মোহ মেঘের আলাপন পর্ব-২৩+২৪

0
400

❝মোহ মেঘের আলাপন ❞
লেখিকা: “নূরজাহান আক্তার আলো”
[২৩]

আদিত্য তার কথা শেষ না করতেই দেখে মেধা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। তাকে আরেকদফা অবাক করতে সে সত্যি সত্যিই গাড়ি থামিয়ে ফুল কিনে আনলো। আর এনেই ফুলগুলো রাখল মেধার কোলে। রজনীগন্ধা, গাঁদাসহ, লাল, সাদা, হলুদ, এবং গোলাপি রঙের গোলাপও এনেছে। সত্যি বলতে, গোলাপ মেধার ভীষণ পছন্দের ফুল। তবে এই মুহূর্তে ফুল দেখে খুশি হতে পারলো না সে। কারণ তার মনের মধ্যে চলছে নানান চিন্তা। চোখে ভাসছে সীমা বেগমের কান্নারত মুখখানা। এককথায় বলতে সে এই মুহূর্তে বিক্ষিপ্ত মেজাজে আছে। কিচ্ছু ভালো লাগছে না তার। সব দোষ আদিত্যের! কী দরকার ছিলো শুধু শুধু বাসা থেকে বেরিয়ে আসার? যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। আর যা ঘটিয়েছে আমান তাতে অনুতপ্ত। যা ওর নজরেও পড়েছে। যখন ওর সঙ্গে তার দেখা হয়েছিলো আমান পারে নি দৃষ্টি তুলে কথা বলতে।অপরাধীর
ন্যায় নত মস্তকে শুধু এইটুকুই উচ্চারণ করেছে, ‘সরি বনু।’
চোখ মানুষের মনের আয়না। মনের আভাস চোখ দেয়।আর আমানের চোখ বলে দিচ্ছিলো সে প্রচন্ড আফসোসে পুড়ছে, অপরাধভোগে ভুগছে। এখন সবাই যদি তার দিকেই আঙুল তুলে তবে কীভাবে হবে? তাকে তো নিজেকে শুধরে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত।বোঝানো উচিত ভালো মন্দের তফাৎ।
কিন্তু না, আদিত্য সেটা না করে করলো এর বিপরীত কাজ।
এভাবে বাসা থেকে বেরিয়ে আসাতে আমান না জানি কেমন
প্রতিক্রিয়া দেখায়। এখন সে নিজেকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েকিছু একটা করে বসলে? তখন এই দায়ভার কে নিবে? আদিত্য তার সঙ্গে কথা না বলুক, এক টেবিলে নাহয় খেতেও না বসুক। তবুও মানা যেতো তবে তার কারণেই বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়া ওর কাছে উচিত মনে হচ্ছে না। কেমন
জানি লাগছে। নিজের কাছে নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে।
তাছাড়া সে কখনো কল্পনা করে নি আলাদা সংসারের কথা। শুধু সুখপূর্ণ একটা পরিবার চেয়েছিলো। অথচ…..! তার দুই পরিবারই আজ ছন্নছাড়া, সুখহারা। এসব কথা ভেবে প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে সে জানালার বাইরে তাকিয়ে রইলো। এখন ওর মনে হচ্ছে আদিত্যকে একটা খামচি মেরে শার্টের কলার ধরে টানতে টানতে বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। প্রয়োজনে দু’চার থাপ্পড় খেলোও নাহয়। কিন্তু এটা সে চায়লেও করতে পারবে না।কারণ আদিত্যের সঙ্গে পেরে ওঠা ওর পক্ষে সম্ভব নয়। মেধাকে নিশ্চুপ দেখে তখন আদিত্য বললো,

-”বাসরঘর সাজাতে আর কী কী যেনো লাগে?”

-”মানে?”

