#মেঘ তুমি বৃষ্টি হয়ে নামো
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব- ২২/শেষ পর্ব /১ম খন্ড
এডভোকেট মুমু অফিসার মাহিরের বাসা থেকে উদ্ধার করা মেঘের আসল ময়না তদন্তের রিপোর্ট দেখিয়ে বলল
“মহামান্য আদালত রিপোর্টটা দেখলেই বুঝা যায় মেঘের মৃত্যু ঘুমের ঔষধের জন্য হয়েছে ফাঁসিতে না। অথচ অফিসার মাহির দু দুইবার মেঘের মিথ্যা ময়না তদন্ত রিপোর্ট সাবমিট করেছে। আর সঠিকটা নিজের বাসায় রেখে দিয়েছে। সবকিছু আড়াল করার চেষ্টা করেছে। এখান থেকেই বুঝা যায় এ অন্যায়ের সাথে অফিসার মাহিরও জড়িত।
আমি বিষয়টি আরও সুক্ষ্মভাবে প্রমাণের জন্য ডোম মিরাজকে কাঠগড়ায় ডাকতে চাই।
জাজ সম্মতি দিয়ে বললেন
” অনুমতি প্রদান করা হলো।”
এরপর ডোম মিরাজকে ডেকে আনা হয়। সে কাঠগড়ায় দাঁড়ালে মুমু তাকে জিজ্ঞেস করে
“আপনি সত্যিটা বলবেন। মিথ্যার আশ্রয় নিবেন না আশাকরি। আমাকে বলুন আপনি তো মেঘের ময়না তদন্ত করেছেন। আপনার কী মনে হয়েছে মেঘ ফাঁসিতে মারা গিয়েছে নাকি মেঘের মৃত্যুর কারণ অন্য?”
ডোম মিরাজ স্বাভাবিক গলায় উত্তর দিল
“তার মৃত্যুু ঘুমের ঔষধের জন্যই হয়েছিল। তবে আমাদের কাজ শুধু লা/শ কাটা। রিপোর্ট অন্য কেউ বানায়। আমাকে অফিসার মাহির টাকা দিয়েছিল মিথ্যা রিপোর্ট বানাতে সাহায্য করতে। আমি করেছিলামও। এখানে আমার কোনো দোষ নেই। আমি চাপে পড়ে এমনটা করেছি। আর টাকার লোভে পড়ে। যখন নিজের ভুল বুঝতে পারি তখন সেটা পরিশুদ্ধ করার জন্য কাঠগড়ায় এসেছি। এজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।”
অফিসার মাহির মাথা চাপড়াতে লাগল। কারণ ডোম মিরাজের সাথে করা ডিলটা সম্পূর্ণ করলে হয়তো আজকে এ দিনটা দেখতে হত না। কারণ ডিল হয়েছিল ডোম মিরাজকে ১০ লাখ টাকা দিবে৷ কিন্তু দিয়েছিল ৫ লাখ টাকা। এটা নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্ধও চলছিল। আর সেটা যে এত কঠিন রূপ নিবে কে জানত।
এডভোকেট মুমু আদালতকে উদ্দেশ্য করে বলল
“মহামান্য আদালত এতে প্রমাণ হলো অফিসার মাহির এতে জড়িত। এখন নিশ্চয় অফিসার মাহির এ কথা বলবেন এটা আমরা ঘুষ দিয়ে করেছি। সেটারও প্রমাণ করব যে মিরাজ যা বলছেন সেটা সত্যি। এখানে উনি টাকার লোভে মিথ্যা বলছে না। অফিসার মাহিরের সাথে মিরাজের কথোপকথনের একটা অংশ ওয়াটসএপে মেসেজের মাধ্যমে হয়। আর সেটার একটা স্ক্রিন রেকর্ড আপনার কাছে প্রদান করা হয়েছে। দেখার অনুরোধ রইল।”
আর অফিসার মাহির সামির সাহেবকে যা বলেছিল সব সত্য। পরবর্তীতে যখন উনি বুঝতে পারছে উনার কথাটা রেকর্ড হচ্ছে তখন তিনি নাটক সাজায়। নিজেকে নিজে ক্ষত বিক্ষত করে। এরপর আদালতে এসে নাটক করে। তার বাসা থেকে উদ্ধার করা লাঠিতে তারেই রক্ত মিশেছিল। অর্থাৎ এতে সুস্পষ্ঠ হয় যে সে তার বাসায় নিজেকে নিজে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। আমি লাঠিতে লেগে থাকা রক্ত এবং অফিসার মাহিরের রক্তের সেমপল ইতিমধ্যে আদালতে পেশ করেছি। একটু মিলিয়ে নেওয়ার অনুরোধ রইল।”
আমরা অফিসার মাহিরের স্ত্রীর বাবার সম্পর্কেও খুঁজ নিয়েছি। হঠাৎ করে এত টাকার মালিক তারা কী করে হলো সেটা ভাববার বিষয়। কারণ অফিসার মাহিরের শ্বশড় প্রাইভেট জব করে। অল্প বেতনে চাকুরি করে মেয়ের নামে এবং নিজের নামে লাখ লাখ টাকার সম্পত্তি করে ফেলা অসম্ভব ব্যাপার।
