#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#১০
“সায়রাকে জেরিন অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছে। সায়রা চগে টিউশনিতে ছুটি নিয়েছে। যদিও ওই তিনদিনের টাকা তার কেটে নেওয়া হবে। বাড়িতে এখনো বলেনি। আর বলবেই না কাকে। কাল ট্যুরে যাওয়া হবে সকাল ছয়টায় অফিসের সামনে থেকে বাস ছাড়বে। তাই তূর্য আর হাফ টাইমেই অফিস ছুটি দিয়েছে। যাতে সবাই একটএ সময় পায় গুছিয়ে নিতে।
জেরিন আর সায়রা আজ এক সাথে হেটে কিছু কেনাকাটা করলো এরপর বাড়ি চলে গেলো দুজনেই ”
“পরেরদিন সকালে সায়রা ঘুম থেকে উঠলো পাঁচটায়। তখনো বাড়ির সকলে ঘুমে। সায়রা হাত-মুখ ধুয়ে একটা নতুন জামা বের করলো কালো রঙের। সেটা পড়ে নিয়ে দু’দিনের জন্য আরো কিছু জামাকাপড় ও ব্যাগে নিয়ে নিলো। জীবনের প্রথমবার সে এতদূর কোথাও ঘুরতে যাচ্ছে । মনে মনে খুশি লাগছে প্রচুর। সাড়ে পাঁচটা নাগাদ সায়রা বাসা থেকে বের হওয়ার আগে কোকিলা বেগমের ঘরের দরজার সামনে এসে ডাকলেন৷ কোকিলা বেগম একটু সময় নিয়ে দরজা খুললো। চোখে মুখে এখনো ঘুম। দরজা খুলেই সায়রাকে দেখে মুখ কুঁচকে ফেললো”
_কি হইছে কি ? সকাল সকাল ।
_কিছু হয়নি। আমি তিনদিনের জন্য অফিস ট্যুর এ যাচ্ছি । না বলে গেলে আবার বলাবলি করবেন ভেগে গেছি কারো সাথে। তাই বলে গেলাম।
“কোকিলা বেগমকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ব্যাগটা হাতে তুলে নিয়ে সায়রা গেট দিয়ে বেরিয়ে গেলো ”
“এতো সকালে অফিসের সামনে আসতে সায়রার কষ্ট ই হলো। রিশকা ই পাচ্ছিলো না৷ অফিসের সামনে আসতেই দেখলো অনেকগুলো বাস দাড়িয়ে আছে। যেহেতু অনেক মানুষ যাচ্ছে। জেরিন আগেই এসেছিলো সায়রাকে দেখে দৌড়ে এলো ”
_এসেছিস তুই। চল চল বাসে গিয়ে বসি। না হলে পড়ে সিট পাবো না।
“সায়রাকে টেনে নিয়ে গেলো জেরিন। তিন নাম্বার বাসে গিয়ে উঠলো। এরপর সামনের সিটে গিয়ে বসলো ওরা। সায়রা দেখলো জেরিন অনেক সেজেগুজে এসেছে। সায়রা ওর দিকে চেয়ে বললো ”
_তুই এতো সেজেগুজে এসেছিস কেনো রে ?
“জেরিন ওর আর সায়রার ব্যাগগুলো তুলে রাখছিলো। সায়রার কথা শুনে ব্যাগ থেকে একটা লিপস্টিক বের করে সায়রার পাশে বসে পড়লো ”
_দেখি তাকা আমার দিকে৷ একটু সাজুগুজু করবি না তুই। দে একটু লিপস্টিক দিয়ে দেই।
_এই না আমি এসব দিবো না৷
“জেরিন সায়রাকো জোড় করে ধরে লিপস্টিক পড়াতে লাগলো। এমন সময় ই বাসে উঠলো নাফিস আর তূর্য। ওরা সামর্থ্য বেগমকে ধরে উঠাচ্ছে। ওদের দেখেই জেরিন আর সায়রা থেমে গেল। ঠোঁটে এখনো ভালো করে লিপস্টিক দেওয়া হয়নি। তূর্য একবার সায়রার দিকে চেয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো। সামর্থ্য বেগমকে ধরে উঠানো হলো। এক পাশের সামনের সিটে সায়রা জেরিন বসেছে আরেক পাশে সামর্থ্য বেগমকে বসানো হলো। সায়রা ততক্ষণে লিপস্টিক মুছে ফেলেছে।
জানালার পাশের সিটে জেরিন বসেছে তার পাশে সায়রা। আরেক পাশে সামর্থ্য বেগম বসে। উনআশি বচর বয়সি একজন মহিলা। ওনাকে বসিয়ে দিয়ে তূর্য আর নাফিস নেমে গেছে বাস থেকে। জেরিন ছবি তুলছে৷ সামর্থ্য বেগমের সাথে হাসিনা রয়েছে । সায়রা সামর্থ্য বেগমকে ডাকলেন ভারি উৎসাহ নিয়ে ”
_দাদি।
“সামর্থ্য বেগম ঘুরে তাকালেন। সায়রাকে দেখে চিনতে পারলেন তিনি। মুখে হাসি টেনে বললেন ”
_আরে মেয়ে তুই। কেমন আছিস মেয়ে ?
“সামর্থ্য বেগমের কথা একটু তুতলে যায়। সময় নিয়ে কথা বলে। সায়রা হেসে উওর দিলো ”
_আমার নাম সায়রা, দাদি। আমি ভালো আছি। আপনার শরীর ভালো ?
