#মৌমোহিনী
পর্ব-১৬
“হ্যালো সুইটহার্ট!”
“কোথায় আছো?”
“এই মুহূর্তে অফিসেই আছি।”
“বিরিয়ানি খেয়েছ?”
“খাচ্ছি। দারুণ হয়েছে! তুমি রেঁধেছ?”
“তোমার কী মনে হয়? আমি এসব রাঁধতে পারি?”
“উমম… না! তবে নিশ্চয়ই রাঁধবার আইডিয়াটা তোমারই দেয়া?”
“হ্যাঁ। আর লবণ চেখে দেখেছি আমি।”
“ওহহো এজন্যই তো স্বাদ তিনগুণ বেড়ে গেছে!”
হাসল নাঈশা। “ফ্লার্টিং ছাড়ো। আজ বাসায় চলে এসো তাড়াতাড়ি।”
“কেন কেন? আজ স্পেশাল কিছু আমার জন্য অপেক্ষা করছে নাকি?”
“ধুর! এমনি বললাম।”
“আচ্ছা রাখি। অনেক কাজ পড়ে আছে।”
“কাজ করো, তবে আগে খেয়ে নাও।”
“তুমি পাঠিয়েছ আর আমি খাব না? পেট ভরে খাব। এখন বাই!”
“বাই!”
বুকের ভেতর চাপ ধরে আছে নাঈশার। থাকতে না পেরে শেষ পর্যন্ত ফোন করে ফেলেছে ফারহানকে। এখন চাপ আরও বেড়ে গেছে। ফারহান বিরিয়ানিটা খেলে তো রিয়েকশন শুরু হয়ে যাবার কথা যখন তখন! নাঈশার বুক ধড়ফড় করছে। সে বুঝতে পারছে না তার কী করা উচিত। ব্যাপারটা ক্রমশ যেন জটিল হয়ে আসছে তার জন্য। কোনো একটা খবর পেলে সে কী করবে? কেমন রিয়েকশন দেখাবে? তার হাতের তালু ঘামছে। মোবাইলটা এক হাত থেকে অন্য হাতে বদলে ক্রমাগত পায়চারি করতে থাকল সে ফ্ল্যাটের দরজার সামনে। একটা রিংটোন! কেবল একবার রিং বাজার অপেক্ষা। মনে হচ্ছে সহস্র বছর পেরিয়ে যাচ্ছে।
ক্রিং……ক্রিং…. ক্রিং…..
নাঈশা ছিটকে উঠল। ফোনের স্ক্রিন মেলে ধরল চোখের সামনে। নাহ, কল তো আসেনি! কয়েক সেকেন্ড লাগল তার বুঝতে যে আওয়াজটা কলিংবেলের।
নিঃশ্বাস আটকে এক ঝটকায় দরজা খুলল সে। বিষ্মিত চোখে দেখল দরজার ওপাশের মানুষটাকে।
“কী হলো? এত অবাক হলি কেন?”
মা এসেছে! নাঈশা স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করল। যদিও তার কপাল বিন্দু বিন্দু ঘামছে। পেটের ভেতর উড়ছে অসংখ্য প্রজাপতি।
“কিরে, কোনো সমস্যা?” মা নাঈশার কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলেন।
নাঈশা হাসার চেষ্টা করল, “না না, এমনি। শরীরটা বেশি ভালো না তো।”
“তোর বাবা আমাকে আজ বলল কাল তোর সাথে তার কী কথা হয়েছে। নয়তো কালই আসতাম। আয় মা তোর ঘরে গিয়ে বসি। অনেক কথা আছে।”
নাঈশা খেয়াল করল মায়ের হাতে মোটাসোটা একটা ব্যাগ।
“এটাতে কী?”
“তোর জন্য ইলিশ রান্না করে এনেছি। সেদিন বড় বড় কতগুলো ইলিশ এলো। রাঁধার সময় তোর কথা এত মনে পড়ছিল! ফোন করলাম, কিন্তু তুই ব্যস্ত বলে যেতে পারলি না। তাই আজ যখন ভেবেছি আসবো, তখন রেঁধেই নিয়ে এলাম।”
“ভালো করেছ।”
নাঈশা চেষ্টা করছে সর্বোচ্চ স্বাভাবিক থাকার। মায়ের সামনেও ধরা পড়া যাবে না। সে সাধারণত যা করে তাই করল। উচ্ছসিত হয়ে ব্যাগ খুলে ইলিশের বক্স বের করল। বক্সের মুখ খোলার সাথে সাথে তার মনে হলো পৃথিবী উল্টে আসছে। কোনোরকম সেটা রেখে দিয়ে দৌড়ে গেল বেসিন পর্যন্ত। বমি করতে করতে মনে হলো নাড়িভুঁড়ি উল্টে আসবে। তার মনেই ছিল না কয়েকদিন ধরেই মাছের গন্ধটা একেবারেই সহ্য হচ্ছে না।
শরীরটা একেবারে নেতিয়ে পড়েছে নাঈশার। দুপুরে যা খেয়েছিল সব বেরিয়ে গেছে। এখনো কেমন একটা লাগছে। ধরাধরি করে তাকে শুইয়ে দেয়া হয়েছে তার ঘরে। নূরজাহান বেগম কাজের মেয়েদের বিদায় করে এসির তাপমাত্রা কমিয়ে দিলেন। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, “কিরে, এত শরীর খারাপ সেটা তো বলিসনি?”
