#মেঘ_বলেছে_তুমি_আমার❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১৫
_______________
হুট করেই খাওয়া ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো অহনা। এতক্ষণ সে এসব কি ভাবছিল ভেবেই বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো অহনার। তার জীবনে আহিয়ান আছে এটা সে ভুলে গেল কি করে?’ – অহনাকে আচমকাই খাওয়া ছেড়ে উঠতে দেখে অবাক হয়ে বললো রাঙা দাদি,
‘ কি হলো অহনা বুড়ি এভাবে উঠে গেলি কেন?’
নীলয়ও তাকালো তখন অহনার মুখ পানে। অহনা এক পলক নীলয়ের দিকে তাকিয়ে পুনরায় রাঙা দাদির দিকে তাকিয়ে জবাব দিলো,
‘ আমার খাওয়া হয়ে গেছে রাঙা দাদি আমি দাঁত ধুয়ে আসি।’
বলেই ছুটে গেল অহনা। অহনার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো নীলয় সে কি অহনার এহেম অস্বাভাবিক আচরণের কারণটা ধরতে পারলো ঠিক বোঝা গেল না।’
সময় গড়ালো বৃষ্টি থামতেই অহনা, নীলয়, জহির আর নীলা রাঙা দাদিকে বিদায় জানিয়ে চলে আসলো বাড়ি। রাস্তাঘাট তখনও অন্ধকার আর পিছলা ছিল বৃষ্টির আভাস পুরোপুরি যায় নি তখন।’
ঘড়ির কাটা জুড়ে টিক টিক শব্দ। নির্ঘুম একটা রাত। অহনা শুয়ে আছে নিজের বিছানার ওপর ভিতর থেকে বড্ড খারাপ লাগা আর নিজের উপর রাগ হচ্ছে তার। দুপুরে সে কিসব ভাবলো নীলয়কে নিয়ে। এসব তো অন্যায় যতই হোক তার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আহিয়ানের সাথে আর কদিন বাদেই বিয়ে। আর সে কি না এখন অন্য আরেকটা ছেলের প্রেমে পড়ার গন্ধ মাখছে। ছিঃ অহনা ছিঃ তোর তো লজ্জা হওয়া উচিত। এসব অনুভূতির কোনো মূল্য বা অর্থ কোনোটাই নেই। কিন্তু তাও অহনা নিজেকে মানাতে পারছে না। তার খুব কষ্ট হচ্ছে এমনটা হওয়াটা যে বড্ড বেমামান এটা তার মন মানতে চাইছে না। অহনার ফোন বাজলো এত রাতে কে ফোন করলো তাকে অহনা ঘড়ির দিকে তাকালো প্রায় রাত দুটো বাজে। এত রাতে কে ফোন করলো তাকে। অহনা ফোনটা তুললো আহিয়ান ফোন করেছে তাকে। অহনা বেশ অবাক হলো আহিয়ানকে এতরাতে ফোন করতে দেখে, এতরাতে আহিয়ান কখনোই তাকে ফোন করে না। অহনা বুঝলো না ফোনটা তুলবে কি তুলবে না। অহনা এসব ভাবতে ভাবতেই কলটা কেটে গেল দ্বিতীয়বার আর কল আসলো না।’
____
সকালে সূর্যের প্রখর তেজ। গায়ে কাঁথা জড়িয়ে শুয়ে আছে নীলয়। শরীরের তাপমাত্রা বেড়েছে হুট করেই তার রাতে জ্বর এসেছে। জ্বরের ঘোরটা এতটাই তীব্র ছিল যে নীলয় কাউকে ডাকতে পর্যন্ত পারে নি। মাকে ডাকতে পারলে বোধহয় ভালো হতো। এমন হুট করে জ্বরটা কেন বাঁধলো তাই বুঝলো না নীলয়। দরজায় নক পড়লো কেউ তার রুমে এসেছে। নীলয় বিষয়টা টের পেলেও চোখ খুলে তাকাতেই যেন পারছে না। তার চোখ জ্বলছে। সচারাচর নীলয়ের তেমন শরীর খারাপ করে না কিন্তু হঠাৎ করে ফেললে বেশ বিপাকে পড়তে হয় নীলয়ের মাকে। পাশ থেকে ওঠাই যায় না।’
অহনা হেলেদুলে রুমে ঢুকে কফির কাপটা রাখলো টেবিলের উপর। তারপর আলতো স্বরে বললো,
‘ আপনার কফি নীলয় সাহেব?’