_সায়রা, শরীর ভালো বলেই তো ঘুরতে যাচ্ছি রে। নাতি আমাকে অনেক জায়গায় ঘুরিয়েছে বুঝলি। এখন তো পায়ের ব্যাথা বেড়েছে। তাও সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে।
“সায়রা বুঝলো তূর্যর কথা বলছে৷ লোকটার কিছু কিছু দিক এতো নিখুঁত লাগে সায়রার কাছে। আজকাল মানুষ বাবা মাকে সময় দেয় না। আর সে তার দাদি ছাড়া কিছু বুঝে না৷
সায়রা আর সামর্থ্য বেগম গল্প জুড়ে দিয়েছে। তিনি তার ঘুরতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা বলছে সায়রার কাছে৷ সায়রার মনে হচ্ছে কতো বছরের চেনা সে সামর্থ্য বেগমের। তখনই তূর্য ওরা এলো। এবার সাথে রুহানি ও আছে। একেবারে ম্যামসাহেব সেজে এসেছে। তূর্য
এসে আবার ও সায়রার দিকে তাকালো। সায়রা গল্প বন্ধ করে দিয়ে টিক হয়ে বসলো। বাসে আগে থেকেই আরো মানুষ ছিলো। কারো জন্য আলাদা কোনো বাস নেওয়া হয়নি। রুহানি সায়রাকে এই বাসে দেখে মহা বিরক্ত। সে চোখ কটমট করে চেয়ে তূর্যকে উদ্দেশ্য করে বললো ”
_আয় এক সাথে বসবো।
“তূর্য সামর্থ্য বেগমের পাশের সিটে গিয়ে বসে বললো”
_আমি দাদির সাথে বসবো। তুই নাফিসের সাথে বোস।
“রুহানি পিছনের একটা সিটে গিয়ে ধপ করে বসে গেলো। নাফিস হাসছে মিটমিট করে। নিজেও গিয়ে রুহানির পাশে বসে পড়লো। এবার জমবে মজা। সাড়া পথ খেপাবে রুহানিকে। সবাই বসলে বাস ছাড়া হলো সাড়ে ছয়টায় ”
“জেরিন একটার পর একটা ছবি তুলেই যাচ্ছে। জানালা দিয়ে হাত বের করে ভিডিও বানাচ্ছে। সায়রা চুপচাপ বসে আছে। বাস চলছে। ভোর বেলা রাস্তাঘাট ফাঁকা ই অনেকটা। সায়রা আর পাশে কি হচ্ছে সেদিকে ঘুরে ও দেখেনি। তূর্য বসে যে তাই ”
“প্রায় তিন চার ঘন্টা জার্নি করার পর বাস থামলো এক জায়গায়। তখন সকাল দশটা বাজে। নাস্তা করার জন্য। খাওয়া যার যার পকেট থেকে টাকা দিয়ে খেতে হবে। সেটা অফিস থেকে বহন করা হবে না। সায়রা সিটের মধ্যে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো। জেরিন ওকে ডেকে তুলোো। চোখ খুলে তাকাতেই দেখলো ওর সামনে দিয়ে তূর্য নেমে যাচ্ছে বাস থেকে সাথে রুহানি। পাশ থেকে আবার নাফিস যেতে যেতে বললো”
_সায়রা খাতুন জলদি। পরে কিন্তু খাবার পাবা না।
“সায়রা আর জেরিন ও নামলো। একটা বড় হোটেল। সবাই সেখানেই যাচ্ছে।জেরিন আর সায়রা ও গেলো ভেতরে। সবাই সবার মন মতো খাবার অডার করে খেতে বসেছে । জেরিন সায়রাকে জিজ্ঞেস করলো”
_কি খাবি তুই ?
_কি আর রুটি আর চা হলেই হবে।
_শুধু রুটি আর চা ই ?
_হু।
_আচ্ছা। তুই বোস গিয়ে আমি অডার দিয়ে আসছি।
“জেরিন গেলো খাবার অডার দিতে। সায়রা একেবারে ভেতরের দিকের একটা টেবিলে গিয়ে বসলো। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠায় খুব ক্লান্ত লাগছে। টেবিলের উপর হাত ভাজ করে দিয়ে সায়রা মাথা দিয়ে শুয়ে রইলো। একটু পরে জেরিন এলো। সায়রা ওর শব্দ পেয়ে মাথা উঠিয়ে ঠিক ভাবে বসলো ”
_তোর কি খারাপ লাগছে সায়রা ?
_নাহ,ঘুম পাচ্ছে অনেক।
_খাবার খেয়ে বাসে গিয়ে ঘুমাস।
“একটু পরেই খাবার দিয়ে গেলো। দুজনে গল্প করতে করতে খাচ্ছে। জেরিনের চোখ হুট করেই সামনের দিকে গেলো। তূর্য হেঁটে আসছে। এসেই ওদের অপর পাশের সারির একটা টেবিলে বসলো। যেখানে আগে থেকেই রুহানি আর নাফিস ছিলো। জেরিন চোখ দিয়ে সায়রাকে ইশারা করে ওই টেবিলের দিকে দেখতে বললো ”
_দেখ দেখ, রুহানি ম্যাডাম তূর্য স্যার এর পেছন ই ছাড়ে না যেনো। চিপকে থাকে।
_থাকুক।
_তবে যা ই বলিস। তূর্য স্যার কিন্তু সেই কিউট।
“সায়রা হেঁসে বললো”.
_ঘুড়ার ডিম কিউট।
_দেখ আজ ফরমাল লুকে নেই। দেখ তুই। কি সুন্দর সাদা একটা শার্ট পড়েছে। স্যার এর ড্রেসিং সেন্স দেখে আমি ই কখন যেনো সেন্স হারাবো।
” সায়রা তখন চায়ে চুমুক দিচ্ছিলো জেরিনের কথা শুনে কাশ উঠে গেলো ওর। চায়ের কাপ নামিয়ে বললো”
_পাগল হয়ে গেছিস তুই। মেয়ে হয়ে কোনো ছেলেদের দিকে এভাবে নজর দেওয়া পাপ বুঝলি।
“জেরিন হেসে বললো ”
_তুই ও একটু দে না নজর। দেখ স্যারকে।
_পারবো না,।খাওয়া শেষ, চল এখন।
“সায়রা আর জেরিন উঠে গেলো। অনেকেই আরো আগে বাসে চলে গেছে। সায়রা যেতে যেতে একবার লুকিয়ে তূর্যর দিকে তাকালো।
বাসে উঠতেই দখলো সামর্থ্য বেগম স্যুপ খাচ্ছে বসে বসে। সায়রাকে দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন ”
_কি খেলি রে তোরা ?
_চা আর রুটি। আপনি শুধু স্যুপ খাচ্ছেন যে। পেট ভরবে এতে ?
