ম্যারেজ প্রোপজাল পর্ব-২০+২১

0
3

#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#২০

“তূর্য অফিসে এসে আবার বিজি হয়ে গেছে কাজে। সে যে একটু আগে বিয়ে করে এসেছে। তাকে দেখে মনে ও হচ্ছে না। আর সব কাজের চাপ এসে পড়েছে নাফিসের কাঁধে। তূর্য একটার পর একটা ফাইল সাইন করছে আর নাফিসের দিকে এগিয়ে দিচ্ছে। নাফিস শুধু চেয়ে আছে তার নববিবাহিত বসের দিকে। নাফিস হলে কবে দৌড়ে বউয়ের কাছে চলে যেতো। এই লোকের মনে কোনো ফিলিংস ই নেই।
এমন সময় রুহানি ঢুকলো কেবিনে। সায়রার জায়গায় আজ নাফিসকে দেখে রুহানি একটু খুশি হয়ে বললো ”

_তোর পিএ কোথায় আজ ? নাফিসকে দিয়ে কাজ করাচ্ছিস যে ?

“তূর্য কিছু বললো না। রুহানি এসে নাফিসের পাশের চেয়ারটায় বসলো। তূর্য রুহানির দিকে চেয়ে বললো ”

_কিছু বলবি ?

_হে, ভাবছিলাম আজ দাদির সাথে দেখা করতে যাবো। ছুটির পর নিয়ে যাস আমাকে।

“রুহানি কথাটা বলতেই নাফিস মুখ চেপে হেঁসে ফেললো। তূর্য পড়লো মহা বিপদে। এবার কি বলবে। বাড়িতে সায়রা। রুহানি গিয়ে যদি এসব দেখে। তুলকালাম করবে৷ এই মুহুর্তে কোনো ঝামেলা চায় না সে।তূর্য বললো ”

_এখন দরকার নেই। দাদির শরীর খারপ। পড়ে একদিন যাস।

_আমাকে নিতে চাস না সেইটা বল।

“নাফিস মাঝে থেকে বলে উঠলো ”

_না স্যার সত্যি ই বলেছে।

“রুহানি আর কিছু বললো না৷ বের হয়ে গেলো কেবিন থেকে। তূর্য আর নাফিস একা। নাফিস এবার বললো ”

_স্যার আমার মনে একটা প্রশ্ন ঘুরছে ?

_কী ?

_স্যার। এই এভাবে বিয়ে হলো।কিন্তু সায়রা খাতুনের পরিবার কি মানবে বিষয়টা। তারা তো আর জানবে না কিছু ।

“তূর্য নাফিসের দিকে চেয়ে এরপর বললো ”

_ওটা আমার দেখার বিষয় না। ওর টা ও বুঝবে।

“নাফিস চুপ করে রইলো। তূর্য ফের কাজে মন দিলো। মাথাটা খারাপ তার। এতো কিছু সে কেন ভাববে। সায়রার বিষয়ে ই বা কেন ভাববে সে। সায়রার বিষয় সায়রা ম্যানেজ করবে ”

“এদিকে সায়রাকে রেখে তো তূর্য চলে গেছে। সায়রা পড়েছে মহা বিপদে। সামর্থ্য বেগম মহা খুশি। নাতবউ পেয়ে। তিনি সায়রাকে নিজের কাছে বসিয়ে হাসিনাকে বললো আলমারি থেকে তূর্যর বউয়ের জন্য যেসব জিনিস রাখা আছে সেসব বের করতে। তিনি বের করে এনে দিলেন। সায়রা দেখলো অনেকগুলো শাড়ি সাথে গয়নার বক্স। সায়রা বলতে পারছে না কিছু। চুপ করে বসে আছে। সামর্থ্য বেগম শাড়িগুলো সায়রার দিকে এগিয়ে দিলো ”

_এগুলো এখন থেকে সব তোর। আমি চাই আমার নাতবউ শাড়ি পরুক৷ যেমন করে বৃষ্টি পড়তো।

“সায়রা অবাক হলো৷ বৃষ্টি। বৃষ্টি আবার কে। কিন্তু জিজ্ঞেস করলো না সামর্থ্য বেগমকে। সামর্থ্য বেগম গয়নার বক্সগুলো ও এগিয়ে দিলো ”

_এই সবগুলো গয়না তোর। রেখে দিবি না কিন্তু। পড়বি।

_এগুলো আমাকে কেন দিচ্ছেন দাদি।

_ওমা৷ তুই আমার একমাত্র নাতীর বউ৷ সব তো তোর ই। এই সংসার ও তোর। একটু সময় লাগবে গুছিয়ে নিতে। তবে আমার বিশ্বাস তুই পারবি।

“সায়রা দেখলো সামর্থ্য বেগমের কি ভরসা তার উপর। অথচ সে এই মানুষটার সাথে মিথ্যা অভিনয় করছে। সায়রা বললো ”

_দাদী এসব আপনার কাছেই রেখে দিন। আমি এসব,,,,।

“সায়রা কথা শেষ ও করতে পারলো না। সামর্থ্য বেগম সায়রার হাত দুটো চেপে ধরলো।সায়রা অবাক হয়ে গেলো। সামর্থ্য বেগম বললেন ”

_শোন, আমি জানিনা তূর্য তোকে কি করে বিয়ে করে এনেছে। আমি শুধু জানি তুই ওকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনবি৷ ও বড্ড একা। ওর ভেতরে কিছু নেই। তুই ওকে সঙ্গ দিবি বল। ওকে কখনো ছেড়ে যাবি না৷ ও কখনো মুখ ফুটে কিচ্ছু বলবে না৷ তোকে বুঝে নিতে হবে। তুই ওকে ছেড়ে যাবি না বল। কথা দে আমায়।

