ম্যারেজ প্রোপজাল পর্ব-১৮+১৯

0
4

#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#১৮

“অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাড়িয়ে আছে সায়রা আর কোকিলা বেগম। সায়রা শুধু পায়চারি করছে। এর মধ্যে জেরিন কল করে খবর নিলো। সায়রা সারাদিন না খাওয়া। হাত পা কাঁপছে তার। কোনোভাবে যদি জব্বার সাহেব সুস্থ হয়ে যেতো। প্রায় দেড় ঘন্টা পর মেইন হার্ট সার্জন যিনি তিনি বের হয়ে এলো। সায়রা তার দিকে এগিয়ে গেলো ”

_ডাক্তার রোগীর কি অবস্থা ?

_অবস্থা বেশি ভালো মনে হচ্ছে না৷ আপনারা দোয়া করুন। বাকিটা আল্লাহর হাতে।

“ডাক্তার চলে গেলো। জব্বার সাহেবকে আরো এক ঘন্টা পর জব্বার সাহেবকে পুনরায় আইসিউতে দেওয়া হলো। কিন্তু কাউকে দেখা করতে দেওয়া হলো না ”

“তূর্য বাড়ি পৌঁছে দেখলো সামর্থ্য বেগম আজ আগেই খেয়ে দেয়ে নিজের ঘরে চলে গেছে। রাগ বা অভিমানে হয়তো। তূর্য আর খেলো না। সে সোজা নিজের ঘরে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে বিছানার উপর ফেলে রাখা ফোনটা হাতে নিলো। তখন রাত এগারোটা বাজে।
তূর্য সায়রার নাম্বার বের করে কল করলো। একটু সময় নিয়ে কলটা রিসিভ হলো৷ ওপাশ থেকে ভাঙা গলায় বললো ”

_হ্যালো।

তূর্য একটু সময় নিলো। সায়রার কন্ঠ কেমন ভারী ভারী লাগছে ”

_হ্যালো।

_কে বলছেন ?

“তূর্য ফোনটা কানে থেকে নামিয়ে দেখলো সে টিক নাম্বার এ কল করেছে কিনা। না এটা সায়রার ই নাম্বার
তূর্য বললো ”

_তোমার হবু বর বলছি।

“সায়রার এমনিই মাথা খারাপ। তার মধ্যে রাতবিরেত এমন মজা করার জন্য মানুষ কল দেয়। সায়রা রাগে কলটা কেটে দিলো। তূর্য আবাক হলো কল কেটে দিয়েছে বলে। সে আবার কল করলো। এবার সায়রা কল রিসিভ করতেই তূর্য ভারী কন্ঠে বলে উঠলো ”

_আমি সাদমান শাহারিয়ার তূর্য বলছি । আরেকবার কল কাটলে হসপিটালে গিয়ে থাপরে আসবো।

“সায়রা থ মেরে বসে রইলো কানে ফোন নিয়ে। এই লোক এতো রাতে কেনো কল করেছে। আবার সেই টাকার কথা মনে করিয়ে দিতে নাকি

_এতো রাতে কল। আমি,,,।

” সায়রা কথদ শেষ করতে পারলো না। তার আগেই তূর্য বলে উঠলো ”

_তোমার বাবার অবস্থা কী ? অপারেশন হয়েছে ?

_জি হয়েছে। তবে অবস্থা খুব একটা ভালো না ডক্টর বললো।

“তূর্য হেটে বারান্দায় গেলো কথা বলতে বলতে ”

_ঠিক হয়ে যাবে সব৷ এতো ভেবো না। খেয়েছিলে কিছু ?

“সায়রা একটু অবাক হচ্ছে। এই লোক তখন কেমন ব্যবহার করলো। আর এখন কেমন করছে। এতো দরদ উথলে উঠছে কেনো আবার কে জানে। সায়রা আস্তে করে বললো ”

_খেয়েছি।

_মিথ্যা বলে না। আমি ধরতে পারি৷

“সায়রা মুখ কুঁচকে বলে ফেললো ”

_না খাইনি। বললাম সত্যি। তাতে কি হলো,,, ।

“তূর্য একটু সময় নিয়ে বললো ”

_এখনি হসপিটালের সামনে এসে দাড়াবে। আমি আসছি।

“সায়রা কিছু বলার আগেই তূর্য কল কেটে দিলো। তূর্য ওই রাতেই গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
সায়রা হতবাক হয়ে চেয়ে রইলো। আবার কোন মসিবত নিয়ে হাজির হয় কে জানে। সায়রা ফোন হাতে নিয়ে গায়পর ওরনা ঠিক করে একবার কোকিলা বেগমের দিকে তাকালো। সে চেয়ারে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছে। সায়রা হেঁটে হেটে হসপিটালের মেইন গেটের সামনে এসে দাঁড়ালো। তূর্য বলেছে বলেই আসবে তা সায়রার বিশ্বাস হয় না। তবুও এলো। এখনো কতো মানুষের আনাগোনা চলছে। দুই মিনিটের মাঝেই সায়রার সামনে তূর্যর কালো গাড়িটা এসে থামলো।
তূর্য গাড়িতে বসেই সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”

_গাড়িতে উঠো।

_নাহ্। যা বলার এখানে এসে বলুন।

_আমি ওখানে গেলে থাপরে তোমার চেহারার নকশা বদলে দেবো। গাড়িতে উঠো।

“সায়রা এদিক ওদিক চেয়ে এরপর গাড়িতে উঠে বসলো। তূর্য গাড়ি স্টার্ট দিলো। সায়রা বলে উঠলো ”