_বাইরে তো এর থেকে বেশি কিছু পাওয়া যায় না। আমি আবার সব খাবার খেতে পারি না। দাতে ব্যাথা হয় খুব
_আপনি একেবারে নরম খাবার খাবেন। হজম ও হবে তাড়াতাড়ি। দাতে ও সমস্যা হবে না ।
“সামর্থ্য বেগম হাসলেন। আরো টুকটাক কথা হলো সায়রার সাথে। সায়রা বেশ আগ্রহী সামর্থ্য বেগমের উপরব।বিষয়টা বেশ পছন্দ হলো তার।
একটু পরেই তূর্য ওরা ফিরে এলো। আগের বাসগুলো ও ছেড়ে দিয়েছে। সায়রা এবার তূর্যর দিকে তাকালো।
আজ আর তূর্য অফিসের পোশাকে নেই। অফ হোয়াইট রঙের শার্ট সাথে কালো প্যান্ট আর হোয়াইট স্নিকার্স। বরাবরের মতোই হাতে ঘরি।
তূর্য গিয়ে সামর্থ্য বেগমের পাশে বসে পড়লো। বাস আবার ছাড়লো। এবার একটু গান ও ছাড়া হলো। সায়রা কতো কি ভাবলো বসে বসে এরপর আবার ঘুমিয়ে গেলো বসে থেকেই। জেগে থাকলে ও হয়তো সায়রা দেখতে পেতো না কারো এক জোড়া চোখ তাকে দেকে অনেকটা সময় নিয়ে। তার চেহারার একেকটা ভাজ সে। তার চোখের পাপড়ি। তার ঠোঁট সব দেখেছে সব”
“সারাদিন বাস চললো। দুপুরের খাবারটা ও পথেই খেতে হয়েছে। এতদূরের পথ। সারা রাস্তা সায়রা ঘুমিয়ে কাটিয়েছে। সন্ধা ছয়টায় বাস এসে থামলো টেকনাফে। সায়রা ভাবলো এই বুঝি পথ শেষ। খুশি হয়ে বয়াগ নামিয়ে নিয়ে বাস থেকে নামতে নামতে বললো”
_অবশেষে এলাম রে বাবা। কোমরটা একেবারে শেষ।
“পেছন থেকে নাফিস চেচিয়ে বলে উঠলো ”
_এখনো শেষ হয়নি সায়রা খাতুন। মাএ তো শুরু। এটা টেকনাফ সেন্টমার্টিন নয়।
“সায়রার এ কথা শুনে এবার কান্না পাচ্ছে। কেনো যে আসতে গেলো এখানে কে জানে। বাস থেকে নেমে সবাই হেঁটে সামনে যাচ্ছে। অন্ধকার পথ। সবাই সবার ফোনের আলোতে দেখে দেখে যাচ্ছে।সামর্থ্য বেগমকে নাফিস একটা রিকশায় তুলে দিয়েছে। সায়রা আর জেরিন একটু আগে পিছে হাঁটছে। সায়রার পেছনে তূর্য আর নাফিস রুহানি ও রিকশায় করে চলে গেছে অথচ পাঁচ মিনিটের রাস্তা। সায়রা হাঁটছে হুট করেই কিছুর সাথে লেগে সায়রা বসে পড়লো মাটিতে। কিছু একটা পায়ের তলায় ঢুকে গেছে। সায়রার পিছু তূর্য ছিলো। নাফিস আগে আগে হেঁটে চলে গেছে। সায়রাকে বসে পড়তে। দেখে এগিয়ে এলো। লাইট সায়রার দিকে তাক করে বললো”
_কি হলো? ব্যথা পেয়েছো ?
“সায়রা উওর না দিয়ে উঠে দাড়ালো। কিন্তু কষ্ট হচ্ছে পায়ের মধ্যে কিছু একটা ঢুকেছে। সায়রা তূর্যকে বললো”
_ব্যথা পাইনি। একটু পায়ের দিকে আলো,,,,,,।
“তূর্য সায়রার পায়ের দিকে লাইট ধরলো। পায়ের মধ্যে একটা ছোট কাঁচের টুকরো বিধে আছে।রক্ত ও বের হচ্ছে। সায়রার ভারি কান্না পাচ্ছে। এটা এখন নের করবে কিরে। তূর্য বললো ”
_আবার বলছো ব্যথা পাচ্ছো না। হায় রে মেয়ে মানুষ,,,।
“সায়রা এক পায়ে ঠিক মতো দাড়াতে ও পারছে না। তূর্য সায়রার দিকে নিজের হাতের ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললো”
_এটা পায়ের দিকে ধরে রাখো। আমি কাঁচের টুকরোটা বের করছি৷।
_এই না না লাগবে না স্যার,,,,।
“তূর্য শুনলো না কথা। সায়রার পা চেপে ধরলো। সায়রার পুরো শরীরে কাঁপুনি দিয়ে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে এমন একটা ব্যথা অনুভব হলো সায়রা মৃদু চিৎকার করে উঠলো। কাঁচের টুকরো টা তূর্য বের করে ফেলেছে। এরপর পা ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। নিজের ফোন টা নিয়ে সায়রাকে বললো”
_এবার হাটো। ওটা থাকলে সমস্যা হতো। আরো তিনদিন শুধু হাটতে হবে।
“কথাটা বলে ও তূর্য গেলো না। দাড়িয়ে রইলো।সায়রা জুতা পড়ে ধিরে ধিরে হাঁটছে। পা খুড়িয়ে খুড়িয়ে। তূর্য পেছনে পেছনে হাঁটছে।
তূর্যর ফোনের আলোতে বাকিটা পথ সায়রা এলো। এসে একটা গেস্ট হাউজের সামনে সবাইকে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো। পেছন ফিরে তাকালো একবার। তূর্য এখন আর নেই পেছনে। সায়রাকে দেকে জেরিন এগিয়ে এলো ”
_কিরে। কোথায় চলে গিয়েছিলি। তোর ফোন ব্যাগ সব আমার কাছে। হারিয়ে গেলে।
_আরেহ,পায়ে কাচ ঢুকে গিয়েছিলো। আমরা কি এখানেই থাকবো ?
_হুম। শুধু আজকের রাতের জন্য।
_তাহলে এখানে দাড়িয়ে আছে কেনো সবাই ?
