#ম্যাই_ক্যামেলিয়া
লেখনীতে:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২
আত্বিয়ার রাগ উধাও হলো। ভয়ে মুখটা চুপসে গিয়েছে। শেষে কি না রাপিশার রাগ অন্য জনের উপর ঝাড়তে গিয়ে কেস খেলো। তুতলিয়ে বলল,
-“আপনি…..পু..লিশ?”
আত্বিয়া উত্তরের আশায় দাঁড়ালো না এক মুহুর্তও। ঝড়ের গতিতে বাইকে চেপে বসলো। শাহরিয়ারকে উদ্দেশ্য করে বলল,“স্টার্ট দে!”
শাহরিয়ার কোনো দিন না তাকিয়ে ঝড়ের গতিতে বাইক টানলো। বাড়ির সামনে এসে বাইক থামতেই দুই ভাই বোন হাঁপালো। শাহরিয়ার আত্বিয়াকে ধমক দিয়ে বলল,
-“তোর জন্য আজ দু’জনেই জেলে যেতাম বেয়াদব!”
আত্বিয়া বিরক্ত হয়ে বলল,
-“আমি কি জানতাম না কি ওই খচ্চরটা পুলিশ অফিসার। জানলে কি রাপিশার রাগ ওই খচ্চরের উপর ঝাড়তাম?”
-“চুপ কর বেয়াদব। এরপর থেকে যদি দেখেছি অপরিচিত মানুষের সাথে এভাবে কথা বলতে তোকে ফেলে রেখে আসবো।”
শাহরিয়ার আত্বিয়াকে ফেলেই বাড়িতে ঢুকে গেলো। আত্বিয়াও মুখ গোমড়া করে বাড়িতে ঢুকলো। বাড়িতে মা বাদে কেউ নেই। আত্বিয়ারা তিন ভাই বোন। বড় ভাই আতিফ, আত্বিয়া আর শাহরিয়ার জমজ। জমজ হওয়ায় ছোট থেকেই তাদের খুব একটা মিলতো না। ঝগড়া, মারামারি চলতো। আতিফের কাছে শাহরিয়ার কতো যে বকা খেয়েছে। আত্বিয়া এক মাত্র বোন হওয়ায় আতিফ খুবই ভালোবাসে তাকে। আত্বিয়াও এর ফায়দা তুলে। নিজের রুমে গিয়ে আত্বিয়া চমকালো। ফুপাতো বোন মাইরা আপু এসেছে। আত্বিয়া মাইরাকে খুব পছন্দ করে। আত্বিয়া মাইরা আপু বলে জড়িয়ে ধরলো।
-“কেমন আছো মাইরা আপু? কত দিন পর দেখা হলো”
মাইরা হেসে বলল,“আমি তো ভালোই আছি। তুই কেমন আছিস?”
-“আমিও ভালো আছি। তুমি জানিয়ে আসতে আমায়”
-“সারপ্রাইজ দিবো বলে জানায়নি। শোন একটু পর রুদিতা ও আসবে। ঝামেলা করিস না প্লিজ। ওই মেয়ের তো স্বভাব ভালো না। জাস্ট অসহ্যকর একটা মেয়ে। আত্বিয়া বলে রাখছি ওর সাথে ঝামেলা করবি না কিন্তু”
-“কি করবো আপু আমার মেজাজ খারাপ হয়। ওই মেয়েটাও অসহ্যকর। আমায় খোঁচা মারে”
মাইরা আত্বিয়াকে বোঝালো। রুদিতা আত্বিয়ার মেঝো ফুপুর ছোট মেয়ে। বাড়িতে সবাই আসার কারণটা আতিফের বিয়ে উপলক্ষে। মেয়ে দেখা হয়েছে। মাঝে বড়রা গিয়ে সব ঠিক করেছে। আজ সবাই আসবে আলোচনা করতে। একমাত্র আত্বিয়ার মেঝো ফুপুই থেকে যাবেন বিয়ে অব্দি। তার বাড়ি সুনামগঞ্জ। দূরে হওয়ায় এক বারে বিয়ে খেয়েই যাবেন। আত্বিয়ার বিষয়টা জানার পর বিরক্ত লাগলো। একে তো রুদিতা গায়ে পরা স্বভাবের। আবার তাকে দেখলে খোঁচা মারে। এতো গুলো দিন এক ছাদের নিচে কীভাবে থাকবে বুঝে উঠতে পারলো না আত্বিয়া। কিছুক্ষণ পরেই মাইরা, শাহরিয়ার, আত্বিয়া, আতিফ সবাই মিলে আড্ডা জমালো ড্রয়িং রুমে। বিয়েতে কে কি পরবে, কি করবে এসবই আলোচনার টপিক।
-“ভাই ভাবি তো সেই দেখতে। পছন্দ হয়েছে তো তোমার?