-”মানে আজ আমাদের ফাস্ট নাইট। সেজন্য রুম সাজাবো।
এখন তুমি বলো রুম সাজাতে কী কী লাগবে। ফুল, বেলুন, ক্যান্ডেল, আর কি?”

ওর কথা শুনে মেধা হতভম্ব হয়ে শুধু তাকিয়ে রইল। এহেন পরিস্থিতিতে এই লোক বাসরঘর নিয়ে পড়ে আছে! কীভাবে বাসরঘর সাজাবে এই পরিকল্পনায় ব্যস্ত সে! বিয়ে হওয়ার দু’ঘন্টা অতিবাহিত হতে না হতেই বাসরের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। একি ওর আদিত্য! যার মাঝে সামান্য হলেও লজ্জা অবশিষ্ট ছিলো? এসব ভেবে হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।ওর হতভম্ব মুখ দেখে আদিত্য পুনরায় একই কথা জিজ্ঞাসা করল। জবাবে মেধা অস্বস্ত্বি নিয়ে উচ্চারণ করলো,

-”আদিত্য ভা..!”

-”এই মুহূর্ত থেকে আমার নামের সাথে ‘ভাই’ ডাকটা যদি যুক্ত করো তবে থাটিয়ে একটা থাপ্পড় মারবো। বিয়ের পরে অন্তত
ভাই! ভাই! করা থেকে বিরত থাকো।”

-”কেন?”

-”তোমার মুখে ভাই ডাক শুনতে বিয়ে করি নি নিশ্চয়ই? ”

-”অনেকদিন অভ্যাস সময় লাগবে।”

-”এই ব্যাপারে একবিন্দুও ছাড় দিবো না। আর না পাবে না সময়।

-”তাহলে কী বলে ডাকবো?”

-“আমার নাম ধরে নয়তো ভবিষ্যতে বাচ্চাদের নাম ধার নিয়ে।”

-”বাচ্চা! এর মধ্যে বাচ্চা কোথা থেকে এলো?”

-”এখন নেই তবে হতে কতক্ষণ? ”

মেধা আর কথা বাড়ালো না। সে বুঝে গেছে আদিত্য তাকে রাগিয়ে দেওয়ার প্ল্যান করছে। তবে আদিত্যের প্ল্যান সফল সাকসেস হতে দিবে না সে। তাই মুখে কুলুপ এঁটে বসে রইল। আর একটা টু শব্দও করলো না। প্রায় আধাঘন্টা পর, তারা
আদিত্যের নতুন ফ্ল্যাটে গিয়ে পৌঁছালো। এ ফ্ল্যাট সাজানোর কাজ শেষ হয়েছে গতমাসে। যদিও বা ওর পরিকল্পনা ছিলো ভাড়া দিয়ে দেওয়ার। সচারাচর যা করে সে। তবে ব্যস্ততার কারণে টু-লেট টানানো হয় নি। এজন্যই ফাঁকা ছিলো আর মেধাকে নিয়ে উঠতে পারল। নতুবা তাকেও ফ্ল্যাট ভাড়া করে বউ নিয়ে থাকতে হতো। এই কথা ভেবে সে একবার মেধার দিতে তাকালো। ভাবলেও খুব পাচ্ছে এই পিচ্চিটা তার বউ। যার হাইট তার বুক অবধি। একথা ভেবে মিটিমিটি হেসে সে
ফ্ল্যাটের দরজা খুলে মেধাকে প্রবেশ করতে ইশারা করলো। মেধা প্রবেশ করে চারদিকে দৃষ্টি বুলাতে ব্যস্ত। তখন আদিত্য মেইন দরজা আঁটকে মেধার গালে চট করে চুমু এঁকে বললো,

-”আমাদের ছোট্টো সংসারে তোমাকে সু-স্বাগতম বউ।”

