মেঘ বসন্তের মায়া পর্ব-১৯

0
613

#মেঘ_বসন্তের_মায়া💛
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💛
— পর্বঃ১৯

হতভম্ব হয়ে এক প্রকার দৌড়ে বাড়ির ভিতর থেকে বের হয় আকাশ। তারপর চলে যায় সে বাড়ির পিছনের দিকে, এমন সময় গ্যান্ডমার সাথে কথা বলতে বলতে সামনের দিকে এগিয়ে আসতে ছিল তিথি। তিথি আর গ্র্যান্ডমাকে একসাথে দেখে আকাশের তো অবস্থা বেজায় খারাপ হয়তো সে যেটার ভয় পাচ্ছিস সেটা হয়ে গেছে। আকাশকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে বলে উঠল গ্র্যান্ডমা,

‘ কি হলো আকাশ এত তড়িঘড়ি করে যাচ্ছো কোথায়?’

গ্র্যান্ডমার কথা শুনে সটাং হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো আকাশ তারপর কিছুটা আমতা আমতা করে বললো,

‘ না মানে আসলে হয়েছি কি গ্র্যান্ডমা।’

‘ কি কখন থেকে আসলে না মানে করছো কিছু কি হয়েছে?’

‘ না গ্র্যান্ডমা কিছু হয়নি এমনি একটু আসছি আর কি।’

‘ হুম বুঝেছি।’

গ্র্যান্ডমার কথা শুনে কিছুটা অবাক হয়ে বললো,

‘ কি বুঝেছো গ্র্যান্ডমা?’

উওরে একবার তিথির দিকে আর একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন গ্র্যান্ডমা।

এমন সময় দূর থেকে শিমুল আসলো দৌড়ে গ্র্যান্ডমা আকাশ আর তিথির দিকে। তারপর বললো,

‘ গ্র্যান্ডমা গিয়ে দেখো তোমার সাথে কারা দেখা করতে এসেছে?’

শিমুলের কথা শুনে অবাক হয়ে বললো গ্র্যান্ডমা,

‘ আমার সাথে কারা এসেছে?’

‘ তুমি চলো আমার সাথে গেলেই দেখতে পাবে।’

উওরে আকাশের মুখের দিকে তাকায় গ্র্যান্ডমা। গ্র্যান্ডমাকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে বলে উঠল আকাশ,

‘ এত কি ভাবছো চলো।’

উওরে কিছু না বলেই বিস্ময় ভরা মুখ নিয়ে এগিয়ে গেল গ্র্যান্ডমা সাথে শিমুলও। গ্র্যান্ডমা আর শিমুলকে যেতে দেখে আকাশ চলে যায় তিথির সামনে। আকাশ কিছু বলার আগেই তিথি বলে উঠল,

‘ কাল আপনি আমায় মিথ্যে বলেছিলেন কেন?’

তিথির কথা শুনে নিজের মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে উঠল আকাশ,

‘ সরি আসলে আমি বুঝতে পারি তুমি এত ভয় পেয়ে যাবে।’

‘ 😒😒😒

‘ সরি।’

‘ আপনি জানেন কালকে আমি কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।’

‘ সরি বললাম তো।’

‘ ইট’স ওকে।’

বলেই আকাশ তিথি দুজনেও চললো বাড়ির ভিতরে।’

____

অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে গ্র্যান্ডমা সামনের তিনজন ব্যক্তির দিকে। চোখ দিয়ে অটোমেটিক পানি পড়ছে তাঁর। কারন সামনের তিনজন ব্যক্তি হলো গ্র্যান্ডমার ছোট বেলার সাথী শিউলি,শেফালি আর পার্বতী। অবাকের চেয়েও চরম অবাক গ্র্যান্ডমা সে ভাবতেই এমন কিছু হতে চলছিল তার সাথে। জাস্ট হা হয়ে তাকিয়ে রইলো গ্র্যান্ডমা ওদের দিকে। গ্র্যান্ডমাকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো শিউলি,

‘ কি হলো রদু এভাবে তাকিয়েই থাকবি নাকি আমাদের কাছেও আসবি?’

