মেহেরজান পর্ব-২৭+২৮

0
2

#মেহেরজান
লেখনীতে- #সোহামণি
পর্ব ২৭

ভোর সাড়ে চারটার দিকে বৃষ্টির ঘুম ভাঙলো বৃষ্টির। ঘুমুঘুমু চোখে দরজার দিকে তাকালো তার মা জেগেছে কিনা দেখতে।তবে অন্ধকার দেখতে পেয়ে আবারও ঘুমানোর চেষ্টা করলেও ঘুমাতে পারলো না।কিয়ৎক্ষণ এপাশ ওপাশ করলো।পাশে থাকা ছোট বোনটার দিকে একবার তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ভাবলো শীতের সকালে একবার ক্ষেতের আইল বেয়ে একবার হেঁটে আসবে এই এতো ভোরে।যেই ভাবা সেই কাজ। বেরিয়ে আসলো ঘর থেকে।ভোরের আলো ফুঁটতে শুরু করেনি।এখনও অন্ধকার বললে খুব একটা ভুল হবে না।উঠোনের বাম পাশে বাশের সাথে থাকা লাইটটা এখনও জ্বলে আছে।দূর আকাশে হালকা আলকা ভোরের আলো দেখা যাচ্ছে সবে।হাত উপরে তুলে আড়মোড়া ভেঙ্গে হাই তুললো বৃষ্টি। টিউবওয়েলের সামনে গিয়ে হাতলে চাপ দিয়ে বালতিটা ধুয়ে নিয়ে সেখানে এক বালতি পানি জমা করলো।এরপর সেই বালতি থেকে পানি নিয়ে মুখটা ধুয়ে নিলো। ওড়না দিয়ে মুখটা ভালোভাবে মুছে নিতেই চোখ গেলো সামনের গোয়ালঘরে। কিছু একটা নড়াচড়া করছে। ভয় পেলো বৃষ্টি। ভয়কে জয় করার জন্য ঘরের ভেতর থেকে বাবার টর্চটা নিয়ে এলো।হাঁটা ধরলো গোয়ালঘরের দিকে।টর্চটা দিয়ে এদিক ওদিক ঘোরাতে ঘোরাতে চোখ গেলো গরুর জন্য রাখা ঘাসের ওপাশে।ঘাসের স্তুপের ওপরপাশে এক জোড়া চোখ দেখে ভয়ে চেঁচাতে চাইলেই চেঁচালোনা বৃষ্টি।আরেকটু এগিয়ে গিয়ে দেখলো একটি মেয়ে কেমন ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে কিছু ঘাস হাতে ধরে তারই দিকে তাকিয়ে আছে।মেয়েটার হালকা কাদামাখা চেহারা দেখতেই মুখ থেকে আপনা-আপনিই ‘মাশাআল্লাহ’ শব্দটা বেরিয়ে আসলো। এমন অবস্থাতেও যে কাউকে সুন্দর লাগে ধারণা নেই বৃষ্টির।কিছুক্ষণ একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকার পর হঠাৎ ভয় পেয়ে গেলো।ভাবলো কোনো জ্বিন বা পরী নাকি।আবার চেঁচাতে চাইলেই মেয়েটিই থামিয়ে দিয়ে অনুনয় করে বললো,
“আমায় নিয়ে যাবেন না প্লিজ।আমি বাঁচতে চাই।আমি আমার বাবা মায়ের কাছে, মেহরান ভাইয়ের কাছে আমার পরিবারের কাছে ফিরতে চাই।ওরা ওরা আমায় মেরে ফেলবে।”

শেষের কথাটা বলে আঙুল দিয়ে বাইরে দেখিয়ে দিলো মেয়েটি। বৃষ্টি মেয়েটির আঙুল অনুসরণ করে বাইরে তাকালে কিছু দেখতে পেলো না।তবে মেয়েটির এমন ভয়াবহ অবস্থা আর এমন কাতর গলা শুনে নিজেও কিছুটা বিচলিত হলো।আরেকটু কাছে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
“কে আপনি? আর এসব কি বলছেন?”

বৃষ্টি গ্রামের মেয়ে হলেও শুদ্ধ বাংলা বলা তার বাবা তাকে শিখিয়েছে।এছাড়া বৃষ্টি কলেজের ইন্টার পাস করেছে কয়েক বছর আগে।বিয়েও হয়েছে তবে স্বামী অত্যাচার করায় তালাক দিয়ে বাপের বাড়ি চকে এসেছে।এতে তার বাবা মা তাকে কোনোদিন কোনো কথা বলেনি।উলটো শ্বশুরবাড়ির লোকদের বিরুদ্ধে কেইস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো বৃষ্টিই আটকেছে তাদের। বাবা একজন কৃষক। অর্থ ধন সম্পদের কমতি থাকলেও বাড়িতে শান্তির কমতি নেই।

