#মেঘ_বলেছে_তুমি_আমার❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১৯ (শেষ)
‘ তুমি এই বিয়েতে রাজি তো অহনা?’
আচমকাই বাবার মুখে এমন প্রশ্ন শুনে যেন চমকে উঠলো অহনা। শকট হওয়ার মতো তাকালো সে বাবার মুখের দিকে। বেশ কিছুক্ষণ যাবৎই বাবার সাথে এটা ওটা নিয়ে বেশ কথা হচ্ছিল অহনার খানিকটা ভয়,খানিকটা সংকোচতা নিয়ে। আচমকাই বাবার কথা বিয়েতে রাজি কি না প্রশ্নটা শুনে পুরো দমেই চমকে উঠলো অহনা। অহনাকে চুপচাপ থাকতে দেখে আবারও প্রশ্ন করলো অহনার বাবা,
‘ কি হলো তুমি কিছু বলছো না কেন?’
অহনা এবারও জবাব দেয় না। বেশ অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে বাবার মুখের দিকে। অহনা ভাবে যদি এই প্রশ্নটা আহিয়ান যেদিন তার হাতে আংটি পড়িয়েছিল সেদিন যদি বাবা করতো তাহলে হয়তো আজ এখানে এইভাবে বসে থাকতো না। অহনা নিচের দিকে তাকালো সাউন্ড বক্স চালানো হয়েছিল মাত্র। কিন্তু হুট করে কারেন্ট চলে যাওয়ায় সাউন্ড বক্স বন্ধ হয়ে গেল। অহনা কি ভেবে শুঁকনো হাসলো। অনেকটা সাহস নিয়ে বাবার ডান হাতটা শক্ত করে ধরলো। তারপর ছলছল চোখে বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে শীতল কণ্ঠে বললো,
‘ তোমার কি মনে হয় না বাবা এই প্রশ্নটা তোমার আরো আগে আমায় করা উচিত ছিল। ধরো আমি যদি এই মুহূর্তে বলি না বাবা আমি এই বিয়েতে রাজি নই তাহলে কি তুমি এই বিয়েটা ভেঙে দিতে পারবে।’
অহনার বাবা চুপ। বেশ অপরাধ বোধ ফিল হলো ওনার। অহনা আবারও বলতে লাগলো তার বাবাকে,
‘ তোমরা আসলে কেমন জানো বাবা মেয়েদের মতামতের কোনোদিনও গুরুত্ব দেও না। একটা ছেলে দেখতে আসলো তার পছন্দ হয়ে গেল ব্যস বিয়ে দিয়ে দিলে। একটাবার এটা জিজ্ঞেস করলে না তোমার মেয়েটার আধও সেই ছেলেটাকে বিয়ে করার মত আছে কি না। তাকে পছন্দ হয়েছে কি না আসলে মেয়েদের নিজের জীবন বলে কিছু হয় না এই দেখো না ছোট থেকে তুমি যখন যা বলেছো আমি তাই করেছি আবার বিয়ের পর জামাই যা বলবে তাই করতে হবে। তোমার মনে আছে বাবা ছোট বেলায় একদিন তোমায় কিছু না বলে আমার বান্ধবী মিলির বাড়িতে গিয়েছিলাম সেদিন তুমি কত শাসন করেছিলে গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করো নি। সেদিনের পর থেকে আমি নিজ থেকে কোনোদিন কিছু করি নি। এখন আবার দেখো এই তুমিই একটা অচেনা ছেলের হাতে আমায় তুলে দিবে। তারপর সে আমায় যখন যা করতে বলবে আমাকে তাই করতে হবে যদিও আহিয়ান মানুষটা ভিন্ন তাও মন জুগিয়ে চলতে হবে তো বলো। আমায় এটা বলবে বাবা সবসময় মেয়েদেরকেই কেন অন্যের মতামত অনুযায়ী চলতে হবে। তাদের কি কোনো কিছুতে নিজের কোনো মতামত থাকতে পারে না। সবকিছুতে নয় বাদ দিলাম কিন্তু তার নিজের বেলাতেও কি মতামত দেওয়ার অধিকার নেই।’
অহনার বাবা এবারও চুপ করে রইলো মেয়ের মনে যে তাকে নিয়ে হাজারো অভিযোগ আছে তা ধীরে ধীরে বের হচ্ছে। অহনা চুপ রইলো অনেকক্ষণ তার চোখ ভেসে আসছে অহনা নিজেকে সামলালো তারপর বললো,
