#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#২৯
“সারাপথ সায়রা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এসেছে। মোহনগঞ্জ এসে পৌঁছালো ওরা ভোর পাঁচটায়। সায়রা তখনো ঘুমিয়ে আছে। সামর্থ্য বেগম ও ঘুমে ছিলেন। তিনি উঠেছেন একটু আগে। তূর্য নির্ঘুম। সারারাত গাড়ি চালিয়েছে। যদি মাঝে মাঝে ব্রেক নিয়েছে।
মোহনগঞ্জ পৌঁছে ভূঁইয়া বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামলো। এক বছর পর আবার এই বাড়িতে। গাড়ির শব্দ পেয়ে ই দারোয়ান এসে গেট খুলে দিলো। এদিকে তূর্যর মামা মামিরা ও বাড়ি থেকে বের হলেন। যেনো তারা তূর্যর অপেক্ষাতেই ছিলো। সামর্থ্য বেগম গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভেতরে ঢুকলেন। সবাই এসে তার সাথে কথা বলতে লাগলো। তূর্য গাড়ি থেকে নেমে সায়রার পাশের গেট খুললো। মেয়েটা এখনো ঘুমিয়ে আছে। তূর্য সায়রার দিকে একটু ঝুকে বললো ”
_ম্যাডাম। এবার একটু উঠুন। চলে এসেছি তো।
“সায়রা চোখ খুলে তাকালো। তূর্য সায়রাকে চোখেী ইশারায় বুঝালো তারা চলে এসেছে। সায়রা সঙ্গে সঙ্গে নামলো গাড়ি থেকে। বাড়ির ভেতরে তূর্যর মামা, মামি খালা সবাই ওয়েট করছিলো। তূর্য আগে ঢুকলো দিয়ে তূর্যর পেছনে সায়রা। তূর্যকে এতোদিন পর দেখে তূর্যর বড় মামা এগিয়ে এসে জরিয়ে ধরলেন। তূর্য নিজেও ধরলো। পরপর তূর্যর মেঝো মামা। খালা। সবাই যেনো তূর্যকে পেয়ে।
সায়রা তূর্যর পেছনে দাড়িয়ে আছে চুপ করে। দেখছে সবাইকে। কতো মানুষ এই বাড়িতে। সায়রা দেখলো বাড়ির সদর দরজার সামনে কয়েকটা মেয়ে দরজার পেছন থেকে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। এর মাঝে সামর্থ্য বেগম সায়রাকে ডাকলেন। এবার সবার নজর সায়রার দিকে গেলো। সায়রা মাথায় ঘুমটা টেনে চুপচাপ এগিয়ে এলো সামর্থ্য বেগম এর পাশে ”
_পরিচয় করিয়ে দেই। ও হচ্ছে সায়রা তূর্যর বউ।
“তূর্যর বউ কথাটা শুনে মুহুর্তে ই পরিবেশ কেমন ঠান্ডা হয়ে গেলো। সবাই অবাক। বিশেষ করে তূর্যর মেঝো মামি আর খালা। দুজনেই কেমন বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন। তূর্যর বড় মামা বললেন ”
_তূর্যকে বিয়ে করালেন কবে ? বললেন তো না।
_সেসন কাহীনি পড়ে বলবো। সায়রা সবাইকে সালাম কর।
“সায়রা সবাইকে সালাম দিলো। তূর্যের বড় মামি এগিয়ে এসে সায়রাকে দেখে বললো ”
_বউ তো ভারি মিষ্টি দেখতে। তূর্যর পছন্দ আছে বলতে হবে।
“পাশ থেকে তূর্য র বড় মামা বললো ”
_সবাইকে কি বাইরে দাড় করিয়ে রাখবে। চলো চলো আাড়ির ভেতরে চলো।
“তূর্য এমনিই কম কথা বলে সবার জানা। আজ তো আরো বলবে না। তূর্যর জন্য যে রুম বরাদ্দ করা হয়েছিলো সেটাতে তূর্য চলে যেতে চাইলো। সারারাত ঘুম হয়নি। একটা সাওয়ার নেওয়া দরকার।
তূর্যর মামার বাড়িটা দুতলা। যেহেতু তূর্যর তিন মামা
দুইজন বাড়িতেই থাকেন আর একজন দেশের বাইরে তবে তার বউ ছেলে মেয়ে এই বাড়িতেই থাকেন। জয়েন ফ্যামিলি। তাই ঘর ও বেশি লাগে। তূর্যকে রুম দেখিয়ে দিতে তূর্যর বড় মামার মেয়ে রুমিকে পাঠানো হলো। সামর্থ্য বেগম তখন বললেন সায়রা ও যেনো রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। সায়রা ও রুমির সঙ্গে গেলো।রুমি সায়রাকে বললো ”
_আপনি তো ভীষণ সুন্দর দেখতে ভাবী।
“সায়রা হেসে বললো ”
_তুমি ও ভীষণ সুন্দর। আচ্ছা তোমার নাম কী ?
_আমার নাম রুমি। তোমার নাম ?
_সায়রা।
_এই ভাবী আপনারা আপুর বিয়ে পর্যন্ত থাকবেন তো ? ভাইয়া প্রতিবার আসে একদিন থেকেই চলে যায়।
_আমি তো বলতে পারছি না রুমি৷
_আচ্ছা সে দেখা যাবে। যান রুমে যান। আপনার কিন্তু এখনো আরো অনেক ননদ দেবর আছে। সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো।
“সায়রা হেসে বললো ”
_আচ্ছা ।
“রুমি চলে গেলো। সায়রা রুমে ঢুকলো। তূর্য বোধহয় ওয়াসরুমে চলে গেছে। ওদের জামাকাপড়ের ব্যাগুলো আগেই রুমে দিয়ে গেছে। সায়রা দেখলো ছোট্ট একটা রুম। তবে বেশ সাজানো গুছানো। একটা বেড যেটা খুবই ছোট সাইজের। একটা আলমারি। একটা ড্রেসিং টেবিল। যেখানে মেয়েদের জিনিসপত্র রাখা আছে কিছু। সায়রা বিছানা থেকে ওদের কাপড়ের ব্যাগগুলো আলমারিতে নিয়ে রাখলো। চোখে মুখে একটু পানি দেওয়া দরকার । এর মধ্যে তূর্য বের হলো ওয়াসরুমে থেকে। ঘারে তোয়ালে ঝুলিয়ে। একটা সাদা রঙের টি শার্ট পড়নে সাথে কালো পেন্ট। রুমে এসে সায়রাকে দেখে আবার আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ালো। সায়রা কিছু বললো না ওয়াসরুমে চলে গেলো। সায়রা আর সাওয়ার নেয়নি৷ হাত মুখ ধুয়ে ই বের হয়েছে। সায়রা ভেবেছিলো তূর্য এখন হয়তো ঘুমাবে। কিন্তু তূর্যকে দেখে মনে হলো তূর্য বের হবে। ওয়ালেট আর ফোন পকেটে ঢোকালো। সায়রা বললো ”
_আপনি কোথাও যাবেন এখন ?