_আরেহ্। পাগল নাকি আপনি। গাড়ি থামান।

_চুপ করে থাকো।

“সায়রাকে কথা বলতে দিলো না। তূর্য গাড়ি চালাচ্ছে।
একটা রাস্তায় এসে তূর্য গাড়ি থামালো। এরপর নিজেই নেমে গেলো গাড়ি থেকে। মিনিট পাঁচেক পর ফিরলো। হাতে একটা প্যাকেট। গাড়িতে ঢুকে আবার গাড়ি স্টার্ট দিলো। এরপর একটা নির্জন রাস্তায় এসে গাড়ি থামালো। সায়রা চুপ করে বসে আছে। তূর্য তখন আনা প্যাকেটটা সায়রার কোলের উপর রাখলো। এরপর বললো ”

_খাবারটা শেষ করে বাইরে এসো।

“সায়রা কিছু বলার আগেই তূর্য নেমে গেলো গাড়ি থেকে। বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। তার মধ্যে ঝিঁঝিপোকা ডাকছে। গাড়িতে যদিও লাইট জ্বলছে। সায়রা প্যাকেটটা খুলে দেখলো সাদা ভাত আর গরুর মাংসের কালা ভূনা। সাথে এক বোতল পানি। সায়রা অন্য সময় হলে বেশ খুশি মনে খেতো৷ কিন্তু আজ খেতেই ইচ্ছে করছে না। সায়রা অল্প একটু খেয়ে রেখে দিলো। এরপর গাড়ি থেকে বের হলো। তূর্য এর জন্য বেরিয়ে গেছে যাতে সায়রা ওকে দেখে লজ্জা করে না খায়।
সায়রা গাড়ি থেকে বের হতেই দেখলো অন্ধকার। গাড়ির পেছনে আলো জ্বলছে। সায়রা সেখানে গিয়ে দেখলো তূর্য গাড়ির ডেকচির উপর বসে আছে। সায়রাকে দেখে বললো ”

_খাওয়া শেষ ? পাখির আহার করলে নাকি ?

“সায়রা চুপ করে দাড়ালো গাড়ির সাইডে। তূর্য ওখানে বসেই বললো ”

_কথা বলছো না কেনো ?

“সায়রা একটু চুপ থেকে বললো ”

_এই খাওয়ানোর বিনিময়ে আবার কি চাইবেন শুনি ?

“তূর্য হাসলো। এরপর বললো ”

_তোমাকেই চাইবো। যে কোনো কিছুর বিনিময়ে।

_অনেক প্রেম নিয়ে চাচ্ছেন মনে হচ্ছে ?

_উহু। ওসব আমার নেই। প্রেম কি ? প্রেম বলতে কিছু ই নেই।

“সায়রদ একটু হেসে বললো ”

_কে বলেছে নেই। আপনার কাছে না ই থাকতে পারে। অনেকের কাছে আছে।

_আচ্ছা তাই। কার কাছে আছে শুনি ?

_আমার মায়ের কাছে ছিলো। আমার বাবা যখন,,,,।

“সায়রা কথা শেষ করলো না। তূর্য ভ্রু কুচকে চায়লো সায়রার দিকে ”

_থেমে গেলে কেনো ? কথা শেষ করো।

“সায়রা চুপ করেই রইলো। তূর্য বুঝলো সায়রা কিছু বলতে চায় না। তাই আর জোড় ও করলো না। তূর্য কথা ঘুরিয়ে বললো ”

_এবার বলো। বিয়ে করছি কবে ? দাদি আমার সাথে কথা বলছে না। বিষয়টা আমার জন্য অসয্যকর। তোমাকে যে তার কি দেখে মনে ধরলো। কে যানে।

“সায়রার ইচ্ছে করলো তূর্যর নাক বরাবর একটা ঘুসি মারতে ”

_আমি এমন বিয়ে করতে পারবো না।

“তূর্য সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নেমে সায়রার সামনে এসে দাড়ালো। সায়রা চমকে গেলো। একটু দূরে সরে যেতে নিলে। তূর্য দুই হাত দিয়ে গাড়ির দুই সাইডে রেখে সায়রাকে আটকে ফেললো ”

_তাহলে এখনি আমার টাকাগুলো ফেরত দাও সায়রা আজমীর।

_আমার কাছে এতো টাকা নেই আপনি জানেন।

_ওসব শোনার সময় নেই আমার। টাকা দেবে। না-হয় বিয়ে করবে।চয়েজ ইজ ইউরস।

“সায়রা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো

_আপনার তো অনেক টাকা। একজন অভিনেত্রী ভাড়া করে নিন। আমাকে ছেড়ে দিন।

” তূর্য হেসে বললো ”

_তা সম্ভব না। দাদীর তোমাকেই লাগবে। তার নাতবউ হিসেবে। তাই তোমাকেই হতে হবে আমার মিথ্যা বউ।

“সায়রা বুঝলো আর উপায় নেই তার হাতে। টাকা সে দিতে পারবে না। এতো টাকা সে কি করে দেবে। সায়রা বললো ”

_আমাকে আর কয়েকটাদিন সময় দিন। বাবা সুস্থ হোক।

“তূর্য সোজা হয়ে দাড়ালো এবার। চারদিকে অনেক মশা। তূর্য দাঁড়াতে পারছে না। সে গাড়িতে উঠতে উঠতে বললো ”

_গাড়িতে উঠে এসো।

“সায়রা গাড়িতে উঠলো। তূর্য সায়রাকে আবার হাসপাতালের সামনে নামিয়ে দিলো। সাথে কিছু খাবার ও কিনে দিলো। এরপর বললো ”

_আসা করছি তোমার বাবা সুস্থ হয়ে যাবে। কাল থেকে অফিস জয়েন করো। আসছি।

“তূর্য চলে গেলো। সায়রা হাসপাতালের ভেতরে গেলো। কোকিলা বেগম উঠে গেছে। সায়রাকে দেখেই বললো ”

_কোথায় গিয়েছিলি এতো রাতে ?