“কথাগুলো বলতে গিয়ে সামর্থ্য বেগম এর গলা জড়িয়ে এলো। সায়রা চেয়ে রইলো। কিছু ই বুঝতে পারছে না সে৷ কি বলবে৷ কি করবে৷ তূর্য একা মানে৷ কই তূর্যকে দেখে তো তা মনে হয় না৷ সায়রা সামর্থ্য বেগমকে শান্ত করতে বললো ”

_দাদি শান্ত হোন৷ এমন করে বলবেন না৷ আমি যাবো না ছেড়ে।

_ওকে তুই বুঝবি। ও একেবারে মাটির মানুষ। ওকে তুই একটু শান্তি দিবি সঙ্গ দিবি৷ ও তোকে সব দেবে।

“সায়রা কি বলবে বুঝে এলো না। সামর্থ্য বেগম সায়রার মাথায় হাত রেখে দোয়া করে দিলো। এরপর একটা সুন্দর শাড়ি বের করে সায়রার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো ”

_এখন ধর এটা। বাইরে চুমকি আছে। ও তোকে তূর্যর রুম দেখিয়ে দেবে। সাওয়ার নিয়ে এই শাড়ি পরবি। গয়না পরবি৷ এরপর আমার কাছে আসবি। যা।

“সায়রা উঠে এলো। হাতে একটা লাল রঙের জামদানী শাড়ি। সায়রাকে চুমকি নামের মেয়েটা তূর্যর ঘর দেখিয়ে দিলো। সায়রা ভেতরে ঢুকে দরজা আটকে দিলো। তূর্যর ঘরে ঢুকতেই সায়রা অবাক। সেদিন উঁকি দিয়ে একটু দেখেছিলো। কি সুন্দর গুছানো একটা রুম৷ সব সাদা রঙের। সাথে মিষ্টি একটা ঘ্রান। যেটা তূর্যর আশেপাশে থেকে সায়রা বহুবার পেয়েছে। সায়রা শাড়িটা ছোট সোফাটার উপর রেখে রুমটা ঘুরে দেখবে বলে এগিয়ে গিয়ে ও গেলো না। শাড়িটা নিয়ে গেলো ওয়াসরুমে।
ওয়াসরুমে ঢুকে সায়রা আরো অবাক৷ বড়লোকের ওয়াসরুম ও কতো সুন্দর হয় রে বাবা৷ একদম ক্লিন। সায়রা সাওয়ার নিলো। শাড়ির সাথে সব ই আছে। সায়রা শাড়ি পড়তে পারে৷ সে পড়লো শাড়িটা। যদিও ব্লাউজটা একটু ঢিলে। তবুও পড়ে বের হলো। ওয়াসরুমে সাদা রঙের যে তোয়ালে ছিলো সেটা মাথায় পেচিয়ে বের হলো। সেটা আবার টেবিলের চেয়ারের উপর রেখে ও দিলো খুলে।
এরপর নিজের ভেজা জামাকাপরগুলো নিয়ে তূর্যর রুম থেকে বের হয়ে এলো।
চুমকি সায়রার হাত থেকে জামা নিয়ে ছাদে চলে গেলো। সায়রা গেলো সামর্থ্য বেগমের কাছে। সামর্থ্য বেগম বসে ছিলো। সায়রাকে দেখে তিনি এক গাল হেসে বললো ”

_বাহ্। কি মিষ্টি লাগছে তোকে এই শাড়িতে। আয় আয় কাছে আয়৷।

“সায়রা সামর্থ্য বেগমের কাছে গিয়ে বসলো। এমন সময় সদর দরজায় ও কলিং বেল বেজে উঠলো। সামর্থ্য বেগম বুঝলো তূর্য এসেছে। তিনি সায়রাকে বললো ”

_শোন তুই গয়নাগুলো পর। আমি আসচি একটু৷

“সামর্থ্য বেগম হুইলচেয়ারে বসে নিজেই বের হলেন। বের হয়ে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিলো। তূর্য ই এসেছে। তূর্যকে দেখে আজ সামর্থ্য বেগম খুশিতে নিজেই এগিয়ে গেলেন ”

_বিয়ে করেছিস তুই। ভুলে গিয়েছিলি নাকি ?

“তূর্য সামর্থ্য বেগমের সামনে এসে দাড়িয়ে বললো ”

_বিয়ে তো তোমার জন্য করেছি। আমার মনে থাকলেি কি না থাকলেই কি। তুমি তো খুশি।

_আমি তো অনেক খুশি।

_তাহলেই হবে। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

_জিজ্ঞেস করলি না তোর বউ কোথায় ?

“তূর্য যেতে যেতে সামান্য হেঁসে বললো ”

_তোমার কাছেই হবে। জিজ্ঞেস করার কি আছে।

“তূর্য চলে গেলো নিজের ঘরে। নিজের ঘরে এসে তূর্য শার্ট খুলে রেখে দিলো ঝুড়িতে। এরপর সোজা ঢুকলো ওয়াসরুমে।
এর মাঝে সামর্থ্য বেগম নিজের ঘর থেকে সায়রাকে বের করে জোড় করে তূর্যর ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে। সায়রার ইচ্ছে করছে পালিয়ে যেতে। সামর্থ্য বেগম যতক্ষন না সায়রা ঘরে ঢুকলো সে চেয়ে রইলো।
সায়রা ভয়ে ভয়ে ঘরে ডুকলো। তূর্য তখন ওয়াসরুমে। পানির শব্দ আসছে। সায়রা কি করবে এবার। আবুলের মতো দাঁড়িয়ে থাকবে এখানে। সায়রা তাই করলো। তূর্য কয়েক মিনিটের মধ্যে একটা টাওজার পড়ে বের হলো কাঁধে একটা তোয়ালে। তূর্য বের হয়ে সায়রাকে দেখেই অবাক হয়ে গেলো। লাল রঙের শাড়ি পড়ে পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে আছে। তূর্য চমকে গিয়ে বললো ”

_তুমি আমার রুমে কেনো ? এখানে কি করছো ?

