#মেঘ_পিওন
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী
#পর্ব_১১
১৯.
বিকেলে অফিস থেকে তারাতাড়ি ফিরে আসে মাহিন।মলিন মুখে আইরার দিকে তাকিয়ে থাকে।আইরা এক গ্লাস পানি এনে দেয়।সেটা পান করে মাহিন আইরাকে রেডি হতে বলে।
“রেডি হবো কেন?কোথায় যাবেন?
” ঢাকায় যাবো।দ্রুত কর আরু।
“কিছু কি হিয়েছে।হঠাৎ ঢাকায় যাবো কেন।সবাই ঠিক আছে?
” না রে আরু কিচ্ছু ঠিক নেই।মার্জিয়াকে হসপিটালে নেওয়া হয়েছে।সিড়ি থেকে পরে গিয়েছে।অবস্থা ভালো না।
এই খবর শুনে আঁতকে ওঠে আইরা।ভাবি পরে গেছে মানে তো ভাবতেই কেমন মনটা বিষিয়ে ওঠে।কথা না বাড়িয়ে একটা বোরকা পরে নিয়ে পার্সটা নিয়েই বেড়িয়ে পরে। মাহিন ততক্ষণে পরনের শার্ট খুলে একটা টি শার্ট পরেছে।আজ বাইকে করে যাওয়ার সময় নেই।আসার সময় মাহিন প্লেনের টিকিট কেটেছে। এয়ারপোর্টে যেতে যেতে ফ্লাইটের সময় হয়ে যাবে ।
যাওয়ার সময় আইরা মাহিনকে অনেক প্রশ্ন করলো মাহিন চুপচাপ যা জানে সবই বললো।অন্য সময় হলে ধমক দিতো আইরাকে তবে আজ কিছুই করলো না।
অপারেশন থিয়েটারে সামনে অসহায়ের মত মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন জহির রায়হান। মনির কাঁদছে মা বোনের জন্য।র*ক্ত দেখতে পারেন না রুবি বেগম।বাড়িতে টুকিটাকি কাজ করার সময় হাত কেটে গেলেই মাথায় তোলেন কেঁদেকেটে।আর এখন বিষয় টা সম্পুর্ন আলাদা।এখানে আসার পর পরই তিনিও একটা সময় স্বামীর পাশেই নেতিয়ে পরেন।মানে জ্ঞান হারান।তারপর উপস্থিত একজন নার্স এর সাহায্য তাকেও যায়গা দিতে হয় হসপিটালের একটা বেডে।আপাতত তাকে ঘুমের ইঞ্জেকশন পুশ করা হয়েছে।তখন থেকেই জহির রায়হান নিশ্বব্দে বসে আছেন।এই সমস্ত ঘটনায় পুলিশি ঝামেলা হলেও ডক্টর তাসলিমা তা করতে দেননি।তিনি খুব সাবধানে এই দিকটা সামলেছেন।
“আম্মু কখন উঠবে আব্বু?আপু কি আর বাঁঁচবে না।আমাকে আর আদর করবে না?জানো আপু কত কষ্ট পাচ্ছিলো?
” সবাই ঠিক হয়ে যাবে বাবা।তুমি বরং এক কাজ করো।তোমার ওই ড্রাইভার আঙ্কেল এর সাথে ফ্ল্যাটে চলে যাও।আমি একটু পরে আম্মুকে নিয়ে চলে যাবো।
“না আমার তোমার কাছে থাকতে ভালো লাগছে আব্বু।আমি দুলাভাইকে সব বলে দিয়েছি।ওনারা একটু পরেই চলে আসবে।তুমি দেখো আপুও সুস্থ হয়ে যাবে তাই না?
” হ্যাঁ হবে।
ছেলেকে শান্তনা দিলেও মনে মনে কষ্টের এক আকাশ সমান দুঃখ নিয়ে চেয়ে রইলেন অপারেশন থিয়েটারে দরজার দিকে।হন্তদন্ত হয়ে আহিল আর আহাদ রহমান ও এগিয়ে এলেন জহি রায়হানের কাছে।মনির ক্লান্তিতে বাবার কাধেই ঘুমিয়ে আছে।ওকে আস্তে করে চেয়ারে হেলান দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন আহিলদের দেখে।
“এখন কি অবস্থা বেয়াই সাহেব?