“সায়রা ভাবলো এবার কি বলবে। এই মহিলার মুখ খারাপ। কি বলে বসবে। সায়রা হাতের খাবারের প্যাকেটটা দেখিয়ে বললো ”

_খাবার আনতে গিয়েছিলাম।

“রুহানি কয়েকদিন ধরে তূর্য কল করে ও কোথাও পায় না। তূর্য হয়তো কল কেটে দেয় নাহয় কল ধরেই না।
তূর্য কাল রাত করে বাড়ি ফিরেছে। তাই এখনো ঘুমিয়ে আছে। রুহানি এতো সকালে করেছে। তূর্যর ফোন বেজে উঠলো। তূর্য বিরক্ত মুখ নিয়ে ঘুম থেকে উঠলো
ফোন হাতপ নিয়ে রুহানির কল দেখে আরো বিরক্ত লাগলো। কিছু মানুষ থাকে যাদের কোনো কারন ছাড়াই ভালোলাগে না। আর রুহানির মধ্যে একশো একটা কারন ভালো নালাগার। তূর্য কলটা কেটে দিলো। রুহানি আবার কল করলো। তূর্য এবার কলটা ধরলো ”

_হ্যালো তূর্য। তুই আমার কল কেটে দিচ্ছিস কেনো বারবার ?

_ঘুমাচ্ছিলাম আমি।

_ওহ্ সরি। আসলে আজ তো বাইরে একটা মিটিং আছে। তোর ও থাকতে হবে। চল এক সাথে যাই ?

_নাহ্। রাখছি।

“তূর্য কল কেটে দিলো। রুহানির সাথে যাওয়া মানে হাজারটা মসিবত। ওর ওই একগাদা লিপস্টিক দেওয়া আর মুখ সাদা ধবধবে করে রাখা দেখলে ই তূর্যর রাগ হয়। মেয়ে মানুষ থাকবে ন্যাচারাল। সাধাসিধে। দেখলেই মায়া লাগবে।
মায়া লাগবে কথাটা মনে হতেই তূর্যর সায়রার কথা মনে পড়লো। কাল রাতে তূর্য একটু কাছে গিয়ে দাড়াতেই সায়রাকে কেমন লাগছিলো। চেপে চেপে যাচ্ছিলো। চোখে পানি টলমল করছিলো। সেই মুখটা মনে পরলো তূর্যর।
তূর্য বিছানা ছেড়ে উঠলো৷ ফ্রেশ হয়ে পড়নের জামা বের করলো। সব সময় সাদা না হয় কালো পড়ে। আজ তূর্য সব কালো পড়লো। শার্ট সহ সব ই কালো। শুধু টাইটা একটু ভিন্ন রাখলো। রেডি হয়ে নিচে নামতেই দেখলো সামর্থ্য বেগম একাই নাস্তা করছে। তূর্য গিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো। সামর্থ্য বেগম তাকালেন না। তূর্য ব্রেড এ জেলি লাগাতে লাগাতে বললো ”

_এখন দেখছি আমাকে ছাড়াই খাচ্ছো। কাল রাতেও আমার জন্য ওয়েট করোনি।

“সামর্থ্য বেগম খেতে খেতে বললো ”

_আর করবো ও না।

_এতো অভিমান ভালো না বুড়ি।

“সামর্থ্য বেগম সঙ্গে সঙ্গে বললো ”

_কিসের অভিমান। এই আমি বাড়ি ছাড়লাম বলে,,,।
সখ করে যদি পছন্দমতো একটা নাতবউ ই না আনতে পারি তাহলে আর কী।

“তূর্যর ভারি হাসি পাচ্ছে সামর্থ্য বেগমের এই রাগ দেখে ”

_পছন্দমতো। ওই মেয়ে ছাড়া অন্য মেয়ে কেনো পছন্দ নয় শুনি ?

_ওই মেয়ে একটা লক্ষি মেয়ে। এই যুগে তুই ওমন মেয়ে কোথাও পাবি না। আমি আজ আছি কাল নেই। ও তোকে আগলে রাখতে পারবে।

“তূর্য হেসে বললো ”

_ওইটুকু একটা মেয়ে। ওকে আমি এক হাতে উপরে তুলতে পারবো। ও আমাকে কি আগলে রাখবে।

“তূর্য ইচ্ছে করে সামর্থ্য বেগমকে রাগানোর জন্য বললো কথাটা। সামর্থ্য বেগম রেগে ও গেলেন।তূর্য ততক্ষণে উঠে গেছে। সামর্থ্য বপগম বললেন ”

_এই আগলে রাখা সেই আগলে রাখা না। মায়ায় আগলে রাখা। যখন রাখবে তখন বুঝবি।

“তূর্য যেতে যেতে বললো ”

_ওসব মায়া টায়া বলতে কিছু হয় না। সব ই ফালতু ইমোশন দাদী।

“তূর্য বেরিয়ে গেলো অফিসের উদ্দেশ্য। আজ তার মিটিং আছে অনেক জরুরি। তূর্য অফিসে পৌঁছে দেখলো সায়রা এসেছে। তূর্য একবার ওর দিকে চেয়ে কেবিনের ভেতর চলে গেলো। সায়রা জেরিনের সাথে কথা বলছিলো। আজ সন্ধায় জব্বার সাহেবকে হসপিটাল থেকে রিলিজ করে দেবে।
এর মধ্যে ই সায়রার ডেস্কের বেল বেজে উঠলো। সায়রা উঠে তূর্যর কেবিনে গেলো। তূর্য তখন কারো সাথে কলে কথা বলছে। সায়রা যেতেই ওর দিকে একটা মোটা ফািল এগিয়ে দিলো তূর্য। সায়রা সেটা নিলো। এরপর তূর্য কেবিন থেকে বের হলো সায়রা ও পিছু পিছু বের হলো। অর্ধেক পথে গিয়ে দেখলো নাফিস অফিসে ঢুকছে। তূর্য বেরিয়ে গেলো সঙ্গে সায়রা ও।
গাড়িতে বসে আছে দুজনে। সায়রা চুপচাপ। তূর্য বললো ”

