#মেঘ_পিওন
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী
#পর্ব_৫
৭.
সময় কারো জন্য থেমে থাকে না।সে তার নিজের ধর্ম অনুযায়ী অতিবাহিত হয়।আহিল মার্জিয়ার বিয়ের এক মাস হয়ে গেছে।এই এক মাসে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে।ছেলের সাথে মায়ের মান অভিমান। কারো কারো খোলশ খুলেছে।কেউ বা নানান কাজে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছে।মার্জিয়া তখন ছাদে গাছে পানি দিচ্ছিল। বিয়ের পর থেকে এই কাজ তার ওপরই ছেড়ে দিয়েছে আইরা আহিল।তারা এখন ইস্তফা করেছে এই দ্বায়িত্ব থেকে।
ছাদে বসে আনমনে পেছনে ফেলে আসা কথা গুলো ভাবছিলো মার্জিয়া।এইতো সেদিনও আহিল ব্যালকনি দিয়ে চিঠি মুরে পকঠাতো ইটের টুকরোর।সাহায্যে। আর আজ সে ওই লোকটার বউ।এর মধ্যে একমাস চলেও গিয়েছে।আহিলের কতো পাগলি বিয়ের।এসব মনে করে একা একাই হেসে উঠলো মার্জিয়া।পাশে একজন মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে তা।সে বুঝতেও পারেনি।
“ইশ তোমার হাসি তীরের মতো বুকে বিধে বউ।
” আপনি কখন এলেন।আমাকে।ডাকেননি কেন?
“ডাকলে কি আর মুক্তোর মতো হাসি দেখতে পেতাম।
তারপর পেছন থেকে কিছু একটা বের করে দিলো আহিল।এই জন্যই এক হাত পেছনে লুকানো ছিলো এখন বুঝতে পারলো মার্জিয়া।
” কি এটা?
“খুলেই দেখো।যে গরম পরেছে তাতে তোমার গরম মাথা ঠান্ডা করে দিবে নিমিষেই।
” তার মানে আইসক্রিম। তা হঠাৎ এসব ঘুষ টুস কেন?এমনিতে তো বকতে শুরু করেন এসব খেতে দেখলে।
“একটা নিউজ আছে তোমার জন্য হয়তো ভালো কিন্তু আমার জন্য খুবই খারাপ বুঝলে বউ।
” কি নিউজ?
“কাল আমাকে দেশের বাইরে যেতে হবে অফিসের কাজে।খুব আর্জেন্ট বস আমাকেই এই কাজের দ্বায়িত্ব দিয়েছেন।
” ওহ।ক’দিনের জন্য?
“মাত্র দু’দিন।
মার্জিয়ার বেশ মন খারাপ হলো।এই বাড়িতে আপন মানুষ এই একজনই।যদিও শশুড় ননদ সবাই মার্জিয়াকে ভালোবাসে।তবুও স্বামী ছাড়া ভরসার যায়গা অন্য কোথাও মেলে না।তার সাথে মন চাইলে ঝগড়া করা যায় মান অভিমান করা যায় বকা যায় রাগ করা যায়।আহিল বুঝলো মার্জিয়া মন খারাপ হয়েছে।তবুও কিছু বললো না।চাইলেই আহিল বসকে না করতে পারবে না।যেহেতু তার অধিনে কাজ করে সেহেতু সে যেখানে যেতে বলবে সেখানেই যেতে হবে।তাছাড়া বলা বাহুল্য কাজে বেশ ভালো এবং দুর্দান্ত হওয়ায় তাকে প্রায় সব ধরনের কাজেই যুক্ত করা হয়।এবং সবটা একাই করে সেই সাথে কোনো জটিল কাজকেও খুব সহজ ভাবে সমাধান করতে আহিলের জুরি মেলা ভাড়।তাই তো মালিকের যে কোনো কাজেই আহিলকে ডাকা হয়।যাওয়ার সময় আহিল মার্জিয়াকে ভালো করে বুঝিয়ে যায় যেন ঘর থেকে প্রয়োজন ছাড়া না বের হয়।যেহেতু মার্জিয়া এখন আর চাকরিটাও করে না তার ভার্সিটিও বন্ধ তাই তেমন কোনো কাজ ও নেই বললেই চলে।আহিলের কড়া নির্দেশ মামা মামিকে যতটা দেখার সেটা আহিলই দেখবে মার্জিয়াকে তার জন্য বাইরে কাজ করতে হবে না।কিন্তু মার্জিয়া তা মানতে নারাজ। তবুও খুব কষ্টেই আহিল তাকে ম্যানেজ করেছে।আহিল যাওয়ার পর মার্জিয়া একা হয়ে যায়।আইরার সামনে পরিক্ষা থাকায় খুব একটা সময় মার্জিয়ার সাথে আড্ডা দিতে পারে না।
আজ অফিসে হিসেবে গরমিল পেয়ে একটু ঝামেলা করেছে আহাদ রহমান। বেশ ক্লান্ত থাকায় সরাসরি আর রুমে গেলো না ড্রয়িং রুমেই বসে পড়লো।মার্জিয়া তখন কিচেনেই সবার জন্য কিছু স্ন্যাকস বানাচ্ছিলো।ঘরে বসে থেকে থেকে খুব বোরিং লাগছিলো তাই কিচেনে আসা।আহাদ রহমানকে দেখে মার্জিয়ার খুব খারাপ লাগলো।চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে খুব ক্লান্ত তিনি।তাই হাতের কাজ রেখে এক গ্লাস কাঁচা আমের শরবত করে নিয়ে গেলো।
“বাবা এটা খেয়ে নিন ভালো লাগবে।
” এমা তুমি কেন আবার কষ্ট করতে গেলে। বুয়া আসেনি?
