#মেন্টাল_হাসবেন্ড
[সূচনা পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
পাত্রী দেখতে গিয়ে উপস্থিত সবার সামনেই তূর্য পাত্রীকে বলে উঠলো, ‘আপনি কি ভা’র্জি’ন? আমার কিন্তু ভা’র্জি’ন বউ লাগবে’! তূর্যর এমন কথা শুনে উপস্থিত সবাই নড়েচড়ে উঠলো। এই ছেলের কি কোনো কান্ডজ্ঞান নেই? পাত্রীকে কেউ ভরা মজলিশে এমন প্রশ্ন করে? পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তখনই পাত্রীর বাবা দাঁড়িয়ে তূর্যর বাবাকে বলল,
— কেমন ছেলে আপনার? এতো দেখি পুরো মেন্টাল। কার সামনে কি বলতে হয় সেটাই জানেনা। এমন মেন্টাল ছেলের কাছে আমার মেয়ে বিয়ে দিলে তো আমার মেয়ের সুন্দর জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।
— আসলে ব্যাপারটা ঐ ভাবে নিবেননা প্লিজ।
— আপনারা আমার বাসা থেকে বের হবেন নাকি আর অপমানিত হবেন? আগে নিজের ছেলেকে একটা মেন্টাল হাসপাতালে পাঠিয়ে ভালো করুন। তারপর এই ছেলের জন্য মেয়ে খুজতে বের হোন।
— আচ্ছা আমরা চলে যাচ্ছি।
তূর্য এখনো বসে বসে কথা গুলো শুনছে। তার সামনে যে বাবা অপমানিত হচ্ছে সে যেনো গায়েই মাখছেনা। তূর্যর বাবা রায়হান সাহেব এবার বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তূর্যের হাত ধরে বলল,
— চল বাসায় যেতে হবে।
— কিন্তু বাবা আমি তো এখনও আমার উত্তর পেলাম না। মেয়েটা তো কোনো জবাব দেয়নি। তাহলে কি এবার ও আমার বিয়ে হবেনা?
রায়হান সাহেব সবার কাছে সরি বলে তূর্যের হাত ধরে টেনে নিয়ে বাসার বাহিরে চলে এলো। এই ঘটনা আজ প্রথম না। এর আগেই কয়েকবার পাত্রী দেখতে গিয়ে অপমানিত হতে হয়েছে রায়হান সাহেবকে। কিন্তু কি করবে ছেলের তো বয়স হয়েছে। বিয়ে তো করাতেই হবে। ছোট বেলা থেকেই তূর্যর মাথায় একটু সমস্যা আছে। তার মুখে যেটা আসে সবার সামনে সেটাই বলে দেয়। তূর্য মা-বাবার এক মাত্র ছেলে। দেখতে স্মার্ট হলেও বোকাসোকা ছেলে। এখনো বাবার হোটেলে বসে খায়। বাবার অফিসে মাঝেমধ্যে যেতে বলে কিন্তু সে যায়না। তূর্যর আচরণ এখনও সেই বাচ্চাদের মতই। তূর্যর মা-বাবার একটাই স্বপ্ন এমন একটা মেয়ে ছেলের লাইফে আসবে যে তূর্যর জীবনটাই বদলে দিবে। ছেলের চিন্তায় রাতে ঘুম হয়না।
কিছুক্ষণের মধ্যেই রায়হান সাহেব ছেলেকে নিয়ে পৌছে যায় বাসার সামনে। দরজার কলিং বেলে চাপ দিতেই রায়হান সাহেবের স্ত্রী আমেনা বেগম দরজা খুলে দিয়ে বলল,
— কি গো তোমার মুখ এমন দেখাচ্ছে কেন? আজকের মেয়েটাও পছন্দ হয়নি?