_তূর্য স্যার ছিলো না তো। তোর মতো সে ও হাওয়া হয়ে গিয়েছিলো। আর উনার কাছেই বুকিং এর ম্যাসেজ যেটা দেখাতে হবে।
“তূর্য এসে সব ম্যানেজ করে নিলো। সবাই ঢুকলো গেস্ট হাউজে। যেহেতু অনেক মানুষ তাই যে যেখানে পারছে যে রুমে পারছে শুতে যাচ্ছে। সবার বিশ্রাম প্রয়োজন আপাতত। সায়রা জেরিন ছোট একটা রুম পেলো। তাতে আরো দুজন ও ঢুকলো। কোনো রকমে রাত পার করতে পারলেই হলো। সায়রা ঘুম পাগল। এক জায়গা হলে ই হয়। তবে আজ এতো কিছুর পর সায়রার ঘুম হলো না আর”
“রাতের তিনটা বাজে। তূর্য বারান্দায় বসে আছে৷পাশের ঘরল সামর্থ্য বেগম আর তাকে দেখভাল করা হাসিনা। রুহানি আগেই আলাদা এক রুম নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। তূর্য সেসবে বিরক্ত। ওি মেয়ে কোথাও মানিয়ে চলতে পারে না। এমনিই রুম কম মানুষ বেশি।
তূর্য আর নাফিস ছোট একটা রুম নিয়েছে। একজনের বিছানা এটাতে। তূর্য ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গেছে।নাফিস ফ্রেশ হচ্ছে। একটু পরেই নাফিস এলো ”
_ঘুমাবেন না স্যার। আসুন।
_তুমি গিয়ে ঘুমাও নাফিস। আমার ঘুম আসছে না। গিয়ে শুয়ে পরো।
“নাফিস বুঝলো তূর্য কেনো এমন বলছে। তূর্য বেড শেয়ার করতে পারে না নাফিস জানে। ছোট্ট রুম তার পছন্দ না৷ এখানে তূর্য ঘুমাতে পারবে না। একটা রাতের বিষয়। কাল সেন্টমার্টিন পৌঁছে গেলেই আর সমস্যা হবে না ”
_কারোই ঘুমাতে হবে না স্যার। নিচে এখনো কিছু দোকান খোলা আছে। চলুন চা কফি কিছু পেলে খেয়ে আসি।
_সিরিয়াসলি নাফিস। রাত তিনটে বাজে।
_ঘুম হবে না স্যার। চলুন যাই।
“তূর্য আর নাফিস বের হলো রাত তিনটায়। রাস্তা ফাঁকা
কেউ নেই রাস্তায়। দু একটা দোকান খোলা তাও চায়ের দোকান হোটেল এসব। সেখানে কাল সকালের জন্য আটা মাখছে দোকানিরা। দু একজন বসে আছে। তূর্য আর নাফিস গিয়ে একটা দোকানে বসলো। চা আছে শুধু। তূর্য একটা রং চা নিলো আর নাফিস দুধ চা। দুজনে বসে বসে খাচ্ছে আর টুকটাক কথা বলছে। নাফিস হুট করেই বললো ”
_সিগারেট নেই একটা ?
“তূর্য চায়ে চুমুক দিয়ে সেটা আবার সাইডে রেখে দিয়ে বললো”
_দুটো নিও।
“নাফিস হেসে দুটো সিগারেট নিলো একটা তূর্যকে দিয়ে নিজেও একটা ধরালো ”
_স্যার আপনি এখনো ছাড়েননি এসব। দাদি জানলে আপনার খবর করে ছাড়বে।
_দাদিকে কে বলবে । তুমি?
_নাহ, কিন্তু ছাড়েননি কেন ?
_সব সময় খাই না মাঝে মধ্যে একটু । কিন্তু তুমি কেন খাও নাফিস ?
_ভাল্লাগে স্যার। এই ধরেন মনের সুখে। খুশির ঠেলায়।
“তূর্য হেসে ফেললো। শেষ একবার সিগারেটে টান দিয়ে সেটা মাটিতে ফেলে দিলো। এরপর নাফিসকে বললো”
_সুখে থাকলে মানুষকে এভাবেই ভূতে কিলায়।
“তূর্য উঠে দাড়ালো। নাফিস ও সিগারেট ফেলে দিলো। তূর্য বিল দিয়ে দুটো সেন্টারফ্রেশ নিলো। নাফিস হেসে বললো ”
_আই এ্যগ্রি স্যার। আমারে মাঝে মাঝে ভূতে কিলায় ।
“দুজনে কথা বলতে বলতে আবার গেস্ট হাউজের দিকে চললো। তখন সাড়ে তিনটা বাজে রাতের”
চলবে,,,,
#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#১১
“সকাল সকাল সায়রার ঘুম ভাঙলো। ওর পাশেই জেরিন শুয়ে আছে। তাও সায়রার উপরে হাত পা উঠিয়ে দিয়ে। সায়রা ওকে সরিয়ে দিলো। সবাই এখনো ঘুমে। সায়রা উঠে রুম থেকে বের হলো। পায়ের ব্যথা বেরেছে আরো কালকের থেকে। সায়রা ওয়াসরুম খুজে ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো। দেওয়ালে ঘড়ি টাঙানো সেখানে দেখলো মাএ ছয়টা পয়এিশ বাজে।সায়রা এই সুযোগে পুরো গেস্ট হাউজটা একবার ঘুরে দেখতে বের হলো। তবে তেমন কিছুই পেলো না৷ তবে গেস্ট হাউজের পেছনের দিক দিয়ে বের হওয়ার একটা সিড়ি। সেখানে ফুলের বাগান দেখা যাচ্ছে। সায়রা সিড়ি দিয়ে নামলো ধিরে ধিরে। ছোট একটা বাগান। তবে বেশ সুন্দর । সায়রা একটু সামনে এগিয়ে যেতেই দেখলো তূর্য দাড়িয়ে আছে। দু হাত ভাজ করে ফুলগুলো দেখছে। সায়রা তাকাতেই তূর্য ও সায়রার দিকে তাকালো শান্ত দৃষ্টিতে। সায়রা পুরো জমে গেলো। ওই জোড়া ভ্রু ছোট ছোট চোখ জোড়ার শান্ত চাহনি ভারি অদ্ভুত লাগে সায়রার। সায়রা মনে মনে ভাবলো এই লোক কি ঘুমায় না৷ সায়রা ফিরে আসনে নিতেই তূর্য বললো উঠলো ”
_চলে যাচ্ছো কেনো ?
“সায়রা দাড়িয়ে গেলো। তূর্যর দিকে ফিরে মিনমিন করে বললো ”
_আপনার যদি ডিসটার্ব হয়,,,, তাই।
“তূর্য সামনের দিকে চেয়ে থেকেই বললো ”
_এটা আমার বাগান না। সবার জন্য উন্মুক্ত। দেখতে পারো। যতোক্ষন খুশি থাকতে পারো।
“সায়রা খুশি হলো। এগিয়ে এসে দাড়ালো। তূর্যর থেকে একটু দূরত্ব রেখে। ভোরের ঠান্ডা হাওয়া বইছে। চারদিক কেমন সুন্দর হয়ে উঠেছে। বাতাসে ভুলগুলো নড়ছে। তূর্য আবার বললো ”
_পায়ের ব্যথা কমেছে ?