“সায়রা আরো অবাক। সে কি পুতুল নাকি। সবাই যার যার মতো কথা বলছে ”

_আমি কি ইচ্ছে করে এসেছি নাকি ? দাদী আসতে বলেছে।

_আর তুমি চলে এলে ?

“সায়রা এবার রেগে গেলো। তূর্যর দিকে দু কদম এগিয়ে গিয়ে বললো ”

_আসবো না তো কি করবো। আপনারা পেয়েছেন কি আমাকে। আপনি এনে ফেলে চলে গেলেন। আপনার দাদী আপনার ঘরে এসে বউ সেজে থাকতে বলছে। আর আপনি বলছেন আমি এখানে কেনো ?

“তূর্য আগে গিয়ে একটা টি শার্ট পড়লো। এরপর আবার এসে সায়রার সামনে দাড়ালো। কিছু বলতে যাবে তার আগেই টেবিলের উপর তূর্যর তোয়ালের দিকে। তূর্য সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”

_ওই তোয়ালে ওখানে কেনো ?

_আমি রেখেছি।

_তুমি আমার তোয়ালে ইউজ করেছো ?

“তূর্যর এমন অবাক হওয়া দেখে সায়রা তোয়ালের দিক এগিয়ে গিয়ে সেটা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলো। তূর্য এসে সেটা থাবা দিয়ে নিয়ে নিলো। সায়রা কোমরে হাত রেখে আরেক হাত দিয়ে তূর্যর হাত থেকে থাবা দিয়ে নিয়ে বললো ”

_এমন করছেন যেনো এই তোয়ালেতে হিরে লাগানো আছে৷ কই দেখছি না তো হিরে।

“তূর্য আবার তোয়ালে থাবা দিয়ে নিয়ে বললো”

_ননসেন্স, একজনের জিনিস আরেকজন এর ইউজ করতে হয় না জানো না৷

_নাহ্ জানিনা। ঢং যতো।

_চুপ থাকো একেবারে।

_আপনি চুপ থাকুন।

“এমন সময় দরজার সামনে এসে চুমকি দাড়ালো। ভাইজান বলে ডাকদিলো। তূর্য আর সায়রা এক সাথে চুমকির দিকে তাকালো। চুমকির হাতে একটা ট্রে। চুমকি বললো ”

_ভাইজান দাদি বলছে আজকে আপনাদের আর নিচে যাওয়ার দরকার নাই। খাওন নিয়া আইছি।

“তূর্য বুঝলো তার দাদী ইচ্ছে করে এমন কারসাজি করছে। সায়রা গিয়ে চুমকির হাত থেকে খাবারের ট্রে টা নিয়ে এসে টেবিলের উপর শব্দ করে রাখলো। এরপর তূর্যর দিকে চেয়ে বললো ”

_আপনাকে বলেছিলাম আমার কিছু শর্ত আছে। আপনি শুনেনি।

_আমারো কিছু শর্ত আছে।

“সায়রা তূর্যর সামনে এসে হাত দুটো ভাজ করে দাড়িয়ে বললো ”

_ঠিক আছে। আগে আপনারগুলো বলুন।

“তূর্য ভ্রু কুঁচকে চায়লো সায়রার দিকে। সে আগে তার শর্ত বলবে না। আগে সায়রার টা শুনবে এরপর বলবে ”

_নাহ্। আগে তুমি বলো।

“সায়রা বলতে শুরু করলো। এমনভাবে যেনো মুখস্থ করে রেখেছে ”

_ শর্তগুলো হলো, যেহেতু এটা একটা ডিল তাই সেটা আপনি ভুলে যাবেন না৷

“তূর্য তাচ্ছিল্য করে হেসে বললো ”

_প্রশ্নই উঠে না ভুলে যাওয়ার।

_শর্ত নাম্বার দুই হলো, আপনি আমার স্বাধীনতা কেড়ে নিতে পারবেন না৷ চমার যা ইচ্ছে আমি তাই করবো।

“তূর্য এবার ও তাচ্ছিল্য করে হেসে বললো ”

_আমার ঠেকা পড়েছে তো তোমার স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার। আর কাজ নেই আমার।

“সায়রা ভেঙচি কেটে বললো ”

_শর্ত নাম্বার তিন,কখনো ভুলেও আমাকে টাচ করতে পারবেন না। সব সময় নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখবেন।

“তূর্যর এবার কথাটা বেশ গায়ে লাগলো। এই মেয়ে তাকে কি বলতে চায়ছে। তূর্য সায়রার দিকে একটু ঝুকে বললো ”

_সায়রা আজমীর। নিজেকে কি ভাবো তুমি। তোমার মনে হয়,সাদমান শাহারিয়ার তূর্য তোমাকে চাট করতে যাবে। এতো খারাপ দিন এসেছে আমার।

“সায়রা ভারী অপমান বোধ করলো। চোখ ছোট ছোট

করে তূর্যর দিকে চেয়ে বললো ”

_মিস্টার সাদমান শাহারিয়ার তূর্য। আপনি নিজেকে কি ভাবেন হু। কোনোদিন যদি ভুলেও একটু টাচ লেগেছে না।

_কি করবে ?