_ফাইলের ভেতরে কতোগুলো কাগজ আছে। ওইগুলো বের করো।

“সায়রা তাি করলো৷ ফাইলের ভেতরে আলাদা কয়েকটা কাগজ । সায়রা দেখলো কাগজে তূর্য সম্পর্কে অনেক কিছু লেখা। বায়োডাটা। ”

_এগুলো পড়বে। আমার সম্পর্কে তুমি কিছু ই জানো না। জানা দরকার তোমার।

_কোন দুঃখে জানা দরকার ?

_দুঃখে নয় সুখে। আমি তোমার হাসবেন্ড হবো। আর তুমি আমার নাম ছাড়া কিছু ই জানো না।

_জানতে চাই ও না।

_দুটো চর মারলেই জানতে চায়বে। আমার হাত থেকে তোমার নিস্তার নেই। এটা মেনে নাও।

_নেবো। তবে একটা শর্তে।

_হোয়াট?

_আজ বাবাকে রিলিজ করবে হাসপাতাল থেকে। আমাকে তাড়াতাড়ি ছুটি দিতে হবে। সঙ্গে বেতন ও কাটতে পারবেন না ।

“সায়রার শর্ত শুনে তূর্য হাসলো শুধু। এটা তূর্য তাকে এমনিই দিতো। তূর্যর মনে মায়া মহব্বত না থাকতে পারে। তবে বিশাল একটা মন আছে। তূর্য বললো ”

_ওকে ডান। মিটিং শেষ হলেই চলে যেও।

“নাফিস গান গাইতে গাইতে অফিসে ঢুকলো। আজকাল তার কাজের চাপ নেই বললেই চলে। সে আসে বসে থাকে। আর যায়। কিন্তু আজ বসে থাকতে আর ভালো লাগছিলো না। একটু পর জেরিনের ডেস্কের পাশে গেলো। ওকে একটু জ্বালালে ভালোলাগবে। জেরিন এর ডেস্কে এসে উঁকি দিয়ে বললো ”

_মন দিয়ে কাজ করো মসিবতের ব্যাটি। ফাঁকিবাজি করো না।

“জেরিন ভেঙচি কেটে বললো ”

_আপনি তো নিজেই দিনভোর ফাঁকিবাজি করেন তারবেলা।

_ইস, তোমার পেয়ারি বান্ধুবি যে আমার জায়গায় টা দখন করছে ওইটা দেখলা না।

_উচিত করছে।

_গরিবের উপর সবাই জুলুম করে রেহ্।

“জেরিন হেসে বললো

_আপনি গরিব ?

_তাহলে কি ? গরিবের উপর দিয়া গরিব আমি।

_এর জন্য ই আর ওয়ান ফাইভ নিয়ে ঘুরেন বুঝি। এতোই গরিব।

” নাফিস এদিক ওদিকে চেয়ে আস্তে করে বললো ”

_আরেহ। ওিটা তো কিস্তিতে কিনছি। আসলে আমি গরিব।

_ওহ্ আচ্ছা। আর হাতে যে আইফোন ফিফটিন প্রো মেক্স। ওটা ও কি কিস্তিতে কিনেছেন ?

“নাফিসের মুখটা চুপসে গেলো। তবুও সে হারবে না”

_ওইটা তো সেকেন্ড হেনড। নষ্ট জিনিস৷

“জেরিন এবার নাফিসের হাতের দিকে ইশারা করে বললো ”

_আর হাতে যে তূর্য স্যার এর মতো দামি ঘড়ি। এটা বুঝি হালত করেছেন ?

“নাফিস এবার নিজের হাতের দিকে তাকালো। এরপর জেরিনের দিকে চেয়ে বললো ”

_আসলেই কিন্তু আমি গরিব।

“জেরিন হেসে ফেললো। নাফিস চলে গেলো দ্রুত। আর একটু দাড়ালে এই মেয়ে আন্ডারওয়্যার পর্যন্ত চলে যেতে পারে। তার আগেই ভাগতে হবে ”

“মিটিং এ তূর্যর আগে রুহানি পৌঁছেছে। তাই রুহানি গাড়ির সামনে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছিলো তূর্যর জন্য।
তূর্যর গাড়ি এসে থামলো। রুহানি হাসি মুখে চেয়ে আছে।।তূর্য নামলো। তবে রুহানির মুখের হাসি বন্ধ হলো যখন আরেক পাশ থেকে সায়রাকে নামতে দেখলো। তূর্য এগিয়ে এলো রুহানির দিকে। সায়রা পেছনে । তূর্য রুহানির দিকে চেয়ে বললো ”

_মিটিং কখন শুরু হচ্ছে ?

