#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#১৬
“সারারাত না ঘুমিয়ে সকাল সকাল সায়রা অফিসে গেলো। চোখ মুখ ফুলে আছে। নাস্তা করেনি৷ সায়রা অফিসে এসেই জেরিনের কাছে শুনতে পেলো তূর্য অফিসে কেন্টিন খুলেছে। তাতে সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার পাওয়া যাবে। সায়রার তাতে খুশি হওয়ার কথা৷ কিন্তু সে হলো না। নাস্তা ও করলো না৷ সে কয়েকটা ফাইল নিয়ে তূর্যর কেবিনের দিকে যেতে যেতে মনে এলো৷ কাল সন্ধার দৃশ্য। তূর্য তার দিকে চেয়ে ছিলো। কেমন করে যেনো। সায়রা দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই দেখলো তূর্য বসে আছে। সায়রাকে দেখে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো ওর দিকে। সায়রার চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। সায়রা তূর্যর দিকে না তাকিয়ে ই ফাইলগুলো টেবিলে রেখে চলে আসতে নিলে তূর্য বললো ”
_দাড়াও।
“সায়রা দাড়িয়ে গেলো। তূর্য চেয়ার থেকে উঠে এসে সায়রার সামনে দাড়ালো। সায়রা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। তূর্য কিছুটা সময় চুপ থেকে বললো ”
_রাতে ঘুমাওনি ?
_জি, ঘুমিয়েছি।
“সায়রার কন্ঠ ও কেমন ভেঙে ভেঙে গেছে। তূর্যর ইচ্ছে করছে সায়রাকে বসিয়ে সব কথা জিজ্ঞেস করতে। একটু সান্তনা দিতে৷ কিন্তু তাদের সম্পর্ক এমন নয় যে এ কাজ করবে। তূর্য আবার বললো ”
_খাওনি কিছু। নতুন কেন্টিন খুললাম তোমাদের জন্য।
_না খাইনি। পরে খাবো। আসি আমি। দরকার হলে ডাকবেন৷
“সায়রা চলে যেতে নিলে তূর্য না চাইতে ও এক অকাজ করে বসলো। সায়রার হাত চেপে ধরে জায়গা থেকে নড়তে ও দিলো। সায়রা অবাক হয়ে চেয়ে রইলো। তূর্য সায়রার চোখের দিকে চেয়ে বললো ”
_পালাতে চাইছো তুমি? তোমাকে আমার রহস্যময়ী লাগে। আমি তোমার সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক। যা তুমি দেখাও তা তুমি নও। আর আমি তোমাকে জানবো সায়রা আজমীর। এটা তুমি সিউর থাকো।
“কথাটা বলে সায়রার হাত ছেড়ে দিলো তূর্য। সায়রা কিছু না বলেই বেরিয়ে এলো কেবিন থেকে।
তূর্য ছোটবেলা থেকেই বপশ কৌতূহলি। আর এখন সে
সায়রার বিষয়ে জানতে মরিয়া।
সায়রা কেবিন থেকে বের হয়ে এসে সোজা নিজের ডেস্কে এসে বসে পড়লো। অস্থির লাগছে। তূর্যর কথাগুলে মাথায় খেলছে। সে সায়রার বিষয়ে জানতে ইচ্ছুক বলে কি বোঝাতে চাইলো। সাশরা কি আসলেই রহস্যময়ী। কিন্তু তা তো সে নয়। সে সাধারণ। তার জীবনে রহস্য নেই। কিচ্ছু ই নেই ”
“সায়রার হাতে কাজ নেই। সে মন খারাপ করে বসে আছে ডেস্কে। জেরিন জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে। কিন্তু সায়রা কিছু বলছে না। একটু পর আবার নাফিস এসে হাজির হলো গান গাইতে। সায়রার দিকে চেয়ে আবার আরেক গান শুরু করলো ”
“ও সায়রা খাতুন ও সায়রা খাতুন তুমি অপরাধী রে”
“তোমার মনের উপর ঠাডা হালাইছে কোন বেডারে”
“সায়রা তাতে ও কিছু বললো না। চুপ করে আছে। জেরিন নাফিসকে ধমক দিয়ে বললো ”
_এই আপনি জানতো৷ এমনিই মেয়েটার মন খারাপ। আবার আপনি মজা করছেন।
_তুমি চুপ থাকো বেডি।
_আপনি,,,,,,,।
_হুপ।
“নাফিস সায়রার দিকে তাকালো৷ করুন স্বরে বললো ”
_কি হয়েছে আপু। বলো আমারে।
_আমার ভালো লাগছে না নাফিস ভাই। প্লিজ মজা কইরেন না।
“জেরিন এমনভাবে নাফিসের দিকে তাকালো যেনো সে জিতে গেছে। নাফিস ঙেংচি কেটে চলে এলো।
এরপর সোজা তূর্যর কেবিনে গেলো। মনটা ভার করে
তূর্য নাফিসের দিকে চেয়ে মন খারাপ দেখে জিজ্ঞেস করলো ”
_কি হয়েছে ?
_মনটা ভালো নাই স্যার।
_তোমার মনের আবার কি হলো ? কারোই দেখছি আজ মন ভালো নেই।
_আমার মমে হয় আমি একটু বাচাল টাইপের তাই না স্যার ?