_নারী নির্যাতনের মামলা।

_তার আগে তুমি গুম হয়ে যাবে।

“তূর্যর কথা শুনে সায়রা কিছু বললো না। সে আবার শর্ত বলতে শুরু করলো ”

_শর্ত নাম্বার চার, যেহেতু পরিস্থিতির কারনে আমাদের এক রুমে থাকতে হবে। তাই বিছানায় আমি ঘুমাবো।

“তূর্য এতটা সময় সব শুনে কিছু মনে না করলেও এবার সে সপ্তম আকাশ থেকে পরলো ”

_ও হ্যালো, রুমটা আমার। বিছানাটা আমার। আমি বিছানায় থাকবো। তুমি নিচে বিছানা করে নাও।

“তূর্যর কথা শুনে সায়রা কিছু সময়,তূর্যর দিকে চেয়ে রইলো। এরপর বললো

_আচ্ছা, একদিন আপনি বিছানায় ঘুমাবেন, একদিন আমি।

_আমি নিচে ঘুৃমাতে পারি না।

_তাতে আমার কি। আমি ও তো একদিন নিচে শুবো। তাতে কি হলো।

” তূর্য বললো ”

_ওকে। শর্ত এখানেই শেষ করো। আর নিতে পারছি না। আমি চিপাকলে পড়েছি বলে তোমার এসব ফালতু বকবক শুনছি।

“কথাটা বলে তূর্য গিয়ে টেবিলের উপর রাখা খাবার নিয়ে খেতে বসলো। খিদে পেয়েছে তার। সায়রা ও এসে চেয়ার টেনে বসলো। তূর্য লাল আটার রুটি খাচ্ছে সবজি দিয়ে। সায়রার জন্য ভাত আর মাংস। সায়রা অল্প একটু নিয়ে খেতে খেতে বললো”

_আমি কি অফিসে যাবো না ?

_হু। যাবে।

“সায়রা আর কিছু বললো না। তূর্য খাচ্ছে। সায়রা একবার তার দিকে তাকালো। তখন সামর্থ্য বেগমের বলা কথাগুলো মনে পড়লো। কানে বারবার বাজতে লাগলো। তূর্য ভীষণ একা। ওকে ছেড়ে যাবিনা কিন্তু। কিন্তু সামর্থ্য বেগম তো সত্যিটা জানে না। যদি কখনো যেনে যায়।
সায়রা চুপচাপ খেতে লাগলো।।তূর্য খাওয়া শেষে উঠে গেলো। সায়রা খেয়ে দেয়ে ট্রেটা নিচে গিয়ে রেখে আবার রুমে এলো। তূর্য তখন টেবিলটায় বসে ল্যাবটবে কাজ করছে। সায়রা রুমে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করলো না। হালকা চাপিয়ে দিলো। তার হাত ঘামছে। তূর্যর ও কেমন যেনো লাগছে। লাল শাড়ি পরে একটা মেয়ে বউ বেশে তার ঘরে। অথচ এমন দিন তূর্য কল্পনা ও করেনি বোধহয় কখনো। সায়রা ধির পায়ে গিয়ে বিছানায় বসলো। তূর্য বললো ”

_তোমার পরিবারকে কি বলেছো? সরি আমি এসব বিষয়ে আগে জিজ্ঞেস করিনি।

“সায়রা নিচের দিকে চেয়েই বললো ”

_আগে যখন করেননি তাহলে আর করতে ও হবে না। এটা আমার কাজ। কাজ শেষ হবে।আমি আমার গন্তব্যে ফিরে যাবো।

“তূর্য কিছু বললো না। এদিকে অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে। সায়রা জিজ্ঞেস করলো ”

_অনেক রাত হয়েছে। আপনি বিছানায় আজ থাকবেন নাকি আমি ?

“তূর্য সায়রার দিকে না চেয়ে ই বললো ”

_তুমি থাকো আজ।

“সায়রা আর কথা বললো না। শুয়ে পড়লো। তূর্য বসে আছে উল্টো দিকে ঘুরে। সায়রা আরেকদিকে ঘুরে শুয়েছে। এখনো লাইট জ্বলছে। সায়রা বন্ধ করতে বললো না। তার চোখে ঘুম। সে কিছু সময়ের মধ্যে ই ঘুমিয়ে গেলো। সায়রা একদিকে শুয়ে ঘুমাতে পারে না। তার মধ্যে পড়েছে শাড়ি। সায়রা আবার এদিক ফিরে শুয়ে পড়লো। অনেক সময় যাওয়ার পর তূর্য ঘুরে টকবার তাকালো। সঙ্গে সঙ্গে তার চোখ থমকে গেলো। সাদা বিছানায় টকটকে লাল শাড়ি পরিহিত সায়রা ঘুমন্ত অবস্থায়। তূর্যর মনে হলো নাহ্। এসব তার সাথে হচ্ছে। সত্যি ই কোনো মেয়ে তার বিছানা দখল করে নিয়ে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। তূর্য চোখ সরাতে পারলো না এই ঘুমন্ত মুখ থেকে। ভেতর থেকে তার পুরুষসওা তাকে চিৎকার করে বলতে লাগলো। তূর্য ওই সুন্দরী রমনী তোর বউ। তোর ঘরের ঘরনী সে।
তোর অর্ধাঙ্গিনী সে। তোর সম্পদ সে।
তূর্য ধিক্কার দিলো নিজেকে নিজে। কি ভাবছে সে এসব। তূর্য সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাড়ালো। রুমের লাইটটা বন্ধ করে দিলো। শরীর ঘামছে তার। সোজা বারান্দায় গিয়ে চেয়ারে বসলো। রুমে থাকা যাবে না। এর জন্য ই বলে নারী ভয়ংকর। তূর্যর এই মুহুর্তে একটা গান মনে পড়লো। খুব করে মনে হলো এটাই তার পরিস্থিতি হতে যাচ্ছে ”

