#মেঘ_পিওন
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী
#পুরব_৯
১৫.
“তোমার জন্য আমার কতবড় লস হলো ভাবতে পারছো মাহিন।আমার সব শেষ হয়ে যাবে এই বিয়েটা না হলে।
” সরি বাবা তোমার ব্যাবসায়ের লসের জন্য আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে ঠকাতে পারবো না।
“ঠিক কাকে তুমি ভালোবাসো বলবে? কে সে।যার জন্য নিজের বাবার এতোবড় ক্ষতি করতেও তুমি ভাবলে না?
” আইরা।আমি ওকে ভালোবাসি।
“কিহ!এই জন্য তুমি আমার এই সর্বনাশ করলে।আমি কখনোই ওকে এই বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নিবো না।
” সে তুমি মেনে নাই নিতে পারো।তাহলে আমিও ওকে নিয়ে অন্য কোথাও উঠবো তবুও তোমার কথায় আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে ঠকাতে রাজি নই।
“একটা কালো মেয়ে যার না আছে রুপ না আছে কোনো গুন না আছে সৌন্দর্য তার জন্য তুমি রাইসার মতো একটা মেয়েকে প্রত্যাখ্যান করলে মাহিন?
” অনেক হয়েছে বাবা।যার নামে এতো বাজে বাজে কথা বলছো সে তোমার নিজের ভাগনি বাবা।আমি.. আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না তুমি এই ধরনের কথা বলতে পারো । তুমি!এতোদিন দেখেছি আইরাকে তুমি স্নেহের চোখে দেখতে আর এখন তার প্রতি তোমার এই হিংস্রতা! ছিঃ বাবা।দাদির সবগুনই যে তোমার মধ্যে আছে এটা আজ বুঝলাম।আর শুধু তোমার না তোমার আদরে বাদর করা মেয়ে, ফুপি সবাই তোমরা সবাই একি রকম।আই হেইট ইউ বাবা।
“মাহিন শোনো আমার কথা ।
শুনেনি মাহিন সেদিন রাগ করে সে বন্দরে চলে যায়।সেখানে একদিন থাকে।আর এই একদিনেই মহিউদ্দিন যা করার তা ঠান্ডা মাথায় করে ফেলেন।কিন্তু তিনি হয়তো জানেন না তার ছেলেও কম না।তাই তো খবর পাওয়া মাত্রই মাহিন আর দেরি করেনি।
আহিলদের বাড়িতে এসে ড্রয়িং রুমে যে ধ্বংস লিলা চালিয়েছে তা কেবল উপস্থিত সকলে দেখেছে বোকা আরু শুধু মাহিনের উপরের রাগ দেখেছে। রাগের পরিনাম কি সেটা দেখেনি।কে বলবে এই ছেলে নিচে এক ঝাক মানুষকে তার ধ্বংসাত্বক রুপ দেখিয়ে এখানে এমন ভাবে বসে আছে যেন কিছুই হয় নি।
★বর্তমান★
” তার মানে মামা আমাকে পছন্দ করে না! আচ্ছা আমি কি দেখতে এতোটাই খারাপ মাহিন ভাই? আমাকে কেউ ককেন ভালোবাসে না ?
“হুশ কে বলেছে বাসে না।আমি তো বাসি।আর কারো ভালোবাসার প্রয়োজন আছে?
” কিন্তু এখন কি হবে।সব তো শেষ। মা আজ আমায় ওই ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েই ছাড়বে ।এখন আমরা কি করবো মাহিন ভাই?
“একদম কাঁদবি না। যদি কাঁদতেই হয় তাহলে আমি আছি না।আমার জন্য কাঁদবি অন্য কারো জন্য নয়।চল আমার সাথে।
“কোথায়?
” গেলেই বুঝতে পারবি।
আইরার হত ধরে মাহিন নিচে নেমে আসে।সেখানে সবাই উপস্থিত। আহিল সোফায় বসে বসে আপেল খাচ্ছে।ভাব এমন যেন এখানে কিছুই হয়নি।আদিবা বেগম অনেক কথা বললেন আহিলকে কিন্তু ও যেন কিছুই শুনেনি এমন একটা ভাব নিয়ে বসে আছে।পাশে আহাদ রহমান অবাক হয়ে বসে আছেন।তিনি মাত্রই বরিশাল থেকে ফিরেছেন।সেখানে তাদের একটা শাখা আছে গত এক সপ্তাহ সেখানেই ছিলেন তিনি।বাড়িতে এসেছেন মাহিনের পরেই।আর এসেই মাহিনকে সব ভাংচুর করতে দেখে আহিলের থেকে সবটা জানতে পারে।মাহিনের রাগ সম্পর্কে সবাই জানে তাই তিনি তেমন অবাক হননি।অবাক হয়েছেন নিজের স্ত্রী এর কর্মকাণ্ডে।ভাইয়ের সাথে মিলে তার মেয়ের জীবন নষ্ট করার জন্য তার কর্মকাণ্ডে প্রচন্ড আহত হয়েছেন আহাদ রহমান।
“আমার মেয়ের বিয়ে হচ্ছে অথচ আমিই জানি না।কেন আমার কি জানার কোনো অধিকার নেই?
” তুমি যেমন ভাবছো তেমন নয় আহাদ।আমি।
“কি তুমি? বলো আমায় কি তুমি?আমি সব সময় চুপ চাপ সব সহ্য করি বলে মাথায় উঠে বসেছো তুমি?নেহাতই আমি তোমায় খুব ভালোবাসি আদিবা।নয়তো এতোদিনে তোমার এতো অন্যায়ের পরেও আমার সাথে সংসার করতে পারতে না।তুমি কোন সাহসে আমার আর আহিলের অনুপস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছো জবাব দাও?
” তুমি রেগে যাচ্ছো কেন।আমি তো ওর ভালোর জন্যই সম্মন্ধটা এনেছি আহাদ।
“আমার মেয়ের ভালোমন্দ বুঝার জন্য আমি আছি ভাইজান। দয়া করে আর ভালো করতে হবে না।আর আদিবা এর পরেও যদি তুমি নিজেকে সুধরে না নাও আমাকে কিন্তু অন্য পথ দেখতে হবে।অনেক হয়েছে অনেক দেখেছি তোমার কর্মকাণ্ড আর নয়।
” এসব তুমি কি বলছো? তুমি আমায় এই কথা বলতে পারলে?প্রথমে ছেলে আর এখন তুমিও!
