মেঘ পিওন পর্ব-৩+৪

0
2

#মেঘ_পিওন
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী
#পর্ব_৩
৫.
ব্যস্ততার মধ্যে মাঝে মাঝে নিজেকে সময় দিতে হয়।নয়তো মন মস্তিষ্ক কোনোটাই আর কাজ করে না।মনকে ফ্রেশ রাখার অন্যতম উপায় ঘুরতে যাওয়া। আর সেটা যদি হয় ছোটবেলার প্রিয় বন্ধুদের সাথে তাহলে তো কথাই নেই । আহিলও আজ কক্সবাজার গেছে তার বন্ধুদের সাথে।এটা অনেক দিনের প্ল্যান ছিলো বলেই যাওয়া।সেখানে আহিলের ছোট বেলার বন্ধুরা সবাই থাকবে।যাওয়ার আগে মার্জিয়ার সাথে দেখা করেছে আহিল।যাওয়ার সময় একটা চিঠিও রেখে গেছে মার্জিয়া সেটা টেরও পায়নি।আহিলরা গেছে দুই দিন হতে চললো । পড়ার টেবিলে মন খারাপ করে বসে ছিলো মার্জিয়া হঠাৎ তার টেবিলের এক কোনে প্লাস্টিকের ফুলদানিতে চোখ পড়ে।সেখানে চিঠিটা ছিলো।দেরি না করে খুললো সেটা।তাতে লেখা-
ভালোবাসি মেঘ বালিকা। আমার মার্জুর খেয়াল রেখো।একদম মন খারাপ করে থাকবে না।আমি তারাতাড়ি চলে আসবো।
-ইতি,
তোমার ‘মেঘ পিওন’

ঠোঁটের কোনে একটুকরো হাসি ফোটে মার্জিয়ার। ধ্যান ভাঙে তাদের ছোট্ট বসার ঘরের কিছু কথপোকথন শুনে।কিছুটা আচ করলো এটা আহিলের মা।তবুও নিশ্চিত হবার জন্য নিজের রুম থেকে উকি দিল। হ্যাঁ তিনিই এসেছেন তবে কেন এসেছেন তা বুঝতে পারলো না। কারণ ততক্ষণে তিনি চলেও গেছেন।মার্জিয়া রুম থেকে বের হলে জহির রায়হান এগিয়ে আসেন।

“একি বের হলি যে কোথাও যাবি?

” না মামা।আন্টি কেন এসেছিলেন? আর তোমার মুখটা এমন শুকনো লাগছে কেন?

“ওসব কিছু না।তুই এসব নিয়ে কিচ্ছু ভাববি না।শুধু এটা মনে রাখবি আমি বেঁচে থাকতে তোকে কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না।

” কিন্তু কি হয়েছে আর আমাকে কিছু কেন বলছো না তোমরা?

“তোর মামা কিছুই বলবে না।আমি বলছি।আহিলের মা এসেছিলো উনি বললেন হয় আমরা কালকের মধ্যে অন্য কোথাও চলে যাবো নয়তো তোকে বিয়ে দিতে হবে।তাও পাত্র নাকি উনিই ঠিক করে দেবেন।তোর মামা না করেছে বলে মহিলা আমাদের যা নয় তাই বলে গেলো।

” আমাকে ডাকলে না কেন?মামা আমি বরং এখান থেকে চলে যাই।তুমি চিন্তা করো না কিছুদিন কলেজের হোস্টেল থেকে ভালো একটা রুম দেখবো।আমার জন্য তোমাদের এতো ঝামেলায় পরতে হবে না।

“কি বলছিস তুই এসব! তোকে ছেড়ে আমরা থাকতে পারবো ভাবছিস?কেউ কোথাও যাবে না আর বিয়েও হবে না।ছুটি টা শেষ হোক তারপর আমি অন্য কোথাও বাসা দেখবো।তুমি এক কাজ করো রুবি আমি ভাবছিলাম তোমাদের নিয়ে অনেকদিন হলো কোথাও বের হই না।যা তো মা চট করে রেডি হয়ে নে।আমরা আজ অনেক ঘুরবো যাকে বলে ফ্যামিলি ট্যুর।ছোট্ট ট্যুর আর কি। তারপর রাতের ডিনার করে ফিরবো।
“””
“দেখ মিমি ওর মামা তো বললেন ঈদের ছুটি শেষ হলে ওরা এখান থেকে চলে যাবে তাহলে এখন আর কিছু বলার দরকার নেই।

“আমি বুঝতে পারছি না ফুপি তুমি কেন বিয়ের বিষয় নাকোজ করছো?আরে বাবা ওরা যদি চলেও যায় তখন তোমার ছেলে বিষয় টা জানতে পারবে না?ও যেতে দিতে চাইবে তোমার মনে হয় সেটা?