অফিসার মাহির যাদের ডিফেন্ড করছেন তারা আগে থেকেই খু/নী। আমি এখানে কিছু খু/নের তথ্যচিত্র তুলে ধরলাম। আকরাম সাহেব সামির সাহেবের স্ত্রী সন্তানকে নিজের বাসায় খুন করে বডি পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনার চাক্ষুস সাক্ষী সে বাসার প্রাক্তন কাজের মেয়ে মীরা।
আর অবাক করা বিষয় হলো এতদিন মীরা আকরাম সাহেবের বাসাতেই স্টোর রুমে আবদ্ধ ছিল। গতকাল সামির সাহেব তদন্তের প্রয়োজনে পুরো বাড়ি তল্লাশি করে মীরাকে খুঁজে পায়। তিনটি বছর মেয়েটির উপর কী যে অত্যাচার হয়েছে এটা বর্ণণা করার ভাষা আমি পাচ্ছি না। সে সময় সামির সাহেবের সাথে পুলিশ অফিসার সাওগাত সাহেবও উপস্থিত ছিলেন।
মীরার কথা শুনে অফিসার মাহির বিস্মিত হয়ে গেল। আকরাম সাহেব তাকে মীরার কথা বলেছিল যখন সামির সাহেব আকরাম সাহেবের বাড়ি গিয়েছিল। কিন্তু এটা বলেনি মীরা বেঁচে আছে৷ তাকে স্টোর রুমে আটকে রাখা হয়েছে। অফিসার মাহির বুঝতে পারছে সে নিজের জালে নিজেই ফেঁসে যাচ্ছে।
মীরাকে কাঠগড়ায় উপস্থিত করা হলো। জরাজীর্ণ একটা মেয়ে। মেয়েটাকে দেখলে মনে হয় দম নিতেও তার কষ্ট হচ্ছে। মীরা কাঠগড়ায় আসলে মুমু তাকে বলল
“তুমি সব খুলে বলো।”
মীরা কাঁদতে কাঁদতে জবাব দিল
“আমার জীবন থেকে তিনটা বছর তারা কেড়ে নিয়েছে। বদ্ধ একটা ঘরে আমাকে আটকে রেখেছিল। কারণ আমার অন্যায় ছিল অফিসার সামির সাহেবের স্ত্রী সন্তানকে খু/নের সময় আমি দেখে ফেলেছিলাম। কত কাকুতি করে বললাম আমাকে ছেড়ে দিন। আমি কাউকে বলব না। গ্রামে চলে যাব। কিন্তু আমাকে যেতে দিল না। আমাকেও তারা মেরে ফেলতে চেয়েছিল। আমি পা ধরে কেবল জীবন ভিক্ষা চেয়েছিলাম। জীবন ভিক্ষা তো পেয়েছিলাম তবে জীবনকে নরক করে দিয়েছিল। দুটো জলজ্যান্ত মানুষ আমার সামনে ধরফর করে মারা গেল। এটা মনে হলে এখনও আমার শরীর শিউরে উঠে। আকরাম সাহেব আর রেহনুমা রশিদের পরিণতি যা হয়েছে এটা তাদের পাপের ফল। যে মেয়েটা উনাদের শাস্তি দিয়েছে আমি আদালতকে বলব সে একজন নরপশুকে শাস্তি দিয়েছে। আর এ নরপশুকে শাস্তি দেওয়ার জন্য তার ফাঁসি দিবেন না।”
কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে দিল সে। এডভোকেট তরুন রায় কথার মাঝে বলে উঠল
“মহামান্য আদালত আমার বিপরীত পক্ষের উকিল হয়তো বাংলা সিনেমা দেখে। তাই মনগড়া কাহিনি সাজিয়ে নিয়ে এসেছে।”
তরুন রায়ের কথা শুনে মুমু রেগে গিয়ে বলল
“প্রমাণ ছাড়া এরকম কথা বলা আপনার অন্যায়। আপনি কোর্টে জিততে জিততে ধরেই নিয়েছেন অন্যায়ের পক্ষে কথা বললেও আপনি জিতে যাবেন। সবাই আপনার সাথে লড়তে ভয় পায় বলে ভেবে নিয়েছেন আপনিই সেরা। কিন্তু সত্য সবসময় সত্যই হয়। আমি পুলিশ অফিসার সওগাতকে কাঠগড়ায় আনার অনুমতি চাচ্ছি। কারণ সে সময় সেখানে অফিসার সওগাত উপস্থিত ছিলেন।”
অফিসার সওগাত কাঠগড়ায় আসার অনুমতি পেল।।সওগাত সাহেব কাঠগড়ায় এসে নম্র গলায় বলল
“মীরা মেয়েটি যা বলেছে সব সত্য। আমি নিজে সামির সাহেবের সাথে ছিলাম। সে আমার টিমকে সহ নিয়ে গিয়েছে। এখানে আমার পুরো টিম ছিল। পুরো টিম মিলে মেয়েটিকে উদ্ধার করি। যদিও আমাদের উদ্দেশ্য ছিল প্রমাণ উদ্ধার করা। তবে ঘর সার্চ দিতে গিয়ে মীরাকে উদ্ধার করি।”