বৃষ্টি খেয়াল করলো মেয়েটির শরীর পুরো কাদায় মাখা।কাদাগুলো শুকনো নয়।বৃষ্টি বুঝতে পারলো মেয়েটা হয়তো সবেই এখানে এসেছে।চোরও তো মনে হচ্ছে।পোশাক আশাক কাদায় মাখামাখি হলেও ধরণ আর কারুকাজ দেখে বোঝা যাচ্ছে আভিজাত্যের ছোয়া।বৃষ্টি বিপাকে পড়লো।কে এই মেয়ে। আর এসব কি আবোল তাবোল বলছে? পরক্ষণেই মাথায় আসলো মেয়েটি হারিয়ে যায় নি তো? তাদের এই বাড়িটা বসতি জায়গা থেকে কিছুটা দূরে।ক্ষেতের মাঝখানে কয়েক একর জায়গা কিনে মতিন মোড়ল এই বাড়িটা করেছেন।পরিসরে ছোট্ট একটি বাড়ি তাদের।কিন্তু মেয়েটা ঠিক কোথা থেকে এসেছে এখানে?এটা তাৎক্ষণিক বুঝলো না বৃষ্টি।আরেকটু কাছে এগিয়ে গিয়ে দেখলো মেয়েটার মুখে বিভিন্ন জায়গায় রক্তের ছোপ ছোপ দাগ।গায়ে ওড়না নেই।নিষিদ্ধ জায়গাগুলো বোঝা যাচ্ছে কাদায় মাখোমাখো হওয়ায়। বুকের বিভাজনও বোঝা যাচ্ছে দেখে চোখ সড়িয়ে নিলো বৃষ্টি।দৌঁড়ে নিজের ঘরে গিয়ে একটা ওড়না নিয়ে আসলো মেয়েটির জন্য।তবে মেয়েটির এখন পরিষ্কার হওয়া জরুরি এভাবে শুধু ওড়না দিয়ে কি করবে?

মেয়েটার মুখ দেখে মায়া লাগছে বৃষ্টির৷ কাছে এগিয়ে গিয়ে মেয়েটাকে জিজ্ঞাসা করলো,
“আপনার নাম কি? আপনি কোথা থেকে এসেছেন? আর আপনার অবস্থা এমন কেনো? কি হয়েছে?”

মেয়েটা তৎক্ষনাৎ উত্তর দিতে পারলো না। হেঁচকি তুলছে।ভীষণ মায়া লাগছে বৃষ্টির। কাছে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে কাঁধে হাত রাখলো,
“ভয় পাবেন না আমায়।আপনার কি হয়েছে বলুন আমি সাহায্য করার চেষ্টা করবো।আপনার নাম কি বলুন?”

ভোরের আলো ফুঁটতে শুরু করেছে।মেয়েটা কাঁপাকাঁপা গলায় ছোট্ট করে থেমে থেমে উত্তর দিলো,
“আ_আ_মার না_ম রা_উশি।”

বৃষ্টি নামটা একবার আওড়ালো ‘রাউশি’। তারপর আস্তে ধীরে টেনে তুললো রাউশিকে। রাউশি ভরসা করতে না পারলেও ভরসা করতে ইচ্ছে করছে।মেয়েটার সাহায্যে নিজেও উঠে দাঁড়ালো।সেই জঙ্গল থেকে ক্ষেতের আইল বেয়ে এতদূর পর্যন্ত হেঁটে এসেছে।জুতোজোড়াও তো সেই জঙ্গলেই হারিয়ে গেছে।পায়ের অবস্থা শরীরের অবস্থা একেবারেই নাজেহাল।মুখের অবস্থাও বিধ্বংসী লাগছে।আইলগুলো অনেক বেশি পিচ্ছিল থাকায় হাঁটতে প্রচুর অসুবিধা হয়েছে। তারওপর জীবনে প্রথমবার।

রাউশিকে বৃষ্টি টেনে বাইরে নিয়ে আসতেই মুখোমুখি হলো মায়ের সাথে।হাসনা বেগম মেয়ের সাথে এমন বিধ্বংসী অবস্থায় আরেক মেয়েকে দেখে চিন্তায় চেঁচিয়ে উঠলেন,
“ও মা রে!”

বৃষ্টি বিরক্ত হলো,
“আহ মা।কি হয়েছে টা কি? এভাবে চেঁচাচ্ছো কেন?”

মুখে শাড়ির আচল দিয়ে ঢেকে ভয়ে ভয়ে মেয়েকে জিজ্ঞাসা করলেন,
“এইদা কেডারে বৃষ্টি।এরে তুই কোত্থেইকা পাইছস হ্যা?এইডা কি জ্বিন নাকি?”