“এত খারাপ ছিল না মা৷ মাছটার গন্ধ….”
নূরজাহান বেগম ভালো করে দেখলেন মেয়েকে। তার কেমন একটা সন্দেহ হলো। বললেন, “চল ডাক্তার দেখিয়ে আনি তোকে।”
“লাগবে না, এমন কিছু হয়নি।”
“মনে তো হচ্ছে হয়েছে। রেজওয়ানা তো মনে হয় আজ চেম্বারেই আছে৷ একবার ফোন করে দেখি।”
নাঈশা ভুরু কোঁচকালো। রেজওয়ানা সিদ্দিকী গাইনি ডাক্তার! তার কাছে কেন যাবে? কিছু ভাবতে পারছে না সে৷ তার মন পড়ে আছে ফোনে। এখনো কোনো ফোন আসছে না কেন?
ফোনে কথা শেষে নূরজাহান বেগম বললেন, “আছে রে। ছয়টায় যেতে বলল। আমি ততক্ষণে তোর জন্য একটু স্যুপ করতে বলে আসি।”
মা বেরিয়ে গেলে নাঈশা উঠে বসল। এত অস্থির লাগছে! কিন্তু এখন ফারহানকে ফোনও করা যাবে না৷ সে এমনিতে ফারহানকে তেমন একটা ফোন করে না সারাদিনে। বড়জোর দু’বার। দুপুরে একবার, আর সন্ধ্যায় একবার। আজ দুপুরের কোটা পূরণ হয়ে গেছে। আবার ফোন করলে পরে কল হিস্ট্রি চেক করলে সন্দেহজনক হবে না ব্যাপারটা? উৎকণ্ঠা চেপে রেখে আবারও শুয়ে পড়ল নাঈশা। জোরে জোরে শ্বাস নিল। নিজেকে স্বাভাবিক রাখতেই হবে।
*********
আইসিইউ থেকে কেবিনে দেয়া হয়েছে তৌকির সাহেবকে। মেয়েকে কেবিনে ঢুকিয়ে নিজেও একটু পর ঢুকলেন প্রিয়াঙ্কা। তৌকির তাদের দেখলেন৷ প্রথমটায় তার বিশ্বাস হতে চাইল না। কিন্তু দৃষ্টি স্পষ্ট হয়ে আসতেই মেয়েকে নিজের দুই হাত দূরে দেখে চোখে পানি চলে এলো তার। একটা হাত বাড়িয়ে দিলেন ওর দিকে৷ তিন্নি বাবাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখতে গেলে প্রিয়াঙ্কা এগিয়ে গিয়ে সরিয়ে নিলেন মেয়েকে। “আগে বাবা সুস্থ হোক, তারপর।”
তৌকির প্রিয়াঙ্কার দিকে চাইলেন, “তুমি এসেছ প্রিয়াঙ্কা?”
“হ্যাঁ।” প্রিয়াঙ্কা নিস্পৃহ গলায় সংক্ষিপ্ত উত্তর দিলেন।
তৌকির আহত চোখে চেয়ে বললেন, “আমি জানি ভুল করেছি। অনেক বড় পাপ করেছি। তবে সব পাপেরই তো ক্ষমা হয়, আমারটা হবে না? একটা শেষ সুযোগ কি আমাকে দেয়া যায় না?”
প্রিয়াঙ্কা অতিকষ্টে চোখের পানি আটকে রেখে বললেন, “এসব কথা থাক। শরীর কেমন লাগছে?”
“ভালো।”
“সত্যিই ভালো?”