_একটু পর ই।

“তূর্য হেঁটে অফিসের ভেতরে গেলো। অন্য সব ফ্যাশন হাউজের মালিকদের সাথে মিটিং থাকে। তূর্যর পাশাপাশি রুহানি। রুহানি একটু পর পর পেছন ফিরে সায়রাকে দেখছে আর রাগে ফুসছে। তূর্যকে বললো ”

_এই গাইয়া মেয়েটাকে এখানে নিয়ে আসার দরকার কি ছিলো৷ নাফিস ছিলো না।

“তূর্য থেমে গেলো। সায়রা অনেকটা ই পেছনে। তূর্য সায়রার দিকে চেয়ে আবার রুহানির দিকে চেয়ে বললো ”

_সি ইজ বেটার দ্যান ইউ। তোর মতো ও অনন্ত কৃত্রিম নয়। ন্যাচারাল। ওর সম্পর্কে আর একটা বাজে কথা বলবি না। ভালো হবে না।

“তূর্য হেটে চলে গেলো। রুহানি ঠায়,দাড়িয়ে রইলো। তূর্য কি বলে গেলো তাকে। রুহানি কৃত্রিম। মানে নকল।
রুহানির ইচ্ছে করলো এখান থেকে চলে যেতে। কিন্তু সায়রাকে সে শিক্ষা দিয়ে তবে যা করার করবে। এর আগে নয় ”

চলবে,,,

#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#১৯

“সেদিন মিটিং শেষ এ সায়রা আগেই বাড়ি চলে গেলো। জব্বার সাহেবকে হাসপিটাল থেকে রিলিজ দিয়েছে।
তূর্য একাই অফিসে ফিরলো। কয়েকদিন ধরে এতো ঝামেলা আর নেওয়া যাচ্ছে না৷ সামর্থ্য বেগম কথা বলেন না। তূর্য এদিকে অস্থির হয়ে আছে। এমন সময় নাফিস কেবিনে ঢুকলো। তূর্য নাফিসকে দেখে কিছু বললো না। নিজের চেয়ার হেলান দিয়ে বসে রইলো। নাফিস বুঝলো তূর্য হয়তো কোনো সমস্যায় আছে ”

_কোনো সমস্যা স্যার ? কিছু হয়েছে?

_তোমার পরিচিত কোনো ম্যারেজ রেজিস্ট্রার আছে?

“হুট করে তূর্য এমন কথা বলায় নাফিস চমকে গেলো ”

_ম্যারেজ রেজিস্ট্রার। স্যার হুট করে,,,,,, ।

“নাফিস পুরো কথা শেষ ও করতে পারলো না। তূর্য বললো ”

_কালকের মধ্যে আমার ম্যারেজ রেজিস্ট্রার চাই৷ বিয়ে করে শুধু দাদীকে দেখাতে পারলে ই আমি বাঁচি ।

_ সব ম্যানেজ হয়ে যাবে৷ কিন্তু বিয়েটা করবেন কাকে ?

“তূর্য কপালে আঙ্গুল চেপে বসে ছিলো। নাফিসের দিকে চেয়ে দাতে দাত চেপে বললো ”

_তোমাকে বিয়ে করবো। ইডিয়েট।

“নাফিস চোখ বড় বড় করে বললো ”

_আস্তাগফিরুল্লা স্যার। আমি তো,,,,।

“তূর্য এবার রেগে যাচ্ছে। সে বললো ”

_নাফিস,,,,,,।

_সরি স্যার। আমি কালকের মধ্যে রেজিস্ট্রার খুজছি।

“নাফিস বের হয়ে এলো কেবিন থেকে৷ কাকে বিয়ে করবে কে জানে। কার কপালে শনিরদশা লেগেছে। নাফিস যদি মেয়ে হতো। মরে গেলেও এই বদমেজাজী লোকটাকে বিয়ে করতো না। নাফিস ভাবতে ভাবতে হেঁটে যাচ্ছে। সে সময় জেরিনের সাথে ধাক্কা লাগলো। জেরিন রেগে গিয়ে বললো ”

_চোখে দেখতে পাননা অন্ধ লোক।

“নাফিস জেরিনের দিকে চেয়ে বললো

_এই কটকটি। চুপ থাকো। ঝগড়া করার সময় নেই। ম্যারেজ রেজিস্ট্রার খুজতে হবে আমাকে।

” এই বলে নাফিস চলে যাচ্ছিলো। জেরিন পেছন থেকে বললো ”

_বিয়ে করছেন নাকি ?

“নাফিস যেতে যেতেই বললো ”

_হে, তবে এখন না। একদিন করবো।

_দাওয়াত দিবেন না ?

_বউ আবার দাওয়াত খায় নাকি ?

“কথাটা বলেই নাফিস উধাও হয়ে গেলো। জেরিন শুরুতে কথারা ঠিক মতো বুঝতে পারলো না। পড়ে যখন বুঝলে তখন হাজারটা বকা দিলো নাফিসকে মনে মনে ”

“সায়রা বাড়ি ফিরে জব্বার সাহেবের সমস্ত কাজ করলো। বিছানা গুছিয়ে দেওয়া। ঔষধপএ গুছিয়ে রাখা সহ সব করলো। এরপর নিজে ও গোসল করে নিলো। নিজের আধোয়া কাপড়গুলো ও ধুয়ে নিলো। সেগুলো মেলতে গিয়ে সায়রা কানে এলো কিছু কথা।
কোকিলা বেগম কাউকে খুব খুশি মনে বলছে ”

_না,না আমার এক পয়সা ও দিতে হয় নাই। পাগল নাকি আমি৷ আমার টাকা আমি রেখে দিয়েছি৷ সব টাকা ওই মেয়ের অফিসের বস দিয়েছে। কি জানি ওই ছেলে কেন দিলো। বুঝিস না ওই মেয়ের চরিএ নিয়ে আমার সন্দেহ হয়। বসের সাথে কিছু হইছে মনে হয়। না হইলে এতো টাকা কেউ দেয় নাকি৷

