মেঘ বলেছে তুমি আমার পর্ব-১৪

0
309

#মেঘ_বলেছে_তুমি_আমার❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্ব:১৪
_______________

খুব অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে নীলয় আর অহনা। হঠাৎই নীলার ডাকে হুস আসলো দুজনের। নীলা বললো,

‘ আপু,

নীলয় অহনাকে ছাড়লো। খানিকটা দূরত্বতা বজায় রেখে বললো,

‘ সাবধানে যাও,

অহনা শুনলো দ্রুত হাক্কা থেকে হেঁটে আসলো ওপারে নীলয়ও গেল। তারপর নিজের জুতোটা দ্রুত পায়ে দিয়ে অগ্রসর হলো নীলয় অহনাদের পিছু পিছু।’

মাটির তৈরি একটা ছোট্ট বাড়ি চারপাশে মাটির দেয়াল আর চাউনি হিসেবে টিন দেয়া। রুম একটা তবে সামনে উঁচু করে মাটি দিয়ে বারান্দার মতো বানানো যার চারপাশে কিছু নেই শুধু উপরে টিন দেয়া। সেই বারান্দাতেই সিঁড়ির সামনে বাঁশের সাথে জাল বেঁধে নতুন জাল বুলছে রাঙা দাদি ওনার ভালো নাম হলো রঙিলা বেগম। তিনি দেখতে অসম্ভব ফর্সা পুরো বিদেশিদের মতো। জুয়ান বয়সে অত্যাধিক সুন্দর ছিলেন তিনি। তাই তো গ্রামের সবাই রাঙা বলে ডাকে তাকে কেউ রাঙা ভাবি, কেউ রাঙা মামি, রাঙা চাঁচি, ওনার স্বামী ডাকে রাঙা বিবি আর অহনা ওরা ডাকে রাঙা দাদি। দাদি দেখতে শুনতে যেমন সুন্দর তেমন ভাবে মনটা আর মানুষটাও যথেষ্ট ভালো। অহনা রাঙা দাদিকে দেখেই মুচকি হাসলো একটা নীল রঙের কাপড় পড়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে জাল বুনছেন তিনি। অহনা ওরা মুচকি হেঁসে এগিয়ে গিয়ে বললো,

‘ কেমন আছো রাঙা দাদি?’

উত্তরে বুড়ি হাল্কা হেঁসে বললো,

‘ হ ভালো তোরা কেমন আছিস?’

‘ হুম ভালো।’

বুড়ি এবার নীলয়ের দিকে তাকালো। বললো,

‘ ও কে নাতজামাই নাকি?’

খানিকটা লজ্জা পেল অহনা মাঝি দাদুর মতো বুড়িও ভুল বুঝচ্ছে কেন? অহনা শুঁকনো হেঁসে বললো,

‘ না দাদি উনি সে নয় উনি হলো বাবার বন্ধু আফজাল হোসেনের ছেলে নীলয়।’

নীলয় মুচকি হেসে বললো,

‘ আসসালামু আলাইকুম দাদিআপু ভালো আছেন?’

দাদিও শুঁকনো হেঁসে জবাব দিলো,

‘ ওলাইকুম আসসালাম হুম ভালো তুমি?’

‘ জি ভালো।’

অহনা ওরা বসলো দাদির পাশ দিয়ে নীলয় দাঁড়িয়ে আশপাশ দেখছে। আশেপাশে কোনো বাড়ি নেই ছোট্ট একটা উঠান যার চারপাশে গাছপালায় ভরপুর বাড়ির সামনে মস্ত বড় কদম গাছ কদম ধরেছে তাতে কি মিষ্টি সুবাস আসছে। জায়গাটা পুরোই পরিপাটি তেমন ধুলোবালি জমা নেই হয়তো কতক্ষণ আগেই রাঙা দাদি পরিষ্কার করছে এগুলো। বাড়ির একদিকে অহনাদের মতোই মুরগীর খোপ আছে উনিও হয়তো মুরগী পালেন তাতে। রাঙা দাদি জাল বুনায় কয়টা প্যাচ দিয়ে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘ তোরা বস আমি এখনই আচার নিয়ে আইতাছি।’

অহনা নীলা খুশি হলো। বললো,

‘ ঠিক আছে।’

রাঙা দাদি চলে গেলেন। অহনা বসলো রাঙা দাদির বানানো সাদা জালের কাছে অহনাও জাল বুনতে জানে তাই সেও হাত লাগালো তাতে। হঠাৎই পরিষ্কার আকাশটায় মেঘ জমেছে, রোদ্দুরেরা হুট করেই হারিয়ে গেল জেনো কোথায়, পাখিরাও উল্টোদিকে ছুটে যাচ্ছে, কালো অন্ধকাররা ধেয়ে আসছে একটু একটু করে। বাতাস ছুটছে অদ্ভুতভাবে ধুলা দিয়ে যাচ্ছে পুরো। আচমকা প্রকৃতির এমন ভয়ংকর রূপ দেখে রাঙা দাদি দৌড়ে আসলো। ভয়ংকর ঝড় ওঠার পূর্বাভাস চলছিল তখন। অহনা ওরাও ঘাবড়ে গেল বাড়ি ফেরার জন্য পা বাড়াতে চাইলেও রাঙা দাদির কথায় বাড়াতে পারলো না। নীলয় ভিতরে ঢুকলো। বললো,

‘ ভয়ংকরভাবে কি ঝড় উঠবে এখন?’