_____________________________

অপরাধ যখন করেছে তখন তাকেই মাফ চায়তে হবে।কারণ
সে যা করেছে এটা অপরাধ, ঘোর অপরাধ। আর আদিত্যের
রাগ হওয়া স্বাভাবিক। তাকে যে মারতে মারতে মেরেই ফেলে নি এটাও তার ভাগ্য। সে আজই বাসায় ফিরে আদিত্যের পা জড়িয়ে ধরে মাফ চাইবে। প্রয়োজনে আরো দু’চার ঘা খেতে রাজি। তবুও ভাইয়ের সঙ্গে কথা না বলে থাকতে পারবে না সে। এই জন্য যা মূল্য দিতে হয় দিবে। এসব ভাবতে ভাবতে বাইক নিয়ে ফিরছিলো আমান।হঠাৎ ফুলের দোকানে নজর পড়লো তার। সাদা ও টকটকে লাল গোলাপ দেখে চট করে মনে পড়লো মেধা রাণী কথা। গোলাপ দেখলেই মেধার রাগ গলে জল। একথা ভেবে আমান অনেকগুলো গোলাপ কিনে নিলো। আর একটু সামনে এগিয়ে তিনটে চকলেটের বক্স নিতেও ভুললো না। তারপর সে একবুক আশা নিয়ে ছুটলো বাসার পথে। বাসায় গিয়ে ফুল চকলেট নিয়ে প্রথমেই গেল
মেধার রুমে। তাকে রুমে না পেয়ে আদিত্যের রুমেও উঁকি দিলো। কিন্তু কই, আদিত্য বা মেধা কাউকেই পেলো না সে।
অতঃপর ফিরে এলো নিজের রুমে। হাতের জিনিস গুলো ড্রেসিংটেবিলের উপর রেখে গেল ফ্রেশ হতে। আগে ফ্রেশ হয়ে নিক তারপর নাহয় আম্মুর কাছে যাবে আদিত্য আর মেধার খোঁজ নিতে। একথা ভেবে সে ফ্রেশ হয়ে গেল সীমা বেগমের কাছে। তখন উনি রান্নাঘরে ছিলেন, ওকে ফিরতেও দেখেছেন। আমান রান্নাঘরে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে বেশ কয়েকবার সরি বললো। এমন ভুল আর জীবনেও করবে না ওয়াদা করলো। তখন প্রত্যুত্তরে সীমা বেগম বললেন,

-”খেতে বসো।”

-”মেধাকে দেখছি না যে? ভাইয়ার সঙ্গে কোথাও গিয়েছে?”

-”হুম।”

-”কখন ফিরবে জানিয়েছে?”

-”হয়তো আর ফিরবে না। তারা বাসা থেকে একেবারেই চলে গেছে। যাওয়ার আগে তাদের বিয়েও সম্পূর্ণ করেছি। দুটোই ছেলে আমারই। একজনের দোষে আরেকজনকে তো আর
ভাসিয়ে দিতে পারি না।”

