#ম্যারেজ_প্রোপজাল.
#অরিত্রা_অর্নি
#২
“সায়রা কে নিয়ে যাওয়া হয়েছে রুহানির কাছে। রুহানির কেবিনে আসতেই দেখলো সে লিপস্টিক পড়ছল। নাফিস কেশে উঠে। সঙ্গে সঙ্গে রুহানি লিপস্টিক রেখে সোজা হয়ে বসে ”
_আরেহ, নাফিস। তূর্য কি ডেকেছে আমায় ?
_নাহ, এই যে ওনাকে পাঠিয়েছেন ইন্টারভিউ নিতে।
_আমি নিবো?
_জি।
_কিন্তু আমার তো তূর্যর সাথে আউট সাইড মিটিং এ যাওয়ার কথা ছিলো।
_যাচ্ছেন না। আপাতত যে কাজ দিয়েছে সেটা করুন। আসছি৷
“নাফিস রুহানির হাতে সায়রার ফাইলটা ধরিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলো। সায়রা পুরো বিষয়টা ই খেয়াল করলো
রুহানি বেশ বিরক্ত বোধ করলো। এমনিতেই সুযোগ হয় না তার তূর্যর সাথে থাকার কোথাও যাওয়ার। রুহানি কোনো রকমে সায়রার ইন্টারভিউ নিলো৷ সায়রা বুঝলো এখানে ও তার চাকরি হচ্ছে না। সে মন খারাপ নিয়ে ই বের হলো অফিস থেকে। সকাল থেকে পানি ছাড়া এখনো কিছু পেটে পড়েনি। অফিস গেটের সামনে দাড়ালো সায়রা রিকশার জন্য। এমন সময় ওর পেছন থেকে গাড়ির হর্ন এর শব্দ এলো। সায়রা পিছন ঘুরে চাইতে ই দেখলো একটা কালো রং এর বিএমডব্লিউ যার ভেতরে সেই সাদমান শাহারিয়ার তূর্য আর নাফিস বসে। সায়রা সাইড হয়ে দাড়ালো। গাড়িটা চলে গেলো ওকে পাশ কাটিয়ে। পরপর ই রিকশা পেলো সে উঠে গেলো।
বাড়িতে যেতে না যেতে ই বাইরে থেকে শব্দ পেলো। নিশ্চয়ই কোকিলা কারো সাথে ঝগরা করছে। বাড়ির ভেতরে গিয়ে দেখলো তাই। পাশের বাড়ির মহিলা এসেছে তার সাথেই কথা কাটাকাটি হচ্ছে। সায়রা বিষয়টা এড়িয়ে যেতে পারলো না। সে মহিলার দিকে এগিয়ে গেলো”
_কি হয়েছে চাচি। এমন করছেন কেনো ?
_কেমন করলাম। তোমার মা দেড় হাজার টাকা ধার নিলো সেই কবে। আর দিলো না। আমাট এখব দরকার। চাইতে এসেছি উল্টো আমার সাথে ঝগরা করছে।
“সায়রা চায়লো কোকিলা বেগমের দিকে। রাগে ফুসছে তিনি। সায়রা মহিলাটাকে উদ্দেশ্য করে বললো ”
_চাচি এখন একটু টানাটানির মধ্যে আছি আমরা। আর ক’টাদিন সময় দিন। দিয়ে দিবো আপনার টাকা।
_আর কতো দিম শুনি। বারবার আসবো নাকি আমি।
_এইতো আর এক সপ্তাহ। উনি নিজে গিয়ে আপনার টাকা দিয়ে আসবে ।
“মহিলাট চলে গেলেন। কোকিলা এবার এগিয়ে এলো সায়রার দিকে ”
_ওই মুখপুরি। এক সপ্তাহ পরে টাকা পাবো কই। তোর বাপ তো বিছানায় শুইয়া থাকে। টাকা কে দিবো শুনি।
“সায়রার ইচ্ছে করলো মুখের উপর কিছু বলতে৷ কিন্তু বললে ই সমস্যা সৃষ্টি করবে এই মহিলা৷ সায়রার শাস্তি তার বাবা পাবে। এমনতে ই জব্বার সাহেবের জীবন কাটে অবহেলায়। কোন কপালের দোষে যে জব্বার সাহেব এই মহিলাকে বিয়ে করেছিলো কে যানে। নিজের জীবন ও শেষ করেছে সাথে সায়রার ও ”
_টিউশনির বেতন পেলে আমিই দিয়ে দিবো। আর আমাকে মুখপুরি বলবেন না। নিজের কাজ করুন গিয়ে।
“সায়রা চলে গেলো নিজের ঘরে। পেটে ইদুর দৌড়াদৌড়ি করছে। নিশ্চয়ই এখনো সকালের নাস্তা তার জন্য রেখে দেওয়া হয়নি। ঘরে গিয়ে জামা কাপর পাল্টে সায়রা চুলে খোপা করতে করতে বের হয়ে রান্না ঘরো গেলো। কোকিলা বেগম ডাল রান্না করছেন। সায়রার খিদে পেয়েছে খুব। ভাতের হারি থেকে নিজেই ভাত তুলতে তুলতে বললো ”
_আব্বুকে সকালের ঔষধ দিয়েছেন ?