_হু। একটু কাজ আছে।
_ওহ্।
“তূর্য কিছু বলতে যাবে এমন সময় রুমি এলো। দরজার সামনে দাড়িয়ে বললো ”
_ভাইয়া, ভাবী। নিচে আপনাদের নাস্তা খাওয়ার জন্য ডাকছে।
“রুমি কথাটা বলেই চলে গেলো। তূর্য আর সায়রা এক সাথে নিচে নামলো। বিশাল বড় ডাইনিং টেবিল। যেখানে তূর্যর দুই মামা তূর্যর খালু। সামর্থ্য বেগম। আরো বাচ্চারা বসেছে। তূর্যর মামিরা খাবার রাখছে টেবিলে এনে৷ রুমি সহ আরো দুটো মেয়ে ও দাড়িয়ে আছে৷ তূর্য আর সায়রাকে তূর্যর বড় মামা নিজের পাশে বসতে বললো। তূর্য বসলো। কিন্তু সায়রা বসেনি এখনো বাড়ির কোনো মেয়ে ই খেতে বসেনি। সায়রাকে তূর্যর বড় মামি রুমানা বারবার বললো ”
_তুমি বসো সায়রা।
_নাহ্ মামি। আপনাদের সাথেই বসবো।
“এ কথা শুনে রুমি এসে সায়রাকে নিয়ে নিজেদের সাথে দাড় করিয়ে দিলো। বাকি দুটো মেয়ে সায়রার সাথে তেমন কথা বলছে না৷ রুমি ওদের দেখিয়ে বললো ”
_ভাবী এটা হচ্ছে মেঝো মামার মেয়ে রাইসা৷ ওর ভাই আছে রিফাত। আর ও হচ্ছে আমার ফুপাতো বোন কিন্তু তোমার খালতো ননদ রুশনি। আর ওই বাচ্চাগুলো হলো পাখি,জিসান,আর আলী ওরা হলো তোমার ছোট্ট ছোট্ট ননদ আর দেবর। শুধু এই নয় আরো তিনজন বাকি আছে। রিফাত,আকাশ,আর বড় আপু আয়েশা। ওরা বিয়ের শপিং করতে সদরে গিয়েছে। দুপুরের মধ্যে চলে আসবে।
“এদের মধ্যে সায়রার সাথে মুহুর্তে ই রুমির ভাব জমে গেছে। রুশনি ও টুকটাক কথা বলে। তবে রাইসা কেনো যেনো একেবারে ই চুপ দূরে দূরে থাকছে।
এদিকে খাবার টেবিলে বিশাল আলোচনা বসেছে।তূর্যর বড় মামা বললেন ”
_এবার ও কি একইভাবে করতে চাচ্ছো ?
_হু। এখন একবার এতিমখানায় যেতে চাচ্ছি।
_অবশ্যই। চলো যাই তাহলে।
_আকাশ কোথায়?
_বিয়ের কেনাকাটা করতে সদরে গিয়েছে। চলে আসবে। চলো তাহলে যাই।
“তূর্য সাথে ওর বড় মামা আর মেঝো মামা বের হলেন। সায়রা এখনো বুঝতে পারছে না এতিমখানায় কেনো যাচ্ছে। কি হচ্ছে। কাউকে জিজ্ঞেস ও করতে পারছে না। ওরা যেতেই বাড়ির মেয়েরা খেতে বসলো
সায়রা ও বসলো সবার সাথে৷ সায়রাকে তূর্যর বড় মামি আর ছোট মামি মিলে বেশ আপ্যায়ন করলেন৷ কিন্তু মেঝো মামি একেবারে ই দূরে দূরে থাকলেন।
খাওয়া শেষ হতেই সায়রাকে তূর্যর বড় মামি নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন। সঙ্গে রুমি ও গেলো। সামর্থ্য বেগম সারারাত গাড়িতে বসে থেকে পায়ে ব্যথা হয়ে গেছে।
তিনি রুমে চলে গেছে। তূর্যর বড় মামি নিজের ঘরে নিয়ে সায়রাকে বসালেন। সায়রা ইচ্ছে করছে জিজ্ঞেস করতে। আজ কি হবে বাড়িতে ? তখন তূর্যর বড় মামি এসে সায়রার পাশে বসলেন । রুমি ও আরেকপাশে বসে। রুমানা বেগম সায়রা হাত ধরে একটা সোনার আংটি সায়রার আঙুলে পরিয়ে দিতে নিলে সায়রা বাঁধা দিলো ”
_চুপ, তুমি নতুন বউ৷ তোমার মুখ দেখেছি। কিছু দেবো না তা কি করে হয়।
_মামি।
_চুপ থাক তো মেয়ে। সুখী হ জীবনে দোয়া করি।
“সায়রা হাসলো৷ রুমানা বেগম সায়রার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। লতে লাগলো ”
_তূর্যকে কখনো এ বাড়িতে একদিনের বেশি রাখতে পারিনি। জানিনা ছেলেটা কেন থাকতে চায় না। আমার বড় মেয়ের বিয়ে। তুই ওকে একটু বুঝিয়ে বলিস। ও যেনো বিয়েতে থাকে। ওর বড় মামা খুব খুশি হবে৷
_আচ্ছা মামি একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ?
_বল।
_আজ কি আছে ? সবাই কোথায় গেলো ?
_তুই জানিস না। আজ তোর শ্বাশুড়ি। তূর্যর মা’য়ের মৃত্যুবার্ষিকী। ওরা গেলো এতিমখানায়। কবরস্থান এর পাশেই ওটা। ওখানের সবাইকে আজ খাওয়ানো হব। তাই গেলো ওরা৷ কবর জিয়ারত করা হবে৷
“কথাটা বলে রুমানা বেগম চলে গেলো। তার আবার কাজ আছে। একদিন পরেই মেয়ের বিয়ে। সায়রা বসে রইলো পাশে রুমি৷ সায়রা ভাবছে এর জন্য ই তূর্য সেদিন বলেছিলো মোহনগঞ্জ এ তার সব আছে৷ জীবনের একটা অংশ আছে মোহনগঞ্জ এ৷কতোগুলো বছর মাকে ছাড়া এই মানুষটা বেঁচে আছে কে জানে। সায়রার মতোই কি তাহলে তূর্যর অতীত। কই তূর্যর জীবন তো তা বলে না ”
“বাকিটা সময় সায়রা রুমি আর রুশনির সাথেই ছিলো। বাড়ি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখিয়েছে। রাইসা এর মধ্যে আর আসেনি৷ এদিকে আয়েশা ও শপিং করে বাড়ি ফিরেছে। আয়েশা তো তূর্য বিয়ে করেছে শুনে সব ফেলে আগে রুমির ঘরে গেছে। সায়রাকে দেখতে। আয়েশা ও রুমির মতো৷ মেয়েটা সায়রার থেকে বয়সে বড়। তবুও ভাবী ভাবী বলে টেনে এনেছে ওর বিয়ের শপিং দেখাতে। এ সব কিছু দেখছে আর রাগে ফুসছে তূর্যর মেঝো মামি।তিনি সায়রাকে মেনেই নিতে পারছেন না যেনো। এদিকে তার মেয়েটা ঘরে গিয়ে একা একা বসে আছে। দুপুর এর একটু আগে আগে তূর্যকে বাড়িতে আসতে দেখা গেলো৷
সাথে আরো দুটো ছেলে৷ দুজনেই তূর্যর থেকে ছোট।
রিফাত আর আকাশ৷ দুই মামার দুই ছেলে। রিফাত সবে বাইশ আর আকাশ পঁচিশ বছরের যুবক। তূর্য বলতে এই দুজনেই পাগল। আকাশ আর তূর্য ছোট বেলায় এক সঙ্গে অনেক সময় কাটিয়েছে। তূর্য এসেছে শুনে ওরা মার্কেট থেকে ফিরে আর বাড়ি আসেনি। সোজা এতিমখানায় চলে গিয়েছিলো। সেখানে রান্নাবাড়া চলছে। এখন তূর্যর সঙ্গে বাড়ি ফিরেছে। ওরা বাড়ি ফিরতেই দেখলো বসার ঘরে সামর্থ্য বেগম বসে। দু’জনেই সামর্থ্য বেগমকে সালাম দিলো। এর মধ্যে রুমানা বেগম এসে বললো ”
_আজকে কিন্তু নতুন একজন ও আছে।
_নতুন একজন আবার কে ?