‘ আমার বিয়েতে মত আছে কি না তাতে কি কিছু আসে যায় বাবা। এত আয়োজন করেছো মেয়েকে স্বামীর বাড়ি পাঠানোর জন্য, বৃথা কি করে হতে দেই। আমি এখন যাই বুঝলে বিয়ের জন্য তৈরিও তো হতে হবে।’
বলেই অহনা সোজা হয়ে দাঁড়ালো তারপর আর কিছু না ভেবে ধীরে ধীরে চলে গেল নিজের রুমের দিকে। চোখের পানিটুকু শেষ বারের মতো মুছে নিলো অহনা সাথে ভাবলো আজ আর কাঁদবে না। বিদায় বেলাতেও না।’
আর অহনার বাবা চুপ হয়ে শুধু বসে রইলো, মেয়েটা তাকে কথাগুলো খুব শান্ত স্বরে বললেও এর আঘাতটা যেন ছিল তীব্র।’
___
বধূবেসে আয়নার সামনে বসে আছে অহনা। খুব চমৎকার ভাবে ভাড়ি লেহেঙ্গা পড়িয়ে সাজানো হয়েছে তাকে। অহনা আয়নার দিকে তাকালো নীলয় চলে গেছে প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘন্টা পেরিয়ে গেছে এতক্ষণে নিশ্চয়ই ঢাকার এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রেলস্টেশন থেকে বেরিয়ে চলেও গেছে। অহনা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
‘ কি একটা আফসোসের ব্যাপার সে যাকে চাইলো প্রকৃতি তাকে দিলো না। আবার যাকে চাইলো সেই মানুষটাও তাকে চেয়েও পেল না। প্রকৃতি বোধহয় এমনই এখানে যে যাকে চায় তাকে পায় না। শুধু গল্প উপন্যাসেই হয়তো মনের মানুষকে পাওয়াটা খুব সহজ লাগে। কিন্তু বাস্তবে..
অহনা আর ভাবলো না আর ভালো লাগছে না। চোখের পানি আসতে আসতেও মুছে নিল।’
পুরো বাড়ি জুড়ে বিয়ের তোড়জোড় চলছে বরপক্ষরা খুব শীঘ্রই বাড়ির উঠোনো এলো বলে। অহনার বোন বান্ধবীদের প্রায় তাদের কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তুতি নেওয়া কমপ্লিট আজ তো জামাইর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা না হাতিয়ে তারা দমবেই না।’
বান্ধবীদের সেই শোরগোল অহনার কানেও বাজছে কিন্তু তার মধ্যে এসবে খুবই অনুভূতি শূন্য লাগছে। আচ্ছা এই মুহূর্তে যদি আহিয়ানের জায়গায় নীলয় থাকতো তাহলে অহনার রিয়েকশনটা কেমন হতো নিশ্চয়ই খুব ভালো, অনুভূতিরা হতো গাড়ো। কিন্তু আহিয়ান,, অহনা ভাবলো সে কি আহিয়ানকে ঠকাচ্ছে। তার কি নীলয়ের কথাটা তাকে বলা উচিত। পরক্ষণেই ভাবলো, না থাক এমনিতেও তার এই নীলয়কে নিয়ে অনুভূতি গড়ার কথা নীলয় ছাড়া কে-ই বা জানে আর নীলয় কোনোদিন কাউকে জানাবেও না সেও বলবে না। আহিয়ানকে মেনে নিতে হাল্কা একটু সময় লাগলেও সে পারবে নিশ্চয়ই পারবে। আহিয়ানকে সে কখনোই ঠকাবে না। আহিয়ানের মাঝেই না হয় নীলয়কে খুঁজে নিবে অহনা। যদিও এটা বলাটা যতটা সোজা করা ততটাই কঠিন। তারপরও অহনা চেষ্টা করবে আর দুনিয়াতে এমন কত গল্প আছে যেখানে দুটো মানুষ একে অপরকে অনেক ভালোবাসার পরও একে অপরকে পায় না। আর অহনার তো অল্প কিছু দিনের মাত্র। অহনা চোখ বন্ধ করে নিলো নীলয়ের ফেসটা ভেসে আসলো ছেলেটা হাসলে দু’গালে কি দারুণ টোল পড়তো দেখতে বেশ লাগতো। অহনা না চাইতেও দৃশ্যটা ভেবে হেঁসে ফেললো। ভাগ্যিস তার আশেপাশে কেউ ছিল না নয়তো এই হাসি নিয়ে না জানি কে কি বলতো?’