_হু।
“সায়রা আর কিছু বললো না। ভাত প্লেটে নিয়ে তরকারির বাটির ঢাকনা খুলতেই দেখলো চার টুকরো মাছ রান্না হয়েছে। ডাল এখনো চুলায়। সায়রা বুঝলো ইচ্ছে করেই কোকিলা বেগম এমন করছে। সায়রা ভাতের প্লেট রেখে বললো”
_ডাল হয়ে গেলে ডাকবেন। আমি ঘর গোছাচ্ছি।
“খিদে পেট নিয়ে ই সায়রা ঘর গোছালো। ছোট বোন দিশা আর ছোট ভাই দিশান। এরা কোকিলার সন্তান। দিশাকে কোকিলা ঘরের কোনো কাজ করতে দেয় না। যতো দেরি ই হোক বাড়ির রান্নার কাজটা ছাড়া সব কাজই সায়রা করে। আগে কষ্ট হতো তবে এখন আর হয় না। এসব এখন সয়ে গেছে। সব গুছিয়ে সায়রা রান্না ঘর থেকে খাবার নিয়ে আগে জব্বার সাহেবকে খাইয়ে দিলেন। তিনি নিজের হাতে এখন আর খেতে পারেন না। এরপর সায়রা গেলো গোসলে। তাকে আবার টিউশনিতে যেতে হবে বিকেলে। যাওয়ার আগেই কোকিলার রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলো দিশা কলেজ থেকে ফিরেই খেতে বসেছে। সায়রা আর দাড়ালো না। পরের থেকে আর কিসের আসা করবে সে। তার কপাল তো পুড়েছে বহু আগে ”
“নাফিস গাড়ি চালাচ্ছে। পাশেই তূর্য বসে ল্যাবটপে কাজ করছে। কাজের বেলায় এক বিন্দু ছাড় নেই তার।
নাফিস একটু পরপর তূর্যর দিকে তাকাচ্ছে। ঘোমরামুখো একটা লোক। এই জীবনে এই লোককে হাসতে দেখেনি নাফিস৷ এর সাথে থাকতে থাকতে নাফিস নিজে ও এমন হয়ে যাচ্ছে।
নাফিস অনেকটা সময় চুপ ছিলো এবার বললো ”
_আজকের মিটিং এ নাকি রুহানি ম্যাডামকে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো স্যার ?
_কে বললো এই কথা ?
_রুহানি ম্যাম নিজেই বললেন।
_তুমি আজকাল রুহানির কথা কানে নিচ্ছো নাফিস। তোমার অধপতন দেখে খারাপ লাগলো।
_ওই সায়রা মেয়েটাকে নিয়ে গেলাম না তখন ই তো বললো। আপনার সাথে যাওয়ার কথা।
_সায়রা। সায়রা কে?