তরুন রায় ঘাবড়ে যেতে লাগল সকল প্রমাণ দেখে। এতদিনের সকল যশ কেড়ে নিবে এডভোকেট মুমু সেটা সে মানতে পারছে না। অফিসার মাহিরের মুখটাও কালো হয়ে গিয়েছে। শেষ পর্যায়ে মীরা নামের মেয়েটির অনুপ্রবেশের জন্য সকল পরিকল্পনায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
এদিকে তরুন রায় বলে উঠল
“আকরাম সাহেব, রেহনুমা রশিদ আসামী হলেও তো তাদের খু/ন করার রাইট নাই। যেহেতু বৃষ্টি খু/ন করেছে তার শাস্তি পাওয়া উচিত। একটি খু/ন হলে শাস্তির মাত্রা কম হলেও সমস্যা ছিল না। তবে পরপর তিনটি খু/নের শাস্তি ফাঁসি হওয়ায় উচিত। ”
এডভোকেট মুমু তরুন রায়ের কথার পাল্টা জবাবে বলল
“শাস্তি অবশ্যই আমার মক্কেল পাবে। আর কী শাস্তি পাবে সেটা আদালত সিদ্ধান্ত নিবে। তবে মেঘের খু/নের জটিল রহস্য উদঘাটন করতে আমি কাঠগড়ায় এখন বৈশাখীকে ডাকতে চাই।”
আদালতের অনুমতিতে বৈশাখী কাঠগড়ায় আসলো। অফিসার মাহিরের মুখটা শুকিয়ে গেল। বৈশাখীকে কাঠগড়ায় আসার পর মুমু বলল
“তুমি যা জানো বলো।”
বৈশাখী একটা লম্বা নিঃশ্বাস টেনে বলল
“মেঘকে খু/ন আমার বাবায় করেছে। প্রথমে আমি এসব কিছুই জানতাম না। পরে সব জানতে পারি। খুব কষ্ট পাই তখন যখন জানতে পারি মেঘের ফোন থেকে আমাকে মেসেজ করে আমার বাবা। আমার মনটাকে নিয়ে খেলা করা হয়েছিল। আমি মেঘকে অনেক ভালোবাসতাম। পাগলের মতো তাকে চাইতাম। তাই সেই মেসেজটা আমার মনে কতটা আশা জুগিয়েছিল আমি জানি। এরপর যখন মেঘের মৃত্যু সংবাদ শুনি। আমার কলিজাটা কেঁপে যায়। আমি তো ভেবেছিলাম বৃষ্টি খু/ন করেছে। জেদ করে তার নামে মামলাও করতে গিয়েছিলাম। তবে তখন তো জানতাম না এ সবকিছুর পেছনে আমার বাবা জড়িত।
জানতে পারি কয়েকদিন আগে। বাবা আর ফুফার মাঝে যখন কথা কাটা কাটি হচ্ছিল। তারা কথা কাটাকাটি করছিল জমি বিক্রি নিয়ে। আর সে কথা কাটাকাটির রেশ ধরেই মেঘের খুনের তথ্য চলে আসে। আমি সেটা শুনে অফিসার মাহিরকে জানাই। আমি তো ভেবেছিলাম তিনি সৎ। মেঘের খু/নী যেই হোক শাস্তি দিবে। কিন্তু তিনি আমাকে বললো আমার ভুল হচ্ছে। আমাকে উল্টো মানসিক রোগী বানিয়ে দিল। আমার পরিবারের কাছে সব বলে দিল। যার জন্য বাবা আমাকে এতদিন বাসায় আটকে রেখেছিল। বাবার খু/নের পর আমি সে বাসা থেকে বের হয়ে নিজেকে আত্মগোপনে রাখি। কারণ আমার মনে হয়েছিল অফিসার মাহির আমার ক্ষতি করতে পারে। এরপর আমি জানতে পারি এডভোকেট মুমু এ কেইসটা নিয়ে লড়ছে। তাই আমি উনার সাথে যোগাযোগ করে সবটা সত্যি বলি।
আর তিনিই আমাকে এখানে এসে সত্য বলার সুযোগ করে দেন। মহামান্য আদালত দয়াকরে মেঘের খু/নের সাথে জড়িত সবাইকে শাস্তি দিন। আর অফিসার মাহিরকে কঠোর শাস্তি দিন। আইনের রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ন্যায় কাজ করেছে।”
বৈশাখীর কথা শুনে অফিসার মাহির বুঝতে পারছিল তার আর বাঁচার উপায় নাই। সে আদালতকে পালাতে চেয়েছিল। তাই আসন ছেড়ে উঠে পালাতে নিলেই বৃষ্টি কাঠগড়া থেকে নেমে তাকে দ্রূত ধরে৷ হাতের কাছে থাকা কনস্টেবলের লাঠি নিয়ে অফিসারের মাহিরের মাথায় জোরে জোরে তিনটা আঘাত করে। সাথে সাথে অফিসার মাহির মেঝেতে পড়ে ছটফটাতে থাকে। বিষয়টি এত দ্রূতই ঘটে যায় যে কেউ বুঝে উঠার আগেই সবটা শেষ হয়ে যায়।