“তূর্য কাজ করতে করতে একবার তাকালো নাফিসের দিকে। এরপর বললো ”
_একটু না। তুমি অনেক বড় একজন বাঁচাল।
“নাফিসের মুখটা চুপসে গেলো। সে আর বসে না থেকে বের হয়ে গেলো। আজ তার দিন ই খারাপ। সবাই তাকে মুখের উপর অপমান করছে। বিষয়টা মানা যাচ্ছে না ”
“দুপুরের সময় সায়রা গেলো খাবার আনতে। নতুন কেন্টিন। সবাই অনেক উৎসাহ নিয়ে ই খাবার নিচ্ছে।
সায়রা আর জেরিন গেলো। ওয়ান টাইম প্লেট নিয়ে গিয়ে দেখলো অনেক রকমের খাবার ই আছে। তবে স্পেশাল আইটেম হলো গরুর মাংস কষা আর সাদা ভাত। সায়রা এটা দেখে খুশি হলো কিছুটা। সায়রা গিয়ে ভাত আর গরুর মাংস নিলো৷ এরপর জেরিন আর সে এক সাথে গিয়ে বসে খেতে লাগলো ”
“তূর্য আজ অফিসেই ছিলো। যে মিটিংটা ছিলো সেখানে রুহানি গিয়েছে। তূর্য ঠিক করলো আজ দুপুরের খাবারটা সে কেন্টিনে বসেই খাবে। তাই নাফিসকে নিয়ে গেলো সেদিকে। কেন্টিনে ঢুকতেই চোখে পড়লো সায়রাকে। ভাত খাচ্ছে। তাও হাত দিয়ে মেখে। মুখে এক লোকমা দিতে যাবে তখনই নজরে এলো তূর্য। সে কেন্টিনে ঢোকার দরজায় দাড়িয়ে আছে
সায়রা চোখ সরিয়ে নিলো।
তূর্য ও নিজের মতো ভেতরে ঢুকলো। যারা খাচ্ছিলো সবাই আড় চোখে তূর্যকে দেখছে।নাফিস পেছন পেছনে হাটছে। তূর্যকে দেখে কেন্টিনের দায়িত্বে থাকা একজন এগিয়ে এসে তূর্যকে সব খাবার দেখাতে লাগলো। হুট করেই লোকটা তূর্যকে বললো ”
_স্যার আপনার স্পেশাল গরুর মাংস কষা আর সাদা ভাত ও রেখেছি।
“কথাটা শোনা মাএই নাফিসের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো ”
_কিন্তু তূর্য স্যার তো গরুর মাংস ই খায় না। স্যার আপনি সত্যি ই বলেছেন?
_নাফিস,,,,,,!
_সরি।
“নাফিস চুপ হলে ও। ওর মাথায় হিসাব মেলাচ্ছে। যে লোক গরুর মাংস খায় ই না। সে কেন স্পেশাল ভাবে গরুর মাংসের কথা বলবে। ততক্ষণে দেখলো তূর্য একটা প্লেট নিয়েছে। তাতে চিকেম কষার কয়েক টুকরো নিয়েছে সাথে শসার সালাদ।
নাপিস হিসাব বাদ দিয়ে। আগে ভাত গরুর মাংস মুরগীর মাংস নিয়ে নিলো। ওপর তূর্য আর সে এক টেবিলে গিয়ে বসলো। সে টেবিলের আরেক পাশের টেবিলে সায়রা আর জেরিন বসে খাচ্ছে।
তূর্য নিজে খেলো কম। সায়রার খাওয়া দেখলো বেশি। গরুর মাংসের স্বাদ যে এতো তা সায়রার খাওয়া দেখেই আন্দাজ করার সম্ভব ”
“সায়রার মনটা শেষ বেলায় একটু ভালো হলো। তবে সমস্যা হলো আরেক জায়গায়। অফিস ছুটি হলে ও তূর্য কিছু ফাইলের কাজ দিলো সায়রাকে। তাতে আরো এক ঘন্টা বেশি সায়রার অভার টাইম করতে হবে। ভাগ্য ভালো ছিলো টিউশনিটা বন্ধ ছিলো। সায়রার কোনো সমস্যা নেই কাজ করতে। বাড়ি যতো দেড়ি করে যাবে ততো ভালো। সায়রা কাজ করছিলো। পুরো অফিসে তখন তেমন কেউ নেই। সায়রা দ্রুত কাজ শেষ করে তূর্যর কেবিনে নিয়ে গেলো। তূর্য রেখে যেতপ বললো। মূলত তূর্যর আরো আগে চলে যাওয়ার কথা৷ কিন্তু সে বসে ছিলো।
সায়রা নিজের ডেস্কে এসে ব্যাগ নিয়ে বের হলো। সেই মুহুর্তে তূর্য ও কেবিন থেকে বের হলো। সায়রা আগে হেঁটে যাচ্ছে। তূর্য পিছু পিছু। লিফট এর সামনে এসে সায়রা দাড়ালো। একটু পরেই তূর্য সায়রার থেকে এজ কদম পিছে সোজা হয়ে দাড়িয়ে রইলো। সায়রা একবার পেছন ফিরে চেয়ে বিরবির করে বললো ”
_লম্বা বেক্কেল ।
“তূর্য পর মুহুর্তে পেছন থেকে বলে উঠলো ”
_তাহলে কি তোমার মতো লিলিপুট হওয়ার ছিলো।
“সায়রার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো। শুনলো কি করে কথাটা। পর মুহুর্তে লিফট খুলে গেলো। সায়রা গুটিগুটি পায়ে ভেতরে গিয়ে দাড়ালো। তূর্য ও ঢুকলো। দুজনেই পাশাপাশি দাড়িয়ে। সায়রা চপ করে আছে।
তূর্য বললো ”
_তুমি নিজেকে কি মনে করে বলো তো ?
“সায়রা তূর্যর দিকে চেয়ে বললো ”
_হুররাম সুলতান।
“তূর্য ভ্রু কুঁচকে ফেললো ”
_এটা আবার কে ?
_চেনেন না?
_চিনলে কি তোমাকে জিজ্ঞেস করতাম নাকি।
_হুররাম সুলতান হচ্ছে অটোমেন সাম্রাজ্যের রানী।
“সায়রার বলা শেষ হতেই লিফট খুলে গেলো। সায়রা বেরিয়ে গেলো। তূর্য ও পেছন পেছন আসতে আসতে বললো ”
_তুমি নিজেকে রানী মনে করো নাকি।
_করতে দোষের কি। একদিন আমি ও ওমন হতে পারি।
“তূর্য সায়রার কথার আগা মাথা কিছু ই বুঝলো না। ওরা যখন অফিসের নিচে নামলো তখন সাড়ে সাতটা বাজে। অলরেডি রাত। সায়রা গিয়ে গেটের সামনে দাড়ালো। তূর্য পাশে এসে দাড়িয়ে বললো”
_রাত হয়ে গেছে। গাড়িতে উঠো। বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি।
“সায়রা বাস পাবেনা এখন। ভাবছে রিকশায় করে চলে যাবে। তূর্যর কথা শুনে আবার কাল রাতের কথা মনে পরলো। সায়রা বললো ”
_নাহ্ আমি রিকশায় করে চলে যাবো।
_কেনো ? গাড়িতে গেলে কি সমস্যা?
