ম্যারেজ প্রোপজাল পর্ব-১৪+১৫

0
2

#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#১৪

“বিশাল এক ভবনের সামনে এসে গাড়ি থামলো। সায়রা জানালা দিয়ে দেখলো লোটাস ফ্যাশন হাউজ।
সায়রা গাড়িতে ই বসে আছে তূর্য গাড়ি থেকে নেমে একটু সামনে হেটে যেতেই দেখলো সায়রা গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে চেয়ে আছে। তূর্যর হাসি পেলো। কাকে দিয়েছে চাকরি সে৷ তূর্য গাড়ির দিকে এগিয়ে এসে জানালার দিকে ঝুকে দাঁড়াতেই সায়রা ওর মুখ পিছিয়ে নিলো। তূর্য বললো ”

_তোমাকে কি ইনভাইটেশন কার্ড দিতে হবে গাড়ি থেকে নামার জন্য।

“সায়রা অবলা শিশুর মতো চেয়ে থেকে বললো ”

_আমাকে ও যেতে হবে ?

_তো তোমাকে কি গাড়িতে করে ঘুরতে নিয়ে এসেছি সায়রা আজমীর।

_নাহ্।

_তাহলে,সঙ্গে এসো ফাইলটা নিয়ে।

“কথাটা বলে তূর্য আবার হেঁটে যেতে লাগলো। সায়রা ফাইল নিয়ে তূর্যর পিছু ছুটলো। কতো বড় ভবন৷ মেইন গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই দেখলো মানুষজনের ভীর।
ওরা গেলো দু,তলায়। একটা বড় রুমের মতো জায়গায় এসে থামলো তূর্য। সায়রা ও থেমে গেলো। তূর্য পেছন ফিরে সায়রার দিকে চেয়ে বললো

_একটু ওয়েট করো। আমি মিটিং শেষ করে আসছি।

_আচ্ছা ।

” কথাটা বলে সায়রা সামনের যে বসার যায়গা সেখানে বসতে যাচ্ছিলো। তূর্য বলে উঠলো ”

_ফাইলটা কে দেবে?

“সায়রা দাড়িয়ে গেলো। হাতে এখনো ফাইলটা। সেটা তূর্যর দিকে এগিয়ে দিলো। তূর্য গেলো কেবিনের ভেতরে। সায়রা গিয়ে বসার জায়গায় বসলো ”

“রুহানি নিজের কেবিনে এসেছে। টেবিলের উপর যতো
যা ছিলো সব ছুড়ে ফেলে দিলো। তূর্য তাকে পছন্দ করে না। এ কথা সে মানতে পারছে না। পারবে না মানতে। সব ছেড়ে ছুড়ে সে এখানে পরে আছে ।
নাফিস রুহানির কেবিনের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি।
ভেতর থেকে ভাঙচুরের শব্দ শুনে নাফিস দাড়িয়ে গেলো। বিড়বিড় করে বললো ”

_হে আল্লাহ দুনিয়ার সব পাগল ছাগল ভেরা৷ সব এই অফিসে আইনা ই ফেললা কেন ? এ তোমার কেমন অবিচার।

“নাফিস হেঁটে চলে গেলো। তার মনে আনন্দ। তার কাজ কমে গেছে ”

“তূর্য মিটিং শেষ করে বের হলো প্রায় আধ ঘন্টা পড়ে
বের হয়েই দেখলো সায়রা যেখানে বসে ছিলো সেখানে নেই। তূর্য ঘড়িতে সময় দেখলো। দেড়টা বাজে৷ এই সময় ওই মেয়ে আবার কোথায় গেলো। তূর্য একটু সামনের দিকে হেঁটে যেতেই দেখলো সায়রা একটা বাচ্চা কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। বাচ্চাটার গাল ধরে টানছে। বাচ্চাটা ও হাসছে। একটু পরেই একটা মহিলা এলে বাচ্চাটা তাকে দিলো সায়রা। তূর্য সেখানে ই দাঁড়িয়ে দেখলো। সায়রা আসতে গিয়ে ই সামনে তাকাতে দেখলো তূর্য দাঁড়িয়ে আছে। সায়রা ধিরে ধিরে হেঁটে এলো। তূর্য বললো ”

_যেতে পারি এবার।

_জি।

“তূর্য সামনে সামনে যাচ্ছে। সায়রা পিছে পিছে হাঁটছে
ফ্যাশন হাউজের পাশেই একটা বড় রেস্টুরেন্টে। তূর্য সেদিকে ই যাচ্ছে। সায়রা ও পিছু পিছু যাচ্ছে। তূর্যকে সায়রা রেস্টুরেন্টে ঢুকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো ”

_অফিসে যাবো না। কখন যাবো ?

_দেড়টা বাজে। খিদে পায়নি ?

“সায়রা কিছু বললো না। তূর্যর সঙ্গে সঙ্গে গেলো। রেস্টুরেন্টে এর ভিতরে খুব কম মানুষ। একটা টেবিলে গিয়ে বসলো তূর্য। সায়রাকে বললো বসতে। সায়রা ও বসলো। সায়রা চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে শুধু দেখছে। এখানে মানুষ খেতে আসে। এতো সুন্দর জায়গায়। বাহ রে বাহ৷ বড়লোকের বিরাট কারবার। তূর্য সায়রাকে দেখছে। একটু পরই একজন ওয়েটার এলো। ম্যেনূ কার্ড নিয়ে। তূর্য সেটা সায়রার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো ”

_অর্ডার করো ।

_আমি,,,।

_হুম। আমি যা খাবো তাই তুমি খাবে নাকি ? তোমার মন মতো অর্ডার করো।

“সায়রা কার্ডটা নিলো। যে যে নাম লিখেছে খাবারের।
সায়রা ভাবলো সে আগ বাড়িয়ে কিছু অর্ডার করা ঠিক হবে না। ভদ্রতা বলেও একটা কথা আছে ”

_কিছু ঠিক করলে?

_নাহ, আপনি যা খাবেন তাই অর্ডার করুন।

_সিউর ?

_হু।

“তূর্য অর্ডার করলো৷ কি নাম বললো কে জানে। পেটে ইদুর দৌড়াদৌড়ি করছে। একটা কিছু হলেই হবে।
ওয়েটার বলে গেলো দশ মিনিট দেড়ি হবে খাবার দিতে। সায়রা চুপ করে বসে রইলো। তূর্য কাউকে কল করলো বোধহয়। কানে ব্লুটুথ লাগানো তাই আরেক পাশের কথা শুনতে পারছে না। তবে সায়রা বুঝলো তূর্য তার দাদির সাথে কথা বলছে।
একটু পরে ওয়েটার এসে খাবার দিয়ে গেলো। সায়রা শুধু প্লেটের দিকে চেয়ে আছে। এগুলো যে কি তার মাথায় ঢুকছে না। সাথে দুটো চামচ ও আছে। সায়রাকে এভাবে চেয়ে থাকতে দেকে তূর্য বললো ”

_কোনো সমস্যা ?

_এগুলো কি ?

_ ভ্যাজিটেবল সালাদ।

_এই দুপুর বেলায় এসব খাবো ?

_তাহলে কি খাবে?