” হ্যাঁ ঠিক বলেছিস তো।তাহলে এখন কি করবো?

“কি আবার করবে ওর মামাকে বলো তুমি ওসব ছুটির পরে টরে কিছু বুঝো না।তুমি কালই ওই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে এখান থেকে চিরতরে বিদায় করবে।

“মিমি তোর ওই বন্ধুকে তো আমি চিনি। নেশা করে বেরায়।এমন একটা ছেলের সাথে মেয়েটার বিয়ে দিয়ে দিব কেমন দেখায় বল।

” উফফ ফুপি তোমার আপদ বিদায় হলেই তো তোমার শান্তি সেখানে তার কার সাথে বিয়ে হচ্ছে কিভাবে হচ্ছে সেটা যেনে তুমি কি করবে।আর তাছাড়া পারভেজ কে আমি মার্জিয়ার ছবি দেখিয়েছি খুব পছন্দ হয়েছে ওর।ওই মেয়ের জন্যই তো আমার আহিল আমার সাথে কথাও বলে না।

“তুই ঠিকি বলেছিস এটাই ঠিক হবে ওর জন্য।আমার বাবু ওই মেয়ের জন্য আমার সাথে ভালো করে কথাও বলে না।আগে আমি যা বলতাম তাই করতো আর এখন।

” শোনো ফুপি আমি পারভেজের সাথে কথা বলেছি ওরা কালই আসবে। আহিল আসতে আরো দু দিন বাকি।তাই যা করার আমাদের এর মধ্যেই করতে হবে।কোনো অনুষ্ঠানের দরকার নেই।ওরা এলেই কাল কাজি ডেকে বিয়ে পরিয়ে দিবে। কোনো রিক্স নেওয়া যাবে না।আর আমি একজন রেজিস্ট্রারকে বলে রেখেছি সময় মতো চলে আসবে।

পড়তে পড়তে খুব পানি পিপাসা পেলো আইরার। রুমে পানি না থাকায় বোতল নিয়ে বাইরে বের হলো।আর যাওয়ার সময় কিছু কথা তার কানে আসায় সেখানেই দাঁড়িয়ে পরলো। গেস্ট রুমটা আহিলের রুমের পাশেই।গেস্ট রুম আর আইরার রুমের মাঝখানে আহিলের রুম। তাই সেখান দিয়ে যাওয়ার দরুন খুব সহজেই ফুপু ভাইজির কথা শুনে নেয় আইরা।ভালো করে বুঝার জন্য দরজায় আড়ি পাতে।যদিও এভাবে কারো পারমিশন ছাড়া কথা শোনা উচিৎ না।তবুও যেখানে নিজের ভাইয়ের ভালো থাকা খারাপ থাকা নির্ভর করছে সেখানে এমন নিচু কাজ ও করতে পারে আইরা।এই বাড়িতে বাবার পর ভাই একমাত্র মানুষ যে কোনো স্বার্থ ছাড়াই সবটা দিয়ে ভালোবাসে।সব কিছু শুনে আইরা এক মিনিট ও দেরি করে না।নিজের রুমে গিয়ে ভাইকে সবটা জানায়।সব শুনে আহিলের খুব রাগ হয় সেই সাথে একটা দুষ্টু বুদ্ধিও মাথায় আসে।

“চিন্তা করিস না সময়ের আগেই ফিরে আসবো আমি

” ঠিক আছে ভাইয়া।কিন্তু কতটা আপডেট তোমায় দিতে পারবো জানি না।মা আমাকে সবখানে থাকতে দিবে কিনা সেটাও বলতে পারছি না তবে আমি চেষ্টা করবো সবটা জানানোর।