“তোমাকে কেউ কিছু বলেনি ফুপি।আমিও বলবো না।আজ তুমি আর তোমার ভাই মিলে যেটা করতে যাচ্ছিলে সেটা আর মাথাতেও এনো না।ফুপা আমি আইরাকে ভালোবাসি।ওর হাত দুটো আমার হাতে তুলে দিবেন আমি ওকে খুব ভালো রাখবো।
” মাহিন আমি কখনোই তোমাদের এই বিয়ে মেনে নিবো না।আমার বাড়িতে তোমাদের কোনো যায়গা হবে না।
“তোমার বাড়িতে আমার ছেলে, ছেলের বউয়ের থাকার কোনো প্রয়োজন ও পরবে না।
” মনিরা তুমি?
“হ্যাঁ আমি।তোমরা কি ভাবো বলতো নিজেদের? তুমি তোমার মা তোমার বোন তোমার মেয়ে তোমরা কেউই আমাকে দুই পয়সার দাম দাও না।সব মেনে নিয়েছি।কিন্তু আজ আর না।আমি সব জানতাম আমি দেখেছি আইরার প্রতি আমার ছেলের ভালোবাসা।আমার সামনে আমার ছেলের স্বপ্ন ভেঙে যেতে আমি দিবো না।তুইমিও হয়তো ভুলে যাচ্ছো একদিন তুমিও আমার বাবার থেকে আমাকে চেয়ে এনেছিলে।কিন্তু যত দিন যেতে লাগলো তোমার পরিবর্তন দেখেছি তোমার মায়ের অত্যাচার সয়ে গেছি কিচ্ছু বলিনি।কিন্তু এখন সময় এসেছে।আমি আমার ছেলে, ছেলে বউ নিয়ে আলাদা থাকবো।আহাদ ভাই আপনার মেয়েকে আমার ছেলেটাকে দিন না।ও মরে যাবে আরুকে ছাড়া।
” কিন্তু এভাবে হুট করে।আর আরু তো কিছু বলেনি। মানে ও বিয়েটা করতে চায় কি না।ওদের বয়সের ডিফারেন্স অনেক।
“বাবা ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে। এটা এখনও বুঝতে পারোনি?
” তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই।আমার মেয়ের জন্য মাহিনের থেকে ভালো ছেলে হতে পারে না।
মহিউদ্দিন সেখান থেকে আর কোনো কথা না বলে বেরিয়ে যান।মনিরা বেগম নিজ দ্বায়িত্ব নিয়ে মাহিন আইরার বিয়ে দেন।
“ভাবি বলছিলাম আরুর তো সামনে পরিক্ষা এই পরিক্ষা পর্যন্ত যদি ওকে এখানে রাখতেন।
” হ্যাঁ ঠি…।
কথা শেষ করতে পারে না মনিরা বেগম তার আগেই মাহিন না করে দেয়।
“না কেন মাহিন।ভাইজান তো ঠিকি বলেছে।
” পরিক্ষার সময় আমি ওকে এখানে রেখে যাবো ফুপা।কিন্তু এখন রাখতে পারবো না।এখানে একজন আছে যিনি আমার বাবার থেকেও বেশি ডেঞ্জারাস। আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই না।
“ঠিক আছে তোমরা যেটা ভালো মনে করো।আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসছি। আজ রাতটা অন্তত থেকে যাও।কাল সকালে যেও সবাই।
সবাই যখন রাতের খাবার নিয়ে ব্যস্ত তখন আহিল মাহিনকে ছাদে নিয়ে আসে।ওরা সিগারেট খায়।সিগারেট খাওয়ার পরে দুজন কিছুটা সময় নিরব থাকে।তারপর আহিল কথা বলে ওঠে।
“অভিনন্দন বন্ধু ব্যাচেলর থেকে বিদায় নেওয়ার জন্য।এবার বুঝবি বউ মানে কি আর কত প্রকার হয়।
” কেন ভাবি বুঝি তোকে এসব বুঝায়?
“বুঝায় না আবার।পান থেকে চুন হলেই তুই শেষ ভাই।
” তাহলে এখন আমার কি করা উচিৎ।
“আরুকে রাখতে কেন চাইছিস না?
” তোর শশুর বাড়িতে বিয়ের পর বউকে কতদিন রেখেছিস?
“দেখ ওটা আলাদা বিষয়। আমার শশুর বাড়ি তো মহারাষ্ট্রে নয়।
” সেটা তোর সমস্যা। আমার বউ আমি কেন এখানে রেখে যাবো? বউ ছাড়া এখন আমার থাকা সম্ভব নয়।
“ভাই আমার বোনটা ছোট একটু বুঝার চেষ্টা কর।
” ছোট! কোন দিক থেকে ওরে তোর ছোট মনে হয় শা*লা।আর তাছাড়াও ছোট হলে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে নেব।তুই এটা নিয়ে ভাবিস না।
“তার মানে ওকে নিয়েই যাবি।
” তাহলে তোর বউ নিয়ে যাবো?আমার বউ অবশ্যই আমি নিয়ে যাবো।
“তুই এতো লাগামহীন কবে থেকে হলি বলতো।
” যখন থেকে বিয়ে করেছি।যেমনটা তুইও হয়েছিলি।দেখ এমনিতে ও ছোট এটা ঠিক।সে জন্য আমি আপাতত কিছুই করবো না।কিন্তু এখানে রেখে সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে আমি বসে থাকতে পারবো না।আমার বউ আমি নিয়েই যাবো।
“ঠিক আছে বাপ নিয়ে যাস।তোর বউ তুই নিয়ে যাস।কিন্তু আমার বোনকে যদি তুই কাঁদিয়েছিস আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
” কথা দিচ্ছি ওর গায়ে ফুলের টোকাও পরতে দিব না।
“তবে এবার ওকে নিয়ে কোথায় উঠবি বলে ভাবছিস।মামা তো ওই বাড়িতে যেতে দিবে না।
” তুই ভুলে গেছিস আমার নিজস্ব ফ্ল্যাট আছে।আমি জানতাম এই বিয়েতে ছোট-খাটো ঝামেলা হতে পারে কিন্তু এতো বড় তা ভাবিনি।তাই আগে থেকেই ওটা নিয়েছিলাম।এখন এটাই আমার সম্বল। আর এটা আরুর জন্যও সেভ।মা-কে পাঠিয়ে দিব। দু’দিন পর এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে সব।
১৬.