শিউলির কথা শুনে নিজের ইমোশনকে আর ধরতে পারলো না গ্র্যান্ডমা দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে তিন বন্ধুকে একসাথে জড়িয়ে ধরলেন,তারপর বললেন,

‘ তোরা,আমার তো বলে বিশ্বাসই হচ্ছে না তোরা আমার সামনে কতবছর পর তোদের দেখলাম।’

‘ আমরাও তো রদু ( শেফালী)

‘ তুই তো বুড়ি হয়ে গেছিস (পার্বতী)

উওরে ওদের ছেড়ে দিয়ে হাসিমাখা মুখ নিয়ে বললো গ্র্যান্ডমা,

‘ হুম আর তোরা তো এখনো জুয়ান আছো।’

উওরে তিনবন্ধু একসাথে হেঁসে উঠল। তারপর জুড়ে দিল চার বন্ধ গল্পের ঝুলি। হাসি, ঠাট্টার মধ্যে জমে উঠলো গ্র্যান্ডমাদের গল্পের আসর।’

অন্যদিকে দূর থেকেই গ্র্যান্ডমাকে এত আনন্দ আর খুশি হতে দেখে চরম খুশি আকাশ তিথি। আকাশ খুশি মনে বলে উঠল তিথিকে,

‘ থ্যাংক ইউ।’

উওরে একপলক আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো তিথি।’

দেখতে দেখতে কেটে গেল পুরো একসপ্তাহ। হাসি ঠাট্টা আনন্দের মাঝখানেই কেটে গেল পুরো একসপ্তাহ সাথে জমানো হলো কিছু নতুন স্মৃতি। আজ ঢাকার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাবে আকাশ তিথি আর গ্র্যান্ডমা।

গাড়ির সামনে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ আর অপেক্ষা করছে গ্র্যান্ডমা আর তিথির জন্য। এমন সময় বলতে না বলতে হাজির গ্র্যান্ডমা আর তিথি। কিছুদূর এগোতেই গ্র্যান্ডমা কাশতে শুরু করলো। ইদানীং গ্র্যান্ডমার কাশিটা আগের চেয়েও বেড়ে গেছে। বিষয়টার জন্য এতদিন ভালো লাগার মুহূর্ত দিয়ে কাটলেও খারাপ লাগাও চলেছে খুব। ছোট্ট দীর্ঘ শ্বাস ফেললো আকাশ,এরই মধ্যে আকাশের সামনে এসে হাজির হলো গ্র্যান্ডমা আর তিথি। তারপর আর কি তিনজনই একসাথে পাড়ি দিলো আবারো পুরোনো সেই বাড়ির উদ্দেশ্যে। আর ফেলে গেল কি সুন্দর অতীত।’

____

একটা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে সাথী হাতে রয়েছে তার কিছু খাবারের প্যাকেট সাধারণত খাবার ডেলিভারি করতেই সাথী এসে৷ দাঁড়িয়েছে এই বাড়ির সামনে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ডেলিভারির কাজে জয়েন হয়েছে সাথী। মোটামুটি ভালোই লাগছে তার এই কাজ করতে। কিন্তু এই মুহূর্তে বিরক্ত লাগছে সাথীর কারন বেশ কিছুক্ষন যাবৎই দাঁড়িয়ে আছে একটা বাড়ির সামনে সাথী, বেশ কয়েকবার কলিংবেলও বাজিয়েছে বাট ভিতর থেকে দরজা খোলার নাম নেই। কিছুটা বিরক্ত হয়ে জোরে দরজায় নক করলো সাথী সাথে সাথে দরজা আপনাআপনি খুলে গেল। এতে বেশ অবাকই হলো সাথী তারপর বেশি কিছু না ভেবে আস্তে আস্তে ঢুকলো বাড়ির ভিতরে। কিন্তু আশেপাশে কাউকেই দেখতে পেলো না সে। পুরো বাড়িটায় একবার চোখ বুলালো সাথী অল্প কিছুক্ষন যাওয়ার পর বিরক্তির চরম সীমানায় পৌঁছে গেল সাথী কারো পুরো বাড়িটাই ফাঁকা। আশেপাশে কাউকেই দেখতে পাচ্ছে না। সাথী বুঝতে পারছে না এখন কি করবে সে,একই তো অনেকটা দেরি হয়ে গেছে এরপর আরো দেরি হয়ে গেলে