_ওই যে ওই মেয়েটা। ওর নাম ই তো সায়রা বললো।
_ওহ, ওই ননসেন্স মেয়েটা। রুহানিকে বলেছিলে সব। ওকে যেনো ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রাখে।
“নাফিস এবার হাসলো ”
_ঘন্টার পর ঘন্টা। রুহানি ম্যাম তো তখনই ওই মেয়েকে ছেড়ে দিয়েছে। আসার সময় তো গেটের সামনে ই দেখলাম।
_এই রুহানিকে আমি আগে অফিস থেকে বের করবো। শুধু রিলেটিভ বলে চুপ থাকছি। চিপকালি একটা মেয়ে। ( বিরক্ত হয়ে বললো তূর্য)
“গন্তব্যে পৌঁছে তূর্য আর নাফিস গেলো মিটিং এ। নতুন কিছু আইডিয়া দরকার। সেসব নিয়ে ই কাজ করতে হবে। সেখানে বসেই দুপুরের খাবার খেয়ে নিলো ওরা।
বেশ লম্বা একটা সময় মিটিং করে শেষে বিকেল চারটার সময় বের হলো তূর্যরা। হাতের ফাইলগুলো নাফিসের দিকে এগিয়ে দিয়ে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসলো। নাফিস পাশে বসলো। গরম বাইরে খুব”
_বাসায় যাবেন তো এখন?
_হুম।
_দাদি আজকে মানে৷ আপনার সাথে দেখা করে যাওয়ার সময় পায়ে একটু ব্যাথা পেয়েছে।
“তূর্য তরিৎ গতিতে তাকালো। যেনো কি অন্যায় হয়ে গেছে ”
_আর ইউ ম্যাড নাফিস। এই কথা তুমি এখন আমাকে বলছো। সারাদিন চলে গেছে।
_স্যার, দাদি ই আমাকে বলতে নিষেধ করেছিলো।
_বাহ, তুমি দেখছি এখন সবার কথা শুনছো। শুধু আমার কথা বাদে।
_সরি স্যার। আমি কি করবো বলুন।
_কি করবে। আমার মাথায় একটা বারি দাও। মরে যাই আমি।
“নাফিস চুপ করে বসে রইলো। তূর্য গাড়ি চালাচ্ছে নাকি উড়ে উড়ে যাচ্ছে বোঝা মুশকিল। এই জীবনে তার একটা ই দূর্বলতা আর সেটা সামর্থ্য বেগম৷ তূর্যর দাদি। দাদি ছাড়া তার আর কেউ নেই। আধা ঘন্টার রাস্তা মনে হয় দশ মিনিটে পৌছালো তূর্য। বাসার সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে ই দৌড়ে গেলো সে বাড়ির ভেতরে। সামর্থ্য বেগমের ঘরে গেলেন। সামর্থ্য বেগম তখন মাথা মালিশ করাচ্ছিলেন। তূর্য পাশে এসে দাড়ালো ”
_তুমি ঠিক আছে বুড়ি। পা দেখি তোমার।
“কথাটা বলে তূর্য দাদির পায়ের কাছে বসলো। পা এখন ঠিক আছে। তবুও সে ভালো করে দেখলো। এরপর উঠে দাড়ালো ”
_দেখা হয়েছে তোর। ঠিক আছে আমি। তবে বেশিদিন আর থাকতে পারবো না বলে দিলাম। খেয়াল রাখার কোনো মানুষ নেই আমার।
_ওষুধ খেয়েছিলে। হাসিনা খালা একটু ভালো করে খেয়াল রাখুন দাদির দিকে।
_আমি তো খেয়াল রাখি তূর্য বাবা। আমার মনে হয় তোমার দাদি অন্য কারো কথা বলতে চায়ছে।
“তূর্য ভ্রু কুচকে চায়লো ”
_কি লাগবে তোমার বুড়ি। বলো আমায়। কি চাই?
_যা বলবো তাই এনে দিবি৷?