রাঙা দাদি আকাশ পথে তাকিয়ে বললো,

‘ মনে তো তাই হচ্ছে তোমরা বহো আমার চালের উপর আচার দেয়া আছিল আমি গিয়া নিয়া আসি।’

এবার নীলা বললো,

‘ তোমায় যেতে হবে না আমি দেখছি,

বলেই মই বেয়ে দ্রুত চালে উঠে আচার রাখা বোওম আর কুলা নিয়ে নামলো নীলা। অহনা প্রশ্ন করলো,

‘ রাঙা দাদু কি মাঠে আছে রাঙা দাদি?’

‘ না উনি একটু আমগো বাড়িতে গেছে।’

‘ ওহ,

‘ হুম তোরা বস ভয় পাইস না। আর এখন বাড়ি যাস না মাঝপথে ঝড় উঠলে সব কয়ডার বিপদ।’

অহনা শুনলো। বললো,

‘ ঠিক আছে রাঙা দাদি।’

বলতে না বলতেই আকাশ পথ বেয়ে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। ঝবঝব শব্দ করে বৃষ্টি পড়ছে মাথার ওপর টিন থাকার কারনে শব্দটা আরো বেশি জোড়ালো শোনাচ্ছে। নীলয় চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে প্রকৃতির শীতল ছোঁয়া যেন তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। টিন বেয়ে পানি পড়ছে মাটিতে। রাঙা দাদি দ্রুত বাড়ির ভিতর থেকে বালতি নিয়ে এসে রাখলো সামনে। তারপর বৃষ্টির পানি এসে পড়তে লাগলো সোজা বালতির ওপর। কারেন্ট নেই অনেক আগে থেকেই। রাঙা দাদি ভিতরে ঢুকে ল্যাম জ্বালিয়ে ডাকলো ওদের। বললো,

‘ এই তোরা হগ্গোলে ভিতরে আইয়া বস। আমি খিচুড়ি রানমু এখন একসাথে খাওন যাইবে আনে।’

নীলা জহির খুশি হলো রাঙা দাদির খিচুড়ি টাও অসম্ভব মজা হয় এর আগেও খেয়েছে ওরা। নীলা জহির দৌড়ে ছুটে গেল ভিতরে। আর নীলয় অহনা দাঁড়িয়ে রইলো নীলয়ের ভীষণ শীত করছে হুট করে তার শীত কেন লাগছে সে বুঝচ্ছে না। নীলয়ের অবস্থাটা অহনা বুঝলো কি না বোঝা গেল না। অহনা বললো,

‘ নীলয় সাহেব চলুন ভিতরে যাই?’

নীলয় শুনলো। বললো,

‘ ঠিক আছে চলো।’

অতঃপর অহনা আর নীলয়ও চলে গেল ভিতরে।’
___

চারপাশে নারকেল গাছে পাতা দিয়ে বেড়া দেয়া আর মাথা ওপর কালো বড় পলিথিনের কাগজ দিয়ে ছাউনি দিয়ে রান্নাঘর তৈরি। সামনেই মাটির সাথে মিশিয়ে মাটির চুলা বেশ পরিপাটি আর পরিষ্কার। রাঙা দাদি চাল, ডাল, আলু দিয়ে চুলা জ্বালিয়ে রান্না করছেন গরম গরম খিচুড়ি। নীলয় গিয়ে বসলো চুলার পাশ দিয়ে। চুলার গরম তাপে এখন বেশ লাগছে তার। নীলয় প্রশ্ন করলো,

‘ আপনি কি একাই থাকেন এখানে রাঙা দাদিআপু?’