বৃষ্টি কন্ঠে বিরক্তি ঢেলে বলে,
“বাজে বকা বাদ দিয়ে আমায় সাহায্য করো রাউশিকে ঘরে ঢোকাতে।ওকে গোসল করাতে হবে।”

রাউশি ঢিমে চোখে চারপাশ খেয়াল করছে শুধু।চোখের জল শুকিয়ে গেছে।কান্নাও আসছে না।এদিকে এদের ভরসা করলে কি ঠিক হবে? তাও ভেবে পাচ্ছে না।কোথায় এসেছে সে? আদও কি বাড়ি ফিরতে পারবে কিনা তা মাথায় বিড়বিড় করছে শুধু।তবে মস্তিষ্ক জানান দিলো যেন তাকে ধরে রাখা মেয়েটাকে ভরসা করলে খুব একটা ভুল হবে না।অনেকখানি পথ অতিক্রম করে এখানে পৌঁছেছে রাউশি।শরীরটাও কেমন অবশ হয়ে আসছে।মাথাটা ঝিম মেরে আছে।হাতে পায়ে নিম্নটুকুও শক্তি নেই। ভয় আশঙ্কা সংকোচ নিয়ে সেখানেই জ্ঞান হারালো রাউশি।

.

আবিরদের খুঁজে পাওয়া গেলেও রাউশিকে খুঁজে পাওয়া যায় নি।আবিরকে তার বাবা ইচ্ছামতো মেরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন।এমন ছেলে যে তার ঘরে এসেছে এই ভেবেই যেন অরুণ হাওলাদারের যতসব আহাজারি।নাজিয়া বেগমও ছেলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।আবিরকে খাদেজা বেগম ভীষণ ভালোবাসতেন।নাতিদের মাঝে আবিরই সবচেয়ে প্রিয় ছিলো উনার।তবে নাতির এমন জঘণ্য কাজে নিজেও একটা চড় মেরেছেন আবিরকে।আবির মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলো শুধু।চোখেমুখে ছিলো না অনুশোচনার ছাপ।তবে সব সত্যি স্বীকার করেছে।যে রাউশিকে সে রাইশার মতো দেখতো।আর রাউশিকে রেপড করার জন্য প্ল্যান করেছিলো রাউশিরা এখানে আসার পর।তবে প্ল্যানটা যেন সফল হতে হতেও বিফলে গেলো।এ নিয়ে আফসোস করছিলো আবির।ওকে অরুণ হাওলাদার এলোপাতাড়ি মারা শুরু করলে পুলিশ আবিরকে নিয়ে চলে যায়।

এদিকে মাহমুদ খান তানজিম আর শিহাব ফিরেছেন খালি হাতে। রাউশি নেই তাদের সাথে।রূপা বেগম অজ্ঞান হয়েছেন তিন চারবার।আপাতত উনাকে বেডরেস্টে রাখা হয়েছে।মেহরান আর নুজাইশের খোঁজ নেই।এই দুজনও নিশ্চয় পাগলের মতো খুঁজছে রাউশিকে এই ধারণা পরিবারের মানুষদের।কারও চোখে সারারাত ঘুম নেই।সবাই দরজার দিকে চেয়ে আছে।শুধুমাত্র রাউশির অপেক্ষায়। উজানকে ত্যায্য পুত্র করতে চেয়েছেন মাহতাব খান তবে মাহবুব খান এমন করতে নিষেধ করেছেন।উজানও ক্ষমা চেয়েছে বাবার কাছে।এমনকি মাহমুদ খানের কাছে। কিন্তু ক্ষমা চাইলেই কি আর রাউশিকে ফিরে পাওয়া যাবে?

নুজাইশ আর মেহরান উদ্ভ্রান্তের মতো খুঁজে চলেছে রাউশিকে।পুলিশি সহায়তায় পুরো জঙ্গল খোঁজা হচ্ছে।তবে এতবড় জঙ্গল যার কিনা শেষ কোথায় জানা নেই সেখানে রাউশিকে কোথায় পাওয়া যাবে? মেহরানের শক্তপোক্ত মন নিমিষেই বিষিয়ে গেছে। কেমন পাগলের মতো এদিক ওদিক ছুটছে। এদিকে নুজাইশের অবস্থাও শোচনীয়। রাউশির কোনো ক্ষতি কখনও কামনা করে নি সে।তবে মেয়েটার সাথে কেন এমন হলো এ নিয়ে খোদার কাছে অনেক প্রশ্ন করে যাচ্ছে সে। রাউশিকে যদি পাওয়া যায় মেহরানের অগোচরেই নুজাইশ রাউশির সমস্ত সেইফটির ব্যবস্থা সে নিজেও করবে ভেবে ঠিক করে রেখেছে।

“মেহরান চল পাশের গ্রামে গিয়ে খুঁজে আসি।”

মেহরান একটা মাটির স্তুপের ওপর রাউশির ওড়নাটা নিয়ে বসে ছিলো।মুখের অবস্থা এক রাতের মাঝেই কেমন হয়ে গেছে। মেহরানের এখন ঠিক কেমন লাগছে সেটা নুজাইশ হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে।

“নুজাইশ রাউশিকে আমরা পাবো তো?”