” এখন ও অপারেশন চলছে বেয়াই।
এর পর কেউ আর কোনো কথা খুঁজে পেলো না।পাচঁ মিনিট নিরবতা চললো।আহিলের কথায় দুজনেই সেদিকে তাকালো।
“ও বাঁচবে তো মামা?
” তোমার মত শঙ্কায় আমিও আছি আহিল।যা হবার তা তো হয়েইছে এখন আমার মেয়েটা বেঁচে গেলেই হয়।
একটা সত্যি কথা কি জানো আহিল। মনির হওয়ার পর আমরা চাইলেই আরও একটা বাচ্চা নিতে পারতাম।চাইলেই পারতাম।কিন্তু তোমার মামি মার্জিয়াকে এতোটাই ভালোবাসে যে দ্বিতীয় সন্তানের কথা ও চিন্তাও করেনি।আমি যতবার বলেছি ও শুধু একটাই উত্তর দিয়েছে।আমাদের একটা মেয়ে আছে মনিরের বাপ। আর চাই না।তুমি ভাবতে পারছো ননদের মেয়েকে কতটা ভালোবাসলে নিজের সন্তান সুখ ত্যাগ করতেও দুই বার ভাবে না।তোমার মামির অবস্থা ও ভালো নেই।সেলাইন চলছে।এর পর যখন উঠে আবার তার মেয়ের কথা জানতে চাইবে কি বলবো জানি না।না জানি মেয়েটা কতটা কষ্ট পেয়েছে।ওই সময় যদি মনির সেখানে না যেত জানি না এই পর্যন্ত ওকে আনতে পারতাম কি না।তোমার মা তো দেখতেন ও না।
“এর জন্য বোধহয় আমিই দ্বায়ী বেয়াই সাহেব।আমি যদি আহিলকে না নিয়ে যেতাম তাহলে।
“এখানে আপনার বা আহিল কারোরই কোনো দোষ নেই বেয়াই।ভাগ্যের লিখন।এখন আল্লাহ আল্লাহ করে আমার মেয়েটা ভালো হয়ে যাক আমি আর কিচ্ছু চাই না।
এরই মধ্যে মাহিন ও চলে এসেছে আইরাকে নিয়ে।কথার মধ্যে ডক্টর বেরিয়ে এলেন সাথে এলেন একজন নার্স।আহিল ছুটে ডক্টর এর পেছনে।
“ডক্টর।
” পরে কথা বলবো মিঃ আহিল।আপনারা এক কাজ করুন ইমিডিয়েটলি রক্ত লাগবে।এখানে বা আপনার পরিচিত কারো ‘ও’ নেগেটিভ রক্ত আছে?
“রক্তের ব্যবস্থা হয়ে যাবে ডক্টর। আপনি শুধু বলুন কখন নিতে চান।
” আপনি কে?
“আমি মাহিন।আহিলের কাজিন। আমার রক্তের গ্রুপ ‘ও’ নেগেটিভ। আমার শরীরে কোনো এলার্জি জাতীয় সমস্যা নেই।নিশ্চিন্তে নিতে পারেন।
” তবুও আমাদের ফর্মালিটির খাতিরে পরিক্ষা করতে হবে।যেহেতু রক্তক্ষরণ হয়েছে অনেক সুতরাং ৫-৬ ব্যাগ তো লাগবেই।আপনার একার থেকে তো নিতে পারবো না মিঃ মাহিন।
“আমার রক্ত সেম গ্রুও ডক্টর। আমি সম্পর্কে রোগীর শশুর হই।
” তাহলে তো হয়েই গেলো।নার্স সব কিছু ফাস্ট করতে হবে ওনাদের দ্রুত নিয়ে যাও।আর বাকিরা অপেক্ষা করুন প্লিজ।
“আমার স্ত্রী সুস্থ হয়ে যাবে তো ডক্টর?
