#মেঘের_খামে
পর্ব ১
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
“আমি কীভাবে বাঁচবো ওকে ছাড়া বল? ম’রে যাব।”
মৃণার কথা শুনে মহুয়া ফোনটা কান থেকে দূরে নিয়ে এক বিরক্তির নিশ্বাস ফেলল। তার মন চাইল ফোনের ভেতর ঢুকে কতক্ষণ থাপড়াতে এই গাঁধা মেয়েটাকে। শুনল মৃণা কান্না বাড়িয়েছে। সান্ত্বনা সে দিতে পাড়ে না। তাই সে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বলে, “তোর চোখের ট্যাঙ্কির পানি জমিয়ে রাখ আম্মা, দশ মিনিটে আসতেছি। আরেকবার ফোন দিলে ফোনের ভেতর ঢুকে তোকে আছড়ামু শালী কান্দুনি। তোর কান্না শুনে শুনে একদিন আমি ব্রেন স্টক করুম লিখে নিস।” সে বিরক্তি নিয়ে কল কেটে বের হয় রুম থেকে।
“মহু আজ তো তোর বাহিরে যাবার কথা ছিলো না। হঠাৎ এখন কোথায় যাচ্ছিস?”
মহুয়ার মা রান্নাঘর থেকে উঁকি মেরে জিজ্ঞাসা করে। মহুয়ার বেশ তাড়া। সে জলদি করে তার ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছিল। সে বিরক্তির স্বরে বলল, “আরে মা বলো না, মৃণার বাচ্চা মৃণার আজ একশোতমবার ব্রেকাপ হলো। এই ফোন করে কান্নাকাটি। ওর জ্বালায়ও পারি না।”
“আবার ওই ছেলের সাথে ব্রেকাপ? এই ছেলের খারাপ ব্যবহার কি ওর চোখে পড়ে না?”
মহুয়া কন্ঠস্বর আরও কর্কশ হয়ে উঠে, “প্রেমে অন্ধ হয়ে যাওয়ার লাইভ এক্সামপ্লাল বানাচ্ছে আরকি। আমারই রক্ত জ্বলে যায়, ও সহ্য করে কীভাবে ওই বেয়াদবটাকে? আচ্ছা মা আমি বের হই মৃণা ম্যাডাম আবার ক্যাফেতে বসে বসে কাঁদছে। ওর চোখের পানি এই জন্মে শেষ হবে না।”
মহুয়া তড়িঘড়ি করে বের হয় বাসা থেকে। বাসার বাহিরে থাকা তার প্রিয় গোলাপি রঙের স্কুটি নিয়ে রওনা হয় ক্যাফের উদ্দেশ্যে।
মহুয়া, জেরিন মহুয়া। পরিবারে চারজন। বাবা, মা, বড়ভাই এবং সে। খানিকটা চঞ্চল ও জেদি স্বভাবের মেয়ে। তার সবচেয়ে পছন্দের কাজ হলো ,খাওয়া, ঘুমানো আর তার বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া। ইত্যাদি। আর সবচেয়ে অপছন্দের কাজ দুটোই পড়াশোনা এবং পরাজিত হওয়া। কারও কাছে হার মানা তার কাছে ভীষণ বিরক্তিকর। ধৈর্য নেই বলতেই ধরা যায়। তার সবচেয়ে বড় ইচ্ছে সে একদিন ডানা মেলে পাখির মতো আকাশে উড়ে বেড়াবে যা কখনো সম্ভব না। কেননা সে -তো পাখি নয়। কিন্তু পাখির ন্যায় ডানা মেলে সে জীবন উপভোগ করে। নিজের প্রতিটা ইচ্ছা পূর্ণ করে সে, স্বাধীনভাবে চলে। এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব তার পরিবারের। বিশেষ করে তার বড় ভাইয়ের।