নুজাইশের বুক ধ্বক করে উঠলো।কাপা কাপা গলায় জবাব দিলো,
“কেন পাবো না? অবশ্যই পাবো।রাউশিকে আমাদের খুঁজে পেতেই হবে।রাউশি হারিয়ে যেতে পারে না।”

গলা ধরে এলো নুজাইশের।পেছনে ঘুরে মুখে হাত চেপে ধরলো।মেহরান উঠে দাঁড়ালো।নুজাইশকে পাশ কাটিয়ে কোথায় যেন রওনা দিলো।

“মেহরান কোথায় যাস?”

মেহরান পেছনে না তাকিয়ে যেতে যেতেই কেমন রোবটের মতো উত্তর দিলো,
“আমার রাউশিকে খুঁজতে।”

চলবে….

#মেহেরজান
লেখনীতে – #সোহামণি
পর্ব ২৮

রাউশির জ্ঞান ফিরলো যখন তখন সকাল নয়টা বাজে।পাশে ফিরে তাকিয়ে দেখলো ভোররাতেই সেই মেয়েটা আর তার পাশ ঘেষে বসে আছে আরেক কিশোরী।বয়স পনেরো কি ষোলো হবে এমন।রাউশির দিকে কেমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। রাউশি ওঠার চেষ্টা করতেই বৃষ্টি ধরলো রাউশিকে।রাউশিকে ধরে উঠালো।আধশোয়া করে রেখে বলল,
“আপনি রেস্ট করুন।আমি আপনার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।”

বৃষ্টি উঠে যেতে নিলে রাউশি হাত ধরে বসলো।বৃষ্টি থেমে গেলো।

“আমাকে এক গ্লাস পানি দেবেন?”

ভাঙা গলায় কথাটা বললো রাউশি।কথা বলার শক্তি পাচ্ছে না আজ।কান্নাগুলো দলা পাকিয়ে আসছে শুধু।কোথায় আছে কোথায় কি? বৃষ্টি মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। বৃষ্টির ছোট বোন সৃষ্টি রাউশির দিকে তাকিয়ে আছে।রাউশি চোখ বুজে রয়েছে। এবার চোখ খুলে সৃষ্টির দিকে তাকাতেই বাড়ির তানিয়া,মাইশা,তাজবির ওদের কথা মনে পড়লো।আর কি কখনো দেখা হবে কিনা ভাবতে লাগলো রাউশি।না চাইতেও চোখের দুকোণ বেয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো।সৃষ্টি রাউশির টলমলে চোখ দেখে বললো,
“আপা আপনি কান্না করছেন কেন?শরীর খারাপ লাগছে?”

রাউশি মাথা দুদিকে নাড়িয়ে না বোঝালো। সৃষ্টি তার অনেক কাছে ছিলো বিধায় মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“তোমায় দেখে আমার ছোট বোন গুলোর কথা মনে পড়ছে।নাম কি তোমার?”

সৃষ্টি খুশি খুশি জবাব দিলো,
“সৃষ্টি আমার নাম।আপনার নাম নাকি রাউশি।বৃষ্টি আপু বললো।”

রাউশি মাথা নাড়ালো।চোখ পড়লো নিজের হাতে পায়ের ওপর।ব্যান্ডেজ লাগানো। আর হাতের দিকটাই মলম লাগানো। নিজের পরনে একটি সুতির থ্রিপিসের দিকেও চোখ পড়লো।এই ঘর থেকে উঠোন স্পষ্ট দেখা যায়। রাউশির চোখ উঠোনে যেতেই দেখলো তার জামাটা দড়িতে ধুঁয়ে উঠোনে মেলে দেওয়া হয়েছে।রাউশির কৃতজ্ঞতায় চোখ ভরে উঠলো।বৃষ্টি একটি প্লেটে করে পরোটা আর গরুর গোস্ত ভুনা নিয়ে এলো। তার বাবাকে দিয়ে সেই একদম ভোরেই বাজারে পাঠিয়েছে।অসুস্থ রাউশির এসময় ভালো কিছু প্রয়োজন।তার বাবাও না করেননি।সকাল সকাল বাজারে গিয়ে গরুর গোস্ত আধা কেজি কিনে এনেছেন।অথচ অভাব অনটনের সংসার তাদের ।তবুও মন যেন উজার তাদের।এছাড়াও ব্যান্ডেজ কিনে এনেছেন সাথে ব্যাথানাশক একটি মলমও।

বৃষ্টি রাউশির সামনে এসে পানির গ্লাসটা বাড়িয়ে দিলো।স্টিলের প্লেটটা বাড়িয়ে দিতেই দরজার সামনে থেকে হাসনা বেগম মেয়েকে ধমকে বললেন,
“মাইডার শরীলডা ভালা না।আর তুই বেক্কলের লাহান হের হাতে দিতাছোস?”