“এসেছে বাবা।অন্য কাজ করছে। কেন আমি এনেছি বলে খাওয়া যাবে না?
” আমি কি সেটা বলেছি পাগলি।আইরা ছাড়া কেউ এসব করে না তো তাই বলছি।তা সে কোথায়?
“রুমেই আছে পড়ছে হয়তো।আপনাকে খুব ক্লান্ত লাগছে বাবা অফিসে কি কিছু হয়েছে?
” তেমন কিছু না মা।শরবত টা বেশ মজা হয়েছে এবার থেকে তাহলে তুমিই এটা করে দিও।
“সত্যি ভালো হয়েছে!আরেক গ্লাস দিবো?
” আর লাগবে না।তোমার শাশুড়ী তো কখনোই এই শরবত টা করে না।আশেপাশে নেই তো আবার?
“না নেই।আপনি একটু বসুন আমি আরেক গ্লাস নিয়ে আসছি।তারপর ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি সবার জন্য স্ন্যাকস বানিয়েছি সাথে গরম গরম চা।
” আরে বাহ এতো আয়োজন। ঠিক আছে শরবত আনতে হবে না। আমি বরং ফ্রেশ হয়ে আসি আইরাকেও ডেকে নাও সবাই মিলেই মজা করে তোমার বানানো স্ন্যাকস খাবো।
“ঠিক আছে বাবা তাই হবে।
বিকেলে নাস্তা হিসেবে সবাই মার্জিয়ার বানানো স্ন্যাকসই খেলো শুধু আদিবা বেগম ছাড়া। তিনি মার্জিয়ার হাতের খাবার ছুয়েও দেখেন না তাই মার্জিয়াও খুব একটা রান্না করে না। যাতে আদিবা বেগম অন্তত খাবার টা ঠিক মতো খান। তবে বাড়ির অন্যদের জন্য টুকটাক খাবার বানায় শুধু।সামনে তার ও পরিক্ষা আপাতত পড়াতেই মন দিতে চায় মার্জিয়া।মার্জিয়ার বিশ্বাস একদিন না একদিন ঠিক আদিবা বেগম ওকে মেনে নিবেই।
রাতের ডিনারের পর আইরা এলো আহিলের রুমে। মার্জিয়া তখন সাদাত সোহাইনের লেখা ‘ ছদ্মবেশ ‘বইটি পড়ছিলো।একাডেমির বাইরেও টুকটাক বই পড়তে ভালোবাসে মার্জিয়া।
” ভাবি আসবো?
“আরে এসো। এখানে আসতেও পারমিশন লাগে নাকি।
” আমাদের বাড়িতে কেউ কারো ঘরে পারমিশন ছাড়া যায় না ভাবি।
“এখন থেকে এই রুমে তুমি আসবে।তা পড়া শেষ হলো?
” অনেক তো পড়লাম এখন আর ভালো লাগছে না।আজ আর পড়বো না তোমার সাথে গল্প করবো।
“ভালোই হবে।তোমার ভাই যদি জানে পড়া ছেড়ে দুজনেই গল্প জুরেছি তাহলে কিন্তু খুব বকবে।
” আরে ছাড়ো তো।ভাইয়া কি বিদেশে বসে আমাদের দেখছে নাকি।আর দেখলেও আমি কি ভয় পাই নাকি হুহ।
আজ আহিলের ফেরার কথা।সেই মতো মার্জিয়া আহিলের কিছু পছন্দের খাবার বানালো নিজ হাতে।
যথারীতি আহিল ও চলে এলো।যদিও ওর আরো একদিন পরে আসার কথা ছিলো কিন্তু একদিন আগেই কাজ শেষ হওয়ায় চলে এসেছে।এর পেছনেও একটা কারণ আছে।
রাত তখন ১১ টা ছুই ছুই।আহিল আর আহাদ রহমান নিজেদের মধ্যে গোপনে কিছু কথা ছাড়লো।এটাও ঠিক ছিলো কিন্তু রান্না ঘরে কি করছে দুজন সেটা বোধগম্য হলো না মার্জিয়ার।আহিল যখন রুমে যাচ্ছিলো না তখন বাইরে আসে দেখার জন্য যে কি করছে।সেই যে ফোনে কাকে কি যেন নির্দেশ দিয়ে বের হলো আর ঘরে যায়নি। আর এখন বাবা ছেলে রান্না ঘরে বিষয় টা কেমন ঘটকা লাগলো মার্জিয়ার কাছে।
“কি ব্যাপার, আপনারা এতো রাতে এখানে কি করছেন বাবা?খিদে পেয়েছে কিছু বানিয়ে দিবো?