“সায়রা স্তব্ধ হয়ে শুনলো কথাগুলো। তারমানে কোকিলা বেগমের কাছে টাকা আছে৷ ইচ্ছে করে এমন করেছে। সায়রা প্রতিবাদ করতে পারতো৷ কিন্তু করলো না। এখন এই বাড়ি ছাড়তে পারলে সে বাঁচে। একজন মহিলা একজন মেয়ে সম্পর্কে না জেনে এতো বাজে কথা কি করে বলতে পারে৷ সায়রা জোরে জোরে কয়েকটা নিঃশ্বাস ফেললো।এরপর নিজের ঘরে চলে গেলো।
বিছানায় শুয়ে থেকেও সায়রার একটু শান্তি লাগছে না। সায়রা মনে মনে ভেবেই নিলো জব্বার সাহেব একটু সুস্থ হলেই এই বাড়ি ছাড়বে। এখানে থাকলে সে তিলে তিলে মরে যাবে ”

“তূর্য রাতে বাড়ি ফিরে আজ ও একই দৃশ্য দেখলো। সামর্থ্য বেগম চলে গেছেন নিজের রুমে। দরজাটা ও বন্ধ। তূর্য নিজের ঘরে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে কিছু সময় বিছানায় শুয়ে রইলো। দৃষ্টি উপরের দিকে। কি করতে যাচ্ছে সে জানে না৷ জীবনে এমন কোনো সিদ্ধান্ত তাকে এভাবে নিতে হবে সে ভাবেনি। সে একাই ঠিক আছে এটা কাউকে বুঝাতে পারবে না। এসব ভাবতে ভাবতেই তূর্য উঠে বসলো। এরপর ওয়ার ড্রপ এর একটা ছোট্ট খোপ থেকে একটা ছবির আ্যলবাম বের করলো। যেটা সে সচারাচর বের করে না। আজ কিছু মুহূর্ত সে আবার দেখলো। কিছু ছবি যেগুলো দেখলে তার আপসোস বাড়ে। সে পুনরায় আ্যলবামটা রেখে দিলো। কথায় আছে যে জিনিস দেখলে আফসোস বাড়ে। সেসবের দিকে দৃষ্টি দিতে নেই। তূর্য ও দিলো না।তূর্যর এই মুহুর্তে খুব সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সিগারেট সে রাখে না সাথে।
বিছানায় গিয়ে আবার শুতেই নাফিসের মেসেজ এলো। তূর্য সে মেসেজ সিন করে রেখে দিলো ”

“পরেরদিন সকালে সায়রা আগে উঠলো। দুদিন পর থেকে তার পরিক্ষা অথচ তার কোনো প্রস্তুতি ই তার নেই। সকালে উঠে আজ সায়রা নিজেই নাস্তা বানালো। কেউ তখনো ঘুম থেকে উঠেনি। সায়রা একাই নাস্তা করে বেরিয়ে পড়লো অফিসের জন্য।
অফিসে এসে আজ একটু শান্তি পেলো। বসে বসে কাজ করতে লাগলো। জেরিন ও এসেছে। সবাই সবার মতো কাজ করছে। তখন তূর্য আর নাফিস ঢুকলো। সকলে দাড়িয়ে গেলো। সায়রা ও দাড়ালো। তূর্য কেবিনে ঢুকে গেলো। সাথে নাফিস ও।
তূর্য কেবিনে ঢোকার পর আবার সায়রা কাজ করতে লাগলো। কিন্তু মনে কেমন যেনো একটা ভয় হচ্ছে। তূর্যর কাছে থেকে সময় নিয়েছে সে। এখন যদি তূর্য জিজ্ঞেস করে কিছু। সায়রা কি বলবে। সাথে টাকা। কোথায় পাবে সে সেসব। এর মাঝেই সায়রার ডেস্কের বেল বেজে উঠলো। সায়রা কেঁপে উঠলো৷ জোড়ে জোড়ে কয়েকটা নিঃশ্বাস ফেললো। নিজে ঠিক করলো। যা ই হোক। সে করবে এ কাজ। এতো গুলো টাকা সে দিতে পারবে না। নিজেকে শক্ত করে সায়রা এগিয়ে গেলো তূর্যর কেবিনের দিকে। সায়রা ভেতরে ঢুকে দেখলো তূর্য বসে আছে। নাফিস ও বসে। সায়রা গিয়ে দাড়ালো ”

_এতো সময় লাগে আসতে ? কচ্ছপ এর গতিতে হাটো।

_সরি স্যার।

“তূর্য সায়রার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে নাফিসের দিকে তাকালো ”

_চলো নাফিস।

_স্যার আমি,,,,, ।

“তূর্য আর কিছু বললো না। বের হয়ে গেলো। সায়রা ও গেলো সঙ্গে নাফিস ও। গাড়ি চালাচ্ছে তূর্য। পাশে বসে আছে নাফিস৷ পেছনে সায়রা। একেবারে চুপচাপ সবাই। কেউ কোনো কথা বলছে না। আধ ঘন্টা পর একটা রেস্টুরেন্টে এর সামনে এসে গাড়ি থামলে নাফিস আর সায়রা দুজনেই অবাক। বেলা বাজে বারোটা। এখন এখানে কি করতে এসেছে। তূর্য গাড়ি পার্ক করলো। নাফিস আর সায়রা আগেই নেমে দাড়িয়েছে। তূর্য এলো। কোনো কথা ই বলছে না৷ সায়রা তো তূর্যর দিকে তাকাচ্ছে ও না৷
তূর্য রেস্টুরেন্টে এর ভালো ভেতরে গেলো। নাফিস যাচ্ছিলো। সায়রা দাড়িয়ে থেকেই বললো ”

_স্যার যাচ্ছে কোথায় বলুন তো ?