“সায়রা কিছু ভেবে পেলো না কি বলবে। তাই বলে বসলো ”
_যার সাথে আমার কোনো কাছের সম্পর্ক নেই তার গাড়িতে যাওয়া ঠিক না৷ রিস্ক থাকে।
“তূর্য ভ্রু কুঁচকে চেয়ে থেকে বললো ”
_রিকশাওয়ালার সাথে বুঝি তোমার গভীর সম্পর্ক আছে।
“সায়রা অবাক হয়ে বললো ”
_ছি ছি তা হতে যাবে কেন?
_তাহলে তাদের গাড়িতে করে যাবে কোনো?
_ওটা গাড়ি না রিকশা।
“তূর্য দু কদম এগিয়ে এসে সায়রার দিকে একটু ঝুঁকে দাড়ালো ”
_গাড়িতে উঠো। নাহলে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দেবো।
“কথাটা বলে তূর্য গাড়িতে গিয়ে উঠে বসলো। সায়রার ইচ্ছে করছে তূর্যর নাকটা ফাটিয়ে দিতে। চাকরি নেওয়ার হুমকি দেওয়া। খারাপ লোক একটা।
সায়রা ও গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। তূর্য ঠোঁট চেপে হাসলো। তূর্যর সাথে পাঙ্গা। গাড়ি চলতে শুরু করলো”
“আজ সায়রা রাস্তায় ই তূর্যকে গাড়ি থামাতে বললো।
বাড়ি পর্যন্ত গেলে কোকিলা বেগমের চোখে পরবে। কিন্তু তূর্য গাড়ি থামিয়ে ই জিজ্ঞেস করলো ”
_এখানে থামতে বললে কেনো? তোমার বাসা তো আরো ভেতরে।
“সায়রা গাড়ি থেকে নামতে নামতে বললো ”
_বাকিটা আমি হেঁটে ই যেতে পারবো। ধন্যবাদ।
“সায়রা হেটে চলে গেলো। তূর্য ও গাড়ি ঘুরিয়ে নিজের গন্তব্যে চলে গেলো ”
“বাড়ি ফিরে আজ বাড়ির পরিবেশ বেশ ঠান্ডা দেখলো সায়রা। কোকিলা বেগম নিজের ঘরে বোধহয়। সায়রা সোজা নিজের ঘরে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে নিজের জামাকাপড়গুলো গুছিয়ে রাখছে সায়রা এমন সময় ঘরে ঢুকলো দিশা। সচারাচর দিশা সায়রার ঘরে আসে না। আজ বেশ ভদ্রভাবে এসে বসলো। সায়রা নিজের কাজ করে যাচ্ছে। দিশা বললো ”
_তোকে একটা কথা,জিজ্ঞেস করবো ?
_কি কথা?
_কাল যে ছেলেটা তোর ব্যাগ দিতে এসেছিলো উনি কে রে ?
“কথাটা শুনে সায়রার ভ্রু কুঁচকে বললো ”
_কেন?
_বল। বলতে সমস্যা কি ?
_অফিসের বস।
_মালিক নাকি অফিসের?
_হু।
“দিশার চোখ দুটো চকচক করে উঠলো। ছেলেটা বেশ সুন্দর। যদি নামটা জানা যায় সায়রার থেকে। জমে যাবে একেবারে। কৌশলে দিশা জিজ্ঞেস করলো ”
_নাম কি তোর বসের ?
“সায়রা জানে দিশা কেমন মেয়ে। ওর চরিত্র কেমন৷ তাই নামটা বললো না ”
_জানিনা। বের হ। আমি রেস্ট করবো।
“দিশার সায়রার কথাটা একটু ও পছন্দ হলো না। দিশা মুহুর্তে রেগে গিয়ে বললো ”
_জানিস না নাকি বলবি না। হাত ছাড়া হয়ে যাবে বলে।
_মুখ সামলে কথা বল। আমি তোর বড়।
_তুই মুখ সামলে কথা বল। ওই ছেলের সাথে কি তোর অবৈধ সম্পর্ক,,,,,।
“কথাটা শেষ ও করতে পারলো না দিশা। সায়রা দিশার গালে চর মেরে দিলো। দিশা চর খেয়ে হতভম্ব হয়ে গেছে। সায়রাকে এখন পর্যন্ত অনেক কথা শুনিয়েছে
কিন্তু সায়রা সয়ে গেছে সব সময় ”
_তুই আমাকে মারলি।
_এরপর আমাকে নিয়ে কথা বললে জিভ টেনে ছিড়ে ফেলবো। আমার ঘর থেকে বের হ।
“দিশা রাগে গজগজ করতে করতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। সায়রা সঙ্গে সঙ্গে দরজা বন্ধ করে দিলো। এ কথা এখন কোকিলা বেগমের কানে যাবে৷ সায়রা ওই মহিলার মুখ ও দেখতে চায় না ”
“রাতে তূর্য বাড়ি ফিরে সামর্থ্য বেগমের সাথে কিছু সময় কাটালো। সামর্থ্য বেগম তাকে আকারে ইঙ্গিতে কিছু বোঝাতে চায়। তাই তে নিজের ঘরে চলে এলো। সব বিষয়ে কথা শুনতে তূর্য ইচ্ছুক শুধু বিয়েটা নয়৷ তাকে দিয়ে সংসার হবে না। অসম্ভব। সে যা দেখে এসেছে ছোট থেকে তাতে সংসার তার কাছে তিক্ত মনে হয়। এতে তার সুন্দর জীবন নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তূর্য বিজের ঘরে এলো এক কাপ কফি নিয়ে। হাতে ফোন। রুমে এসে সোজা বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো
কফি খাচ্ছে আর রাতের অন্ধকার অনুভব করছে। বারান্দায় অবশ্য ড্রিম লাইট আছে। হুট করেই তূর্যর মনে পড়লো সায়রার কথা। আর তারপর হুররাম সুলতানের কথা৷ ওই রানী কে। যার মতো ওইটুকু পুচকে মেয়েটা হতে চায়। বেশ আগ্রহ হলো। তূর্য গোগলে সার্চ করলো হুররাম সুলতান সম্পর্কে। সঙ্গে সঙ্গে এক সুন্দরী নারীর ছবি এলো। তূর্য অনেক ঘেটেঘুটে দেখলো। আসলেই তিনি অটোমেন রাজা সুলতান সুলেমানর বউ। বেশ চতুর ও বুদ্ধিমতী মহিলা ছিলেন। তূর্য আরো বের করলো যে হুররাম সুলতান সুলতান সুলেমানকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাতেন। মানে রাজা পাগল ছিলো এই মহিলার জন্য।
তূর্য মনে মনে ভাবলো এর জন্য ই বোধহয় হুররাম হওয়ার এতো সখ ওই মেয়ের। একে যে বিয়ে করবে তার জীবনের কথা ভেবে তূর্যর ভারি আফসোস হলো। দুঃখে দু ফোটা চোখের জল ফেলতে ইচ্ছে করলো। কিন্তু ফেললো না। তূর্য গিয়ে শুয়ে পড়লো। তার দুঃখ পেয়ে লাভ কি। সে তো আর বিয়ে করবে না ”
“নাফিস শুয়ে আছে। ঘুম আসছে না। অফিস থেকে এসে দেখে বোয়া আসেনি। কেনো আসেনি নাফিস জানেনা। সপ একা থাকে। যদিও তূর্য আর সামর্থ্য বপগম বহুবার বলেছে তাদের সাথে থাকতে কিন্তু নাফিস থাকবে না। তার একাই ভালো লাগে। কিন্তু এই যে নোয়া আসেনি৷ এখন তাকে নিজে রান্না করতে হবে এরপর খেতে হবে। বাইরে থেকে ও খাবার আনতে ইচ্ছে করছে না। তূর্য চাল ডাল ধুয়ে খিচুড়ি রান্না বসিয়ে দিলো। সাথে ডিম ভাজলেই খাওয়া হয়ে যাবে। নাফিস গিয়ে একটু বসলো। এরপর ফোন নিয়ে ফেসবুকে ঢুকলো। ফেসবুকে ঢুকতেই জেরিনর এর স্টোরি চোখে পড়লো। অনেক রকমের খাবারের ছবি। নিচে লিখেছে মেড বাই মি। নাফিস ভ্রু কুচকালো। শান্তি পাবে না যদি জেরিনকে এখন একটু না খোচা দেয়। সে স্টোরির রিপ্লাই করলো ”
_মেড বাই মি নাকি মেড বাই কাজের বুয়া। জাতি জানে।
“জেরিন তখন টিভি দেখছিলো। ফোনে মেসেজ র শব্দ পেয়ে ফোন হাতে নিতেই দেখলো নাফিস এর মেসেজ। ঢুকে যখন এ মেসেজ দেখলো তখন জেরিনের রাগ উঠে গেলো। সে রিপ্লাই করলো ”
_জাতির মাথায় তো আপনার মাথার মতো গু নেই যে তারা সব বিষয় জানবে।
“নাফিস সঙ্গে সঙ্গে রিপ্লাই করলো ”
_জাতির মাথায় অনেক গু। দেখোনা দুইদিন পর পর আনদোলনে নামে। এসব বাদ দিয়া মুসিবতের বেটি তুমি এতো মিথ্যা কথা কও কেমনে?
“জেরিন রেগে গিয়ে বললো ”
_আমি মুসিবতের বেটি?
_নাহ্ ভুল বলছি। তুমি খাইরুন সুন্দরী।
_আর আপনি কি জানেন ?
“নাফিস জানে তাকে ও জেরিন উদ্ভট নাম বলবে। তাই আগেই বললো ”
_অবশ্যই জানি৷ আমি তো নাম্বার ওয়ান শাকিব খান। বাট উইথআউট অপু এন্ড বুবলি৷
“জেরিন মেসেজটা পড়ে হেসে ফেললো। এরপর বললো ”
_নাহ্ আপনি হচ্ছে প্রিন্স মামুন।
“জেরিন কথাটা বলতে পেরে মনে মনে মহা খুশী হলো৷ এর থেকে বড় অপমান আর নেই৷ কিন্তু নাফিস এর পর মেসেজ পাঠালো”
_আর তুমি আমার ব্লু ফেইরি লায়লা৷
“নাফিসের মেসেজটা দেখে জেরিনের মুখটা চুপসে গেলো। শেষে সে ব্লু ফেইরি লাইলা। এতো বড় অপমান মেনে নেওয়া যায় না। জেরিন কিছু বলতে যাবে। তার আগেই নাফিস মেসেজ পাঠালো ”
_ওকে খাইরুন সুন্দরী এখন বায়। আমার খিচুড়ি পুড়ে যাবে।
“জেরিম মেসেজটা দেখে বসে রইলো৷ খিচুরি পুড়ে যাবে মানে। এই লোক কি এতো রাতে খিচুড়ি রান্না করছে নাকি।
জেরিন একটু ভাবলো বসে বসে৷ এরপর সে গিয়ে তার স্টোরি ডিলেট করে দিলো। কারন সে ওইগুলো আসলেই নিজে রান্না করেনি। তবে বুয়া ও করেনি৷ করেছে জেরিনের মা৷ ফেসবুক হচ্ছে একটা মিথ্যার জগৎ। এখানে তিলকে তাল বানানো সেকেন্ড এর ব্যাপার সকলের কাছে ”
চলবে,,,
#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#১৭
“কয়েকদিন ধরে সামর্থ্য বেগম তূর্যকে আকারে ইংগিতে অনেক কিছু বুঝিয়েছে। তূর্য সেসব নিয়ে কথা বলেনি। আজ খাবার টেবিলে সামর্থ্য বেগম একটু সোজাসাপ্টা ই বললেন ”
_তোর সাথে আমার কথা আছে ?