” আরে তার কোনো দরকার নেই মা।তুমি ঘরে যাও আমরা ম্যানেজ করে নিবো সব।
“তা কি করে হয়। ছেলে মানুষ রান্নাঘরে কেন কাজ করবেন।আপনারা গিয়ে সোফা রুমে বসুন আমি করে দিচ্ছি।
” দেখো মার্জু আমাদের তুমি এভাবে জোর করতে পারো না।সময় নেই ডিস্টার্ব করো না তো।
“আমি আপনাদের ডিস্টার্ব করছি! আমি!বাবা আপনি দেখলেন আপনার ছেলে কি বললো?
” আরে আরে কি হচ্ছে কি আহিল উফফ।আসলে মা কাল আইরার জন্মদিন। তাই আমরা ওর জন্য কেক আর পায়েস বানাচ্ছিলাম।ওর মা তো নিজে হাতে পায়েস করে দেয় না।আমি আর আহিলই দেই সেটাই করছিলাম।লুকিয়ে করছিলাম কারণ ওকে সারপ্রাইজ দিবো ভেবেছিলাম তাই।কিন্তু পায়েসে লবন পরে গেছে বেশি তাই একটু খারাপ লাগছে।আবার নতুন করে বানাতে হবে কেক টাও প্রায় হয়ে এসেছে।
“এতো বড় একটা খবর আর আমিই জানি না।এটার ব্যবস্থা আমি পরে করবো।এবার সরুন আপনারা আমি পায়েস করে দিচ্ছি।
” সত্যিই দিবে খুব ভালো হবে।আহিলই পায়েস বানায় কিন্তু আজ যে ওর কি হয়েছে কে জানে। হতচ্ছাড়াটা হাফ চামচের যায়গায় দু’চামচ লবন দিয়েছে।
“এখানে আমার কোনো দোষ নেই বাবা। লবনের যায়গায় চিনি আর চিনির যায়গায় লবণ আমি কি করে বুঝবো?
ওদের বাবা ছেলের ঝগড়ার মাঝেই ইতিমধ্যে মার্জিয়া প্যানে পায়েস বসিয়ে দিয়েছেছে।সময় কম তাই অল্পই বানানোর চেষ্টা করছে।
” বাহঃ দারুণ ঘ্রাণ বেরিয়েছে।আর কয় মিনিট সময় আছে আহিল?
” আর মাত্র ২০ মিনিট বাবা তারপর ১২ টা বেজে যাবে।ও এদিকটায় থাকুক আমরা বরং কেকটা রেডি করি চলো।
“হ্যাঁ সেই ভালো চল তাহলে।কিছু লাগলে আমাদের ডেকো মা।আহিল চল চল।
৮.
প্রচন্ড পানি পিপাসা পেলো আইরার। কিন্তু ঘরে পানি নেই।কিন্তু তার মনে আছে শোবার আগে পানি এনেই শুয়েছিল তাহলে পানি গেলো কোথায়।এমনকি যেই বোতলে পানি রেখেছিলো সেই বোতলটাই গায়েব।
” আশ্চর্য ভুতে পেলো নাকি আমাকে?পানি টা তো এখানেই রবখেছিলাম।ধুর এখন আবার সেই নিচে নামতে হবে।
খাট থেকে নামতে গিয়েও।এক প্রকার লাফিয়ে আবার আগের স্থানে বসে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে।মুখ ততটা স্পষ্ট নয়।তবে দেখে মনে হচ্ছে দুই কি তিনজন মানুষ। হুট করে ঘরের লাইট জ্বলে উঠলো। আর একসাথে বলে উঠলো ‘হ্যাপি বার্থডে আরু হ্যাপি বার্থডে টু ইউ’।এতোক্ষণে আইরার বন্ধ করে রাখা শ্বাস ফুস করে ছেড়ে দিলো।এভাবেও কেউ বার্থডে সারপ্রাইজ দেয়!কি আশ্চর্য আরেকটু হলে তো হার্ট এট্যাকে মরে যেতাম আমি।তখনও আহিল হ্যাপি বার্থডে উইশ করেই যাচ্ছে।
“আরে আরে থামো তোমরা যেভাবে ওকে উইশ করছো ও আরেকটু হলে দম বন্ধ করে মরেই যাবে।
কথাটা বলতে বলতে আইরার দিকে এগিয়ে গেলো মার্জিয়া।যা ভেবেছিলো তাই মেয়েটা প্রচন্ড ভয় পেয়েছে।এখন ও চোখ বড়ো বড়ো করে সকলের দিকে আশ্চর্য হয়ে থাকিয়ে আছে আইরা।মার্জিয়া তারাতাড়ি আইরার কাছে গিয়ে ঝাকানি দিলে হুশ ফেরে তার।
” তোমরা আমায় মেরে ফেলতে এই প্ল্যান করেছো বাবা!আরেকটু হলে তো আমি মরেই যেতাম।এভাবে কেউ উইশ করে! নিশ্চয়ই ওই খাটাশের বুদ্ধি এটা।
“দেখ বুড়ি বেশি কথা বলবি না তাহলে এই যে যা যা এনেছি সব কিছু নিয়ে ফেরত চলে যাবো।নে কেকটা কাট।আমার খুব খিদে পেয়েছে।
” আমার জন্য এনে নিজেই খিদে খিদে করছো খুব খারাপ বিষয় এটা।
“হয়েছে দু’টোতে ঝগড়া বন্ধ কর।এবার কেকটা কাট না মা।
আইরা আর কথা বাড়ালো না।কেক কেটে প্রথমে বাবা আর ভাইকে খাওয়ালো তারপর মার্জিয়া ও নিজেও খেলো।তারপর আহাদ রহমান নিজ হাতে পায়েস খাইয়ে দিলো আইরাকে।
” মা আসবে না বাবা?