দেখতে দেখতে আইরার পরিক্ষা শেষ হয়ে যায়।ও এখন মাহিনের সাথে তার ফ্ল্যাটেই থাকে।মাঝে মাঝে মনিরা বেগম এসে সারাদিন থেকে আবার রাতে ফিরে যান।
বাসায় বর্তমানে মার্জিয়া একা থাকে।আদিবা বেগম মার্জিয়াকে সহ্যই করতে পারেন না।বলতে গেলে তিনি এখন এক ঘরে হয়ে গেছেন।আজ রান্নার খালাও আসেনি।তাই মার্জিয়া দুপুরের খাবার বানাচ্ছিল নিজেই।রান্না প্রায় শেষের দিকে।আহিলের জন্য ডাল বসিয়েছে চুলায়।এমন সময় মাথাটা চক্কর দিয়ে ওঠে।এক দু’মিনিট পর গা গুলিয়ে বমি পেলে পাশের বেসিংয়ে গলগলিয়ে বমি করে মার্জিয়া।এটা মাঝে মাঝেই হয়।পিরিয়ড ও ঠিক যাচ্ছে তাহলে এমন কেন হচ্ছে বুঝতে পারছে না।
আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না মার্জিয়া।কোনো রকম রেলিং এ ভর করেই উপরে উঠে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।মুহুর্তেই চোখে রাজ্যের ঘুম এসে ভির জমায়।
আহিল আজ একটু দেরি করে আসে। এসেই কিছু পুরে যাওয়ার গন্ধ পায়।সে এদিক ওদিক দেখে কিছু পুরছে কিনা।তারপর মার্জিয়াকে হাক ছেড়ে ডাকতে থাকে।
“মার্জু কোথায় তুমি।কি পুরছে বলতো।পুরো বসার রুমে গন্ধ ছড়িয়ে গেছে।
বার কয়েক ডাকার পর ও কোনো সারা পায় না আহিল।কি ভেবে দৌঁড়ে কিচেনে যায়।গিয়ে দেখে মার্জিয়া সেখানে নেই।ডাল পোরা গন্ধ পাচ্ছিল এতোক্ষণ। আহিল জলদি করে চুলা নিভিয়ে মার্জিয়াকে খুঁজতে থাকে।পাশেই মশলার কৌটো পরে থাকতে দেখে বুকের মধ্যে চিন চিন ব্যাথা হয় আহিলের।তার মার্জু ঠিক আছে তো?আর এক মুহুর্ত ও দেরি করে না।নিজেদের বেড রুমে গিয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে আহিল।কিন্তু তাও মনে একটা সন্দেহ নিয়ে এগিয়ে যায় বেডের কাছে।
” মার্জু এই মার্জু কি হয়েছে তোমার।এভাবে শুয়ে আছো যে?
অনেক চেষ্টার পর আহিল মার্জিয়ার জ্ঞান ফেরাতে সক্ষম হয়।
“আপনি এসে গেছেন?শিট আমি তো চুলায় ডাল বসিয়েছিলাম।
” আরে আরে আস্তে। যেতে হবে না।ওটা পুরে গেছে।আমি নিভিয়ে দিয়েছি।তুমি এখানেই বসো কোথাও যেতে হবে না।
“তা কি করে হয়।লাঞ্চ করবেন তো।আমি খাবার দিচ্ছি ফ্রেশ হয়ে নিন।
” তুমি আগে এখানে বসো তো। কি হয়েছে তোমার?এভাবে বেঘোরে ঘুমানোর মানুষ তো তুমি নও।
“আমিও বুঝতে পারছি না আহিল। কিছুদিন ধরেই এমন হচ্ছে।শরীর দুর্বল লাগে থেকে থেকে গা ছেড়ে দিচ্ছে।
” আচ্ছা এতোকিছু হচ্ছে অথচ আমাকে একবারও জানাওনি পর্যন্ত। পিরিয়ড ক্লিয়ার তো।আর কি কি লুকোচ্ছো আমার থেকে বলবে?
“শান্ত হন কিচ্ছু লুকোয়নি আমি।সব ঠিকঠাকই আছে।
” কিচ্ছু ঠিক নেই।এখনই লাঞ্চ করে তুমি আমার সাথে হসপিটালে যাবে। আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না।
“আরে ঠিক আছি আমি।
আর কিছু বলতে পারলো না মার্জিয়া।আহিলের ওই রাগান্বিত চেহারার দিকে চেয়ে কিছু বলে ওঠার সাহস হলো না।আহিল আর অফিসে গেলো না।
বিকেলে তারা হসপিটালে যায়।ডক্টর আহিলের পরিচিত। এই সময়টা হসপিটালে ভীর খুবই কম থাকে।সব কিছু শুনে ডক্টর তাসলিমা মার্জিয়াকে কিছু টেস্ট দেয়।সেই টেস্ট এর রিপোর্ট নিয়েই তারা এখন ডক্টর এর চেম্বারে বসে আছে।এই পুরোটা সময় আহিল মার্জিয়ার পাশেই ছিলো।এক মুহূর্তের জন্য কাছ থেকে সরেনি।
“অল ওকে ডক্টর। খারাপ কিছু নয়তো?
” নিজেই দেখে নিন মিঃ আহিল।
ডক্টর এর বলতে দেরি আহিল রিপোর্ট নিতে দেরি করলো না।রিপোর্ট থেকে চোখ সরিয়ে মার্জিয়ার দিকে ফিরে তাকালো।আহিলের চোখ চকচক করছে।চোখে পানি।এটা খুশির কষ্টের নয়।
“কি এসেছে রিপোর্ট এ?
আহিল আবার ডক্টর এর দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করলো-
“এটা সত্যি!
