#সূচনা_পর্ব
#ম্যারি_মি
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
‘ ম্যারি মি নিনীকা? ‘
নিনীকা কান থেকে মোবাইল নামালো। চোখের রোদচশমা মাথায় তুলে পরোখ করলো সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসা যুবককে। নিনীকাকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে যুবকটি আশার প্রদীপ দেখলো যেনো।
‘ আনসার মি, প্লিজ! ‘
নিনীকা ভ্রু কুঁচকে ভাবলো কিছু৷
‘ আপনাকে কি আমি চিনি? ‘
যুবকটি উত্তর না পেয়ে উল্টো প্রশ্ন শুনে ভড়কে গেলো।
‘ হয়তো চিনো না, তবে চিনতে কতক্ষণ? ‘
নিনীকা গম্ভীর হলো,
‘ এর আগে আপনি কখনো আমাকে দেখেছেন? ‘
যুবক অবাক,
‘ না ‘
নিনীকা হাত ভাজ করে দাঁড়ালো।
‘ তবে একবার দেখেই বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছেন? ‘
যুবকটির শুভ্র মুখে রাগের লাল আভা দেখা দিলো।
‘ আজই তোমাকে প্রথম দেখেছি, তবে একবার নয় কয়েকবার। সেই সকাল থেকে এখন পর্যন্ত তোমার পিছনে ছুটছি। ‘
‘ কেন? ‘
যুবকটি উঠে দাঁড়ালো। হাতের রিংটা পুনরায় পকেটে চালান করে বলল,
‘ ন্যাকা সাজছো কেন? কারণটা তো প্রথমেই বলেছি। ‘
নিনীকা অবাক হয়ে বলল,
‘ আপনি আমার সম্পর্কে আগে থেকে জানেন না। অথচ বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছেন। বিষয় টা কেমন না? ‘
‘ না কেমন না, ভালো লেগেছে প্রস্তাব দিয়েছি। আনসার মি নাও। ‘
নিনীকা জেদি স্বরে বলল,
‘ দিবো না। ‘
যুবকটির পেছনে এসে দাঁড়ালো এক দল ছেলে মেয়ে। তাদের কথাবার্তা হাসাহাসি থেকে নিনীকা বুঝতে পারলো তারা ছেলেটিকে কোনো কারণে তাকে প্রপোজ করতে বলেছিলো। নিনীকার মাথা গরম হয়ে গেলো৷ আকস্মিক চেপে ধরলো ছেলেটির কলার।
‘ আপনার এতো বড় সাহস! নিনীকা শেখ কে নিয়ে মজা করেন। ‘
হুট করে কি হলো কেউই বুঝতে পারলো না৷ নিনীকার হাতের মুঠো শক্ত হয়েছে আরও। যুবকটি অপলক তাকিয়ে আছে নিনীকার লাল হয়ে যাওয়া মুখের দিকে। হুট করে গালে ছুঁয়ে দিলো অধর। নিনীকার স্তব্ধ বাকরুদ্ধ হয়ে মূর্তির মতো দাড়িয়ে রইলো। যুবকটি বাঁকা হাসি দিয়ে নিজের কলার থেকে নিনীকার হাত সরিয়ে রীতিমতো ছুঁড়ে ফেললো। দুটো ছেলের কাঁধ জড়িয়ে হেলান দেওয়ার মতো দাড়িয়ে উঁকি দিয়ে দেখলো নিনীকার স্তব্ধ মুখশ্রী। বলল,
‘ এবারও কি উত্তর দিবে না? ‘
নিনীকার শিরা-উপশিরায় দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। চোয়াল ঝুলে পড়ার মতো অবস্থা। রাগে চোখমুখ শক্ত, পাথরের মতো কঠিন। নিনীকা টের পেলো তার মুখ ব্যথা করছে। হুট করে ছেড়ে দিলো চোখের পানি। যুবকটির থেকে নিনীকা নিজেই অবাক হলো। অবাকতার চেয়ে নিজের প্রতি ক্ষোভ জন্মাল বেশি করে। দৌড়ে বের হয়ে গেলো ভার্সিটির গেইট দিয়ে৷ লজ্জায় অপমানে দাড়িয়ে থাকার অবস্থায় নেই সে।
‘ আরেব্বাস গুরু চলে গেলো তো৷ ‘
সমুদ্রের কাঁধে চাপড় মারলো যুবকটি। চোখের পর্দায় স্পষ্ট ভাসলো নিনীকার চোখ থেকে টুপ করে জল গড়িয়ে পড়ার দৃশ্য। কেউ কান্না করলে এতো সুন্দর দেখতে লাগে বুঝি?