নানা কিছু ভাবতে ভাবতে সময় চলে গেল আরো কতক্ষণ। হঠাৎই কানে ভাজলো জামাই এসেছে, জামাই এসেছে, দু’ মুহূর্তের জন্য অহনার বুকটা যেন ছ্যাত করে উঠলো কোথায় যেন দারুণভাবে যন্ত্রণা হচ্ছে তার। অহনা নিজেকে সামলালো। আর যেন নেয়া যাচ্ছে না।’
—–
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গায়ে পাঞ্জাবি জড়িয়ে খুব উতলা হয়ে নিজের বিছানায় বসলো অহনার বাবা। মেয়েটার সাথে যেন খুব বড় অন্যায় হচ্ছে, তাদেরই ভুল হয়েছে। অহনার বাবা তার বুকে হাত দিলেন সেই মুহূর্তেই তার রুমে প্রবেশ করলেন অহনার মা। স্বামীর অবস্থা দেখে দ্রুত হেঁটে গিয়ে বললেন,
‘ কি হয়েছে তোমার?’
‘ বুঝলে অহনার মা অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে।’
অহনার মা যেন কিছুই বুঝলেন না। অবাক স্বরে বললেন,
‘ মানে কি বলছো তুমি?’
তখন অহনার বাবা কিছু বললেন। সবশুনে অহনার মা বললেন,
‘ এবার কি করবে?’
‘ জানি না অহনার মা মেয়েটা বড্ড কষ্ট পাচ্ছে।’
অহনার মা বিনিময়ে কিছু বলছেন না। এরই মাঝে রুমে হাজির হলো নীলয়ের মা আহিয়ানরা এসে পড়েছেন তারই খবর দিতে আসলেন তিনি। কিন্তু অহনার বাবা মায়ের মুখের রিয়েকশন দেখে কিছু একটা কি আন্দাজ করতে পারলেন কি না ঠিক বোঝা গেল না।’
—-
প্রায় ১০ হাজার টাকা দিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকলো বরপক্ষরা। কি সাংঘাতিক মাইয়া মানুষ আহিয়ানের শালিকারা। আহিয়ান হাল্কা হেঁসে বসলো স্টেজে। হঠাৎই তার ফোনে একটা মেসেজ আসলো। আহিয়ান তা দেখে অনেকক্ষণ চুপ থাকলো। তারপর তার মাথার পাগড়িটা খুলে বন্ধুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
‘ আমি একটু আসছি?’