” ইয়েস। কেনো কোনো সন্দেহ আছে?
“কি হয়েছে আহিল?
” মার্জু তুমি মা হচ্ছো আর আমি বাবা।আমার যে কেমন অনুভূতি হচ্ছে তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না।দেখো আমার বুক ধুকপুক ধুকপুক করছে।
“উহু উহু।এখানে আমিও আছি কিন্তু ভুলে যাবেন না।
” সরি সরি।ওই আসলে এক্সাইটেড হয়ে গেছিলাম।
“ইটস ওকে।
” কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না ডক্টর আমার তো পিরিয়ড এভরি মান্থ ক্লিয়ার হচ্ছিলো তাহলে?
“এটা অনেকের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে মিসেস আহিল।ভয়ের কিছু নেই।
তারপর ডক্টর কিছু নিয়মাবলি এবং নির্দেশনা দেন যা সব ডক্টরই দিয়ে থাকেন।মার্জিয়াকে নিয়ে ফেরার সময় আহিল অনেক রকমের মিষ্টি নিল।
বাড়িতে ফিরেই সবার আগে একটা মিষ্টি আহাদ রহমানকে খাইয়ে দিলো।
” আরে এতো মিষ্টি কেন এনেছিস আহিল।বউমাকে নিয়ে কোথায় গেছিলিস তুই?কোনো সুখবর আছে নাকি?
মার্জিয়া শশুরের কথা শুনে লজ্জা পেয়ে গেলো। সে জানে এখন এখানে বাবা ছেলের লাগামহীন কথা চলবে তাই দ্রুত নিজেদের রুমে চলে যায়।যেটা দেখে আহিল আর আহাদ রহমান দুজনেই হো হো করে হেসে ওঠে।
“যা লজ্জা পেয়ে গেলো।বাবা তুমি এবার তোমার শরীর ফিট রাখতে চেষ্টা করো বুঝলে আমার বাচ্চা কিন্তু হেব্বি ফাজিল হবে তুমি সামলাতে পারবে না।
” কেন তোর বাচ্চাকি এসেই আমার সাথে যুদ্ধ করবে নাকি যে আমায় আগাম ফিট থাকতে হবে?
“বলা যায়। তোমার ছেলের মতোই দুষ্কর হবে।তাই আগে থেকেই সাবধান করলাম এবার তুমি মানো আর না মানো সেটা তোমার ব্যপার।
” সে না হয় পরে দেখা যাবে এই খবরটা আগে আরুকে দেই।তারপর ওর মামা মামিকেও জানাতে হবে। তুই বরং মিষ্টি বার কর আহিল আমি নিজে যাবো মিষ্টি নিয়ে।
রাতে মিষ্টি নিয়ে আহাদ রহমান যান বেয়ানদের ফ্ল্যাট এ।খুশিতে সবাই আত্নহারা।মনির তো শুনে এক মিনিট ও দেরি করেনি।চলে এসেছে বোনের কাছে।যদিও এতো কিছু সে বুঝে না তবে এটা বুঝেছে তার একটা খেলার সাথী আসবে।যে তাকে মামা মামা করে সারা বাড়ি মাথায় তুলবে।সে যেমন আপুর কাছে এটা ওটা দাবি করে তার কাছেও এখন এমন করে কেউ এটা দাও ওটা দাও বলে দাবি করবে।হুট করে নিজেকে কেমন বড় বড় লাগছে মনিরের।
মার্জিয়াদের ড্রয়িং রুমে তখন আদিবা বেগম বসে ফোনে কথা বলছিলেন।মিমিকে মার্জিয়ার মা হবার খবর দিচ্ছিলো।মিমিতো রাগে না পারছে ফোনটাই আছাড় দিচ্ছে আর ফুপিকে দোষারপ করছে।
আদিবা বেগমকে দেখে মনির তার পায়ের গতি কমালো।ধীরে ধীরে পা টিপে উপরে উঠতে নিলে আদিবা বেগম দেখে নেয়।
“এই ছেলে কোথায় যাচ্ছিস।কি আশ্চর্য আজকাল যে সে ঘরের মধ্যে ঢুকে পরছে।কি মতলবে এসেছিস।কি চুরি করতে এসেছিস এখানে?
” আমি চোর নই।আপনি কি আমাকে চিনেন না।আমি মনির। মার্জিয়া আপুর ছোট ভাই।আমি আপুর কাছে এসেছি।আর আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাই না তাই ধীরে যাচ্ছিলাম।
“ধীরে যাচ্ছিলি কথা কেন বলতে চাস না শুনি?
” কারণ আপনি দুষ্টু।আমার আপুকে অনেক কষ্ট দেন।জোর করে আপুকে বিয়ে দিতে চাইছিলেন।আমি সব দেখেছি হুহ।
“তবেরে। যেমন বোন তেমন ভাই আজ তোর একদিন কি আমার।এমন মার মারবো না আর কখনো এখানে আসবি না।
” আপু বাঁচাও।
যেই আদিবা বেগম মনিরকে চড় মারতে যাচ্ছিলেন অমনি আহাদ রহমান আদিবা বেগমের হাত আটকে দেন।
“মনির তুমি যাও।উপরে তোমার আপু আছে।আর ভয় পেয়ো না আন্টি মজা করছিলেন।
তারপর মনির এক ছুটে মার্জিয়ার কাছে চলে যায়।মনির যেতেই আহাদ রহমান আদিবাকে শাসাতে থাকে।
“কি করছিলে তুমি জানো?ও একটা বাচ্চা আদিবা।যা করেছো ভবিষ্যতে যেন আর হয় এটা।
চলবে
#মেঘ_পিওন
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী
#পর্ব_১০
১৭.
মাহিন ল্যাপটপে কিছু কাজ করছিলো।লক্ষ্য করছিলো আরু ওর আশেপাশে ঘুর ঘুর করছে।কিছু বলবে সেটাও বুঝতে পারছে কিন্তু কিছু বলছে না।এভাবে ঘুর ঘুর করার কারণও ওর জানা।একটু আগে শুনছিলো আরুর সাথে মার্জিয়ার কথাবার্তা। লাউডে ছিলো ফোন।বেবি নিয়ে অনেক রকমের কথা হচ্ছিলো দুজনের মধ্যে।তখন আরুর মুখে নানান রকমের ভঙ্গিমা দেখেছে মাহিন।তখনই বুঝেছে আরু এমন কিছু ভেবে তাকে জানাতে পারে আর হলোও তাই।
মাহিনের ধ্যান ভাঙ্গে কিছু পরে যাওয়ার শব্দে।আরু পরে গেছে তাও শুকনো যায়গায়।
“একি পরলি কি করে তুই?ব্যাথা পেয়েছিস?