“সায়রা অসহায় মুখ নিয়ে বললো ”

_নাহ্ কিছু না।

“তূর্য খাচ্ছে। খুব তৃপ্তি নিয়ে। সায়রার গলা দিয়ে নামছে না এই সালাদ। দুপুর বেলায় খাবে ভাত। এসব কি ?
তূর্যর দিকে চেয়ে দেখলো সে খাচ্ছে। সায়রা একটু মুখে দিলো৷ স্বাদ ভালো তবে এসব সালাদ সায়রার সাথে যায় না।
সায়রা একটু খেয়ে রেখে দিলো। এরপর ওরা বের হয়ে সোজা অফিসে এসে পড়লো৷ সায়রার পেট খালি।সে এসেই আগে জেরিনের কাছে গেলো ”

_কি হয়েছে এভাবে এলি কেনো ? (বললো জেরিন)

_সর সর কথা বলিস না৷ খুব খিদে পেয়েছে আমার৷

“কথাটা বলেই সায়রা নিজের ব্যাগ থেকে পিস করা কেক বের করে খেতে লাগলো। তূর্য আর নাফিস তখন কেবিনের দিকে আসছিলো। সায়রাকে এভাবে তারাহুরো করে কেক খেতে দেখে তূর্য চেয়ে রইলো।
সায়রা কেকটা শেষ করে পানি খেলো। তূর্যর কাছে বিষয়টা ভারি অবাক লাগলো। পর মুহুর্তে ই মনে পরলো সায়রা তখন খাবার রেখে দিয়েছিলো। তূর্য নিজের কেবিনে গেলো। নাফিস এ দেখেছে বিষয়টা। সে গেলো সায়রার কাছে ”

_কি ব্যাপার সায়রা,খাতুন৷ এমন ক্ষুদার্থ বাঘের মতো এতোটুকু পিস কাটা কেকের উপর হামলে পরলে কেনো? স্যার কিছু খাওয়াইনি ?

“সায়রা নাফিসের দিকে চেয়ে বললো ”

_হে,অনেক কিছু খাইয়েছে তো।

“নাফিস ঢং করে বললো ”

_ওমা তাই। কি খেলে শুনি ?

_কতোগুলো ঘাস,লতা,পাতা,টমেটো, আরো কতো কি বলে শেষ করা যাবে না৷

“নাফিস শব্দ করে হেঁসে ফেললো। শুরুতে নাফিস ও এমন ভাবে ফাসতো। কিন্তু পরে কোথাও যাওয়ার আগেই তূর্যকে শর্ত দিতো বিরিয়ানি খাওয়াতে হবে।
তূর্য রাজি হতো তবে এক গাদা জ্ঞান দিয়ে। নাফিসের সেস সয়ে গেছে। কিন্তু এবার ফেসেছে এই অসহায় মেয়েটা”

_আহারে সোনা গো আমার৷ থাক কষ্ট পেয়ো না৷

“সায়রা,কিছু বলতে যাবে তার আগেই নাফিসের ডাক এলো। রুহানি ডেকেছে তাকে। নাফিস আল্লাহর নাম নিতে নিতে রুহানির কেবিনের দিকে গেলো। তূর্যর রাগটা না নাফিসের উপর এসে পড়ে। নাফিস কেবিনে ঢুকে দেখলো রুহানি বসে আছে। চোখ দুটো অন্য রকম হয়ে আছে। নাফিসকে দেখেই বললো ”

_তূর্য কি ফিরেছে নাফিস ?

_সেই কবে ফিরেছে।

_বোস, তোমার সাথে আমার কথা আছে।

“নাফিস বসলো। এমনিতে ও রুহানির কথা সে এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দেয় ”

_বলেন।

_নাফিস তুমি তো জানো সব। তোমার কি মনে হয় না তূর্য ইদানীং অনেক বাড়াবাড়ি করছে ?

“নাফিস অনেক উৎসাহ নিয়ে বললো ”

_অবশ্যই মনে হয়৷ কিন্তু কোন বিষয়ে বাড়াবাড়ি করছে ওইটাই তো বুঝলাম না।

_সায়রা মেয়েটার বিষয়ে। আমার ভয় হচ্ছে।

“নাফিস হেসে বললো ”

_সায়রা খাতুন৷ ওইটুকু একটা কিউট হাঁসের বাচ্চার মতো মেয়েরে আপনার মতো হাতি,,,,,,থুক্কু সুন্দর মেয়ে ভয় লাগে। কিন্তু কেনো ? হুয়াই ?

_ওই মেয়েকে তুমি চেনো না নাফিস।

_চিনি তো।

“রুহানি বিরক্ত হয়ে বললো ”

_চুপ করো। সব জায়গায় ঠাট্টা করবে না।

“নাফিস মুখ চেপে হাসলো। রুহানি এবার করুন সরে বললো ”

_আমাকে একটা সাহায্য করবে নাফিস ?

_কি সাহায্য বলুন?

_দাদি যখন তূর্যর জন্য আবার মেয়ে খুজবে৷ তুমি আমার কথা বলবে৷

_আমাকে কি আপনার নানটু ঘটক মনে হয় ?

“রুহানি অবাক হয়ে বললো ”

_এইটা আবার কে ?

_কেনো? গান শুনেন নাই। নানটু ঘটকের কথা শুইনা। অল্প বয়সে করলাম বিয়া,,,, ও,, মুরুব্বিরা কইলো সবাই,,,,,,।

“নাফিস পুরো গান শেষ ও করতে পারলো না৷ রুহানি ওকে কেবিন থেকে বের করলো। নাফিসের ভারি হাসি পাচ্ছে। তাকে ঘটক বানিয়ে দিচ্ছে। নাফিস করলার জুস খেয়ে মরে যাবে তবুও সামর্থ্য বেগমকে এ কথা বলবে না৷ তূর্যর জীবন সে নষ্ট করতে পারবে না মরে গেলে ও ”

“অফিস ছুটি হতেই সায়রা আজ তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি বাসায় যাবে তার আগে একটা টিউশনি আছে।
সায়রা টিউশনি শেষ করে সোজা বাসের জন্য গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। পাঁচদিন পর আজ বাসে যাবে আবার। বাস আসতেই সায়রা উঠে পরলো। একটা সিটে গিয়ে বসতেই ওর পাশে একটু পর একজন এসে বসলো। সায়রা তাকাতেই দেখলো অনিক ”

_আপনি।

_কেনো ? ভয় পাচ্ছেন ? আমি তো আপনার মতো না উধাও হয়ে যাই না।

“সায়রা হেসে ফেললো। অনিক তাকে কি বুঝাতে চেয়েছে সে বুঝতে পেরেছে ”

_উধাও হইনি। অফিস ট্যুর এ ছিলাম তাই।

“অনিক হেসে বললো ”

_কিন্তু আমি আপনাকে অনেক খুজেছি।

_কেনো ?

_এই যে যাতায়াতের পার্টনার ছাড়া যাতায়াত করতে হয়েছে।

“সায়রা হেসে আবার জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালো। অনিক একটু সময় নিয়ে বললো ”

_কিছু মনে না করলে আপনার নাম্বারটা পেতে পারি ?

“সায়রা অনিকের দিকে ঘুরে অবাক হয়ে বললো ”

_সরি।

_আচ্ছা, অন্তত ফেসবুক আইডিটা তো দিতে পারেন?

“সায়রা মুখের উপর বললো ”

_নাহ তাও পারি না।

“অনিক সঙ্গে সঙ্গে বললো ”

_আচ্ছা, আপনার পুরো নাম যেনো কি ?

_সায়রা আজমীর কেনো ?

“অনিক কিছু বললো না । বাকিটা রাস্তা সায়রা ও কিছু বললো না৷ অনিককে তার মাঝে মাঝে খুব অন্য রকম লাগে। আবার মাঝে মাঝে ভারি সন্দেহ লাগে। সায়রা নেমে গেলো তার বাড়ির রাস্তায় ”

“তূর্য গাড়িতে বসে আছে নাফিস গাড়ি চালাচ্ছে। দুজনেই কিছু নতুন কাজ নিয়ে কথা বলছিলো। হুট করেই তূর্য বলে উঠলো ”

_আচ্ছা আমাদের অফিসের স্টাফরা দুপুরে খাবারটা কোথায় খায় ?

_কেনো স্যার ?

_না মনে হলো আরকি।

_সবাই তো বাসায় থেকেই খাবার নিয়ে আসে৷ কেউ কিনে ও খায়।

“তূর্য কিছু সময় একটু চিন্তা করলো৷ এরপর আবার বললো ”

_আচ্ছা তোমার কি মনে আমাদের অফিসে একটা কেন্টিন দিলে ভালো হয় ?