_দেবো।
_নাতবউ চাই আমার। একা আর ভালোলাগে না। নাতির বউ দেখবো নাতির ঘরে পুতি,,,,।
_হাসিনা খালা। দাদিকে ভালো করে মাথা মালিশ করে দিন। এই বুড়ি যা বলবে তাই করুন। দরকার হলে বাড়ির সকল সার্ভেন্ট কে ওনার সেবায় লাগিয়ে দিন।
_লাগবে না আমার কিছু। নাতবউ ই লাগবে। এই আমি বলে দিলাম।
“বলে মুখ গুমরা করে বসে রইলেন সামর্থ্য বেগম। তূর্য
শার্ট এর উপর থেকে ব্লেজারটা খুলে হাতে নিলো। সারাদিন দৌড়াদৌড়ি করে এসেছে। বিয়ের কথা শুনে মেজাজ খারাপ করতে চায় না। তাই চলে যেতে নিলেও
সামর্থ্য বেগম একই কথা বলেন। তূর্য তা কানে ও তুলে না। সামর্থ্য বেগমের ঘর থেকে বেট হতেই দেখে নাফিস বসার ঘরের সোফায় বসে আছে। তূর্যকে দেখে ওঠে আসে। গাড়ির চাবিটা এগিয়ে দিয়ে বলে ”
_নিন স্যার।
“তূর্য নেয় না চাবিটা। জানে নাফিস নিজের বাইকটা অফিস গ্যারেজে রেখে এসেছে। এখন বাড়ি যেতে হলে রিকশায় যেতে হবে। তূর্য বলে ”
_তোমার কাছেই রাখো। কাল এসে আমাকে নিয়ে অফিসে যাবে।
_ওকে স্যার। এবার তাহলে আমি আসি।
_হুম।
“নাফিস চলে যায়। তূর্য নিজের ঘরে যায়। বিশাল এক রুম তার। দু,তলা এই বাড়িতে তারা মানুষ মাএ হাতে গোনা। তূর্য দু তলায় থাকে একা। আর সামর্থ্য বেগম নিচের তলায়। যদিও বাড়িতে অনেক লোক রাখা আছে। একেক কাজের জন্য একেক লোক। সবাই এ বাড়িতেই থাকে। নিচ তলায়। কেউ খুব বেশি একটা উপরে আসে না দরকার ছাড়া।তূর্য নিরিবিলি পরিবেশ উপভোগ করে। নিজের রুমে এসেই তূর্য আগে হাতে থাকা ব্লেজার একটা ঝুড়িতে রাখে। পরপর গলার টাই আর শার্টটা ও খুলে ঝুড়িতে রাখে। এরপর ওয়াসরুমে চলে যায়। একেবারে সাওয়ার নিয়ে বের হয়। একটা হাফ হাতা টি শার্ট আর ট্রাউজার পড়ে। টাওয়েল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে ব্যালকনিতে গিয়ে দাড়ায়। তূর্যর রুম
বিশাল বড়। রুমের মধ্যে বেশি আসবাবপত্র নেই। প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া অতিরিক্ত কিছুই নেই। একটা বড় বেড। বেডের সাইডে ই একটা ছোট টেবিল রাখা। যেখানে সে তার খুব দরকারের জিনিসপত্র রাখে। আরেক পাশে একটা মাঝারি আকারের সোফা রাখা তার সামনেই কফি টেবিল। এর ঘরের এক সাইডে বেশ বড় একটা বুকসেলফ। যাতে নানা ধরনের বই রাখা। আর পুরো রুম জুড়ে বিভিন্ন ফটোগ্রাফি। যেগুলো সে নিজে তুলেছে। রুমের ভেতরে বেশ কয়েকটা জানালা আছে। পুরো রুমটার,সব কিছু ই সাদা। তূর্য ব্যালকনিতে দাড়াতে ই দরজায়,আওয়াজ হলো। তীব্র আবার,এলো দরজা খুলতেই দেখলো রহিম মিয়া দাড়িয়ে আছে হাতে কফির মগ। তূর্য সেটা নিলো। মুচকি হেসে রহিম মিয়াকে জিজ্ঞেস করলো ”
_সবকিছু ঠিকঠাক তো চাচা ?
_হ বাবা সব কিছু ঠিকঠাক। তোমার আর কিছু লাগলে ডাক দিও।
_নাহ, আর কিছু লাগবে না
_আইচ্ছা।
“রহিম মিয়া চলে যাচ্ছিলেম। তূর্য পুনরায় ডাকলো ”
_চাচা।
_কও বাজান।
_চাচীর শরীর এখন কেমন?ডাক্তার আর কিছু বলেছে ?