‘ উফ!’ বিরক্ত লাগছে আমার আরে ভাই যদি বাড়িতেই না থাকো তাহলে খাবার অর্ডার করার কি ছিলো।’

এরই মধ্যে হাতে পায়ে কাঁদা মেখে ভিতরে ঢুকলো একটা ছেলে। ছেলেটিকে দেখেই চমকে উঠলো সাথী সাথে ভয়ে দুকদম পিছনে চলে গেল সে।

অন্যদিকে আচমকা কোনো মেয়েকে সামনে দেখে হৃদও বেশ চমকে উঠলো পরক্ষণেই মেয়েটার চেহারাটা চেনা লাগতেই অবাক হয়ে বললো সে,

‘ তুমি?’

‘তুমি’ শব্দটা শুনতেই সাথী যেন চমকে উঠলো সাথে তাকালো ছেলেটির মুখের দিকে। পরক্ষণেই হৃদকে দেখে দেখে অবাক হয়ে বললো,

‘ ডাক্তার আপনি,কিন্তু এমন অবস্থা কেন?’

‘ সেটা লম্বা কাহিনী তুমি বসো আমি এক্ষুনি আসছি।’

বলেই চটজলদি এগিয়ে যেতে লাগলো সাথে সাথে কাঁদায় পিছলে পড়ে যেতে নিল হৃদ। হৃদকে পড়ে যেতে সাথী দৌড়ে গিয়ে ধরলো। ঘটনা হুট করে করে হওয়াতে হৃদ সাথী দুজনেই চোখ বড় বড় করে তাকালো একে অপরের দিকে। আজ প্রায় একসপ্তাহ পর সাথী হৃদের দেখা। এমনিতে মেসেজে প্রায় কথা হয়।

মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে সাথী হৃদ একে অপরের দিকে। পরক্ষণেই দুজনের হুস আসতেই তাড়াতাড়ি সাথীকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো হৃদ তারপর বেশি কিছু না বলে চললো সে উপরে। আর সাথী নির্বিকার হয়ে তাকিয়ে রইলো হৃদের যাওয়ার পানে।’

____

পরন্ত বিকেলের পরন্ত আলোতে বসে আছে গ্র্যান্ডমা। জীবনে কত কিছু হলো সবই যেন আজ একে একে মনে পড়ছে তাঁর। এমনটা নয় গ্র্যান্ডমা জানে না তাঁর কি রোগ হয়েছে। সে তো এটা শুরু থেকেই জানতো গ্র্যান্ডমা এটাও জানে যখন তখন তার মৃত্যু ঘটতে পারে সময় যে একদমই নেই তাঁর। ছোট্ট দীর্ঘ শ্বাস ফেললো গ্র্যান্ডমা। জীবন তাকে অনেক কিছু দিয়েছে হাসি কান্না আনন্দ দুঃখ সব। আপাতত সেসব নিয়ে আফসোস করে না গ্র্যান্ডমা কারন জীবন তো এমনই হাসি কান্না মিলিয়েই। গ্র্যান্ডমার টেনশন ছিল সে চলে গেলে তার নাতিটাকে কে দেখবে কিন্তু এখন সে পুরোপুরি নিশ্চিত কারন তিথি আছে তো। আর তিথির ওপর পুরো বিশ্বাস আছে গ্র্যান্ডমার সে চলে গেলে ঠিক আকাশকে সামলে রাখতে পারবে তিথি। গ্র্যান্ডমার ভাবনার মাঝেই তার রুমে এসে হাজির তিথি। তিথিকে দেখে খুশি মনে বললো গ্র্যান্ডমা,

‘ তিথি এদিকে আসো বসো এখানে কি কথা ছিল তোমার সাথে?’