বিষয়টাকে খুব বেশি গুরুত্ব না দিয়ে আহিয়ানের বন্ধুরাও বললো ‘ঠিক আছে যা’।’
—
এয়ারপোর্টের ভিতরে একটা চেয়ারে বসে আছে নীলয় অশান্ত মন, অস্থির হৃদয়। নীলয়ের ফ্লাইট আজ রাত ৯টায় অথচ সে এখানে বসে আছে সেই কখন থেকে। বাড়িতেও বলে এসেছে ফ্লাইট তার দুপুর একটার সময়। এখন ঘড়িতে বিকাল চারটা বাজে। এতক্ষণে নিশ্চয়ই অহনার সাথে আহিয়ানের বিয়েটা হয়ে গেছে হয়তো অহনাকে বিদায় দেয়াও শেষ। নীলয়ের বুক চিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বের হচ্ছে সে কি এই কষ্ট সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ এসেছিল। নীলয় তার চোখ বন্ধ করলো কল্পনায় ভাবলো তার সাথে অহনার প্রথম দেখা হওয়ার ঘটনাটা তার রুমেই খাটের ওপর টুল পেতে দাঁড়িয়ে ছিল তারপর আচমকাই তার কণ্ঠশুনে টুল থেকে পড়ে যাওয়া নীলয় দৌড়ে ধরা। নীলয়ের সেদিনই প্রথম দেখায় ভালো লেগে যায় অহনাকে কাঁপা কাঁপা ঠোঁট, মায়াবী চোখ আর লাজুকে ভরা ফেসটা যেন আজও চোখে ভাসে নীলয়ের কিন্তু পরে যখন জানে অহনার বিয়ে খেতেই তারা এখানে এসেছে তখনই ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নেয় নীলয়। কিন্তু তাও কোথায় গিয়ে যেন আটকা পড়ে অহনার মাঝে অহনার ঘোমটা দিয়ে তার সামনে আসা, হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ির রিনিঝিনি শব্দ বরাবরই যেন মুগ্ধ করে নীলয়কে আর সেদিন যখন শাড়ি পড়ে এসেছিল সেদিন তো আর ভাবলো না নীলয় চোখ খুলে নিল মুহুর্তেই। নীলয় না চাইতেও বারে বারে কাছে চলে গেছে অহনার। কিন্তু নীলয় এটা ভাবে নি অহনাও তার ওপর আঁটকে পড়বে। নীলয় অহনাকে কষ্ট দিতে চায় নি কিন্তু কি করবে সময়টাই যে বড্ড বেমানান।’
নীলয় আর ভাবলো না। কেটে গেল আরো কয়েকটু সময়। হঠাৎই নীলয়ের বাবা এসে বসলো নীলয়ের পাশে। বললেন,
‘ এখানে কেন বসে আছো নীলয়?’
নীলয় না ঘুরেই আনমনে বলে উঠে,
‘ এমনি।’
কথাটা শেষ করেই হুস আসে নীলয়ের পাশ ফিরে তাকায় মুহূর্তেই সত্যি সত্যিই তার বাবাকে পাশে বসে থাকতে দেখে বলে,
‘ ড্যাড তুমি এখানে?’
‘ হুম আমি তোমার ফ্লাইট নাকি একটায় এখন তো চারটা বাজে এখনো এখানে বসে আছো কেন?’
নীলয় জবাব দেয় না। সে কিছু বুঝচ্ছে না। এরই মাঝে নীলয়ের কাঁধে হাত রাখলো নীলয়ের মা। বললেন,
‘ হারানোর কষ্ট নিয়েই দেশ ছেড়ে যাবি বাবা?’
নীলয় যেন হতভম্ব তার বাবা মা এখানে কি করছে? নীলয় বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। এরই মাঝে তার থেকে কয়েকদম দূর থেকে দেখা মিললো অহনার বাবা মা সহ তার পুরো পরিবার এমনকি আহিয়ানের বাবা মাও আছে। নীলয় যেন সবাইকে এভাবে একসাথে দেখে চরম অবাক। হঠাৎই সবার আড়াল থেকে ভাড়ি লেহেঙ্গা পড়ে বিয়ের সাজে সজ্জিত বেসে বের হলো অহনা। নীলয় পুরো বাকরুদ্ধ এগুলো কি দেখছে সে। আহিয়ান এগিয়ে আসলো নীলয়ের দিকে। খুব স্বল্প স্বরে বললো,