_এহন আগের থিকা ভালো। ওষুধ খাইতাছে।
_আচ্ছা। কোনো কিছু লাগলে নাফিসকে বলবেন।ও সব করে দেবে।
_আইচ্ছা বাজান।
“রহিম মিয়া চলে গেলেন। তূর্য দরজা বন্ধ করে দিয়ে বুকসেলফ থেকে একটা বই নিয়ে সোজা ব্যালকনিতে গেলো। সেখানে একটা গোল টেবিল সাথে দুটো চেয়ার রাখা বেতের তৈরি। টেবিলে কফিটা রেখে আরাম করে আসলো। এবার তার একান্ত সময় কাটানোর পালা । নিজের মন মতো একটা বই হাতে তার। The power of now। এটি এমন একটি বই যা দুঃখ, উদ্বেগ, অতীত বা ভবিষ্যৎ নিয়ে অযথা চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। যা তূর্যর ভীষণ দরকার। বইটা পরতে পরতে তূর্য চোখ বন্ধ করলো এমন মুহুর্তে ওর চোখের সামনে ভেসে উঠলো কিছু আসহনিয় দৃশ্য। যা ভুলতে তূর্যর বছরের পর লেগে গেছে৷ কিন্তু আজো তা মনে পরে। যার জন্য আজ এই পৃথিবীতে সে একা। কেউ নেই তার। তূর্য সঙ্গে সঙ্গে চোখ খুলে ফেললো। শরীর ঘেমে উঠেছে। নাহ,এসব সে ভাবতে চায় না৷ এই ট্রমা সে নিতে পারে না৷ বইটা রেখে দিয়ে উঠে গেলো বিছানার দিকে। ঘুম দরকার। ভীষণ ঘুম দরকার তার”
চলবে,,
#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#৩
“পর পর দুটো টিউশনি শেষ করে সায়রার ফিরতে ফিরতে সন্ধা। তখন প্রায় অন্ধকার ই থাকে। এমন সময়
যাতায়াত করতে ও ভয় লাগে। এই শহরে রোজ কতো কিছু হচ্ছে। বিশেষ করে মেয়েরা রাতের এই শহরে একেবারে ই নিরাপদ নয়। তবুও তো চলতে হয় জীবনের তাগীদে। জীবন তো আর থেমে থাকবে না ।
সায়রা টিউশনি থেকে বের হয়ে কিছু সময়,দাড়িয়ে রইলো। এখান থেকে বাড়ি দূরে। রিকশায় যেতে হলে ভাড়া বেশি৷ লোকাল বাসে করে গেলে ও সমস্যা। পুরুষ মানুষের ভির। সব পুরুষ তো আর ভাল হয় না৷ কিছু কিছু কাপুরষ ও হয়। সুযোগ পেলেই শরীরে ছোয়া দিয়ে ফেলবে। কি জঘন্য সে বিষয়। ভাবলেই গা শিউরে ওঠে। তবুও ও মনকে শক্ত করে সায়রা এগিয়ে চললো।
বাসের জন্য দাড়িয়ে রইলো কিছু সময় । কতো কতো মানুষ অপেক্ষা করছে বাসের জন্য। বাস আসতেই সকলে যেনো পাল্লা দিয়ে উঠলো। সায়রা একটু পিছিয়ে পড়লো। তবুও উঠলো। সায়রার পেছন পেছন একটা ছেলে উঠলো। পুরো বাস ভরতি মানুষ। আর সিট ফাকা নেই। এখন যেতে হলে দাড়িয়ে ই যেতে হবে। সায়রা দাড়ালো চুপ করে। ভয়,লাগছে। এমন ভিরের মধ্যে ই তো অমানুষ গুলো থাকে। পরপর সায়রা দেখলো ওর ঠিক পেছনে একটা ছেলে দাড়িয়ে। যে এমন ভাবে দাড়িয়েছে যাতে সায়রার শরীরে টাচ না লাগে। এভাবেই কিছু দূর যেতেই একজন যাএী নামলো
সঙ্গে সঙ্গে মাঝবয়সী একজন গিয়ে সেই সিটে বসতে গেলে ছেলেটা বাধা দিলো ”
_আপনি এখানে বসছেন কোন আক্কেলে বলতে পারেন। একটা মেয়ে মানুষ দাড়িয়ে আছে। আর পুরুষ হয়ে সিটে বসার জন্য মারামারি করছেন। বসতে দিন উনাকে।
_তোমার কি সমস্যা মিয়া। এতো কথা কও কেন। যে পাইবো সে বইবো। ( বললো লোকটা)
_উঠুন কাকা। বসতে দিন উনাকে। ভদ্রতা বজায় রাখুন বলে দিচ্ছি।
“এবার বোধহয় লোকটা লজ্জা পেলো। উঠে গেলো সে। ছেলেটা সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”
_আপনি বসুন এখানে।
“সায়রা কথা না বাড়িয়ে বসে পরলো। ছেলেটা সেই সিটের সামনেই দাড়িয়ে রইলো। সায়রা খেয়াল করলো এবার ছেলেটার দিকে। বেশ সাধাসিধে মনে হলো। চোখে মোটা কাঁচের চশমা৷ গায়ে হালকা রঙের শার্ট। মুখে দাড়ি। কাধে একটা কলেজ ব্যাগ ঝোলানো। হাতে ঘরি। মুখে মাস্ক পড়া৷ স্টুডেন্ট হবে।
সায়রা চুপচাপ বসে রইলো। আরো একটুও যেতেই আরো কয়েকজন যাএী নামলো। সায়রার পাশের সিটে বসা মহিলাটা ও নেমে গেলো। সায়রা এবার ছেলেটাকে ডাকলো ”
_শুনছেন। এই যে ভাইয়া।
_জি।
_আপনি এখানে বসতে পারেন।
_সিউর?