“””” কার্নিশে আলতা মাখানো””””
“””” দিনেরা ঢলে পড়ে রাতে””
“”””” তারপরে রাএী জাগানো”””””
“””””” বাকিটা তোমারই তো হাতে””””
“”””””জেগে জেগে আমি শুধু ঘুমিয়ে পড়তে চাই,,,,তোমাকে,,,,,,,,,,

চলবে,,,

#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#২১

“সারারাত তূর্য বারান্দার চেয়ারে বসে ছিলো। ঘুম হয়নি একেবারে। এদিকে সায়রা নরম বিছানা পেয়ে চিৎপটাং হয়ে ঘুমাচ্ছে। তূর্যর চেয়ারে বসেই চোখ লেগে গিয়েছিলো৷ সে যখন উঠলো তখন সকাল সাড়ে সাতটা। তূর্য চেয়ার থেকে উঠে রুমে এলো। এখনো বাতি জ্বলছে। সায়রা সাদা রঙের পাতলা চাদরটা গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে। যেটা তূর্যর। তূর্য একবার সেদিকে চেয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো। বিরক্ত লাগছে তার সব কিছু। এভাবে তার রুম। তার বিছানা৷ তার সব কিছু দখল হয়ে গেলো। আর সে সেটা মেনে ও নিচ্ছে। তূর্য হাত মুখ ধুয়ে বের হয়ে রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো। জিম করবে। তূর্য কানে একটা ইয়ারফোন লাগালো। সেটা গলার পেছনে দিয়ে এনে কানে লাগিয়েছে। এরপর ট্রেডমিল এ উঠে দাড়ালো। কানে সুন্দর একটা হিন্দি গান বাজছে। তূর্য সেটার তালে তালে জিম করছে ”

“”””””””aankhe hai nam meri sanse chuban meri ,,,,
zakham hua phir hara

dil ke wirane main mere fasane main
tu hi to har dum raha

tera mera rishta purana “””””

“আধ ঘন্টা সময় নিয়ে তূর্য জিম করলো। এর মধ্যে অনেকটা ঘেমে গেছে সে। একটা পানির বোতল নিয়ে পানি খেলো। এরপর একটু বসে থেকে রুমে এলো পুনরায়। সামর্থ্য বেগমের ঘরের দরজা এখনো বন্ধ। তূর্য রুমে ঢুকে দেখলো সায়রা এখনো গভীর ঘুমে। খুব আরাম করে ঘুমাচ্ছে। মনে হচ্ছে জগৎ সংসার ভুলে বসে আছে। তূর্য দরজায় ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে কিছু সময় সায়রার দিকে চেয়ে রইলো। নাহ্। এতো সুখ সয্য হচ্ছে না। তূর্যকে এতোগুলা শর্ত দিয়ে তার ই বিছানা কব্জা করে বসে আছে। তূর্য ধির পায়ে এগিয়ে এলো বিছানার কাছে। এরপর বেড সাইডে রাখা টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে সায়রার মুখের উপর একটু ঢেলে দিলো। সায়রা গভীর ঘুমে ছিলো। মুখের উপর হুট করে পানি পড়ায় সে ধড়ফড় করে উঠলো। তাকিয়ে দেখলো তূর্য দু হাত ভাজ করে দাড়িয়ে আছে। সায়রার রাগ উঠে গেলো ”

_এটা কি করলেন আপনি ? পানি ঢেলে দিলেন কেনো ?

_তোমার এতো সুখ আমার সয্য হচ্ছে না। আমার বেড থেকে নামো৷

“সায়রা ভ্রু কুঁচকে তূর্যর দিকে চেয়ে বললো ”

_আপনার বেডে একটু ঘুমিয়েছি বলে আপনি আমার উপর পানি ঢেলে দিবেন৷

_হে দিলাম তো। এখন জলদি উঠো। আমার বেড সুন্দর করে গুছিয়ে রাখবে। আমি সাওয়ার নিতে যাচ্ছি।

“তূর্য হেসে ওয়ার ড্রপ থেকে নিজের জামাকাপড় নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো। সায়রা থ মেরে বিছানায় ই বসে আছে। ইস, কি শান্তিতে ঘুমিয়েছিলো৷ এই শয়তান লোকটার এটা ও সয্য হলো না। সায়রা মনে মনে বললো যাই হয়ে যাক। সে বিছানা ছাড়বে না। তূর্য আসা পর্যন্ত সে বিছানায় ই বসে থাকবে।
করলো ও তাই। তূর্য অনেকটা সময় নিয়ে সাওয়ার নেয়। সায়রা ততক্ষণে আবার শুয়ে পড়েছে বিছানায় ই৷ তূর্য ওয়াসরুমে থেকে বের হয়ে সায়রাকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে মহা বিরক্ত হয়ে বললো ”

_তুমি আবার শুয়ে আছো। আমার রুম মেছি থাকা আমার পছন্দ না৷ জলদি উঠো।

“সায়রা বালিশ থেকে একটু মাথা তুলে তূর্যর দিকে তাকালো। একটা কালো ফর্মাল পেন্ট আর কালো শার্ট পড়ে আছে। সায়রা ওর দিকে চেয়ে বললো ”

_আর যদি না উঠি৷ কি করবেন ?

_বারান্দায় থেকে নিচে ফেলে দেবো৷

_ইস,মাডার কেস এর আসামি হয়ে যাবে।

_আমার বেড থেকে নামবে তুমি ?