মাইরা ভেবেছিলো আতিফ লজ্জা পাবে কিন্তু তার ধারণা ভুল প্রমানিত করে দিয়ে আতিফ জবাব দিলো,
-“হ্যাঁ অবশ্যই পছন্দ হয়েছে। পছন্দ না হলে কি মত দিতাম? আর তার থেকেও বড় কথা ইফাকে আমি আগেই দেখেছি, পছন্দ করেছি”
তিনজন এক সাথে বলে উঠলো,“কিহ! তার মানে ভাবি কে তুমি পছন্দ করেছো?”
আতিফ বিরক্ত হয়ে বলল,
“আস্তে। মা বাদে কেউ জানে না এ বিষয়। তোরা তো ভালো করেই জানিস বাবা আমাদের পছন্দে বিয়ে দিবে না। আর ইফাকে প্রথম দেখাতেই ভালো লেগেছে। মাকে বিষয়টা শেয়ার করতেই মা ঘটককে দিয়ে বাবাকে ইফার ছবি দেখালো। আর বাকিটা তো তোরা জানিসই”
আত্বিয়া হাসতে হাসতে বলল,“আমার ভাইয়াও একটা জিনিস!”
সবার আড্ডার মাঝেই আত্বিয়ার মেঝো ফুপি এসে হাজির। সাথে রুদিতাও আছে। আসা থেকেই শাহরিয়ারের গায়ে পরছে। আত্বিয়ার ইচ্ছে করছে থাপ্পড় মেরে শাহরিয়ারকে টেনে নিয়ে আসতে। শাহরিয়ারটাও ফেঁসেছে। না পারছে সরতে না পারছে থাকতে। আত্বিয়াকে দু’বার ইশারাও দেওয়া হয়েছে। আত্বিয়া কিছুক্ষণ পর শাহরিয়ারকে ডেকে নিলো। শাহরিয়ার আত্বিয়ার রুমে এসে বলল,
-“তোকে অনেক ধন্যবাদ। এই অসহ্যকর মহিলা আমার আজ বারোটা বাজাতো। বিরক্ত ধরে গিয়েছে”
আত্বিয়া মুখ বাঁকিয়ে বলল,“তোকে বাঁচিয়েছি নিজের স্বার্থে বুঝেছিস?
-“হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝেছি। তুই আবার স্বার্থ ছাড়া কিছু করিস নাকি। আমি যাই বাই”
–
উদয় চড়া মেজাজে বাড়ি ফিরেছে। তার হোল লাইফে এমন বেয়াদব অসভ্য মেয়ে দেখেনি। কতটা বেয়াদব হলে এই মেয়ে অপরিচিত মানুষকে উল্টো পাল্টা বলে। বাড়ি ফিরেই রুমে ঢুকেছে উদয়। সকালের রাগটা আজ থানাতে দেখিয়েছে, তবুও রাগ কমার বিন্দু মাত্র নাম নেই। অসভ্য মেয়েটাকে পেলে উদয় নির্ঘাত জেলে ভরে দিবে, জেলে ভরার আগে টেনে দু’টো থাপ্পড় ও মারবে। অসভ্য মেয়ে! রাতের খাবার খেতে রুম থেকে বের হলো উদয়।
মা তাকে দেখে বলল,
-“তুই কি রেগে আছিস উদয়? কিছু হয়েছে? বল বাবা আমায়!”
উদয় রাশভারি কন্ঠে জবাব দিলো,“না মা কিছু হয়নি। বাবা আর আফিফ কোথায়?”