“তূর্য হুশিয়ারি করার জন্য আগেই বললো ”
_বিয়ের বিষয় ছাড়া যে কোনো বিষয়ে কথা বলতে পারো।
_আমি বিয়ের বিষয়েই বলবো।
_প্লিজ দাদি,,,,,,,।
“সামর্থ্য বেগম এমনি সময় চুপ হয়ে যায়। তবে আজ আর চুপ হলেন না৷ তিনি হুট করে বলে ফেললো
_আমি চাই তুই বিয়ে কর তূর্য। আর তুই সায়রাকে বিয়ে কর। তুই সুখী হবি।
” তূর্য কথাটা শুনে সঙ্গে সঙ্গে সামর্থ্য বেগমের দিকে তাকালো। এরপর উঠে যেতে নিলে সামর্থ্য বেগম বললো ”
_আমার কথা শোন। সায়রা মেয়েটা অন্য সবার মতো না। ও আলাদা। একটু ভেবে দেখ। আমি চাই তুই ওকে বিয়ে কর। ও তোকে,,,,,,।
“তূর্য আর কথা শুনলো না৷ উঠে যেতে যেতে শুধু বললো ”
_তুমি পাগল হয়ে গেছো দাদি।
“তূর্য চলে গেলো। সামর্থ্য বেগম বাঁধা দিলেন না। যে করেই হোক সায়রাকেই সে নাতবউ করবে। যেনতেন মেয়ে সে তূর্যকে এনে দিতে পারে না। সে চলে গেলে তূর্য একা হয়ে যাবে। একজন খারাপ জীবনসঙ্গী মানুষের জীবন নষ্ট করে দিতে পারে। সামর্থ্য বেগম সেটা চায় না এমনিই তূর্য অনেক কষ্ট করেছে জীবনে ”
“তূর্য নিজের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো। বিছানায় গিয়ে বসলো। কেমন যেনো লাগছে। বিয়ে ই কি জীবনের সব কিছু। তূর্য ভয় পায় বিয়েকে৷ ভীষণ ভয় পায়। যদি সে তার বউয়ের সাথে অন্যায় করে ফেলে৷ তূর্য বিশ্বাস করে জীবনে যতো মানুষ কম ততো ঝামেলা কম। আর সায়রা। তাকে তূর্য কি করে বিয়ে করতে পারে। মেয়েটার মধ্যে আলাদা কিছু আছে। যা আজকালকার মেয়েদের মধ্যে দেখা যায় না। সায়রা সাধারণ। ওর মধ্যে একটা মায়া আছে। কিন্তু বিয়ে। তূর্য আর ভাবতে পারছে না এসব ”
“সায়রার সাথে কোকিলা বেগমের ঝামেলা শেষ ই হচ্ছে না। সোজা কথা সায়রা বাড়িতে ই থাকতে পারছে না কোকিলা বেগমের যন্ত্রনায়। অফিস এ এলেও সারাদিন কাজ। সব মিলিয়ে সায়রার মনে হচ্ছে সে স্বভাবিক জীবনে নেই।সে একটা যন্ত্র হয়ে গেছে। আজ ও অফিসে এসেই তূর্যর সাথে বের হতে হয়েছে। মিটিং আছে তূর্যর। সায়রা গাড়িতে চুপচাপ বসে আছে। অফিস ছুটির একটু আগেই বের হয়েছে ওর। সায়রা এসব ঝামেলার কারনে টিউশনি ও ছেড়ে দিয়েছে। তূর্য গাড়ি চালাচ্ছে। একটা মলের সামনে এসে তূর্য গাড়ি থামালো। এরপর নামলো। সায়রা ও পিছু পিছি যাচ্ছে।
এই মলে তূর্য কয়েকটা দোকান তূর্য কিনতে চায়। এরপর রিজেক্ট ড্রেসগুলো এখানে এনে সেল করবে।
বরাবরের মতো সায়রাকে বাইরে বসিয়ে রেখে তূর্য মিটিং এ গেলো।
সায়রা এই সুযোগে ঘুরে ঘুরে মলের বিভিন্ন দোকান ঘুরতে লাগলো। কিন্তু সব কিছুর এতো দাম দেখে সায়রা আবার এসে আগের জাগায় বসে রইলো। এদিকে রাত হয়ে যাচ্ছে। তূর্য যখন মিটিং শেষ করলো তখন অলরেডি রাত সাড়ে আটটা। এর মধ্যে সায়রা ফাইল দিয়ে এসেছে দুইবার করে।
তূর্য বের হয়ে দেখলো সায়রা মাথা চেপে ধরে বসে আছে। তূর্য এসে সামনে দাড়িয়ে বললো ”
_ঘুম পাচ্ছে ?
“সায়রা মুহুর্তে ই তূর্যর দিকে তাকালো। তূর্য এই মুহুর্তে একটা কাজ করলো নিজের ব্লেজারটা সায়রাকে ধরিয়ে দিলো। সায়রা অবাক হয়ে চেয়ে রইলো। তূর্য যেতে যেতে বললো ”
_বেকুবের মতো দাড়িয়ে থাকবে না। চলো।
“সায়রা পেছন পেছন হাঁটতে লাগলো। গাড়িতে এসে বসে আবার গাড়ি চলতে লাগলো। সায়রা চুপ করে বসে আছে। কোলের উপর এখন ও তূর্যর ব্লেজারটা।
একটু পরেই সায়রার ফোন বেজে উঠলো। সায়রা ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে দেখলো দিশার কল। সায়রা একটু অবাক হলো দিশা তাকে কখনো কল করে না
সায়রা কলটা ধরলো না। আবার কল এলো। সায়রা এবার কলটা ধরলো। ফোন কানে নিতেই কানে নিতেই কোকিলা বেগমের কান্না জড়িত কন্ঠ। সায়রা অবাক হয়ে গেলো
বারবার জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে ”
_কি হয়েছে এভাবে কাঁদছেন কেনো ?
_তোর আব্বার অবস্থা ভালো না। মনে হয় বাঁচবো না। তুই জলদি হাসপাতালে আয়।
“সায়রার যেনো থমকে গেলো। পর মুহুর্তে ই বললো
“_কোন হসপিটালে আছেন ?
_পপুলার হাসপাতালে।
” সায়রা আসছি বলে কল কেটে দিলো। তূর্য সঙ্গে সঙ্গে বললো ”
_কোনো সমস্যা ? কে হসপিটালে ?
_গাড়ি থামান প্লিজ।আমার বাবা অসুস্থ। হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আমাকে যেতে হবে।
“সায়রা কেমন কান্না করে ফেললো। তূর্য কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। শুধু জিজ্ঞেস করলো ”
_কোন হসপিটালে যেতে হবে ?
_আমি একা যেতে পারবো,,,।
_বেশি কথা বলবে না। কোন হসপিটাল?