নীলয় কোনো সাড়াশব্দ করলো না। পর পর কয়েকবার আওয়াজ করার পরও নীলয়ের সাড়াশব্দ না পেয়ে কেন যেন সন্দেহ হলো অহনার। কারণ আজ সে বেশ শব্দ করেই রুমে এসেছে অথচ নীলয় জাগছে না। অহনার বুক দুরুদুরু করছে সে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল নীলয়ের দিকে। বললো,
‘ নীলয় সাহেব আপনি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন?’
নীলয় এবার আস্তে আস্তে চোখ খুললো। নীলয়ের চোখ দেখেই যেন থমকে গেল অহনা। অসম্ভব লাল হয়ে আছে চোখ দুটো। অহনা চিন্তিত স্বরে প্রশ্ন করলো নীলয়কে,
‘ আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে আপনার চোখ দুটো এমন লাল হয়ে আছে কেন?’
নীলয় বিড়বিড় করে কি জেনো একটা বলতে লাগলো যা অহনা ঠিকভাবে বুঝতে পারছে না। অহনা হতভম্ব হয়ে বললো,
‘ আপনি কি বলছেন আমি কিছু বুঝচ্ছি না।’
নীলয় তার গলার সাউন্ড আর একটু বাড়ালো। বললো,
‘ মাকে বলো আমার জ্বর এসেছে অহনা?’
অহনা এবার হাল্কা বুঝলো নীলয়ের কথা খানিকটা জুকে বললো,
‘ আপনার মাকে ডাক দিবো।”
মাথা নাড়ায় নীলয়। হঠাৎই অহনার কি হলো ধাপ করে নীলয়ের কপালে হাত ছুলো। সঙ্গে সঙ্গে যেন আরো চমকে উঠলো। বিস্মিত হয়ে বললো,
‘ আপনার তো প্রচন্ড জ্বর এসেছে?’
নীলয় কিছু বলে না। কিন্তু অহনা পড়েছে বিপাকে এবার কি করবে বাড়িতে যে কেউ নেই। সবাই তার বিয়ের কেনাকাটা করার জন্য শহরে গেছে। তাকেও সেধেছিল কিন্তু অহনা রাজি হয় নি। মাথা ব্যাথার বাহানা দিয়ে যায় নি। বর্তমানে বাড়িতে শুধু আহির,অহনা আর নীলয় আছে। নীলা আর জহির গেছে স্কুলে। অহনা ভেবে পেল না এখন কি করবে!’ অহনা নীলয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ চাচি আম্মা মানে আপনার মা তো বাড়িতে নেই নীলয় সাহেব?’
নীলয় যেন হতাশ হলো তার মা বাড়িতে নেই। নীলয় কাঁপা কাঁপা স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
‘ কোথায় গেছে ফিরবে কখন?’
‘ সে তো শহরে গেছে আসতে আসতে প্রায় দুপুর গড়াবে আবার বিকেলও হতে পারে।’
নীলয় যেন আরো হতাশ। অহনা প্রশ্ন করলো নীলয়কে,
‘ আমি কি চাচি আম্মাকে কল করবো?’
নীলয় মানা করলো। বললো,
‘ না দরকার নেই। তুমি নিজের রুমে যাও।’
‘ কিন্তু আপনার তো,
পুরো কথা শেষ করতে দিলো না নীলয় তার আগেই বললো,
‘ আমার কিছু হয় নি তুমি যাও,
‘ কফিটা,
‘ ওটা থাকুক,
অহনা উঠে দাড়ালো তার বড্ড চিন্তা লাগছে। এভাবে তো ছেলেটাকে রাখা যায় না। অহনা নানা কিছু ভাবতে ভাবতে নীলয়ের রুম থেকে বের হলো।’
অহনা যেতেই জোরে শ্বাস ফেললো নীলয়। এভাবে মা না বলে চলে যাবে এটা আশা করে নি। নীলয় বহু কষ্টে শোয়া থেকে উঠে বসলো। তার পুরো শরীর জ্বরে ভেঙে যাচ্ছে, ব্যাথায় যেন টন টন করছে গা। তার সাথে মাথায় প্রচুর যন্ত্রনা হচ্ছে। শোয়া থেকে উঠে বসায় মাথা ব্যাথাটা যেন আরো বেড়ে গেল। এই মুহূর্তে নীলয়ের একমাত্র প্রয়োজন ছিল তার মায়ের কিন্তু সেই মায় এখন নেই। নীলয় আশেপাশে তাকালো এখন এই শরীর নিয়ে নিচে নামবে কি করে। এই মুহূর্তে তাকে ফ্রেশ হতে হলে এখন নিচে নামতে হবে। কারণ অহনাদের ওয়াশরুম নিচে। নীলয় অনেকক্ষণ বসে থেকে আস্তে আস্তে পা রাখলো নিচে। দু’পা হাঁটতেই পড়ে যেতে নিলো সে সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে এসে ধরলো তাকে অহনা। জ্বরের ঔষধ নাপা এক্সট্রা দিতেই মূলত এখানে এসেছিল অহনা। কিন্তু নীলয় যে একরাতের মধ্যে এতটা দূর্বল হয়ে পড়লো এটা বুঝতে পারে নি অহনা। অহনা নীলয়কে ধরে খাটে বসিয়ে দিলো। বললো,
‘ কোথায় যাচ্ছেন এক্ষুণি তো পড়ে যাচ্ছিলেন?’
