্রেট হৃদান চৌধুরী আপনার হঠাৎ আমার সাথে দেখা করার কারণ কি জানতে পারি। এতোবছর পর আমার কথা কোনো মনে পড়লো “।

হৃদান পিছন থেকে হিয়াকে সামনে আসতে বলে পরে রাব্বিকে বলে –

“- আমি তোর প্রেমিকা না যে এতোবছর পর তোর কথা মনে পড়বে তাই এসে তোকে জড়িয়ে ধরব। ওর নাম হিয়া আজ থেকে এই কোচিং পড়বে তাই এডমিশন করাতে এসেছি “।

রাব্বি হিয়াকে দেখে কি সুন্দর মিষ্টি একটা মুখ আর ওর পড়নে শাড়ি পরা কি দারুণ লাগছে। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো হৃদানের সাথে এই মেয়ে কি করছে কলেজে এতোবছর পড়াশোনা করেছে কিন্তু জীবনে একটা মেয়ের সাথে কথা বলেনি অবদি হৃদান। কিন্তু ওর সাথে মেয়ে এইটা কি বউ হতে পারে না হৃদানের মতো মানুষের আবার বউ। রাব্বি বলে –

“- আচ্ছা ঠিক আছে সে না হয় এডমিশন করালাম কিন্তু এই মেয়ে কে আর তোর সাথে কোনো মেয়ে থাকতে পারে। সেটা কি সম্ভব তুই কি বউ এই মেয়ে “।

হৃদান বলতে যাবে তখন হিয়া বলে –

“- আসলে ওনি আমার কাজিন হন। এই শহরে আমি নতুন তাই পড়াশোনা করার জন্য কলেজে এডমিট হতে চাই কিন্তু এর আগে এডমিশন টেষ্ট দিতে হবে। সেই জন্য হৃদান ভাই আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে “।

হিয়ার মুখে কাজিন আর ভাই কথাটা শুনে হৃদান ওর দিকে তাকায়। হৃদান ওকে বউ বলতে চাই নাই কারণ বিয়ের বিষয়ে কাউকে জানাতে চাই না সে কিন্তু বোন ও বলতে চাই না। হৃদান একটু কাছে গিয়ে বলে –

“- এইসব কাজিন বা ভাই বলার কি দরকার ছিলো “।

“- তাহলে কি বলতেন আমি আপনার কে হয় বউ কিন্তু সেটাতো বলবেন না আপনি। তাই আপনার বাড়ির কাজের লোক হিসাবে পরিচিত হওয়ার চেয়ে বোন হিসাবে পরিচিত হওয়া বেশি ভালো হৃদান ভাই “।

হৃদান ওর থেকে দূরে সরে আসে কিন্তু রাব্বি হিয়া দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে মনে হয় জীবনে কোনোদিন মেয়ে দেখে নাই। হৃদান বিষয়টা খেয়াল করে সে হৃদান বলে –

“- হিয়া শিক্ষক হলেন বাবার মতো তাকে সবসময় বাবার নজরে দেখতে হয় সালামে কালকে দেখতে হয়। কথাটা মাথায় রাখবেন “।

“- হুম ঠিক আছে “।

হৃদান এবার রাব্বিকে নিয়ে বাহিরে চলে যায় তারপর কোচিং সব কাগজে সই করে বাহির হওয়ার সময় ওকে জড়িয়ে ধরে বলে –

“- দেখ রাব্বি হিয়া যেমন তোকে বাবার মতো দেখবে তুইও তেমন ওকে ছাএীর মতো দেখবি। আর যদি আমার কানে অন্য কোনো কথা আসে তাহলে এই হৃদান কতো ভদ্র সেটা তোর জানা আছে। সো হিয়াকে আমার সম্পত্তি হিসাবে তোর কাছে রেখে দিলাম “।