“নাফিস অবাক হলো। ুতো বছরে তূর্য কখনো এসব নিয়ে ভাবেনি ”

_অনেক ভালো হয় স্যার। সবাই দুপুরে ফ্রেশ খাবার পাবে।

_তাহলে কাজ শুরু করো৷ রকিবকে বলো ও সব করবে।

“নাফিস একটু চুপ থেকে বললো ”

_কিন্তু খাবার কি থাকবে স্যার? শুধু সালাদ।

“তূর্য ছোট ছোট চোখ করে নাফিসের দিকে চেয়ে বললো ”

_নাহ্। বিরিয়ানি, তেহেরি,কাচ্চি এসব।

“নাফিস এক্সাইটেড হয়ে বললো ”

_সত্যি ই স্যার। তাহলে আমি অনেক খুশি হবো।

“তূর্য কিছু বললো না। এদের বলে লাভ ও নেই। এরা শুনবে না তার কথা। তূর্যকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে নাফিস চলে গেলো।
তূর্য বাড়িতে ঢুকে দেখলো সামর্থ্য বেগম বাড়ির কাজের লোকদের দিয়ে পুরো আসবাবপত্র নতুন করে সাজাচ্ছেন। তিনি বলে বলে দিচ্ছে আর তারা করছে। তূর্য এসে সামর্থ্য বেগমের সামনে দাড়িয়ে বললো ”

_এসব কি হচ্ছে ?

_কি হচ্ছে। ঘর গোছানো হচ্ছে।

_একিই জিনিসপত্র কয়দিন পর পর এদিক সেদিক করে লাভ কি ?

_তুই বুঝবি না। এতো ঘরের সৌন্দর্য বাড়ে।

_করো তোমার যা ইচ্ছা ।

“বলে তূর্য চলে যেতে নিলেই সামর্থ্য বেগম ডাকলেন ”

_এই শোন, তোর সাথে আমার কথা আছে ?

“তূর্য এসে আবার সামনে দাড়ালো ”

_কি কথা বলেন রাজমাতা।

_তুই কি আজকে ওই সায়রার সাথে ঘুরতে গিয়েছিলি?

“তূর্য এক মিনিটের জন্য বোধহয় আটকে গেলো। ওই মেয়ের সাথে ঘুরতে যাবে সে। এ ও কি সম্ভব। আর দাদি কি করে জানলো। নিশ্চয়ই নাফিস বলেছে। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে এই নাফিসটাকে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিতে ”

_বুড়ি, আমি ঘুরতে যাইনি। মিটিং এ গিয়েছিলাম। তুমি ভাবো কি করে এসব৷ ওই ইচরে পাকা মেয়েকে নিয়ে আমি ঘুরতে যাবো ?

“সামর্থ্য বেগম রেগে গেলেন তূর্যর কথায়। প্রতিবাদ করে বললেন ”

_চুপ কর। ও ইচরে পাকা না। ও খুব ভালো মেয়ে৷ তুই কি মানুষ চিনিস নাকি।

_তুমি খুব চেনো। ও তোমাকে কাবু করেছে। তাই এমন লাগছে।

_তোর সাথে নিয়ে ঘুরিস। তোকে ও করবে একদিন।

“সামর্থ্য বেগম কথাটা কথার ছলে বললে ও তূর্যর মস্তিসকে গিয়ে বিধলো কথাটা৷ ওই মেয়ে সব পারে।
হতে পারে তূর্য ও কাবু হয়ে যাবে৷ কিন্তু এটার সম্ভবনা ঠিক কতটুকু তা তূর্য জানে না।
সামর্থ্য বেগম তূর্যকে বললো ”

_শোন। কাল তোর সঙ্গে করে ওকে একটু নিয়ে আসবি?

“তূর্য অবাক হয়ে তাকালো সামর্থ্য বেগমের দিকে ”

_পাগল হলে নাকি। ও আমার অফিসের স্টাফ ।

_আমি এতো কিছু জানিনা৷ ওকে সঙ্গে করে নিয়ে আসবি৷ গল্প করবো ওর সাথে একটু।

“তূর্য হেটে চলে যেতে যেতে বললো ”

_এসব পারবো না আমি।

_না পারলে আমি গিয়ে নিয়ে আসবো।

“সামর্থ্য বেগমের কথা তূর্য কানে ও নিলো না। পাগল পেয়েছে তাকে। তূর্য রুমে এসে আগে টাই টা একটু ঢিলে করলো। এরপর একটু চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। হাতের ব্লেজারটা একটা ঝুড়িতে ছুড়ে মারলো। আর সেটা একেবারে ঝড়িতে গিয়ে ই পরলো। এরপর সোজা ওয়াসরুমে। সাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দেখলো রাত দশটা বাজে। সামর্থ্য বেগম উপরেই খাবার পাঠিয়ে দিয়েছে। তূর্য খাবার শেষ করে বিছানায় শুয়ে পরলো।
হাতে ফোন নিয়ে ফেসবুকে ঢুকলো। এমনিতেই সময় হয় না৷ ফেসবুকে ঢুকেই আগে চোখে পরলো রুহানির কিছু দুঃখভরা পোস্ট। তূর্য সেসব এড়িয়ে গিয়ে দেখতে লাগলো। হুট করেই সাজেশনে চোখ পরতেই সায়রা আজমীর নামে একটা আইডি শো করলো। একটা নীল রঙের চুড়ি পড়া হাতের ছবি দেওয়া। তূর্য ক্লিক করলো আইডিতে। আজকাল মেয়েরা আইডি লক করে রাখে। কিন্তু সায়রা রাখেনি। তূর্য একটু নিচে যেতেই দেখলো সায়রা দশ মিনিট আগে একটা পোস্ট শেয়ার করেছে যাতে এক প্লেট গরম ভাত আর গরুর মাংস। সায়রা সেই ছবি শেয়ার দিয়ে লিখেছে। অমৃত।
তূর্যর ইচ্ছে করলো সায়রাকে গিয়ে বলতে। সে কি জানল গরুর মাংস কতটা ক্ষতিকর। বেশিরভাগ রোগীকে ডাক্তাররা গরুর মাংস খেতে নিষেধ করেন।
কিন্তু এরা এসব বুঝবে না।তূর্য কিছু বলতে না পারলে ও ইচ্ছে করে একটা এঙরি রিয়েকট দিয়ে এলো ”

“সায়রা টেবিলে বসে পড়ছিলো। যেহেতু সে রেগুলার ভার্সিটি যায় না৷ এক সপ্তাহ পর পরিক্ষা। এমন সময়
কোকিলা বেগম সায়রার ঘরে ঢুকলো। সায়রা একটু অবাক হলো। এমনিতে এই মহিলা তার ঘর তো দূরের কথা এমন সময় সিরিয়াল নিয়ে বিজি থাকে।
সায়রা কিছু বললো না৷ নিজের মতো পরতে লাগলো
কোকিলা বেগম এসে টেবিলের পাশে দাড়ালেন। এরপর বললেন “.

_এমনে আর কতোদিন যাবে শুনি ?

” সায়রা বইয়ের দিকে চোখ রেখেই বললো ”

_কিভাবে ?