_তোমাদের তূর্য ভাইয়ের বউ। এই আয়েশা তূর্যর বউকে নিয়ে আয়।
“ওরা ও অবাক তূর্যর বউ৷ তূর্য বিয়ে করেছে৷ কই বললো ও না তো তূর্য। ওরা দেখলো আয়েসার সাথে ছোট্ট খাটো একটা মেয়ে এলো। দেখতে ভীষণ সুন্দর। সায়রাকে দেখে আকাশ তূর্যর কানের কাছে গিয়ে বললো ”
_এইটা কি মাইয়া বিয়া করছো নাকি পরি ভাই।
“তূর্য শুনলো কিছু বললো না৷ সায়রার সাথে আকাশ কথা বললো। রিফাত ও সালাম দিয়ে হাত এগিয়ে দিলো। সায়রা হাত বাড়ানোর আগেই তূর্য রিফাতের শার্ট টেনে একটু পিছে নিয়ে এলো। আকাশ এই দৃশ্য দেখে হাসলো। তার বিয়ে করবো না করবো না করা ভাই আজ জেলাশ হচ্ছে বউয়ের জন্য।
ওরা সায়রার সঙ্গে টুকটাক কথা বললো৷ তূর্যর সঙ্গে আয়েশা ও কথা বললো। বারবার বললো বিয়েতে থাকতে হবে। তূর্য শুধু বললো থাকবে। এরপর সায়রার দিকে চেয়ে উঠে যেতে যেতে বললো ”
_এক গ্লাস পানি নিয়ে রুমে এসো ।
“কথাটা বলে চলে গেলো উপরে। ওখানে বসা সকলে হাসলো। সায়রা নিজেও কেমন হতভম্ব হয়ে চেয়ে আছে। সবার সামনে এভাবে বলতে হলো। আকাশ একটু মজার ছলেই বললো ”
_যান যান ভাবী৷ পানি নিয়ে রুমে যান। আমার ভাইয়ের গলাটা বোধহয় শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।
“কথাটা বলতেই সকলে হাসলো। সায়রা গিয়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে উপরে যেতে নিলে দেখলো রাইসা নামছে। সায়রার দিকে চেয়ে ও চাইলো না যেনো। পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। সায়রা রুমে এলো। এসে দেখলো তূর্য আবার সাওয়ার নিতে গেছে। পানি আনার কথা বলে এখন পানি না খেয়েই চলে গেছে। সায়রা পানির গ্লাসটা বেড সাইড টেবিলে রেখে বসে রইলো। তূর্যর ফোন ওয়ালেট বিছানার উপর রাখা।
সায়রা বসেি রইলো। তূর্য বের হলো প্রায় মিনিট দশেক পড়ে। একটা সাদা পাঞ্জাবি পড়ে। সায়রা চেয়ে রইলো। এই প্রপ্রথম তূর্যকে পাঞ্জাবিতে দেখলো। তূর্য বের হয়েই আয়নার সামনে দাড়ালো। চুল মুচছে। সায়রা বললো ”
_পানি আনলাম।
_খেয়ে ফেলো।
_আমি খাবো কেনো ? আপনি না খেতে চাইলেন।
“তূর্য কিছু বললো না। সায়রা এবার উঠে এসে তূর্যর পেছনে দাড়ালো। আস্তে করে বললো ”
_নামাজ পড়তে যাবেন ?
_হু।
_আচ্ছা ওই এতিমখানায় কখন যাবেন ?
_নামাজ শেষ করেই যাবো।
_আমাকে নেওয়া যাবে।
“তূর্য হাতে ঘড়ি পড়তে পরতে বললো ”
_ওখানে সব পুরুষ ইডিয়েট। কি করে নিয়ে যাবো। বাসায় থাকো।
“তূর্য বেরিয়ে যাচ্ছিলো। সায়রা হুট করে তূর্যর হাত চেপে ধরলো। তূর্য থেমে গেলো। তূর্যর চুল থেকে এখনও পানি পড়ছে। পাঞ্জাবির দুটো বোতাম খোলা।
আজ তূর্যকে কেমন এলোমেলো লাগছে। সায়রা তূর্যর সামনে দাড়িয়ে বুকের কাছে কোলা বোতাম দুটো লাগিয়ে দিলো। তূর্য চেয়ে আছে সায়রার দিকে। সায়রা ইশারায় মাথা নিচু করতে বললে তূর্য মাথা নিচু করলো। সায়রা ওরনা দিয়ে ভালো করে চুল মুছে দিয়ে আবার ঠিক করে দিলো চুলগুলো। তূর্য টু শব্দ করলো না। যেনো সে এই যত্ন বহুদিন পর পেলো। তাতে নিষেধ কিসের। সায়রা তূর্যর দিকে চেয়ে বললো ”
_এবার যান।
“তূর্য একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। এরপর বেরিয়ে গেলো । সায়রা চেয়ে রইলো। এতো ফিটফাট থাকা তূর্য আজ এমন লাগছে কেনো? বুকের মধ্যে কি আজ ঝড় চলছে তূর্যর।
তূর্য নিচে আসতেই দেখলো সকলে রেডি। সবাই মিলে এখন নামাজে যাবে। এরপর কবরস্থানে। এরপর এতিমখানায় খাওয়া দাওয়া করানো হবে।
সায়রা নিজেও সাওয়ার নিতে গেলো। তূর্য ফিরে আসার আগেই তাকে আবার ওই ছবির নিচের লেখা পড়তে হবে। মনের ভেতর এখনো ওই কৌতূহল ”
“সায়রা সাওয়ার নিয়ে বের হয়ে নিচে গেলো। অলরেডি তিনটা বাজে। কিন্তু এখনো কেউ খায়নি। রুমানা বেগম সবাইকে বসতে বললেন। বাড়ির ছোটরা বসলো খেতে। সায়রাকে ও বলা হলো। কিন্তু সায়রা বসলো না৷ তূর্যর কথা মনে পড়ছে না জানি ওই গোরামুখো লোক খেয়েছে কিনা। সায়রা রুমির রুমে গেলো। রুমি আর আয়েসা বসে ছিলো। ওরা কোনো একটা বিষয় নিয়ে কথা বলছিলো। সায়রা যেতেই ওরা থেমে গেলো। সায়রা গিয়ে বসলো। এক সাথে তিনজন মিলে গল্প করলো। আগের অনেক কথা সায়রাকে বললো ওরা। তূর্যর বিষয়ে ও অনেক কথা বললো। শেষে বিকেল চারটার দিকে তূর্যর মামারা বাড়ি এলো। কিন্তু তূর্য এলো না। সায়রা অপেক্ষা করতে লাগলো তূর্যর। আকাশ ওরা ফিরে এসে জানালো তূর্য কবরস্থানের ওখানে আছে। সায়রার ইচ্ছে করলো একবার যেতে। কিন্তু সে তো চেনে না।
সায়রা রুমে ফিরে এলো। দরজা আটকে দিলো। ব্যাগ থেকে সেই ছবিটা বের করলো। বিছানায় গিয়ে বসলো। এতো ছোট ছোট করে লিখা। শুরুতেই তারিখ লেখা -৩/৩/২০০৪
তূর্য আমার মানিক,,
এই ছবি তুমি পাবে কিনা আমি জানিনা। যদি পেয়ে থাকো সব সময় নিজের কাছে রেখো। এটা ই তোমার সাথে আমার তোলা একমাত্র ছবি।আর কখনো সুযোগ হবে কিনা জানা নেই আমার। একটা কথা মনে রেখো বাবা তোমার মা তোমায় এই পৃথিবীতে আনতে অনেক লড়াই করেছি। যেদিন তুমি আমার নারী চিড়ে এই পৃথিবীতে এলে আমি ভেবেছিলাম আমার নিজের একজন মানুষ হয়েছে। আমার সন্তান। আমার তূর্য। কিন্তু আমাকে ফের লড়াই করতে হলো জানো বাবা। তোমাকে একটা সুন্দর জীবন দেওয়ার জন্য। আমি যতোদিন থাকবো আমি লড়াই করে যাবো তোমার জন্য আমার মানিক। একটা কথা মনে রাখবে তোমার মায়ের তুমি ছাড়া কেউ ছিলো না। মা কে ভুল বুঝো না মানিক। মা তোমায় একটা সুন্দর জীবন দিতে পারেনি বলে। মা কে মনে রেখো কিন্তু আজীবন। মা তোমায় অনেক ভালোবাসে,, ।
“সায়রা লেখাটুকু পড়ে ছবিটা দেখতে লাগলো। কিন্তু কিসের জন্য এতো লড়াই করতে হলো ? তূর্য ছাড়া এ উওর কেউ দিতে পারবে না। সায়রার ভীষণ মন খারাপ হচ্ছে। এই ছবি তূর্য আজ ও কতো যত্ন করে রেখেছে ”
“তূর্য বাড়ি ফিরলো সন্ধায়। কারো সাথে কোনো কথা না বলে সোজা চলে গেছে ছাদে। সায়রা এখবর পেলো আয়েশার কাছে থেকে। সায়রা ভেবেছিলো তূর্য ঘরেই আসবে। সবাই চাচ্ছে তূর্যকে বিরক্ত না করতে। ও তাকুক আর ওর মতো। কিন্তু সায়রার মনে হলো তূর্যর পাশে কাউকে দরকার। সায়রা ওই ছবিটা হাতে নিয়ে সোজা চলে গেলো ছাদে। সবেই সন্ধা নেমেছে। ছাদে গিয়ে সায়রা দেখলো তূর্য বসে আছে। ছাদের একেবারে কিনারে। পা ঝুলিয়ে। আকাশের দিকে চেয়ে। সায়রা ধিরে ধিরে গিয়ে তূর্যর পাশে বসলো। তূর্য বুঝলো তবুও কিছু ই বললো না। সামনের দিকে চেয়ে চুপ করে বসে রইলো । সায়রা নিজেই বললো ”
_রুমে না গিয়ে এখানে এসে বসে আছেন কেনো ?