” না আমার কি ব্যাথা আছে যে ব্যাথা পাবো।
“ষ্টুপিডের মতো কথা কেন বলছিস।দেখি কোথায় লেগেছে।তখন থেকে দেখছি ঘুর ঘুর করছিস।কি বলবি সেটা বললেই তো হয়।
” আপনি যখন বুঝতেই পেরেছেন কিছু বলতে চাইছি তাহলে এতক্ষণ এভাবে এভয়েড করার মানে কি? ঠিক আছে শুনতেই যখন চাইছেন তাহলে বলছি আমিও ভাবির মতো বাচ্চা চাই।আমিও মা হতে চাই মাহিন ভাই।
“চুপ কর বেয়াদব। একেতো ভাই ভাই বলে ধেদিয়ে মরছিস তারওপর ভাই এর বাচ্চার মা হতে চাইছিস লজ্জা করছে না?
” ছ্যাঃ কি সব বলছেন আপনি। আমি কি ওই হিসেব করে ভাই বলেছি নাকি?ছোট থেকে ভাই ডাকি সেই সুত্রে বলেছি।
“যেদিন এই ভাই থেকে মাহিনে আসতে পারবি সেদিন ভেবে দেখবো বাচ্চার কথা।তোকে আমি এখন ও সেভাবে ছুয়েই দেখিনি এইটুকুন একটা তরুনী হতে চায় বাচ্চার মা যা ভাগ এখান থেকে।
” আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করছেন মাহিন ভাই?
“করলাম?তাহলে করেছি।কি করবি তুই?
” কথাই বলবো না আপনার সাথে।
এভাবেই বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা তারপর রাত।এই সময়ের মধ্যে আরু একটাবারের জন্যও মাহিনের সাথে কথা বলেনি।মাহিন বুঝলো বউ তার বেজায় অভিমান করেছে।তবুও কাজ শেষ না হওয়া অব্দি কিচ্ছু বললো না।রাতের খাবারের পর আরু রুমে গেলো। মাহিন তখন ও তাদের ছোট্ট ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে স্পোর্টস দেখছিলো টিভিতে।বার কয়েক মাহিনের ফোন বাজে কিন্তু মাহিনের কোনো খবর নেই।মাহিনের সাথে রাগ করে থাকায় আরু ডাকছেও না।সব শেষে বিরক্ত হয়ে নিজেই গেলো ফোন তুলতে।স্ক্রিনে জান্টুস নামে একজন কল করেছে দেখে আরুর চোখ কপালে।
“এই জান্টুস টা আবার কে ভাই?
আরু একটু কৌতুহল নিয়ে ফোনটা রিসিভ করে।দুর্ভাগ্য বসত তখন ওপাশ থেকে ভেসে আসে কিছু প্রেমময় কথা যেটা একটা পুরুষের। আরু আশ্চর্য বনে।কল রেকর্ড করতে ভুলে না।চুপচাপ শোনে।পরক্ষনে ‘ওহ শিট ‘ উচ্চারিত হয়ে কল কেটে যায়।আরু ততক্ষণে চোখের পানি ছেড়ে দিয়েছে রাগে। হনহন করে ফোনটাকে মাহিনের কোলের ওপর ছুড়ে মারে।হঠাৎ আক্রমণে মাহিন কিছু বুঝতে পারে না।ফোনটার ও শেষ রক্ষা হয় না।কোলে না পরে সোজা ফ্লোরে।মাহিনের চোখ কপালে।
“এটা কি করলি ফাজিল মেয়ে!আমার আইফোন ফেলে দিলি।দু’মাস ও হয়নি এটা নিয়েছি আমি।
” বেশ করেছি।আরো করবো।এই জন্য আপনি এখন বাচ্চা নিতে চাইছেন না তাই না।এসব কু-কর্ম করতে পারবেন না বলে?ঘরে বউ রেখে এসব করা হচ্ছে বাইরে ছিঃ।আবার নাম দিয়েছে জান্টুস।পিরিত উতলায়া উঠে তাই না?
“ছিঃ!আমি আবার কি করলাম!
মুহুর্তেই ফোনের শোক ভুলে মাহিনের এবার বউ এর শোকে চোক্ষু চড়কগাছ। কি বলছে এই মেয়ে!
” এই বেয়াদব কি বলছিস তুই এগুলো।কার সাথে কি করেছি আমি?
“কি করেছেন?এখনো প্রশ্ন করছেন কি করেছেন?এই নিন শুনুন নিজে কানে।
তারপর ফোনটা হাতরে তুলে নেয় আরু।ফ্লোরে কার্পেট থাকায় তেমন কিছু হয়নি।কল রেকর্ড এ গিয়ে ওপাশের ভয়েজ শোনায় মাহিনকে।একটুর জন্য মাহিনেরও চোখ কপালে।তারপর ফোনের স্কিনে তাকিয়ে হোহো করে হেসে দেয়।এটা দেখে আরুর আরো রাগ চাপে মাথায়।
” পাগলের মতো হাসছেন কেন আপনি।আমি কি কোনো জোক শুনিয়েছি আপনাকে?
“তার থেকেও বড় কিছু বউ।
বলেই আবারো ঘর কাপিয়ে হাসলো মাহিন।
” তুই শুধু স্ক্রিনের নাম আর ভয়েজ শুনলি নম্বর টা দেখলি না।
“মানে?
” আগে দেখ ভালো করে।
এবার আরু ভালো করে নম্বর টা দেখে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে যায়।এটা তো তার ভায়ের নম্বর। তাহলে ওসব কথা।পরক্ষনে ভাবে হয়তো ভুলে কল চলে এসেছিলো আর ভাই বুঝেও নি।ইশ কি একটা বিচ্ছিরি অবস্থা হলো।এবার সে মাহিনের সামনে দাঁড়াবে কি করে?