“তুই তো জানিস তোর মা কেমন।এসব নিয়ে ওর কোনো মাথা ব্যাথাই নেই।কিন্তু তুই একদম মন খারাপ করবি না।মা আসেনি তো কি হয়েছে আমরা তো আছি।আমরা তোকে খুব ভালোবাসি আমার ছোট্ট প্রিন্সেস।
” এসব নিয়ে নয় বাবা শুধু আমার বেলাতেই মা এসব পছন্দ করে না।
“মন খারাপ করো না আইরা আজ নেই কিন্তু দেখবে আসছে বছরে থাকবে।তাই এসব নিয়ে একদম মন খারাপ না।অনেক রাত হয়েছে এবার সবাই ঘুমিয়ে পরুন।ওর সামনে পরিক্ষা ঘুমে ডিস্টার্ব করা ঠিক হবে না।
তারপর সবাই যার যার রুমে ফিরে যায়।সকালে আবার অবেক কাজ আছে। কাল একবার আহিলের অফিসেও যেতে হবে।যদিও।তার ছুটি কাল তবুও যেতেই হবে।
চলবে
#মেঘ_পিওন
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী
#পর্ব_৬
৯.
সকালে আইরার ঘুম ভাঙলো একটু দেরিতে।উঠেই বেশ বড়সড় একটা ঝটকা খেলো।ড্রয়িং রুমে এসেই নিজের কলেজের বন্ধুদের দেখে বেশ অবাকই হলো বইকি।সেই সাথে আরও অবাক হলো বাড়ির ভেতর রংবেরঙের মরিচ বাতি এবং ফুলের সজ্জিত ড্রয়িং রুম দেখে। ওর বন্ধুরা সেই কাজে ডেকোরেশন এর লোকজনদের হেল্প করছে আর কেউ কেউ রান্নার দিকটায় ইন্সট্রাকশন দিচ্ছে।এসব দেখে আইরা নিজের কৌতুহল সামলাতে না পেরে বাড়ির বাইরে পুরোটা ঘুরে দেখলো। রান্না আয়োজন বাড়ির পেছন দিকটায় বাগানে করা হয়েছে।
বন্ধুদের কাছে জানতে চাইলো ওরা কিভাবে জানলো আজকে তার বার্থডে। কারণ ওর বার্থডের বিষয় কখনো কাউকে কিছু বলেইনি এর আগে।ওরা জানালো আহাদ রহমানের কথা।তিনিই নাকি কাল সন্ধ্যায় সবাইকে কল করে আজকে সকাল সকাল আসার কথা বলে দিয়েছেন।আইরার মনে পড়লো বিকেলে বাবা অফিস থেকে এসে ওর ফোনটা চেয়েছিলো। তার মানে তখন ওর সব বন্ধুদের ফোন নম্বর নিয়েছে।
“বাবা এতোকিছুর কি প্রয়োজন ছিলো?
” ছিলো না বলছিস! যদিও এটা আমার প্ল্যান না।আহিলের প্ল্যান। ও তোকে সারপ্রাইজ দিতে চাইছিলো।
“তাই!কিন্তু ভাইয়া কোথায় দেখতে পাচ্ছি না তো?
” পাবে না ননদিনী। তোমার ভাইয়া যেই প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করে এলো সেটাই বুঝিয়ে দিতে গেছে।চলে আসবে তুমি এবার গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।কয়টা বাজে সেই খেয়াল আছে?
“এতো আলাদা করে রেডি হওয়ার কি আছে ভাবি।আমি রেডি হলেও যা না হলেও তাই।যেমন আছি তেমই থাকি না।
“একদম না।তোমার ভাইয়া তোমার জন্য ড্রেস এনেছে । পরবে না মানে?
“এসবের আবার কি দরকার ছিলো।
“উফফ তুমি বড্ড কথা বলো।বেশি কথা না বলে যাও তো ফ্রেশ হয়ে এসো।ড্রেস তোমার ড্রেসিং টেবিল এর পাশেই আছে।একটু পরে সবাই চলে আসবে যার জন্য আসবে সেই যদি রেডি না হয় তাহলে হবে?
