#মৌমোহিনী
পর্ব-৮
“Pretty little baby… I’m so in love with you…”
মেসেজটা এক পলকে দেখে মোবাইলটা পকেটে রেখে দিলেন ফারহান রুশদি। তিনি পার্টি অফিসে বসে আছেন। অজস্র লোকজন চারপাশে। গরমের মধ্যে তিনি ক্রমাগত ঘামছেন। সাদা রুমালটা দিয়ে কপালের ঘাম মুছছেন অনবরত। সাথে মুখ তো চলছেই। অফুরন্ত কথা, অশেষ আলোচনা, সমালোচনা, পরিকল্পনা আর উদ্বেগ। নির্বাচন এসে দরজায় কড়া নাড়ছে। প্রচারণা চলছে পুরোদমে। দম ফেলবার ফুরসত নেই। এতকিছুর ভিড়েও মেসেজটা দেখে একটু অন্যমনষ্ক হয়ে গেলেন ফারহান রুশদি। খুবই বিরক্ত লাগছে তার। সেদিন মেয়েটাকে তার শেষ করেই আসা উচিত ছিল। কিন্তু উপায় ছিল না। যেতে যেতে রাত হয়ে গিয়েছিল৷
কোনো সাক্ষী রাখতে চান না বলে তিনি নিজেই ছদ্মবেশে ওকে ড্রাইভ করে নিয়ে গিয়েছিলেন৷ পার্টি অফিস থেকে বের হতে হতেই দেরি হয়ে গিয়েছিল। তার ওপর পেছনে লাগা টিকটিকিটাকে খসাতে হয়েছে। ঘুরপথে যেতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল। প্রস্তুতিও ছিল না তেমন। মে রে ফেললে লা শটারও তো একটা ব্যবস্থা করতে হতো। আর সেটাই ছিল সবচেয়ে বড় ঝামেলা। একবার নির্বাচনে জিতে গেলে আর কোনো কথা ছিল না। কিন্তু ভোটের আগে একটা স্ক্যান্ডাল হলে তার জন্য পুরো দলকে সাফার করতে হবে। প্রতিটা পদক্ষেপ তাই নিতে হবে খুব সাবধানে।
মুন্সিগঞ্জে ধলেশ্বরী নদীর পাড় ঘেঁষে তার ছোটো একটা ফার্মহাউস আছে৷ সেখানে এক বুড়ো কেয়ারটেকার আর একটা ছুটা বুয়া ছাড়া কেউ থাকে না৷ মনিকাকে সেখানেই রেখে এসেছিলেন তিনি। আরামেই কাটছে ওর দিনগুলো। কিন্তু ছোক ছোক করা স্বভাবের মেয়ে কি এক জায়গায় চুপচাপ বসে থাকতে পারে? প্রায়ই তাকে কাজের সময় কল করবে, আহ্লাদে গলে গলে পড়া মেসেজ পাঠাবে। এসব দেখলেই তার গা জ্বলে যাচ্ছে। মন চাইছে এক্ষুনি গিয়ে ওকে দুই টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে আসতে।
“স্যারের কি মাথাব্যথা? চা দিতে বলব?”
“হ্যাঁ। চা বলে দাও।”
মাথা চেপে ধরে বসেছিলেন তিনি। সোজা হলেন। সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটে পুরলেন। প্যাকেটটা বাড়িয়ে ধরে সামনে বসা দুজনে অফার করে নিয়ে লাইটার দিয়ে ঠোঁটের সিগারেটটা জ্বালিয়ে ধোঁয়া ছাড়লেন। “তো কী বলছেন যেন আপনারা?”
তার তীক্ষ্ণ নীলচে চোখজোড়া উজ্জ্বল হয়ে আছে। মুখের পেশিগুলো টানটান। কপালে সামান্য ভাজ। সিগারেট খাওয়ার সময় তাকে নাকি প্রচন্ড ম্যানলি লাগে- কথাটা মনিকার। তার স্ত্রী সিগারেট দুই চোক্ষে দেখতে পারে না। অত্যন্ত সিরিয়াস আলোচনার মাঝেও তার ঠোঁটের কোণে একচিলতে হাসি ফুটে উঠল কথাটা মনে করে। পরক্ষণেই পুরোপুরি কাজে ডুবে গেলেন তিনি।
*****
প্রচন্ড বৃষ্টি পড়ছে। বেশ কিছুদিন ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। তুমুল বৃষ্টিতে যেন ধুয়েমুছে যাচ্ছে ব্যস্ত শহরের সকল ক্লেদ। ছাতা হাতে রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে আরিফের মনে হলো বৃষ্টি আসলে তাদের মতো লোকের জন্য নয়। তাদের একটু গরমটা কম হলেই হয়। এক হাঁটু পানি পেরিয়ে কাজে বের হবার কষ্ট তারাই বোঝে যাদের পায়ে ব্যথায় রাতের ঘুম উড়ে যায়। কিন্তু কাজ যে করতেই হবে!