— মেয়ে ভালো ছিলো। কিন্তু তোমার মেন্টাল ছেলে সবার সামনে মেয়েকে জিজ্ঞেস করে সে ভা’র্জি’ন কিনা।
তখনই তুর্য বলে উঠলো,
— মা বাবাকে বলে দাও আমি ভা’র্জি’ন মেয়ে ছাড়া বিয়ে করব না।
আমেনা বেগম বলল — তোকে এটা কে শিখিয়ে দিয়েছে? যে বিয়ে করলে ভা’র্জি’ন মেয়েকেই বিয়ে করতে হবে?
— কাল আমার একটা বন্ধ বলছে আমাকে।
— তোকে কতবার বলছি আজেবাজে ছেলেদের সাথে না মিশতে। তোর জন্য এই অব্দি কতবার তোর বাবাকে অপমানিত হতে হলো? তুই কবে ঠিক হবি বাবা? কবে আমাদের কষ্ট গুলো বুঝবি? তোর চিন্তায় আমাদের ঘুম হয়না। আর শোন আর কখনো কোনো মেয়েকে এমন প্রশ্ন করিস না। এটা খুব খারাপ।
— ঠিক আছে।
— এখন রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়। খাবার রেডি করছি আমি।
তূর্য এবার নিজের রুমে চলে গেলো। আমেনা বেগম রায়হান সাহেবকে বলল,
— তুমিও ফ্রেশ হয়ে খেতে আসো।
— খাবার আমার গলা দিয়ে নামবে না। আমি রুমে যাচ্ছি।
এই কথা বলে রায়হান সাহেব নিজের রুমে চলে গেলো। এর পর কয়েকদিন কেটে গেলো। একটা ঘটক এলো রায়হান সাহেবের কাছে।
— রায়হান সাহেব আমার কাছে একটা মেয়ের সন্ধান আছে। মেয়েটা দেখতে অনেক সুন্দর। পরিবার ও খুব ভালো। আপনি চাইলে দেখা করতে পারেন।
— আমার তো আর মন চায়না। আপনি তো সবি জানেন। এর আগে কতবার অপমানিত হয়ে আসতে হয়েছে।
— কি আর করবেন? ছেলেকে তো বিয়ে দিতে হবে। আরো একবার নাহয় দেখুন।
— ঠিক আছে, তাহলে আমরা কাল দেখতে যাবো।
ঘটক চলে গেলো। রায়হান সাহেব কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় গিয়ে তার স্ত্রীর সাথে এটা নিয়ে আলোচনা করলো। পরের দিন বিকেলে তূর্যকে ভালো ভাবে রেডি করিয়ে দিলেন আমেনা বেগম। বের হওয়ার সময় আমেনা বেগম তূর্যকে বলল,
— বাবা শোন ওখানে গিয়ে এমন কিছু বলবেনা যাতে তোমার বাবা ছোট হতে হয়। মেয়ে পছন্দ না হলে সেটা তোমার বাবাকে বলবে। আর ভুল করেও মেয়েকে প্রশ্ন করবেনা তুমি ভা’র্জি’ন কিনা। এতে করে সবাই তোমাকে খারাপ ছেলে মনে করবে। ঠিক আছে?
— ঠিক আছে।
— যাও তাহলে, আর আমার কথা গুলো অবশ্যই মনে রাখবে।
তারপর ঘটক সহ তিন জন বেরিয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা একটা বাড়ির সামনে গিয়ে নামে। বাড়িটা খুব সুন্দর বাহিরে থেকে। বাড়ির দরজার সামনে গিয়ে কলিং বেলে চাপ দিতেই একটা মহিলা এসে দরজা খুলে।
— আপনারা এসেছেন?
ঘটকের দিকে তাকিয়ে কথা বলল ভদ্রমহিলা। তারপর সবাই ভিতরে প্রবেশ করে। আজকে তূর্য চুপচাপ বসে আছে। মায়ের কথা সে মাথায় রেখেছে আজ। মেয়ের বাবা এসে ওনাদের সাথে কথা বলছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা মেয়েকে সাজিয়ে নিয়ে আসেন মেয়ের মা। মেয়েটা এসে তাদের সামনে বসে। রায়হান সাহেব মেয়েকে প্রশ্ন করলেন,
— মা তোমার নাম কি?