একথা শুনে আমান মাথা নত করে রইল। তার অশ্রু গড়িয়ে ভাতের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। তার কান্নার না আছে শব্দ আর না বর্ণ। সীমা বেগম একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন আমানের দিকে। পাশের চেয়ারে নজর পড়তেই নীরবে কেঁদে ফেললেন তিনি। আমানের গলা দিয়েও ভাত নামলো না। সে হাত ধুয়ে উঠে চলে গেল। আদিত্য বাসা ছেড়ে চলে যাবে সে ভাবতেও পারে নি। তার ভাইট সহজে রাগে না আর রাগলে পরিণতি খুবই পীড়া দেয়। অর্থাৎ তার রাগ সহজে ভাঙবে না। এখন তার জন্যও বাসায় থাকা মুশকিল হয়ে যাবে। এসব ভেবে সে রুমে গিয়ে শব্দ করে কেঁদে ফেললো। মায়ের মুখের দিকেও তাকাতে পারবে না৷ উনি উনার সন্তানের কতটা ভালোবাসে সে জানে, অনুভবও করে। সারারাত কোনোমতে কাটিয়ে সে সকালবেলা আদিত্যের ফ্ল্যাটে ছুটে গেল। ঘড়িতে তখন প্রায় সাড়ে আটটা। মেধা সকালবেলা উঠে রান্নাঘরে টুকটাক কিছু কাজ করছিলো। আদিত্য ঘুমে বিভোর। তার কথা ভেবে সে মিটিমিটি হাসছিলো। গতরাতের কিছু কথা মনে পড়ে গেল তার। মানুষটা যে এত ফাজিল তা ধারণারও বাইরে ছিলো।
যদিও প্রেমে পড়ার আগে মনে হতো আদিত্য একটু বেশিই ভদ্র। এর দ্বারা প্রেম ট্রেম হবে না। কিন্তু না সেই তার প্রেমে ডুবলো। তারপর বুঝলো না এর মধ্যে সামান্য হলেও রসকষ আছে। কিন্তু গতরাতে পুনরায় প্রমাণ পেলো সে যেনো তেনো না রোমান্টিকের ডিব্বা একটা। একথা ভাবতে ভাবতে মেধা ফিক করে হেসে দিলো। আদিত্য মুখটা তখন দেখার মতো হয়েছিলো। তারা ফ্ল্যাটে আসার পর ফ্রেশ হয়ে খেয়ে বিশ্রাম নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছিলো। ফিরেছিলো অনেক রাত করে। রাতের খাবারও সেরেছিলো বাইরে থেকে। কিন্তু রাতে যখন ফিরলো ফ্রেশ হয়ে ঘুমাতে যাওয়ার সময় বিপত্তি বাঁধল। সে
সময় কাটাতে ফ্ল্যাট গোছাচ্ছিল। মূলত অপেক্ষা করছিলো আদিত্যের ঘুমিয়ে যাওয়ার। কিন্তু না ধরা পড়েই গেল। হঠাৎ আদিত্য তাকে ডেকে বলে উঠলো,

-”অহেতুক এক কাজ বার বার করে সময় নষ্ট না করলেই কী নয়? অপেক্ষা করছি, জলদি রুমে এসো।”

To be continue……!!

❝মোহ মেঘের আলাপন ❞
লেখিকা: “নূরজাহান আক্তার আলো”
[২৪]

-”অহেতুক এক কাজ বার বার করে সময় নষ্ট না করলেই কী নয়? অপেক্ষা করছি, জলদি রুমে এসো।”

-”হাতের কাজটা সেরে যাচ্ছি।”

-”না। এখন আসতে বলেছি মানে এখনই আসবা।”

-”কী আশ্চর্য, বলছি তো কাজটা সেরে যাচ্ছি।”

-” আজ পালাতে চাচ্ছো ঠিক আছে, কাল অথবা পরশু কী করবে? ফের আমার কাছেই ধরা তো দিতেই হবে, তখন?”

একথা শুনে মেধা হাতের কাজ সেরে রুমে চলে গেল। সময় নিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো। তার পরণে গোলাপী রঙের রাতের পোশাক। দেখতে বেশ আদুরে লাগছে। যেনো একটা পুতুল।
মেধা তোয়ালেতে মুখ মুছতে মুছতে ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর আড়চোখে আদিত্যকে পরখ করে
চুল বাঁধলো। আদিত্য বুকে দুই হাত গুঁজে এদিকেই তাকিয়ে আছে। চোখাচোখি হওয়াতে সে দৃষ্টি সরিয়ে কী করবে ভেবে পেলো না। মিনিট দু’য়েক দাঁড়িয়ে থেকে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। তখন আদিত্য বলল,”

-”ঢং করা শেষ নাকি বাকি আছে?”

উক্ত কথার জবাব দিলো না মেধা। পাশ ফিরে কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে কাঠ হয়ে শুয়ে রইলো। এতে আদিত্য প্রচন্ড বিরক্ত হলো। সে কন্ঠে বিরক্ত এনে বলেই ফেললো,

-” আমি কী এখন নানী দাদীর চরিত্র ভাড়া করে আনবো?”