“সবাই মানে আরো কেউ আসা বাকি আছে?
” হ্যাঁ। বাবা বললো তোমার নানু বাড়ির সবাই আসবে।গোমার ভাই তো বলছিলো মিমিকে যেন না আসতে বলা হয়।তারপর বাবা বুঝিয়েছে অনেক।শেষে রাজি হয়েছে।
“নানু বাড়ির সবাই! এতো কিছু হয়েছে আর আমি জানি না?
” সারপ্রাইজ যদি জেনেই যাও তাহলে সেটা সারপ্রাইজ থাকে নাকি।
“আচ্ছা নানু বাড়ির সবাই আসলে মাহিন ভাই ও আসবে নিশ্চয়ই। উফ কতদিন পর তাকে দেখতে পাবো।আগের চেয়ে সুন্দর হয়েছে নাকি তেমনই আছে।অবশ্য তাকে সবসময়ই ভালো লাগে।
এসব কথা আইরা নিজ মনে ভাবছিলো।
” আবার কোন ভাবনায় ডুবে গেলেন বলুনতো ননদিনী?
“কিছু না ভাবি।আমার খিদে পেয়েছে। আগে কিছু খেতে দাও তারপর রেডি হবো।অরিন আপু এসেছে?
” হ্যাঁ। মায়ের ঘরে আছে।
“ও এসেছে তবুও আমার সাথে দেখা করলো না।হবেই তো ও তো আমাকে মায়ের মতোই পছন্দ করে না।
” আচ্ছা ভাবি তোমার সাথে কথা বলেছে?
“হ্যাঁ।
যদিও এটা মিথ্যা কথা বললো মার্জিয়া।অরিন কথা তো বলেইনি উল্টো মার্জিয়াকে বেশ কটু কথাই বলেছে তবে এসব এখন কাউকেই বলতে চায় না সে।
সময় তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। অলরেডি সবাই চলে এসেছে।আইরার নানু বাড়ির সবাই চলে এসেছে।আদিবা বেগমের মতো আইরার নানুও কালো মানুষ পছন্দ করেন না।তাই তিনি আইরাকেও তেমন একটা পছন্দ করে না।তবে আইরার বড় মামি আইরাকে খুব আদর করে।তিনি এসেই আইরার সাথে গল্প জুরে দিলো।এতোক্ষণ আদিবা বেগম ও অরিন কেউই ঘর থেকে বাইরে আসেনি।নিজের বাবার বাড়ির সবাই আসার পর তাদের দেখা পাওয়া গেলো।
” বলছি ছুটকি তোর মাইয়ার যেই সুরত জন্মদিন আবার আয়োজন করতে হয় নাকি?
“কি করবো বলো মা।আমার ছেলেটাও গাধা আর তোমাদের জামাই। টাকা বেশি হয়েছে তো তাই।কতবার বলেছি একে বেশিদিন ঘরে রেখো না বিয়ে দিয়ে দাও।তবুও আমার কথা কেউ শুনছে না।সেই তো টেনেটুনে পাশ করে বের হবে শুধু শুধু টাকা নষ্ট। ও আমার লস্ট প্রজেক্ট ছাড়া কিছুই না।
” আমি পড়াশোনায় এতোটাও খারাপ নই মা।সবার সামনে নিজের মেয়েকে এভাবে নাই বা বললে।কোনোদিন তো আমার রেজাল্ট দেখোইনি তাহলে বুঝবে কি করে?
আইরার পরনে অফ হোয়াইটের একটা গাউন।আইরাকে খুব মানিয়েছে ড্রেসটাতে।আহিল এনেছিলো দেশের বাইরে থেকে আসার সময়।বাড়ির সকলের জন্যই টুকটাক অনেক কিছু এনেছে।অরিন তার পরনের ড্রেসের দিকেই তাকিয়ে আছে।কই তার ভাই তো তাকে এভাবে কখনো কিছু এনে দেয় না।মনে মনে হিংসার বহি প্রকাশ
“আচ্ছা তুই এই রঙের ড্রেশ পরেছিস কেন বলতো।পুরো বস্তির মেয়ে লাগছে।
নিজের বোনের মুখে এই কথা শুনে আইরার ছোট্ট কোমল হৃদয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হলো।চোখে পানি চিক চিক করছে।একবার অসহায় ভাবে মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে আরেক দফা মন ভাঙলো তার।তিনিও তার বড় মেয়ের কথায় তাল মেলাচ্ছে।
” আপনারা এসব কি বলছেন আপু!এতে ওর কতটা কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছেন।আপনি না ওর নিজের বোন?বড় বোনেরা তো মায়ের সমান হয় আর আপনি উল্টো নিজের ছোট বোনকে কষ্ট দিচ্ছেন?
“তুমি চুপ করো ছোটলোক কোথাকার।তা কোথায় তোমার সেই ছোটলোক মামা মামি।এতো দামি খাবারের আয়োজন করা হয়েছে এখন তারা খেতে আসেনি?