কাছে এগিয়ে আসলেন রাউশির।মেয়ের দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন,
“আমারে দে আমি খাওয়াই দেই মাইয়াডারে। চোখমুখ শুকাইয়া গেছে মাইডার।”

রাউশি খেয়াল করলো মধ্যবয়স্ক মহিলাটাকে।বয়স অতোটা না হলেও বার্ধক্যের ছাপ পড়েছে।উনার এমন অমায়িক ব্যবহারে রাউশি মুগ্ধ না হয়ে পারলো না।রাউশি ভেবেছে কোথায় না কোথায় এসে পড়েছে নাকি?তবে রাউশি বুঝতে পারলো এদের চোখ বুজে বিশ্বাস করা যায়।হাসনা বেগম খুব যত্ন সহকারে মেয়েটাকে খাওয়ানো শুরু করলেন। রাউশির ক্ষিদে লেগেছিলো প্রচুর। ভণিতা না করে খেতে লাগলো।আর মায়ের কথা মনে পড়তে লাগলো।একটা সময় খাবার মুখে করেই হু হু করে কেঁদে উঠলো রাউশি। মুখে হাত দিয়ে কেমন বাচ্চাদের মতো কান্না শুরু করলো।তার মা তাকে বাড়িতে থাকলে মাঝেমধ্যে খাইয়ে দিতো কত আদর করে। কিন্তু মায়ের কাছে ঠিক কবে ফিরতে পারবে এটা জানা নেই তার।রাউশিকে এমন কাঁদতে দেখে হাসনা বেগমেরও ভীষণ মায়া হলো। বৃষ্টিরও খারাপ লাগলো।হাসনা বেগম রাউশির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
“আম্মা তুমি কাইন্দো না।আমগোরে সব খুইলা কও।তোমার বাড়িত দিয়া আইমু নি। কই থেইকা আইছো তুমি? তোমার আব্বা আম্মার নাম কি?”

রাউশির গায়ে জড়ানো ওড়নাটা দিয়ে চোখমুখ মুছলো।আর খাবে না বললো হাসনা বেগমকে।হাসনা বেগমও জোর করলেন না।চলে গেলেন প্লেটটা নিয়ে৷ রাউশির মেহরানের কথা মনে পড়লো।আচ্ছা মেহরান কি জানে? রাউশি হারিয়ে গেছে? নাকি উনি ঢাকায় চলে গেছেন? যদি জানেন তাহলে নিশ্চয় পাগলের মতো খোঁজ করছেন?

বৃষ্টি রাউশির কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞাসা করলো,
“আপনি কোথা থেকে এসেছেন? আর কি হয়েছে? আমায় খুলে বলুন।”

রাউশি হেঁচকি তুললো।তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় সমস্তকিছু বলা শুরু করলো। সব বলা শেষ হতেই বৃষ্টির কপালে হাত।সৃষ্টি খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলো সব।কৌতূহল হলো তার।বৃষ্টি জিজ্ঞাসা করলো,
“কোন বাড়ি বললেন আপনি?”
“হাওলাদার বাড়ি।”

বৃষ্টি একবার মনে করার চেষ্টা করলো। তারপর বলল,
“ওই জঙ্গলে তো ভয়ানক সব প্রাণী আছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া তোমার কোনো ক্ষতি হয় নি।এছাড়া ওই গ্রামে জ্বিন পরীর আভাস পাওয়া যায় বলে কেউ রাতে সেখানে যাওয়া আসা করে না।আর হাওলাদার বাড়ি তো এই গ্রামের থেকে নাই বললে দুই তিন গ্রাম পেরিয়ে যেতে হয়। তুমি এতদূর আসলে কিভাবে?”

রাউশি জঙ্গলের মাঝে হারিয়ে গিয়েছিলো। এরপর জঙ্গলের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে এর শেষ না হলেও জঙ্গলের কাছ থেকে ক্ষেত দেখতে পেয়েই সেদিকে হাঁটা ধরেছে।কতদূর যে এসে গেছে সেটা রাউশি নিজেও জানে না। বৃষ্টি বুঝলো রাউশি অনেক বনেয়াদি পরিবারের মেয়ে।ওকে গ্রামের মানুষ দেখলে অনেক কিছুই বলতে পারে ভেবে সাবধানে রাখার কথা ভাবলো।বাবাকে বলে রাউশিকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথাও ভাবলো। তবে এই গ্রাম থেকে ইমানপুর গ্রামে যেতে তো প্রায় অনেক সময় লাগে।এছাড়া ওই গ্রামের সাথে এদিকের এই ভেতরের গ্রামগুলোর সাথে দ্বন্দের সম্পর্ক।যদি জানতে পারে ওই গ্রামের মানুষ এই গ্রামে আর এই গ্রামের মানুষ ওই গ্রামে তাহলে তো মেরে কেটে ফেলবে।রাউশিরও এই গ্রামে থাকা মানেই বিপদ।বৃষ্টি ভেবে পাচ্ছে না কি করবে? তখনই বাইরে থেকে কারও গলার আওয়াজ শোনা গেলো।

“এইরে বৃষ্টি রে।কই রে তোরা? কয়দা ডাউল থাকলে দে সে।কাইল দিয়া দিমু।”