“সায়রা চমকে গেলো। এই লোক এখনো মনে রেখেছে এই কথা। ভালোলাগলো সায়রার বিষয়টা ”
_জি কমেছে।
_আচ্ছা ।
_আপনি রাতে ঘুমান না স্যার?
“হুট করে সায়রার এমন প্রশ্নে সায়রার দিকে তাকালো তূর্য। সায়রার মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে নিজেও বলদ হয়ে গেছে ”
_এমন মনে হওয়ার কারন ? (বলল তূর্য)
“সায়রা পরলো বিপদে। তূর্য ওর দিকেই চেয়ে আছে। এবার সে কি বলবে। হুট করে তো জিজ্ঞেস করে বসেছে। এখন যদি বলে যে সায়রা খেয়াল করে। তাহলে তূর্য কি ভাববে। সে তূর্যর দিকে চেয়ে থাকে। নজর রাখে। না না এতো বড় লজ্জা সে নিতে পারবে না। এখনই এখান থেকে কেটে পড়তে হবে। তূর্য সায়রাকে চুপ করে থাকতে দেখে বললো ”
_কি হলো বলো ।
_নাহ কিছু না। এমনি ই মনে হয়। আমি এখন আসি হে।
“সায়রা চল আসতে নিলে তূর্য আবার বললো ”
_আমি যেতে বলিনি তোমাকে।
“সায়রা দাড়িয়ে গেলো। তূর্য নিজেই দু কদম এগিয়ে এসে সায়রার সামনে দাড়ালো ”
_অর্ধেক কথা আমার পছন্দ না। কথা শেষ করো।কেনো মনে হয় আমি রাতে ঘুমাই না ?
“সায়রা তূর্যর দিকে চেয়ে আছে। তূর্য ভারি সিরিয়াস হয়ে চেয়ে আছে ওর দিকে। সায়রার ইচ্ছে করছে গড়াগড়ি করে কাঁদতে। সায়রা মনে মনে ভাবলো কিছু একটা বলে কাটিয়ে নেবে। মনে একটু সাহস এনে বললো ”
_কারন আপনার চোখের নিচে ডার্কসার্কেল এই জন্য।
“তূর্য হতবাকের মতো চেয়ে আছে। তূর্য যথেষ্ট ফর্সা। ডার্কসার্কেল তার চোখের নিচে ইহকালে সে দেখেনি। এই মেয়ে কি ভুলভাল দেখছে। নাকি মিথ্যা বলছে ”
_হোয়াট ননসেন্স। আমার চোখের নিচে কখনো ডার্ক সার্কেল হয়নি। চোখে কম দেখো ?
_আপনি কারন জানতে চেয়েছেন স্যার। আমার যা মনে হয়েছে আমি তো তাই বলেছি।
“সায়রা তূর্যর থেকে যথেষ্ট খাটো। তূর্যর দিকে তাকালে মাথা উঁচু করে তাকাতে হয় সায়রাকে। তূর্য বললো ”
_তাকাও আমার চোখের দিকে।
“সায়রা তাকালো। কিন্তু তাকিয়ে থাকতে পারলো না। সে দৃষ্টি নামিয়ে নিয়ে আসি বলে দৌড়ে চলে গেলো। পায়ের ব্যথায় ধিরে হাটতে হচ্ছে। কিন্তু এখন দৌড়াতে গিয়ে পায়ে ব্যথা পেলে ও জান বাঁচানো ফরজ হয়ে গিয়েছিলো। সায়রা এভাবে দৌড়ে পালাতেই তূর্য অজানা কারনে হেঁসে ফেললো। মেয়েটা তার চোখের দিকে তাকাতে হবে বলে এভাবে পালিয়ে গেলো। তূর্য ও আর দাড়ালো না। একটু পরে বের হতে হবে ”
“তূর্য সায়রা চলে গেলে ও গেস্ট হাউজের একটা রুম থেকে দু’জন মানুষ তাদের এতটা সময় লক্ষ্য করেছে তা তারা আন্দাজ করতে পারলো না। সামর্থ্য বেগম রুমের জানালাটা বন্ধ করে দিয়ে হাসিনার দিকে চেয়ে হেসে বললো ”
_কিছু বুঝলি রে হাসিনা ?
“সায়রা সোজা রুমে চলে এসেছে। বুকটা এখনো তার কাঁপছে। তূর্যর চাহনি এখনো চোখের সামনে ভাসছে। বাঘের কবলে গিয়ে পড়েছিলো সে। জেরিন সহ রুমে যে দুজন ছিলো তারা ও উঠে গেছে। সায়রাকে এভাবে দেকে জেরিন বললো ”
_কোথায় গিয়ে কার তাড়া খেয়ে এলি তুই ? এমন করছিস কেন ?
