মেহবুব পর্ব-০৩

0
5

‎#মেহবুব
‎#তাবাসসুম_তোয়া
‎#পর্বঃ৩

‎আমি এটা সেটা বলে পাশ কাটাতে চাইলাম। আন্টি বাপ্পিকে আবারও ধামকি দিলেন। আমার আর আন্টির খাওয়া শেষে আন্টি উনাদের ডাক দিলেন। খেয়ে নিতে বললেন।
‎বাপ্পি খোঁচা দিয়ে বললো

‎” কি ভালো, কি ভালো! পরের মেয়ে পেয়ে নিজের ছেলেদের ভুলে যাচ্ছো দেখছি! খাওয়া শেষ! কি সুন্দর বলতেছো,এসে খেয়ে নাও! কই আমাদের তো খাইয়ে দিচ্ছ না! ”

‎তারিক ভাই বাপ্পির মাথায় একটা গাট্টা দিয়ে টেবিলে বসে পড়লেন।

‎” আমার হাতে খাবি? ”

‎”তা দাও, কি আর করবো! মা তো পর হয়ে গেল!”

‎তারপর আন্টির রুমের দিকে আওয়াজ চড়িয়ে বললো
‎” মানুষ দেখুক আর জ্বলুক! তাদের তো আর বড় ভাই নেই! আমার জানের জিগার বড় ভাই আছে সে কোনদিনও পর হবে না!হুহ! ”

‎_______________________

‎মুনিবাকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে বড় ছেলের ঘরে এসে ছেলেকে শুধালো মিসেস জামান,

‎”কি করবা আব্বা? ”

‎বইয়ের থেকে চোখ না সরিয়েই তারিক বললো

‎” কি করবো? কি করতে বলছো? ”

‎” তুমিই একমাত্র ব্যাক্তি যে কিছু করতে পারো?”

‎” কি করাতে চাও? বাবাকে আসতে বলো, কাজী ডাকো। একেবারে লিখিত পড়িত ঘরে তুলো। ”

‎”সত্যি? বলবো তোর বাবাকে। ”

‎”কি পাগলামি মা? তুমিও কি ওর মতোই হলে? এখনও অনুমতি নেই! প্রকাশিত হলে গেলে ক্যারিয়ার নিয়ে টানাটানি পড়বে! তখন? ”

‎”মেয়েটা তো পাগলামি করছে।”

‎”করতে দাও। আর তুমি আছো তো? আরোও কিছু দিন সামলাও! ”

‎”আচ্ছা তুমি কিছু মিছু বলো। তাহলে হয়তো শান্ত হবে।”

‎” আচ্ছা ”

‎”ধামকি টামকি দিও না আবার, এমনিতেই ভয় পায় তোমাকে! ”

‎ভ্রু কুচকে তাকায় তারিক,

‎” বাপ্পি আসলেও মিথ্যা বলে না! ইদানিং দেখছি ওর প্রতি তোমার মহব্বত বহুগুণ বেড়ে গেছে! ”

‎” কি করবো বাবা, বড় শখের পর আল্লাহ একটা মেয়ে জুটাইছে কপালে! এতোক্ষণ আমার কোলের মধ্যে বিড়াল ছানার মতোই শুয়ে ছিলো!”

‎”যাও,দেখো গিয়ে তোমার বিড়াল ছানা উঠে মিউ
‎মিউ করে কাঁদছে কিনা!”

‎_____________________________


‎ঘুম ভেঙে বিকালের দিকে ছাদে গেছি৷ কবুতর গুলোকে দেখছি।মাঝে মাঝে আদার ছিটিয়ে দিচ্ছি। বাক-বাকুম শব্দ তুলে আমার চারপাশে ঘুরঘুর করছে। তখন বাপ্পি এলো। ছাদের চিলেকোঠার রুমে মেবি ব্যাট বলসহ সকল খেলার সরঞ্জাম রাখা ছিলো। তখন বাপ্পি আবারও আমার আসার কারন জিজ্ঞাসা করলো,

‎”এই তুই সত্যি কথা বলতো, এই দিকে কেন এসেছিস? জনি ভাইয়া বলেছে তুই নাকি মাঝে মাঝেই এই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাস! কিন্তু কেন বলতো? ”

‎আমি কৌতুক করলাম।

‎”সত্যিটা বলবো? ”

‎” হ্যাঁ সত্যিটাই বলবি! ”

‎” আমার এই রাস্তাটায় হাঁটতে ভীষণ ভালো লাগে! ”

‎” এ্যাহ! এই রাস্তার বিশেষত্ব কি? ”

‎”এই রাস্তার ফজিলত অপরিসীম। অন্তত আমার জীবনের ক্ষেত্রে। তুই এটা বুঝবি না৷ তুই তো বুদ্ধু!”