” দয়া করে আমার মামা মামিকে নিয়ে কোনো কথা আপনি বলবেন না।তারা গরিব হতে পারে আপনাদের মতো এতো নিচু মনমানসিকতা তাদের নেই।তাদের যেটা আছে বুক ভরা ভালোবাসা,আত্নসম্মান, স্নেহ ভালোবাসা যা আপনাদের মতো বড়লোকদের বিন্দু পরিমাণ নেই।
“অরিন আপু কি শুরু করেছো তোমরা।এই জন্যই তোমাদের এখানে আসতে ভালো লাগে না আমার।
” আমি কি করলাম মাহিন আশ্চর্য।
“ভাবি তো ঠিকি বলেছে।তাছাড়া দাদি আরুকে এসব ফালতু কথা বলার আগে আপনি নিজের কথা ভাবুন কোথায় দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছেন।এটা কিন্তু আপনার বাড়ি না।নিজের কুটনীতিতে কতিটা এগিয়ে আপনি।ভাবতে পারছেন এবার?নিজের মেয়েকেও আপনি নিজের মতো বানিয়ে ফেলেছেন।এসব বন্ধ করুন দয়া করে।
মাহিনের কথায় রহিমা বানু মুখটাকে চুপসে নিলেন।আর কাউকে ভয় না পেলেও মাহিনকে তিনি বেশ ভয়ই পান।তার কারণ মাহিন মুখের ওপর ফটাফট জবাব দিতে পারে।যেখানে সে বাবাকেই ছাড় দেয় না সেখানে উনাকে তো প্রশ্নই আসে না।তাই তিনি চুপ করে গেলেন।
“চুপ করো তোমরা।আমার ভুল হয়েছে মা।আমি আর কখনো এই ধরনের জামা পরবো না।আর এসব অনুষ্ঠানের ও কোনো প্রয়োজন নেই।আমি এক্ষুনি এসব খুলে ফেলবো।চাই না আমার কিছু।
” আইরা দাঁড়াও কোথায় যাচ্ছো আইরা!
আপনারা যা করলেন না তা একদম ঠিক করেন নি।এসবের কোনো মানেই ছিলো না।আর মা অরিন আপুর কথা না হয় বাদই দিলাম কিন্তু আপনি!আপনি না মা।মা হয়ে মেয়ের সাথে এমন একটা দিনে এই আচরণ কি করে করলেন আপনি?ছিঃ,আমি আহিলকে সব বলবো।
“ঠিক এই কারণেই আমি এই বাড়িতে আসতে চাই না মা।তুমি আর বাবা জোর করলে বলেই এসেছি।তোমাদের মেয়ে যে ঠিক কার আস্কারা পেয়ে এখানে ওসব করেছিলো এবার সেটাও বুঝতে পারছি।ছিঃ ফুপি।
এটা বলেই দেওয়ালে একটা ঘুষি মারলো মাহিন।ছেলের এই আচরণে কষ্ট পায় মনিরা বেগম নিজেও।ছেলে যে আইরাকে চোখে হারায় সেটা আর কেউ না জানলেও তিনি জানেন।একমাত্র আইরার জন্যই এখানে আসা তাদের।
১০.
এতো সময় আহাদ রহমান রান্নার কাছে ছিলো বলে ভেতরের খবর জানতেন না।মাহিনকে রেগে বাড়ি থেকে বের হতে দেখে তিনি বাড়ির ভেতরে এসে সবটা জানতে পারেন।এদিকে আহিল অফিসের একটা জরুরী কাজে ফেসে গেছে বিধায় এখন ও কিছুই জানে না।তার আসতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।
” মা আরু দরজা খোল।দেখ কে কি বললো তাতে তুই কেন কষ্ট পাচ্ছিস?আমি, তোর ভাইয়া, ভাবি তোর মামি আমরা সবাই আছি তো।দুটো পোকা মাকড়সার জন্য তুই কেন ঘর থেকে বের হবি না বলতো।
“বাবা আমার ভালো লাগছে না।তোমরা প্লিজ চলে যাও।আমাকে একা থাকতে দাও।সরি আমার জন্য তোমাদের অনেক খরচা হলো।
অনেক বুঝিয়েও কনো কাজ হলো না।আইরা এমনিতে খুব শান্তশিষ্ট মেয়ে।তবে রেগে গেলে তার রাগ ভাঙানো এতোটা সহজ কথা না।আহিল সবে মাত্র বাসায় এসে সবাইকে নিরস মুখে বসে থাকতে দেখে জানতে চাইলো কি হয়েছে।আইরার বন্ধুরা সব গরগর করে বলে দিলো।সবটা শুনে আহিলের মা বোনের প্রতি খুব রাগ হলো।তাদের ব্যাবহারের মাত্রা দিন দিন যেন ছাড়িয়ে যাচ্ছে।কত সখ করে আইরার জন্য এই আয়োজন করেছিলো যাতে মেয়েটা একটু হাসে।মায়ের বাজে ব্যবহার এ এমনিতেই সব সময় মন মরা হয়ে থাকে মেয়েটা।