“ঠিক আছে রাখছি।কাউকে কিছু বলতে হবে না।

” ওকে।

৬.
অনেক রাতে সবাই ফ্ল্যাটে ফেরার পর শরীর ক্লান্ত থাকায় ওভাবেই ফ্রেশ হয়ে সবাই ঘুমিয়ে পরে।সকালে ঘুম ভাঙে কিছুটা দেরি করেই।ঘুম নেই মার্জিয়ার চোখে। সকালে বলা আহিলের মায়ের কথা এখন ও মস্তিষ্ক জুরে ঘুরপাক খাচ্ছে।আহিল ও আর কল করেনি।কোনো একটা অজানা কারণে নিজের মায়ের কথা খুবই মনে পরছে।ওর।মা যখন ওর বাবার বয়সী একজনকে বিয়ে করে চলে যায় তখন মার্জিয়ার বয়স ছয় এর কোঠায়।মায়ের যাওয়ার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে ছিলো ছোট্ট মেয়েটা।কিন্তু নির্দয় মা একবার ও পিছু ফিরে তাকায়নি।এসব মনে পরলে অজান্তের চোখ ভিজে ওঠে তার।

বেলা তখন এগারো টা। মার্জিয়া ঘুম থেকে উঠলেও ওভাবেই শুয়ে ছিলো।দুপুরের রান্নার আয়োজন করছিলেন রুবি বেগম। কলিংবেলের আওয়াজে হাতের কাজ রেখেই সেদিকে ছোটেন তিনি।দরজা খুলতেই সেখানে দেখতে পায় আহিলকে।চেহারায় ছন্নছাড়া ভাব।চুলগুলো উষ্কখুষ্ক। চোখের নিচে কালচে ভাল।সারা রাত ঘুমোয়নি এটা বুঝতে বাকি নেই রুবি বেগমের।

“একি বাবা তুমি এভাবে। এই অবস্থা কেন তোমার?কি হয়েছে?

” সব বলবো আন্টি। তার আগে বলুন আংকেল কোথায় আর মার্জু?

“দুই ভাই বোনই ঘুমোচ্ছে।তোমার আংকেল চা খাচ্ছে।কিন্তু কি হয়েছে?

” আমার আপনাদের সাথে কথা আছে খুব জরুরী।

এর পর আহিল দুজনের মুখোমুখি হয়ে সবটা খুলে বলে।
তার ভাস্যমতে সে আজ মার্জিয়াকে বিয়ে করতে চায়।ঠিক সেই সময় আহাদ রহমান ও সেখানে উপস্থিত হয়।সবাই সিদ্ধান্ত নেয় মার্জিয়াকে যে করে হোক এখান থেকে বের করতে হবে আদিবা বেগমের চোখের আড়ালে । তারপর তারা কোর্টে যাবে।সেখান থেকে ওদের বিয়ে দিয়ে ফিরবেন সবাই।

“সব তো বুঝলাম বাবা কিন্তু মার্জিয়া বিষয় টা কিভাবে নিবে।ও ভাব্বে আমি ওকে ঘার থেকে নামানোর জন্য এভাবে লুকোচুরি করে বিয়ে দিচ্ছি।

” তুমি কি বলছো এসব।মার্জিয়া আহিলকে পছন্দ করে এখানে বলার কি আছে।কিন্তু আমার এটা ভেবে খারাপ লাগছে আহিলের মায়ের এমন করার মানে কি?আমাদের মেয়ে কি দেখতে খারাপ।আর বিয়ের পর যে মেয়েটার ওপর কোনো খারাপ কিছু করবে না তার ও কোনো নিশ্চয়তা নেই।

“এসব নিয়ে কিছু ভাব্বেন না বেয়ান।মার্জিয়া আমার মেয়ের মতোই থাকবে আমাদের কাছে।

” কিন্তু আহিল তোমার মা যার সাথে মার্জিয়ার বিয়ে দিতে চায় ওরা এলে আমরা কি করবো।

“আশুক না আংকেল।ততক্ষণে আমাদের বিয়ে হয়ে যাবে।

” ঠিক আছে।তোমাদের ওপর ভরসা আছে।শুধু একটাই অনুরোধ বাপ মা হারা মেয়েটাকে আমরা অনেক কষ্টে বড় করেছি কোনো অভাব বুঝতে দেই নি।খুব যত্নে আগলে রেখেছি তাকে কষ্ট দিও না।