“হুম।”
“খুব কষ্ট হয়েছিল?” বলতে গিয়ে গলাটা ধরে এলো প্রিয়াঙ্কার।
তৌকির উত্তর দিলেন না। চেয়ে রইলেন প্রিয়াঙ্কার মুখের দিকে। বহু পুরানো একটা কথা মনে পড়ে গেল তার। একবার ক্লাসের একটা ছেলের সাথে ভীষণ মারামারি হয়ে গিয়েছিল তার। ছেলেটা প্রিয়াঙ্কাকে বাজে কথা বলেছিল। তৌকিরের সেটা সহ্য হয়নি। ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ছেলেটার ওপর। মারামারিতে মার খেয়ে তার নিজের ঠোঁট কেটে রক্ত গড়াচ্ছিল, চোখ ফুলে ঢোল হয়ে গিয়েছিল।
প্রিয়াঙ্কা সেদিন ব্যকুল হয়ে কাঁদছিল৷ আর জিজ্ঞেস করছিল, “খুব ব্যথা পেয়েছ?”
তাদের প্রেমের সূত্রপাত সেই ঘটনার পর থেকেই। সেদিন থেকেই হয়তো প্রিয়াঙ্কা তাকে ভালোবাসে। সেও তো ভালোবাসতো। তবে অমন বিপথে চলে গিয়েছিল কেন? বয়সের দোষে? নিজের দোষে? জানে না তৌকির। শুধু মনে হচ্ছে বড্ড ভুল হয়ে গেছে। এই উপলব্ধিটা তার এতদিন হয়নি, এমনকি হার্ট ফেইলিউরের পরেও হয়নি। এখন এই মুহূর্তে হঠাৎ হলো। তার ইচ্ছে হলো প্রিয়াঙ্কাকে আরেকবার স্যরি বলতে, একেবারে মন থেকে। কিন্তু কেন যেন গলা দিয়ে আওয়াজ বের হলো না।
********
লাল টকটকে ঝাল ঝাল মুরগির ঝোলে নানরুটি ডুবিয়ে চিবুতে চিবুতে আরিফ ভাবছেন তিনি কেন মনিকার কেসটা নিয়ে দুনিয়া ভুলে পড়ে আছেন? এতে তার স্বার্থটা কী? অনেক ভেবে তার মনে হয়েছে তিনি আসলে বাঁধাধরা চাকরির বাইরে একটা ইন্টারেস্টিং কেস পেয়ে ভেতরে ভেতরে খুবই উত্তেজিত হয়ে আছেন। ব্যাপারটা তাকে আনন্দ দিচ্ছে। রহস্য যত জটিল হচ্ছে, উত্তেজনা তত বাড়ছে৷ এটার সমাধানের সাথে সাথে সমাজের উঁচু পদের কারো সাথে দ্বন্দে লিপ্ত হওয়াটাও কম আকর্ষনীয় হবে না। যদিও প্রাণসংশয় আছে, তবুও তার এটাই পছন্দ। ছোটোবেলায় গোয়েন্দা কাহিনী পড়ার সময় এমন একটা জীবনের স্বপ্নই তো তিনি দেখেছিলেন৷ আজ সেই জীবনটা যাপন করতে খারাপ লাগবে কেন?
শরীর ঠিক রাখতে বহুদিন ধরেই তিনি মিষ্টি বা তেল ঝালযুক্ত খাবার বাদ দিয়ে শুধুই স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে আসছেন। কিন্তু এই কেসে জড়ানোর পর থেকে ডায়েটের বারোটা বেজে গেছে। বেশ খিদে পেয়েছিল বলে রাস্তার পাশের একটা ছোটো হোটেলের সামনে গাড়ি থামিয়ে যা পেয়েছে খেতে বসে গেছেন। খেতে খারাপ লাগছে তাও না। বেশ মজা লাগছে। তিনি আরো দুটো নান অর্ডার করলেন। খাওয়া শেষে কড়া করে বানানো এক কাপ দুধ চা খেলেন। তারপর আবার গাড়িতে চড়ে বসলেন। তিনি রওনা হয়েছেন চাঁদপুরের দিকে।
হাসপাতাল থেকে বাস এক্সিডেন্টে মা রা যাওয়া অন্যান্য যাত্রীদের ডেটেইলস সংগ্রহ করা কঠিন হয়নি তার জন্য। তিনি সেগুলো খুঁটিয়ে দেখে মনিকার সাথে বয়স, উচ্চতা ইত্যাদির মিল আছে এমন দুটো মেয়েকে চিহ্নিত করেছেন৷ তার মনে হচ্ছে মনিকার সাথে অন্য একটা মেয়ের জামা অদলবদল করে চেহারাটা এমনভাবে বিকৃত করা হয়েছিল যে মেয়ের পরিবার শুধু কাপড় আর জিনিসপত্র দেখে শনাক্ত করেছে। চেহারা বোঝা যায়নি। বেশি ডিটেইলস তিনি পাননি। তবে ঠিকানা পেয়ে বেরিয়ে পড়েছেন৷ একটা মেয়ের বাড়ি মুন্সিগঞ্জেই ছিল। সেখানে গিয়ে নিশ্চিত হয়েছেন ওটা কাঙ্ক্ষিত বাড়ি নয়। এখন চাঁদপুরের মেয়েটার বাড়ি গিয়ে তার পরিবারের লোককে সেই হাইওয়ের পাশে পাওয়া লা শের ছবি দেখাতে হবে। যদি ওটা তাদের মেয়ে হয়, আর তারা যাকে কবর দিয়েছে তার চেহারা নষ্ট করা হয়ে থাকে তাহলে বোঝা যাবে ওখানেই আছে মনিকার লা শ।
