মেঘ হবি তুই পর্ব-০৫ এবং শেষ পর্ব

0
95

#মেঘ_হবি_তুই
[পঞ্চম ও শেষ পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

নীলা হোটেল রুমে গিয়ে বলল,

— আমার সমুদ্র দেখতে কখন যাবো? আমার যে সমুদ্র দেখার খুব ইচ্ছে।

— আগে আমাকে কিছুক্ষণ ঘুমাতে হবে তারপরে বের হবো। বাসে তো ঘুমাতে পারিনি ঠিক ভাবে।

— আচ্ছা।

এই বলে তন্ময় ওয়াশরুমের ভিতরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়ে। নীলা জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাতেই দেখতে পায় সমুদ্র দেখা যাচ্ছে। নীলা এবার জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে সমুদ্র দেখতে থাকে। এখন থেকে ভালো ভাবে দেখতেও পাচ্ছেনা। সে পারছেনা এক্ষনি দৌড়ে চলে যেতে। এদিকে গভীর ঘুমে তন্ময়। নীলা পায়চারি করতে শুরু করে।সময় যেনো কিছুতেই কাটছেনা। অনেক্ক্ষণ পরে ঘুম থেকে উঠে তন্ময়। তন্ময় চোখ খুলে দেখে নীলা পায়চারি করছে। নীলা পিছনে ঘুরতেই দেখে তন্ময় ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে। আচমকা নীলার মুখে একটা হাসি দেখতে পায় তন্ময়। তন্ময় বুঝতে পারে নীলা আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। নীলার হাসিটা তন্ময়ের কাছে অদ্ভুত ভালো লেগে যায়। তন্ময় কিছুক্ষণের মধ্যেই রেডি হয়ে নীলার কাছে এসে বলল,

— রেডি হয়ে আসো। বের হতে হবে এখন।

তন্ময়ের মুখে আসো কথা শুনে নীলা তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে আছে। এই প্রথম তন্ময় তাকে তুই না বলে তুমি বলল। সে যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।

— কি হলো যাবে নাকি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে?

— আমি তো রেডি হয়েই বসে আছে।

— তাহলে চলো।

তন্ময় হাঁটতে শুরু করে। নীলা তন্ময়ের পিছনে যেতে থাকে। নীলা বুঝতে পারছেনা হঠাৎ করে এই তন্ময় ওর সাথে এতো ভালো আচরণ কেন করছে? দুই দিন আগেও তো তার সাথে খারাপ আচরণ করত। তাহলে হঠাৎ এর কি হয়ে গেলো?

কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা সমুদ্রের কাছে চলে আসে। নীলা তো মহা খুশি। নীলা যখনই সমুদ্রের কাছে যেতে চাইল তখনই তন্ময় নীলার হাত ধরে পেলে।

— কি হোলো? আপনি আমাকে টেনে ধরে আছেন কেন?

— জুতা জোড়া খুলে যাও। নাহলে কিছুক্ষণ পরে আর এই জুতা খুঁজে পাবেনা।

নীলা জুতা খুলে তন্ময়ের কাছে এসে বলল।

— আপনিও আমার সাথে চলুন প্লিজ। এতো বড় ঢেউ আমার খুব ভয় করছে। প্লিজ আসুন।

— এতই যখন ভয় তাহলে আসার জন্য এতো পাগল হলে কেন?

— আসেন না প্লিজ।

তন্ময় বাধ্য হয়ে নীলার সাথে যায়। তারা যেতে যেতে অনেকটা মাঝে চলে যায়। বড় বড় ঢেউ আসছে তাদের দিকে। নীলা নিজেকে ঠিক রাখার চেষ্টা করে। আর সব কিছু খুব ভালো ভাবে উপভোগ করে। তন্ময় নীলার দিকে তাকিয়ে আছে আনমনে। মেয়েটাক খুশিতে থাকলে কতটা সুন্দর লাগে। হঠাৎ একটা বড় ঢেউ আসে তখনই নীলা টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে চাইলে তন্ময় নীলাকে ধরে ফেলে। দুজনেই বাংলা সিনেমার নায়ক নাইকার মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে দু’জন দু’জনের দিকে। তন্ময় কিছুক্ষণ পরে স্বাভাবিক হয়। নীলা খুব ভালো ভাবেই উপভোগ করতে থাকে। আর তন্ময় নীলার পাগলামি গুলো দেখছে। যেনো একটা বাচ্চা মেয়ে।