“থাক আর লজ্জা পেতে হবে না।
তারপর মাহিন আহিলকে কল করে।একটু পরেই তা রিসিভড হয়।
” বল।
“বল মানে।শালা আমার সংসারে আগুন লাগিয়ে নিজেরা রোমান্স করছিস এটা কি আমি মেনে নিব?
” মানে কি।কি হয়েছে?
“কি হয়েছে? রোমান্স করার সময় এদিক সেদিক কল যায় কি করে?ভাই আমার বউ তো ভেবেছিলো তার জামাই স*ম*কা*মি*তা*য় লিপ্ত।তুই ভাবতে পারছিস তোর একটু ভুলের জন্য আমার না ছুয়ে দেখা বউ আমাকে ছেড়ে এক্ষুনি চলে যাচ্ছিলো।তুই তো জানিস তোর নম্বর জান্টুস দিয়ে সেভ করা।
” একটু মিস্টেক হয়ে গেছে ভাই।ফোনটা তখন আমার শালার কাছে ছিলো।তারপর কখন কল দিয়ে বসে বুঝতে পারিনি।ও তো রেখে চলে যায় পরে আমার খেয়াল হয়েছে।সরি ভাই এবার তুই আমার বোনকে শামলা।
“শালা তোর জন্য বউ আমায় কি না কি ভাবছিলো।এভাবে আমাকে বদনাম করবে কখনো ভাবিনি।রোমান্সের ১২ টা বাজিয়ে ছাড়লি তুই।
” একটু ম্যানেজ কর ভাই।এবার বুঝবি বউ কি।গুড লাক।
কল কেটে দিয়ে মাহিন আরুর দিকে সরু চোখে তাকিয়ে দেখে এখনো নাক টানছে।কান্নার বদলে এক রাশ লজ্জা এসে ভর করেছে তার চোখে মুখে।কি অমায়িক দেখতে।
“কি বউ কি ভাবছো?
” আপনি একটা অসভ্য। এইসব নামে কোনো ছেলের নাম সেভ করে কেউ অসহ্যকর।
“আরে বাবা আমি কি করলাম।এই বাচ্চা বউ বাচ্চার মা হবি না?
” না।
“না কেন?
” আপনি বুড়ো।কিছুদিন পর চুলে পাক ধরবে।তারপর দেখা গেলো আমার বাচ্চারা আপনাকে বাবা না ডেকে দাদা দেকে ফেললো তখন কেমন হবে?তাই আপনার বাচ্চার মা হবো না আমি।
“আচ্ছা তাই নাকি।বুড়ো বলছিস কাকে।এখনো মেয়েরা আমার একটা তুরিতে হুমড়ি খেয়ে পরবে দেখবি? দেখাবো?
” আপনার যা ইচ্ছা হয় করুন আমার কি।
“শোন আমি বুড়ো হলেও তোকে আমার সাথেই থাকতে হবে।ভুলেও অন্য কারো কথা মাথায় ও আনবি না
” আপনি আমাকে ভালোবাসেন?
“এটা কেমন প্রশ্ন?
” তাহলে প্রমাণ দিন।
“প্রমাণ! এতো কিছুর পরেও তোর প্রমাণ চাই?তা কি প্রমাণ দিতে হবে?
“বেশি কিছু না।আমি এখন বেবি নিতে চাই প্লিজ।
” তোমাকে ভালোবেসে দিতে পারি প্রাণ
আমি মাটি তুমি নীল আসমান”
“গান শুনতে চাইনি বাচ্চা চেয়েছি।
“এখন না বউ আরো কিছুদিন পর।তুই অনার্স শেষ কর তারপর ভেবে দেখবো।তবে তুই চাইলে কাছে আসতে পারি। আসবো?
১৮.
দেখতে দেখতে মার্জিয়ার প্রেগ্ন্যাসির ৪ মাস পেরিয়ে গেলো।এখন তেমন একটা শরীর চলে না তার।প্রেগ্ন্যাসির শুরু থেকেই কোনো এক অজানা আতঙ্কে মন বিষিয়ে থাকে সর্বদাই। আহিল যতটা পারে কাজের ফাকে তার মার্জুকেই বেশি সময় দেওয়ার চেষ্টা করে।কিন্তু মাঝে মাঝে সবকিছুকে উপেক্ষা করে অনেক কিছুই করতে হয়।যেমন আজ আহাদ রহমানের সাথে তার একটু বেরুতে হলো।নিজের বিজনেসের পাশাপাশি বাবারটাও সামলাতে হচ্ছে তাকে।বাবার বয়স হয়েছে একা আর সামলে উঠতে পারছে না।সেই সুত্রেই আজ বাবা ছেলেকে যেতে হোলো বান্দরবান ।সেখানে তাদের একজন বিদেশি ক্লায়েন্ট এর সাথে মিটিং আছে।কথা ছিলো ঢাকাতেই আসবেন তিনি।কিন্তু কিছু কারণ বসত আসতে পারেননি।মিটিংটা সেরে যত দ্রুত সম্ভব তাদের ঢাকায় ব্যাক করতে হবে।যাওয়ার আগে অনেক দ্বিধা দন্ধে ছিলো আহিল।মার্জিয়া আস্বস্ত করে বলেছিলো যেতে। সে নিজেকে সাবধানে রাখবে।দেখে শুনে চলবে।অনেকটা মন মরা হয়েই যেতে হয়েছে আহিলকে।যদিও সে প্রথমে যেতে চাইছিল না। কিন্তু ক্লায়েন্ট এর ডিমান্ড মিঃ আহিলকে আসতে হবে তার জন্যই মুলত ক্লায়েন্ট বিজনেস ডিল করতে চান।তার কারণ আহিলের কাজের বুদ্ধিমত্তা প্রখর। বিচার বিবেচনা বেশ ভালো।
যাওয়ার সময় মার্জিয়াকে বার বার বলে গেছে সাবধানে থাকতে। যদি বেশি বোরিং লাগে তাহলে মামির কাছে চলে যেতে।
সময় তখন দুপুরের শেষ ভাগ।মাত্রই আহিলের সাথে কথা বলেছে মার্জিয়া।আহিলরা এখন ও ক্লায়েন্ট এর সাথেই আছে।লাঞ্চ সেরে তারা ক্লায়েন্টকে বিদায় জানাবে তারপর ঢাকার উদ্দেশ্য নিয়ে রওনা হবে।অল্প কথায় ফোন রাখে মার্জিয়া।তার কারণ দরজা বাইরে থেকে কিছু একটা পরে যাওয়ার শব্দ পায় সে।
আজ রুবি বেগম মার্জিয়ার জন্য কয়েক রকমের আচার বানিয়েছেন। আগেও বানিয়ে দিয়েছিলেন সে সব প্রায় শেষের দিকে।তাই আবারও বানিয়ে ছেলে মনির কে ডাকলেন।ওই বাসায় খুব একটা যান না তিনি।তার কারণ আদিবা বেগম। সুযোগ পেলেই নানান কটু কথা শুনিয়ে দেন বলে খুব একটা যান না।
“ডাকছো মা?