_এমনিই।
_মন খারাপ আপনার?
_উহু।
_বৃষ্টি মায়ের কবর দেখে এসেছেন?
“তূর্য অবাক হলো না। সামনের দিকে চেয়েই বললো ”
_হু। দেখে এসেছি।
“তূর্যর গলা কেমন ধরে আসছে। সায়রা বুঝলো। মেয়ে মানুষ হলে বোধহয় কেঁদেই ফেলতো। সায়রা বললো ”
_একটা কথা জিজ্ঞেস করবো আপনাকে ?
_করো।
_বৃষ্টি মায়ের কি হয়েছিলো ? উনার মৃত্যু কি স্বাভাবিক মৃত্যু ছিলো ? আমার না ভীষণ জানতে ইচ্ছে করছে ? কৌতূহল হচ্ছে।
_মৃত মানুষ নিয়ে কৌতূহল ?
_উহু। আপনাকে নিয়ে। আপনার ভেতরে অনেক কিছু লুকিয়ে রেখেছেন আমি জানি। আমার সেসব ভীষণ জানতে ইচ্ছে করছে।
“তূর্য এবার সামান্য হাসলো। আজ তূর্যকে একেবারে ভিন্ন লাগছে। এতোদিন সায়রা যে তূর্যকে দেখে এসেছে আজ পুরোপুরি ভিন্ন। তূর্য একটু সময় নিয়ে বললো ”
_আমার ভিতরে অনেক কিছু লুকানো আছে। অনেক কিছু। মাঝে মাঝে মনে হয় কি জানো আমার জীবটা আরো একটু সুন্দর হলে ও পারতো। আজ আমার সব আছে৷ কিন্তু যাকে আমার সব থেকে বেশি দরকার ছিলো সে ওই মোহনগঞ্জ কবরস্থানে মাটির নিচে শয়ে আছে আজ কতগুলো বছর। আমি তার আদর পাইনি।
“কথাগুলো বলতে গিয়ে তূর্যর গলা ধরে আসছিলো। তূর্য সময় নিলো। সায়রা চুপ করে রইলো। তূর্য ফের বতে শুরু করলো ”
_আমার মা৷ বৃষ্টি ভূইয়া। শুনেছিলাম আমার বাবা নামক ওই মানুষটা আমার মা’কে অনেক পছন্দ করে বিয়ে করেছিলো। আমার নানা শুরুতে রাজি ছিলেন না এই বিয়েতে। আমার দাদী অনেক জোড় করেছিলেন। তার একটা মাএ ছেলে। তাকে দিয়ে ঘরের বউ করে নিতে চায়। আমার মা রাজি হলেন। বিয়ে হলো। কয়েক বছর আমার মায়ের বাচ্চা হতো না শুনেছিলাম। অনেক কিছু করার পর আমি আমার মায়ের গর্ভে এলাম। তখন আমার মা জীবনের সব থেকে বড় ধাক্কাটা খেয়েছিলো। আমার বাবা নেশা করতো৷ সাথে জোয়া ও অন্য নারীতে আসক্ত। আমার মা ওই সময় আমার বাবার থেকে নাকি কোনো সাপোর্ট ই পায়নি। আমার মা ভেবেছিলো সন্তান হতো না বলে হয়তো এমন হয়েছে। এবার সব ঠিক হয়ে যাবে। এরপর আমি হলাম। কিন্তু ওই মানুষটার নাকি আর কোনো পরিবর্তন হয়নি৷ এসব তো দাদির মুখে শোনা। এরপর,,,,, ।
“তূর্য আবার থামলো। সায়রা চুপ। তূর্য বোধহয় আজ নিজের খোলস ছেড়ে বের হয়েছে। হোক। সায়রা জানতে চায়। তূর্য আবার বললো ”
_আমার বয়স যখন আট। আমি মাঝে মাঝেই দেখতাম আমার বাবা মায়ের মধ্যে অশান্তি। ঘর আটকে আমার মা কে মারতো। আমার মা কি চিৎকার করতো। আমি দরজার কাছে যেতাম। দাদি কতো বাধা দিতে চাইতো। মানতো ই না। দাদি ও মার খেতো মাকে বাঁচাতে গিয়ে। তখন আমি স্কুলে যেতাম। বন্ধুদের বাবাদের দেখতাম এসে স্কুলে দিয়ে যেতো। টাকা দিতো। কিন্তু আমাকে টাকা দিতো দাদী। স্কুলে দিয়ে আসতো ও দাদী।
বন্ধুরা বলতো তোর বাপ আসে না কেন তূর্য। তোর বাপ কি নাই। আমি কিছু বলতে পারতাম না৷ কি বলতাম। আমার বাপ নেশা করে পরে তাকে তাই আসতে পারে না। আমি একা থাকা শুরু করলাম। কেউ থাকবে ও না। কেউ কিছু জিজ্ঞেস ও করবে না৷
“এইটুকু বলে তূর্য আবার থামলো। সায়রা খেয়াল করলো তূর্য জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। হয়তো কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে। তূর্য সময় নিয়ে আবার বললো ”
_একদিন ওই লোকটা মা কে অনেক মারলো। মায়ের নাক দিয়ে রক্ত চলে এলো। তবুও থামলো না। বাড়ির উঠানে একটা কাঠের ফিড়ি ছিলো। বিশ্বাস করবে সেটা দিয়ে না আমার মায়ের মাথার মধ্যে একটা বারি দিলো। আমার মা, মাগো মাগো বলে চিৎকার করতে করতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। আমি দৌড়ে গিয়েছিলাম মায়ের কাছে। ততক্ষণে মায়ের নাক মুখ দিয়ে রক্ত আসতে শুরু করেছে। আমার আর বুকে সইলো না৷ দাদি এসে মায়ের মাথাটা কোলে নিয়ে আমায় বললো। তূর্য তোর মামাদের ডেকে নিয়ে আয়। না হলে তোর মা কে আর বাঁচানো যাবে না।
আমি দৌড়ে আসতে লাগলাম এই বাড়িতে। পাঁচ মিনিটের পথ। ওইদিন মনে হচ্ছিলো আমার পা চলছে না। বারবার কানে বাজতে লাগলো তোর মা বাঁচবে না। আমি কিচ্ছু করতে পারি নি৷ কি করতাম বলো৷ আমার এতো আফসোস হয়।
“কথাগুলো বলতে গিয়ে তূর্যর গলা আঁটকে আসছে। সায়রা এগুলো ভেবেই ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আসলেই তো তূর্যর কি করার ছিলো। আট বছর বয়সের একটা ছেলে কতোটুকু ই বা হয়৷ তূর্য ফের বললো ”
_সেদিন মামারা গিয়ে হাসপাতালে নিলো মাকে। বাবার নামে কেস করবে বললো। আমার মায়ের জ্ঞান ফেরার পর এ কথা শুনে আমার মা মামাকে শুধু বলেছিলো। ভাইজান ও ভালো হয়ে যাবে।পুলিশের কাছে যাওয়ার দরকার নেই৷ এরপর এক মাস আমরা মামা বাড়িতে রইলাম। এখান থেকেই আকাশ আর আমি স্কুলে যেতাম।আমার ভয় লাগতো না৷ ভাবতাম এখন আর মা কে কেউ মারতে পারবে না।