বৃষ্টি চোখমুখ কুঁচকালো।তাদেরই অভাবের সংসার।আজ এটা থাকে তো কাল ওটা। আর এই মহিলা প্রতিদিনই তাদের থেকে কিছু না কিছু নিয়ে যায়।কিন্তু ফেরতও দেয় না আর।

মহিলাটা উঠোনে মেলে দেওয়া দামী জামা কাপড় দেখে কপাল কুঁচকালো।এগুলো তো বৃষ্টি আর সৃষ্টির হবে না।এরা জন্মের গরিব। এগুলো কোত্থেকে পেলো নাকি চুরি করলো ভেবে মহিলাটা সন্দিহান নজরে কাপড়গুলোর দিকে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলেন।

“এভাবে ঘুরে ঘুরে কি দেখেন মাজেদা চাচী?”

মাজেদা বৃষ্টির গলার আওয়াজ শুনে বৃষ্টির দিকে তাকালো।ডালের কথা ভুলে গিয়ে সন্দিহান কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“এইগলা কি তর নাকি?”

বৃষ্টি কাপড়গুলো দেখলো।জবাব দিলো,
“না এগুলো আমার বা আমার পরিবারের কারোর নয়।”

মাজেদার রূপ পালটে গেলো যেন মুহুর্তেই,
“তাইলে তুই কি আমগোর থেইকা চুরি কইরা আনছস? আমার মাইয়া গতপরশু ওর দামী জামাদা হারাইলো উঠোনের থাইকা।তোর বইন নিয়া আইছে নাকি।ওরে চুন্নিরে। আমগোর জামা কাপড় তোরা চুরি করস?৷ খাড়া তোগোরে জন্মের শিক্ষা দিমু।”

এইসব মিথ্যা বলে কাপড়গুলো দড়ি থেকে নিতে গেলেই বৃষ্টি তাড়াতাড়ি এসে হাত ধরলেন মাজেদার।এই মহিলা যে কেমন এটা বৃষ্টি জানে।মিথ্যা বলতে গলা একটুও কাঁপে না উনার।মিথ্যা যেন উনার কাছে মিষ্টি দিয়ে মাখানো ভাত।

“চাচী আপনার ভুল হচ্ছে এগুলো আমাদের বাড়ির একজন অতিথির।”

মাজেদা জামাটার লোভে পড়েছিলো। তাইতো মিথ্যা বলে মানুষজন জড়ো করিয়ে জামাগুলো নেওয়ার ধান্দা করছিলো তবে বৃষ্টির এহেন কথা শুনে থতমত খেয়ে গেলেন। বৃষ্টি বাঁকা হেসে বলল,
“শহর থেকে আমাদের বাড়িতে একজন অতিথি আসছে।এসব উনারই কাপড়।আপনি ছেড়ে দিন।এসব আপনাদের নয়।”

তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠার মতো জ্বলে উঠলেন মাজেদা।চেঁচিয়ে বললেন,
“তুই আমারে ভুল ধরস?বেশি বা*ল পাকনা হউয়া গেছত নি? তোর ধান্দা আমি আইজকাই হক্কলের সামনে তুইলা ধরুম।খাড়া।”

বৃষ্টি চিন্তায় পড়ে গেলো।এখন যদি মানুষজন আসে তাহলে তো রাউশি বিপদে পড়বে। বাইরে থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে হাসনা বেগম, রাউশিসহ সৃষ্টি বেরিয়ে এলো। রাউশি ভালোভাবে হাঁটতে পারছে না।সৃষ্টিই নিয়ে এলো রাউশিকে।

হাসনা বেগম রেগে মাজেদার কাছে গিয়ে বললেন,
“কি হইছে কি তোমার? চিল্লাও কেন?”
“তোর মাইয়া যে চুন্নি হেইডা হক্কলের কাছে জানামু আমি আইজকা।”

তেড়ে গেলেন হাসনা বেগম।বৃষ্টি থামিয়ে দিলো।হাসনা বেগম চেঁচিয়ে বললেন,
“মুখ সামলাইয়া কথা কও তুমি।চুন্নি মানে? আমার মাইয়া কি চুরি করছে যে চুন্নি কস?”

মাজেদা দাতে দাত পিষে জামাটা দেখিয়ে বললেন,
“এইযে আমার মাইয়া জামাদা চুরি করছে। এইদা তো আমার মাইয়া বড় বাজার থাইকা কিনছিলো।কবে জান হারাইয়ালাইছে।তোর মাইয়াই তো চুরি করছে।”

রাউশি এগিয়ে এলো ধীরপায়ে।মাজেদার চোখ গেলো রাউশির দিকে।কিছুটা আন্দাজ করতে পারলেন। এই জামাটা আবার এই মেয়ের নয় কি?যেই জামা পড়ছে এইটা তো বৃষ্টির।মেয়েটার চোখমুখ দেখলে বোঝা যায় ভালো ঘরের মেয়ে।ঢোক গিললেন মাজেদা। কিছু বলতে চাইলেন তবে রাউশি থামিয়ে দিয়ে কঠোর গলায় বলল,
“আপনি নিয়ে যান আপনার মেয়ের জামা। এরপর থেকে এই বাড়িতে আর আসবেন না।”

মাজেদা হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো খুশি হলো। বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে হাসনা বেগমের দিকে তাকালো।হাসনা বেগম রাউশিকে বিরোধিতা করে বললেন,
“এইডা কেমন কথা মা? তোমার জামা ওইডা। তুমি হের কও কেন?”