বৃষ্টির আসল অনুভব নিতে পারে তরুণেরা। যারা সদ্য প্রেমে পড়েছে। প্রেমিকার সাথে ভাগাভাগি করে নিচ্ছে একটি ছাতা। এক কাঁধ ভিজে যাচ্ছে। ছাতাটা মূলত মেয়েটাকে সুরক্ষা দিচ্ছে। পানিতে ছপ ছপ শব্দ তুলে হাঁটছে আর কী দারুণ মজার গল্পে মেতে আছে যেন! আরিফ জানে, এই সময়টুকু ভীষণ সুন্দর হলেও জীবনে খুব অল্প সময়ের জন্যই আসে। তারপর সংসার স্রোতে ঢুকে গিয়ে হারিয়ে ফেলতে হয় সব ছোটো ছোটো আনন্দ।
নির্বাচনের সময়ে নানারকম ছোটোবড়ো ক্রাইমে একেবারে ডুবে যেতে হচ্ছে। এমনভাবে সব কাজ জেঁকে ধরেছে যে তৌকির আর মনিকার কেসটা নিয়ে ভাবারও ফুরসত পাওয়া যাচ্ছে না৷ ওদের প্রজেক্টটাও বন্ধ হয়ে আছে। আগে সমাধান হবে কে তথ্য পাচার করছে, তারপর কাজ এগোবে। মনে হচ্ছে না নির্বাচনের আগে কিছুই সম্ভব৷ এখন সবার মনোযোগ সেদিকে। তাছাড়া সরকারি প্রোজেক্ট মানেই টাকার ছড়াছড়ি। বিশাল ব্যাপার। বিরোধী দল স্বভাবতই চাইবে তারা ভোটে জিতে প্রোজেক্টে কাজ শুরু করতে। এবারের বিরোধী দল অনেকটাই ভারতপন্থী। আমেরিকাপন্থী সরকারের বিরুদ্ধে তারা পুরোটা সময়েই জনগণকে উষ্কেছে আমেরিকার বিরুদ্ধে। তাই তারা ক্ষমতায় গেলে পুরো প্রোজেক্টই ভারতের হাতে চলে যাবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷ এদিকে আমেরিকা সেটা চাইবে না বলেই নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতে তারা চেষ্টা করবে এই সরকারই টিকিয়ে রাখতে।
জনগণের গত দু’বছর ধরে সরকারের প্রতি অভিযোগ কেবল বাড়ছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, চট্টগ্রামে বিশাল অগ্নিকাণ্ড, বন্যা পরিস্থিতিতে সরকারের অদক্ষতার পরিচয় দেয়া, ক্রমাগত দুর্নীতির অভিযোগ আর সবশেষে সরকারের ছাত্র সংস্থার দ্বারা ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্রীর গ্যাং রে প আর খু নের ঘটনায় সরকারের জনপ্রিয়তা অনেক কমিয়ে দিয়েছে। তবুও বলা যায় না কী হয়। টানটান উত্তেজনা চলছে চারদিকে।
তৌকিরের সম্ভবত চিন্তার কারণ নেই। মনিকার ব্যাপারটার আঁচ-ঝাঁঝও পায়নি তদন্ত কমিটি। বরং সন্দেহ গিয়ে পড়েছে সেই তরুণ কর্মকর্তা কায়সারের ওপর। আরিফ নিজে ওর ব্যাপারে সামান্য তদন্ত করেছেন, ব্যাকগ্রাউন্ড ঘাটাঘাটি করে দেখা গেছে ছেলে আসলেই খুব একটা সুবিধার না। তাছাড়া ইদানীং তার লাইফস্টাইলে বেশ বদল এসেছে। গাড়ি কিনেছে। বোঝাই যাচ্ছে কাচা টাকার দর্শন হয়েছে। একেই সম্ভবত প্রাইম সাসপেক্ট ধরা হচ্ছে। ধরাও পড়ে যাবে দ্রুত৷