ঠিক এক মাস পর বাবা এলো। আমি সেদিন এই উঠানে খেলছিলাম। আমাকে তো কখনো আদর করেনি। সেদিন এসে আমাকে কাছে ডাকলো। বিস্কুট এনে দিলো। মা কি খুশি হলো। অনেক বলে কয়ে আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে গেলো বাড়িতে।
“সায়রা এবার শুধু বললো ”
_তারপর।
_একটা প্রবাদ আছে না, কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না৷ তার হয়নি৷ কিন্তু জানো একটা বছর মোটামুটি ভালো ছিলাম। দাদী আর মায়ের অনেক মিল ছিলো। এটাকেই পুজি করলো। মা কে বলা হলো দাদীর নামে যতো জমি আছে আর মায়ের বাপের বাড়ী থেকে যেসন জমি পাবে সব যেনো ওনার নামে লিখে দেয়। এ কথায় মা মানতে চায়নি বলে আবার শুরু হলো মারধোর। মাঝে মাঝে ই জানো মা অসয্য মাথা ব্যথায় বসে বসে কাদতো। আর বলতো তূর্য মায়ের মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দে বাবা। মাথাটায় কেমন যন্ত্রনা হয়। আমি হাত বুলিয়ে দিতাম। কিন্তু হাত বুলালেি কি মানুষের মাথার অসুখ সারে। সারে না তো। মায়ের ও যন্ত্রনা কমতো না। বিশ্বাস করো আমার মায়ের এমন জীবন পাওয়ার ছিলো না। এমন মানুষ জীবন সঙ্গী হিসেবে পাওয়ার ছিলো না।
“তূর্য এ পর্যায় এসে আরো ভেঙে পড়লো। সায়রা ততক্ষণে কেঁদে একাকার করে ফেলেছে। সায়রা তো এর এক বিন্দু ও দেখেনি৷ তাও কতো কষ্ট হতো সায়রার। আর তূর্য। সায়রা এই পর্যায় এসে তূর্যর কাঁপা কাঁপা হাতের উপর হাত রাখলো। তূর্য ফের বললো ”
_একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরলাম৷ দেখলাম আশেপাশের অনেক মানুষ জড়ো হয়েছে বাড়ির গেটের সামনে। আমার মন কেমন অস্থির হয়ে উঠলো। আমার মায়ের কিছু হয়নি তো। দৌড়ে এসে দেখলাম নাহ্। আমার মায়ের যা হওয়ার হয়ে গেছে। ওই লোকটা জানো বিয়ে করে আনলো। অন্য এক মহিলাকে। আমার মা ওই লোকটার পায়ে পরে বলছিলো। আপনি যা করেন আমি মেনে নেবো। আমাদের একটা সন্তান আছে। ওর দোহায় এমন করবেন না। ওর জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে। আমার কথা নাই ভাবলেন। সন্তানের কথা ভাবুন।
কিন্তু না আমার মায়ের আকুতি ওই লোকটার কানে গেলো না। সে ওই মহিলাকে ঘরে জায়গায় দিলো। আমার মায়ের ঘরে। আমার মায়ের সংসারে। সেই রাতে আমি আমার জীবনের সব হারালাম। আমি দাদীর কাছে শুয়েছিলাম। পাশে মা ছিলো। আর আমার মায়ের ঘরে নতুন বউ। আমার মা বোধহয় সে দিন একেবারে ই শেষ হয়ে গিয়েছিলো। মা বোধহয় সইতে পারেনি৷ কি চিৎকার আর আর্তনাদ করলো। আমার দাদী আর আশেপাশের লোকেরা সেই রাতে মা কে নিয়ে হাতপাতালে গেলা আমি সঙ্গে। ডাক্তার দেখিয়ে ও কাজ হলো না৷ ওই রাতে আমি মায়ের পাশে বসে। মায়ের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো। অক্সিজেন মাস্ক লাগানো ছিলো৷ আমাকে ইশারায় কাছে ডাকলো। আমি।আমি গিয়ে পাশে বসতেই আমার এই হাতটা চেপে ধরলো। কথা বলতে পারছিলো না। দাদী নার্স কে গিয়ে বললো মাস্ক খুলে দিতে। কিন্তু তারা দিলো না৷ দিতোই কি করে। ওইটুকু ই ভরসা ছিলো। সেই রাতে রাত তিনটার সময় নিরবে চলে গেলো আমার মা। হাতের শিরা বন্ধ হলো। ডাক্তার এসে মাস্কটা খুলে দিলো। আমি বুঝতে পারছিলাম আমার সব হারিয়ে গেলো। আমি আজ এতিম হলাম। যার মা নেই তার কেউ নেই। আমার ও আর কেউ রইলো না।
“তূর্য এই কথাগুলে বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছে সেই কখন। সায়রা তা খেয়াল করেছে। এই পর্যায় এসে সায়রা করলো কি। তূর্যর কাঁধে মাথা রাখলো। ভীষণ মায়া লাগছে তার। তূর্যর হাতের মধ্যে দিয়ে হাত ঢুকিয়ে শক্ত করে চেপে ধরলো হাতটা। তূর্য কিছু ই বললো না। নিজে সায়রার হাতের উপর হাত রাখতে গিয়ে ও রাখলো না। সায়রা কাঁদতে কাঁদতে বললো ”
_তারপর কি হলো ?
_তারপর, তারপর আর কি ? সব শেষ হয়ে গেলো আমার৷ মামারা গিয়ে হাসপাতাল থেকে মায়ের লাশটা এই বাড়িতে নিয়ে এলো। আমার মায়ের জন্য কাদার ও কেউ ছিলো না। কে কাঁদবে। আমি। আমি ও কাঁদিনি। কেন যেনো কান্না ই আসেনি। কিন্তু বুকটা ভার হয়ে ছিলো। এখনো আছে৷ আমৃত্যু থাকবে।
মায়ের গোসল শেষ হলো। শেষবার দেখার জন্য আমাকে ডাকা হলো। বড় মামা নিয়ে গেলো আমাকে। শেষবার আমার মায়ের মুখটা দেখার জন্য। আমার এতো সুন্দর মা। কি হয়ে গিয়েছিলো। চোখের নিচে কালি পড়ে গিয়েছিলো। গায়ে ছোপ ছোট কালচে দাগ ছিলো। কতো রাত শান্তিতে একটু ঘুমায়নি কে জানে।
ওই মুখটা আমি আজ ও ভুলতে পারি না। বিশ বছর। অথচ এখনো আমি ওই মুখ ভুলতে পারি না।
কিন্তু মজার বিষয় কি জানো। যে এতো কিছু করলো। সে এলোই না আমার মা কে দেখতে।
_আসলে আপনি দেখতে দিতেন ?
_মরে গেলে ও না।
_আচ্ছা এরপর কি হলো? এতোসব কিছু কি করে হলো?