রুবি বেগম মার্জিয়ার ঘরে গিয়ে জোরপূর্বক শোয়া থেকে টেনে তুলে।ঘটনার আকস্মিকতায় ঘাবড়ে যায় মার্জিয়া।মামির মুখের দিয়ে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে কি করতে চাইছেন তিনি।মার্জিয়াকে কিছু বলতে না দিয়ে আলমারি থেকে একটা বোরকা বের করে পরিয়ে দেন।

“কি করছো মামি এটা পরাচ্ছো কেন!

” যা করছি তোর ভালোর জন্য।আহিল আর ওর বাবা বাইরে অপেক্ষা করছে তুই তারাতাড়ি চোখে মুখে একটু পানি দিয়ে বেরিয়ে পর।রাস্তায় খাভার খেয়ে নিবি।এখন জলদি কর।

“আরে কিন্তু হয়েছে কি।আর এভাবে চোরের মতো কোথায় যাবো?আর আহিল ঢাকায় ফিরলো কবে আশ্চর্য!

” মার্জু এখন এসব বলার সময় নয় মা।পরে সব জানতে পারবি।

“তকি বলে এভাবে।আর যাবো কোথায় এখন?

” সেটা যেতে যেতেই শুনে নিস।

বিকেলে যথারীতি মিমি আদিবা বেগম হাজির। বলা যায় জোর পুর্বক আটকে রেখেছে সবাইকে।সবাই সবটা জানলেও কেউ কিছু বুঝতে দিলো না।এদিকে মার্জিয়া যে বাসায় নেই এটা কেউ বুঝতেও পারেনি।

মিমি বার বার পারভেজকে কল করছে কিন্তু পাচ্ছে না। তাই কিছুটা চিন্তায় পরে গেলো।আদিবা বেগমকে সবটা বললে তিনি বললেন হয়তো নেটওয়ার্ক পাচ্ছে না তাই যাচ্ছে না কল।দেখতে দেখতে সময় পার হয়ে যায়।কাজি এবং রেজিস্ট্রার এসে বসে আছে কিন্তু পাত্র এখনো আসেনি। একপর্যায়ে কাজি বললেন কনেকে নিয়ে আসতে। আদিবা বেগম বেশ উৎসাহ নিয়ে মার্জিয়ার রুমে গিয়ে দু’মিনিটের মাথায় আবার ফিরে আসে।রবি বেগমকে জিগ্যেস করে মার্জিয়া কোথায়।রুবি বেগম সোজাসাপ্টা উত্তর দেন জানি না।ব্যাস এতেই যেন আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার মতো অবস্থা।

“জানেন না মানে কি? আপনাদের মেয়ে রুমে নেই অন্য কোথাও নেই আর আপনি জানেন না সে কোথায়।সত্যি করে বলুন ও কোথায় গেছে।আপনি কিছু লুকোচ্ছেন বেশ বুঝতে পারছি।

” বেশ তো তাহলে আপনিই খুজে বের করুন না হয়। আমার অনেক কাজ আছে।বাড়িতে আমার পরম আত্নীয়রা আসবে আমার তাদের আপ্যায়ন এর জন্য খাওয়া দাওয়ার এর ব্যবস্থা করতে হবে।আপনি বরং খুজুন আমি আমার কাজ করছি।

“আরে চলে গেলো।

” ফুপি আমাদের বোকা বানানো হচ্ছে না তো?

চলবে

#মেঘ_পিওন
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী
#পর্ব_৪
৫.
বিকেল গরিয়ে সন্ধ্যা মার্জিয়াকে এখন ও খুজ্র চলেছে আদিবা বেগম।এদিকে বর ও আসছে না।মিমি বিরক্ত মুখে বার বার কল করে যাচ্ছে পারভেজকে।বরাবরের মতো ফোন বন্ধ।এবার মিমি একটু চিন্তিত হলো।একে মার্জিয়া নেই তারওপর পারভেজের কোনো খোজ নেই।ব্যাপার টা কেমন কাকতালী হয়ে গেলো।