রাউশি মাজেদার দিকে তাকিয়ে জবাব দিলো,
“কারণ আপনি,আমরা উনার মতো নিচু মনের মানুষ নই বলে।”

মাজেদা তেঁতে উঠলেন।কিছু বক্তে যাবেন রাউশি থামিয়ে দিলো।

“কাইন্ডলি আপনি এখান থেকে চলে যান।”

মাজেদা ভেজা জামাটা নিয়ে হনহনিয়ে চলে গেলেন।ডালের কথা যেন ভুলেই গেছেন। রাউশির জন্য উঠোনে একটি চেয়ার নিয়ে এলো সৃষ্টি।রাউশি আবারও সৃষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।হাসনা বেগম রাউশির সামনে এসে বললেন,
“আম্মা তোমার জা_”

রাউশি কথা কেড়ে নিয়ে বললো,
“কোনো সমস্যা নেই আন্টি।”

বৃষ্টি রাউশির পাশে এসে দাড়ালো আর থমথমে গলায় বলল,
“ওই মহিলাকে এভাবে ছাড় দেওয়া ঠিক হয় নি আপনার।”

রাউশি হালকা হাসলো।তার বাইরে এসে ঠান্ডা হাওয়া আর মিষ্টি রোদে এভাবে উঠোনে বসে থাকতে যেন ভীষণ ভালো লাগছে। মন হঠাৎ বলে উঠলো মেহরান আসবে তাকে নিতে।অপর মন বলছে রাউশি যে অনেকদূর এসে গেছে খোঁজ পাবে কিভাবে? রাউশির মন এমনিতেই খারাপ ছিলো এবার যেন আরও খারাপ হয়ে গেলো।বৃষ্টিকে উত্তর দিতে পারলো না রাউশি।বৃষ্টি রাউশির কষ্ট বুঝলো।কাঁধে হাত রেখে বলল,
“কষ্ট পাবেন না রাউশি।আপনাকে বাড়ি পৌঁছানোর জন্য সর্বোচ্চ সাহায্য আমি করবো।”

রাউশি এই কষ্টের মাঝেও বৃষ্টির আপনি সম্বন্ধে হাসি পেলো।মাথা এলিয়ে বলল,
“আপনি বলো না প্লিজ।”

বৃষ্টি হাসলো,
“আমাদের ক্ষেতটা দেখে আসবে রাউশি?”

.

বিকেল নেমে এলো।মেহরান তখনও জঙ্গলে ধীরপায়ে হেঁটে রাউশিকেই খুঁজে চলেছে।নুজাইশ পেছন পেছন আসছে। জঙ্গলটার যে গভীরতা ঠিক কতটা এটা বোঝা ভীষণ কঠিন।এছাড়াও ভয়ানক সব প্রাণীর গর্জন এখনই কেমন ভয়াবহ শোনা যাচ্ছে।রাউশির কথা ভাবতেই গা শিওরে উঠছে নুজাইশের। মেহরান কিভাবে নিজেকে শান্ত রাখছে নুজাইশ তা বুঝতে পারছে না।মেহরান হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখ গেলো বাম পাশে। ওখানে পায়ের ছাপ দেখে চোখ বড় বড় হলো। দ্রুতপায়ে এগিয়ে গেলো সেদিকে। নুজাইশ মেহরানকে এত দ্রুত বাম দিকে এগিয়ে যেতে দেখে নিজেও এগোলো। মেহরান সেই পায়ের ছাপ ভালোভাবে খেয়াল করলো।পায়ের ছাপ বড় নয়।এটা মেয়েদের পায়ের ছাপ সেটা বুঝলো ভালোভাবে।পায়ের ছাপ অনুযায়ী সামনে এগিয়ে গেলো দুজনে।নুজাইশের চোখ পড়লো কাটা একটি গাছের ওপর।

“এই মেহরান ওটা দেখ।”

