মেঘ হবি তুই পর্ব-০৪

0
71

#মেঘ_হবি_তুই
[চতুর্থ পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

নীলা বাড়িতে এসেই অবাক হয়ে গেলো। কারণ তার বাড়ির উঠোনে বসে আছে তন্ময়, সাথে তার বাবা। দু’জনেই কিছু একটা নিয়ে কথা বলছে। কিন্তু কি নিয়ে কথা বলছে নীলা বুঝতে পারছেনা। হঠাৎ তন্ময়ের চোখ পড়ে নীলার দিকে। সে চেয়ার থেকে উঠে নীলার বাবাকে কিছু একটা বলে নীলার সামনে চলে আসে। আর নীলা দিকে একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বেরিয়ে চলে আসে।

তন্ময় সেখান থেকে বেরিয়ে সোজা বন্ধুদের কাছে চলে গেলো।

— কিরে তুই কোথায় গিয়েছিস? তোকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না।

— একটা কাজ ছিলো।

— চলো আড্ডা দেই।

— না বাসায় যেতে হবে চল।

— কি বলিস? আমাদের না একদিন থাকার কথা? তাহলে হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন কেন?

— জরুরী একটা কাজ পড়ে গিয়েছে সেই জন্য যেতে হবে। সবাইকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে বল।

— আচ্ছা।

কিছুক্ষণের মধ্যেই সবার রেডি হয়ে আসে। তারপর তারা ওখান থেকে বের হয়ে যায়। তন্ময় সোজা নিজের বাসায় চলে যায় বাকিদের থেকে বিদায় নিয়ে।

তন্ময় বাসায় গিয়ে দেখে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে। আচমকা তন্ময়কে দেখে সবাই ভূত দেখার মতো তাকিয়ে আছে।

— সবাই এভাবে আমার দিকে তাকাতে আছো কেন? মনে হয় আর কখনো দেখো নাই আমাকে?

তন্ময়ের বড় ভাই আশরাফ বলল — তোর কি শরীর খারাপ নাকি?

— আমাকে দেখে কোন দিক দিয়ে মনে হচ্ছে আমার শরীর খারাপ?

— না মানে তুই তো বলছিস ওখানে থাকবি। সেটা না করে রাতেই ফিরে আসলি? আর এতো তাড়াতাড়ি আসলি। সেই জন্য জিজ্ঞেস করলাম।

— ওখানে ভালো লাগছিলোনা। আর তোমাদের খুব মিস করছিলাম সেই জন্য চলে এলাম।

— তাই নাকি? আজ চাঁদ কোন দিকে উঠেছে?

— মজা করোনা তো। ভাবী খাবার দাও।

এই কথা বলে তন্ময় খাবার খেতে শুরু করে। খাওয়ার মাঝখানে সে তার বাবাকে বলল,

— বাবা তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো।

— বল।

— আমি বিয়ে করতে চাই।

তন্ময়ের কথা শুনে সবাই অবাক হলো। যে ছেলেকে এতোদিন ধরে বিয়ে করার জন্য বললে রেগে যেতো সে নিজে বলছে! তন্ময় আবার বলল।

— আমি আমাদের পাশের গ্রামের রাত রহীম মেয়ার মেয়েকে বিয়ে করব। তোমরা তাদের সাথে গিয়ে কথা বলে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে নিয়ো।

এই কথা বলে তন্ময় হাত ধুয়ে উঠে নিজের রুমে চলে গেলো। আর সবাই থ হয়ে আছে। তারপর কি হলো আপনারা সেটা প্রথম পর্বেই পড়েছেন।

— বুঝতে পারছিস তো এবার তোকে আমি কেন বিয়ে করছি?

কথাটা নীলাকে উদ্দেশ্য করে বলল তন্ময়।

নীলার কোনো উত্তর না পেয়ে তন্ময় রুম থেকে বের হয়ে গেলো। তন্ময় ছাদের উপরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে। তন্ময় ভাবুক হয়ে যাচ্ছে। সে তো নীলাকে বিয়ে করছে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য। কিন্তু সে নীলার মুখের দিকে তাকালে কেন জানি সে হারিয়ে যায়। কেমন অদ্ভুত মায়া কাজ করে তার মনে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আদনান নিজের রুমে চলে যায়। হঠাৎ করে নীলা তন্ময়ের পিছনে এসে দাঁড়ায়।

— শোনেন!

তন্ময় পিছনে তাকিয়ে দেখে নীলা দাঁড়িয়ে আছে।

— কি হইছে?

— আপনাকে বাবা ডাকছেন।

— আচ্ছা।

এই কথা বলে তন্ময় তার বাবার রুমের দিকে যেতে থাকে। পিছনে নীলাও যাচ্ছে কিছুক্ষণের মধ্যেই দু’জন আয়ান চৌধুরীর রুমে যায়।

— বাবা ডাকছেন আমায়?

— হুম, বিয়ের পরে তো বউমার কোথাও যাওয়া হয়নি তাই ভাবছি তোদের দু’জনকে কক্সবাজার পাঠাব। ওখান থেকে ঘুরে আয় কয়দিনের জন্য।

নীলা খুশি হয়ে বলল — খুব ভালো হবে বাবা।

নীলা নিজের অজান্তেই তন্ময়ের হাত ধরে বলল।

— প্লিজ চলুন।

তন্ময় চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে নীলার দিকে। নীলা এতক্ষণে বুঝতে পারে সে তন্ময়ের হাত ধরে আছে। এবার সে তন্ময়ের হাত ছেড়ে দেয়।

আয়ান চৌধুরী আবার বলল — কিরে তুই কথা বলছিস না কেন?