অনেক সময় পরে দু’জন চলে যায় হোটেলে। নীলা নিজের ড্রেস পরিবর্তন করে আসে। তন্ময় ও নিজের ড্রেস চেঞ্জ করে। রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। তন্ময় বিছানায় শুয়ে আছে আর নীলা মেঝেতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে দু’জনে।মাঝরাতে তন্ময়ের ঘুম ভেঙে যায় কারোর গোঙানিরর শব্দ শুনে। তন্ময় নীলার দিকে তাকিয়ে দেখে নীলা মুখ থেকে শব্দ গুলো আসছে। তন্ময় নেমে নীলার কাছে আসে। নীলার কপালে হাত দিয়ে দেখে জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে নীলার শরীর। তন্ময় কী করবে বুঝতে পারছেনা। এতো রাতে ডাক্তার ও তো আসবেনা। তন্ময় এবার নীলাকে কোলে তুলে খাটের উপরে শুইয়ে দেয়। আর নীলার মাথায় জলপট্টি দিতে থাকে। অনেক সময় পুরে শরীর কিছুটা ঠান্ডা হয়ে আসে। এদিকে তন্ময় ঘুমের জন্য তাকাতে পারছেনা। তন্ময় নীলার মাথার পাশেই ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে ঘুম ভেঙে যেতেই নীলা খেয়াল করে তন্ময় তার হাত ধরে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে। আর সে খাটের উপরে। এই অবস্থা দেখে নীলা কিছুটা অবাক হয়। নীলা পানি দেখে বুঝতে পারে রাতে তার জ্বর হয়েছে। আর তন্ময় তার সেবা করছে। এবার নীলা তার হাত সরাতে চাইলে তন্ময়ের ঘুম ভেঙে যায়।

— জ্বর কি কমেছে কিছুটা?

— হুম।

— আচ্ছা তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি নাস্তা পাঠিয়ে দিতে বলছি আর তোমার জন্য মেডিসিন নিয়ে আসি।

— মেডিসিন লাগবেনা। এমনিতেই সেরে যাবে। বেশিক্ষণ পানিতে থাকায় এই অবস্থা হইছে।

— আচ্ছা।

তন্ময় নীলার খুব খেয়াল রাখে। দেখতে দেখতে তাদের কক্সবাজার ভ্রমণ শেষ হয়ে গেলো। ভ্রমণ শেষ করে তারা নিজেদের বাড়িতে চলে গেলো। ইতিমধ্যে দু’জন দু’জনকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। কিন্তু এখনও কেউ কাওকে বলেনি।

রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে তন্ময় আর নীলা ঘুমাতে গেলে। নীলা যখন মেঝেতে বিছানা করতে যাবে তখনই তন্ময় বলল,

–নীলা তুমি চাইলে বিছানায় ঘুমাতে পারো।

— কি বলছেন এসব? আমার এই নোংরা শরীর আপনার বিছানায় লাগলে তো আপনার বিছানা নোংরা হয়ে যাবে।

তন্ময় আর কিছুই বলতে পারেনি। এই কথা বলে নীলা মেঝেতে বিছানা করে ঘুমিয়ে পড়ে। এভাবে কেটে গেলো আরো কয়েক দিন। ঘড়িতে ঠিক রাত এগারোটা বাজে। তখন ভাবী নীলার কাছে এসে বলল,

— নীলা এই শাড়িটি পড়ে নাও।

— এতো রাতে শাড়ি পড়তে হবে কেন?

— একটু দরকার আছে। আর আজকে রাতে আমি তোমাকে সাজিয়ে দেবো।

— হঠাৎ! কোথাও যাবেন নাকি?

— হ্যাঁ। এখন কথা না বলে শাড়িটি চেঞ্জ করে নাও তাড়াতাড়ি।

ভাবীর কথা শুনে নীলা শাড়ী চেঞ্জ করে। তারপর ভাবী নীলাকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়। নীলা নিজেকে আয়নায় দেখে নিজেই চিনতে পারছেনা।

— বাহ নীলা তোমাকে তো খুব সুন্দর লাগছে।

নীলা কিছুটা লজ্জা পায়। ভাবী নীলাকে বলল,

— এবার চলো সময় হয়ে গিয়েছে।

— কীসের সময়?

— চলো আমার সাথে।

নীলা রুম থেকে বের হয়ে দেখে পুরো বাড়ি অন্ধকার।

— ভাবি পুরো বাড়ি অন্ধকার হয়ে আছে কেন?

— আমি তো জানিনা চলতো গিয়ে দেখি।

এবার তারা সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করে। সিঁড়ি থেকে নামতেই হঠাৎ করে সব লাইট অন হয়ে যায়। নীলা ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়, তখনই নীলা কানে ভেসে আসে,, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ নীলা।

নীলা চোখ খুলে দেখে সবাই তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। আর নীলার সামনে অনেক বড় একটা কেক। এসব দেখে নীলা অনেক বেশি খুশি হয়ে যায়। নীলা বুঝতে পারে এগুলো তন্ময় করেছে। তারপর সবার সাথে কেক কাটে নীলা। কেক কাটা শেষ করে নীলা রুমে চলে যায়। আজ তার মন অনেক বেশি খুশি। এর আগে কখনও তার জন্মদিন পালন করা হয়নি। কিছুক্ষণ পরে তন্ময় হাতে করে কিছু একটা নিয়ে এসে নীলা দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

— শুভ জন্মদিন নীলা। জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আমি সারাজীবন তোমার পাশে থাকতে চাই। সুখ দুঃখের সাথী হয়ে থাকতে চাই। আগের সব ভুলে আমি তোমার ভালোবাসা চাই। আমি তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করছি। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি তোমাকে ভালোবাসি নীলা। ভালো বাসবে আমায়? ধরবে কি এই হাত?

নীলার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। নীলা নিজেকে ঠিক রাখতে না পেরে সোজা তন্ময়ের বুকে গিয়ে পড়ে। দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরে।

সমাপ্ত।