_বয়স কতো তোর ? বুড়ি হয়ে যাচ্ছিস৷ যতোই হোক তোর মা তো আমার ঘারে তোকে ফেলে দিয়ে মরেছে
এবার অন্তত বিয়েটা করে আমাকে উদ্ধার কর।

“সায়রার রাগ হলেও শান্ত থাকার চেষ্টা করলো। বুঝলো কোকিলা বেগম কিছু বলতে চায় তাই এমন করছে ”

_ফালতু কথা না বলে। কি বলতে চান সোজা করে বলুন।

_আমার ভাইয়ের ছেলে রমিজ। ওর তোকে পছন্দ। বিয়া করতে চায় তোরে। আর আমি ও চাই। বিদায় হবি আমার বাড়ি থেকে।

“সায়রা অগ্নি চোখে তাকালো কোকিলা বেগমের দিকে ”

_রমিজ, একটা নেশা খোর। আমি ভাবলেন কি করে এসব।

_শোন, এতো কথা আমি শুনতে চাই না৷ রমিজরেই তোর বিয়া করতে হইবো।

_আপনি আমার ঘর থেকে বের হয়ে যান৷ আর যদি বিয়ে দেওয়ার এতো সখ থাকে। নিজের মেয়েকে দিয়ে দিন।

“কোকিলা বেগমকে সায়রা ঘর থেকে বের করে দিলেন। দরজা বন্ধ করে দিয়ে সেখানেই বসে পড়লো।
মা না থাকলে বুঝি এসব ই সইতে হয়। নিজে কারো বোঝা হবে না তাই চাকরি করছে। খেয়ে না খেয়ে। সংসারে টাকা না দিলে সব হয় শুধু সায়রার বাবার ঔষধ কেনার টাকা হয় না। অথচ এরা কিছুই করে না। সব চলে সায়রার আর তার বাবার পেনশনের টাকায় ”

“পরেরদিন সায়রা অফিসে গিয়ে নিজের ডেস্কে গিয়ে বসতেই মনে পড়লো সে পিএ হয়েছে। তার এখানে বসে থাকাই কাজ নয়। সায়রা কতোগুলো ফাইল নিয়ে ছুটলো তূর্যর কেবিনের দিকে। তূর্য এখনো আসেনি। সায়রা ফাইলগুলো টেবিলের উপর রেখে দাড়িয়ে পুরো কেবিনটা দেখলো। সব কিছু সাদা৷ এতো সাদা মানুষের পছন্দ হয় কি করে।
এর মধ্যে ই তূর্য ঢুকলো কেবিনে৷ ফোনে কথা বলতে বলতে। সামর্থ্য বেগমের সঙ্গে। তিনি বলছেন সায়রাকে আজ নিয়ে আসতে সঙ্গে করে। কিন্তু তূর্য কিছুতেই বলবে না। কেবিনে ঢুকেই সায়রাকে দেখে একটা বুদ্ধি খাটালো। সায়রার দিকে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললো ”

_দাদি তোমাকে কি যেনো বলবে৷

“সায়রা একটু অবাক হয়ে বললো ”

_আমাকে ?

“তূর্য ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসলো
সায়রা ফোনটা কানে নিয়ে সালাম দিতেই সামর্থ্য বেগম বললেন”

_কেমন আছিস রে। ভুলে গেলি আমায় তুই ?

_না দাদি। ভুলে যাবো কেনো ? আপনি কেমন আছেন?

_আমি ভালো নেই। শোন আজ তূর্যর সঙ্গে আমাদের বাড়ি আসবি একটু?

“সায়রা ভরকে গেলো। তূর্যর দিকে একবার তাকালো। সে ফাইল দেখছে। সায়রা নানা ভাবে বুঝালো। কিন্তু সামর্থ্য বেগম ছাড়লেন ই না। সায়রার টিউশনি আছে সন্ধায় কি করে যাবে সে। এরপর একটু বুদ্ধি খাটিয়ে বললো ”

_আমি আজ না কাল আসি। আজ আমার একটু কাজ আছে সন্ধায়।

“সামর্থ্য বেগম রাজি হয়ে গেলো। কিন্তু কাল শুক্রবার
সে তো অফিসে ও আসবে। কল কেটে তূর্যর দিকে এগিয়ে দিলো। তূর্য ফোন নিয়ে জিজ্ঞেস করলো ”

_আজ যেতে সমস্যা কি ? অফিস শেষে আরো কাজ থাকে ?

_আমার টিউশনি আছে ?

“তূর্য ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো ”

_জব করছো। আবার টিউশনি ?

_আগে পড়াতাম জব হওয়ার পর আর ছাড়িনি।

“সায়রা সাইন করা ফাইলগুলো নিয়ে যেতে লাগলো তূর্য আবার বললো ”

_কাল তো অফিস বন্ধ। যাবে কি করে ?

“সায়রা ও চিন্তা করেছে। তূর্যদের বাড়ি সে চেনে না।
যাবে কি করে। সায়রাকে জবাব দিতে না দেখে তূর্য বললো ”

_আমি পিক করে নেবো। এতো ভেবো না৷ আফটার অল তুমি আমার দাদির স্পেশাল গেস্ট।

“সায়রা মাথা নিচু করে কেবিম থেকে বের হয়ে গেলো।
তূর্য চেয়ে রইলো। এই মেয়ের মধ্যে কি যে আছে কে জানে৷ তার দাদি কি দেখেছে এর মাঝে। কিন্তু স্পেশাল কিছু যে নেই তা তূর্য জানে৷ তবে অতি সাধারণ কিছু আছে। যা তূর্যর চোখে ও পড়েছে ”

চলবে,,,,

#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#১৫

“সেদিন অফিস থেকে বের হয়ে সায়রা আগে টিউশনিতে গেলো। সেখানে যে পিচ্চিটাকে পড়ায় সে তার মা প্রচুর কিপ্টে মানুষ। কখনো এক গ্লাস পানি সাধেন না। সায়রা একটু সময় নিয়ে পড়িয়ে বের হলো।
বাস স্টপে এসে দাড়ালো। বাস এখনো আসেনি। রোজ রোজ এভাবে দাড়িয়ে থেকে সায়রার কোমরটা বেঁকে বসেছে। একটু পড়ে বাস এলে সায়রা উঠলো। আজ ও হুট করে অনিক এসে পাশের সিটে বসলো। সায়রার মনে হচ্ছে অনিক যতো সময় যাচ্ছে সায়রার প্রতি আগ্রহী হচ্ছে। অনিক বসেই বললো ”

_কি খবর আপনার ?

_জি ভালো।

_আপনাকে কাল ম্যাসেজ পাঠিয়ে ছিলাম। দেখেনওনি

“সায়রা চমকে অনিকের দিকে তাকালো। লোকটা কেমন যেনো। সব সময় কালো পোশাক পড়ে। কিন্তু চেহারা দেখে ভদ্রলোক মনে হয় ”

_কোথায় ম্যাসেজ পাঠিয়েছেন ?

_কেনো ফেসবুকে।

_আইডি পেলেন কোথায় আমার ?

“অনিক একটু হেঁসে বললো ”

_এসব আজকাল কোনো বিষয় নাকি। আপনি আগে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট টা তো একসেপ্ট করবেন।

“সায়রা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ফেসবুকে ঢুকলো।
বেশ কয়েকটা নোটিফিকেশন এসেছে। সায়রা দেখলো অনিকের আইডি। অনিক দেখিয়ে দিয়ে বললো ”

_একসেপ্ট করুন।

“সায়রা একসেপ্ট করলো। এরপর খেয়াল করলো সাদমান শাহারিয়ার তুর্য আইডি থেকে তার কোনো পোস্ট এ রিয়েকট করা হয়েছে। তাও এ্যাঙরি। সায়রা ঢুকে দেখলো কাল রাতের সেই গরুর মাংসের পোস্ট এ
সায়রা ফোন ব্যাগে রেখে দিলো। সায়রা নিজের বাড়ির রাস্তায় নেমে গেলো বরাবরের মতো ”

“বাড়িতে এসে কোকিলা বেগমের সঙ্গে মুখোমুখি হলো সায়রা। কোকিলা বেগম মুখ ঘুরিয়ে চলে গেলেন। সায়রা নিজের ঘরে গেলো সোজা৷ কাধের ব্যাগটা রেখে জামাকাপড় নিয়ে বের হলো গোসলের জন্য। তখন দিশার মুখোমুখি হলো। দিশা ও কেমন করে যেনো তাকালো। সায়রা থেমে গেলো ”

_এমন করে তাকানোর মানে কী ?

