#মেঘলা_দিনের_রোদ্দুর(১)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
“ডক্টর, আমার ভাইয়া যে গিধড়, সেটার ভিত্তিতে একটা সার্টিফিকেট লিখে দিন!”
তরুণ ডাক্তার মিঃ সায়ান চৌধুরী এমন কথা শুনে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে সামনের চেয়ারে বসা সৌরসীর দিকে। স্নিগ্ধ মুখে অপরাধবোধের লেশমাত্র নেই মেয়েটির। বরং তার চোখে-মুখে একধরনের দৃঢ়তা, যেন এই দাবিটাই সবচেয়ে স্বাভাবিক।
মূহুর্তের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে সায়ান। এমন অদ্ভুত অনুরোধ এর আগে তার জীবনেও কোন রোগী করেনি। সৌরসীর হাস্যোজ্জ্বল চেহারার দিকে তাকিয়ে একদিকে যেমন বিস্মিত, অন্যদিকে চুপচাপ ভেবে চলে—কী উত্তর দেবে?
সায়ান কে চুপ করে বসে থাকতে দেখে নাবিহা চোখে মুখে বিরক্তের রেশ ফুটিয়ে বলল,
” কি হলো আংকেল? দিন একটা সার্টিফিকেট।”
সায়ান সম্বিত ফিরে পেয়ে মাথা নিচু করে বলল,
” বয়স কতো আপনার?”
নাবিহা সোজাসুজি উত্তর দেয়, ১৬
সায়ান বয়স শুনে বলে,
” তা পিচ্চি তোমার সাথে আর কে এসেছে?”
এ কথা শুনে খানিকটা রেগে গিয়ে নাবিহা বলল,
” আমাকে পিচ্চি বলবেন না একদম বলে দিচ্ছি। আপনি জানেন আমি কিসে পড়ি? নিউ টেন এ পড়ি আমি।”
সায়ান কলম ঘুরাতে ঘুরাতে বলল,
” তা আমাকে কোন দিক থেকে আংকেল মনে হয় আপনার?”
সায়ানের কথা শুনে নাবিহা ভ্রু কুঁচকে বলল,
“আপনাকে আংকেল তো মনে হয় না, কিন্তু ডাক্তারও মনে হয় না। আপনি কি আসলেই ডাক্তার?”
সায়ান হেসে কলম টেবিলে রেখে এক হাতের ভাঝে অন্য হাত রেখে বলল,
“পিচ্চি মেয়ে, আপনার জন্য আসলেই নিজেকে ডাক্তার মনে হচ্ছে না।”
নাবিহা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“একবার পিচ্চি বললেন, আর একবার বলবেন না! ঠিক আছে?”
সায়ান এবার চোখ বড় বড় করে বলল,
“ওহ, ভুল হয়ে গেছে। আসলে আপনার মতো ‘নিউ টেন’-এর ছাত্রীর জন্য তো ‘বড় মেয়ে’ শব্দটাই মানানসই।”
নাবিহা সোজাসুজি তাকিয়ে রইল সায়ানের দিকে।
“আমার ভাইয়ার ব্যাপারে সার্টিফিকেট চাইতে এসেছিলাম, আর আপনি এখানে ফালতু কথা বলছেন?”
সায়ান প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে বলল,
“ঠিক আছে, আপনার ভাইয়ার জন্য সার্টিফিকেট লিখে দিচ্ছি।
হুম আপনি ভালো ডাক্তার হয়ে থাকলে লিখুন সার্টিফিকেট। কিন্তু আংকেল… মানে, ডাক্তার সাহেব!”
সায়ান মাথা নাড়তে নাড়তে বলল,
“আপনার কথায় তো মনে হচ্ছে, আপনার ভাইয়ের জন্য সার্টিফিকেট না লিখে আপনার জন্যই একটা লিখতে হবে!”
এ কথা শুনে চোখ গরম করে তাকায় নাবিহা। সায়ান তখন ভয় পাওয়ার অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলল,
” আচ্ছা দিচ্ছি। কিন্তু তার আগে তো ঘটনা জানতে হবে। এই সার্টিফিকেট এর ঘটনা কি খুলে বলুন তো শুনি?”