” এখন ও বলতে পারছি না মিঃ আহিল।আসছি।
মার্জিয়া হসপিটালে ভর্তি আজ তিন দিন পার হয়ে গেলো।ডক্টর বলেছিলো আটচল্লিশ ঘন্টা না যাওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যাবে না।তাদের ধারণা এটা এক্সিডেন্ট নয়।যদিও রুবি বেগম ও মনিরা বলেছে একজন মহিলা মুখ ঢাকা দিয়ে বেরিয়ে গেছে সেটা তারা দেখেছে।আহিলদের ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়েছে কিনা তা রুবি বেগম দেখেননি।কিন্তু ওনার ধারণা ওটা মিমি ছিলো।কারণ ওই চোখ তিনি ভুলে যাবেন না। পুলিশ তো এসবে তাকে ধরে নিয়ে যাবে না।আবার মিমির বাড়ির লোকেরা বলছে মিমি তার বন্ধুদের সাথে ট্যুরে কুয়াকাটা গেছে।এখানে আশা সম্ভব নয়।মনির দেখলেও সেও মায়ের মতই দেখেছে তখন ওই মহিলা মুখ কাপড়ের আড়ালে ঢেকে আহিলদের ফ্ল্যাটের দরজা ঠেলে বের হয়ে যাচ্ছিল।এটা যে পরিকল্পিত ঘটনা কোনো এক্সিডেন্ট নয় তা সকলেই বুঝতে পারছে।আদিবা বেগম ও কিছু শিকার করছেন না। এদিকে পুলিশ ও মনিরের কথায় কোনো স্টেপ নিতে পারবে না।মনির বাচ্চা ছেলে ওর কথায় ভিত্তি করে একজন মানুষকে জেরা করতে পারে না পুলিশ। তাই তারা অপেক্ষা করছে কবে মার্জিয়া চোখ মেলে তাকাবে।কথা বলবে।একমাত্র মার্জিয়াই ঘাতককে কাছ থেকে দেখেছে।
আহিল মার্জিয়ার পাশে বসে আছে।এক ধ্যানে তাকিয়ে মুখমণ্ডল ভালো করে পরখ করে। জীর্ন শিরন ঠোঁট। কয়েক যায়গা কেটে কালশিটে পরে গেছে।কপালে বড় একটা কালশিটে দাগ।হাত ভেঙ্গেছে পায়ে জখম সব কিছুই যেন আহিলের দিকে তাকিয়ে বলছে “তুই অপরাধী”।
“হ্যাঁ আমি তো অপরাধী। আমি আমার প্রেয়সীর কাছে অপরাধী। আমি আমার সন্তানের কাছে অপরাধী। তারাতাড়ি সুস্থ হও বউ আমি তোমাকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাব।
আহিলের সন্দেহ হয় তার মায়ের ওপর প্রত্যক্ষ না হলেও পরক্ষভাবে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
২০.
“সত্যি করে বলতো আদিবা তুমি সত্যি কিছু জানো না?
” কি আশ্চর্য আমি কি করে জানবো।
“তাই!তুমি তখন কোথায় ছিলে?
” ঘরেই ছিলাম।
“স্পষ্ট একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো আদিবা।যদি এটা প্রমাণ হয় যে এর পেছনে তুমি কোনোভাবে জড়িত তাহলে সেদিনই তোমার সাথে আমার সম্পর্ক শেষ হবে।মার্জিয়া একবার সুস্থ হোক পুলিশের কাছে স্টেটমেন্ট দিক তারপর সব কিছু পরিষ্কার হবে।কথাটা মাথায় রেখো।তোমার বাড়াবাড়ি অনেক সহ্য করেছি আর না।
এবার আদিবার মনে একটু ভয় ঢুকে গেলো।কেউ জানুক আর না জানুক সেদিন এই বাড়িতে কি হয়েছিলো বা কি হতে যাচ্ছিলো তা সবই সে জানে কিন্তু এতোটা ভয়ানক কিছু হবে সেটা জানতো না।সে তো শুধু মার্জিয়াকে শিক্ষা দিতে চেয়েছিলো।এমন মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে চায়নি।কিন্তু এটাও তো কম বড় অপরাধ নয়।এবার কি সত্যি সত্যিই আদিবা একটু ভয় পেলো?