_আমি কি জানি৷ আমি ও তোমার মতো অসহায়। চলো যাই।

“সায়রা আর নাফিস ভেতরে গেলো। তূর্য অলরেডি একটা চেয়ারে বসে আছে । সায়রা আর নাফিস গিয়ে ও বসলো সঙ্গে। নাফিস এবার তূর্যকে বললো ”

_স্যার আমরা এ সময় এখানে কেনো এলাম ?

_বিয়ে করতে।

“তূর্য কাউকে কল করতে করতে বললো কথাটা। নাফিসর চোখ বড় বড় হয়ে গেছে অলরেডি। সায়রা হা করে চেয়ে আছে ”

_রেস্টুরেন্টে দুপুর বারোটায় কে বিয়ে করবে স্যার ?

_নাফিস। তোমাকে বলেছিলাম আমি বিয়ে করবো।

_কিন্তু এটা কেমন বিয়ে ?

“তূর্য নাফিসের কথার উওর না দিয়ে সায়রার দিকে তাকালো। সায়রা অবাক হয়ে চেয়ে আছে দেখে তূর্য বললো ”

_তুমি এতো অবাক হচ্ছো কেনো ? তুমি তো সব জানো।

“সায়রা বললো ”

_আমি আপনার কাছে সময় চেয়েছিলাম।

_কিন্তু আমার হাতে সময় নেই। আর সময় দিলে ও কি। টাকা ফেরত দিতে পারবপ তুমি ?

“সায়রা কাচুমাচু করে বললো ”

_নাহ্। কিন্তু তো রাজি ই ছিলাম। একটু সময় দিলে,,,,।

“তূর্য কোনে উওর দিলো না। এদিকে নাফিস অসহায়ের মতো ওদের কথা শুনছে৷ কে কাকে টাকা দিয়েছে। কে কাকে বিয়ে করবে কিছুই মাথায় ঢুকছে না। তখনই দুজন সুট বুট পড়া লোক এলো ওদের টেবিলের দিকে। তূর্য তাদের বসতে বললো। নাফিস দেখলো এটা সেই ম্যারেজ রেজিস্ট্রার যার ফোন নাম্বার কাল রাতে সে তূর্যকে দিয়ে আবার ভুলে ও গেছিলো। তূর্য এবার খোলাখুলি কথা বললো ”

_কেউ কোনো কথা বলবেন না। কিচ্ছু জিজ্ঞেস করবেন না। আমি ও আমি যাকে বিয়ে করছি। আমাদের সব কথা জানিয়ে ই বিয়ে করছি। শুধু বিয়ে হবে। কোনো কথা না৷

“তূর্যর কথা শুনে সকলে চুপ হয়ে গেলো। লোক দুটোর সাথে তূর্য আগেই কথা বলে রেখেছে। তারা সে অনুযায়ী কাগজ ও তৈরি করে এনেছে। লোক দুটো একটা কাগজ বের করে তূর্যর সামনে দিলো। তূর্য কোনো কথা না বলে কোনোদিকে না চেয়ে সাইন করে দিলো। এরপর সায়রার দিকে এগিয়ে দিলো। একটা লেক সায়রাকে সাইন করতে বললো। সায়রা তূর্যর দিকে তাকালে তূর্য বললো ”

_সাইন করবে। নাকি টাকা দেবে ?

“সায়রা এই মুহুর্তে একটা চালাকি করে বসলো। সে বললো ”

_সাইন করবো। তবে আমার কিছু শর্ত আছে। বলুন মানবেন ?

“তূর্য কথা বাড়াতে চাইলো না। তাই বললো ”

_ডান। এবার সাইন করে উদ্ধার করো আমায়৷

“সায়রা সাইন করে দিলো। সাথে মনে মনপ শপথ করলো। তূর্যর জীবনে এবার আগুন লাগিয়ে দিবে। সায়রা আজমীরকে ব্লেকমেইল করা। সায়রা সাইন করে দিলো। ওদের বিয়ে হলো। শুধু কাগজে কলমে।
সাইন করিয়ে লোক দুটো তূর্যকে একটা কাগজ দিলো। তূর্য সেটা ভাজ করে নিজের পকেটে রেখে দিলো। সায়রা রাগে ফুসছে। নাফিস বলদের মতো বসে আছে। তার সামনে দুনিয়ার সব থেকে আজব মানুষের আজব ভাবে বিয়ে হলো। এটা বিয়ে ছিলো কিনা তাতে ও সন্দেহ আছে। পৃথিবীর সব তেকে দ্রুততম বিয়ে এটা।
তূর্য উঠে দাড়ালো। সায়রা মাথা নিচু করে বসে আছে। তূর্য উঠে এসে সায়রার হাত চেপে ধরে উঠিয়ে সঙ্গে নিয়ে যেতে লাগলো। সায়রাকে এক প্রকার টেনে নিয়ে যাচ্ছে। নাফিসকে উদ্দেশ্য করে বললো ”

_তুমি খেয়ে দেয়ে এসো নাফিস। আমি দাদীকে তার পছন্দের নাতবউ দিয়ে আসছি।

“নাফিস চেয়ে রইলো। আর মনে মনে বললো ”

_দুনিয়ার আজব বিয়ার খাওন। আমার গলা দিয়া নামবে না মনে হয়।

“তূর্য সায়রাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। সায়রা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। তূর্য গাড়ির সামনে এসে হাত ছেড়ে দিলো ”

_গাড়িতে উঠো।

_উঠবো না। আপনি এখনো আমার শর্তগুলো শুননেনি। আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না৷।

“তূর্য আবার টেনে সায়রাকে গাড়িতপ বসিয়ে দিয়ে নিজেও গাড়িতে উঠে বসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বললো ”