_আমার বর্তমান অবস্থানের কথা বলছো ? আমার মা চলে গেলো। কিন্তু ওই সামর্থ্য বেগম। আমার দাদী। ওনি রয়ে গেলো। মায়ের মৃত্যুর পর তিনদিন দাদী ও আমার সাথে এ বাড়িতেই রইলো। মামারা বলেছিলো এখানেই আমাকে রেখে দেবে। কিন্তু দাদী ভেবেছিলো এখানে থাকলে আমি শুধু পড়াশোনা আর খাবারটা ই পাবো। আমার নিজের কিছুই হবে না। দাদী একদিন তার সব জায়গা জমি বিক্রি করে দিলেন। এমন কি ওই বাড়িটা ও। ওই লোকটা জানার আগেই ওই সব টাকা পয়সা নিয়ে রাতের আঁধারে দাদি আমায় নিয়ে মোহনগঞ্জ ছাড়লো। এই খবর জানলো শুধু আমার বড় মামা। শহরে গিয়ে আমরা উঠেছিলাম রুহানিদের বাসায়। কারন ওর দাদি আমার দাদীর বন্ধু ছিলো। সেখানে গিয়ে অনেকদিন রইলাম। এর মাঝে খবর এলো ওই লোক আমার মামার বাড়িতে গিয়ে ঝামেলা করতো। আমাদের ঠিকানা জানার জন্য। কিন্তু পরবর্তীতে নাকি পাগল হয়ে রাস্তায় পচে মরেছে। এ খবর ও আমায় একটু বিচলিত করেনি৷ দাদী রুহানির সাথেই আমাকে স্কুলে ভর্তি করে দিলো। ক্লাসে সেভেনে উঠার পর রুহানির বাবা ওকে দেশের বাইরে পরতে নিয়ে যাবে শুনে দাদি আমাকে ও পাঠাতে চাইলো। টাকা সব দাদী ই দিয়েছিলো। এরপর দেশের বাইরে। তার বাকিটা নিজের মেধায় আর বুদ্ধিতে করেছি। আজ আমি সফল। সব আছে আমার। বাড়ি গাড়ি সব। কিন্তু আমার মা নেই। তারমানে আমার কিছুই নেই।
“কথাটা বলে তূর্য হাসলো। সায়রা এবার ওর আরেক হাতের মুঠোয় থাকা ওই ছবিটা বের করে তূর্যর দিকে এগিয়ে দিলো। তূর্য অবাক হওয়ার আগেই সায়রা বললো ”
_রাগ করবেন না। আমি জানি কাজটা ঠিক হয়নি। কিন্তু এই লেখাগুলো পড়ার জন্য,,,, ।
“তূর্য সায়রার হাত থেকে ছবিটা নিয়ে নিলো। ছবিটার দিকে চেয়ে ফের লেখাগুলো দেখলো। এরপর বললো ”
_এই ছবিটা আমাকে দাদী দিয়েছিলো। আরো একটা ছবি দাদী রুমে আছে। তবে এই লেখাগুলো আমি এখনো পড়ি৷ এইটুকু ই আছে স্মৃতি আর বাকি সব মস্তিস্কে বন্দি।
“সায়রা আরো শক্ত করে তূর্যর হাত চেপে ধরলো। তূর্য সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”
_হয়েছে ম্যাডাম। আপনার কৌতূহল শেষ। এবার ঘরে চলুন। আমার ভীষণ মাথা ব্যথা করছে।
“সায়রা তূর্যর কাঁধে থেকে মাথা তুললো। কি ভেবে মাথা রেখেছিলো সায়রা জানেনা। তূর্য ছবিটা নিজের পকেটে রেখে উঠে দাড়ালো। সায়রা ও উঠলো। তূর্য কেমন দুলছে। সায়রা বুঝলো তূর্য হয়তো সারাদিন কিছু মুখে তুলেনি। এদিকে সায়রা ও তো খায়নি। তূর্য সোজা রুমে এলো। সায়রা ও রুমে ঢুকলো। তূর্য পাঞ্জাবি খুলে সোজা বিছানায় শুয়ে পড়েছে। সায়রা দরজা বন্ধ করে পাশে এসে বসলো। তূর্যর মাথার কাছে। সায়রা বললো ”
_সারাদিনে কিছুই খাননি৷ রাত কয়টা বাজলো। আমি খাবার নিয়ে আসি ?
_খাবো না। খিদে নেই।
_আমি নিয়ে আসছি।
“কথাটা বলে সায়রা উঠতে নিলেই তূর্য সায়রা ওরনা চেপে ধরলো। সায়রা তূর্যর দিকে ফিরে তাকাতেই তূর্য বললো ”
_ভীষণ মাথা যন্ত্রনা করছে। একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে৷ ঘুমাবো আমি।
“তূর্য কেমন করে যেনো আবদার করলো। সায়রা সঙ্গে সঙ্গে বিছানায় বসলো। সে এই আবদার কি করে নিষেধ করবে। বুকটা এখনো কাঁপছে সায়রার। এমন করে এই এই লোক কেন কথা বলে। সায়রা কেঁদেই ফেলবে। সায়রা বসতেই তূর্য বালিশ থেকে মাথা তুলে সোজা সায়রার কোলে মাথা রাখলো। হাত দিয়ে সায়রার কোমর জরিয়ে ধরে। সায়রার পেটের কাছে মুখ গুজলো। সায়রা কেঁপে উঠলো। কিন্তু বাঁধা দিলো না। সেই সাধ্য আজ আর সায়রার নেই। সায়রা তূর্যর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। সায়রা বুঝলো তূর্য এতো চাপ আর নিতে পারছে না। তাই এমন আবদার। ঘুমালে মানুষ সব ব্যথা ভুলে যায়। তাহলে এটা কি ব্যথা ভুলার প্রয়াস। তূর্য ঘুমিয়ে গেলো। কিন্তু সায়রা একটু ও নড়লো না। পা ব্যথা হয়ে গেছে।।তবুও বসে রইলো। তূর্য সায়রার পেটের মধ্যে মুখ গুজে ঘুমিয়ে রইলো। সায়রা এই ঘুমন্ত তূর্যকে আজ মন ভরে দেখলো। তূর্য কি জানে। সায়রার ও কেউ নেই। শুধু তূর্য আছে। তাও কাগজে কলমে ”
চলবে,,,
#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#৩০
“তূর্যর মেঝো মামি ঝর্না বেগম সারাদিন চুপচাপ ছিলো। মনের ভেতর আগুন জ্বলছে তার। একটু আগে মেয়ের ঘর থেকে এসেছে। তূর্যর মেঝো মামা আফজাল ভূইয়া। সবে মাএ ঘরে এসে ঢুকেছে। দেখলো বউ তার মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে। আফজাল সাহেব গায়ের শার্ট খুলে রাখতে রাখতে বললো ”
_কি হয়েছে তোমার ? মুখটা ওমন করে রেখেছো কেনো ?
_কি হয়েছে তুমি জানো না। জানবে কি করে। ভাগিনা এসেছে তার পিছে ই তো সময় চলে যাচ্ছে তোমার।
_ফালতু কথা বলা বন্ধ করো। ও রোজ আসে না। বছরে একদিন আসে৷
“ঝর্না বেগম তেতে উঠলেন ”
_এসেছে তাতে চমার সমস্যা না৷ বউ নিয়ে এসেছে তা চোখে দেখতে পেলে না।
“আফজাল ভূইয়া কেমন চোখ ছোট ছোট করে চেয়ে বললো ”
_বিয়ে করে বউ কি রেখে আসবে৷ কি হয়েছে কি তোমার ?
“ঝর্না বেগম এবার সোজা কথায় আসলেন। বললেন”
_আমার মেয়েটা। সারাদিন মন খারাপ ছিলো। একটু আগে দেখলাম কাঁদছে। তূর্যকে ওর পছন্দ। আমি ও ভেবেছিলাম মেয়ের জামাই করবো। দেখতে সুন্দর। কতো বড়লোক। গাড়িটা দেখেছো তুমি। ঢাকায় না জানি কতো বড় বাড়ি আছে। অফিস আছে। মেয়েটা তো সুখে থাকতো৷ এসব ওই বুড়ির চালাকি। ঘরে সুন্দর মেয়ে রেখে পরের মেয়ে এনেছে৷ ওই মেয়ের থেকে কি কোনোদিক দিয়ে আমার রাইসা কম।
“আফজাল ভূইয়া বউয়ের কথা শনে অবাক হয়ে চেয়ে আছে। বউ তার একটু লোভী। তা সে জানে। তাই বলে এসব চিন্তা করবে৷ রাইসার বয়স ই বা কতোটুকু। এসব বলে বেরিয়েছে মেয়ের কাছে। আফজাল ভূইয়া রেগে গেলেন ”
_এসব চিন্তা তুমি করলে কি করে ? আমাকে বলেছো আর কাউকে বলো না৷
_কেন ? তুমি তূর্যর মামা। তূর্যকে যে বিয়ে করালো তোমাদের কাউকে বলেছে৷ কোথাকার মেয়ে কেমন মেয়ে। কিছুই বলেনি। তোমাদের কি কোনো অধিকার নেই নাকি তূর্যর উপর৷