মিমিকে এই কয়েকদিনে অনেকবার কল দিয়েছেন তিনি।কিন্তু ফোন তুলেনি মিমি।আজ একবারের মাথায় তুলে নিলো ফোন।
” কি হয়েছে ফুপি এতোবার কল দিচ্ছো কেন?
“কল দিচ্ছি কেন তুই বুঝতে পারছিস না।যে কান্ড করেছিস তারপর তুই এতো স্বাভাবিক কি করে বলতো?
” কান্ড! কোন কান্ডের কথা বলছো তুমি বুঝতে পারছি না ফুপি?আমার জানা মতে এটাতে তো তুমিও সমান ভাবে জড়িত। তাই আপাতত তুমিই এসব নিয়ে ভাবো আমার এতো ভাবার সময় নেই।আমি ট্যুরে আছি ফুপি বোঝার চেষ্টা করো।
“কি বলতে চাইছিস তুই।আমি তোকে বলেছিলাম ওকে এভাবে সিড়ি থেকে ফেলে দিতে নাকি বলেছিলাম ওকে মারার চেষ্টা করতে আমি তো শুধু।
” কি?তুমি তো শুধু কি ফুপি?কথা আটকে গেলো?শুনো ফুপি আমি যদি ফেসে যাই না তুমিও কিন্তু ফেসে যাবে সেটা ভুলে যেও না।যা করেছি যখন করেছি সব তোমাকে নিয়েই করেছি তাই আমার ওপর এসব গলাবাজি করবে না বুঝেছো।
মার্জিয়া তখন আহিলের সাথে ফোনে কথা বলছিলো।হঠাৎ রুমের বাইরে কিছু পরে যাওয়ার শব্দ হলে আহিলের সাথে কথার ইতি টানে।ফোন রেখে বাইরে বেরিয়ে দেখে সিড়ির পাশের ফুলদানি টা পরে গেছে।
এটা আবার কি করে পড়লো সেটা ভাবতে ভাবতেই ফুলদানির কাছে চলে যায়। সেটা তুলে আবার আগের যায়গা ঠিক করে রেখে দেয়।দুপুর হওয়ায় রান্নার খালা বাড়িতে নেই।এই সময়টা তাকে বিশ্রামের জন্য দেওয়া হয় তাই তিনি নিজের ভাড়া বাসায় ফিরে যান।আদিবা বেগমের রুমের দরজা বন্ধ।মহিলা খুব একটা রুম থেকে বের হননা।কি মনে করে মার্জিয়া সিড়ির কাছে যায়।সেখানে একটা ওড়না পরে আছে। এই বাড়িতে আইরা বা তার এমন কোনো ওড়না আছে কিনা সেটা মনে করতে পারলো না।সেটা তুলতে গিয়েই পা পিছলে যায় মার্জিয়ার।তারাতাড়ি কিছু আঁকড়ে ধরতে গেলে একটা হাত তার হাত ধরে নেয়।সামনে তাকিয়ে দেখে মিমি দাঁড়িয়ে। মুখে তার পৌচাশিক হাসি।মার্জিয়া খুব শক্ত করে মিমির হাত আঁকড়ে ধরে।অন্য হাতে সিড়ির হাতল ধরার চেষ্টায়।ইতিমধ্যেই পেটে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করছে সে।মিমির হাসির কারণ মার্জিয়া বুঝেছে।
“আপনি এখানে কখন এলেন!
” কেমন আছো আহিলের প্রান পাখি?
“আমাকে উঠতে সাহায্য করুন প্লিজ।
” ইশ এতো কষ্ট করে সিড়িতে তেল ফেলে রেখেছি কি এমনি এমনি নাকি।তোমাকে উঠালে আমার এতে লাভ কি হবে বলতো?