“আচ্ছা আপনাদের মেয়ে কোথায় আমাকে বলুন তো।আপনার হাসবেন্ড কোথায় তাকেও তো দেখতে পারছি না।

” সে একটা জরুরী কাজে গেছে চলে আসবে।

“ফোন করুন আমি জানতে চাই উনি কোথায় আছে।

” এই মেয়ে আমার স্বামী কোথায় আছে কি কাজে আছে সেটা তোমাকে কেন বলতে হবে?তুমি জেনে কি করবে।

“দেখুন বেশি চালাকি করার চেষ্টা করবেন না কিন্তু আমার রাগ হলে না।

” অভদ্রতার একটা লিমিট আছে মিমি।ভুলে যেওনা উনি তোমার গুরুজন।

আহাদ রহমানের কথা শুনে ভ্রু জোড়া কুচকে ফেললো মিমি।ওর কাছে মনে হয় আহিল তাকে না পছন্দ করার অন্যতম কারণ এই মানুষ। তিনিও মিমিকে পছন্দ করেন না।তাই আহিলকে সব শিখিয়ে দিয়েছে।

“আপনি কোথায় ছিলেন ফুপা।আপনাকে তো বাড়িতে দেখা যায়নি অনেকক্ষণ।

” সেটার কৈফিয়ত আমি তোমাকে দিবো না।তবুও যখন জানতে চাইছো বলছি।আমি মার্জিয়াকে আমার সাথে নিয়ে গেছিলাম আহিলের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য।

“কিহ!বিয়ে!আহিল কোথা থেকে এলো?ফুপি দেখছো তুমি কি বলছে এসব?

” হ্যাঁ। তোমার মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে। আহিলের বিয়ে মানে তাকে তুমি কোথায় পেলে?

“তুমি বড্ড অবুঝ আদিবা।আহিল এসেছে।হ্যাঁ যদিও ওর আরো দুদিন পর আসার কথা ছিলো।তবে এখন এসেছে তাতে কি হয়েছে আজব।তুমি যেটা করছিলে।সেটা অন্যায় আদিবা আর আমি সেই অন্যায় কিছুতেই মেনে নিবো না।তাই আমি নিজে থেকে আহিল আর মার্জিয়ার বিয়ে দিয়েছি কোর্টে বুঝলে।

“বিয়ে! কিসের বিয়ে? মজা করছো তুমি আমার সাথে?

” তোমার আমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে আমি মজা করছি।এক্ষুনি বুঝতে পারবে।আর তোমার ভ্রম ও কেটে যাবে।আহিল বউমাকে দেখলে ওই দেখো।

আহিল মার্জিয়ার হাত ধরে আছে।পাশেই মিষ্টির ব্যাগ নিয়ে জহির রায়হান হাসি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে। এসব দেখে আদিবা বেগমের চক্ষু চড়কগাছ।

“এসবের মানে কি আহিল।ও বুঝেছি তুই ও তোর বাবার মতো মজা করছিস।দেখ আমি মার্জিয়ার জন্য ভালো একটা ছেলে দেখেছি।মিমির বন্ধু। ছেলেটা খুব ভালো।দেখবি মার্জিয়াকে খুব ভালো রাখবে।

” একটা নেশাখোর ছেলে ঠিক কতটা ভালো রাখবে তা আমার খুব ভালো করে জানা আছে মা।আর তুমি না অনেক বড় ভুল করে ফেলেছো।এভাবে কারো ভালোবাসার মানুষকে দূরে সরানো যায় না মা।মার্জিয়াকে আমি ভালোবাসি।তাই যদি ওর কাউকে বিয়ে করতেই হয় সেটা আমাকেই করবে।

“তা কি করে হবে আহিল।না মানে পারভেজ আর একটু পরেই এসে পরবে।সব কিছু রেডি করা হয়ে গেছে।

” তোর মাথায় যে গোবর আছে সেটা আমি জানতাম কিন্তু এতোটা সেটা জানতাম না।তোর ওই নেশাখোর বন্ধু না কিছু টাকার লোভে বিয়ের কথা ভুলেই গেছে।ও এখন কোথায় বলতো?