তবে তিনি মনিকার ব্যাপারটা এত সহজে ছেড়ে দেবেন না। তিনি জানেন, মেয়েটা একা কিছুই করেনি। ওর পেছনে বড় কারো বা কোনো সংগঠনের হাত আছে। প্রায় এক মাস হয়ে গেছে মেয়েটা গায়েব। তিনি বহু খুঁজেও পাননি ওকে। বিন্দুমাত্র ট্রেস ছিল না মেয়েটার।
সে যে বাড়িতে ছিল সেখানে সে নকল পরিচয় দিয়েছিল। নামধাম, গ্রামের বাড়ির ঠিকানা সব নকল। ভাড়া দিত ক্যাশে, তাই কোনো ব্যাংক একাউন্টের হদিস পাওয়া যায়নি৷ তৌকিরের থেকেও সে ক্যাশ নিত কিংবা শপিং করিয়ে নিত। ওর ইউনিভার্সিটি, ডিপার্টমেন্টের নামটামও ছিল ভুয়া। একটা মানুষের কোনো পরিচয় নেই, শহর থেকে সে বেমালুম হাওয়া হয়ে গেলেও কেউ জানবে না, কারো কিছু যায় আসবে না।
তার এক পর্যায়ে এসে মেয়েটার জন্য খারাপ লাগতে শুরু করেছে। মেয়েটা খুব সম্ভবত বেঁচে নেই। ওকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে পৃথিবী থেকেই। ভাবলেই আরিফের নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করে। শুরু থেকে খুব শক্ত পদক্ষেপে এগুলে এমন হতো না। সময় নিয়ে ওসব প্রেমের নাটক ফাটক করতে গিয়ে সব ভজঘট হয়ে গেছে।
তিনি দু’দিন মনিকাকে স্বপ্নে দেখেছেন। ঘোলাটে কোনো গাঢ় তরলে ডুবে যাচ্ছে ওর ফরসা শরীরটা…
আরিফের ভাবনায় ছেদ ঘটল বাস চলে আসায়। একটানা বৃষ্টি হচ্ছে। যাত্রীছাউনিতে প্রচুর মানুষ বাসের আশায় দাঁড়িয়ে ছিল এতক্ষণ। সবাই হুড়াহুড়ি করে বাসে চড়ল। আরিফও চড়লেন। ঝুলতে ঝুলতে রওনা দিলেন গন্তব্যে। বৃষ্টির আতিশয্যে দেখে নিজের প্রিয় গাড়িটা আর বের করেননি এর মধ্যে। তাছাড়া গোয়েন্দা হতে হলে নিজেকে জনমানুষের থেকে আলাদা করে এলিট হয়ে বসে থাকলে হয় না। মানুষের সাথে মিশতে হয়, মানুষের মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ করতে জানতে হয়।
আবার মনিকার কথা মনে পড়ে তার। কবিতা পড়তে পড়তে সেদিন এক পর্যায়ে সত্যিই বুদ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। যেন তার সত্যিকারের প্রেমিকাকে শোনাচ্ছেন নিজের কিছু অব্যক্ত শব্দমালা। মনিকা তেমন কিছু শোনেনি। সে রোমান্টিক নয়, আবার একইসাথে প্রচন্ড রোমান্টিক! ওর রোমান্সের ধরণ আলাদা। মেয়েটা একই সাথে প্রচন্ড আকর্ষণীয়, আবার বিকর্ষণকারীও বটে!
কোথায় আছো তুমি?
মেঘের মতো উড়ে উড়ে কোথায় চলে গেলে?
সুদূর অতিত ঘেটে বর্তমান তোমায় পাওয়ার সাধ্যি কি আমার আছে?
******
“মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে
তাতা থৈ থৈ, তাতা থৈ থৈ, তাতা থৈ থৈ…
তারি সঙ্গে কী মৃদঙ্গে সদা বাজে
তাতা থৈ থৈ তাতা থৈ থৈ তাতা থৈ থৈ….”