_হ্যা।
“ছেলেটা বসলো। তবুও ডিস্টেন্স রেখে৷ সায়রার মনে হলো এটাই বোধহয় পারিবারিক শিক্ষা ”
_এতো ভয় পান কেনো আপনি ?
_কোথায় ভয় পেলাম ? ( অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো সায়রা)
_ ভয়,ই তো পাচ্ছেন। ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক।
তবে মুখটা এমন ভিতু করে রাখবেন না। লোকে বুঝে যাবে আপনি ভয় পাচ্ছেন। আর সেটার ই ফায়দা তুলবে।
“সায়রা হাসলো ”
_অমানুষ রা তো এই সুযোগেই থাকে। মানুষ ভারি খারাপ।
_সবাই তো না। আচ্ছা কোথায় নামবেন আপনি?
_সামনেই। আপনি ?
_আমার গন্তব্য তো অনেকদূর। তবে আপাতত সামনে ই নামবো।
“সায়রা বুঝলো এই লোক কথা প্যাচ দিয়ে বলে। তবে মার্জিত শব্দে বলে। সায়রা আর কিছু বললো না। সামনের স্টপে সায়রা নামলো। ছেলেটা চেয়ে রইলো সে যাওয়ার দিকে। সায়রা হয়তো পেছন ফিরে চায়লে দেখতে পেতো এক অমায়িক দৃষ্টিতে চেয়ে ছিলো। কিন্তু তা দেখতে পেলো না সায়রা। সে চললো তার অপছন্দের জায়গায়। তার নিজের বাড়ি। যেখানে কোনো সুখ নেই। শান্তি নেই। আছে শুধু হতাশা। অবহেলা ”
“রাতে ঘুম হয় না তূর্যর। নানা চিন্তা মাথায় খেলে। যেসব সে ভাবতে ও চায় না। স্লিপিং পিল নিয়ে বোধহয় ঘুম হবে না। পরিশেষে তূর্য উপহার হিসেবে পায় মাথা যন্ত্রনা।সকাল সকাল চোখটা যখন একটু লেগেছিলো তখনই এলার্ম বেজে উঠলো। তূর্য চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো। ফোনটা হাতে নিতেই দেখলো ছয়টা চল্লিশ বাজে। হাতে আর বিশ মিনিট। তাকে জিমে যেতে হবে।
যদিও সেটা বাড়িতেই। কিন্তু ডিসিপ্লিন ইজ ডিসিপ্লিন। তূর্য সেটা সবসময় মানে। চোখে ঘুম থাকা শর্তে ও উঠে গেলো। জিমের জন্য ঢিলা স্লিভলেস একটা টি-শার্ট পড়লো। এক গ্লাস পানি খেয়ে গেলো পাশের ঘরে। সেখানে জিমের সব কিছু রয়েছে৷ তূর্য নিজের দরকারি সব কিছু বাড়িতে করে নিয়েছে। সে বাইরে খুব কম বের হয়৷ একা জীবনই তার সঙ্গী। অফিস টু বাসা৷ আর মাঝে মাঝে কাজের প্রয়োজনে বিভিন্ন দেশে ট্রাভেল করতে হয়৷
এক ঘন্টা সময় ধরে জিম করে তূর্য ঘেমে একাকার অবস্থা। টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছে প্রোটিন সেক টা খেয়ে নিলো। ফিটনেসের বেলায় কোনো ছাড় না। এরপর তূর্য