_পপুলার।
“তূর্য আর কথা বাড়ালো না। গাড়ির স্পিড বাড়ালো। সায়রা কাঁদছে। তূর্য একবার চেয়ে আর চাইলো না।
মিনিট দশেকের মধ্যে পপুলার হাসপাতালের সামনে এসে গাড়ি থামলো। সায়রা গাড়ি থামতেই দৌড়ে নেমে গেলো। তূর্য শুধু দেখলো সায়রার হাতে এখনো ওর ব্লেজারটা। ওটা নিয়ে ই দৌড়ে গেছে। তূর্য একটু সময় নিয়ে বের হলো গাড়ি থেকে। বুঝতে পারছে না ওখানে যাওয়া ঠিক হবে কিনা। তবুও তূর্য গেলো ভেতরে। এমারজেন্সিতে নেওয়া হয়েছে সায়রার বাবাকে। তূর্য দেখলো সেখানেই দরজার বাইরে সায়রা দাড়িয়ে আছে। তূর্যকে দেখলো সায়রা। এরপর আবার কি মনে করে যেনো এগিয়ে এলো। হাতের ব্লেজারটা এগিয়ে দিলো তূর্যর দিকে ”
_সরি আমি তাড়াহুড়োয় এটা নিয়ে ই চলে এসেছিলাম
“তূর্য কিছু বলতে যাবে তার আগেই কোকিলা বেগম এগিয়ে এলো। সায়রাকে বললো ”
_শোন। টাকা চাচ্ছে ডাক্তার। ভর্তি করেছে আইসিইউতে। টাকা কোথায় পাবো ?
_কতো টাকা চাচ্ছে ?
_এিশ হাজার। বাকিটা পড়ে নিবে।
“সায়রার মনে হলো সব কিছু কেমন অন্ধকার লাগছে।
কোথায় পাবে এতো টাকা। তূর্য ওদের পারিবারিক বিষয়ে কথা বলতে না চাইলে ও বলতে হলো। তূর্য সোজা কোকিলা বেগমের দিকে চেয়ে বললেন ”
_আপনাদের সমস্যা না থাকলে আমি আপাতত বিলটা পে করে দেই ?
“সায়রা সঙ্গে সঙ্গে নিষেধ করলো ”
_নাহ্। আপনি কেনো আমাদের বিল পে করবেন ? আপনি চলে যান।
“কোকিলা বেগমের চোখ জলজল করে উঠলো। তার কাছে সায়রার বাবার পেনশনের টাকা আছে৷ কিন্তু সে সায়রাকে এসে বলেছে যাতে সায়রার কাছে থেকে দেওয়া যায়। এখন তো সায়রার বস দিতে চাচ্ছে। আরো ভালো হলো। সায়রাকে চুপ থাকতে বলে তিনি এমন একটা ভান করে বললেন ”
_কিন্তু তুমি কে ?
_আমি সায়রার বস। আন্টি আপনাদের সমস্যা,,, ।
“তূর্যর কথা শেষ হওয়ার আগেই কোকিলা বেগম কান্না করে করে বলতে লাগলো ”
_অনেক সমস্যা বাবা। টাকা নেই কিচ্ছু নেই। লোকটা এখন মৃত্যু পথযাত্রী। তুৃমি সায়রার বস। পরিবারের কেউ না। কি করে তোমার কাছে থেকে টাকা নেই বলো,,,।
_সমস্যা নেই। আপনি রিসিটটা দিন। আমি পে করে দিচ্ছি।
“কোকিলা বেগম রিসিটটা তূর্যর দিকে এগিয়ে দিলো। সায়রা সেটা টান দিয়ে নিয়ে গেলো”
_আপনি চলে যান। কোনো টাকা আপনাকে দিতে হবে না। আমি ম্যানেজ করে নেবো ।
“তূর্য সায়রার হাত থেকে টান দিয়ে রিসিটটা নিয়ে সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”
_চুপ করে থাকো। ম্যানেজ এর স্পেলিং জানো৷ ফাজিল।
“তূর্য চলে গেলো কাউন্টার এর দিকে। সায়রা কোকিলা বেগমের দিকে চায়লেন। তিনি সায়রার চোখে চোখ রাখলো না। চলে যেতে নিলে সায়রা বললো ”
_বাবা অসুস্থ বলে আজ আপনাকে কিছু বললাম না।
আপনার মানসম্মান না থাকতে পারে। আপনি আমার অফিসের বসের সামনে আমার মানসম্মান শেষ করবেন না।
“কোকিলা বেগম তেরে আসলে সায়রার দিকে ”
_ইস কতো মানসম্মান। তুই পারতি এতো টাকা আনতে। মুখে বড় বড় কথা শুধু। চুপ করে থাকবি একেবারে।
“সায়রা দাড়িয়ে রইলো সেখানেই। সায়রার বাবার হার্ট ব্লক হয়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে অনেক টাকার দরকার। কাল পরশু অপারেশন ও করা হবে বলেছে ডাক্তার।
একটু পরে তূর্য এসে সামনে দাড়ালো। সায়রা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। তূর্য রিসিটটা সায়রার হাতে গুজে দিলো। এরপর একটু ঝুকে সায়রার দিকে তাকালো। সায়রার গাল বেয়ে পানি পড়ছে।তূর্যর কেমন যেনো লাগলো সায়রাকে কাঁদতে দেখে। এরপর আস্তে করে বললো
_কেঁদো না। কেঁদে কিছু হয় না। দোয়া করো সব ঠিক হয়ে যাবে।
” সায়রা তবুও কাঁদছে। তূর্যর দিকে চোখ তুলে একবার তাকালো। তূর্যর বুকে বোধহয় তির এসে লাগলো।।তূর্য চোখ সরাতে পারলো না। সায়রা চোখ নামিয়ে বললো ”
_আমি আপনার কাছে ঋন হয়ে যাচ্ছি,,,,,, ।
“তূর্য কিছু বললো না উওরে। শুধু বললো ”