তার দুটো বেস্ট ফ্রেন্ড আছে। মোহ ও মৃণা। মৃণা অর্থাৎ মৃন্ময়ী। মরিয়ম আক্তার মৃন্ময়ী। একদম তার উল্টো। সে চুপচাপ, শান্ত। তার ধৈর্য্য অনেক। পড়াশোনা সবসময়ই প্রথম। তবে মেয়েটার জীবনে দু:খ অনেক। মা হারা মেয়ে, বাবা তার নতুন সংসারে ব্যস্ত। পরিবার বলতে ছিলো শুধু দাদীমা। সে-ও মারা গেল দুইমাস আগে। যে ছেলেকে চারটাবছর ধরে ভালোবাসে সে ভালোবাসার বিনিময়ে কেবল অবহেলায় দিয়ে যায়।
অবশেষে আসে মোহ। মধুরা মোহ। নামটার মতোই তার সৌন্দর্য। মোহে ভরা। সে মহুয়ার মতো চঞ্চলও না, আবার মৃণার মতো শান্তও না। স্পষ্টভাষী। তার পরিবারে দুইবোন থাকলেও সে আদরের বেশি। ছোট মেয়ে বলে নয়, তার কাজে ও গুণে। তাকে একরকম পার্ফেক্টই বলা যায়। সৌন্দর্যে, পড়াশোনায়, নাচে, সংসারের কাজে প্রায় সব কাজেই তার তুলনা হয় না।
তবে তার একটা জিনিস মহুয়ার কাছে ভীষণ বিরক্তি লাগে। তা হলো দেরি করা। সে প্রায়ই দেরি করে আসে। আজও তাই। সে দশমিনিট ধরে বসে বসে মৃণার কান্নার ঘ্যানঘ্যানানি শব্দ শুনছে। সে একা কেন শুনবে? শুনলে মোহেরও শুনতে হবে। মোহ থাকলে আরেক লাভ। মহুয়া যখন রেগেমেগে মৃণাকে বকতে যাবে তখনই মোহ তাকে শান্ত করে দেয়। আগুনে পানি ঢালার কাজ মেয়েটা আবার বেশ ভালো করেই করতে পারে।
সে দেখে মোহ দরজা দিয়ে আসছে। সেজেগুজে টিপটাপ হয়ে এসেছে সে। সে আরও বিরক্ত হয়ে বলল, “শালী তুই কী এখানে ঘুরতে আইসোস? এত সাইজ্জাগুইজ্জা আইলি কেন? এই সাজগোজে আধাঘন্টা লাগাইসোস? আমাকে দেখ গোরেলার হুডিতে আমাকেও গোরেলা হু-হু-লালার মতো লাগতেছে।”
“তোরে কিউট লাগতাছে ভাই। কান্দিস না। আমি তো এইখান আপুর সাথে শপিং মলে যাব তাই রেডি হয়ে এসেছিল। আগামীকাল ভার্সিটিতে ভর্তি হতে যাব, কয়টা নতুন জামা কিনতে হবে।”
“আরও জামা কিনবি? ভাই কত জামা লাগে তোর?”
মাঝখানে বসেছিলো মৃণা। সে দুইজনের কান্ড দেখে অবাক। সে এদিকে কেঁদেকেঁদে অস্থির এদিকে দুইজন পড়ে আছে জামা নিয়ে। সে কান্নামাখা স্বরেই বলে, “ভাই তোদের গোরিলার জামার ডিসকাশন শেষ হলে আমার দিকেও একটু ধ্যান দে। আমি এখনো কান্না করছি।”
মহুয়া ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে, “ভাই নতুন কী? এটা তো আমাদের প্রতি সাপ্তাহে তিনদিনের রুটিন।”
মোহ মুখ টিপে হেসে মৃণাকে জিজ্ঞেস করে, “আবার তন্ময় কি করেছে বল।”
“আমি ওর ফেভারিট খাবার রান্না করে নিয়ে গিয়েছিলাম অফিসে। কি হলো কে জানে খাবার ধরল তো না-ই উল্টো বলল, “মৃণা শুনো, আমার মনে হয় আমাদের ভবিষ্যত নেই তাই একসাথে থাকাটা ঠিক হচ্ছে না। চল ব্রেকাপ করে নেই।”
“ভাই সে তো এই নিয়ে একশোবার ব্রেকাপ করেছেই। আবার সব ঠিক হয়ে গিয়েছে। এবার নতুন কী?” মহুয়া থমথমে কন্ঠে বলে চেয়ারে হেলান দেয়। তারপর চোখমুখ কুঁচকে বলে, “শালা একটা ভন্ড!”