নীলয় চুপচাপ আর নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে অহনার দিকে। কিছু বলছে না। অহনা যেন বুঝলো নীলয়ের চোখের ধরন। সে শীতল কণ্ঠে বললো,
‘ আপনি বসুন আমি আহিরকে বলছি আপনায় নিচে নিয়ে যেতে।’
নীলয় এবারও কিছু বললো না। অহনা উঠে দাঁড়ালো ছুটে গেল নিচে। অহনা যাওয়ার চার মিনিটের মধ্যেই আহির হাজির। নীলয়কে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ তুমি নিচে যাবে নীলয় ভাইয়া আমার সাথে এসো?’
নীলয় শুনলো আস্তে আস্তে হাত রাখলো অাহিরের হাতে। নীলয়ের হাত ছুঁতেই আহিরও কেঁপে উঠলো প্রচন্ড গরম ধরা যায় না এমন। আহির শক্ত করে ধরলো নীলয়কে। বললো,
‘ তোমার তো অনেক জ্বর এসেছে ভাইয়া ডাক্তার ডাকি?’
নীলয় কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
‘ তার প্রয়োজন পড়বে না ফ্রেশ হয়ে হাল্কা কিছু খেয়ে অহনার আনা ঔষধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবো।’
আহির আর কিছু বলতে পারে না।’
__
ঘড়ির কাঁটায় প্রায় ১১টা ছাড়িয়ে গেছে। বিছানায় মোটা কম্বল জড়িয়ে বসে আছে নীলয়। সামনেই তার মুখে খাবার খাইয়ে দিচ্ছে অহনা। খানিকটা সংকোচতা, খানিকটা বিভ্রান্তকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে নীলয়কে খাবার খাওয়াচ্ছে অহনা। কাল রাতে অহনা নিজেকে অনেক বুঝিয়েছে আর ভেবেছে নীলয়ের থেকে দূরে দূরে থাকবে কিন্তু আজ সকালেই। অহনা বুঝে না এইভাবে সবাই মিলে কেনা কাটা করার কি দরকার ছিল লিলি বুশরা আপু দুইটাও তো থাকতে পারতো। এভাবে বাড়ি শুদ্ধ সবাই মিলে শহরে যাওয়াটার কোনো মানে হয়। অহনা বেশ বিরক্ত তার পরিবারের ওপর তাদের ফ্যামিলিতে এত মানুষ অথচ এই মুহূর্তে তাদের প্রয়োজন কিন্তু তারা নেই। হঠাৎ আকাশে মেঘ ডাকলো অহনা নীলয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ আবার বোধহয় বৃষ্টি নামবে।’
অহনার কথার পিটে নীলয়ের বলতে ইচ্ছে করছিল,’ নামুক না ক্ষতি কি তাতে। কিন্তু বললো না। চুপ করে রইলো। নীলয় অহনার চোখের দিকে তাকালো মেয়েটাকে যেন আজ একটু বেশি অন্যরকম লাগছে। নীলয় দৃষ্টি সরিয়ে ফেললো অর্ধেক খাবার খেয়ে বললো,
‘ আর লাগবে না।’
অহনার জোর করার ইচ্ছে থাকলেও করলো না। মেনে নিয়ে বললো,
‘ ঠিক আছে।’
আকাশ গর্জে উঠলো আচমকা অহনা সামান্য ঘাবড়ে গেল। নীলয় দেখলো তা। জানালার পানে মুখ করে বিড় বিড় করে বললো,
‘ মেঘ আমায় কিছু বলছে রমণী,
কিন্তু আমি শুনছি না।
তোমার চোখ বোঝাচ্ছে আরো কিছু কিন্তু,
আমি ইচ্ছে করেই বুঝতে চাইছি না।
কিছু প্রেম সফল হলেও আমাদের টায় বিচ্ছেদের
যন্ত্রণা ছাড়া আর তো কিছু দেখছি না।’
#চলবে…..