‘ ভালোবাসা যখন নিজ থেকে ধরা দেয় তখন তার থেকে পালাতে নেই মিষ্টার নীলয়। এটা ঠিক অহনাকে আমার ভালো লেগেছিল কিন্তু ওকে বিয়ে না করতে পারলে আমি কষ্টে জর্জরিত হয়ে যাবো এমনটা কিন্তু নয়। কারণ আমার আর অহনার মাঝে ভালোবাসার মতো কিছুই হয় নি। খারাপ একটু লাগছে কিন্তু দুটো ভালোবাসার মানুষ তাদের ভালোবাসাকে পাচ্ছে এটা ভেবে আনন্দ হচ্ছে। সবসময় থাকুন অহনার নীলয় সাহেব।’
বলেই আহিয়ান চলে গেল। তারপর একে একে সবাই নীলয়ের কাঁধে হাত দিয়ে আর মুচকি হেঁসে চলে গেল দূরে। পরে শুধু সামনাসামনি দাঁড়িয়ে ছিল অহনা আর নীলয়। দুজনের দৃষ্টিই দুজনের দিকে।’
অহনা কল্পনা করলো কয়েকঘন্টা আগে ঠিক কি ঘটেছিল তাদের সাথে।’
আসলে সকালে নীলয় যখন অহনার রুমে ঢুকে শেষ বারের মতো কিছু বলে চলে যায় ঠিক সেই মুহূর্তে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে অহনার বাবা সবটা শোনে। সাথে এটাও বুঝে অহনার থেকে পালাতেই নীলয় এভাবে চলে যায়। অহনা কতবার বললো তার বাবার সাথে এ বিষয় নিয়ে কথা বলতে অথচ নীলয় শুনলোই না। অহনার বাবা যদি শুরু থেকে নীলয়ের কথা না শুনতো তাহলে হয়তো নীলয়কে ভুল বুঝে বাড়ি থেকে অপমান করে বের করে দিত কিন্তু সে যা শুনেছে আর দেখেছে তাতে করে তারই মেয়ের দোষটা বেশি। নীলয় বেরিয়ে যাওয়ার পর অহনার বাবা অনেক কিছু ভাবেন তারপরই ছাঁদে গিয়ে সাথে কথা বলে অহনার সাথে কথা বলতেই পুরো বিষয়টা ক্লিয়ার হয়। তার সম্মানের কথা ভেবেই নীলয় চলে আসে বিয়ের আসর থেকে আর তার মেয়েটাও যে বাধ্য হয়ে বিয়েটা করতে যাচ্ছিল ভেবেই খারাপ লাগে ওনারা। তখনই অহনার বাবা সিদ্ধান্ত নেয় এই বিয়ে দিবে না মেয়েটার সুখ যেখানে সেখানেই যাবেন তিনি। এতে তার সম্মান চলে গেলে গেছে। এমনিতেও আজকাল মানুষের ওতসময় কোথায় দু’দিন একটা বিষয় নিয়ে কথাবার্তা চলবে তারপর সবাই সব ভুলে যাবে। অহনার বাবা তারপরই আহিয়ানকে মেসেজ দিয়ে তার রুমে ডাকে। সব খুলে বলে আহিয়ানকে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো আহিয়ান শুরুতেই রাজি হয়ে যায়। ছেলেটা যে এত ভালো এটা যেন সত্যি ভাবে নি অহনার বাবা। আহিয়ান অহনার সাথেও খানিকটা কথা বলে। আর তারপরই কনে বেসেই তাকে নিয়ে ছুটে আসে এয়ারপোর্টে। কারণ নীলয়ের ফ্লাইট যে আজ রাত ন’টায় এটা আর কেউ না জানলেও নীলয়ের মা জানতো। তাই তো সবাইকে নিয়ে ছুুটে আসলেন এয়ারপোর্টে।’
ফ্লাসবেক ওভার….
নীলয়ের যেন বিষয়টা বিশ্বাসই হচ্ছে না। তবে কি সত্যি সত্যিই অহনা নীলয়ের হতে যাচ্ছে।’
অহনা নীলয় সামনাসামনি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে কি করবে না করবে তাই যেন বুঝতে পারছে না। অহনা নীলয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ এখনো বলবেন নীলয় সাহেব আপনি আমায় ভালোবাসেন না?’