-”মানে?”

-”মানে বোঝো না? নানী দাদী থাকলে নিশ্চয়ই তোমাকে এটা বলে দিতো, ফাস্ট নাইটে তোমার কোনটা করা উচিত আর কোনটা অনুচিত।”

-”এমন করছেন কেন তুমি?”

-”কেমন করছি? ”

-”কিছু না, আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।”

-”রাগ উঠাবে না মেধা, আমার কাছে এসো।”

মেধা এবার বিরক্ত হয়ে বিরবির করে উচ্চারণ করলো,

-”বা*।”

-”কি বললে? জোরে বলো।”

মেধা এবার করুণ দৃষ্টিতে আদিত্যের দিকে তাকালো। সেটা দেখে আদিত্য ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। অতঃপর সোজা হয়ে শুয়ে মেধাকে পুনরায় কাছে আসার কথা বললো। মেধা ভদ্রমেয়ের ন্যায় আদিত্যের কাছে এসে চট করে আদিত্যের বুকে মুখ লুকালো। বেশ কিছুক্ষণ সেভাবে থেকেই হাত দিয়ে ইশারা করলো ক্যালেন্ডারের দিকে। তারপর তারিখের দিকে তাকিয়ে ক্রস চিহ্ন আঁকালো। ক্রস অর্থাৎ নিষিদ্ধ। তারিখের দিকে ক্রস মানে নিষিদ্ধ তারিখ। ধূর্ত আদিত্যের ব্যাপারখানা বুঝতে সময় লাগল না।ততক্ষণে মেধা এটা বুঝিয়ে ওর বুকে মুখ লুকিয়েছে। এজন্য আদিত্যের কাছে আসতে সে ভীষণ লজ্জা পাচ্ছিলো। কিয়ৎক্ষণ চুপ থেকে আদিত্য মুখ খুললো,

-”মেয়ে মানুষ একটু বেশি বোঝে এর জলজ্যান্ত প্রমাণ তুমি।
আমার কাছে আসতে বলেছি এর কারণ আমার মাথা ব্যথা করছিলো, ম্যাসাজ করে দেওয়ার জন্য। আর আমি বুঝেছি তোমার….! ”

-”কীভাবে বুঝলে?”

মুখ ফসকে একথা বলে মেধা জিহ্বায় কামড় বসালো। সেটা দেখে আদিত্য হাসতে গিয়েও চেপে গেল।তবে ঠোঁটের কোণে
লেগে রইল তার মৃদু হাসি। ফ্ল্যাটে আসার ঘন্টা দু’য়েক পরেই তারা পুনরায় বাইরে বের হয়েছিলো। বেশ কিছু প্রয়েজনীয় জিনিস কেনাকাটা করতে। শপিংমলে গিয়ে আদিত্যকে ব্যস্ত রেখে সে চট করে গিয়েছিলো পাশের ফার্মেসিতে। ওকে বের হতে দেখে আদিত্যও বের হয়েছিলো। তবে তাকে ফার্মেসিতে ঢুকতে দেখে সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়েছিলো। দূর থেকে নজর রাখছিলো তার প্রতি। যখন দেখলো মেধা আসছে তখন সে মলে ঢুকে এটা ওটা দেখার ভাণ ধরে। এতে মেধাও ভাবে সে কিছুই টের পায় নি। তবে আদিত্য এ ব্যাপারে কথা বাড়ালো না। মেধার হাত টেনে নিজের মাথায় রাখলো। মেধা চট করে উঠে আদিত্যের পাশে বসে মাথা ম্যাসাজ করতে লাগলো, চুল টেনে দিতে থাকলো। আধা ঘন্টা পর, মেধা আদিত্যকে
জিজ্ঞাসা করলো,

-”ঘুমিয়ে গেছো?”