“সায়রা এবার আর কিছু বললো না। উঠে দাড়ালো। তূর্য তখন টাই খুজছিলো কোনটা পড়বে। সায়রাকে উদ্দেশ্য করে বললো ”

_বিছানাটা কে গুছাবে ?

_আমি।

_তাহলে দাড়িয়ে আছো কেনো ? বউ তুমি নিজের দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করো।

“কথাটা বলতে বলতে তূর্য টাই নিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে পড়তে লাগলো। সায়রা মনে মনে হাজারটা বকা দিচ্ছে তূর্যকে। আর বিছানা ঠিক করছে। তূর্য সেটা আয়নায় ঠিকই দেখতে পাড়ছে।
এমন সময় দরজার সামনে এসে কেশে উঠলো চুমকি। হাতে তার অনেকগুলো শাড়ি আর গয়না। চুমকি এসে বললো ”

_ভাবি।

“সায়রা দরজার দিকে চেয়ে দেখলো চুমকি দাড়িয়ে। সায়রা শেষের বালিশটা ঠিক করে রেখে চুমকির দিকে এগিয়ে গেলো। চুমকি হাতের শাড়ি গয়নাগুলো সায়রার,দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো ”

_দাদি এইগুলা পাঠায়ছে। কইছে গোসল কইরা শারি গয়না পইরা নিচে যায়তে৷

“কথাটা বলে চুমকি চলে গেলো। তূর্যর রেডি হওয়া শেষ। ততক্ষণে রুম ও ক্লিন। তূর্য ল্যাবটব নিয়ে বিছানায় বসেছে৷ সায়রা শাড়ি আর গয়নাগুলো এনে বিছানায় রেখে তূর্যর দিকে চেয়ে বললো ”

_এসব কি হচ্ছে আবার ?

“তূর্য ল্যাবটবের দিকে চেয়েই বললো ”

_কি হচ্ছে আবার ?

_এতো সকালে আমায় কেন গোসল করতে হবে ? আমি পারবো না।

“সায়রা গাল ফুলিয়ে দাড়িয়ে রইলো। সায়রার কথা শুনে তূর্য কেশে উঠলো। দাদী পারে ও। তূর্য আস্তে করে বললো”

_ইচ্ছে না হলে করো না।

“কথাটা বলে তূর্য ল্যাবটব রেখে বেরিয়ে গেলো। সায়রা খুশিই হলো। সে ও ওয়াসরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে নিচে গেলো। তাকে ও তো অফিসে যেতে হবে। সায়রা মিচে নামতেই দেখলো সামর্থ্য বেগম আর তূর্য বসে আছে খাওয়ার টেবিলে। সায়রা গিয়ে দাড়ালো। সামর্থ্য বেগম বসতে বললেন। সায়রা বসলো। তূর্যর মুখোমুখি চেয়ারে। সামর্থ্য বেগম ভালো করে সায়রার দিকে খেয়াল করে বললেন ”

_চুমকিকে দিয়ে না শাড়ি পাঠালাম। পরিসনি কেন ?

“সায়রা এবার পড়লো বিপদে। এক তো সে হিসেবে এই বাড়ির বউ। সে উঠেছে সবার পড়ে। তাও তূর্য পানি ঢেলে উঠিয়েছে। তার মধ্যে শাড়ি না পড়ে ধরা পড়ে গেছে। সায়রা আমতা আমতা করে বললো ”

_দুপুরে গোসল করে পড়বো তাই পরিনি।

_সে কি। তুই গোসল ও করিসনি। এভাবে কেউ আসে বোকা৷ আমার নাতী তো ঠিকই গোসল করে ফিটফাট হয়ে এসেছে।

“সায়রা তূর্যর দিকে তাকালো। সে মাথা নিচু করে নিজের মতো খেয়ে যাচ্ছে। সায়রা সামর্থ্য বেগমের দিকে গাল ফুলিয়ে তাকালে সামর্থ্য বেগম মুচকি হেঁসে সায়রার গালে হাত বুলিয়ে বললো ”

_গাধী, স্বামীর সাথে থাকলে ফরজ গোসল করতে হয়। নাস্তা করে গিয়ে গোসল করে নিবি৷ কেমন।

“সামর্থ্য বেগমের কথা শুনে তূর্য কেশে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে পানি খেয়ে উঠে দাড়িয়ে গেলো ”

_কি হলো তোর ?

_আমার খাওয়া শেষ। রুমে যাচ্ছি।

“তূর্য দ্রুত পায়ে স্থান ত্যাগ করলো। সায়রা নিজেও হতবাক। কি লজ্জার কথা। স্বামীর সাথে থাকলে গোসল করতে হয়। তার স্বামী গোসল করেছে।।সে করেনি। কিন্তু কথা হলো। সে তো স্বামীর সাথে থাকেইনি। সায়রা ও খাওয়া রেখে উঠে গিয়ে বললো ”

_আমি একটু আসছি দাদি।

_যা। বর কে বিদায় দিয়ে আয় ।

“সায়রা উঠে সোজা উপরে চলে গেলো। রুমে ঢুকে ই দেখলো তূর্য বের হচ্ছে। সায়রাকে দেখে থেমে গেলো। সায়রা লজ্জায় শেষ। ইস। তূর্য সায়রার দিকে চেয়ে সামান্য হেঁসে বললো ”

_সায়রা আজমীর, এখন থেকে রোজ সকালে সাওয়ার নিয়ে ভেজা চুলে নিচে যাবে। বুঝলে।

“সায়রা রাগে গজগজ করতে করতে বললো ”

_আপনি একটা খারাপ লোক। আমি পারবো না কিছু করতে। কোন দুঃখে গোসল করতে যাবো আমি।

“তূর্য একটু সায়রার দিকে ঝুকে। চোখের দিকে চোখ রেখে বললো ”

_দুঃখে নয় সুখে। যাতে দাদী বুঝতে পারে রোজ স্বামীর সাথে তুমি অতুলনীয় রাত কাটাচ্ছো।

_ছিহ্।

_ছিহ্ কি ?