যুবকটি মাথার চুলে হাত বুলিয়ে হাসলো। মেয়েটি ফাস্ট ইয়ারে পড়ে। নতুন এসেছে। চালচলনে মর্ডান ভাব৷ দেখেই বুঝা যায় কোনো রাজার রাজকন্যা সে। সকাল থেকেই সবার নজরে ছিল নিনীকা। ভার্সিটির প্লেবয় নামে পরিচিত যুবকটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো পারলে মেয়েটিকে পটিয়ে দেখাতে। যুবকটি স্বভাবতই নিজের বুদ্ধি চতুরতা কাজে লাগাতে চেয়েছিলো। অথচ প্রথমবারের মতো কেউ তাকে কোনো উত্তর দিলো না। বরং কলার চেপে ধরলো। শেষে ঝরিয়ে গেলো এক ফোঁটা অশ্রু। সেটার দায় কিভাবে মিটাবে যুবকটি?
‘ কি গুরু কি ভাবছো? ‘
সমুদ্রের কথায় যুবকটি হাত এপাশ ওপাশ করে ফুটিয়ে বলল,
‘ সুন্দরী মেয়েদের কাঁদলে-ও সুন্দর দেখায় তাই না? ‘
সমুদ্র বোকার মতো বলল,
‘ তাই নাকি? ‘
যুবকটি মাথায় ঠা*স করে দিলো।
‘ চুপ কর হাঁদারাম। ‘
সমুদ্র পকেট থেকে সাইলেন্ট করা দুটো মোবাইল বের করলো। যুবকটির দিকে বাড়িয়ে দিলো।
‘ সকাল থেকে তোমার গার্লফ্রেন্ডরা ফোন করে যাচ্ছে। আমি একটাও রিসিভ করিনি গুরু। ‘
‘ ভালো করেছিস। এসব বাল ছাল প্যারা আর ভালো লাগছে না। নতুন কাউকে দেখ। ‘
সমুদ্র চোখ টিপে বলল,
‘ নিনীকা নাকি? ‘
যুবকটি ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো,
‘ মনে হয়না পটবে। শুন মেয়েটিকে নিয়ে আর ঝামেলা করিস না৷ আমার সাথে রিলেশনে যেতে আমি কাউকে জোর করি না। নেহাৎ তোরা সকালে বাজি ধরিয়েছিলি বলে পটাতে চেষ্টা করলাম। এটা এখানেই শেষ ওকে? ‘
সমুদ্র মাথা নাড়ালো,
‘ অবশ্যই গুরু। বাট গুরু মেয়েটি কিন্তু সেই দেখতে, একেবারে মোমের পুতুলদের মতো। তুমি না চাইলে অন্য কেউ অবশ্যই চাইবে৷ ‘
‘ চাইতেই পারে, মেয়েটি তো আমার জিনিস না যে চাইবে না৷ ‘
‘ সেটাই তো বলছি গুরু তোমার করে নাও। ‘
‘ চুপ কর তো। আমি পটানোর প্যারা নিতে পারবো না। এ পর্যন্ত কাউকে পটাতে হয়নি সবাই নিজ থেকে রিলেশনে এসেছে। ‘
সমুদ্র আফসোস ঝরিয়ে বলল,
‘ তবে কি আর করার, তোর মতো চেহারা থাকলে আমিও পটানোর চেষ্টা করতে পারতাম৷ ‘
‘ তোর চেহারা দেখে এমনই মেয়ে রা পটে যায়, আর কতো পটাবি? ‘
‘ বলছিস গুরু? ‘
যুবকটি হেঁসে ফেললো,
‘ সত্যি কথা বলছি মাইরি। ‘
‘ তবে ঠিক আছে। ‘
ওরা কথা বলতে বলতে পার্কিং সাইডে এসেছে। কালো রঙের গাড়িটির কাচ নামানো। যুবকটি দেখলো নিনীকা টিস্যু দিয়ে মেক-আপ ঠিক করছে। সমুদ্র সিটি বাজিয়ে বলল,