অফিসার মাহিরের সাথে সাথেই মৃত্যু হয়। আদালত আবারও মুলতবি ঘোষণা করা হয়৷
উষ্ণের চোখে আবারও পানি টলমল করছে। সামির সাহেবের চোখও লাল হয়ে গেছে। উষ্ণ জিজ্ঞেস করল
“আমার মায়ের এরপর কী হয়েছিল? মা তো এটা প্রমাণ করতে পেরেছিল যে বাবাকে তিনি খুন করেনি। মা কী বেঁচে আছে? আর তুমি কার সাথে হাসপাতালে দেখা করতে যাও? আর আমিই বা কাকে মা বলে চিনি? যিনি বিদেশে থাকেন।”
এরপর সামির সাহেব আবারও কিছু রহস্য উন্মোচন করল।
#মেঘ তুমি বৃষ্টি হয়ে নামো
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব- ২২/ শেষ পর্ব/ শেষ খন্ড
অফিসার মাহিরের লাশ ময়না তদন্ত করে দাফন করা হয়। সামির সাহেব অফিসার মাহিরের শাস্তি চেয়েছিল। তবে এমন নির্মমতা চায়নি। বৃষ্টির এমন কাজে সামির সাহেব ভীষণ হতাশ। ডাক্তার আবীর স্তব্ধ। যে মেয়ের চোখে সে অসহায়ত্ব দেখেছে, মায়া দেখেছে। আজকে তার চোখেই সে নির্মমতা দেখছে। বৃষ্টির মায়ের চোখ দিয়ে কেবল পানি পড়ছে। একটা ধমকা হাওয়া যে তার জীবনটাকে এভাবে এলোমেলো করে দিবে কে জানত? মাতাল করা ভালোবাসা যে তার মেয়েকে এত হিংস্র করে তুলবে কে জানত।
বৃষ্টিকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে গেল পুনরায়। ডাক্তার আবীর সামির সাহেবের কাঁধে হাত রেখে বলল
“বৃষ্টির রোগটা সমসাময়িক পরিস্থিতির জন্য প্রকোপ হয়ে গেছে। আমার ভয় হচ্ছে সে না তার বাচ্চার কোনো ক্ষতি করে বসে। নিজের কোনো ক্ষতি করে বসে। এসব রোগীরা কখন কী করে নিজেও বুঝে না বা জানে না৷ এ রোগটা তার মাঝে অনেক আগেই ছিল। এখন শুধু প্রকোপটা বেড়েছে। এ দেশের মানুষ মানসিক ডাক্তার দেখাতে চায় না। ভাবে মানসিক ডাক্তার দেখানো মানে পাগল হওয়া। বিষয়টা তা না। অন্য সব চিকিৎসার মতো মানসিক পরিবর্তন গুলোও খেয়াল করে চিকিৎসা করা জরুরি। বৃষ্টির যেন ফাঁসি না হয় সে দিকটা খেয়াল রাখবেন৷”
সামির সাহেব শুধু লম্বা একটা নিঃশ্বাস ফেলল।
বৃষ্টি জেলে বসে আছে। তার চোখে কেবল মেঘের স্মৃতি। কখনও সে হাসছে কখনও কাঁদছে। নিজেকে ভীষণ ছন্নছাড়া লাগছে তার।
কেটে গেল আরও কয়েকটা দিন। আবারও কোর্ট বসানো হলো। সব কিছুর ভিত্তিতে আদালত রায় দিল
“সমস্ত প্রমাণের ভিত্তিতে এটা প্রমাণিত হয় যে বৃষ্টি মেঘকে খুন করেনি। মেঘের খুনের সাথে জড়িত আকরাম সাহেব, রেহনুমা রশীদ,জমশেদ সাহেব এবং অফিসার মাহির। যারা বর্তমানে মৃত। যদিও বৃষ্টি মানসিক রোগ এবং পরিস্থিতির শিকার হয়ে এমনটা করেছে তবুও সে চারটি খু/ন করেছে। সেটার শাস্তি তাকে পেতে হবে। তাই বৃষ্টির মানসিক অবস্থা এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে আদালত একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর ইতিমধ্যে আমরা জানি বৃষ্টি সন্তান সম্ভাবা। এ সময় বৃষ্টিকে ফাঁসি দওয়া নির্মমতা হয়ে যাবে। তাই বৃষ্টির সকল পরিস্থিতি বিবেচনা করে করে বৃষ্টিকে ১৬ বছর স্বশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হলো। আর বৃষ্টিকে প্রাথমিকভাবে সন্তান না হওয়া পর্যন্ত সকল ধরণের চিকিৎসা সরবরাহ এবং মানসিক অবস্থার অবনতির জন্য ডাক্তার দেখানোর রায় দিচ্ছে। বাচ্চা হওয়ার পর অন্য সকল কয়েদীর মতো তাকে শাস্তি প্রদান করা হবে। আদালত এ রায় দিয়ে মূলতবি ঘোষণা করা হলো।”