-”উহুম, না।”

-”ব্যথা একটু কমেছে?”

-”হুম।”

-”কফি খাবে, এনে দিবো?”

-”উহুম।”

তারপর পুনরায় নীরবতা। একটু পর, মেধা আদিত্যর কানের
কাছে ফিসফিস করে গিয়ে বললো,

-”ভীষণ ভালোবাসি, ভালোবাসার মানুষ। ”

একথা কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই আদিত্যের ঠোঁটে হাসি ফুটলো। মেধা নয়ন জুড়িয়ে তা দেখলো। তখন আদিত্য তাকে শুইয়ে দিয়ে ওর বাহুডোর বন্ধী করে চট করে মেধার কপালে, নাকে
, গালে, চুমু এঁকে বললো, ‘ঘুমাও।”

মেধা আর কথা বাড়ালো না।প্রিয় মানুষটার বুকে মাথা দিয়ে প্রশান্তিতে চোখ বুজে নিলো। এই মানুষটাকে ভালো রাখার দায়িত্ব তার, একান্তই তার।
___________________________________

মেয়েটির নাম মিষ্টি। নামের মতোই দেখতে সে। তার হাসি দেখলে মনে সুখ অনুভব হতো। মনে হতো, হাসি-খুশি তার জন্যই। তার মন খারাপ দেখলে বুক ঝড় উঠতো। পাগলের ন্যায় ছটফট করতো হৃদয়পাড়। দূর থেকে আগলেও রাখত সবসময়। তখনকার দিনগুলোও ভালো ছিলো। আর যখনই ছুঁতে গেলে, নিজের করে পেতে মরিয়া হয়ে উঠলো তখনই মরিচিকার ন্যায় হারিয়ে গেল। সেই সঙ্গে বুঝিয়ে দিলো, না পাওয়ার বিষাক্ত ব্যথা।

অন্ধকার বেলকণিতে বসে নিজের কথায় ভাবছিল আমান।
মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি। মিষ্টি নামের মেয়েটি তার অতীত। যে অতীতকে অতি গোপনে বয়ে বেড়াচ্ছে দীর্ঘ আট বছর। তার প্রতি রাগ করে মিষ্টি নিজের প্রাণ ত্যাগ করেছিলো। চুপিচুপি বিয়ে করেছিলো তারা। আমান তখন অনার্সের ছাত্র। মূলত,
একে অপরের প্রতি ভালোবাসার প্রমাণ দিতেই বিয়ে অবধি এগিয়েছিলো। তবে আমান তাকে কখনো খারাপভাবে ছুঁয়ে দেখে নি। মাঝে হাত ধরতো, কপালে চুমু আঁকতো, আর ওর মন খারাপ থাকলে মিষ্টিকে শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে
ধরে বসে থাকতো। চুপিচুপি প্রেম তাদের ভালোই চলছিলো। একদিন মিষ্টি কল করে জানায় সেদিন তাকে পাত্রপক্ষ নাকি দেখতে আসবে। ব্যাপারটা সেদিন সাধারণভাবে নিয়েছিলো।
মাইগ্রেনের অসহ্য ব্যথার কারণে কথা বলতে পারছিলো না, মিষ্টিকে চিন্তা করতে নিষেধ করে ওর ফোনটা সাইলেন্ট করে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। যখন তার ঘুম ভাঙ্গে, তখন রাত দশটা। অর্থাৎ সে টানা আটঘন্টা ঘুমিয়েছে। তখন তার মনে পড়ে মিষ্টির কথা।ফোন হাতে নিতেই দেখে অনেক কল, মেসেজ। সে কল ব্যাক করলে মিষ্টি ধরে না। পরে রাগ ভাঙাবে বলে ফ্রেশ হয়ে আসতেই দেখে তার বন্ধু রতন কল করেছে। সে ফোন কানে ধরতেই যা শুনে তাতে তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। তার কানে রতনের বলা কম্পিত কন্ঠে বলা কথাটা এখনো তার কানে বাজে, “মিষ্টি আর নেই ভাই।”
দেখতে এসে পাত্রপক্ষ কাবিন করা সিদ্ধান্ত জানায়। বেচারা মিষ্টি কোনোভাবে আঁটকাতে পারছিলো না। পরে ওয়াশরুমে
যাওয়ার নাম করে তার রুমের সিলিংয়ের সাথে গলায় দড়ি দেয়। সেই সঙ্গে হারিয়ে যায় তার পবিত্র ভালোবাসা। এই কষ্ট ভুলতে পা বাড়ায় নেশার জগতে। ধীরে ধীরে বাড়তেও থাকে তার চাহিদা। বাবা-মা, ভাই কারো সন্মানের পরোয়া করে না।
নিজে যা ভালো বুঝে তাই করে। পুরনো অতীত স্মৃতিচারণ করে আমান হাসলো। ঠিক তখনি তার মস্তিষ্কে খেলে গেলে আদিত্যের বলা কথাগুলো,