কাঁদতে কাঁদতে মৃণার শ্বাস নিতে কষ্ট হলো। তবুও সে কান্না থামাল না। কাঁপানো গলায় বলল, “এবার সে তার অফিসের সবার সামনে কথাটা বলেছে।”
কথাটা শুনে তেজ উঠে গেল গেল মহুয়ার। সে দাঁড়িয়ে উঠে জোরে বারি দেয় টেবিলে, “আর তুই চুপচাপ এসে পড়লি? ওই বাস্টার্ডকে দুইটা লাথি ঘুষি মেরে আস্তে পারোস নাই? ওই বেয়াদব তোকে সবার সামনে অপমান করল আর তুই তার জন্য কাঁদছিস? তোর মধ্যে কি আত্ন-সম্মানবোধ নাই মৃণা? আমি তো ওকে সামনে পেলে জিন্দা কবর দিয়ে দিব।”
তার হঠাৎ এমন রাগ দেখে কেঁপে ওঠে মৃণা। সে ভয়ে আরও চুপসে যায়। মোহ তাকে শান্ত করে বলে, “বোইন তুই শান্ত হ। বসে পানি খেয়ে মাথা ঠান্ডা কর।” মোহ উঠে তাকে বসিয়ে মাথা ঠান্ডা করল। তারপর মৃণার কাছে যেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলাতেই মৃণা আরও জোরে কেঁদে উঠে।
আবার মহুয়া রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই চুপ হয়ে যায় সে। হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে চুপচাপ হয়ে বসে। মোহ তার চেয়ারে বসে জিজ্ঞেস করে, “তাহলে এখন কি করবি?” মৃণার কাছে তার প্রশ্ন।
“ভেবেছি। রাতে তন্ময় অফিস থেকে আসার পর ওর সাথে কথা বলব। হয়তো অফিসে কোনো প্রেশার ছিলো তাই…”
তার সম্পূর্ণ কথা শেষ হবার আগেই মহুয়া চেঁচিয়ে উঠে, “মোহ ওকে বলে দে, এই ইস্টুপিটের মুখ থেকে ওই বাস্টার্ডের নাম শুনলে ওর কানের নিচে দুইটা চটাক চটাক করে দিব। ওই ছেলে দুইদিন পর পর ব্রেকাপ করবে আর এ ছ্যাচ্চরের মতো তার কাছে কেন যাবে? হোয়াই? এই নিয়ে তো একশোবার ব্রেকাপ করছে।”
“না না কেবল পয়ত্রিশবার। চারবছরে পয়ত্রিশ বার।” তাকে শুধরাল মৃণা।
এবার রাগও হলো না মহুয়ার। আফসোস লাগলো তার জন্য। এই মেয়ে পড়াশোনায় এত ভালো। অথচে জীবনে এত বোকা কেন?
মোহ উপদেশ দেয়, “ভাই বলতেছি সিঙ্গেল হয়ে যা। প্রেম-ট্রেমের কি দরকার? দেখ আমি আর মহুয়া সিঙ্গেল জীবনে কি শান্তিতে আছি। আমাদের মতো একবারে বিয়ের পর প্রেম করবি।”
মহুয়া তার কথা শুনে মুখ বানায়, “এহ আমি তো প্রেম করেই বিয়া করুম। এই এরেঞ্জ ম্যারেজ তোর জন্য। আমি তো প্রেম ছাড়া বিয়াই করুম না।”
“তুই আর প্রেম? ছেলেরা প্রাপোজ করলে লাত্থি ঘুষির ভয় দেখিয়ে ভাগিয়ে দেস। প্রেম করার জন্য তো ছেলে লাগবে না’কি?”
“ওই ছেলেগুলো আগেপিছে ঘুরে তারপর ভয় পেয়ে দৌড়ে পালায়। এসব ছেলে আমার মনে ধরে না।”
“তাহলে ম্যাডাম আপনার মনে কেমন ছেলে ধরবে শুনি?”
“যে আমাকে টক্কর দিতে পারবে। আমার রাগ, জেদকে হারাতে পাড়বে। যে আমাকে হারাতে পারবে, আমি আমার মন তার কাছে হেরে যাব। আমার টক্করের না হলে নিজের মন তার কাছে হারার মানেই হয় না।”
এমন সময় একটা ওয়েটার এসে দাঁড়ায় তাদের পাশে। মহুয়া বলে, “অর্ডার কাউন্টারে দিয়ে এসেছি।”
“ম্যাম আসলে অন্য কারণে এসেছিলাম।”
“বলুন।”
“বাহিরের গোলাপি স্কুটিটা কি আপনার ছিলো?”
মহুয়া ভ্রু কুঁচকায়, “ছিলো মানে? আছে।”
“না ম্যাম ছিলোই। মাত্র গেলো। এক্সিডেন্ট হলো।”
মহুয়া বিস্ময় খেয়ে যায়। তড়িঘড়ি করে বের হয়। তার পিছনে মৃণা ও মোহও। সে দেখে তার পার্ক করা স্কুটির পিছনে দিকে সম্পূর্ণ নেতিয়ে গেছে গাড়ির সাথে লেগে।। প্রায় অর্ধেক ভেঙে কয়েকটা অংশ ভেঙে গেছে।
মহুয়া দ্রুত পায়ে যায় তার স্কুটির কাছে, “পিংকি, আমার পিংকির এই কি হাল হলো? কোন গাঁধাটা করেছে এই কান্ড?”