নাবিহা শান্ত হয়ে বসে বলতে শুরু করে,
” আজ থেকে প্রায় দেড় বছর আগের কথা। আমার এলার্জি হয়। ডক্টর কিছু টিপস দেন। তারমধ্যে একটা হলো, সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার। শরীরে যেন ঘাম না হয় ইত্যাদি।”
এতটুকু শুনেই সায়ান বলল,
” হ্যাঁ ডক্টর তো ঠিকই বলেছেন।”
নাবিহা খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলল,
” আমার কথা আগে শেষ করতে দিন?”
” আচ্ছা আচ্ছা বলুন।”
“তারপর ডক্টর প্রেসক্রিপশন লিখে দেন। আর এই প্রেসক্রিপশন ই হয়েছে আমার কাল! আমার ভাইয়া অনেক গিধড়। যেমন ধরুন ও প্রতিদিন গোসল করতে চায় না। আম্মু বকাঝকা করে গোসলে পাঠায়। এমন আরো অনেক কিছু। তো আমি যখনি ওকে গিধড় বলি তখন বলে, “তোর সার্টিফিকেট টা কই?( সেই প্রেসক্রিপশনকে ও সার্টিফিকেট বলে)”
আর বলে তো বলে, বলার সময় মুখভঙ্গি এমন করে যে আমার রা/গে শরীর ঝলে যায়। আর তাই ওর জন্য আমি একটা সার্টিফিকেট নিতে এসেছি।
ডক্টর একটু হেসে বললেন,
“তাহলে আপনি চান আমি আপনার ভাইয়ের জন্য ‘গিধড়’ সার্টিফিকেট লিখে দিই?”
নাবিহা মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
“জ্বী! অবশ্যই! আর সেটা যেন এমন হয়, যে সে কোনো অজুহাত দিয়ে এড়াতে না পারে। সাথে ওর নাম ফারিস উল্লেখ করে দিবেন।”
ডক্টর একটু ভেবে বললেন,
“আচ্ছা, এটা তো বেশ অদ্ভুত আবদার! তবে মজার ব্যাপার। আমি লিখছি, তবে শর্ত একটাই— আপনার ভাইকে সেটা দিয়ে আপনার এবং তার দুজনের মধ্যকার মজার সম্পর্ক আরও ভালো করতে হবে।”
ডক্টর প্রেসক্রিপশনের কাগজে হাসি-হাসি মুখে লিখলেন:
“সার্টিফিকেট অফ গিধড়পনা:
আমি, ডক্টর সায়ান ঘোষণা করছি যে, নাবিহার ভাই, ফারিস,তার বোনের কথায় শতভাগ গিধড়পনার যোগ্য। তাই, এই গিধড়পনার শাস্তি হিসেবে, তাকে প্রতিদিন গোসল করতে হবে এবং বোনের কথায় হাসি মুখে মাথা ঝাঁকাতে হবে, তার পিচ্চি বোনটাকে একদম জ্বালাতন করবে না।”
নাবিহা কাগজটা হাতে নিয়ে খুশিতে লাফিয়ে উঠল।
“এবার দেখার পালা কীভাবে আমার ভাইয়ের মুখভঙ্গি পাল্টায়! আচ্ছা ডক্টর আপনার চার্জ কোথায় দিতে হবে? আপনার কাছে নাকি বাহিরে…
সায়ান কথা থামিয়ে দিয়ে বলল,
” দিতে হবে না। আপনি দ্রুত বাসায় যান, বাচ্চা মেয়েটা হারিয়ে গেছে ভেবে কান্নাকাটি করতে পারে আপনার মা!”