“দিশা ভেঙচি কেটে বললো ”

_কেনো ? তোর দিকে কি তাকানো ও যাবে না নাকি৷

“সায়রা দু কদম এগিয়ে এসে দিশার সামনে দাড়িয়ে বললো ”

_নাহ্ যাবে না৷ তোদের তাকানো ও ভালো না।

_বিশ্ব সুন্দরী মনে করিস নিজেকে ?

“সায়রা দিশাকে এড়িয়ে যেতে যেতে বললো ”

_হে মনে করি।

“সায়রা চলে গেলো। দিশা কটমট করে তাকালো।
লম্বা সময় নিয়ে গোসল সেড়ে বের হলো সায়রা। তখন রাত নয়টা বাজে। সায়রার খিদে ও পেয়েছে। সাথে কাল সামর্থ্য বেগমের কাছে যাবে৷ খালি হাতে যাওয়া যাবে না। কিছু একটা বানাতে হবে। সায়রা গেলো আগে খেতে। টেবিলে খাবার রাখা। সায়রা সবগুলো বাটি খুলে দেখলো অল্প একটএ ভাত আর আলু ভর্তা রয়েছে সাথে একটু ডাল। কিন্তু পাশেই এক বাটিতে কসানো কিছুর ঝোল দেখা যাচ্ছে। সায়রা বুঝলো তার জন্য রাখা হয়নি। সায়রা বসে পড়লো টেবিলে। যা আছে তাই দিয়ে ই খেয়ে নিলো।
রোজ সায়রা এমন সময় বাড়ি ফিরে। তার জন্য কিছু ই তুলে রাখা হয় না৷ সে এসে পায় যা সবার খাওয়ার পর থেকে যায় তা ”

“ভাত খেয়ে সায়রা উঠে গেলো ঘরে কি আছে তা,খুজতে৷ যেহেতু কোকিলা বেগম শুয়ে পড়েছে৷ তার ঘরো আর যাওয়া যাবে না। সায়রা রান্না ঘরে গেলো।
দেখলো দুটো নারকেল আছে। সায়রার মাথায় বুদ্ধি এলো। নারু বানাবে। নিশ্চয়ই এটা সামর্থ্য বেগমের পছন্দ হবে। যেহেতু তিনি আগের দিনের মানুষ। সায়রা ঝটপট কাজ করলো। সুন্দর করে নারকেল পাক দিয়ে নারু বানালো একা একাই৷ এরপর একটা ছোট্ট বক্স তা ভরে নিজের ঘরে নিয়ে এলো। রান্না ঘরে ঢুকেছিলো সাড়ে নয়টায়। এখন এগারোটা বাজছে। তার মধ্যে কাল নতুন এক বাড়িতে যাবে। যদি মানুষ তার চেনা। তবুও কেমন যেনো লাগছে। সামর্থ্য বেগমের কথা ফেলতে পারেনি।
সায়রা বিছানায় শুয়ে ফোন হাতে নিলো। ফেসবুকে ঢুকতেই দেখলো জেরিনের পোস্ট। আর তাতে কমেন্ট করেছে নাফিস। পোস্ট টা এমন যে। “জীবন সঙ্গী হতে হবে মাছির মতো। হাজার বার তাড়িয়ে দিলেও ফিরে আসবে”
তাতে নাফিস কমেন্ট করেছে “পুরুষ মানুষকে মাছির সাথে তুলনা করায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি”
জেরিন আবার সেই কমেন্ট এর রিপ্লাই করেছে”আপনার তীব্র নিন্দার কেউ ধার ধারেনা ”
তাতে আবার নাফিস রিপ্লাই করেছে”আমি ইউনূস সরকারের কাছে বিচার দিলাম। যদি ইউনূস সরকার এর বিচার না করে তবে তাকে এর চরম মূল্য দিতে হবে ”
সায়রা এদের কান্ড দেখে শব্দ করে হেঁসে ফেললো। এরপর সায়রার মনে পড়লো তূর্য তার পোস্ট দেখেছে। তূর্য তো তার লিস্ট এ নেই। তাহলে ? মাথায় কিছু একটা ঘুরপাক খেলো। সায়রা গেলো তূর্যর আইডিতে
তূর্যর আর কোনো পোস্ট করেনি। সায়রা আইডি থেকে বের হতে গিয়ে হাতে লেগে রিকোয়েস্ট চলে গেলো তূর্যর কাছে। সায়রা সঙ্গে সঙ্গে সেটা আবার উঠিয়ে নিলো ”

“তূর্য কাজ করছিলো। পাশেই ফোন রাখা ছিলো। নোটিফিকেশন এর শব্দ আসায় ফোন হাতে নিতেই দেখলো সায়রা আজমীর আইডি থেকে রিকোয়েস্ট এসেছে। তূর্য একটু অবাক হলো। সে ফেসবুকে ঢুকলো। কিন্তু এখন আর রিকোয়েস্ট শো করছে না।
তার মানে দিয়ে আবার উঠিয়ে নিয়েছে। তূর্য ফোনটা রেখে আবার কাজে মন দিলো ”

“রাত একটা বাজে সায়রার ঘুম আসছে না। এদিক সেদিক করেও। হুট করেই মেসেজ আসার শব্দ হলো।
সায়রা ফোন হাতে নিয়ে দেখলো অনিকের মেসেজ ”

_হাই।

“সায়রা রিপ্লাই করলো। অনিক সঙ্গে সঙ্গে উওর ও দিলো। এরপর আবার মেসেজ দিলো ”

_এতো রাত হয়ে গেছে ঘুমাননি কেনো ?

“সায়রা রিপ্লাই করলো ”

_এমনিই।

“এরপর টুকটাক কথা হতে লাগলো। সায়রার কেনো যেনো অনিককে অনেক ভালো মানুষ মনে হয়। কথা বলার ধরন খুব ভালো। সায়রা অনিকের আইডি ও ঘুরলো। তবে অবাল হলো যখন দেখলো আইডিটা নতুন।কোনো ছবিও নেই। যা ছবি আছে তা ফেইক। অনিক তো এমন নয়। সায়রা এতে ভাবলো না৷ দুটোর সময় সায়রা ঘুমিয়ে পড়লো ”

“পরেরদিন সকাল আটটায় সায়রার ঘুম ভাঙলো।পিটপিট করে চোখ জোড়া খুললো। বাইরে থেকে কোকিলা বেগমের চেচামেচির আওয়াজ আসছে। সায়রার ইচ্ছে করছে না বিছানা ছেড়ে উঠতে। তবুও উঠলো। দরজা খুলে বের হতেই কোকিলা বেগম বলে উঠলো ”

_নবাবজাদি, ঘুম ভেঙেছে আপনার। বলি আজ তো ছুটি। আজ তো একটু বাড়ির কাজ করলেও পারো।

“দাঁত কিড়মিড় করতে করতে বললো কথাগুলো। এরপর চলে গেলো রান্নাঘরে। সায়রা কিছু বললো না। আবার ঘরে ফিরে গেলো। তার ফোন বাজছে। আননোন নাম্বার। সায়রা ধরার আগেই কল কেটে গেলো। সায়রার ফোনে টাকা নেই৷ কখনো থাকে ও না।
সে কাউকে কল করে না। তাকে ও কেউ কল করে না। টাকা রেখে কি হবে। সায়রা চলো গেলো ওয়াসরুমে। ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় বসে রইলো। কোকিলা বেগম রান্নাঘর থেকে বের হলে গিয়ে এক কাপ চা বানিয়ে আনবে। এরপর দেখা যাবে। যদি তূর্য না আসে তাহলে তো আর যেতে হবে না। এর মাঝেই সায়রার ফোন আবার বেজে উঠলো। সেই নাম্বার থেকেই কল এসেছে। সায়রা এবার ধরলো। পোন কানে নিতেই আরেক পাশ থেকে বিশাল এক ধমক ভেসে এলো ”

_এই ননসেন্স মেয়ে। কখন থেকে কল দিচ্ছি তোমাকে?