_বাঘের তাড়া খেয়ে এলাম। জানটা নিয়ে ফিরেছি কোনো রকমে,,, ।
“জেরিন হেসে ফেললো ”
_টেকনাফে তুই বাঘ পেলি কই রে। আমাকে ও একটু দেখাস তো,,, ।
“জেরিন ফ্রেশ হতে চলে গেলো। সকাল আটটায় সবাই গেস্ট হাউজ থেকে একেবারে নাস্তা করে বের হলো । এখান থেকে ফেরিতে করে সেন্টমার্টিন যাওয়া হবে।
ফেরি ঘাটে পৌঁছাতে আটো রিকশা নেওয়া হলো অনেকগুলো। তূর্য সামর্থ্য বেগম হাসিনা আর রুহানিকে এক অটোতে তুলে দিলো। সেটা আগে গেলো। নাফিস সহ অফিসের ম্যানেজার রকিব বাকিদের ও অটোতে উঠিয়ে দিলো। তূর্য শুধু এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। সায়রা আর জেরিন সবার পেছনে পড়েছে। কারন জেরিন সাজতে বলেছিলো। নাস্তা করতে ও দেরিতে এসেছিলো। লাস্ট আর একটা অটো আছে। মানুষ পাঁচজন। তূর্যদের যাওয়ার কথা ছিলো এটাতে করে। নাফিস সায়রা আর জেরিনকে দেখে বললো ”
_আরোহ এতো তাড়াতাড়ি কেউ আসে। আরো এক ঘন্টা পরে আসতে পারতে।
“জেরিন রেগে গেলো। একটা জায়গায় এসেছে একটু পরিপাটি হবে না সাজবে না। তূর্য বললো ”
_দেরি হয়ে যাচ্ছে। ফেরি আমাদের জন্য বসে থাকবে না। চলো এখন।
“সায়রা চুপ করে আছে। এই জেরিনটার জন্য সব জায়গায় বিপদে পড়তে হয়৷ অটোরিকশায় সায়রা আর জেরিন এক পাশে বসলো৷ ওদের সামনের সিটে রকিব আর নাফিস বসলো। তাও জেরিনের সাথে ঠুকাঠুকি লেগে গেছে নাফিসের। তূর্য সামনে বসলো চালকের এর সাথে। যদি ও তার অভ্যাস নেই এসবের। কিন্তু মেয়েদের মুখোমুখি হয়ে বসায় চেয়ে এটা ভালো।
তবে তূর্য একটা জিনিস খেয়াল করলো ওর সামনে যেই আয়নাটা সেখানে সায়রার মুখটা দেখা যাচ্ছে। সায়রার চুলগুলো বরাবরের মতোই বেনী করা। আজ আবার কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ। পড়নেও কালো ড্রেস। চোখ দু’টো স্থির নেই বাইরের দিকে চেয়ে আছে। একবার এদিক তো আরেকবার ওইদিক। তূর্য চোখ সরিয়ে নিলো ”
“একটু পড়ে এসে ফেরিঘাটের সামনে অটো থামলো। সেখানে আগে আসা সকলে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলো। ফেরি এখনো ছাড়া হয়নি।
ওরা অটো থেকে নামতেই দেখলো রুহানি দাড়িয়ে আছে। অনেকেই ফেরিতে উঠে গেছে। তূর্যকে সায়রার সাথে এক অটোতে আসতে দেখে রুহানির মুখটা কালো হয়ে গেলো। সে এগিয়ে এসে তূর্যর হাত ধরলো আগে। তূর্য সেটা ছাড়িয়ে নিতে চাইলে রুহানি বললো ”
_চল চল ফেরি ছেড়ে দিবে।
“তূর্যকে এক প্রকার টেনে নিয়ে গেলো রুহানি৷ সায়রা ওরা ও উঠলো। বিশাল বড় ফেরি। কতো কতো মানুষ। সামর্থ্য বেগমকে হার হুইলচেয়ারে বসানো হয়েছে। তূর্য গিয়ে সামনে দাড়ালো। তূর্যর হাত তখনো রুহানি চেপে ধরে আছে। তূর্যদের একটু পেছনেই সায়রা ওরা দাঁড়িয়ে। সামর্থ্য বেগম তূর্যকে কাছে ডাকলো। তূর্য রুহানির হাত ছাড়িয়ে দিয়ে সামর্থ্য বেগমের পাশে গিয়ে দাড়ালো।
রুহানির মনটা খচখচ করছে। সায়রাকে দেখলে গা জ্বলে উঠে তার৷ সে আর তূর্যর পাশে থেকে সরলো না। আশেপাশে ই রইলো।
দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লাগে ফেরি করে সেন্টমার্ট
ন পৌঁছাতে। সায়রা একটা জায়গায় একটু বসলো। অনেকটা সময় পায়ের উপর ভর করে দাড়িয়ে থাকলে কাটা জায়গায় ব্যথা হচ্ছে।
জেরিন আর নাফিসের সে অটোতে থেকে কথা কাটাকাটি শুরু হয়েছে। নাফিস জেরিনকে কটকটি বলেছে সেই তুমুলঝগড়া ওদের ।
“প্রায় আরাই ঘন্টা পড়ে ফেরি এসে থামলো সেন্টমার্টিন এর চেয়ারম্যান ঘাটে। ফেরি থেকে একে একে সবাই নামছে। তূর্য আগেই নেমে গিয়েছে। কারনে সামর্থ্য বেগমকে নামাতে হবে। সামর্থ্য বেগমকে নামাতেই রুহানি হাত বাড়িয়ে দিলো। তূর্য রুহানির হাত ধরে ওকে নামালো। রুহানির পরো নাফিস ছিলো। নাফিস ও মেয়েদের মতো হাত বাড়িয়ে দিলো ”
_স্যার প্লিজ আমাকে ও একটু ধরুন। পড়ে যাবো আমি।
“তূর্য নাফিসের এমন কান্ডে হেসে ফেললো। নাফিসের পেছনে সায়রা ছিলো। সায়রা হেসে দিলো। নাফিস নামার পর ই সায়রা নামতে গেলো একাই তূর্য হাত বাড়িয়ে দিলো। সায়রা একবার তূর্যর মুখের দিকে চায়লো। এরপর ধরলো হাতটা। নেমেই সঙ্গে সঙ্গে হাত ছাড়িয়ে নিলো সায়রা৷ জেরিন এখনো দাড়িয়ে ”
_আমি নামবো কি করে,,, ।
“নাফিস বললো ”
_লাফ দাও কটকটি। কিছু হবে না।
_আমি নিচে নাৃতে পারলে আপনার ঘাড় মটকে দেবো বলে দিলাম।
“নাফিস হেসে হাত এগিয়ে দিলো। ততক্ষণে বাকিরা এগিয়ে গেছে। অবশেষে তারা সেন্টমার্টিন দ্বীপে। সায়রা আস্তে আস্তে হেটে যাচ্ছে। হাতে ব্যাগ। তূর্য হুট কটে পাশে এসে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিলো। সায়রা তাকালো তূর্যর দিকে। তূর্য সায়রার হাতে প্যাকেটটা ধরিয়ে দিয়ে বললো ”
_সকালে মিথ্যে কথা বললে কেনো ?
“সায়রা আস্তে করে বললো ”
_আমি আবার কি মিথ্যে কথা বললাম স্যার?