রাঙা দাদি মিষ্টি হেঁসে বললো,

‘ একা থাকমু কেন তোমাগো রাঙা দাদু আছে না।’

‘ সেটাই আপনারা দুজনই থাকেন।’

‘ হ,

নীলয় আর কিছু বলে না তাকিয়ে থাকে বাহিরে বৃষ্টির রেখা যেন ধীরে ধীরে আরো বাড়ছে। তবে নীলয়ের বেশ লাগছে সে এইভাবে কখনো চুলার পিটে বসে বৃষ্টি দেখে নি।’

প্রায় দেড় ঘন্টা বসে খিচুড়ি রান্না করে খিচুড়ি নিয়ে ভিতরে ঢুকলো রাঙা দাদি। একটু দেরি হওয়ার কারন চারপাশ দিয়ে বাতাস আসার কারণে চুলা ঠিক ভাবে জ্বলতে চাচ্ছিল না। একটা ভুল হয়ে গেছিল তা হলো ঘরের চুলাটায় রান্না করলেই ভালো হতো। এই দেড় ঘন্টায় নীলয় রাঙা দাদির সামনেই বসে ছিল চুলার পিটে। মাঝে অহনা নীলারা একবার আসলেও আবার ভিতরে চলে গেছে। নীলয়ের বেশ লেগেছে রাঙা দাদিকে। বেশ ফানি টাইপ আর ভালো মনের মানুষ তিনি।’

.
ঘরের মধ্যে বড় পাটি বিছিয়ে গোল হয়ে বসে আছে অহনা, নীলা, জহির আর নীলয়। তাদের সামনেই ওদের প্লেটে খিচুড়ি বেরে দিচ্ছে রাঙা দাদি। নীলয় যেন খুবই মুগ্ধ হচ্ছে রাঙা দাদির কাজে এভাবে অপরিচিত একটা ছেলেকে কেউ যত্ন করে খাওয়ায় বুঝি। বাহিরে এখনও বৃষ্টি হচ্ছে।

নীলয় প্রথমে ভেবেছিল তাকে হয়তো এটা খাওয়ার জন্য চামচ দিবে কিন্তু দিলো না সবাই দেখি হাত দিয়েই খাচ্ছে। নীলয়ও ওদের দেখাদেখি হাত ধুয়ে খাওয়া শুরু করলো। খিচুড়ির একটু খানি মুখে দিতেই নীলয়ের চোখে মুখের রিয়েকশন যেন পাল্টে গেল শুধু চাল, ডাল আর আলু দিয়ে বানানো খিচুড়ির স্বাদ এত সুন্দর আর ভালো হয় কি করে? নীলয়ের রিয়েকশন দেখে রাঙা দাদি প্রশ্ন করলো,

‘ কেমন লাগতাছে খিচুড়ি দাদুভাই?’

নীলয় রাঙা দাদির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,

‘ কি যে ভালো লাগছে দাদিআপু বলে বোঝানো যাবে না।’

রাঙা দাদি খুশি হলেন। মুচকি হেসে বললো,

‘ পেট ভরে খাইবা কিন্তু।’

নীলয় মুচকি হাসে। কি সুন্দর একটা সময় বাহিরে বৃষ্টি পড়ছে প্রকৃতিটা শীতল আর এসবের মাঝে এমন মাটির ঘরের মাঝে পাটি বিছিয়ে মাঝখানে ল্যামের আলোতে খিচুড়ি খাওয়ার মজাটা যেন একটু বেশি সুন্দর। নীলয় তার জীবনে এমন সুন্দর মুহূর্ত কখনো কাটায় নি। নীলয়ের ভাবনার মাঝে জহির বলে উঠল,

‘ বাহ বুড়ি তুমি তো দেখতাছি নীলয় ভাইয়ারে পাইয়া আমারে ভুইল্লাই গেছো। ভুইল্লা যাইও না আমি কিন্তু তোমার দুই নাম্বার স্বামী।’

জহিরের কথা শুনে সবাই উচ্চস্বরে হেঁসে ফেলে। রাঙা দাদি বলে,

‘ আরে তোমারে কেমনে ভুলি জহির দাদুভাই নেও আর একটু খিচুড়ি লও।’

আবার হেসে ফেলে সবাই। হাসি ঠাট্টা আনন্দ আর বৃষ্টিমুখর সুন্দর প্রকৃতি নিয়ে তাদের সময় কাটছিল দারুণ। অহনা খাওয়ার ফাঁকে বার বার দেখছিল নীলয়কে আর মনে মনে আওড়াচ্ছিল,

‘ আমি বার বার কেন আপনার ওপর এমন মুগ্ধ হচ্ছি নীলয় সাহেব? আমি যে আপনার প্রেমে পড়ছি প্রতিনিয়ত তার খবর কি আপনি রাখছেন বলুন?’

অহনা নীলয়ের থেকে দৃষ্টি সরালো। অহনা দৃষ্টি সরাতেই এবার নীলয় তাকালো অহনার দিকে। মনে মনে বললো,

‘ আমায় ভুল করেও ভালোবাসতে যেও না রমণী এতে যে দুঃখ ছাড়া আর কিছু মিলবে না।’

#চলবে…

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]

#TanjiL_Mim♥️