“সবাই ঘরে যাও আর মা তোমাকে আমার কিছু বলার নেই।একটা ছোট্ট মেয়ে তোমারই তো মেয়ে তাকে এভাবে বলতে তোমার একটুও খারাপ লাগলো না?নিজে তো বলেইছো সঙ্গে আরও একজন কে দলে টেনে নিয়েছো।
অরিন বেশ বুঝতে পারে কথাটা তাকেই বলা হয়েছে।তাই ভাইয়ের কথায় সে প্রতিবাদ করে।
” ভাই তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো।আমি নিজে থেকে কিন্তু আসিনি।তুমিই আমাদের ইনভাইট করেছো বলেই এসেছি।
” খুব প্রতিবাদি হয়েছিস তাই না।এই প্রতিবাদ টা নিজের বোনের জন্য করলে বেশি ভালো হতো।আর কোনো কথা শুনতে চাই না।যে যার ঘরে যাও।খেয়ে নিয়েছো নিশ্চয়ই। এবার যাও আরামে ঘুমিয়ে পর সবাই।
রাত ৯ টা বেজে ২০ মিনিট।আইরার ঘরের দরজা কেউ খুলতে পারেনি আইরাকে দিয়ে।তাই এক প্রকার পরাজিত হয়েই আহাদ রহমান ও আহিল নিজেদের ঘরে চলে আসে।আহাদ রহমান ঘরে গিয়ে দেখেন আদিবা বেগম বেশ আরাম করে ঘুমিয়ে আছে।
“তোমাকে খুব অচেনা লাগে আদিবা।এমন তো তুমি ছিলে না।আমার মেয়েটাকে তুমি এভাবে কষ্ট কেন দাও বলতে পারবে?তোমার মন কি ছেলে মেয়ের জন্য একটুও কাঁদে না?কাকে কি বলছি সে তো দিব্যি ঘুমিয়ে আছে।
আহিল মার্জিয়ার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে।মার্জিয়া আহিলের মাথা টিপে দিচ্ছে।মাথাটা বেশ ধরেছে।সে বাড়িতে থাকলে তার ছোট্ট আদরের বোনকে এসব বলার সাহস কেউ পেতো না।
” আচ্ছা আপনার এতো দেরি হলো কেন ফিরতে?জানেন আমি আজ একটা অন্যায় করেছি।
“কি করেছো?
” ওই আসলে মা, আপু যখন আইরাকে ওসব বলছিলো আমি নিজেকে থামাতে পারিনি তাই একটু প্রতিবাদ করেছি।
“ভালো করেছো।এবার একটু ভালো করে হাত বুলিয়ে দাও একটু ঘুমোতে চাই।
“সেকি কিছুই তো খেলেন না।বাকিদের তো বুঝিয়ে সুজিয়ে খাইয়েছি কিছুটা।আপনি আর বাবা এখন ও খাননি।
” তুমি খেয়েছো?
“আপনি না খেলে আমি কি করে খাবো।
” তাহলে আর খেতে হবে না।এবার আমাকে ঘুমোতে দাও তো।
মার্জিয়া বুঝলো আহিল এ বিষয়ে আর কথা বলতে চাইছে না।তাই সেও চুপ করে গেলো।
বেশ লম্বা একটা শাওয়ার নিয়েছে আইরা।ভাইয়ের দেওয়া ড্রেসটা বিছানার এক কোনে পরে আছে।কোমড় অব্দি চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে বেডের পাশের সোফায় বসলো আর তখন কার ঘটনা টা ভেসে উঠলো চোখের সামনে।
“মামিওরা কি আছেন নাকি চলে গেছে সেটাই তো বুঝতে পারছি না।আর মাহিন ভাই সেও কি চলে গেছে?আমিও না সে তো আমার জন্য আসেনি। আমার কি হলো না হলো তাতে কি তার কিচ্ছু যায় আসে নাকি।
” একদম ঠিক বলেছিস কিচ্ছু যায় আসে না।
“কে!আপনি এখানে কি করে এলেন!
” আরে আস্তে কথা বল। এমন ভাবে কথা বলছিস যেন চোর ঢুকেছে।
“আস্তে কথা বলবো মানে!একেতো আপনি আমার পারমিশন ছাড়াই আমার রুমে এসেছেন। তাও এতো রাতে চোরের মতো আর আমাকে বলছেন আস্তে কথা বলতে!
আইরা জোরে কথা বলায় এবার মাহিন পরলো বিপাকে। এই মুহুর্তে না থামালে কেলেংকারী হয়ে যাবে।তারচেয়ে বেশি হবে আইরার বদনাম যেটা মাহিন একেবারেই চাইছে না।তাই উপায় না পেয়ে আইরার মুখ চেপে ধরলো।
“আরে আমার মা একটু আস্তে কথা বলনা আমি কি তোকে মেরেছি নাকি কিডন্যাপ করতে এসেছি আশ্চর্য।
“…….