_কাল অফিসে আসার দরকার নেই। ছুটি তোমার। বাবার সাথে থাকো। আসছি আমি,,,, ।
“সায়রা কিছু বলার আগেই তূর্য হেঁটে চলে গেলো। সায়রা কিছু সময় সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। ওপর হাতের রিসিটটার দিকে তাকালো। সায়রার চোখ দু’টো বড় বর হয়ে গেলো। বিল দেওয়ার কথা এিশ হাজার। কিন্তু দেওয়া তিন লাখ। সায়রা হা করে চেয়ে রইলো রিসিটটার দিকে। এতো টাকা দিয়ে তূর্য কিসের ভিওিতে সায়রার উপকার করলো। এ টাকা সায়রা পরিশোধ করবে কি করে ”
“সারারাত সায়রার হাসপাতালেই কাটলো। সায়রার বাবার অবস্থা আগের থেকেউ খারাপের দিকে গেছে।
সায়রা কালকের রিসিটটা নিজের কাছেই রেখে দিলো
সকালে সায়রা দশটায় অফিসে যেতে পারলো না৷ যেহেতু কোকিলা বেগৃ আর দিশা হাসপাতালে। সায়রা বেলা এগারোটার দিকে বাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এরপর অফিসে গেলো। তূর্য তাকে ছুটি দিয়েছে৷ কিন্তু সে তা নিবে না। কাল সায়রার বাবার হার্ট এ রিং পড়ানো হবে। তিনি মুমূর্ষু। বাচার সম্ভবনা খুব কম বলেছে ডাক্তাররা।
সায়রা সাড়ে বারোটায় অফিসে গিয়ে পৌছালো। এরপর সোজা তূর্যর কেবিনে গেলো। তূর্যর কেবিনে তখন রুহানি ছিলো। সায়রাকে কেবিনের দরজার সামনে দেখে তূর্য রুহানিকে বললো ”
_আমার মিটিং এ যেতে হবে। তুই এখন যেতে পারিস।
“রুহানি কথা বাড়ালো না। সে বেরিয়ে যেতে যেতে দরজার সামনে এসে সায়রার দিকে কেমন করে যেনো চায়লো। রুহানি একটা অকাজ করে বসলো। সায়রার পায়ের উপর ওর হিল জুতো দিয়ে ইচ্ছে করে পাড়া দিয়ে হেঁটে চলে গেলো। সায়রা ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো। তূর্য জলদি উঠে এসে সায়রার সামনে দাড়ালো ”
_কি হলো ? ব্যথা পেলে। ভেতরে এসো।
“সায়রার চোক ছলছল করছে। খুরিয়ে খুরিয়ে হেটে ভেতরে গিয়ে একটা চেয়ারে বসে পরলো। তূর্য দেখলো হিল জুতোর ছাপ লেগে আছে। বুঝলো এটা রুহানি ইচ্ছে করে করেছে। তূর্য বললো ”
_তোমাকে ছুটি দিয়েছিলাম না আমি ? তাও অফিসে কেন এলে ?
“সায়রা ব্যথা গিয়ে। ব্যাগ থেকে রিসিটটা বের করে তূর্যর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো ”
_এটা আপনি কি করেছেন?
_কি করেছি?
_আপনি ইচ্ছে করে আমাকে ঋনি করছেন আপনার কাছে। এতো টাকা কে দিতে বলেছে আপনাকে।
“তূর্য সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সায়রা ওর সামনেই চেয়ারে বসে ”
_হিসেব করলে তিনদিন তোমার পরিবারকে হসপিটালে থাকতে হবে। আইসিউর বিল নিশ্চয়ই জানা আছে। আপারেশনের টাকা লাগবে৷ এতো টাকা তুমি কোথায় পেতে এই মুহুর্তে ?
_যেখানেই পেতাম। আপনার দেওয়ার ছিলো না তো।
_অবশ্যই দেওয়ার ছিলো। ওই মুহুর্তে তুমি কি করতে। বসে বসে কাঁদতে। সেটা আমার সয্য হতো না।
“সায়রা থমকে গিয়ে চেয়ে রইলো তূর্যর দিকে৷ এই পাগল হয়ে গেছে নাকি সে। সায়রা আবার বললো ”
_এতোগুলা টাকা আমি কি করে পরিশোধ করবো। বেতনের পুরোটা দিয়ে দিলেও দুই বছরে ও পরিশোধ হবে না।
“তূর্য ভ্রু কুঁচকে চেয়ে বললো ”
_পরিশোধ করতে কে বলছে তোমাকে ?
_মানে ?
_মানে আমি টাকার বিনিময়ে টাকা চাইছি না তো। তোমার যতো টাকা লাগবে আমি দেবো। বিনিময়ে তোমাকে অন্য কিছু দিতে হবে।
“তূর্যর কথা শুনে সায়রার বুকটা কেঁপে উঠলো। টাকার বিনিময়ে টাকা চায় না। তাহলে কি চায় ? তূর্য কি সায়রাকে,,,। না সয়রা তূর্য সম্পর্কে এসব ভাবতে ও পারছে না। সায়রা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো ”
_অন্য কিছু কী ?
“তূর্য সায়রার দিকে ঝুকে এলো। চেয়ারের দুই হাতলে হাত রাখলো। সায়রা চেয়ারে বসে। তূর্য তাকে আবদ্ধ করে ফেলেছে। তূর্য সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”
_বিয়ে করতে হবে তোমার আমাকে। উইল ইউ ম্যারি মি ?
“সায়রার চোখ দুটো বেরিয়ে আসার উপক্রম। কি বলছে তূর্য এসব ”
_কি বলছেন এসব ?