“মানে কি সব বলছো।একটু আগেও কথা হয়েছে আসছে ও।

” বিশ্বাস হলো না বুঝি।ঠিক আছে এখন কল করেই দেখ।কোনো না কোনো ম*দে*র বা*রে ঠিক পেয়ে যাবি।বাই দ্যা ওয়ে মা একটা কাজ ভালোই করেছো। আমি ভেবেছিলাম বিয়েটা আর কিছুদিন পরে করতে কিন্তু এভাবে হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি।

“অনেক মজা করেছিস আহিল।তুই খুব ভালো করেই জানিস এই মেয়েকে আমি কিছুতেই তোর বউ হিসেবে মেনে নিবো না।তাই ভালোই ভালোই বলছি চল এখান থেকে।একটা বাপ মা ছাড়া মেয়ে।মা যেখানে সেখানে নষ্টামি করে বেরাচ্ছে আর এখন মেয়ে আমার ছেলের মাথা টা চিবিয়ে খাচ্ছে।আমি কিছুতেই এই বিয়ে হতে দেবো না।

“বিয়ে অলরেডি হয়ে গেছে। অনেক হয়েছে আদিবা।এবার চুপ করো।ওর বাবা মায়ের ঘটনায় এই মেয়েটার কোনো হাত নেই।ওনারা যা করেছে তা নিজেদের ইচ্ছাতেই।সেখানে ওর কোনো দোষ নেই।আর তাছাড়া মার্জিয়া খুব ভালো মেয়ে।সব চেয়ে বড় কথা আহিল মার্জিয়া দুজন দুজনকে ভালোবাসে এখানে আমাদের বাধা দেওয়ার কোনো মানে হয় না।আজ তুমি যেটা করেছো সেটা অন্যায় করেছো।

“ও তার মানে তুমিও সবটা জানতে।এসব কিছু তোমাদের আগে থেকেই প্ল্যান করা ছিলো তাই না।

” হ্যাঁ ছিলো।কি করতাম বলো তুমি যে পাপ টা করতে যাচ্ছিলে সেটার মাশুল তো তোমাকে দিতেই হতো।আর যেহেতু তুমি আমার স্ত্রী তাই আমি এই মাশুল দিলাম।এবার নিজের ভাইজিকে নিয়ে বাসায় যাও।আমি ওদের নিয়ে আসছি।বধু বরণের আয়োজন করো।আর এটাই হবে তোমাদের শাস্তি।
জহির ভাই আমার স্ত্রীর হয়ে আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি।এসব কিছু ভুলে আমরা আমাদের সম্পর্ক নষ্ট করতে চাই না।আমার কাছে আপনারাই ওর বাবা মা এর বাইরে কিচ্ছু জানার দরকার নেই আমাদের।আমি ওকে আমার মেয়ের মতো করে রাখবো।

“ছিঃ ছিঃ এভাবে বলবেন না।আপনি যে বিয়েটা মেনে নিচ্ছেন এতেই আমরা খুশি।

এতো কিছু হয়ে গেছে মার্জিয়া একটা কথাও বলেনি।সে যেটা চাইছিলো সেটাই হয়েছে তবুও তার মুখে কোনো হাসি নেই।চোখে পানিরা ভীর করেছে যেন এক্ষুনি টুপ টুপ করে ঝোরে পরবে।আহিলের দিকে তাকালে আহিল ইশারায় কাদতে বারন করে।

সব নিয়ম কানুন সেরে আহিলের বাবা আগেই চলে গেলেন সাথে আইরাকেও নিয়ে গেলেন।ওদের বাড়িতে একটা নিয়ম আছে নতুন বউকে মিষ্টি খাইয়ে বরন করে ঘরে তুলতে হয়।আর সেটা করে ছেলের মায়েরা।কিন্তু আদিবা বেগমকে অনেক বুঝিয়েও কাজ হয়নি।আহাদ রহমান নিজেই বরণ করতে এলেন।

” একি বাবা তুমি কেন।মা আসবে না?