এডভোকেট মুমুর চোখে মুখে প্রশান্তি। এটা তার জীবনের একটা বড়ো কেইস। আর এটাতেই সে তরুন রায়কে হারিয়ে দিয়েছে। তরুন রায়ের চোখ মুখ লাল হয়ে গেছ৷ সে এটা বুঝতে পারছে সবসময় কথার যুক্তি দিয়ে সত্যকে চাপা দেওয়া যাওয়া না। সত্য সত্যের মতো প্রস্ফুটিত হয় সবসময়।
বৃষ্টিকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ হেফাজতে যাওয়ার সময় বৃষ্টি সামির সাহেবের হাত ধরে বলেছিল
“আমার সন্তান হলে দয়াকরে আপনার কাছে রাখবেন৷ নিজের পরিচয়ে বড়ো করবেন না। আমি চাই না আমার সন্তান আমার কথা জেনে মাকে খু/নী বলুক। আমি চাই আমার সন্তান সুন্দর পরিবেশ পাক। সুন্দর ভাবে বড়ো হোক। বেঁচে থাকুক খুশিতে। সে যদি জিজ্ঞেস করে তার মা কোথায় বলে দিয়েন মারা গেছে। আর নাহয় অন্য কাউকে মা বানিয়ে উপস্থাপন কইরেন আপনার মতো। আপনি আমার জন্য যা করেছেন তার জন্য সবসময় আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব৷ এ দুনিয়া আমার জন্য না৷ দোয়া করব সন্তান জন্ম দেওয়ার পরেই জেলেই যেন আমার মৃত্যু হয়৷ আমি মরতে চাই৷ মেঘের কাছে যেতে চাই। মৃত্যুর জন্য অপেক্ষাও ভীষণ ভয়ানক আমার কাছে।”
সামির সাহেব বৃষ্টির হাত ধরে কথা দিল
“তেমার সন্তানকে আমি মানুষ করব। আমিই তোমার সন্তানকে নিজের পরিচয়ে মানুষ করব। কোনো অশুভ ছায়াও আমি লাগতে দিব না। তুমি নিশ্চিন্তায় থাকো। আর সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করো। ”
ঠিক সে মুহুর্তে বৈশাখী এসে বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে বলল
“আমি তোমাকে ভীষণ হিংসা করতাম। আজকের পর আর করব না। যাকে নিয়ে আমাদের মধ্যে বিবেদ ছিল সে আর নেই। তোমার সন্তানের মায়ের পরিচয়টা আমিই দিব। যদিও দেশের বাইরে চলে যাচ্ছি। তবে ঐখান থেকেই তার মা হয়ে উঠব আমি।”
উষ্ণ দেখল সামির সাহেবের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। সে তার হাতে দিয়ে চোখের পানিটা মুছে বলল
“তার মানে যাকে আমি মা বলে জানি তিনি বৈশাখী।”
সামির সাহেব হালকা গলায় উত্তর দিল
“হ্যা।”
উষ্ণের আবারও প্রশ্ন
“হাসপাতালে কাকে দেখতে যাও?”
সামির সাহেব জবাব দিল
“হাসপাতালে তোমার ভাইকে দেখতে যাই। তোমার মায়ের দুটো সন্তান জন্ম হয়। একটা ছেলে একটা মেয়ে৷ যে ছেলেটি জন্ম হয় সে অসু্স্থ হয়েই জন্ম নেয়। তাকে সবসময় হাসপাতালে রাখা হয়৷ তোমার বাবার টাকার অভাব ছিল না সে টাকা দিয়েই তার চিকিৎসা এখনও চলমান। আবার সরকার নিজে এ বাচ্চার দায়িত্ব নিয়েছে।
মূলত তোমার মায়ের মানসিক ব্রেক ডাউনের জন্য একটি বাচ্চা এমন হয়ে জন্ম নেয়৷ রোদ স্বাভাবিক বাচ্চা না৷ সে কথাও বলতে পারে না চলতেও পারে না৷ সে প্যারালাইজড হয়ে ষোলোটা বছর শুয়ে আছে। ছোটো থেকেই হাসপাতালে রাখা হয়েছে তাকে। বিষয়টি তোমাকে জানাতে পারতাম। তবে তোমার জীবনটাকে আমি কেবল সুখে ভরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম৷ তাই রোদকে সবসময় আলদায় আড়াল করে রেখেছি। যাতে করে ওর কষ্ট দেখে তোমার কষ্ট না হয়৷ বৃষ্টিও চাইত তোমার থেকে সকল কষ্ট দূরে রাখতে।”
উষ্ণ কাঁদতে কাঁদতে বলল
“আমার মা কী এখন জেলে আছে?”