” কিরে কথা বলছিস না কেন।বোবা হয়ে গেলি নাকি মাথা মোটা।
এবার আইরার প্রচন্ড রাগ হলো একেতো লোকটা তার মুখ চেপে আছে।তার ওপর কথাও বলতে বলছে বাহ মাহিন বাহ।মাহিনের হাতে জোরে একটা চিমটি কাটলে মাহিন সামান্য আর্তনাদ করে ওঠে। আইরার দিকে চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে বুঝতে পারে কেন আইরা তাকে চিমটি কাটলো।
“সরি সরি।আচ্ছা ছেড়ে দিচ্ছি জোরে কথা বলবি না তো?
আইরা ইশারায় বুঝিয়ে দিলো সে জোরে কথা বলবে না।মাহিন মুখ থেকে হাত সরাতেই জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে আইরা।
” এভাবে কেউ।
“আস্তে বল গাধা।
এবার আইরা বেশ ফিসফিস করে বললো এভাবে কেউ মুখ ধরে।দম আটকে মরে যেতাম তো।
“এতোটাও নাটক করে কথা বলতে বলিনি।নরমাল ভাবে কথা বল বেয়াদব।
” দেখুন মাহিন ভাই আপনি এখানে কেন এসেছেন আমি জানি না।তবে এবার আপনি বের হন আমি ঘুমাবো।
“তুই বললেই যেতে হবে আমায়?
” অবশ্যই যেতে হবে কারণ এটা আমার ঘর।
“যেই কাজে এসেছি সেটা না করেই চলে যেতে তো আমি আসিনি।
” আপনার আবার এখানে কি কাজ থাকতে পারে আশ্চর্য!
“সেটা যদি বুঝতেই পারতি তাহলে ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে থাকতি না।একবার আমার কথা ভাবলি না আরু।এতো দূরে থেকে কেন এসেছি আমি?
” মানে?
“মানে।মানে বার্থডে উপলক্ষে এসেছি আর কেক কাটা হবে সেটা খাবো না তা কি করে হবে?চল কেক কাটবি।
” মানে কি। কোনো কেক কাটবো না আমি।আপনি চলে যান এখান থেকে।আমি এখন কিছুতেই বাইরে যেরে পারবো না।
“বাইরে যেতে কে বলেছে তোকে।আমরা এখানেই কেক কাটবো।
” আমরা মানে?
“মানে আমি আর তুই।
কথা বলার ফাকেই মাহিন আইরার ছোট্ট টি টেবিলটাতে ছোট্ট একটা কেক রাখলো।তারপর একটা শপিং ব্যাগ থেকে কেক কাটা ছুরি মোম বের করে তা লাইটার দিয়ে জ্বালিয়ে দিল।আইরা যেন বোকা বনে গেলো।
” এতো কিছু কখন আনলেন আপনি !
“এগুলো আমি সাথে করেই এনেছি গর্ধব।থাকিস তো শুধু ঝগড়ার তালে অন্য কিছু তো খেয়ালই করিস না।
” এসব আমার জন্য এনেছেন!
“না এই বাড়িতে একটা বেয়াদব আছে তার জন্য এনেছি।তারাতাড়ি কাট না। আমি কি সারা রাত তোর ঘরে বসে থাকবো নাকি?
” আরে কাটছি রাগ কেন করছেন।
তারপর মাহিন মোম জ্বালিয়ে দিলে আইরা সেটা ফু দিয়ে কেক কেটে মাহিনকে খাইয়ে দেয়।বলা বাহুল্য আইরা মাত্র এক টুকরো কেকই পেয়েছে বাকিটা মাহিন নিজেই খেয়েছে। অন্য সময় হলে আইরা ঝগড়া করতো কিন্তু এখন তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না।মাহিন যে এখানে ওর জন্য এগুলো এনেছে এটা ভেবেই মন ভালো হয়ে যাচ্ছে বার বার।
” কিরে তোর কেক খেয়ে নিলাম তুই কিছু বললি না যে?
“খাবার জিনিস খেয়েছেন এতে আমি কি বলবো?
” হুম তুই বড় হয়ে গেছিস।ড্রেস কেন খুলেছিস?
“ওসব রঙ আমায় মানায় না মাহিন ভাই শুনলেন তো সব।তাছাড়া ওরা ঠিকি বলেছে।আমি যেহেতু কালো আমাকে আমার গায়ের রঙের সাথে মানানসই ড্রেসই তো পরতে হবে।নইলে তো আমাকে খুজেই পাওয়া যাবে না।
” আজ যেটা বলেছিস, বলেছিস।এর পরে যেন আর না শুনি।
“শুনলে কি হবে।এটা তো সত্যি।
” তোকে খুন করবো।আমি এখন যাচ্ছি।সকালে দরজা টা খুলিস।নয়তো আবার আমাকে এভাবে আসতে হবে।এখন রাত তাই কেউ দেখেনি কিন্তু দিনের বেলায় দেখলে কিন্তু তুই কলঙ্কিত হবি সেটা ভালো হবে?
“কি বললেন!
” কিচ্ছু না গর্ধব।আর শোন।
“কি।
” তোকে আর বেশিদিন এভাবে থাকতে দেব না।তোকে আমি আমার কলঙ্কে কলঙ্কিত করবো।
“হু!
চলবে