“তুই তো জানিস তোর মা কেমন। অনেক বুঝিয়েছি আসবে না।তোদের মুখ দেখবে না বলেছে।তাতে কি হয়েছে আমি আছি আইরা আছে আজ না হয় একটু নিয়ম ভাঙলাম।বোন ও মায়ের মতো হয় আজ আইরাই তোদের বরণ করে নিবে।

৬.
” তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে ফুপি আহিলের সাথে আমার বিয়ে দিবে।আমি আহিলকে সেই ছোট বেলা থেকে ভালোবাসি।আর এই ভালোবাসা তোমার জন্যই ছিলো।তুমি যদি আমাকে স্বপ্ন না দেখাতে তাহলে আমি আহিলকে নিয়ে এই স্বপ্ন দেখতাম না।এখন আমার কি হবে ফুপি।

“আমি কি জানতাম আমার ছেলে আমার সাথেই এভাবে বেঈমানী করবে?তুই চিন্তা করিস না মিমি আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে। এটার জন্য হয়তো আহিল এখন মার্জিয়াকে ছেড়ে দিবে না কিন্তু ওদের বাসর আটকে যাবে। মানে হবে না।

” কিসের প্ল্যান?

“বলছি তুই শুধু আমার কথা মতো কাজ কর বাকিটা আমি দেখে নিচ্ছি।
ঘুম থেকে উঠার পর মার্জিয়ার কিছু খাওয়া হয়নি তারওপর যে একটা অবস্থা হলো সবকিছু মিলিয়ে খুব ক্লান্ত মার্জিয়া।তাই আহিল মার্জিয়াকে রুমে বসিয়ে নিজেই গেলো খাবার আনতে।আইরা সব কিছু ঘুছিয়ে দিলো রুমের। মার্জিয়াকেও পরনের বেনারশী পালটে একটা সুন্দর সুতি শাড়ি পরিয়ে দিলো।মেয়েটা বেশ ঘরোওয়ানা।কাজেও যথেষ্ট মার্জিয়ার থেকে ভালো।লোকের ভাষায় রূপবতী না হলেও গুণবতী। কিন্তু আইরা দেখতে অতোটাও খারাপ নয় শুধু গায়ের রঙ টাই চাপা।লোকের কথায় যদিও পাত্তা দেয় না আইরা কিন্তু নিজের মা আর বোনের থেকে যখন নিজের গায়ের রঙ নিয়ে কটু কথা শুনে তখন খুব কষ্ট পায়।

” ভাবি তুমি বসো ভাইয়া এখনি খাবার নিয়ে আসবে।আমি একটু দেখি মা কি করছে।

“তুমি খুব ভালো আইরা।কিন্তু এটা তো ঠিক না ভাবি কেন বলছো আপুই তো ঠিক ছিলো।

” তা বললে কি হবে?ভাইয়া শুনলে আমাকে বলবে ‘এই বলদি আমার বউকে কোন দিক দিয়ে তোর আপু মনে হচ্ছে। দেখছিস না জলজ্যান্ত একটা বিবাহিত মেয়ে।ভাবি বলবি’। তুমিই বলো এটা ভালো লাগবে তোমার কাছে?

“তুই আপুই বা কেন বলবি শুনি।ও এখন আমার বউ অবশ্যই ভাবি বলবি।

“আপনি এতো ঝগড়া কেন করেন?

” ও এখন আমার চেয়ে ননদ বেশি বড় হলো বুঝি?

“উফফ ভাইয়া থামো।আমি যাচ্ছি তোমরা খেয়ে একটু বিশ্রাম নাও।

আইরা বের হতেই যাচ্ছিল এমন সময় আদিবা বেগমের চিৎকার এ থেমে গেলো।

” কে চিৎকার করলো?

“মনে হচ্ছে মা। তোমরা থাকো আমি দেখে আসছি।

” সেকি চলুন আমরাও দেখি।কিছু উল্টো পালটা করে ফেললো না তো আবার!

“ঠিক আছে চলো তো।

” কে কোথায় আছো তারাতাড়ি এসো।মিমি বিষ খেয়েছে।মেয়েটা বোধহয় মরেই গেলো।এবার আমি আমার ভাইয়ের কাছে কি জবাব দিবো।আহিল তারাতাড়ি আয় দেখ মিমি কি করেছে।