সামির সাহেব হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। সামির সাহেবের কান্না দেখে উষ্ণ বুঝতে পেরেছে তার মা ভালো অবস্থানে নেই। উষ্ণ সামির সাহেবকে জড়িয়ে ধরে বলল
“নিজেকে শক্ত করে উত্তর দাও বাবা।”
সামির সাহেব নিজেকে সামলে নিল। আর উত্তরে বলল
“পাগলা গারদে আছে। তোমাদের জন্মের পর ১ বছর ভালো ছিল। এরপর থেকে মানসিক রোগের প্রকোপটা বাড়ে আর পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।”
“আমি মাকে দেখতে যেতে চাই।”
“এখন যাওয়া যাবে না। আরও দুটো বছর কাটুক। ইচ্ছা ছিল একবারে ষোলো বছর পর সবটা সত্যি বলব। তবে পারিনি আমি। তোমার জেদের কাছে হার মানতে হলো। মায়ের মতো জেদ হয়েছে তোমার।”
বলেই হুহু করে কেঁদে উঠল সামির সাহেব৷ উষ্ণ সামির সাহেবকে জড়িয়ে ধরে রাখল৷
সে সময় উর্মি এসে সামির সাহেবকে ডেকে বলল
“ভাইজান খাওয়া রেডি। খাবেন না?”
সামির সাহেব উর্মিলাকে দেখিয়ে বলল
“আমাদের বাসায় যে দুজন তোমার যত্ন নেয়। সায়েবা আর উর্মি তারায় তোমার মাকে জেল থেকে পালাতে সাহায্য করেছিল। তারা না থাকলে হয়তো তোমার মা বেঁচে থাকত না৷ নিজেকে প্রমাণ করতে পারত না। তোমাদের জন্ম হওয়ার পর তারা চুরি ছেড়ে দিয়ে ভালো হয়ে গিয়েছে। এরপর এ বাসায় কাজ করার জন্য আসে। আমাদের সবার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন তুমি।”
উর্মির সাথে সায়েবাও হাজির হলো। উষ্ণ তাদের দিকে কেবল কৃতজ্ঞতার নজরে তাকাল।
দিন, মাস, বছর পার হয়ে দুটো বছর কেটে গেল। বৃষ্টির আজকে সাজা শেষ৷ উষ্ণ নিজের ভাইকে হাসপাতালে দেখে নিজেকে গুছিয়ে নিল। আজকে প্রথম তার মাকে দেখবে। তার বুক ধুকধুক করতে লাগল। মায়ের স্পর্শ কত আদুরে হয় সেটাই আজকে সে অনুভব করবে৷ সে সামির সাহেবের সাথে মাকে আনতে যেতে চেয়েছিল। তবে সামির সাহেব বলল
“তুমি ঘরেই থাকো। বড়ো একটা সারপ্রাইজ তোমার জন্য আছে।”
সে বাধ্য মেয়ের মতো কথাটা মেনে নিল৷ ঘরে বসে সে অপেক্ষা করছে তার মায়ের জন্য। হঠাৎ করে কলিংবেল বেজে উঠল। উর্মি, সায়েবা আর উষ্ণ তিনজনেই দৌঁড়ে দরজা খুলল। দরজার খুলে তারা অবাক হয়ে গেল। কারণ বৃষ্টির পাশে মেঘও দাঁড়ানো। উষ্ণর বুক ধুক ধুক করছে। সে সাথে উর্মি এবং সায়েবাও কাঁপছে। উষ্ণ সামির সাহেবকে জিজ্ঞেস করল
“বাবা আমি কি স্বপ্ন দেখছি? পাশে কী আমার বাবা মেঘ দাঁড়িয়ে আছে?”
মেঘ উষ্ণর দিকে তাকিয়ে আছে। নিজের মেয়েকে এত কাছে থেকে সে দেখছে এই প্রথম। বৃষ্টির অবশ্য কোনো হুঁশ নেই। সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে আছে৷ সামির সাহেব উষ্ণর কথার জবাবে বলল
“মেঘ বেঁচে আছে মা। এতদিন শুধু বৃষ্টির সাজার জন্য নিজেকে প্রকাশ করতে পারেনি। কারণ এতে আইনী জটিলতা বাড়ত। তাই মেঘকে আড়াল করে রাখতে বাধ্য হয়েছি। ”
উষ্ণ বিস্ময় নিয়ে বলল
“এটা কী করে সম্ভব?”