_চুপ করুন। আপনাদের দাদী নাতিনের মুখ একদম পাস করা।

“তূর্য হেঁসে ফেললো। সোজা হয়ে দাড়িয়ে বললো ”

_অফিসে যাচ্ছি। তুমি কয়েকটা দিন সময় নাও। এরপর আবার জয়েন করো।

“সায়রদ খুশি হয়ে চেয়প বললো ”

_ছুটি দিচ্ছেন ?

_দিচ্ছি না। দিতে হচ্ছে।

_টাকা কেটে নেবেন না তো ?

“সায়রার কথা শুনে তূর্য হতাশ। এই মেয়ে শুধু টাকা কাটার চিন্তা করে। তূর্য তাকে নিজের ঘরে এনে বসিয়েছে। সমস্ত কিছুর ভাগ নিয়ে নিয়েছে। তাও নাকি টাকা কাটার চিন্তা । তূর্য বেরিয়ে যেতে যেতে বললো ”

_সব টাকা কেটে রাখবো। এক টাকা ও পাবে না তুমি।

“তূর্য বেরিয়ে গেলো। সায়রা ছুটি পেয়ে মহা খুশি। কিন্তু মসিবত এখন এই সকালে তাকে গোসল করে সবার সামনপ গিয়ে প্রমান করতে হবে রাতে সে তার স্বামীর সোহাগী হয়ে ছিলো। আহা। কি মিথ্যা। আসলে তো সব ছাই। সায়রা একটা শাড়ি নিলো নীল রঙের। এরপর ওয়াসরুমে চলে গেলো ”

“তূর্য যে সময় অফিসে ঢুকেছে নাফিস ও সে সময় অফিসে ঢুকছে। তূর্যকে দেখে শুধু মিটমিট করে হাসছে নাফিস। তূর্য খেয়াল করলে বিষয়টা ”

_আমাকে কি আজ মেয়েদের মতো লাগছে নাফিস ?

_নাউজুবিল্লাহ স্যার। এসব কি বলেন ।

_তাহলে আমাকে দেখে হাসার কারন কি ?

“নাফিস আবার একটু হেসে বললো ”

_আসলে স্যার এতোদিন আপনি অবিবাহিত ছিলেন তো। হুট করে বিবাহিত হয়ে গেলেন। কেমন যেনো লাগছে।

“তূর্য অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো ”

_কেমন লাগছে ?

_দশম আশ্চর্য স্যার। যেটা কখনো হওয়ার না সেটা হয়ে গেছে।

“তূর্য আর নাফিস এক সাথপ নিজের কেবিনে ঢুকলো। তূর্য নিজের চেয়ারে বসে বললো

_তোমাদের অনেক মজা লাগছে। আমার বিরক্ত লাগছে। আমার সব কিছু শেয়ার করতে হচ্ছে। ভাবতে পারো তুমি৷

_স্যার তা তো করতেই হবে। পুরুষ মানুষ তো নিজেকেই শেয়ার করে দেয় বউয়ের কাছে।

” নাফিসের কথা শুনে তূর্য অবাক হয়ে বললো ”

_কীহ্ ?

_কিছু না স্যার। সায়রা খাতুন কি আর আসবে না অফিসে ?

_আসবে। কয়েকদিন যাক। দাদীর সঙ্গে থাকুক এখন।

“তূর্য কাজে মন দিলো। নাফিস নিজের কাজগুলো বুঝে নিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে এলো।
জেরিন আজ একা বসে। নাফিস যেতে বললো ”

_আহারে জনম দুঃখীনি।

“জেরিন জানে নাফিস কথাটা ওকে উদ্দেশ্য করেই বলেছে। রোজ এমন করে। খোঁচা মেরে কথা বলবে। কোনোদিন বলতে না পারলে রাতে মেসেজ দিয়ে বলবে। সেটা না পারলে জেরিনের পোস্ট এ কমেন্ট করে বলবে। তবুও ছাড়বে না। জেরিন ও কম যায় না। সে ও কোমর বেঁধে ঝগড়ায় নামে। রাতের বেশিরভাগ সময় জেরিনের সময় কাটে নাফিসের সাথে ঝগড়া করে। এই তো সেদিন রাতে। নাফিস তাকে মেসেজ দিলো ”

_কটকটি আছো ?

“জেরিম তখন ড্রামা দেখছিলো। তখন অলরেডি রাত দুটো বাজে। এমন সময় নাফিসের মেসেজ দেখে জেরিন রিপ্লাই করলো ”

_বলুন। কি বলবেন ?

_তুমি কি গরুর মাংসের কালা ভূনা রান্না করতে পারো ?

“এতো রাতে নাফিসের এমন মেসেজ দেখে জেরিন হতবাক। তবুও বললো ”

_পারি। কেনো ?

_রেসেপিটা একটু বলো তো। অনেক দরকার। একটু সাহায্য করো কটকটি।

“জেরিন ভাবলো হয়তো খুব দরকার। একা থাকে খেতে ইচ্ছে করছে হয়তো। জেরিন তখন তাড়াহুড়ো করে ইউটিউব এ রেসেপি দেখলো ড্রামা দেখা রেখে। এরপর সুন্দর করে সেসব লিখে নাফিসকে পাঠালো। তারপর লিখলো ”

_আপনি এতো রাতে এখন কালা ভূনা রান্না করবেন ?