নীলয় হেঁসে ফেলে চোখে ছলছল পানি নিয়েও কি মারাত্মক হাসি তার। নীলয় আচমকাই জড়িয়ে ধরলো অহনাকে। বললো,
‘ তোমায় সত্যি ভীষণ ভালোবাসি রমণী। খুব ভালোবাসি।’
নীলয়ের কথা শুনে অহনাও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নীলয়ের। কান্না ভেজা কণ্ঠে বলে,
‘ আমিও বাসি ভীষণ বাসি।’
দূর থেকে এদের একটুখানি ভালোবাসার দৃশ্য দেখে সবাই মুচকি হাসে। বের হয় বাহিরে অহনার বাবা বুকে জড়িয়ে ধরে আহিয়ানকে বলে,
‘ তোমায় যে কি বলে ধন্যবাদ জানাবো বাবা।’
আহিয়ান হাল্কা হেঁসে বলে,
‘ ধন্যবাদ দেয়ার দরজার নেই আঙ্কেল। ভালোবাসার বিষয় তো ভালোবাসার মানুষের সাথে হওয়াই সুন্দর।’
সবাই তার চোখের পানি মুছে আহিয়ান ছেলেটা কি ভালো। তাবাসসুমের আহিয়ানের ব্যক্তিত্বটা দারুণ লেগেছে। তবে কি এর মাঝেও আহিয়ানের প্রতি অনুভূতি জন্মাচ্ছে কোনোভাবে। আনমনেই হেঁসে ফেললো তাবাসসুম। হয়তো এই হাসির ভিড়েই নতুন কোনো গল্পের সূচনা ঘটবে রঙিনভাবে।’
—
নিজের ব্যাগপত্র নিয়ে অহনাকে নিয়ে এয়ারপোর্টের বাহিরে বের হলো নীলয়। বাকিরা আগেই তাদের গাড়ি নিয়ে চলে যাচ্ছে। আর নীলয় অহনার জন্য একটা গাড়ি ছেড়ে গেছে তারা বাড়ির উদ্দেশ্যে। নীলয় এতে হাসলো একটু। নিজের হাতটা এগিয়ে দিল অহনার দিকে। অহনাও ধরলো হাত আচমকাই হাল্কা মেঘাচ্ছন্নতায় ঘেরা আকাশটা গর্জে উঠলো। নীলয় দেখলো তা। দাঁড়িয়ে পড়লো ওখানে। তারপর শীতল কণ্ঠে বলতে লাগলো,
‘ জানো তো রমণী, ওই যে আকাশের মেঘ দেখছো সেই,
মেঘ বলেছিল তুমি আমার, কিন্তু আমি শুনি নি।’
তুমি বলেছো তুমি আমার, আমি তাও মানতে চাই নি।’
আমার হৃদয়টা ক্ষণে ক্ষণে বোঝাচ্ছিল তুমি আমার,
তাও আমি মানি নি
কারণ সময়টা যে বড্ড বেমানান ছিল। কিন্তু একটা জিনিস দেখো এই যে তোমার বিয়ে ঠিক হওয়া, আমার এখানে আসা, তোমাকে ভালোবাসা সবকিছুই যেন একটা বেমানান সময়ের অংশ।’
তবে আজ দেখো বেমানান সেই সময়টা ছাড়িয়ে পুরো প্রকৃতি আবার বলছে তুমি আমার আজ তো মানতেই হয় বলো। তোমায় আর হারাবো না ওই দূর সীমানায় ছোট্ট একটা বাড়ি পেতে থাকবো সারাজীবন দু’জন দুজনের হয়ে ঠিক আছে। আই রিয়েলি রিয়েলি লাভ ইউ।’
অহনা শুধু মুচকি হাসে এতে। আর বলে,
‘ আমিও আপনায় ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি নীলয় সাহেব।’
অতঃপর কথাগুলো বলে দুজন দু’জনের হাত ধরেই হেঁটে গেল। আর তো কিছুক্ষণ সময়ের অপেক্ষা তারপরই তো তারা হয়ে যাবে দুজন দুজনরাই।’
আকাশটা মেঘে ভেসে উঠলো, প্রকৃতিরা ছুঁয়ে দিচ্ছিল মিষ্টি বাতাস। আর এই মিষ্টি বাতাসেই দুলছিল নীলয় আর অহনা দুজন। কি মিষ্টি এক অনুভূতি, হারিয়ে যেতে যেতে যাওয়া ভালোবাসা আবার ফিরে পাওয়ার অনুভূতিটা যেন সত্যি চমৎকার।’
– সমাপ্ত….❤️