********
ডাক্তার যখন নিশ্চিত করলেন যে নাঈশা গর্ভবতী, তখন নাঈশার মনে হলো তার পাশের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। মায়ের মুখ দেখে মনে হলো তিনি ভীষণ খুশি হয়েছেন৷ ডাক্তারের কাছে খুটিনাটি জিজ্ঞেস করছেন৷ নাঈশার কান দিয়ে কিছুই ঢুকছে না৷ কেবল মনে হচ্ছে সে একটা অন্ধকার কুয়োয় পড়ে যাচ্ছে। অন্ধকারের গভীর থেকে গভীরে চলে যাচ্ছে, যেখান থেকে আলোর শেষ চিহ্নটুকু পর্যন্ত আর দেখা যাচ্ছে না…
“অ্যাই, ঠিক আছিস তুই?” মা আলতো করে ধাক্কা দিয়ে তাকে বাস্তবে ফেরালেন৷
নাঈশা ঢোক গিলল, “ভালো লাগছে না। বাড়ি যাব।”
ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে গাড়িতে বসে মা নাঈশাকে অনেক কিছুই বোঝালেন৷ তিনি আজ যা যা মেয়েকে বলতে এসেছিলেন ঠিক তার উল্টো কথাগুলো বললেন এবার৷ যেহেতু বাড়িতে নতুন সদস্যের আগমন ঘটছে, তাই এখন সবচেয়ে ভালো অপশন হলো পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেয়া।
“দেখো মা, তোমার বাবার ছেলে নেই, সবকিছু তুমিই পাবে, আর দলের নেতৃত্ব বাইরের লোকের হাতে যাওয়ার থেকে তোমার স্বামীর হাতে যাওয়াই সবচেয়ে ভালো নয় কি? এদিক থেকে ফারহানের চেয়ে যোগ্য ছেলে আর কোথায় পাব বলো? সব একসময় তোমাদেরই হবে। তাই এখন একটু মানিয়ে নাও না। যে আসছে তার কথা ভেবে অন্তত মানিয়ে নাও। পুরুষ মানুষের এসব ভুলচুক হবেই দু’একটা। এগুলো বয়সের দোষ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তোমার আঁচলেই এসে তার ঠাঁই হবে দেখো।”
কথাগুলো শুনতে শুনতে নাঈশার ভেতরটা কেমন ভেঙে আসছিল। সে জানে না কী হতে যাচ্ছে। কিছুই জানতেও চায় না। এখন কেবল মনে হচ্ছে আরামে একটু ঘুমাতে পারলে বেশ হতো! আলো নিভিয়ে একা ঘরে গভীর ঘুম দরকার এখন তার।
“মা আমি বাড়ি যাব।”
“বাড়িতেই তো যাচ্ছি।”
“তোমার বাড়ি।”
“আমার বাড়ি মানে কী? ওটা তোর বাড়ি নয়?”
“হলে প্রথমেই বুঝতে। বাদ দাও। কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।”
গাড়ি ঘুরিয়ে চৌধুরী ভিলার দিকে চলতে শুরু করল তারা।
বাড়িতে ঢুকে সোফায় গা এলিয়ে দিল নাঈশা। মা পাশে বসে বললেন, “ফারহানকে সুখবরটা জানাই।”
বুকের কাঁটাটা খচ করে উঠল নাঈশার। এতক্ষণেও যখন কোনো খবর আসেনি তখন ফারহান ভালোই আছে। হয়তো বি ষের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল৷ কিংবা হয়তো ওটা বি ষই ছিল না। কারোই তো কিছু হয়নি ওটা খেয়ে। তবুও যতক্ষণ না ওপাশ থেকে সাড়া এলো ততক্ষণে কান খাড়া করে রাখল নাঈশা। মায়ের কথাগুলো শোনা গেল কেবল।
-ওয়ালাইকুমুস সালাম বাবা। কোথায় আছো তুমি?