“নাফিস রিপ্লাই করলো ”

_আমি কখন বললাম আমি রান্না করবো ?

_তাহলে ?

_আসলে আমার না ঘুম আসছিলো না। মাথায় শুধু কালা ভূনা ঘুরছিলো। ভাবলাম তোমাকে একটু জিজ্ঞেস করি। সময় পার হবে। ততক্ষণে ঘুম ও চলে আসবে। এখন আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে। বায় কটকটি।

“নাফিসের এই মেসেজ দেখে জেরিনের মাথায় আগুন ধরে গেলো। ইচ্ছে করলো এওোগুলো বকা দিতে। এতো রাতে সে সময় নিয়ে এই রেসিপি দেখলো। এরপর বললো। আর এই লোক ওর সাথে মজা নিলো। পর মুহুর্তে জেরিনের মনে হলো। সে কেনো রেসপি দেখলো। সপ তে নাফিসকপ ও বলতে পারতো ইউটিউব দেখতে। নাহ্ জেরিনের সরলতার সুযোগ নিলো লোকটা । এমন মাঝে মাঝে ই হয়ে থাকে ”

“সায়রা গোসল করে শাড়ি পরে। সে গয়না থেকে হালকা কয়টা গয়না পড়লো। তবুি ভয় লাগছিলো। যদি হারিয়ে যায়। সবগুলো সোনার গয়না। সায়রা হাতে দুটো চিকন চুড়ি পড়লো। গলায় একটা চেইন পড়লো। নাকে ফুটো নেই তার। তাই নোসপিন পড়েনি। এরপর সায়রা চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে বের হলো। নিচে গিয়ে দেখলো সামর্থ্য বেগম দুপুরের রান্না নিয়ে কথা বলছে। সায়রার খুব ইচ্ছে করলো রান্না করতে। একটু বউ তো হওয়া ই যায়। হোক না নকল বউ তাতে কি। সপটা তো তার আর তূর্যর মধ্যে। সায়রা গিয়ে দাঁড়াতেই সামর্থ্য বেগম খুশি হয়ে বললেন ”

_এই তো এবার লাগছে একেবারে নতুন বউ।

“সায়রা একটু লজ্জা পেলো। এরপর বললো ”

_দুপুরের রান্নার কথা চলছে বুঝি ?

_হ্যা।

_আজকে আমি রান্না করি দাদী ?

_না, তুই নতুন বউ। এতো মানুষ থাকতে তুই কেন রান্না করবি।

_বউ বলেই তো করবো। এখন থেকে আমি ই রান্না করবো। চুমকি রান্না ঘরে চলো যাই।

“চুমকি হেসে বললো ”

_চলেন ভাবি।

“সামর্থ্য বেগম বললো ”

_আমাকে নিবি না সঙ্গে ?

“সায়রা সামর্থ্য বেগমকে ও রান্না ঘরে নিয়ে গেলো। তবে কিছুটা দূরে বসিয়ে রাখলো। সায়রা রান্না করায় এক্সপার্ট। সব শিখেছে সে। সামর্থ্য বেগম এর মাছ খুব পছন্দ। তাও রুই মাছ আর নদীর পাবদা মাছ। সায়রা ভাত বসিয়ে দিয়ে সব নিজেই করলো। আজ সব কেমন অন্য রকম লাগছে। সায়রার মনে হলো সে বুঝি আসলেই তার সংসারে রান্না করছে। সব ঠিক থাকলে হয়তো এতোদিনে সত্যি ই সায়রার একটা সংসার হতো। এসব ভেবেই সায়রা রান্না করছিলো সাথে টুকটাক সামর্থ্য বেগম এর সাথে কথা বলছিলো।
এর মাঝে সামর্থ্য বেগম এর ঔষধ খাওয়ার সময় হলে হাসিনা তাকে নিয়ে গেলো। সায়রা পাবদা মাছ রান্না করছে তখন চুমকি বললো ”

_ভাইজান তো এসব খাইবো না ভাবি। ওনার তো আলাদা খাওন।

_ওনার জন্য আলাদা কি রান্না হবে ?

_বেরাউন রাইস না কি জানি। আর সবজি সেদ্ধ।

“চুমকির কথা শুনে সায়রা হেসে ফেললো। বললো ”

_ওটা বেরাউন রাইস না চুমকি। ব্রাউন রাইস।

_হ ওইটা ই।

_আচ্ছা চাল বের করে দাও। আমি রান্না করছি। আর সবজিগুলো কেটে দাও।

“সামর্থ্য বেগম নিজের ঘরে গিয়ে তূর্যকে কল করলো। নাতবউ প্রপ্রথম রান্না করেছে। তার নাতী ই খাবে না তা কি করে হয়। তূর্য তখন মিটিং এ ছিলো। সামর্থ্য বেগম এর কল দেখে কাটলো না ককটা ধরলো ”

_জলদি বলো। আমি মিটিং এ আছি।

_রাখ তোর মিটিং। একটু পড়ে নাফিস আর রুহানিকে নিয়ে আসবি। দুপুরে আজ বাসায় খাবি।

_সময় হবে না দাদী।

_যা বলেছি তাই। রাখলাম।

“সামর্থ্য বেগম দিলেন কল কেটে। তূর্য চেয়ে রইলো ফোনের দিকে। নাহ্ ভালো ফাঁসা ফেঁসেছে তো সে। বউয়ের থেকে তার দাদর বউ তাকে বেশি চাপ দিচ্ছে। এতো চাপ আর নেওয়া যাচ্ছে না। রোজ আবদার বেড়েই যাচ্ছে ”

চলবে,,,