‘ দেখতে পাচ্ছো গুরু ‘
‘ হু দেখতে পাচ্ছি ‘
‘ অনেক কেঁদেছে হয়তো, বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। আর যাই হোক তুমি কখনো কাউকে জোর করো না। ‘
যুবকটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। এগিয়ে গেলো কালো গাড়িটির দিকে। কাঁচে ঠুকা দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। নিনীকা জ্বলন্ত চোখে তাকালো। বাঘিনীর মতো চাহনি দেখে যৃবকটি হাসলো।
‘ আপনাকে স্যরি বলতে এসেছি। প্রথমেই স্যরি তুমি করে বলার জন্য, দ্বিতীয়বার স্যরি প্রপোজ করার জন্য। তৃতীয় বার স্যরি জোর করে আনসার জানতে চাওয়ার জন্য৷ এবং চতুর্থ বার স্যরি চুমু দেওয়ার জন্য৷ পঞ্চম বার স্যরি চোখের…’
‘ ব্যস, বন্ধ করুন আপনাে ড্রামা। আপনারা যে নষ্ট ছেলে সেটা দেখে বুঝা না গেলেও প্রথম দিন আচরণ করে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। দূর হোন চোখের সামনে থেকে৷ নষ্ট চরিত্রের মানুষদের আমি দু’চোখে দেখতে পারি না। ‘
সমুদ্র কিছু বলতে চাইলো, যুবকটি ইশারায় মানা করলো। হেসে বলল,
‘ থ্যাংক ইউ মিস নিনীকা। আপনার কথা মাথা পেতে নিচ্ছি। ‘
নিনীকা টিস্যু ছুঁড়ে মা*রলো।
‘ চোখের সামনে থেকে দূর হোন। নির্লজ্জ বেহায়া পুরুষ মানুষ। ‘
সমুদ্র টেনে নিয়ে যেতে লাগলো যুবকটিকে। নিনীকা জ্বলন্ত চোখে তখনো তাকিয়ে আছে। যুবকটি যদি বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখায় তবে এখানে আজ একটা কিছু হয়ে যাবে৷ চাহনি দ্বারা সেটাই বুঝাচ্ছে সে। যৃবকটিকে অনেকটা দূরেই সরিয়ে এনেছে সমুদ্র৷ যৃবকটি উচ্চ স্বরে বলল,
‘ আমি নির্লজ্জ হতে পারি, তবে বেহায়া নই। আপনি বলে পাড় পেয়ে গেলেন। কারণ শুরুটা আমিই করেছিলাম৷ ‘
নিনীকা নিজেও উঁচু আওয়াজে বলল,
‘ আপনাদের মতো নির্লজ্জ ছোটলোক পাবলিকদের আমার দেখা আছে। সুন্দরী মেয়ে দেখলে আপনাদের সুরসুরি জাগে, তা আমি বুঝি না ভেবেছেন? ‘
যৃবকটির শুভ্র মুখ রাগে অপমানে থমথমে। তখনই দূর থেকে কেউ একজন উচু গলায় ডাকলো,
‘ তোর গার্লফ্রেন্ডরা ফোন দিয়ে পাগল করে দিতাছে ধ্রুব! ‘
দুজন মানব মানবির ঝগড়াতে সেটা যেনো উড়ে এসে জোড়ে বসলো। ধ্রুবর অপমানে থমথমে মুখের দিকে তাকিয়ে নিনীকা হেয় করার ভঙ্গিতে হাসি দিলো। গাড়ি স্টার্ট করে ছুটলো গেইট দিয়ে।
(চলবে)