“তূর্য মুচকি হেঁসে সোজা হয়ে দাঁড়ালো । এরপর বলতে শুরু করলো ”
_সিম্পল। দাদি চায় আমি বিয়ে করি। কিন্তু ওসবে আমার মন নেই। তুমি তাকে বস করে ফেলেছো। সে চাচ্ছে আমি তোমাকে বিয়ে করি। তাই আমি ও চাচ্ছি তোমাকে বিয়ে করতে। তবে এ বিয়ে শুধু দাদীর মৃত্যু পর্যন্ত ই চলবে। এরপর তুমি তোমার রাস্তায় আমি আমার রাস্তায় ।
“সায়রা কথাগুলো শুনলো। ওর কাছে মনে হলো বিয়েটা একটা ঠাট্টার বিষয়। সায়রা বললো ”
_আপনি পাগল হয়ে গেছেন। বিয়ে কোনো ঠাট্টার বিষয় নয়। আমি এটা পারবো না।
“তূর্য একটু হাসলো কেমন করে যেনো। এরপর বললো ”
_তাহলে এখনি আমার টাকা ফেরত দাও। নাহলে আমি আইনি পদক্ষেপ নেবো।
“সায়রা অবাক এর উপর অবাক হচ্ছে। তূর্যকে অচেনা লাগছে। সায়রার বুকটা কাঁপছে। সায়রা চেয়ার থেকে উঠে যেতে নিলে তূর্য আবার ধরে বসিয়ে দিলো। এরপর বললো ”
_তুমি সময় নাও। এরপর বলো। শুধু মাএ অভিনয়। এর বিনিময়ে তুমি সব পাবে। ভেবে দেখো।
_আমি পারবো না। আমি আপনার টাকা ফেরত দিয়ে দেবো।
_কিন্তু আমার হাতে অপশন নেই। যদি আগামীকাল এর মধ্যে টাকা ফেরত দিতে পারো। তুমি ফ্রি।
“সায়রা তূর্যর দিকে ঘুরে একবার তাকালো। এরপর কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো। কোথায় পাবে এতো টাকা সে। বড় লোকেরা এমন ই হয় বুঝি। সায়রা তো সাহায্য চায়নি। তাহলে কেনো এমন করলো তূর্য। সামর্থ্য বেগমকে ধোকা দেওয়ার কথা বলছে। বিয়ে করে ও অভিনয় করতে হবে। এ কেমন বিয়ে। সায়রার মাথা ঘুরছে। সে হেটে চললো রাস্তা দিয়ে। হাসপাতালের উদ্দেশ্যে ”
“তূর্য তার কেবিনের কাচের গ্লাসটার সামনে দাড়িয়ে আছে। সায়রা হেঁটে গেট দিয়ে বের হচ্ছে দেখা যাচ্ছে।
তূর্য চেয়ে রইলো। সায়রার পায়ের দিকে। এখনো খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছে মেয়েটা। তূর্য যতোদূর সায়রাকে দেখা গেলো চেয়ে রইলো। মাঝে মাঝে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করতে হয়। সময় আর পরিস্থিতির চাপে পড়ে। তূর্য মনে মনে বলে উঠলো ”
“এই দিনের জন্য আমি নয়,সায়রা আজমীর। তুমি নিজেই দায়ী,,,, ।
“সায়রা এলে হাসপাতালে। দিশা বাড়ি চলে গেছে। কোকিলা বেগম একাই বসে। সায়রা গিয়ে আরেক পাশের একটা চেয়ারে বসে পড়লো। মাথায় হাত রেখে কিছু সময় চোখ বন্ধ করে রইলো। এমন পরিস্থিতিতে তার কি করা উচিত সে জানে না। তার মধ্যে খাওয়া দাওয়া নেই৷ একটু পড়ে একজন ডক্টর এলেন। সায়রা আর কোকিলা বেগম দাড়িয়ে গেলেন ওনাকে দেখে। ডাক্তার বললেন
_আপনারদ জব্বার সাহেবের বাসার লোক তো ?
” সায়রা বললো ”
_জি।
_উনাকে আজ রাত আটটায় অপারেশন করানো হবে।
আপনারা প্লিজ উপস্থিত থাকবেন। যেহেতু আপনাদের সমস্ত বিল পরিশোধ করা। তাই এই কাগজে একটা সাইন ও করে দিবেন।
“ডাক্তার এর পেছনে থাকা নার্স এর হাতপ একটা কাগজ। সেটা সায়রার দিকে এগিয়ে দিলো নার্স। সায়রা দেখলো এটা সেই কাগজ যেখানে প্রতি অপারেশনের সময় রোগীর পরিবারের একজন সই করেন। সায়রা সই করে দিলো। এখনো অনেকটা সময় বাকি। সায়রা একবার গিয়ে জব্বার সাহেবকে দেখে এলো। বাকি চিন্তা পড়ে করা যাবে। যতোই হোক। এই মানুষটা সায়রার বাবা। রক্তের টান কখনো যায় না। সায়রা অঝরো কাদলো কিছু সময়।
সময় অতিবাহিত হলো রাত আটটায় জব্বার সাহেবকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হলো। তবে এর আগে ডাক্তাররা জানিয়ে দিলেন তার বাচার সম্ভাবনা ৫০%। সায়রা সারাদিন না খাওয়া। মাথা ঘুরছে তার।
কোকিলা বেগমকে ও আজ কাঁদতে দেখা গেলো। তিনি সায়রার পর হতে পারে। কিন্তু জব্বার সাহেবকে তিনি ভালোবেসেছেন ”
“তূর্যর সারাদিন কাটলো ভাবুক হয়ে। সে এ ভাবনায় রইলো সে কি সায়রার সাথে ঠিক করছে। পর মুহুর্তে ই ভাবে সে তো সায়রার উপর কোনো দখলদারী করছে না। শুধু একটু উপকার করবে সায়রা তার। তার বিনিময়ে সপ সায়রাকে যা চাইবে তাই দেবে। এতে খারাপ কি?
নাফিস গাড়ি চালাচ্ছে। তূর্য পাশে চুপ করে বসে। একটু পর তূর্য বলে উঠলো ”
_নাফিস৷
_জি স্যার।
_আমি যদি বিয়ে করি। কেমন হবে ?
“নাফিস চমকে গেলো। কপ কি বলছে। তূর্য বকছে বিয়ের কথা। এও সম্ভব। নাফিস বললো ”
_সত্যি ই করবেন স্যার ? তিন সত্যি ?
_করবো। দাদির জন্য,,,,,, ।
_বউ কি তাহলে বিয়ের পর দাদির সাথে ঘুমাবে স্যার ?
“নাফিস কথাটা বলে চুপ হয়ে গেলো। তূর্য রাগী চোখে তাকালো। এরপর বললো ”
_আমি বিয়ে করলে তুমি কতোটুকু খুশি হবে নাফিস?
“নাফিস একটু হাসলো। এরপর অতি উৎসাহিত হয়ে বললো ”
_এতো খুশি হবো যে আমি এতিমখানায় ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে কুমরোর ঘন্ট খাওয়াবো স্যার।
“তূর্য অবাক হয়ে তাকালো নাফিস এর দিকে। এই ছেলে যে কখন কি বলে। তূর্যর মাথার উপর দিয়ে যায়। তূর্য বললো ”
_তবে খাওয়ানোর জন্য তৈরি হও।
_সত্যি ই বিয়ে করছেন স্যার ?
“তূর্য উওর দিলো না। সোজা রাস্তার দিকে চেয়ে রইলো। বিয়ে করছে সে। কিন্তু আসলেই কি হবে বিয়ে। বিয়ে যদি হয় ও। এরপর। এরপর কি হবে। সংসার। সেটা তো সম্ভব নয়। নামের বিয়ে হবে। সবাই জানবে। শুধু তূর্য মানবে না এ বিয়ে ”
চলবে,,