গানের সাথে ঘুরে ঘুরে নেচে চলেছে মনিকা। নাচ পারে না সে। এলোমেলো হাত পা নাড়িয়ে চলেছে কেবল। একটা শাড়ি পরেছে সে৷ কয়েকটা জামা আর একটা শাড়ি নিয়ে এসেছিল ফারহান তার জন্য। নিজে বাসা থেকে বেরিয়েছিল পুরোপুরি খালি হাতে, স্রেফ একটা হ্যান্ডব্যাগ নিয়ে। শাড়িটা এনে ভালোই করেছে। আজ এই বৃষ্টিদিনে নিজেকে মেলে ধরতে ইচ্ছে করছে। আর সেজন্য শাড়ির কোনো বিকল্প নেই।
থমকে দাঁড়িয়ে একবার আয়নায় নিজেকে দেখল সে। কী ভীষণ সুন্দর দেখতে সে! রূপকথার গল্পের পরীদের মতো। ছেলেবেলায় দাদী বলত তাকে পরীদের রাজ্য থেকে রেখে যাওয়া হয়েছে। আজ দাদী নেই। দাদী কোথায়? শুনেছিল মরে গেছে। সে শহরে থেকে কী করে এসব যখন জানাজানি হয়েছিল, তখন থেকে বাড়ির সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে তার। পৃথিবীতে আজ তার কেউ নেই। একটা মানুষও নেই। সত্যিই কি কেউ নেই?
জলভরা চোখে সে মেসেজ পাঠালো ফারহানকে।
“এসো না আজ আমার কাছে। শুধু একটিবার এসো। বড্ড একাকী হয়ে গেছি যে! তোমার জন্য সব রূপ-যৌবন একত্র করে সাজিয়ে বসে আছি আজ। কতদিন কাছে আসো না তুমি। আদর করো না। আজকের এই মাতাল হাওয়ায় পাগল হতে ইচ্ছে করে না তোমার? একটিবার এসো লক্ষীটি। শুধু আজ রাতের জন্য হলেও এসো।”
চোখ মুছল মনিকা। তার কয়েকদিন ধরে ভীষণ কান্না পায়। বোধহয় জীবনের শেষ কান্না। তার আয়ু ফুরিয়ে আসছে। মৃ ত্যুকে ডেকে চলেছে সে নিজেই।
*******
রাতে একটা পার্টি আছে। সেটার জন্যই তৈরি হতে বাড়ি এসেছেন ফারহান রুশদি। সকালের গরম-ঘাম আর দুপুরের পর থেকে বৃষ্টি হওয়ায় কাদা মেখে তার জামাকাপড় নষ্ট হয়েছে। গোসল করে ভদ্রস্থ হয়ে পার্টি এটেন্ড করতে যেতে হবে বলে একটু জলদিই বাড়ি চলে এসেছেন তিনি।
জামাকাপড় ছেড়ে গোসলে ঢুকে পড়লেন দ্রুত৷ আজকের পার্টিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষ আসবে। বেশকিছু রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল হতে পারে। নির্ভর করছে কতটা চতুরতার সাথে তিনি কথা বলতে পারেন তার ওপর।
তিনি এসব ভাবছেন, এদিকে তার স্ত্রী নাঈশা এসেছিলেন খাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করতে। স্বামী গোসলে ঢুকেছে দেখে ফিরে যাচ্ছিলেন তিনি, হঠাৎ চোখে পড়ল তার জামাকাপড়। কাদাটাদা মেখে একাকার। কাজের মেয়েরা সব রান্নাঘরে ব্যস্ত। তিনি নিজেই সেগুলো তুলে নিয়ে চললেন ওয়াশিং মেশিনে দিতে। পাঞ্জাবির পকেট চেক করতে গিয়ে সিগারেটের প্যাকেট পেয়ে মেজাজ গেল গরম হয়ে। কিন্তু সাথে আরেকটা জিনিস হাতে ঠেকতেই কৌতুহলী হয়ে উঠলেন তিনি। বের করলেন জিনিসটা। একটা ছোট্ট বাটন ফোন৷ এটা আবার কবে কিনল? এই ফোনের খবর তার জানা ছিল না। হয়তো ছোটো দেখে কথাটথা বলতে সুবিধা বলে রেখেছে।