একপ্রকার হন্তদন্ত হয়েই সবাই গেস্ট রুমে প্রবেশ করে। মিমির মুখ দিয়ে ফ্যানা উঠে গেছে।উপস্থিত সবাই একটু ঘাবড়ে যায়।দ্রুত এগিয়ে এসে একেকজন হাত পায়ের পাতা ডলতে থাকে।এদিকে আদিবা বেগমের কান্নার বেগ বাড়তেই থাকে।আহিলের এবার খারাপ লাগে একটু।আহাদ রহমান এম্বুলেন্স এ খবর দিতে যাবে ঠিক ওই মুহুর্তে আহিল থামিয়ে দেয়।

“কি হলো আহিল থামতে বললি যে।আরে মেয়েটা মরে যাবে তো।

” এটা কি রকম ফাজলামো আহিল।আমার আদরের ভাইজি মরে যাচ্ছে আর তুই এম্বুলেন্স ডাকতে দিচ্ছিস না।

“মা এম্বুলেন্স এর দরকার নেই সেটা তুমিও ভালো করেই জানো।

” মানে কি সব বলছিস।

“আহিল এবার কিন্তু আমার রাগ হচ্ছে।কি বলছিস তুই এসব?

” বাবা আমার কথা তোমার বিশ্বাস হচ্চে না তো।দাঁড়াও এক্ষুনি দেখাচ্ছি।তারপর সব বুঝতে পারবে।

এরপর আহিল মিমির মাথার সাইডে গিয়ে দাঁড়িয়ে জোরে একটা চর বসায় মিমির গালে।এতে প্রচন্ড ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠে বসে মিমি।উপস্থিত সবাই তাজ্জব বনে যায়।বিশেষ করে আদিবা বেগমের মুখটা চুপসে যায়।এবার আহাদ রহমান বেশ ক্ষিপ্ত হয় মিমির কাজে।

“এটা কি হচ্ছে আমাকে কেউ বলবে?কি ধরনের তামাশা এগুলো?সকাল থেকে তোমরা ফুপু ভাইজি কি শুরু করেছো আদিবা জবাব চাই আমার।আহিল যদি না বুঝতো তাহলে এখানে খুব খারাপ কিছু হতে যাচ্ছিলো।

” ভাইয়া তুমি বুঝলে কি করে যে এসব অভিনয়?

“কারণ যারা বিষ পান করে আর যার হোক এমন করুন অবস্থায় তখন তার শরীরের অনেকটা ভার ছেড়ে দেয়। শক্ত করে কিছু আকরে ধরার মতো শক্তি থাকে না।কিন্তু মিমি এটা করেছে। ও যেই শিশি থেকে বিষ আই মিন আমি যদি ভুল না হয়ে তাহলে ওটা নাপা ওষুধের শিশি ওটা খুব শক্ত করে আকড়ে ধরে ছিলো।তার মানে এটা স্পষ্ট যে ও কিছুই খায় নি।আমার তো শুধু সন্দেহ হয়েছিলো কিন্তু সত্যি হবে এটা ভাবিনি।আর তাছাড়া ও যেমন মেয়ে আ*ত্ন*হ*ত্যা করার সাহস ওর নেই।
আজ তো শুধু একটা থাপ্পড় মেরেছি আর একদিন যদি ওকে এখানে আমি দেখি তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে মা।একে দ্রুত বিদায় করো। তোমার আমাদের ওপরে রাগ সেটা আমাদের সাথে মেটানোর চেষ্টা করো বাইরের কেউ সেটা ঠিক করতে পারবে না।

” সত্যি আদিবা তোমাকে না আমার কিছু বলার নেই।আমিও এখন চাই ও যেন এই বাড়িতে আর না থাকে।কাল সকানেই ওকে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে।আমি ওর প্লেনের টিকিট কেটে দিচ্ছি।চল তো আইরা।

সবাই যাইয়ার পর আদিবা বেগম ভাইজির মুখে আদর করতে থাকে।

“কাঁদিস না। আমি বুঝতে পারিনি এভাবে আহিল মারবে তোকে।তুই বা কেমন ওটা এতো শক্ত করে ধরে রাখার কি ছিলো।সিরিয়াস পেশেন্ট সিরিয়াস ভাবে থাকবি না?

” আমি কি আগে বিষ খেয়েছি যে সব জানবো?আমাকে তো এবার চলে যেতেই হবে ফুপি। কি করবো।

“কিছু করার নেই রে।এমন পরিস্থিতিতে তোর না গিয়েও উপায় নেই।

চলবে