মেঘের মা তাহিরা বেগমের দুটো সন্তান হয়েছিল। তাহিরা বেগম নিজেও জানতেন না তিনি জমজ সন্তানের জননী হবেন। কারণ যে ডক্টরের অধীনে ছিলেন তিনিই বলেননি। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। তাই প্রথম থেকেই বিষয়টি চেপে গিয়েছিল। তিনি চেয়েছিলেন একটা সন্তান তিনি নিয়ে যাবেন। আরেকটি সন্তান দিয়ে দিবেন। আর সে ভাবনা থেকেই তিনি হাসপাতালে যেদিন তাহিরা বেগমের সিজার করে সেদিন বাচ্চা হওয়ার পরপরই একটি সন্তান নিয়ে যান। আর যারা সেখানে ছিল সবার মুখ তিনি বন্ধ করতে মোটা অঙ্কের টাকা ঢেলেছিলেন। সবাই যেহেতু জানত তাহিরা বেগমের একটা বাচ্চায় হবে তাই বাচ্চা চুরির ব্যাপার সবার নজর এড়িয়ে যায়।
যে বাচ্চাটা ডাক্তার নাসরিন নিয়ে গিয়েছেলন সে বাচ্চার নাম রাখা তাইমুর। তাইমুর লন্ডনে বড়ো হয়েছে। ডাক্তার নাসরিন বাচ্চা চুরির পর পরই লন্ডন শিফট হয়। লন্ডনে মেঘের পরিচিত এক সিনিয়র ডাক্তার গিয়েছিলেন এম আর সি পি করতে আর সেখানেই তাইমুরের সাথে দেখা। হুবুহু দেখতে মেঘের মতো দেখে সে মেঘকে বিষয়টি জানায়।
মেঘ এরপর তাইমুরের সাথে কথা বলে উদঘাটন করে তারা একই মায়ের সন্তান। তবে তাইমুর তার পালিত মাকে ভীষণ ভালোবাসত। তিনি যে একটা জঘন্য কাজ করেছিল এটা তার কাছে ঠুনকোই মনে হয়েছিল। তাই সে ডাক্তার নাসরিনের সন্তান হয়েই বেঁচে থাকতে চেয়েছিল। সেদিন মেঘও জানতে পারে রেহনুমা রশিদ তার সৎ মা। তবে রেহনুমা রশিদ তাকে অনেক আদরে বড়ো করেছিল বলেই সে এ বিষয় নিয়ে আর মাতামাতি করেনি৷ নিয়তি মেনে নিয়েছিল।
মেঘের বিয়ের দিন তাইমুর চেয়েছিল মেঘ এবং বৃষ্টিকে সারপ্রাইজ দিতে। তাই সে এসেছিল বাংলাদেশে।
সেদিন জমশেদ সাহেবের থেকে বিদায় নিয়ে মেঘ বাসায় যাওয়ার সময় খেয়াল করে মোবাইলটা রেখে এসেছে। কাকতালীয়ভাবে তাইমুর আসে মেঘের খুঁজ করতে আর পথেই তাইমুরের সাথে মেঘের দেখা।
মেঘ তাকে সবকিছু খুলে বলল। সে সময় তাইমুর মেঘকে নিজের মোবাইলটা দিয়ে বলল, তুমি কালকের জন্য এমন একটা সারপ্রাইজ রেডি করো যাতে করে বৃষ্টির সকল কষ্ট দূর হয়ে যায়। তুমি ডিরেক্ট আমার বাসায় যাও। মায়ের সাথে থাকো। আর আমি তোমার বাসায় যাচ্ছি এদিকটা সামলাচ্ছি। কেউ বুঝবে না। কারণ তোমার সব সিকরেটেই আমার জানা।
মেঘও ভাবল এত স্ট্রেস সে নিতে পারছে না। এটাই ভালো একদিকে তাইমুর মেঘ হয়ে পরিবারকে বুঝাবে অন্যদিকে মেঘ বৃষ্টির সাথে দেখা করে সব ঠিক করে নিবে।
সে শর্তেই দুজন বদল হয়েছিল। তবে নিয়তির চরম নির্মমতায় তাইমুর সেদিন খুন হয়। তাইমুরের খুনের সংবাদ শুনে মেঘও অসুস্থ হয়ে যায়। এতটাই অসুস্থ হয় যে ডাক্তার নাসরিন দেরি না করেই তাকে লন্ডন নিয়ে যায় উন্নত চিকিৎসার জন্য। তিন বছর সে ট্রমায় ছিল৷ এরপর যখন সে সুস্থ হয় ততদিনে বৃষ্টির সাজা হয়ে যায়। অনেক কিছুই ঘটে যায় যা তাদের হাতে ছিল না৷
আর তখন সে সামির সাহেবের সাহবের সাথে যোগাযোগ করে সবটা পরিষ্কার করে। তবে সামির সাহেবেই মেঘকে আত্মগোপনে থাকতে বলেছিল। কারণ এখন যদি জানা যায় মেঘ বেঁচে আছে। তাহলে সে ভাষ্যমতে সেদিন মেঘ খুন হয়নি। আর এতে আইনী জটিলতা বাড়ত। এদিকে বৃষ্টি চারটে খুন করেছে। আদালতে মামলা আবার উঠলে বৃষ্টির ফাঁসির আদেশও হতে পারত। কারণ যে পরিস্থিতি তখন দেখানো হয়েছিল মেঘের বেঁচে থাকাতে সব কিছু মিথ্যা প্রমাণ হয়ে যেত।