ফোন অন করতেই দেখলেন একটা মেসেজ এসেছে। মেসেজটা ওপেন করে ফেললেন তিনি। সাথে সাথে যেন আকাশ থেকে বাজ পড়ল তার মাথায়। যে নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে সেটা সেভ করা নেই। কিন্তু এই একই নাম্বার থেলে প্রচুর মেসেজ এসেছে। সব রোমান্টিক কিংবা নোংরা ধরনের! সেন্ট অপশনে গিয়ে দেখলেন এদিক থেকেও বেশকিছু মেসেজ গেছে। সেগুলো এতটা নোংরা যে পড়তে গিয়ে ভেতর থেকে সবটা বেরিয়ে আসার জোগাড় হলো তার। চোখ লাল টকটকে হয়ে গেল নাঈশার।
আগেও পরকীয়া করতে গিয়ে ধরা পড়েছে ফারহান। সেবার তার পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়েছে। তার মাথায় হাত রেখে বলেছে আর কোনোদিন এসব করবে না।
বাথরুম থেকে বের হতেই শক্ত কিছু উড়ে এসে পড়ল ফারহান রুশদির কপালে। ব্যথায় ককিয়ে উঠলেন তিনি। সামনে নাঈশা রুদ্রমূর্তিতে দাঁড়িয়ে আছে। তার কপাল কেটে গেছে। কাটা জায়গা দিয়ে রক্ত পড়ছে। সেসব উপেক্ষা করে তিনি চাইলেন সেই জিনিসটার দিকে যেটা তার দিকে ছোঁড়া হয়েছে। তার ছোট্ট গোপন মোবাইল। বুঝে গেলেন ঘটনা কী হতে পারে।
চিৎকার করতে করতে ছুটে এসে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন নাঈশা। “বেঈমান! বিশ্বাসঘাতক! পিশাচ! তুমি আমার কসম খেয়েও এই নোংরামি করে যাচ্ছো? লজ্জা নাই তোমার? লজ্জা নাই কোনো?”
পরের ত্রিশটা মিনিট এমন কোনো হীন কথা নেই যা নাঈশা তাকে বললেন না। ফারহান চুপচাপ শুনে গেলেন৷ প্রতিবাদ করলেন না৷ করাও যাবে না। তাদের দলের চেয়ারপারসন নাঈশার বাবা। নাঈশাকে ফুলের টোকা দিলেও তার ক্যারিয়ারের সর্বনাশ হবে। তাই তার সব রাগ, ক্ষোভ গিয়ে পড়ল মনিকার ওপর। সর্বনাশী মেয়ের মেসেজই তার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার আগেই বোঝা উচিত ছিল একটা কালনাগিনীকে বাঁচিয়ে রাখা মানেই যখন তখন ছোবল খাওয়ার সম্ভাবনা।
নাঈশা একটু শান্ত হয়ে এলে তিনি বেরিয়ে পড়লেন। গাড়ি ছুটিয়ে সোজা চললেন মুন্সিগঞ্জের দিকে। প্রচন্ড বৃষ্টি পড়ছে। আজ রাত ক্রাইমের এভিডেন্স লুকানোর জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট রাত।
*******
মাঝরাতে আরিফের মোবাইলে একটা মেসেজ এলো। জেগেই ছিলেন তিনি। কফি খেতে খেতে নতুন একটা কেস স্টাডি করছিলেন। মেসেজটা পেয়ে লাফিয়ে উঠলেন তিনি।
“হ্যালো মিস্টার পোয়েট, আপনার আসল পরিচয় আমি জানি, তাই আপনাকেই স্মরণ করলাম। একটা ঠিকানা দিচ্ছি, কাল সকাল সকাল চলে আসবেন। ফার্ম হাউজটার ড্রইংরুমে একটা লম্বা চওড়া ফুলদানি আছে, যার ওপর আর্টিফিশিয়াল জারবেরা রাখা। ফুলগুলো সরিয়ে দেখবেন ভেতরে পাথরের সারি। পাথরগুলো ঢাললে কিছু কাগজ পাবেন। তাতে সব লেখা আছে। আমি সম্ভবত ততক্ষণে বেঁচে থাকব না। বেডরুমের বইয়ের তাকগুলোর ফাঁকে একটা মোবাইল রাখা আছে। ভিডিও অন করা। সেটা সরিয়ে না ফেললে বোধহয় অনেক কিছুই পাবেন। আপনাকে চুমু খাওয়ার অনেক ইচ্ছে ছিল৷ অপূর্ণ ইচ্ছে নিয়েই চলে যেতে হচ্ছে। আশা করি আমার কেসটা আপনি নেবেন। – মনিকা।
(চলবে)
সুমাইয়া আমান নিতু