“মা….মানে!এটা করবেন না প্লিজ। আমার বাচ্চাটাকে আমি দুনিয়াতে আনতে চাই।আহিল খুব কষ্ট পাবে।আমার সন্তান আহিলের ভালোবাসার প্রতিক।ওর প্রথম বাবা হওয়ার অনুভূতি নষ্ট করবেন না।প্লিজ আমার হাত ছাড়বেন না।
কথা বলার এক ফাকে মার্জিয়া আদিবা বেগমের রুমের দিকে তাকায় যদি দেখা যায়।যদি আল্লাহর রহমত তাকে সাহায্য করে।এদিকে আহিলের কথা মার্জিয়ার মুখে শুনে মিমি আরো ক্ষিপ্ত হলো।অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো মার্জিয়ার দিকে।
” ভেবেছিলাম আমি শুধু তোর বাচ্চাটাকে নষ্ট করবো কিন্তু এখন আমি আমার প্ল্যান পালটে ফেলেছি।তোর বাচ্চাকেও মারবো আর তোকেও।
এই বলে মার্জিয়াকে সমস্ত শক্তি দিয়ে ঠেলে দিলো নিচের দিকে।পরে গিয়ে জখম হলো মার্জিয়া।এতেও শান্ত হলো না মিমি।নিচে খুব সাবধানে তেল ফেলা যায়গা দেখে দেখে নেমে মার্জিগার কাছে গেলো।তারপর সমস্ত ক্ষোভে মার্জিয়ার মুখে কিল ঘুষি মারতে থাকলো।একটা সময় বাইরে থেকে কেউ আসছে বুঝতে পরে পরে থাকা সেই ওড়না টা দিয়ে মুখ ঢেকে বেরিয়ে গেলো।
তারপর বাকিটা সবারই জানা।
নিজের কথা শেষ করে ডুকরে কেদে উঠলো মার্জিয়া। এতোক্ষণ পুলিশ সহ আহিল,আহাদ রহমান, মার্জিয়ার মামা, মাহিন সবাই সেখানে সেসব কথা শুনছিলো।রাতের শেষ প্রহরে মার্জিয়ার জ্ঞান ফেরে।অনেকটা দুঃস্বপ্ন দেখার মতো চেচিয়ে উঠে।পুলিশ তখন সেখানেই কেবিনের বাইরে উপস্থিত ছিল সাথে বাকিরাও শুধু আহিল একা মার্জিয়ার কেবিনে ছিলো।
“শেষ পর্যন্ত মা আমার সাথে বেইমানি করলো।আমি কি সন্তান হিসেবে এতোই অপছন্দ মায়ের কাছে?নিজে পারেনি বলে মিমিকে কাজে লাগালো।
” আমরার শুরু থেকেই তার ওপর সন্দেহ ছিলো বাবা আহিল। কিন্তু তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারিনি।মাঝখান থেকে আমার মেয়েটা মরতে মরতে বেঁচেছে।জানি না কবে সে সুবুদ্ধিসম্পন্ন হবে।
আফসোসের সুরে বললো রুবি বেগম।
পুলিশ মার্জিয়ার কথাগুলো রেকর্ড করে নিলো।তারা আদিবা বেগমের কাছে যাবেন।তার আগেই পুলিশের কাছে খবর এলো মিমি নাকি থানায় নিজ থেকে এসেই সব দোষ শিকার করেছে।সাথে আদিবা বেগমের নাম এলেও তিনি যে মার্জিয়াকে মারতে বলেননি তাও বললেন।ও মার্জিয়ার থেকে প্রতিশোধ নিতেই এমনটা করেছে।মিমির কথা অনুযায়ী ছোট থেকেই আহিলের প্রতি তার আলাদা রকমের ভালোলাগা কাজ করতো।ফুপি মানে আদিবা বেগম সবসময় বলে গেছেন ওকে আহিলের বউ করে ঘরে তুলবে।কিন্তু আহিল ওকে পছন্দ করতো না।যার দরুন মার্জিয়াকে সে আহিলের পাশে মেনে নিতে পারেনি।ঘটনার আগেরদিন ফুপির থেকে জানতে পারে আহিলরা অফিসের কাজে ঢাকার বাইরে যাবে।বাড়িতে কেউ থাকবে না।সেই সুযোগটা হাত ছাড়া করতে চায়নি মিমি।কুয়াকাটা যাওয়ার কথা থাকলেও বন্ধুদের বলে ঢাকা আসে।ঘটনার সময় আদিবা বেগমের ঘর বন্ধ ছিলো।এসবের যে সে কিছুই জানেন না তাও বললো।তারপর ওই ঘটনার পর নিজেই কুয়াকাটা যায়। সবকিছু শুনে মাহিনের খুব খারাপ লাগলো।সে মায়ের কাছে ফোন করে সবটা বললো।