আর বৃষ্টি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললেও যেকোনো সময় তা ভালো হওয়ার সুযোগ ছিল। আর সে সময় ফাঁসির রায় হলে বৃষ্টিকে আর বাঁচানো যেত না। তাই এতদিন মেঘ নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে।
দীর্ঘ ষোলো বছর পর বৃষ্টির সাজা শেষে এডভোকেট মুমুর সাহায্যে সকল প্রক্রিয়া শেষ করে আজকে বৃষ্টি আর মেঘকে নিয়ে হাজির হয়েছে সামির সাহেব।
উষ্ণর বুক ধুকধুক করছে। সে মেঘকে জড়িয়ে ধরল। কান্নায় ভেঙে পড়ল। এরপর মাকে জড়িয়ে ধরল। তবে বৃষ্টি আর কাউকে চিনতে পারেনি। মানসিক অবস্থার অবনতি তাকে সকল অতীত ভুলিয়ে দিয়েছে। সে মেঘকে কাছে পেয়েও চিনতে পারছে না। যার জন্য সে এতকিছু করেছে তাকে সে কাছে পেয়েও আজ অনুভূ্তি প্রকাশ করতে পারছে না। ভালোবসার নির্মম পরিস্থিতিতে সে আজকে আবদ্ধ হয়ে বাঁধা পড়েছে।
সবাই রুমে প্রবেশ করল। মেঘ বৃষ্টির সাথে কথা বলার অনেক চেষ্টা করছে তবে পারছে না। সে আবদ্ধ ঘরের এক কোণে পড়ে থাকতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। এদিকে মেঘ সামির সাহেবকে কী বলে কৃতজ্ঞতা দিবে তার জানা নেই। এ মানুষ তার সন্তানের জন্য নিজের জীবনে কাউকে আনেনি।
মেঘ ষোলোটা বছর যার সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল আজকে তার সান্নিধ্য পেয়েও তাকে কাছে পেল না। একটা ধমকা বাতাস তার জীবনটাকে পাল্টে দিল।
মেঘ ঘরে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। অনেকগুলো বছর পার করে ফেলেছে। অসহনীয় যন্ত্রণা নিয়ে সে এতগুলো বছর পার করলো। ডাক্তার নাসরিন তার পালিত বাবা সবাই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেছে। কেবল সে বেঁচে আছে আর বেঁচে আছে বৃষ্টির জীবন্ত লাশটা। চুল দাঁড়ি পেকে গেছে। তবে জীবনের যে সময়টা উপভোগ করার কথা ছিল সেটাই সে হারিয়ে ফেলেছে। ঠিক এমন সময় বৃষ্টির ডায়রিটা মেঘকে এনে দিল সামির সাহেব। আর মোলায়েম গলায় বলল
“বৃষ্টির লেখা শেষ কিছু কথা। আমি কখনও খুলিনি ডায়রিটা। আর কাউকে খুলতেও দিইনি। আপনার জন্য রেখেছিলাম।”
কথাগুলো বলে মেঘের হাতে বৃষ্টির ডায়রিটা দিয়ে সামির সাহেব চলে যায়। মেঘ ডায়রিটা খুলে একটা লেখা পড়ল। যেটা শেষ পাতায় লেখা ছিল। সেখানে লেখা ছিল
“আমি ভালোবাসার জন্য মরতেও পারি, মারতেও পারি। তোমার সাথে অন্যায় করা প্রতিটা মানুষকে আমি শাস্তি দিয়েছি। আমি জানতাম তুমি আমাকে ভালোবাসো। তোমার মণিকোঠায় কেবল একটা নামেই ছিল আর সেটা হলো বৃষ্টি। মেঘ আর বৃষ্টি দুজন দুজনের পরিপূরক। একজন ছাড়া যে আরেকজনকে ভাবা যায় না। মেঘ আছে বলেই বৃষ্টি নামতে পারে। বৃষ্টি নামে বলেই মেঘের গর্জনের জন্য সবাই অপেক্ষা করে। মেঘ তোমাকে আমি ভীষণ ভালোবাসি। ভালোবাসা নমনীয়তা শেখায়। আবার ভালোবাসায় উন্মাদনা শেখায়। তোমার জন্য আমি উন্মাদ। তোমাকে ছাড়া আমি অপূর্ণ হয়। অপূর্ণতাকে পূর্ণতা দিতেই #মেঘ তুমি বৃষ্টি হয়ে নামো।”