-‘পৃথিবীতে কোনো ভাই এই অভিশাপ হয়তো কোনো ভাইকে দেয় নি। তবে আজ আমি তোকে দিচ্ছি। তোর জীবনে প্রেম আসুক। কাউকে যেনো ভীষণ ভালোবাসতে পারিস। বুঝতে পারিস প্রেমের মর্ম, গভীরতা। নিগূঢ়ভাবে উপলব্ধি করতেও সক্ষম হোস প্রিয়’র স্থানটা বুকের ঠিক কোন পাশটায়। সেই সঙ্গে বিশুদ্ধ ভালোবাসা মিশে যাক তোর রন্ধে রন্ধে। বুকের পা পাশটায় গেঁথে যাক অতি প্রিয় একটি নাম। যার সামান্য ব্যথাতে তুই কাঁতরাতে পারিস, ছটফট করতে পারিস। যার চোখের পানি দেখে তোর নিজেকে পাগল পাগল মনে হয়। মনে হয়, যে কোনো কিছুর বিনিময়ে তার আবদারটা পূরণ করি। তবুও সে হাসুক, ভালো থাকুক। তার হাসিতেই তোর সর্বসুখ। ঠিক সেদিনই বুঝবি আমার ঠিক কোথাও আঘাত করেছিস তুই। কতটা কষ্ট, যন্ত্রণায়, মুহূর্ত গুলো কাটিয়েছি আমি। আজকে যেমন এই কষ্টে আমি তরপাচ্ছি, একদিন তুই’ও তরপাবি।’

আদিত্যের হয়তো জানা ছিল না তার ভাই এই অনলে দগ্ধ হচ্ছে অনেক আগে থেকেই। তবে সেটা সে না কাউকে বুঝতে দিয়েছে, আর নিজে নিজে ভুলতে পেরেছে। সে আজও খুব ভালোবাসে মিষ্টি কে, ভীষণ ভালোবাসে। দু’চোখ বন্ধ করলে
মিষ্টির অশ্রুসিদ্ধ চোখজোড়া দেখতে পায়। যে চোখে নীরব অভিমান ঠাসা। তার জীবনে প্রতিটা ধাপে ধাপে ভুল করেছে সে। আর ভুলের মাশুলও দিচ্ছে। এসব ভেবে সে বেলকনির
মেঝেতে পা ছড়িয়ে দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে বসলো। আজ
আকাশে চাঁদ উঠেছে। পূর্নিমার চাঁদ। আমান চাঁদটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বিরবির বললো,

-”চাঁদ, আমার ভাইয়াকে বলে দিস তার দেওয়া অভিশাপে আমি অনেক আগে থেকেই অভিশপ্ত। এবার যেনো আমার সঙ্গে কথা বলে।”

To be continue………..!!