_সকালে বললে পায়ের ব্যথা কমেছে। অথচ ঠিক মতো হাঁটতে পারছো না। ওই প্যাকেটের মধ্যে ঔষধ ও আছে সাথে মলম ও আছে। লাগিয়ে নিও।
“সায়রা অবাক হয়ে চেয়ে রইলো। লোকটা তার এতো কিছু খেয়াল করছে। তূর্য একটু আগে আগে হেঁটে যাচ্ছে। পাচ মিনিটের দূরত্বে রিসোর্ট তাদের। এখান থেকেই দেখা যাচ্ছে। সায়রা চেচিয়ে বললো ”
_ধন্যবাদ স্যার।
“তূর্য দাড়িয়ে গেলো। সায়রার দিকে আবার ফিরে এসে বললো ”
_তুমি মিথ্যে বলেছো আমায়। যেটা আমার পছন্দ না।
_সরি স্যার। আর বলবো না।
“তূর্য জোড়ে একটা নিঃশ্বাস ফেললো। সায়ার দিকে চেয়ে বললো ”
_মিস সায়রা আজমীর, এটা অফিস না৷ চব্বিশ ঘণ্টা স্যার স্যার করবে না। নিজেকে কেমন বয়স্ক বয়স্ক লাগে।
“সায়রা মুখ চেপপ হেসে বললো ”
_আচ্ছা স্যার।
_আবার স্যার।
“তূর্য বড় বড় পা ফেলে চলে গেলো। সায়রার ভীষণ হাসি পাচ্ছে ”
“সবার জন্য রিসোর্ট বুক করা হয়েছে। রিসোর্ট এর নাম
blue marine Resort । এটা অনেক কষ্ট করে পেয়েছে। যেহেতু মানুষ বেশি তাই পুরোটাই বুকিং করতে হয়েছে। তূর্য আসার পরে সবাই রিসোর্ট এ ঢুকে। রুহানি সানগ্লাস পড়ে দাড়িয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে রোদে সে থাকতে পারছে না কিন্তু দাড়িয়ে আছে গেটের সামনে ছায়া একটা জায়গায়। তূর্যর সাথে সাথে যাবে বলে। তূর্য এবার ঠিক করলো একা রম নিবে৷ কাল রাতে ও ঘুমাতে পারেনি। তাই সে মন মতো একটা রুমের চাবি নিজের কাছে রেখে। বাকি চাবিগুলো রকিবের কাছে দিয়ে দিলো। সামর্থ্য বেগমের রুম আলাদা। রুহানি তো রুম শেয়ার করবেই না৷ নাফিস একটা রুম নিলো তাও সঙ্গে রকিব। সামনাসামনি রুম সবগুলো। সায়রাকে রকিন একটা শাবি ধরিয়ে দিলো। রুম নাম্বার ১৬। জেরিন আর সায়রা সেখানে গিয়ে উঠলো। ওদের পাশের রুমটার দরজা বাদে বাকি সব রুমের দরজা খোলা। সায়রা রুমের ভেতরে ঢুকে ওর মনটা ই ভালো হয়ে গেলো। ছোট একটা রুম। সাথে একটা বারান্দা। সায়রা ব্যাগ রেখে দৌড়ে আগে বারান্দায় গেলো। এখান থেকে দ্বীপ দেখা যায়। নীল পানি। সারি সারি নারিকেল গাছ। সায়রা আবার রুমে এলো। জেরিন নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখছে। দুই রাত দুই দিন থাকবে এখানে ”
_ব্যাগ গুছিয়ে রাখ সায়রা।
_রাখছি। তুই বাইরের দৃশ্যটা দেখেছিস ? এওো সুন্দর।
_এই আমরা কখন ঘুরতে বের হবো?
“সায়রা বিছানায় শুয়ে পরলো ”
_আমি কি জানি। আমি একটু শুয়ে থাকি বাবা।
_সাওয়ার নিবি না ?
_তুই আগে যা। এরপর আমি যাচ্ছি।
“জেরিন চলে গেলো সাওয়ার নিতে। রুমের ভেতরেই ওয়াসরুম । সায়রা বিছানায় শুয়ে রইলো। জীবনে প্রপ্রথমবার সে ওই অগোছালো জীবন থেকে একটু নিস্তার পেলো৷ দুদিন আর তাকে ছুটতে হবে না। এই দুইদিন তার। সে ঘুরবে। উড়বে। যূি এমন সময় আর কখনো না আসে।
জেরিন বের হতেই সায়রা গেলো৷ লম্বা একটা সাওয়ার নিয়ে বের হলো। দুপুর বারোটা বাজে। পায়ের ব্যথাটা এখন অতোটা অনুভব হয় না৷ সায়রা ব্যাগ থেকে জিনিসপত্র বের করতে গিয়েহাতে পরলো তূর্যর প্যাকেট টা। খুললো সে ওটা। ভেতরে দুটো ব্যাথার ঔষধ সাথে একটা মলম। আর ওয়ান টাইম বেন্ডেজ।
সায়রা বিছানায় পা উঠিয়ে বসে মলমটা লাগালো পায়ে। কাচ বিধে গিয়েছিলো জায়গাটা গর্ত হয়ে লাল হয়ে আছে। এরপর বেন্ডেজ টা ও লাগিয়ে নিলো। জেরিন সায়রাকে ডাকতে এসে ওর পায়ের এ অবস্থা দেখে বললো ”
_কিরে তোর পায়ে কি হয়েছে ?
_কিছু না একটু ব্যথা পেয়েছি।
_কখন ? দেখি দেখা আমায়। বললি না কেনো আমাকে ?
_আরে তেমন কিছু হয়নি। শুয়ে থাকবো আমি একটু। কাল রাতে যা হলো।
“তূর্য নিজের রুমে এসেই সাওয়ার নিয়েছে আগে। এরপর এসি বাড়িয়ে দিয়ে সে ঘুম। নাফিসকে বলে দিয়েছে দুপুরের খাবারের জন্য না ডাকতে। নাফিস ও তাই করেছে। সবাই রিসোর্ট থেকেই খাবার খেয়েছে। অনেকে রুমে বসেই দুপুরের খাবার খেয়েছে।
সায়রা ও ঘুম থেকে উঠেনি আর ”
“বিকেলে অনেকেই যে যার মতে ঘুটতে বের হয়ে গেছে। সায়রাকে জেরিন অনেক ডেকে ও উঠিয়েছে। দুপুরের খাবার সে মিস করেছে।
রেডি হয়ে নিচে নামতেই দেখলো সবাই ঘুরছে।সামনেই সুন্দর সমুদ্র। নীল ডেউ খেলানো পানি। অনেকে ছবি তুলছে। অনেকে পা ভিজিয়ে হাটছে। কেউ বসে আছে।
সায়রার ইচ্ছে হলো এই সমুদ্রের পানিতে পা ভিজিয়ে হাঁটতে। জেরিন তো ছবি তুলতে বিজি। সায়রা একাই এগিয়ে গেলো। সমুদ্রের পানিতে পা ভেজালো। নিচে বালু একটু পরপর বড় বড় ঢেউ আসছে। পা ভিজিয়ে দিচ্ছে। সায়রার বাচ্চাদের মতো কুশি হতে লাগলো। বাতাসে সায়রার গায়ের ওরনা উড়ছে। চুলগুলো ছেরে দেওয়া। সেগুলো ও তাল মিলিয়ে উড়ে চলেছে। সায়রা এদিক সেদিক হাঁটতে হাঁটতে দেখলো সামর্থ্য বেগমকে নিয়ে হাসিনা নামের মহিলাটা দাড়িয়ে আছে। সামর্থ্য বেগম হুইলচেয়ারে বসে সমুদ্র দেখছে। সায়রা সেদিকে এগিয়ে গেলো। সামর্থ্য বেগম সায়রাকে দেখেই হেসে কাছে ডাকলো ”
_কেমন লাগছে সমুদ্র ?