” হ্যাঁ। এগুলো একটু তোর আপুকে দিয়ে আয় বাবা।
“কি এগুলো?
” একটু আচার বানিয়েছিলাম।তোর জন্যও রেখেছি।আর শোন পারলে তোর আপুকে সাথে করে নিয়ে আসিস।মেয়েটা আজ একা বাসায়।আমার মন সায় দিচ্ছে না ওকে ওখানে একা রাখতে।আমি দরজার বাইরে দাঁড়াচ্ছি তুই গিয়ে এসব রেখে ওকে নিয়ে আসবি কেমন?
“ঠিক আছে মা। মনির সিরির দুটো সিরি পেরোনোর সময় আহিলদের ফ্ল্যাট থেকে মুখ ঢেকে দৌড়ে নামে একটা মেয়ে।মনিরা বেগম ভাবলেন হয়তো পাশের ফ্ল্যাট থেকে কেউ নামলেন।কিন্তু মনিরের চিৎকার শুনে বুঝলেন ঘটনা কিছু খারাপ ঘটেছে।মনির আপু বলে চিৎকার করে হাতের আচার গুলো সেখানে ফেলেই দৌড়ে যায় আপুর কাছে।ছোট মানুষ হলেও খুব বুদ্ধিমান ছেলে মনির।ওই মেয়েটা যে এখান থেকেই বেড়িয়েছে সেটা বুঝতে বাকি নেই ওর।ছেলের চিৎকার শুনে রুবি বেগম ও ছুটে যান উপরে।গিয়ে এমন একটা আত্নাকাপানো সিচুয়েশনে পরবেন তা তিনি কখনো ভাবেননি।মার্জিয়ার নাক দিয়ে রক্ত পরছে।সিরিতে যেখানে মার্জিয়া পরে আছে রক্তের ছড়াছড়ি। মাথা ফেটে গেছে। ততক্ষণে জ্ঞ্যান হারিয়েছে মার্জিয়া।শরীর যেন অবশ হয়ে এলো তার।তাদের মা ছেলের চিৎকারে এবার নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন আদিবা বেগম। প্রথমে মুখে বিরক্ত ভাব থাকলেও মুহুর্তেই মুখের ভাব বদলে গেলো তার ও।
” কি হয়েছে ওর।এভাবে পরে গেলো কি করে!
আদিবার এমন কথায় রক্তচক্ষু চোখে তাকালো রুবি বেগম। রেগে মেগে সেখান থেকে উঠতে গিয়ে নিজেও সিরি থেকে পরতে যাচ্ছিলেন।ভালো করে দেখলো।পুরো সিরিতে তেল পরে আছে।এটা দেখে রুবি বেগম আরো রেগে যান।তার বুকটা কেপে ওঠে মুহুর্তের মধ্যে।এতো নিচু মানুষের মন হয়?
“বাহ আমার মেয়েটাকে মারার জন্য এতো সুন্দর একটা পরিকল্পনা করেছেন আপনি?আপনি তো বাড়িতেই আছে তবুও জানেন না কি হয়েছে?সিরিতে তেল পরে আছে এর পর ও বলছেন কি হয়েছে?
কথা বলতে বলতেই বাড়ির ড্রাইভার এলো।ড্রাইভারকে মনির গিয়ে বলেছে মার্জিয়ার অবস্থার কথা। উনিই তখন এম্বুলেন্স এ খবর দেন।এম্বুলেন্স আসতে কিছুটা সময় লাগে।ড্রাইভারের সাহায্য নিয়ে মার্জিয়াকে এম্বুল্যান্স এ তোলা হয় সাথে রুমি বেগম ও যান।উনি ড্রাইভারকে বলেন মনিরের থেকে নম্বর নিয়ে আহিল ও জহির রায়হানকে খবর দিতে।মনিরকে বলেন ফ্ল্যাট এ তালা দিয়ে ড্রাইভার আংকেল এর সাথে যেতে।
চোখের পলকে এম্বুলেন্স গায়েব হয়ে যায়।ততক্ষণে মার্জিয়ার শরীর নীল হতে শুরু করেছে।রুবি বেগম অনবরত মার্জিয়ার হাত পায়ের তালু ডলতে থাকেন।
” মার্জু মা কথা বল একটু। দেখ আমরা হসপিটালের কাছাকাছি চলে এসেছি আর একটু মা।একটু অপেক্ষা কর।
হসপিটালে এসে বেশি দৌড়ঝাঁপ করতে হয়নি রুবি বেগমকে।ততক্ষণে জহির রায়হানও চলে এসেছে।মার্জিয়াকে দেখা মাত্র চিনে ফেলেন ডক্টর তাসলিমা। দেড়ি না করে ওটিতে নিয়ে যান তার তত্ত্বাবধানেই।যাওয়ার আগে বলে যান সব ফর্মালিটি সেরে ফেলতে। এটা নিয়ম। যেহেতু এখানে আহিল নেই তাই বাধ্য হয়ে জহির রায়হানই সবটা করলেন।
খবর চলে গেছে আহাদ রহমানের কাছেও।আহিল এখন ও কিছু জানে না।এখন বিকেল ৪ টা ছুই ছুই।৭ টায় তাদের ঢাকার ফ্লাইট। আহিল অনেকবার মার্জিয়াকে কলে ট্রাই করেছে এরই মধে।কিন্তু বেজে গেলেও ধরছে না।এদিকে আহাদ রহমান আহিলকে কিছু না জানিয়েই জরুরী ভাবে হেলিকপ্টার ঠিক করে ফেললেন।যখন আহাদ রহমান এলেন তখন ও আহিল মার্জিয়াকে বার বার ট্রাই করেই যাচ্ছে।
“আহিল আমাদের এখন যেতে হবে।
” মিটিং তো শেষ বাবা এখন কোথায় যাবো?