নুজাইশ আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো সেদিকে। দুজনে এগিয়ে গিয়ে দেখলো ছোট কাপড়ের টুকরো।এটা নিশ্চয় রাউশির? কারণ রাউশি হলুদ রঙা একটি জামা পড়ে ছিলো।আর এই ছোট্ট টুকরোটা যে রাউশির সেটা দুজনে খুব ভালোভাবে বুঝতে পারলো। পায়ের ছাপ তখনও মাটিতে স্পষ্ট। তা অনুসরণ করে তারা জঙ্গলের শেষ মাথায় আসলো।তবে এটা ছিলো জঙ্গলের বাম দিকে।দেখা গেলো সামনে শুধু ধানের ক্ষেত আর ক্ষেত। দূরে পাহাড় দেখা যাচ্ছে। আর সাদা সাদা কিছু দেখা যাচ্ছে। যা দেখতে খানিক অস্পষ্ট।তবে মেহরান বুঝলো সেসব বাড়ির টিন।সূর্যালোক সেখানে পড়ে আলোর উৎস তৈরি হয়েছে।

“চল।”

বলে মেহরান এগিয়ে গেলো ক্ষেতের আইলের মাঝে থাকা পায়ের ছাপ অনুসারে। এই এলাকায় হয়তোবা বৃষ্টি হয়েছে কিছুদিন আগে।তাই ক্ষেতের অবস্থা এত সেঁতসেঁতে। নুজাইশের হাঁটতেই বেগ পেতে হচ্ছে। মেহরান খুব সাবধানে হাঁটছে।ধান ক্ষেতের কিছু কিছু জায়গায় ধানের গাছগুলো নেতিয়ে পড়ে আছে।মেহরান যেন স্পষ্ট দেখলো এদিক দিয়ে রাউশি গেছে আর এসব জায়গায় পিচলে পড়ে গেছে।মেহরানের বুক কেঁপে উঠলো।মেয়েটাকে ছোট থেকেই মেজো চাচা আর চাচী আদরে মানুষ করেছে।বিয়ের পরও শ্বশুর বাড়িতে মনের কষ্ট হলেও শারিরীক এমন কোনো কষ্ট পায় নি।কিন্তু এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়ে নিশ্চয় অনেক কষ্ট পেয়েছে রাউশি। মেহরানের মন চাইছে আবিরকে এখনই জ্যান্ত পুতে দিতে।

নুজাইশ বলে ফেলল,
“এসব জায়গায় কি রাউশি পড়ে গিয়েছিলো নাকি?”

মেহরান উদ্বীগ্ন গলায় বললো,
“না জানি মেয়েটার অবস্থা এখন কেমন?”

নুজাইশ হতাশার দীর্ঘশ্বাস ফেলল।প্রায় ঘণ্টা দেড়েক লাগলো তাদের একটি বাড়ির সামনে পৌঁছাতে।বাড়িটা ভীষণ ছোট। এই বাড়ির আশেপাশে তেমন বাড়ি নেই।তবে কিছুদূরে আরও বাড়ি আছে।মেহরান ঠিক করলো বাড়ির লোকদের জিজ্ঞাসা করবে এদিকে কোনো মেয়ে এসেছে কিনা? তারপএ গ্রামে ঢুকবে।নুজাইশ ফোন বের করে দেখলো সাড়ে পাঁচটা বাজে। মেহরান আর নুজাইশ উঠোনে গিয়ে দাঁড়াতেই এক যুবতী মেয়েকে দেখতে পেলো।মেহরান নরম গলায় বলল,
“এক্সকিউজ মি!”

বৃষ্টি কাজ করছিলো।ভেতরে রাউশি ঘুমাচ্ছে।হাসনা বেগম বাড়ির পেছনে গিয়েছেন। বৃষ্টি পেছনে ফিরে দুজন ছেলেকে দেখে ভ্রুকুটি করলো।রাউশি বলেছিলো সেই আবির নামক ছেলেটি নাকি কালো শার্ট পড়া ছিলো।আর এই ছেলেও তো কালো শার্ট পড়া। তারওপর কেমন যেন এলোমেলো অবস্থা।বৃষ্টির সন্দেহ হলো।এই সেই আবির নয়তো আবার? তার সন্দেহকে সত্য করলো যেন মেহরান।

“আপনারা কি কোনো মেয়েকে এদিকে দেখেছেন? রাউশি নামে।”

সন্দেহ বেশি থাকায় বৃষ্টি জড়তা নিয়ে কাঠকাঠ গলায় বলল,
“না আমরা কোনো মেয়েকে দেখি নি। চলে যান এখান থেকে।কে আপনারা?”

মেহরানও আর কিছু বলার পেলো না। এই মেয়ের যা ব্যবহার রাউশি যদিও আসে তাহলে নিশ্চয় দূর ছাই করে তাড়িয়ে দেবে। মেহরান অন্যদিকে হাঁটা ধরলো। পেছন পেছন নুজাইশও গেলো।তবে তার দৃষ্টি ছিলো ঘরের ভেতরে। মেহরানও যাওয়ার সময় তাকিয়েছে সেদিকে।কেন যেন মন বারবার বলছিলো রাউশি আছে এখানে। তবে মস্তিষ্ক বাঁধা দিচ্ছিলো খুব।এদিকে নুজাইশেরও একই অবস্থা।দুজনে চলে গেলো সেখান থেকে।

চলবে….