— আমি আর কি বলব? তুমি যখন বলছো তাহলে যাবো।

এই কথা বলে তন্ময় চাক গেলো। নীলা অনেক বেশি খুশি হয়ে যায়। নীলাও রুমে চলে যায়। নীলা রুমে গিয়ে দেখে তন্ময় খাটের উপরে বসে আছে।

— সরি ঐ সময় আপনার হাত ধরে ফেলছিলাম। আসলেই আমি খেয়াল করিনি। আমাকে প্লিজ ক্ষমা করবেন। আসলে আমি তো কখনও কক্সবাজার যায়নি। খুব ইচ্ছে ছিলো যাওয়ার। আমাদের কলেজ থেকে অনেক বার গিয়েছে কিন্তু আমি টাকার জন্য কখনো যেতে পারিনি। কিন্তু আমার খুব ইচ্ছে ছিলো যাওয়ার। বাবা যখন বলছিলো তখন আমি অনেক বেশি খুশি হয়ে গিয়েছি। নিয়ে যাবেনা আমাকে প্লিজ? আর সরি হাত ধরার জন্য। আমি আপনাকে পানি এনে দিচ্ছি। আমার নোংরা হাত দিয়ে স্পর্শ করা যায়গা টা ধুয়ে নিয়েন।

এই কথা বলে নীলা ওয়াশরুমের ভিতরে চলে গেলো। আর নীলার বলা কথা গুলো তন্ময়ের কাছে কেমন যেনো লাগছে। খুব খারাপ লাগছে তার কাছে। কিছুক্ষণ পরে নীলা পানি এনে বলল।

— ধুয়ে আসুন।

তন্ময় নীলার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। নীল গিয়ে মেঝেতে বিছানা করে ঘুমিয়ে পড়ে। তন্ময় ও কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে। পরের দিন সকালে সবাই নাস্তা খেতে যায়৷ তখন আয়ান চৌধুরী তন্ময়কে বলল,

— তন্ময় তোদের জন্য টিকেট কেটেছি। আর রাতেই বের হবি তোরা।

— কিসের টিকেট বাবা?

— কক্সবাজারের।

— আমাদের গাড়ি থাকতে টিকেট কেন?

— এতো দূরে ড্রাইভিং করে যাওয়া ঠিক হবে না তোর। তো তোরা সব রেডি করে রাখিস।

দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। রাত ৯ টায় তাদের বাস। সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ে দু’জন। ৯টা বাজার কিছুক্ষণ আগে দু’জন বাসে উঠে বসে। তন্ময় জানালার পাসে বসতে যাবে তখনই নীলা বলল,

— আমাকে জানালার পাশের শিটটা দেন প্লিজ। বাহিরে দৃশ্য উপভোগ করতে আমার খুব ভালো লাগে।

তন্ময় কোনো কথা না বলে নীলাকে জানালার পাসে শিটে বসতে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস ছেড়ে দেয়। বাস নিজের গতিতে চলতে থাকে। নীলা বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। বাস যতই এগুচ্ছে রাত তত গভীর হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে তন্ময়। হঠাৎ করে তার মুখের সামনে চুল উড়ে আসায় ঘুম ভেঙে যায় তন্ময়ের। তন্ময় তাকিয়ে দেখে নীলা তন্ময়ের ঘাড়ে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। আর নীলার চুল গুলো উড়ে তন্ময়ের মুখের উপরে এসে পড়ছে। নীলার চুলের ঘ্রাণ তন্ময়ের নাকে এসে পড়ছে। আজ কেন জানি তন্ময় নীলার উপরে রাগ করছেনা। নীলার চুলের ঘ্রাণ খুব ভালো লাগছে তাঁর। বাসের লাইট অফ থাকায় তন্ময় নীলার মুখ দেখতে পাচ্ছেনা। নীলাকে না সরিয়ে তন্ময় ঘুমিয়ে পড়ে। দেখতে দেখতে সকাল হবে যায়। হঠাৎ করে নীলার ঘুম ভেঙে যায়। নীলা চোখ খুলে দেখে সে তন্ময়ের ঘাড়ে মাথা দিয়ে শুয়ে ঘুমিয়েছে। নীলা সাথে সাথে নিজের মাথা সরিয়ে নেয়। নীলা এবার ঘুমন্ত তন্ময়কে দেখতে থাকে। কেমন শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে মানুষটা। যে তন্ময়কে নিয়ে হারিয়ে যায় অন্য এক জগতে। তন্ময় যে ঘুম ভেঙে নীলার দিকে তাকিয়ে আছে সে দিকে কোনো খেয়াল নেই তার। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নীলা।

হঠাৎ গাড়ি ব্রেক মারায় নীলা বাস্তবে ফিরে আসে। নীলা তন্ময়ের তাকানো দেখে নিজের চোখ সরিয়ে নেয়।

— নামতে হবে চলে এসেছি আমরা।

এবার দু’জন বাস থেকে নেমে আগে হোটেলে যায়। তারপর তারা একটা রুমের চাবি নিয়ে নিজেদের রুমের দিকে যেতে থাকে। চাবি দিয়ে রুমের লক খুলে ভিতরে যায় তারা।

রুমের ভিতরে গিয়ে নীলা বলল,,,

চলবে?