বের হয়ে নিজের ঘরে গেলো। সাওয়ার নিয়ে বের হতেই অফিস থেকে রুহানির কল এলো। তূর্য সেটা ধরলো না
পরপর অফিসের ম্যানেজার রকিব কল করলে তূর্য সেটাই ধরলো। কথা শেষ করে সে ওয়ারড্রব এর সামনে এসে দাড়ালো। অনেকগুলো স্যুট সেট। তার তাতে বেশির ভাগই কালো। তূর্য কালো একটা স্যুট নিয়ে পড়ে নিলো। আায়নার সামনে গিয়ে নিজেকে একবার দেখলো। হাতে ঘরিটা পরে ফোন আর ব্যাগ নিয়ে দরজা চাপিয়ে দিয়ে তূর্য বের হলো। নিচে ই বিশাল এক ডাইনিং টেবিল। সেখানে বসে সামর্থ্য বেগম বসে আছে৷ সার্ভেনটরা খাবার টেবিলে দিচ্ছে। তূর্য এসে সামর্থ্য বেগমের সামনের চেয়ারটায় বসতে বসতে বললো”
_ গুড মর্নিং বুড়ি।
_কোনো গুড মর্নিং নেই৷ একা একা কিসের গুড মর্নিং।
“তূর্য আ্যভোকাডো টোস্টে একটা বাইট দিয়ে রেখে দিলো। সামর্থ্য বেগমের দিকে চেয়ে শান্ত কন্ঠে বললো ”
_আবার শুরু করলে। কি চাও তুমি বলো তো বুড়ি। নাতবউ ছাড়া।
_নাহ, আমার নাতবউ ই চাই। অন্য কিছু না।
“তূর্য কিছু বললো না। সে খেতে লাগলো। এমন সময় নাফিস এসে ঢুকলো। সামর্থ্য বেগমকে এসেই সালাম দিলেন ”
_আপনার পায়ের এখন কি অবস্থা দাদি।
_কোনো অবস্থা নেই আমার৷ তোর স্যার কে বলে দে নাফিস আমার নাতবউ লাগবে। আমি আর একা থাকতে পারবো না।
_একা কোথায় আছো৷ এতো মানুষ ও কম মনে হচ্ছে তোমার।
_চুপ থাক তুই। আমি যা বলেছি তাই হবে।
“তূর্য বাকি খাবার আর খেলোনা। উঠে বেরিয়ে গেলো। পেছন পেছন নাফিস ও গেলো। তূর্য ততক্ষণে গাড়িতে উঠে বসে আছে। নাফিস গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসলো। তূর্য আবার ল্যাবটপ নিয়ে বসেছে। কাজ করতে করতেই তূর্য বলে উঠলো ”
_কাল যে ইন্টারভিউ নেওয়া হলো। সেটার কি খবর। সিলেক্ট করা হয়েছে লোক।
_জি স্যার, চল্লিশ জনকে সিলেক্ট করা হয়েছে।
_অভিজ্ঞ তো। আমি পড়ে কোনো ঝামেলা চাই না নাফিস।
_কোনো ঝামেলা হবে না স্যার। আমাদের এখন কাজের চাপ বেশি। কবে থেকে সকলকে জয়েন করতে বলবো ?
_ কাল থেকেই। আমার সমস্ত মিটিং এর সিডিউল বের করো। পরপর কাজ যেনো হয়।
_জি।
“নাফিস মনে হলো আরো কিছু জিজ্ঞেস করতে চায়। বিষয়টা তূর্য খেয়াল করলো ”
_আর কিছু জানতে চাচ্ছো নাফিস।
_নাহ, বলতে চায়ছিলাম দাদি যা বলছিলো আপনি তা মেনে নিলে ও পারেন।
_কোনটা মানবো?