“তূর্যর কন্ঠ। ধমক শুনে সায়রা ভরকে গেলো। কিছু বলার আগেই আবার বললো”

_কথা বলছো না কেনো ? দাদি আমার মাথা খেয়ে ফেলছে। আমি ড্রাইভার পাঠিয়েছি। এক্ষনি চলে আসবে।

“সায়রা আমতা আমতা করে বললো ”

_কিন্তু স্যার আপনার তো আসার কথা,,,, ।

_আমি কাজে আছি। আসতে পারছি না। ড্রাইভার এর সঙ্গে চলে যাও। ও তোমার বাসার সামনের গলিতেই থাকবে।

“তূর্য কল কেটে দিলো। সায়রা তব্দা খেয়ে বসে আছে। তূর্য ওর নাম্বার পেলো কই ? পর মুহুর্তে মনে পড়লো সে তূর্যর অফিসে চাকরি করে। নাম্বার আর কই পাবে।
আবার মনে প্রশ্ন এলো। বাসার ঠিকানা জানলো কি করে ? সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়লো সেদিন তো তূর্য নামিয়ে দিয়ে গিয়েছিলো। সায়রা আর না ভেবে রেডি হতে গেলো। পাচ মিনিটে রেডি হয়ে নিলো। নীল রঙের জামা সাথে বেনি করেছে। আর নীল রঙের কাঁচের রেশমি চুড়ি থেকে চারটে চুড়ি পড়ে নিয়ে কাল রাতের বানানো নারুর বক্সটা ব্যাগে ভরে নিয়ে বের হলো। ওমনেই আলাদীনের দৈত্যর মতো হাজির হলো কোকিলা বেগম ”

_ছুটির দিনে আবার কই যাওয়া হচ্ছে শুনি ?

_আপনাকে কেনো বলতে হবে। পথ ছাড়ুন।

_আমারে বলবি কেন ? আমি কি কিছু বুঝি না নাকি।
তোর এক মাসের মধ্যে একটা ব্যবসথা করুম।

“সায়রা সেসব কানে না নিয়ে বের হয়ে গেলো। রাস্তায় বের হয় কিছুদূর এগিয়ে যেতেই দেখলো গাড়ি দাড়িয়ে আছে। সায়রা গিয়ে উঠলো গাড়িতে।
গাড়ি চলছে। সায়রা পেছনের সিটে বসে আছে। প্রায় বিশ মিনিট পর গাড়ি এসে থামলো একটা দুতলা ভবনের সামনে। বিশাল গেট। সেখান দিয়ে গাড়ি ঢুকলো। সায়রা দেখলো খুব সুন্দর একটা বাড়ি। বাড়ির সামনে বড় বড় করে লিখা বৃষ্টি বিলাস। সায়রা বাড়ির মেইন দরজার সামনে এগিয়ে দাড়ালো। কলিং বেল চাপতেই। দরজা খুলে দিলো হাসিনা। সায়রা তাকে চেনে।। হাসিনা তাকে দেখে মুচকি হাসলো। ভেতরে যেতে বললো। সায়রা ভেতরে গেলো। সামর্থ্য বেগম তখন সোফায় বসা। সায়রাকে দেখেই তিনি অনেক খুশি হলেন। সায়রা এগিয়ে গেলো তার দিকে। পাশে গিয়ে বসলো ”

_কেমন আছেন দাদি ?

“সামর্থ্য বেগম সায়রার হাতে হাত রেখে বললো ”

_এই যে এখন তুই এসেছিস। আমার গল্প করার মানুষ হয়েছে। এখন ভালো আছি।

“সায়রা মুচকি হাসলো। এরপর ব্যাগ থেকে নারুর বক্সটা বের করে এগিয়ে দিলো সামর্থ্য বেগমের দিকে ”

_নিন,আপনার জন্য এনেছি। নিজ হাতে বানিয়ে।

_কি এইটা ?

_খুলেই দেখুন৷

“সামর্থ্য বেগম খুললেন। নারু দেখে তিনি আবার সায়রার দিকে চেয়ে অবাক হয়ে বললেন ”

_তুই বানিয়েছিস ?

_হু। আপনার পছন্দ হয়নি ?

_আমি গ্রামের মেয়ে বুঝলি। শহরে বিয়ে হওয়ার পর আর নারু খাওয়া হয়নি।

“সামর্থ্য বেগম একটা নারু মুখে দিলেন। সায়রা চেয়ে আছে তার দিকে। সামর্থ্য বেগম জানালেন এটা খুব মজা হয়েছে। তিনি ওটা তার কাছেই রেখে দিলেন।
সামর্থ্য বেগম একজনকে ডেকে নাস্তা দিতে বললো।
নাস্তা দিয়ে গেলে দুজনে মিলে খেলো।
এর একটু পরেই তূর্য আর নাফিস ঢুকলো বাসায়। সামর্থ্য বেগম তখন নারু খাচ্ছিলেন আর সায়রাকে কিছু পুরোনো ছবি দেখাচ্ছিলেন। তূর্য বাড়িতে ঢুকতেই চোখাচোখি হলো সায়রার সাথে। তূর্য একটা কালো জিন্স আর আকাশি রঙের টি শার্ট পড়ে আছে। হাফ হাতা হওয়াতে সায়রার চোখে পরলো তূর্যর পেশিবহুল হাত। সায়রা চোখ সরিয়ে নিলো।
নাফিস এসে আরেক পাশে বসতে বসতে বললো ”

_সায়রা খাতুন। ভালো আছো ?

“সায়রা মাথা নাড়ালো। নাফিস দেখলো টেবিলের উপর একটা বক্স রাখা। নাফিস একটু ঝুকে এসে তাকিয়ে বললো ”

_এইটা কি ? নারু।

_খেয়ে দেখ। এই তূর্য তুই ও নে।

“তূর্য তখন ডাইনিং টেবিলের সামনে দাড়ানো। পানি খাচ্ছে। নাফিস নারু দেখে লোভ সামলাতে না পেরে একটা নিয়ে মুখে দাও সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”

_সায়রা খাতুন৷ ইউর নারু ইজ ভেরি ভেরি মজা। আই পছন্দ ইট।

“সায়রা হেসে ফেললো। নাফিস আরো দুটো নিলো।
সামর্থ্য বেগম তূর্যকে আবার বললো ”

_তূর্য তুই ও একটা নে না।

_আমি সুগার খাই না। ওটাতে সুগার আছে।

“সামর্থ্য বেগম কিছু বললো না। নাফিসকে বললো গিয়ে নাস্তা করে নিতে। তূর্য নিজের খাবার তার ঘরে পাঠিয়ে দিতে বলে চলে গেলো। বসে রইলো নাফিস সায়রা আর সামর্থ্য বেগম।
রান্না ঘরে রান্না বারা চলছে আজ দারুন ভাবে। সামর্থ্য বেগম নাফিসকে বললো ”