“প্রশ্ন করো না আহিল আমাদের যেতে হবে।
” কি হয়েছে বাবা।ফ্লাইট তো ৭ টায়।তাহলে এতো জরুরী। এক মিনিট মার্জিয়া ঠিক আছে তো।ওর কিছু হয়নি তো?
আহাদ রহমান ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে কি বলবেন ছেলেকে বুঝতে পারছেন না।এই অবস্থায় কি বলে শান্তনা দিতে হবে সেটাও বুঝতে পারছেন না।তিনিও বাবা হয়েছেন।তার প্রথম সন্তান আহিল।যেদিন শুনেছিলেন তার ছোট্ট আহিল আদিবার গর্ভে একটু একটু করে বড় হচ্ছে।তখন তিনি ভাবতেন তার মতো সুখি মানুষ হয়তো খুব কমই আছে।তার পর যখন আহিল পৃথিবীতে এলো তখন তিনি জীবনে সব চেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলেন।এর পর আহিল আস্তে আস্তে বড় হলো।আহিলের প্রথম ডাকটাও ছিলো ‘ বাবা’ স্পষ্ট ডাক।সেদিন আহাদ রহমানের চোখ দিয়ে এক ফোটা জল গড়িয়েছিল সবার চক্ষু আড়ালে। মনে হয়েছিল তিনি তার এই ছোট্ট জীবিনে সব কিছু পেয়ে গেছেন।এইতো তার স্ত্রী সন্তান তার সুখের পরিবার।আর আজ যখন তার সেই সুখের সুখি হওয়ার কথা বিধাতা তার সুখ আসার আগেই তা কেড়ে নিলেন।কি বকবেন ছেলেকে।কিভাবে বলবেন তার অনাগত সন্তান আর নেই।তার স্ত্রী মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লরছেন।কিছু বলার ভাষা খুজে পেলেন না তিনি।শুধু ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে একটা কথাই বললেন –
যেতে যেতে সব বলবেন এখন কথা না বাড়াতে।
হেলিকপ্টারে বসে আহিল বাবার দিকে ভালো করে লক্ষ্য করলো।তার চোখমুখে অন্ধকার নেমে এসেছে।বিনাবাক্যে বাবার দিকে বেশ সময় নিয়ে তাকিয়ে থাকলেন।তারপর জানতে চাইলেন কি হয়েছে।
“তোর মনে আছে আহিল তুই ছোট থাকতে তোর মায়ের চেয়ে আমার সঙ্গ বেশি পছন্দ করতি?কতবার যে তোর জন্য অফিস কামাই দিতে হয়েছে আমাকে তার ঠিক নেই।আমার বস অনেক ভালো মনের মানুষ ছিলেন।তোকেও খুব স্নেহ করতেন তিনি।তুই যখন ফোনে মুখ ফুলিয়ে বলতিস আঙ্কেল আমার বাবাকে ছুটি দাও না তখন তোর ওই অসহায় কন্ঠে তার মতো কঠিন মানুষ ও গলে যেতেন।
বলে নিজেই নিজের কথায় কেমন থতমত খেয়ে গেলেন আহাদ রহমান। কি সব উল্টো পালটা বলছেন তিনি।তার মাথা কাজ করছে না।
” কি করে হলো বাবা এসব?
‘কি করে হলো বাবা এসব’ এই কথায় যেন স্তব্ধ বনে গেলেন আহাদ রহমান। তিনি তো ছেলেকে কিছুই বলেন নি তাহলে!
“মনির বলেছে।এই দেখো ভয়েস পাঠিয়েছে।
” আহিল শান্ত হ বাবা।কিচ্ছু হয়নি।
“হয়েছে বাবা। আমার রক্ত আমার প্রান আর বেঁচে নেই।আমার মার্জু এখন ভালো নেই বাবা।আমার মার্জুর সাথে এসব কেন হলো বাবা বলবে?
তারপর কিছু সময় চুপ থেকে জোরে চিৎকার করে উঠে আহিল।আহিলের এহন অবস্থা দেখে ঘাবড়ে যায় হেলিকপ্টার চালক।আঁতকে উঠে আহাদ রহমানকে কিছু বলার আগেই তিনি বলেন-
” আপনি কাজে মনোযোগ দিন ভাই।আমি এদিকটা সামলে নিচ্ছি।
আহিল এখন ভেঙে পরার সময় নয়।তোকে শক্ত হতে হবে বাবা।
“এমন কেন হলো বাবা। আমার কলিজাটা ছিড়ে যাচ্ছে বাবা।আমার দম নিতে কষ্ট হচ্ছে দেখো বাবা।তোমার ছেলের খুব কষ্ট হচ্ছে বাবা।আমার মার্জুর কি হবে বাবা?
” চুপ কর সোনা।কিচ্ছু হবে না।বাবা আছি না।সব ঠিক হয়ে যাবে বাবা।আর একটু পরেই আমরা ঢাকায় পৌছে যাব।একটু শান্ত হ আহিল।
“ওরা আমার ছোট্ট পাখিটাকে কেড়ে নিলো বাবা।আমি কিছুই করতে পারলাম না।আমি কিভাবে মার্জুর সামনে গিয়ে দাঁড়াব।কি জবাব দিবো?ও বাঁচবে তো বাবা।ওর নাকি হাত পা নীল হয়ে গিয়েছে।কত কষ্ট পেয়েছে ভাবতে পারছো বাবা।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে বাবা।
“কিছু হবে না ওর।একদম ঠিক হয়ে যাবে।তুই একটু শান্ত হ।তুই না আমার ভালো ছেলে।
চলবে