-“তোর বাবা এখনো বাড়ি ফিরেনি। আফিফ একটু আগে ফিরেছে, ফ্রেস হয়ে আসছে।”
উদয় কথা বাড়ালো না। নিঃশব্দে খাওয়া শুরু করলো। পাঁচ মিনিট যেতেই আফিফ আসলো। এসেই খাওয়া শুরু করলো। আফিফের প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়েছিলো। খাওয়া শেষ করে উদয় চলে আসলো রুমে। আজ কেনো কিছুতেই মন বসবে না। রাগটা কমাতে পারছে না। রাগ কমাতে হলে ঘুমের প্রয়োজন যা এখন সম্ভব নয়। উদয় গিটারটা নিয়ে বারান্দায় এসে বসলো। আকাশের পূর্ণ চাঁদ উঠেছে, পূর্ণিমার রাত! উদয় গিটারে সুর উঠালো,
ভেজা সন্ধ্যা অঝর বৃষ্টি
দূর আকাশে মেঘের প্রতিধ্বনি
বাদল ঘিরেছে আকাশ বইছে বাতাস
আড়ালে দাড়িয়ে তুমি আর আমি
হয়নি বলা কোনো কথা,শুধু হয়েছে অনুভূতি
হয়নি বলা কোনো কথা,শুধু হয়েছে অনুভূতি!
উদয়ের মনে পরলো কিছু স্মৃতি। স্মৃতি গুলো মাঝে মাঝে বড্ড পোড়ায়। যদিও উদয় সেসব ভুলে গিয়েছে, তবুও মাঝে মাঝে হৃদয়ের কোথাও কড়া নাড়ে। উদয়ের চড়া মেজাজটা কিছুটা ঠান্ডা হয়েছে। উদয় ফোনের ডায়াল লিস্ট থেকে অরিত্রা নামক মেয়েটাকে কল করলো। অপর পাশ থেকে কল রিসিভ হতেই উদয় বলল,
-“আহানা ঘুমিয়েছে? রাতে খেয়েছে?”
-“আহানা খেয়ে একটু আগেই ঘুমিয়েছে।”
-“ঠিক আছে! আমি রাখছি”
-“উদয় শোন!”
উদয় ফোন কান থেকে নামিয়েই রাখছিলো। অরিত্রার কথা শুনে কানে ফোন নিয়ে বলল,
-“তুমি ভালো আছো?”
-“হ্যাঁ ভালো না থাকার কারণ নেই। ফোন রাখছি”
উদয় ফোন রেখে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। আমাদের ভাগ্যে যা থাকে না আমরা তাই নিয়েই আফসোস করি। রাত মানুষের একাকিত্ব বাড়ায়। রাত যত গভীর হয় একাকিত্ব মানুষকে তত জড়িয়ে ধরে। উদয়কেও ধরছে। উদয় বিছানায় এসে সটান হয়ে শুয়ে পরলো। ঘুম প্রয়োজন এখন। বড্ড ঘুমের প্রয়োজন।
–
সকাল সকাল রুদিতা আত্বিয়ার মেজাজটা খারাপ করে দিলো। সকালে আত্বিয়ার রুমে এসেই এটা ওটা ধরে দেখা শুরু করেছে। খোঁটা দেওয়াও শুরু হয়েছে। রুদিতা পড়ালেখায় ভালো। আত্বিয়া আর শাহরিয়ারের থেকে ছ’মাসের ছোট। রুদিতা পাবলিকে পরে এজন্যই মুলত এটা ওটা নিয়ে খোঁচা দেয় আত্বিয়াকে। মাইরার জন্য কিছু বলতেও পারেনি। মাইরা ওয়াশরুমে যেতেই আত্বিয়া বলল,
-“আমার রুম থেকে বের হও। আমার পছন্দ নয় আমার রুমে কেউ ঢুকে আমার জিনিসে হাত দিক”
অপমানে রুদিতা বের হয়ে গেলেও আত্বিয়া বুঝলো রুদিতা এর শোধ অবশ্যই নিবে। আত্বিয়া গায়ে মাখলো না। সে নিজেও জানে এই টাইপ মেয়েদের কীভাবে শায়েস্তা করতে হয়! শাহরিয়ার তো কাল থেকে রুম হতেই বের হচ্ছে না। এক বারে সকালে নাস্তার টেবিলে দেখা গেলো তাকে। শাহরিয়ার এক প্রকার উপেক্ষা করলো রুদিতাকে। আত্বিয়াকে নিয়ে বাড়ির বাইরে এসেই হাঁপ ছাড়লো ছেলেটা।
-“ভাইয়ার বিয়েটা যে কবে শেষ হবে! এই শাঁকচুন্নি বিদায় হলে বাঁচি।”
#চলবে