সে দেখে কালো বড় চকচকে যে গাড়িটার সাথে তার স্কুটিটা লেগেছে সে গাড়িটার উপর একটি কোঁকড়াচুলো ফর্সা সুদর্শন ছেলে বসে বসে সিগারেট খাচ্ছে। তার কোনো প্রতিক্রিয়াই নেই। তার পাশের ছেলেটা বলে, “ভাই সম্ভবত এই মেয়েরই স্কুটি ছিলো।”
কথাটা শুনে তেড়ে আসে মহুয়া। সে গাড়ির সামনে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করে, “আমার পিংকিকে আপনারা মে*রেছেন?”
ছেলেটা আবার গাড়ির উপর বসে থাকা ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বলল,”ভাই স্কুটির উপর কোনো মানুষ ছিলো না-তো? কাওকে উড়ায় দিসেন না’কি? মেয়েটা কাকে মারার কথা কয়?”
মহুয়া আরও ক্ষেপে যায়। উচ্চ স্বরে বলে, “আমার স্কুটির নামই পিংকি। বাবা আমাকে আঠারো বছর হওয়ায় জন্মদিনে দিয়েছি। এক সাপ্তাহ পর ওর ছয়মাসের বার্থডে পার্টি করতাম আমি। আর শালার হনুমান তোরা ওরে উড়ায় দিসোস?”
ছেলেটা হতভম্ব হয়ে বলল, “আপু আপনি এই স্কুটির কথা বলছিলেন? এটার নাম পিংকি? এর বার্থডে পার্টি করতেন?
“তো কি?”
“আপু আপনি কি মেন্টাল হাস্পাতালে যেতেন? আমরা ছেড়ে দিব?”
“শালা তোরে মিউজিয়ামে রেখে আসব আমি। মেরে মেরে মিউজিয়াম এর শপিজ বানায় দিব।”
সে রেগে মেগে এগোতেই আচমকায় গাড়ির উপর বসে থাকা ছেলেটি লাফ দিয়ে নেমে পড়ে। একদম তার সামনে এসে দাঁড়াতেই মহুয়া ভ্রু কুঁচকিয়ে উপরের দিকে তাকায় ছেলেটার দিকে। আকস্মিকভাবে তার সামনে এসে দাঁড়ানো এই ছেলেটির কাঁধ পর্যন্তও আসে না সে। তার সামনে দাঁড়ানো কোঁকড়াচুলো সুদর্শন কালো শার্ট পরা ছেলেটি তার হাতের সিগারেট নিচে ফেলে জুতো দিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলে মুহূর্তে। গভীর নিশ্বাস ফেলে তার শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত বটতে বটতে বেপরোয়া গলায় বলে, “ইট’স নট আ বিগ ডিল ডার্লিং। গ্রো আপ।”
মহুয়ার এবার মেজাজ চড়ে যায়। সে ছেলেটার দিকে তাকিয়েই থাকি। সে অগ্নি দৃষ্টিতে। যেন এখনই দৃষ্টিতে দিয়ে অগ্নি ছুঁড়ে ভস্ম করে দিবে।
ছেলেটা দুই হাঁটুতে হাত রেখে খানিকটা ঝুঁকে তাকায় মহুয়ার দিকে, “মাঝরাস্তায় এভাবে বেহায়ার মতো একটা ছেলের দিকে তাকিয়ে আছো? সবাই কী বলবে বলো তো?”
মহুয়া উওর দিলো না। তার রাগী দৃষ্টি আরও বাড়ে।
ছেলেটা বাঁকা হেসে তার প্রথমা আঙুলের রিং ঠিক করতে করতে ভারী স্বরে বলে, “আই নো আমি অনেক ড্যাসিং। তাই বলে এভাবে তাকিয়ে থাকবে? প্রেমে পড়ে গেলে আবার আরেকটা যন্ত্রণা মাথায় চড়বে।””
মহুয়া কক্ষাৎ শব্দ করে হেসে উঠে। হতভম্ব হয়ে যায় ছেলেটি, “লাইক সিরিয়াসলি ভাই নিজের চেহেরাটা দেখছ? ছোটবেলায় চিড়িয়াখানার বান্দর দেখেছিলাম। নাম দিয়েছিলাম চেঁকামেঁকা। ফুল অন সেইম লাগে তোমাকে।”
মহুয়ার কথা শুনে ছেলেটা আশ্চর্যান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। মেয়েটার মাথায় কি আসলে সমস্যা আছে? সে বিরক্তির সুরে বলে, “পাগল টাগল ভেবে ছেড়ে দিচ্ছি, নাহয় ইয়াজভান জাহানের সাথে এমন ফালতু মশকরা করার শাস্তি কতটা ভয়ানক হতে পারে তা কল্পনাও করতে পাড়বে না।”
মহুয়া গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে, “আমি কাওকে ভয় পাই না বুঝলে। এই হুমকি অন্য কাওকে দিও। সাহস তো কম না একতো আমার স্কুটির এমন নাজেহাল করেছেন এর উপর হুমকি দিচ্ছো?”