-আমি ভালো। তুমি কেমন আছো?
– নাঈশা তো আমার সাথে বাড়ি এসেছে। তুমিও চলে এসো।
– না না, আসতেই হবে, সুখবর অপেক্ষা করে আছে তোমার জন্য। বিরাট সুখবর।
– আরে না, সবকিছু কি নির্বাচন নিয়েই হবে নাকি? আর কিছু হতে পারে না? এতদিন বিয়ে করলে? কোনো সুখবর আসতে পারে না?
– হ্যাঁ হ্যাঁ সত্যি! বাবা হতে যাচ্ছো! এখন চলে এসো তাড়াতাড়ি।
ফোন রেখে মা বললেন, “খুব খুশি হয়েছে ছেলেটা। কোথায় যেন গেছে। বলল এখুনি রওনা দেবে।”
নাঈশা শরীরটাকে টেনে তুলে নিজের ঘরের দিকে রওনা দিল। বলল, “আমাকে কোনোরকম ডিসটার্ব করবে না৷ আমি ঘুমাব। ফারহান এলে পাঠিয়ে দিও।”
“সেকি! খাবি না? তোর বাবাও তো ফেরেনি। দেখা করবি না?”
“কিচ্ছু করব না। তুমি জাস্ট ডিসটার্ব করো না আমাকে।”
নূরজাহান বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
**********
ফারহান রুশদির সত্যিই ভীষণ খুশি লাগছে। তার মুখ হাসিহাসি হয়ে আছে। কয়েকজন তাকে জিজ্ঞেস করে ফেলল কী হয়েছে। তিনি তাদের সুখবরটা জানিয়ে দিলেন। “বাবা হতে যাচ্ছি৷ দোয়া করবেন।”
তিনি সত্যিই দ্রুততর সময়ে কাজ সেরে বেরিয়ে পড়লেন। এর আগেও দু’বার তিনি এই খবরটা শুনেছেন, তুমি বাবা হবে!
কিন্তু তখন ব্যাপারটাকে কেবল আপদ ছাড়া কিছু মনে হয়নি৷ দুটোকেই সরিয়ে দিতে হয়েছে। কিন্তু এখন তার সত্যিকারের সন্তান পৃথিবীতে আসতে চলেছে। তার প্রকৃত উত্তরাধিকার। নির্বাচনের আগে আগে খবরটাকে শুভলক্ষণ বলেই মনে হচ্ছে। তর সইছে না আর। নাঈশাকে দেখবে। বাচ্চাটার অস্তিত্ব অনুভব করবে। ভাবতেই খুশিতে দাঁত বেরিয়ে যাচ্ছে তার।
গাড়িতে বসে অফিসের দু’একটা কাজ মনে পড়ায় তার এসিস্ট্যান্টকে ফোন করলেন তিনি।
ছেলেটা ফোন করে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, “স্যার, আমার রকি…”
“কী হয়েছে রকির?”
“রকি….” বলতে বলতে গলা ধরে এলো ছেলেটার৷ নিজের কুকুরটাকে ছেলের মতো ভালোবাসতো সে। “মারা গেছে স্যার৷”
“কিভাবে মারা গেল?”
“জানি না। আপনি তো তাড়াহুড়ায় বিরিয়ানি না খেয়েই বেরিয়ে পড়লেন। আমাকে খেতে বলে গেলেন। আমি খেলাম। রকিকে সেখান থেকে কয়েক টুকরা মাংস খেতে দিলাম৷ সেই মাংস খাওয়ার পর ছটফট করতে করতে মারা গেছে। ডাক্তার বলল বিষক্রিয়ায় মারা গেছে। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না স্যার। বিরিয়ানি তো আমিও খেলাম। আমার কিছু হলো না, ওর কেন হলো?”
“ওর না একটা পেটের অসুখ হয়েছিল কিছুদিন আগে?”
“জি স্যার। সম্ভবত সেটার জন্যই। জানি না স্যার। ভালো লাগছে না কিছু।”
রুশদি ফোন রেখে দিলেন। তার মাথার দু’পাশে চাপ ব্যথা শুরু হয়েছে। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিচ্ছে, কিছু একটা ষড়যন্ত্র হয়েছে। নাকের ডগায় বসে কেউ সুক্ষ্ম চাল চেলে বসে আছে, তিনি বেঁচে ফিরেছেন ভাগ্যক্রমে।
(চলবে)
সুমাইয়া আমান নিতু