— জ্বী আমার নাম ইরা রহমান।
— খুব মিষ্টি নাম তোমার। আর তুমিও দেখতে খুব মিষ্টি।
এবার তূর্য মেয়েটার দিকে তাকালো। মেয়ে খুব সুন্দরী। পড়নে তার লাল শাড়ি। কপালে কালো টিপ। গোলাপি ঠোঁট। তূর্য মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে এক নজরে। তূর্য মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল।
— বাবা আমি এই মেয়েকেই বিয়ে করব।
তূর্যর এমন কথা শুনে উপস্থিত সবাই তাকাল তার দিকে। তখনই রায়হান সাহেব বলল,
— বাবা আমরা মেয়ে দেখতে এসেছি আগে বাসায় যাই তারপর ওনাদের আমাদের মতামত জানাব।
— মতামত জানানোর কিছু নেই এই মেয়েকে আমার খুব পছন্দ হইছে। আমি একেই বিয়ে করবো।
রায়হান সাহেব সবাইকে বলল — কিছু মনে করবেন না প্লিজ।
ইরা বাবা অবস্থা দেখে বুঝতে পারে এই ছেলের কোনো একটা সমস্যা আছে তখন উনি বলল,
— আচ্ছা এবার আপনারা আসতে পারেন।
— আপনি কি রাগ করলেন?
— আরে না রাগ করবো কেন? আপনাদের তো মেয়ে দেখা শেষ। আমরা আমাদের কথা ঘটককে জানিয়ে সেব পরে।
ইরা দাঁড়িয়ে বলল — বাবা আমি ওনার সাথে আলাদা ভাবে কথা বলতে চাই।
রায়হান সাহেব নড়েচড়ে উঠলো। কেউ না জানুক সে তো জানে তার ছেলেটা কেমন। একা একা গেলে আবার কি না কি বলে বসে।
তূর্য বলল — হ্যাঁ আমার ও একটা কথা আছে।
তূর্য তার বাবাকে বলল — বাবা আমি ওর সাথে কথা বলে আসছি। তুমি বসো।
তূর্য উঠে দাঁড়িয়ে গেলো। যদিও ইরার বাবা এটা চাইছেনা। উনিও বুঝতে পারছে ছেলেটার কিছু একটা সমস্যা আছে। আর ওর আচরণ ও একদম বাচ্চাদের মতো। তবুও ইরা তূর্যকে নিয়ে ইরার রুমে গেলো। গিয়ে দু’জনেই দাঁড়িয়ে আছে। তূর্য বলল,
— আগে আমার কথাটা বেশি জরুরী। আমি আগে বলি তারপর তুমি ওকে?
ইরা একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল,
— আচ্ছা বলুন।
— জোরে বলব নাকি কানে কানে?
— এখন যেভাবে বলছেন সেভাবেই বলুন।
— কেউ যদি শুনে ফেলে? পরে যদি আমার বাবাকে বকাঝকা করে?
— আপনার বাবাকে কেন বকাঝকা করবে?
— এর আগের বার এক জায়গায় বকা দিয়েছে। তারপর থেকে বাবা আর আমার সাথে ঠিকভাবে কথা বলেনি। তাই ভয় হয়।
— আচ্ছা ঠিক আছে কানে কানে বলুন।
তূর্য এবার ইরার কানের কাছে গিয়ে বলল,
— আপনাদের ওয়াশরুম টা কোন দিকে? খুব জোরে আমার চাপ দিয়েছে। অনেক্ক্ষণ ধরে সহ্য করে আছি।
তূর্যর কথা শুনে হেসে দেয় ইরা। তারপর ইরা তূর্যকে ওয়াশরুম দেখিয়ে দিল। তূর্য ভিতরে গিয়ে দরজা বন্ধু করে দিলো। ইরা দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। তখনই ভিতর থেকে তূর্য চিৎকার দিতে শুরু করে।
চলবে?