গ্র্যান্ডমার কথা শুনে তিথিও বেশি কিছু না ভেবে এগিয়ে গেল গ্র্যান্ডমার কাছে। তারপর গ্র্যান্ডমার পাশে বসে বললো সে,

‘ হুম বলো গ্র্যান্ডমা?’

তিথির কথা শুনে গ্র্যান্ডমা তিথির হাত ধরে নীরব কন্ঠে বললো,

‘ আমায় একটা কথা দিবে তিথি?’

হুট করে গ্র্যান্ডমার এমন নীরব কন্ঠ শুনে কিছুটা বিস্মিত ভরা কন্ঠ নিয়েই বললো তিথি,

‘ হুম বলো গ্র্যান্ডমা।’

গ্র্যান্ডমা কিছুক্ষন চুপ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,

‘ আমি বেশিদিন বাঁচবো না তিথি।’

হঠাৎই গ্র্যান্ডমার মুখে এমন কথা শুনে চমকে উঠলো তিথি কিছু বলবে তার আগেই গ্র্যান্ডমা বলে উঠল,

‘ জানো তো আকাশ যখন খুব ছোট তখন ওর বাবা মা মারা যায় তারপর আমি আর ওর গ্র্যান্ডফা মিলেই ওকে মানুষ করার সিদ্ধান্ত নেই কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আকাশের গ্র্যান্ডফাও আমাদের ছেড়ে চলে সত্যি বলতে সেইসব দিনগুলোর কথা ভাবলে আজও কষ্ট হয় যাক জানো তো আমার আকাশ খুব রাগী কিন্তু এমনিতে খুব ভালো। আমি জানি এতদিন তোমরা যা যা করেছো সবই আমায় খুশি করার জন্য সত্যি বলতে আমার এই কয়েকদিন জীবনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন কেটেছে এর জন্য তোমাদের অনেক ধন্যবাদ।

‘ তুমি এইভাবে কেন বলছো গ্র্যান্ডমা?’

‘ তোমার কাছে আমার একটা অনুরোধ তিথি কখনো আমার দাদাভাইকে ছেড়ে যেও। বর্তমানে ওর আপন বলতে শুধু তুমি আর আমি। আর আমি তো যখন তখন তোমাদের ছেড়ে চলে যেতে পারি তাই বলবো তিথি কখনো আমার দাদাভাই দাদাভাইকে ছেড়ে যেও না সবসময় তোমরা পাশাপাশি থেকো সাথে সুখে শান্তিতে জীবন কেটো। বলতে পারো এটাই আমার জীবনের শেষ ইচ্ছে।’

‘ গ্র্যান্ডমা…

আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই গ্র্যান্ডমা তিথির হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘ আমায় কথা দেও তিথি কখনো আমার দাদাভাইকে ছেড়ে যাবে না সবসময় ওর সাথেই থাকবে?’

গ্র্যান্ডমার এইভাবে অনুরোধের স্বরের কথা শুনে কি বলবে বুঝতে পারছে না তিথি,বার বার শুধু এগ্রিমেন্টের কথাই মনে পড়ছে তিথি। তিথিকে চুপ থাকতে দেখে বলে উঠল গ্র্যান্ডমা,

‘ কি হলো তিথি তুমি কথা বলছো না কেন?’

গ্র্যান্ডমার কথা শুনে চমকে উঠলো তিথি পরক্ষণেই নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে বলে গ্র্যান্ডমার হাত ধরেই বললো সে,

‘ আমি তোমায় কথা দিচ্ছি গ্র্যান্ডমা আমি কখনো তোমার দাদাভাইকে ছেড়ে যাবো না।’

উওরে যেন মনে শান্তি মিললো গ্র্যান্ডমার। খুশি হয়ে বললেন উনি,

‘ আমি খুব শান্তি পেলাম তিথি।’

গ্র্যান্ডমার কথা শুনে মুচকি হাসলো তিথি। কিন্তু ভিতরে ভিতরে তার খারাপ লাগছে।’
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে…..