আদিবা বেগম সরাসরি যুক্ত না থাকলেও তার প্রতি আহাদ রহমান খুবই ক্ষিপ্ত। তিনি যদি মিমিকে এই খবর না দিত তাহলে এতো কিছু হতোই না।
এক দিন পর মার্জিয়াকে বাড়িতে নিয়ে যায় আহিল।সেখানে একজন নার্স রাখা হয় আহিলের অনুপস্থিতিতে মার্জিয়াকে দেখাশোনা করার জন্য।
থানায় আহিল আর মাহিন আসে মিমির কাছে।মিমি তখন একমনে ছাদের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছিল । মাহিনের ডাকে ধ্যান ভাঙে তার।মুচকি একটা হাসি দেয়।সেই হাসি খুব ভালো করে লক্ষ্য করে আহিল।নেই কোনো আফসোস।
“কি ব্যাপার তোমরা এখানে? আমি তো ভাবতেই পারছি না তোমরা এসেছো।
” কেন এমন করলি মিমি?তোর কিসের অভাব ছিলো বলতো?
“কেন করলাম?তুমি তো আইরাকে ভালোবাসো ভাইয়া ওর যদি অন্য কারো সাথে বিয়ে হতো মেনে নিতে পারতে?
বোনের এই কথার কোন উত্তর দিতে পারলো না মাহিন।ঠিকি তো যখন শুনেছিলো আইরাকে অন্য কেউ দেখতে আসবে তখনই তো মাহিনের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলো।
” জানি তোমার কাছে এর কোনো উত্তর নেই।আমি আজ অব্দি যা যা চেয়েছি সব পেয়েছি ভাইয়া কিন্তু যেটা আমি মন থেকে চেয়েছি সেটা পাইনি।আহিলকে আমি সেই ছোট্ট থেকে ভালোবাসি।কত ভাবে বলেছি বুঝাতে চেয়েছি কিন্তু আহিল আমার দিকে ভালো করে দেখলোই না।
“এটাই তোর বুঝা উচিৎ ছিলো মিমি।তুই যাকে ভালোবাসিস বলে তাকেও যে তোকে ভালোবাসতে হবে এটা তো হতে পারে না তাই না।তারও অধিকার আছে অন্য কাউকে ভালোবাসার।তার জন্য তুই কি করলি।একটা বাচ্চাকে মেরে ফেললি।কি করেছিস বুঝতে পারছিস?খুন করেছিস তুই খুন।বাবা মাও ভালো নেই মিমি। তোর জন্য বাবার চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছে না।তোকে খুব ভালোবাসে বাবা।
“আমার মাথা ঠিক ছিলো না ভাইয়া।কত রাত আমি ঘুমোতে পারিনি তোমরা জানো না।আমার মনের ক্ষতটা তোমরা কেউ উপলব্ধি করতে পারোনি।তাই আমি যা করেছি বেশ করেছি।
মাহিন বুঝলো একে কিছু বলে লাভ নেই।আহিলকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
” ভাবছি কেসটা তুলে নেবো।
“এটা করিশ না।ওর একটা শিক্ষা হওয়া দরকার আহিল।এটা ছোটখাটো বিষয় নয়।মার্জিয়া মরেও যেতে পারতো।আশা করি শিক্ষাটা ও মনে রাখবে।মেন্টালি ডেসপারেট ও।প্রপার একটা চিকিৎসা দরকার।
চলবে