_নাহ্ নেই। তূর্যকে আমার লালন পালন করিনি৷ যা করেছে সব ওর দাদী করেছে। তূর্যকে কার সাতে বিয়ে করাবে। কাকে বলবে। এটার ও অধিকার শুধু মাএ তূর্যর দাদীর।
_কিন্তু আমার মেয়ে ।
_চুপ থাকবে৷ এসব বিষয়ে আর যেনো কথা বলতে না দেখি৷ আর মেয়ের মাথায় যে তুমি এসব ঢুকিয়েছো আমি ভালো করেই জানি। বয়স হয়েছে এবার এসব ছাড়ো বুঝলে।
“আফজাল ভূইয়া পাশ ফিরে শুয়ে পরলো। ঝর্না বেগম রাগে ফুসছে। কতো আশা করেছিলো। তূর্য তার মেয়ের জামাই হবে। মেয়েকে ও বলেছে। বিয়ে দিলে সে তূর্যর সাথেই দেবে রাইসাকে। কতো টাকার মালিক ওই ছেলে। এই সব কিছু খাবে কিনা কোথাকার কোন মেয়ে। কি আছে ওই মেয়ের মধ্যে। ভেবেছিলো এবার এলেই আফজাল সাহেবকে দিয়ে বিয়ের বিষয়ে কথা বলাবেন। গেলো সব হাত ফসকে গেলো। এতো দামি গাড়িতে আর তার মেয়ে চরতে পারলো না। বাড়িটা ও নিশ্চয়ই অনেক বড় হবে। একা খেতে পারতো সব। রাগে দুঃখে তার ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে ”
“রাত বাজে সাড়ে চারটা। একটু আগেই আযান দিয়েছে। তূর্য সেই যে ঘুমিয়েছে। হুট করে ঘুম ভাঙলো। তূর্য চোখ পিটপিট করে তাকালো। এখনো উপুর হয়ে শুয়ে আছে। রুমে ড্রিম লাইট জ্বলছে। বাইরে বোধহয় হালকা বৃষ্টি ও হচ্ছে। তূর্য অনুভব করলো ও বালিশে নেই। ভালো করে খেয়াল করতেই দেখলো ও এখনো সায়রার কোলে মাথা রেখে কোমর জরিয়ে ধরে আছে। সায়রার হাত এখনো ওর চুলের মধ্যে। সায়রা আর বসে নেই হালকা কাত হয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। তূর্য মাথা তুললো। সায়রার কোমর ছেড়ে উঠে বসলো। কাল রাতের কথা মনে পড়লো। এই মেয়ে এখনো এভাবে ই আছে। তূর্য ঘুমিয়ে যাওয়ার পর সরে যেতে পারতো। সারারাত এভাবে বসে কিভাবে রইলো। তূর্য উঠে সায়রাকে ঠিক মতো শুইয়ে দিতে নিলো। মাথা তুলে বালিশে শোয়াতেই সায়রা তূর্যর গলা চেপে ধরলো। ঘুমের ঘোরে এমন করছে৷ কিন্তু তূর্য ওভাবেই রইলো। সায়রা আরো কাছে টানতে চাইলো তূর্যকে। তূর্য হাত ছাড়াতে নিলে ও ছাড়লো না সায়রা। তূর্য একটু তাকালো সায়রার মুখের দিকে। এতো মায়া কেন এই মেয়েটার মুখে। তূর্য সুযোগ কাজে লাগালো কিনা বলতে পারে না। হুট করেই সায়রার কপালে গভীর এক চুমু খেলো। পরপর সায়রার পাশে শুয়ে পড়লো। তূর্য তখন পরনে শুধু সাদা পায়জামা যেটা পাঞ্জাবির সাথে পড়েছিলো। সায়রা এসে গুটিশুটি হয়ে তূর্যর বুকে জায়গা নিলো। তূর্য সায়রার মাথার নিচে দিয়ে এক হাত রেখলো। সায়রা এখন তূর্যর বুকে। সায়রা গরম গভীর নিঃশ্বাস তূর্যর খোলা বুকে পড়ছে। তূর্য শুধু মুহুর্তটা উপভোগ করছে। সায়রা তো এর কিছু ই জানে না। তূর্য না বললে জানবে ও না৷ তূর্য বলবে ও না। বাইরে বৃষ্টি। সাথে দমকা হাওয়ায় রুমের পর্দা উড়ছে। হালকা অন্ধকার রুম। তূর্যর মনে হলো সে হারিয়ে যাচ্ছে। তূর্য সায়রার ঘুমন্ত মুখের দিকে দৃষ্টি রেখে মনে মনে বললো ”
_তুমি আমায় রোজ ধংস করে দিচ্ছো মায়াবতী। তোমার এই আমার সাথে মিশে থাকা আমায় ভীষণ পোড়ায়।
তৃষ্ণায় আমার গলা শুখিয়ে আসে।তুমি কি তা টের পাও ? এভাবে আর কতো পোড়াবে আমায় ?
“সায়রার ঘুম ভাঙলো সকাল সাতটায়। ঘুম থেকে উঠেই দেখলে বিছানায় শুয়ে আছে৷ তূর্য নেই৷ লোকটা গেলো কোথায় ? সায়রা জলদি উঠলো। ফ্রেশ হয়ে এসে রুম গুছিয়ে এরপর বের হলো। নিচে নামতে যাবে তখনই দেখলো রুমি উঠছে। সায়রাকে দেখেই একগাল হাসি দিয়ে বললো ”
_আরেহ্ । আমি তোমাকেই ডাকতে যাচ্ছিলাম৷ চলো চলো ।
“রুমি সায়রার হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো বাড়ির উঠানে৷ গ্রামের মানুষের যতোই বাড়ির ভেতরে রান্নাঘর বানানো হোক। উঠানে একটা মাটির চুলা থাকবেই। সেখানে এসেই দেখলো বাড়ির সকলে বসে আছে৷ কেউ চেয়ার নিয়ে কেউ মোড়া নিয়ে। কেউ পাটিতে। সায়রা দেখলো তূর্য আকাশ আর রিফাতের সঙ্গে বসে। চা খাচ্ছে আর গল্প করছে ।
এখন তূর্যকে একটু স্বাভাবিক লাগছে। সায়রাকে দেখলে রুমানা বেগম বললেন ”
_আয় আয়। চাপরি বানাচ্ছি। সাথে হাসের মাংশ। খাবি আয়।
“তূর্য সায়রা এসেছে বুঝতে পেরে একবার তাকালো৷ নীল রঙের একটা জামা পড়নে৷ মাথায় ঘুমটা টানা।
আয়েসা আর রুমির পাশে বসলো সায়রা।
রুমানা বেগম সবাইকে খাবার বেড়ে দিলো। সায়রা ও খাচ্ছে। সবাই টুকটাক কথা বলছে। এর মধ্যে আবার তূর্যর বউ মামা এলো। আজ আয়েশার হলুদের অনুষ্ঠান হবে। বিকেলের দিকে আরো মেহমান চলে আসবে। তাই আকাশ আর রিফাতকে বললো বাজারে যেতে। সঙ্গে যেনো তূর্য ও যায়। সামর্থ্য বেগম ও ওখানে বসে। তিনি ভেবেছিলো তূর্য হয়তো নিষেধ করবে। কিন্তু তূর্য রাজি হলো। কিন্তু রিফাত আর আকাশ বললো লুঙ্গি পড়ে যেতে হবে বাজারে। তিন ভাই এক সাথে লুঙ্গি পড়ে যাবে। এদিকে তূর্য লুঙ্গি পড়ে না বহুকাল। আকাশ টেনে নিয়ে গেলো। ওর রুমে৷ লুঙ্গি পড়াতে ”
“সায়রা খাচ্ছে রুমি ওদের সাথে বসে। তূর্যর খালা তখন পাশেই চেয়ারে এসে বসলো। সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”
_আচ্ছা তোমার পুরো নাম কি সায়রা ?
“সায়রা খাচ্ছিলো। তূর্যর খালার কথা শুনে তার দিকে চেয়ে বললো ”
_জি, আমার পুরো নাম সায়রা আজমীর।
_ওহ্। পড়াশোনা করো বুঝি ?
_জি।
_ তা তোমার বাবা কি করে সায়রা ?
“কথাটা একটু অন্য টোনে ই বললো তূর্যর খালা। সায়রা কি বলবে ভেবে পেলো না। সামর্থ্য বেগম ও আর এখানে নেই। সায়রা কিছু বলার আগেই তূর্যর মেঝো মামি বললো ”
_ও আবার জিজ্ঞেস করতে হয়। ওর বাবা ও নিশ্চয়ই কোটি টাকার মালিক ই হবে।
“ঝর্না বেগম কথাটা শেষ করতেই দেখলো তূর্য এসে দাড়ালো। কখন এসেছে কেউই তূর্যকে খেয়াল করেনি
তূর্য ঝর্না বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললো ”
_ওর বাবা কোটি টাকার মালিক না হলে সমস্যা কি মামি ?