“এজন্যই তো এখনও এখানে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করেছি, নাহয় আমার এত ফালতু সময় নেই যে এতক্ষণ ধরে এভাবে নষ্ট করব। জয় ওকে মেরামতের টাকাটা দে।”
জয় দৌড়ে যেয়ে গাড়ি থেকে একটা খাম এনে হাতে দিলো জাহানের। মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, “জাহান ভাই-ই তো ওয়েটার ডেকে জিজ্ঞেস করেছিল এই স্কুটিটা কার? যেহেতু ক্যাফের সামনে দাঁড়ানো। তারপর ভাই-ই আপনাকে ডাকতে পাঠালো। আমাদের ভাই অনেক বড় মনের মানুষ কি-না।”
জোহান খাম থেকে একটি বান্ডিল টাকা বের করে মহুয়ার হাতে দেয়, “ইয়াজভান জাহান কারো ঋণ রাখে না। পিংকি, ডিংকি, টিংকি যা কেনার কিনে নিও।”
“একতো ভুল করেছেন, এর উপর সরি না বলে টাকার গরম দেখাচ্ছ?”
কথাটা শুনে তাচ্ছিল্য হাসে জাহান, “এই সরি টরি আমার আমার ডিকশনারিতে নেই। সরির বিনিময়ে টাকা দিচ্ছি। এখন চুপচাপ সরে পড়ো।” বলে জাহান যেতে নিলে মহুয়া বলে, “টাকা লাগবে না, সরি বলো।”
জাহান ফিরে তাকায়, “টাকা দিয়েছি আবার সরি কিসের? টাকার বিনিময়ে সব কেনা যায়। ভাবো তোমার স্কুটি কিনে নিয়েছি। নাউ গেট লস্ট।”
সে আবার গাড়ির দিকে যায়। তার পিছনে যায় জয় নামের ছেলেটিও।
মহুয়া রাগে ফুঁসছিল। রাগে তার শরীর কেঁপে উঠছে। সে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে জাহানের দিকে। মোহ দৌড়ে এসে তার বাহু ধরে বলে, “দোস্ত চল। এর কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে না সরলে আমাদেরও উড়ায় দিবে।”
মহুয়া তার হাত সরিয়ে নিচে থেকে একটা ভাঙা ইট তুলে নেয়। তার জোরে মারে গাড়ির কাঁচের উপর।
জাহান দরজা খুলতে যেয়েই চমকে উঠে। বিকট শব্দে চক্ষুদ্বয় বড় হয়ে যায়। একটি কাঁচের টুকরো তার ডান গালটা ছুঁটে যায় আলতো করে। গড়িয়ে পড়ে এক বিন্দু র*ক্ত। সে চকিতে তাকায় মহুয়ার দিকে। মেয়েটা তার দেওয়া টাকা তার দিকেই ছুঁড়ে মেরে বলে, “এই টাকা দিয়ে নিজের ব্রেন্ডেড গাড়িটা মেরামত করে নিও।” বলে সে যেতে নিয়ে আবার পিছনে তাকায়, “টাকাটা হাতে দিতে পাড়লাম না। কুড়িয়ে নিও।” বলে সে ভাব দেখিয়ে চলে যায় সেখান থেকে। তার পিছু পিছু দুটো তার সাথের মেয়েও চলে যায়।
জয় দ্রুত দৌড়ে আসে তার কাছে, “ভাই আপনার দেখি আঘাত লেগেছে। র*ক্ত পড়েতেছে। মেয়েটার কি তেজ ভাই! এত তেজী মেয়ে আমি আর দেখিনি।”
জাহান তার গালের র*ক্ত বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে মুছে বলে, “মেয়েটা ইন্টারেস্টিং। আমার ইন্টারেস্টিং জিনিস পছন্দ। কিন্তু এই মেয়েটাকে আমার চরম অপছন্দ হয়েছে।”
চলবে…