সায়ান এর কথা শুনে মুখে ভেংচি কেটে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায় নাবিহা। তার কাজ হাসিল হয়েছে বলে আর কিছু বলল না সায়ান কে। না হলে দুটো কথা শুনিয়ে তবেই যেত সে।
এদিকে সায়ান মুচকি হেসে মনে মনে বলে,
“এত অদ্ভুত মেয়ে জীবনে আর দেখিনি। মেয়েরা সাধারণত খুব দ্রুতই পরিণত হয়, কিন্তু এই মেয়েটা এখনও বাচ্চার মতো রয়ে গেছে। তা না হলে কেউ এমন পাগলামী করে? পরক্ষণেই আবার নিজেকে সামলে বলল,
” উফফ সয়তান ভালো করেই কাবু করেছে আমায়! তা না হলে এই বে-পর্দা মেয়েটার সাথে এতো কথা বলি? তাছাড়া…..
আরো অনেক কিছু ভেবে আবার কাজে মন দেয় সায়ান।
.
.
অফিস থেকে ফিরে সন্ধ্যা বেলা সায়ান ক্লান্ত শরীরে বিছানায় শুয়ে ফেসবুক স্ক্রল করছিল। সারাদিনের পরিশ্রমের পর এটি যেন তার জন্য কিছুটা আরামের সময়। একের পর এক পোস্ট স্ক্রল করতে করতে হঠাৎ একটি স্ট্যাটাস দেখে তার চোখ কপালে উঠল!
স্ট্যাটাসটি তারই লেখা সেই প্রেসক্রিপশনের ছবি, যেটি সে আজকে এক মেয়ের অনুরোধে লিখে দিয়েছিল। কিন্তু এইবার সেটি “প্রেসক্রিপশন” নয়— সেটি পরিণত হয়েছে এক অদ্ভুত “সার্টিফিকেটে”!
আরও চমকের বিষয় হলো, স্ট্যাটাসটি শেয়ার করেছে তার বন্ধু ফারিস জামিল। পোস্টে ক্যাপশনও জুড়ে দিয়েছে ফারিস:
“অবশেষে ডক্টর ও বুঝে গেছেন আমি যে গিধড়!”
তার এমন পোস্ট দেখে মানুষজন হা হা হা রিয়েক্ট এ ভাসিয়ে তুলছে আর কমেন্ট বক্সে ইচ্ছা মতো মজা নিচ্ছে। আরেকটা বন্ধু সায়ান কে ম্যানশন করে লিখেছে, “কিরে এটা তোর প্রেসক্রিপশন না”?
সায়ানের মুখটা লাল হয়ে গেল রাগে আর লজ্জায়। মাথার ভেতরে একের পর এক চিন্তা আসতে লাগল। সে ভেবেই পাচ্ছিল না, ফারিস কিভাবে এই প্রেসক্রিপশন পেল! আর মেয়েটিই বা এটি ফারিসের কাছে পৌঁছে দিল কেন?
এই ঘটনার পর সায়ানের মনে অস্বস্তি আর ভাবনার এক অদ্ভুত মিশ্রণ তৈরি হলো। সে ভাবল, ফারিসের সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে কথা বলা দরকার। কিন্তু তার আগেই কীভাবে পুরো ঘটনাটি এই জায়গায় পৌঁছাল, সেটাও খুঁজে বের করতে হবে।
বন্ধু ফারিস এর ফোনে কল দিল, কিন্তু রিসিভ করছে না।
সায়ান ফোন রেখে কিছুক্ষণ চুপচাপ শুয়ে রইলো।ফারিস কেন ফোন ধরছে না তা ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লো।
সায়ানের ঘুম ভাঙার পর ফোনের রিংটোন শুনে সে দ্রুত ফোনটা হাতে নিল। স্ক্রিনে ভেসে উঠল ফারিসের নাম। সায়ান মুহূর্তের মধ্যেই কল রিসিভ করে বলল,
“হ্যালো, ফারিস! এতক্ষণ ধরে কোথায় ছিলি? আমি তো চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম!”
ওপাশ থেকে ফারিস প্রবল রা*গ আর ক্ষো*ভ নিয়ে বলল,
” শা*লা আমার বারোটা বাজিয়ে দিয়ে এখন আবার আমাকে খুঁজছিস? তোর ডাক্তারি আমি ছোটামু শা*লা। তোকে কে বলেছিল আমার বোন কে আমার নামে এসব লিখে দিতে? তোকে সামনে পেলে আস্ত চিবিয়ে খামু শা*…..
#চলবে?