‎”আমি বুদ্ধু তাই না? ভাইকে ডাকবো? তোর রাস্তার ফজিলতের উপর রচনা লিখতে দেবে দেখবি! ”

‎” আরে আরে ক্ষেপছিস কেন। তুই আমার ভাই,ছোট ভাই, জানের দোস্ত। সময় হোক, তখন বলবো। প্লিজ কাউকে বলিস না। এই রাস্তাটা হচ্ছে অক্সিজেন। এখানে হাঁটতে না পারলে আমার দম বন্ধ লাগে! ”

‎”শুধু রাস্তাটা নাকি এই বাড়িটাও।”

‎”আরে এই বাড়িটা তো আমার কলিজার একটা টুকরা।”

‎” আর এই বাড়ির বড় ছেলে? ”

‎আমি কিছু বলতে গিয়েও থমকে গেলাম। প্রশ্নটা পুনরায় ভেবে! এ্যাহ কি বলে এই ছেলে! থতমত খেয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম! এমন কি কিছু করেছি কখনও! যাতে ও টের পায়! নাহ তো! তাহলে।

‎”বেশি বদমায়েশ হয়েছিস না? একথা কেন বললি!”

‎ভ্রুটা কেমন করে জানি উঁচিয়ে, চোখে হেসে কপালে ডান হাত ঠেকিয়ে,

‎”ভাবী, আসসালামু আলাইকুম,best of luck.”

‎ বলে নেমে গেল বাপ্পি।

‎আমি স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে থাকলাম। এই ছেলে কি সম্বোধন করলো! সম্বোধনে আমার মেরুদন্ড বেয়ে শীতল স্রোত নেমে গেল! বুকে কাঁপন ধরলো! সত্যিই কি আমি একদিন ওর ভাবী হবো?সত্যিই ও তখন আমাকে ভাবী বলেই ডাকবে?

‎আমি পিছনে ফিরে ওকে কিছু বলতে চাইলাম! কিন্তু পিছনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটা দেখে আরোও জমে গেলাম! আজ আমার ধরা খাওয়ার দিন! আমি সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে উল্টো ঘুরে দাড়িয়ে পড়লাম! ইয়া আল্লাহ! উনি সবটা শুনেছেন। এজন্য গাধাটা এতো হাসছিলো! আমি টের পেলাম না মোটেও!

‎বাপ্পি ততক্ষণে নেমে গেছে। আমিও নামবো,কিন্তু কিভাবে উনি তো সিঁড়ির গোড়ায়! আমি কবুতরের ওদিকে চলে যেতে নিলাম। তখনই শুনলাম,

‎” মুনিবা ”

‎আমি থমকে দাড়িয়ে পড়লাম!
‎পা দুটো আটকে গেল যেন। উনি সত্যিই আমার নাম ধরে ডেকেছেন! ঠিক কত বছর পর?নাহ এটাই প্রথম!

‎” পার্মানেন্টলি এ বাড়িতে আসতে চাও? ”

‎প্রশ্ন শুনে আমার অন্তর আত্মা খাঁচা ছেড়ে পালিয়ে গেল! বলেন কি?
‎এটা প্রপোজ ছিলো নাকি হুমকি? জাদরেল লেফটেন্যান্ট আমার ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিচ্ছিলেন যেন। আমি জমে দাড়িয়ে থাকলাম। উনি তখনও আমার পিছনে। আমার চোখ ছলছল হলো কেন জানি না! আমি কথাটার মাঝে অন্য কিছু ধরতে পেলাম।
‎আমি নখ দিয়ে ছাদের ঢালাই খুড়ছি। উনি সামনে এসে দাড়ালেন। আমার চোখ তখনও ছলছল নাকি পানি ঝরে পড়ছিলো জানি না। উনি দেখলেন নাকি টের পেলেন!
‎কাটকাট কন্ঠে বললেন

‎” সময় হওয়ায় আগেই আসতে চাইলে I have no problem with that! But my opinion is নো পাগলামি! সময় দাও, সঠিক সময় এলে আমি নিজে গিয়ে তোমাকে আনবো,এই রাস্তায় তোমাকে যেন আর না দেখি। ”

‎আমি চুপচাপ ঢালাই ছাদের দিকে চেয়ে! কয়েক ফোটা অশ্রু টুপ ঝরে পড়লো কি? উনি আমার সাথে কথা বলেছেন এটাই যেন পরম পাওয়া ছিলো! আমার কানে তখনও বেজে চললো তার কন্ঠে আমার নাম।

‎”মুনিবা,লুক এট মি, কি বলেছি বোঝা গেছে!
‎You are smart enough, so no more foolishness. From now on, be careful.

‎আমি বুঝলাম উনি বড়ই কঠিন দিলের মানুষ! ইট কাঠের তৈরি!কনক্রিট! এতোটা কঠিন এই মানুষটাকে আমার কেন ভালো লাগলো? পৃথিবী জুড়ে এতো মানুষ তার মধ্যে এই একজনকেই কেন আমার চাই?

‎উনি নেমে গেলেন। আমি উনার এতোটা সরাসরি কথার ভার নিতে পারলাম না।

‎কিছু বিষয় থাকে খুব আপন, একদম মনের মতোই। এই রাস্তায় হেঁটে চলাটাও আমার মনের খুব কাছের একটা কাজ! খুব প্রিয়! কেউ চাইলেই কি আমি সে কাজ থেকে বিরত থাকতে পারি?
উহু পারি না। আমার অভ্যাস চেঞ্জ হলো না।
‎আমি এই পথ ছাড়তে পারলাম না৷ সাথে পথের সাথে জড়িয়ে থাকা আবেগ। এই পথ আমার ভীষণ চেনা৷ আমার বাল্যকালের স্মৃতির অনেকখানি জুড়ে। একদম হৃদয়ের মনি কোঠায় আটকে থাকা পথ!

‎চলবে….