_তোমার শর্ত শুনার অনেক সময় আছে। আপাতত যে কারনে তোমায় বিয়ে করেছি সেটা করি৷

“তূর্যর কথা শুনে সায়রা চেচিয়ে বললো ”

_আপনি আমার সাথে অন্যায় করছেন ।

_নিজের ভালোর জন্য এইটুকু অন্যায় করা ই যায়। তোমার তো খুশি হওয়ার কথা। আমার মতো হাসবেন্ড পেয়েছো।

“সায়রা তূর্যর কথায় ভেঙচি কাটলো। এরপর বললো ”
_এটা একটা কনট্রাক্ট ম্যারেজ মাএ।

“তূর্য ডেভিল হাসি দিয়ে বললো ”

_যতোদিন দাদি বেঁচে আছে। এই কনট্রাক্ট চলতে থাকবে৷ আর ততোদিনের জন্য কিন্তু আমি তোমার হাসবেন্ড।

“সায়রা তূর্যর কথায় কান দিলো না। তার রাগ হচ্ছে। ইচ্ছে করছে তূর্যর মাথা ফাটিয়ে দিতে। তাকে অভিনয় করতে হবে। তাও একজন মুরুব্বির সাথে। সায়রা ভাবতেই পারছে না।
একটু পড়ে গাড়ি এসে থামলো বৃষ্টি বিলাশ ভবনের সামনে। তূর্য গাড়ি থেকে নামলো।সায়রা ও নামলো।
তূর্য এসে সায়রার হাত চেপে ধরলো। সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”

_মাথায় ওরনা দাও। এমন ভাবে থাকবে যাতে তোমাকে একেবারে রিয়েল বউ লাগে।

“সায়রা মাথায় ওরনা দিলো। এরপর দুজনে ঢুকলো
বাড়ির ভেতরে। সামর্থ্য বেগম তখন নিজের ঘরে। তূর্য সায়রার হাত ধরে সামর্থ্য বেগমের ঘরে ঢুকলো। সামর্থ্য বেগম ওদের দেখে কিছু সময় চেয়ে রইলো। সায়রা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। তূর্য সায়রাকে বললো ”

_দাড়িয়ে আছো কেনো ? যাও তোমার দাদী শাশুড়ীকে সালম কর।

“সামর্থ্য বেগম হা করে চেয়ে আছে। সায়রা গিয়ে সালম করতে যেতেই সামর্থ্য বেগম বাধা দিলো। সায়রাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো ”

_তূর্য । তুই আমার কথা রেখেছিস। আমি জানতাম তুই ওকে ভালোবাসিস। তুই ওকে বিয়ে করবি। আমি খুব খুশি হয়েছি। তোদের টেকনাফে গিয়ে ভোর বেলায় বাগানে একসাথে দেখেই বুঝেছিলাম।

“এবার বাজ পড়লো তূর্যর মাথায়। কি বলছে সামর্থ্য বেগম এসব। সায়রাকে ভালোবাসে তূর্য। বাগানে এক সাথে দেখেছে।
কিছু ই মাথায় ঢুকলো না ৃএই বুড়ি মনে মনে কি বানিয়ে তাকে ফাসালো কে জানে। তূর্য সামর্থ্য বেগমকে বললো ”

_আমাকে ফাঁসানো শেষ। এবার নাতবউ নিয়ে খুশি থাকো। অফিস কামাই দিয়ে নাটক করতে হচ্ছে আমায়। গেলাম আমি।

“সামর্থ্য বেগম তূর্যকে নিষেধ করলো যেতে। তূর্য শুনলো না। বপর হয়ে এলো বাসা থেকে। ফেসে গেলো সায়রা।
তূর্য বের হতেই দেখলো নাফিস এসে হাজির হয়েছে।
নাফিসকে তূর্য কোনো কথা নূ বলে গাড়ির চাবি দিলো। নাফিস গাড়ি চালাচ্ছে। তূর্য বসে আছে ”

_এটা কি হলো স্যার ?

_আবার কি হলো ?

_আপনি সায়রা খাতুনকে এভাবে বিয়ে করে নিলেন। কি হলো কিছু ই বুঝলাম না। এমন করে কেউ বিয়ে করে।

_এটা শুধু মাএ নামে বিয়ে নাফিস। এসব বিষয়ে কেউ যেনো না যানে। রুহানি তো নয় ই। আমি সব কিছু নিয়ে ডিসটার্ব।

_নামে বিয়ে বলতে। দাদীর জন্য ?

_হু। জেদ ধরে বসেছে। সায়রাকে বিয়ে করলে আমি সুখী হবো। করেছি বিয়ে এবার সুখ উথলে পরবে।

_আমি কিন্তু দাদীর সাথে একমত স্যার।

_চুপ থাকো নাফিস।

_কিন্তু স্যার। সায়রা খাতুন এই নামমাত্র বিয়েটা করতে রাজী হলো কি করে ?

“তূর্য সামান্য হেসে বললো ”

_টাকা হলে বাঘের চোখ মেলে নাফিস। যদিও ও লোভী নয়। তবে আমার কিছু করার ছিলো না। দাদীকে মানাতে পারছিলাম না। আর ওমন সংসারী ও আমি হতে পারতাম না৷ তাই এসব করতে হয়েছে।

“নাফিসকে পুরো ঘটনা খুলে বললো তূর্য। নাফিস সব শুনে সায়রার জন্য দুঃখ পেলো। সব গিয়ে শুধু ওই মেয়েটার উপর ই পড়ে কেন কপ জানে। তবে নাফিস খুশি ও হলো। সায়রার সঙ্গে থাকলে তূর্য পরিবর্তন হবেই। তাতে নাফিস সিউর। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। এই সন্যাসী তূর্য না একদিন প্রেমিক পুরুষ হয়ে যায় ”

চলবে,,,