_ওই ফাজিলটা রুমে গিয়ে বসে আছে। তুই ওকে নিয়ে বাড়িটা ঘুরে দেখা নাফিস।

_থাক দাদি। বিকেলে দেখবো।

“দুপুরের খাওয়ার সময় তূর্য নামলো। সামর্থ্য বেগম বসেছে তার পাশে সায়রা। তার উল্টো দিকেই নাফিস আর তূর্য। খাবারের আয়েজন দেখে সায়রা হতবাক।
কতো কি রান্না করেছে। গরুর মাংস থেকে শুরু করে সব। সামর্থ্য বেগম নিজেই সায়রার প্লেটে ভাত তুলে দিলো। এরপর রোস্ট। ডিম। সায়রার খিদে তো পেয়েছে। কিন্তু সামনে তূর্য বসে। সে এখনো কোনো খাবার নেয়নি। নাফিস নিজের মতো খাচ্ছে আর রান্নার প্রসংশা করছে।
সায়রা দেখলো একটু পরেই একহন এসে তূর্যর খাবার
প্লেট দিয়ে গেলো। তাতে যা যা আছে তা সায়রা দেখছে
সেদিন তো সালাদ খেতে দেখেছিলো। আজ প্লেটে কেমন লাল লাল রঙের ভাত। তাও অল্প একটু। সাথে কিছু সবজি তাও বোধহয় সেদ্ধ। আর একটা চিকেন লেগপিস। তাও কেমন সাদা সাদা করে ভাজা। সায়রা মনে মনে ভাবলো। গরুর মাংস কষা আর সাদা ভাত রেখে কেউ এসব খেতে পারে কি করে কে জানে।
সামর্থ্য বেগম সায়রাকে নিজে বেরে বেরে খাওয়ালেন।
তূর্যর খাওয়া হতেই সে উঠে চলো গেলো ”

“বিকেলে সামর্থ্য বেগম সায়রাকে নিজের ঘরে নিয়ে গেলো। নাফিস সোফার উপরে টানটান হয়ে শুয়ে পড়েছে। সামর্থ্য বেগমের ঘরে যেতেই সায়রার চোখে পড়লো একজন মহিলার ছবি। যিনি দেখতে অনেক সুন্দর। সায়রা জিজ্ঞেস করলো ”

_দাদি এইটা আপনার ছবি ছিলো?

“সামর্থ্য বেগম ছবিটার দিকে চেয়ে বললো ”

_এটা তূর্যর মায়ের ছবি।

_উনি কি,,,,,,।

“সায়রা কথা শেষ করার আগেই সামর্থ্য বেগম বললো ”

_মারা গেছে। অনেক বছর আগে। এই ছবিটা ছাড়া আর কিছু নেই ও আমার কাছে।

_তূর্য স্যার এর বাবা কোথায় তাহলে ?

_জানিনা আমি৷ আছে কোথাও। আবার মরে ও যেতে পারে।

“সায়রা একটু অবাক হলো। তূর্য স্যার বাবা তো সামর্থ্য বেগমের ছেলে। তাহলে নিজের ছেলে বিষয়ে তিনি এতো উদাসীন কেনো ”

_উনি তো আপনার ছেলে দাদি তাহলে,,,,, ।

“সামর্থ্য বেগম কেমন করে যেনো হেসে বললো ”

_শুধু জন্ম দিয়েছি। আমার ছেলেকে আমি আমার আদর্শে গড়তে পারি নাই। আমার জীবনে তূর্য ছাড়া কিছু ই নেই। তুই যা বাড়িটা ঘুরে দেখ একটু,, ।

“সায়রা বুঝলো সামর্থ্য বেগম এ বিষয়ে কথা বলতে চায়ছে না। সামর্থ্য বেগম একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য শুয়ে পড়লেন৷ সায়রা বের হলো। বাড়িটা একটএ ঘরে দেখা দরকার। বািরে এসে নাফিসকে ডাকতে গেলে দেখলো সে ও গভীর ঘুমে সোফায় শুয়ে। সায়রা একাই ঘুরতে লাগলো। নিচের তলায় তেমন কিছু নেই। সায়রা দু তলায় উঠলো। দু তলায় তিনটে রুম। এরপর ই ছাদে যাওয়ার সিড়ি। সায়রার ইচ্ছে করলো রুমগুলো ঘুরে দেখতে। সায়রা একটা রুমের দরজা খুললো। ভেতরে অনেক কিছু। স্টোর রুম এটা৷অনেক অপ্রোয়জনীর জিনিস। সায়রা বের হয়ে এলো।
এরপর মাঝের রুমটার দিকে গেলো। সেটা একটু চাপানো ছিলো। ভেতরে আলো দেখা যাচ্ছে। সায়রা দরজা ঠেলে উঁকি দিতেই ওর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।
তূর্যকে দেখলো। সাদা বিছানায় উপূর হয়ে খালি গায়ে শুয়ে আছে। পিঠ দেখেই সায়রা দরজা চাপিয়ে দিলো। কিন্তু শব্দ করে দরজা লাগলো তাড়াহুড়োয়। সঙ্গে সঙ্গে একটা আওয়াজ এলো”

_কে?

“বুকটা ধুকপুক করছে সায়রার। কি করছে সে। যদি তূর্য দেখে নিতো।বুঝে তো গেছে কেউ ছিলো।যদি দেখে নিতো কি লজ্জাজনক অবস্থা হতো। সায়রা ভো দৌড় দিলো একটা। ছাদের সিড়ির কাছে গিয়ে। জোড়ো জোড়ো নিঃশ্বাস ফেললো। এরপর উঠলো ছাদে। ছাদে বাগান করা। ফুলের বাগান। কয়েক জাতের কাঠগোলাপ ও দেখা গেলো। সায়রা ঘুরে ঘুরে দেখলো।অনেকটা সময় একা বসে রইলো। এরপর নিচে নেমে এলো”

“নিচে নেমে দেখলো সামর্থ্য বেগম বসার ঘরে। নাপিস ও উঠে গেছে। সায়রাকে দেখেই সামর্থ্য বেগম পাশে বসতে বললেন। সায়রা গিয়ে বসলো। সামর্থ্য বেগম একজনকে চা বানিয়ে আনতে বললো। সায়রা দেখলো তূর্য নামছে সিড়ি দিয়ে।সায়রা সামর্থ্য বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললো ”

_আমি চা বানিয়ে আনি দাদি।

_না না। তুই বোস।

_আমি বানিয়ে আনছি।

“সায়রা তাড়াহুড়ো করে উঠে গেলো। যেনো চা বানাতে না পারলে বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে। তূর্য ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো। এসে নাফিসের পাশে বসলো
নাফিস তূর্যর কানে কানে গিয়ে বললো ”

_স্যার, সায়রা খাতুন অতি উৎসাহিত হয়ে চা বানাতে গেছে। দোয়া করেন যাতে রুহানি ম্যাডামের মতো অখাদ্য বানিয়ে না আনে। বলেন আমিন।

“তূর্য কিছু বললো না। তার মাথায় অন্য কিছু ঘুরছে।
একটু পরে সায়রা চার কাপ চা বানিয়ে নিয়ে এলো।
তূর্য তখন ফোন দেখছে। সায়রা টেবিলের উপর চায়ের ট্রে রাখলো। সামর্থ্য বেগমকে এক কাপ দেওয়া হলো। নাপিস নিজে এক কাপ নিলো। আর সায়রাকে উদ্দেশ্য করে বললো ”

_স্যারকে ও দাও।

“সায়রা কাপটা তুলে তূর্যর দিকে এগিয়ে দিলে তূর্য সেটা নিয়ে শুধু ছোট করে বললো ”

_ধন্যবাদ।

“সায়রা নিজেও চা নিয়ে সামর্থ্য বেগমের পাশে বসলেন
সামর্থ্য বেগম কথা বলতে বলতে হুট করে বললেন ”

_তোর বাসায় কে কে আছে ?

“সায়রা চুপ হয়ে গেলো। কি বলবে সে এবার। তার নিজের বলতে কেউ নেই।শুধু কয়েকটা মানুষ একটা তথাকথিত সম্পর্কে আছে। মা, ভাই, বোন, বাবা। আদৌও কি তারা সায়রার কিছু হয়। সায়রাকে চুপ থাকতে দেখে তূর্য চোখ তুলে তাকালো। সায়রা মাথা নিচু করে বসে আছে। সায়রা আস্তে করে জবাব দিলো ”

_সবাই আছে। মা,বাবা,ভাই,বোন,সবাই।

“সায়রা কথাটা বললেও মুখে কেমন মলিনতা ছিলো। তূর্য বিষয়টা খেয়াল করলো।
সন্ধা নেমে এসেছে। সায়রার এবার বাড়ি ফেরার পালা
সামর্থ্য বেগম নিজের বুকে জড়িয়ে নিলেন সায়রাকে
নাফিস আর তূর্য দাড়িয়ে। নাফিস অতি দুঃখ নিয়ে তূর্যকে বললো ”

_স্যার আমার না ভীষণ কান্না পাচ্ছে।

_কেনো ?