রাব্বি বুঝতে পারলো হিয়া নিশ্চয়ই হৃদানের গার্লফ্রেন্ড হবে না বলে সম্পত্তি বলতো না। আর হৃদান কেমন সেটা ও ভালো করে যানে তাই হিয়ার দিকে নজর দেওয়া যাবে না হৃদান বাহিরে চলে গিয়ে গাড়ি করে অফিসের কাজে চলে যায়। রাব্বি সব কাজ শেষ করে আবার ক্লাসে ফিরে আসে হিয়াকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। রাব্বি বলে –

“- হ্যালো সবাই ওর নাম হলো হিয়া আজকে থেকে ও তোমাদের সাথে পড়বে। হিয়া তুমি গিয়ে পাশের সিটে বসে যাও “।

হিয়া বসতে যায় কিন্তু এখানে অনেক মানুষ তাই পিছনের সিটে গিয়ে বসে সেখানে একটা ছেলে মুখে রুমাল দিয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে। ওর নাম হলো অনিল সবাই অনি বলে ডাকে এইসব পড়াশোনা করা ওর এতো পছন্দ না তাই পিছনে বসে সবসময়। হিয়া গিয়ে ওর সাথে বসে যায় অনি এখনো ঘুমিয়ে ছিলো।

হিয়া ক্লাস করতে থাকে কিন্তু পাশে বসে থাকা ছেলেটা কি অদ্ভুত সবাই পড়ছে আর ও ঘুমিয়ে রয়েছে। হিয়া খাতায় লেখার জন্য কলম খুঁজে কিন্তু ওর কাছে কলম নাই তাই অনিকে জিজ্ঞেস করে –

“- এইযে আপনার কাছে কি কলম হবে “।

অনি রুমাল সরিয়ে হিয়ার দিকে তাকায় সবাই মনে করেছে সে ঘুমিয়ে রয়েছে বাট সে জেগে রয়েছে। অনি ব্যাগ থেকে একটা কলম বের করে ওকে দেয় আর বলে –

“- এই নাও কলম আর লেখা শেষ করে ফিরত দিতে হবে না। কারণ অনি যদি কাউকে একবার কিছু দিয়ে দেয় সেটা আর ফিরত নেয় না “।

হিয়া অদ্ভুত হয়ে তাকিয়ে থাকে কি আজব ছেলে শহরের সব ছেলে কি এমন অদ্ভুত হয় আর রাগী হয়। একজন হৃদান চৌধুরী যাকে বুঝতে গেলে পুরো মাথা খারাপ হয়ে যাবে আরেকজন হলেন এই অনি। হৃদান অফিসে পৌঁছে যায় ওর আজকে অনেক কাজ রয়েছে কিছু ফাইল রয়েছে সেইগুলা চেক করতে হবে। হৃদান ওর কেবিনে যায় এরপর জাহিদকে ডাক দেয়।

জাহিদ ওর দিকে তাকিয়ে আবার মুখ ফিরিয়ে নেয় কতো সুন্দর বিয়ের মধ্যে একলা রেখে চলে গেছে নিজে গিয়ে বিয়ে করেছে। আবার জাহিদকে উকিল দিয়েছে কিন্তু বিয়ের পর একদিন ও ফোন করে নাই ওর সাথে কথা বলতে বয়েই গেছে। জাহিদ মুখ বার করে বসে আছে হৃদান সেটা দেখে আর বলে –

“- মাঝে মধ্যে তুমি আমার উপর এমন মুখ ভার করো জাহিদ মনে হয় আমি প্রেমিক আর তুমি প্রেমিকা। এইটা অফিস সবাই জানে আমরা বন্ধু এইরকম করলে সবাই অন্য মানে খুঁজবে”।

হৃদানের সবসময় সিরিয়াস মুহুর্তে মজা করা একদম পছন্দ না কিন্তু কি করবে জাহিদ এখন অফিসে। আর হৃদান এখানের ম্যাজিস্ট্রেট তাই জাহিদ বলে –

“- হয়েছে থাক আমার রাগ করতে বয়েই গেছে আচ্ছা স্যার কোনো ডেকেছেন আমাকে সেটা বলেন “।

#চলবে