_খুব সুন্দর। এগুলো তো আমি টিভিতে দেখতাম ছোটবেলায়।
“সামর্থ্য বেগম হেসে বললেন ”
_আমি ও র তোর মতোই ছিলাম। ভাগ্যে ছিলো বলে আমি সব দেখতে পেরেছি।
_দাদা ঘুরিয়েছে বুঝি অনেক ?
_বহুত। বাংলাদেশ তো আছেই আমি বিদেশে ও ঘুরেছি।
“সায়রা হেসে বললো ”
_কি কপাল দাদি আপনার। সব ঘুরে ফেলেছেন।
_তোর ও এমন কপাল হইবো দেখিস।
_এতো ভালো কপাল আবার আমার নেই দাদি।
_আরেহ হবে হবে। দেখে নিস তুই।
“সায়রা সামর্থ্য বেগমের পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কথা বলছে আর সমুদ্র দেখছে।
তূর্য ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে এসেছে। সাথে রুহানি ও বের হয়েছে। বাকি কারো খবর নেই। রিসোর্ট এর গেট থেকে একটু সামনে আসতেই দেখলো সামর্থ্য বেগম সাথে হাসিনা আর আরো একটা মেয়ে। তূর্য এগিয়ে গেলো সাথে রুহানি ও গেলো পিছু পিছু। সামনে আসতেই দেখলো সায়রা আর সামর্থ্য বেগম বেশ হেসে কথা বলছে। তূর্যকে খেয়াল করেই সায়রা চুপ হয়ে গেলো। তূর্য একবার সায়রার দিকে চেয়ে সামর্থ্য বেগমের সাথে কথা বলছে। সায়রা তখনো দাড়িয়ে আছে দেখে রুহানি বলে উঠলো”
_তুমি এখনো দাড়িয়ে আছো কেনো ? যাও।
_জি।
“সায়রার বুকটা জ্বলে উঠলো রুহানির কথায়। সে আস্তে করে চলে আসতে চাইলে সামর্থ্য বেগম বাঁধা দিলেন ”
_না ও কেনো যাবে। ও থাকবে এখানে।
_না দাদি আমি আসি এখন৷ পড়ে আবার গল্প করবো।
“সায়রা কিছু বলতে যাবে তার আগেই তূর্য বলে উঠলো”
_দাদি বলছে যখন থাকতে বলছে। তাহলে সমস্যা কি ?
“সায়রা কিছু বললো না। সামর্থ্য বেগম হুট করেই সায়রার হাত চেপে ধরলো। তূর্য চেয়ে রইলো সেই হাত চেপে ধরার দিকে। এর মাঝে ই রুহানি এসে তূর্যর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো ”
“জেরিন ছবি তুলছিলো। একটু পাশেই একটা দাড়িয়ে নাফিস ডাব খাচ্ছিলো আর জেরিনকে দেখছিলো। জেরিন জানে নাফিস তার দিকে চেয়ে আছে। তবু ও সে কিছু বললো না। জেরিন ও একটু পরে গিয়ে দুটো ডাব নিলো। একটা সায়রার জন্য ও নিলো। নাফিস সেখানেই দাড়িয়ে বললো ”
_আহা নারী। নারী কতো ঢং করে রেহ। নারী ঢং করতে সেরা রেহ্।
“জেরিন রাগে কটমট করছে। সে জানে তাকে উদ্দেশ্য করেই বলা হয়েছে কথাটা। সে নাফিসের দিকে না চেয়ে ই বললো ”
_আহা পুরুষ রেহ্। পুরুষ অভিনয়ে সেরা রেহ্।
“নাফিস হাতের ডাবটা ফেলে দিয়ে যেতে যেতে বললো ”
_কটকটি।
“জেরিন ও বললো ”
_হনুমান ।
“তূর্যর হাত ধরে রেখেছে রুহানি। মানুষ ওদের এভাবে দেখে চেয়ে থাকে কেমন করে জানি। তূর্যর জন্য বিষয়টা অস্ততিকর। তবুও রুহানি হাত ছাড়ছে না। এটা ওটা দেখাচ্ছে। তূর্য বললো ”
_প্লিজ রুহানি হাতটা ছাড়। মানুষ দেখছে।
_দেখুক। সমস্যা কি ? চল কিছু খাই।
_আমার খেতে ইচ্ছে করছে না। হাতটা ছাড়।
_ছাড়বো না। কি হয়েছে তোর বল তো তূর্য ? চল আইসক্রিম খাই৷ প্লিজ না করবি না৷
“তূর্য নিষেধ করতে পারলো না। রুহানিকে আইসক্রিম কিনে দিলো। রুহানি খুশি হলো অনেক। ওইভাবেই হাত ধরে সমুদ্রপার দিয়ে হাটতে চাইলো রুহানি৷ কিন্তু তূর্য হাত ছাড়িয়ে নিলো। পাশাপাশি হাটলো ওরা। রুহানি অনেক কথা বললে তূর্য সূর্যের ছবি তুললো। আবার ফিরে এসে দেখলো সামর্থ্য বেগমের সাথে এখন জেরিন ও বসে আছে। গল্প করছে ওরা।নাফিস ও যোগ দিয়েছে। ওদের দেখে মনে হচ্ছে খুব মজার গল্প হচ্ছে ওখানে। তূর্যর চোখ আঁটকে গেলো সাদা পোশাকের কওালে টিপ দেওয়া নারীর দিকে। চুলগুলো বাতাসে উড়ছে। রুহানি যে ওর সাথে কথা বলছে সেসবে ওর কান মন কোনোটাই নেই৷ তূর্য ফোন বের করে জুৃম করে একটা ছবি তুললো। পরপর আরো কয়েকটা। এরপর ফোনের দিকে চেয়ে মুচকি হেসে ফোনটা পকেটে রেখে দিলো ”
চলবে,,,