_এই যে কতো কষ্টদায়ক মুহুর্তে। আহারে। মনে হচ্ছে বাংলা ছবির মেয়ে বিয়ের শেষ দৃশ্য।

“তূর্য চোখ ছোট ছোট করে তাকালো নাফিসের দিকে। সায়রা সরলে। নাফিস হেঁটে গিয়ে সামর্থ্য বেগমকে জড়িয়ে ধরে বললো ”

_দাদি,,, আমাকে ও সায়রা খাতুনের মতো বিদায় দাও। না হলে আমি কান্না করবো হু।

“সামর্থ্য বেগম হেসে ফেললো। তূর্য বললো ”

_হয়েছে নাফিস। অভিনয় শেষ করো।

_নাহ্ স্যার আমাকে বাধা দেবেন না। আমার প্রেমের সমাধি ভেঙে বুকের শিকল চিরে পাখি উড়ে গেছে।

_তোমার আবার প্রেম হলো কবে ?

_হয়েছে। কিন্তু আমি বলবো না কবে হয়েছে ?

_কেনো?

_কারন আমার সরম করে।

“ওরা বের হলো এক সাথে। নাফিস নিজের বাইক নিয়ে বের হয়ে গেলো। তূর্য নিজের গাড়ি বের করলো। সায়রা গেটের সামনে দাড়িয়ে। তূর্য গাড়ি এনে গেটের সামনে দাড় করালো। সায়রা পেছনে উঠতে গেলে তূর্য শুধু এইটুকু বললো ”

_সামনে বসো।

“সায়রা সামনে গিয়ে বসলো। তূর্য গাড়ি স্টার্ট দিলো। সন্ধা নেমেছে। এখনো পুরোপুরি অন্ধকার হয়নি। সায়রা বাইরে দেখছে। চুপচাপ বসে। গাড়ি চলছে।
তূর্য একটু পর পর সায়রাকে দেখছে। এর মাঝে তূর্যর ফোন বেজে উঠলো। রুহানির কল। তূর্য কেটে দিলো।
এরপর সায়রার দিকে না তাকিয়ে ই বলে উঠলো ”

_তখন তুমি ই ছিলে তাই না?

“সায়রা চমকে উঠলো ”

_কখন ?

_বিকেলে। আমার ঘরে কি দেখতে গিয়েছিলে ?

“সায়রা আমতা আমতা করে বললো ”

_আমি ছিলাম না। আমি যাইনি তো।

_একজন বেগানা পুরুষ এর ঘরে দরজা খুলে ও ভাবে উঁকি ঝুঁকি দেওয়া কি ঠিক।

“সায়রা ভীষণ লজ্জা পেলো। এখনো চোখে চোখে ভাসছে তূর্যর পিঠের অংশ। ইচ্ছে করছে গারি থেকে নেমে যেতে। যখন বুঝেছে ই তাহলে এভাবে বলে লজ্জা দেওয়ার কি আছে ”

_আপনার ভুল হচ্ছে। আমি যাইওনি৷ আমি কিছু দেখিওনি।

“তূর্য মুখচেপে হেসে বললো ”

_আমি তো বলিনি তুমি কিছু দেখেছো। এই সত্যি বলো মেয়ে তুমি কি দেখেছো?

_গাড়ি থামান আমি নামবো।

_তুমি আমার বউয়ের হক নষ্ট করেছো। আমি কিন্তু তোমার মাফ করবো না।

_গাড়ি থামান।

_আরো পাঁচ মিনিট।

“সায়রা গাল ফুলিয়ে বসে আছে। তূর্য গাড়ি চালাচ্ছে।
পাঁচমিনিটের মধ্যে সায়রার বাসার গলির সামনে গাড়ি থামলো। সায়রা গাড়ি থামতেই সায়রা নেমে গেলো সঙ্গে সঙ্গে। যেনো দৌড়ে পালাতে পাড়লে বাঁচে। যতো অঘটন সব এই লোকের সঙ্গে ই কেন হয় কে জানে।
সায়রা যেতেই তূর্য দেখলো সায়রা ওর ব্যাগ ফেলেই চলে গেছে। তূর্য গাড়ি থেকে নামলো ব্যাগটা নিয়ে ”

“সায়রা বাড়িতে ঢুকলো। গেট খুলে দিলো দিশা। সায়রা ভেতরে ঢুকতেই কোকিলা বেগম তেরে এলেন। এসেই সায়রার চুলের মুঠি চেপে ধরলেন ”

_এই হারামজাদি। তুই কি আমার মানসম্মান রাখবি না। রাতবিরাতে বাড়ি ফিরিস। লজ্জা নাই তোর। যা আমার বাড়ি থেইকা বাির হইয়া যা।

“সায়রা চুল ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো আর চিৎকার করে বলতে লাগলো ”

_আমি রাত-বিরেতে বাড়ি ফিরলে আপনার কি৷ আপনি আমার কে?

_তোর বিয়া ঠিক করছি আমি। বিয়া কইরা বিদায় হবি৷

_মরে গেলেও করবো না।

“কোকিলা বেগম কিছু বলতে যাবে তখনই গেটে শব্দ হলো। দিশা গেটের সামনেই দাড়িয়ে ছিলো। সে গেট খুলে দিতেই দেখলো সুন্দর একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে
তূর্য ব্যাগ দিতে এসেছিলো। গেট খুলতেই তার চোখ গেলো ভেতরে। সায়রার চুল চেপে ধরে আছে এখনো কোকিলা বেগম। তূর্যকে দেখেই চুল ছেড়ে দিলো। সায়রা লজ্জায় মাটিতে মিশে যাচ্ছে। এ অবস্থায় তূর্য তাকে দেখলো। কি মনে করবে সে। তূর্য ভেতরে ঢুকলো না দিশাকে সায়রার ব্যাগটা এগিয়ে দিলে সে নিলো। তূর্য বুঝলো সায়রা লজ্জা পাবে। তাদের পারিবারিক বিষয়ে সে কিছু ই জানে না। ব্যাগটা দিয়ে তূর্য চলে এলো। তূর্য যেতেই কোকিলা বেগম অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে বললো ”

_বড়লোকের পোলার লগে থাকতে যাস বুঝি। এই চাকরি করস তুই। মা*গী হইছোস।

“সায়রা নিজের রাগ কন্টোল করতে না পেরে কোকিলা বেগমকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলেন

_হে হয়েছি আমি মা*গী। তাতে আপনাদের কি? কি বলুন৷ আমি যা খুশি তাই হবো। আর আমার বিষয়ে নাক গলাতে আসলে মেরে ফেলবো।

” সায়রা দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেলো ”

“তূর্য গাড়ি চালাচ্ছে। কিন্তু মস্তিসকে তার ওই এক দৃশ্য ঘোরপাক খাচ্ছে। মেয়েটা ঠিক নেই। কিছু একটা তো সমস্যা আছেই। কেউ নিজের মেয়ের সাথে এমন করতে পারে। পর মুহুর্তে তূর্যর মনে পড়লো নিজের কিছু কথা। তূর্যর হাত কাঁপতে শুরু করলো। গাড়ি চালাতে ভীষণ বেগ পেতে হচ্ছে। সে গাড়ি এক জায়গায় থামালো। বুকের মধ্যে অস্থির লাগছে। সায়রার জন্য। নাকি নিজের জন্য। চোখের সামনে শুধু সায়রার অসহায় মুখটা ভেসে উঠলো। তূর্যর বুকে ব্যথা হলো তীব্র। সে গাড়ির সিটেই হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো ”

চলবে,,