_বিয়ের বিষয়টা।এবার বিয়ে টা করে নিলেই পারেন। দাদি একা থাকে,,,,,।
“তখনই গাড়ি অফিসের সামনে এসে থামলো। তূর্য গাড়ি থেকে নামতে নামতে বললো ”
_ভাবছি তোমাকে একটা বিয়ে করিয়ে দিবো নাফিস। এরপর তোমার বউটাকে দাদির সাথে রাখবো। আর তুমি একা থাকবে।
“নাফিস হতাশ হলো আবার হলো না। এই লোকের সাথে সে নয় বছর যাবৎ আছে৷ হারে হারে চেনে সে৷ কি উওর দেবে সেটা ও বোধহয় জানা নাফিসের। নাফিস গাড়ি পার্কিং এ রেখে চললো।
তূর্য অফিসে আসলেই স্টাফদের মধ্যে একটা আতঙ্ক দেখা যায়। সবাই চুপচাপ নিজের কাজে মন দেয়। নড়তে ও যেনো দ্বিধা। তূর্য সোজা হেটে চলে গেলো নিজের কেবিনে। সঙ্গে সঙ্গে রুহানি এলো তূর্যর কেবিনে৷ তূর্য মহা বিরক্ত এই মেয়ের উপর। কিন্তু কিছু করার নেই৷ সামর্থ্য বেগমের বান্ধুবির নাতনী৷ আবার জব ও করছে এখানে। এক সাথে পড়াশোনা ও করেছে ওরা। ভদ্রতার খাতিরে তূর্য চুপ থাকে। রুহানি এসেই তূর্যর সামনে একটা ফাইল রাখলো। এরপর দাড়িয়ে রইলো। তূর্য ফাইল দেখছে মনোযোগ দিয়ে। রুহানি চেয়ে চেয়ে তূর্যকে দেখছে। তূর্য এবার মাথা তুলে চায়লো ”
_কাজ শেষ তো তোর৷ এখনো দাড়িয়ে আছিস কেনো?
_তুই এতো রুড কেনো তূর্য বলতে পারিস।
_নাহ, পারি না। তোর কাজ শেষ এবার আসতে পারিস।
“রুহানির যেনো রাগ আরো বারলো। সে তূর্যকে ভালোবাসে। সেই কলেজ লাইফ থেকে৷ কতোবার বলেছে। কিন্তু তূর্য পাওা ও দেয়নি সেসবে৷ রুহানি তবুও ভালোবেসে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে তূর্যর এমন আচরন সে মেনে নিতে পারে না ”
_তুই এমন কেনো বল তো। কাল তো তোর আমাকে নিয়ে,,,।
_ “প্লিজ, রুহানি। ডোন্ট স্পয়েল মাই মুড। আই ডোন্ট লাইক বিইং ডিসটার্বড ডিউরিং ওয়ার্ক। ইউ ক্যান লিভ নাউ।
” রুহানি আর দাড়ালো না৷ সোজা বেরিয়ে গেলো। যাওয়ার পথে সামনে পড়লো নাফিস। রুহানি তাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। নাফিস ভেতরে ঢুকে দেখলো তূর্য তখন মনিটরে কিছু ডিজাইন দেখছে। নাফিস এসে তূর্যর পাশে দাড়ালো। সামনের মনিটরে বেশ নতুন কিছু ডিজাইন। যেগুলো বেশ কয়েকদিন যাবত চেষ্টা করে স্টাফরা বানিয়েছে৷ তূর্য একে একে সবগুলো ডিজাইন দেখলো ”
_পছন্দ হচ্ছে স্যার ?
_এইগুলো করতে এক মাস সময় লেগেছে। জাস্ট ভাবতে পারছি না৷ এতো লেইম ডিজাইন।
_আরো ইউনিক ডিজাইন চাচ্ছেন আপনি।
_অবশ্যই। বিশেষ করে মেয়েদের পোশাকে। ওটা হাইলাইট করবে বেশি৷ হাতে সময় খুব কম৷ ক্লায়েন্ট নিশ্চয়ই আমাদের মুখ দেখে ডিল করবেন না।
_তাহলে এখন করনীয় কি?
“তূর্য মনিটর বন্ধ করে দিলো। হেটে কবিনের সামনে গিয়ে দাড়ালো। যেখানে সচ্ছ কাচ আর বাইরে দেখা যাচ্ছে ব্যাস্ত শহর ”
_কাল সব স্টাফদের সাথে মিটিং রাখো। নতুনরা ও থাকবে।
_ওকে। হয়ে যাবে।
“তূর্য আবার নিজের কাজে মন দিলো। নাফিস বেরিয়ে এলো। ওর হয়েছে যতো জালা। নাফিস বের হয়ে একবার রুহানির কেবিনের দিকে গেলো। রুহানির অবস্থা কি দেখা দরকার। নাফিস রুহানির কেবিনের সামনে এসে দাড়ালো। ভেতর থেকে কোনো আওয়াজ আসছে না। তারমানে চুপচাপ আছে। নাফিস চলে গেলো নিজের কাজে”
চলবে,,