“ঝর্না বেগম আস্তে করে বললো ”
_না। কোনো সমস্যা না। আমি তো,,,, ।
“ঝর্না বেগম কথাটা শেষ ও করতে পারলো না। তূর্য বললো ”
_ও কোটি টাকার মালিকের মেয়ে না হলে ও৷ ও কোটি টাকার মালিকের বউ৷ ও সাদমান শাহারিয়ার তূর্যর একমাত্র বউ৷ আর এটাই ওর জন্য যথেষ্ট । আশা করি বুঝেছেন৷
“তূর্যর কথা শুনে সবাই হতবাক। সায়রা নিজে ও চেয়ে আছে তূর্যর দিকে৷ তূর্য সায়রার দিকে ফিরে বললো ”
_বাড়ির ভেতরে যাও৷
“সায়রা রুমি ওদের সঙ্গে চলে গেলো। দাড়িয়ে রইলো শুধু ঝর্না বেগম আর তূর্যর খালা। তূর্য ওনাদের দিকে চোখ গরম করে তাকালো। রাগ উঠলে ও কিছু বললো না৷ ওই তাকানোটুকু ই যথেষ্ট ছিলো।
এর মধ্যে আকাশ আর রিফাত এলে তূর্য ওদের সঙ্গে বাজারে চলে গেলো।
ঝর্না বেগম তূর্য যাওয়ার পরপর ই বলে উঠলো ”
_ওই মেয়েটা একেবারে হাতের মুঠোয় নিয়ে নিয়েছি দেখছি৷
“তূর্যর খালা বললো ”
_তূর্য এমন হলো কি করে৷ আগে কথা ও বলতো না৷ বউয়ের জন্য এতো দরদ৷ আমি কতো চাইলাম রুশনিকে ওর কাছে দিতে। সব ই আমার কপাল।
“কথাটা বলতে বলতে তূর্যর খালা চলে গেলো। ঝর্না বেগম হা করে চেয়ে রইলো৷ রুশনিকে তূর্যর কাছে দেওয়ার মতলব ছিলো৷ আর সে ভাবলো এই মহিলা তার পক্ষ নিচ্ছে। ঝর্না বেগম রাগে ফুসছে। এক তো অপমানিত হলো তার মধ্যে এই দু মুখো সাপ। সব তার কপালে এসে জুটে ”
“সায়রা আয়েশা আর রুমি আয়েশার ঘরে বসে আছে। আয়েশার হবু বর ফোন করেছে৷ সে কথা বলছে। রুমি সায়রাকে ওর ফোনে ওদের কিছু ছবি দেখাচ্ছে। রুমি হুট করেই বললো ”
_ভাবী। তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি ?
_হু করো।
_ভাইয়া তোমাকে অনেক ভালোবাসে তাই না ?
“কথাটা শুনে সায়রা থমকে গেলো। ভালেবাসে৷ ভালেবাসা। এই শব্দটা ই তো ওদের মধ্যে নেই। সায়রা কি করে বুঝবে। সায়রাকে চুপ থাকতে দেখে রুমি ফের বললো ”
_তোমাকে একটা গোপন কথা বলি শুনবে ?
_কি কথা ?
_ওই যে রাইসা আছে না। ও কিন্তু তূর্য ভাইয়াকে অনেক পছন্দ করে। আগে এলেই শুধু পেছন পেছন ঘুরতো। কি বলতো জানো ?
_কি ?
_বলতো ওর নাকি তূর্য ভাইয়ার সাথে বিয়ে হবে৷ মেঝো চাচি নাকি ওকে বলেছে ।
“কথাটা বলেই রুমি হাসলো। সায়রা এবার বুঝলো কেন রাইসা সায়রাকে এড়িয়ে চলছে। কেন তূর্যর মেঝো মামি ওমন করে সায়রাকে অপদস্ত করতে চাইছে। আহা এই লোককে যে কতো মেয়েরা পছন্দ করে কে জানে। এই সব মেয়েদের বদদোয়া সায়রার গিয়ে লাগবে। অথচ সায়রা নির্দোষ। ওই বজ্জাত লোকটা একটু বেশি ই সুন্দর হয়েছে৷ ছেলেদের এতো সুন্দর হতে নেই। তাহলে তো মেয়েরা নজর দেবেই। সায়রার ই তো মাঝে মাঝে নজর চলে যায়। তূর্যর বডিতে। তূর্যর কথায়। তূর্যর সায়রার পক্ষ নিয়ে কথা বলায়৷ লোকাটা যদি সত্যি ই সায়রার সঙ্গে আজীবনের জন্য বাঁধা পড়তো। এমন করেই কি সায়রার পাশে থাকতো? সায়রা এসব ভেবে মুচকি হাসলো ”
“তূর্যরা বাজার করে ফিরলো দুপুর বারোটার দিকে। ভ্যান গাড়ি ভর্তি করে বাজান এনেছে। বাড়ির সামনে এতো বাজার দেখে সবাই অবাক। এতো বাজারের জন্য তো বলা হয়নি। আজ মেহেদীর অনুষ্ঠান সন্ধায় রাতে থেকে মেহমানরা এ বাড়িতে খাবে। তাই বাজারে পাঠিয়েছিলো। রুমানা বেগম এসে বাজারের অবস্থা দেখে হা হয়ে চেয়ে রইলো। এতো বড় বড় ইলিশ মাছ৷ কম হলেও আটটা হবে। সাথে রুই মাছ, আরো অনেক কিছু । সবাই এসেছে বাজার দেখতে। সায়রা ও এসেছে। বাড়ির দরজার সামনে রুমির সঙ্গে দাড়িয়ে আছে। রুমানা বেগম বললো ”
_আকাশ এসব কি ? এতো বাজার।
“আকাশ বললো ”
_ভাই করেছে মা। আরো করতো। আমি আর রিফাত বাঁধা দিয়েছি। পাগল হয়ে গিয়েছিলো মনে হয় বাজারে গিয়ে।
“রুমানা বেগম তূর্যর দিকে চেয়ে বললো ”
_এসব কি করেছিস। তোর মামা জানলে কি হবে বল তো।
“তূর্য ঘেমে নেয়ে একাকার৷ পড়নের আকাশী রঙের শার্ট টা ও ভিজে গেছে। তূর্য সামান্য হেসে বললো ”
_আমি তো সব সময় আসি না মামি। সুযোগ ও হয় না আপনাদের কিছু খাওয়ানোর। আজ আপনার হাতের ইলিশ মাছ ভাজা আর গরম গরম ভাত খাবো।
“রুমানা বেগম তূর্যর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। সব বাজার নামানো হলো। এদিকে সায়রা তূর্যকে ঘামতে দেখে গিয়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে এলো। তূর্য সিড়িতে বসেছে একটু৷ আকাশ ওরা ও সঙ্গে। সায়রা পানি এনে তূর্যর সামনে গ্লাসটা এগিয়ে দিলো। তূর্য সায়রার দিকে চেয়ে আগে ওর হাতের ফোন আর ওয়ালেট এগিয়ে দিলো। সায়রা সেটা আরেক হাতে নিলে তূর্য পানির গ্লাসটা নিয়ে পানি খেলো। এসব দেখে রিফাত বলে উঠলো ”
_শুধু কি ভাইয়ের জন্য ই পানির এনেছেন ভাবী৷ আপনার যে দুটো অসহায় দেবর আছে। ভুলে গেলেন।
“সায়রা হালকা হেসে বললো ”
_আনছি।
“সায়রা ওদের ও পানি এনে দিলো। তখন শুনতে পেলো তূর্যরা পুকুরে গোসল করবে। সায়রা এ কথা এসে রুমিকে বললে। রএমি চেচিয়ে সবাইকে বলে দিলো। এখন সবাই বলছে সবাই পুকুরে গোসল করবে। এদিকে বাড়ি ও সাজানো হচ্ছে। তূর্য বেচারা গিয়েছে ফেঁসে। বাড়ির বাইরে রাস্তার আরেক পাশেই ঘাট বাঁধানো পুকুর।
রুমানা বেগম বললো মেয়েদের পুকুরে যাওয়া চলবে না। তাই আর কেউ গেলো না। তূর্যরা ই গেলো।
এদিকে সায়রাকে আয়েশা হলুদে পড়ার জন্য শাড়ী, গয়না এসব দিলো। সবার জন্য আনা হয়েছে। সায়রার জন্য আয়েশা নতুন করে কিনেছে আবার। সায়রা সেসব নিয়ে ঘরে চলে এলো।
এর মাঝে রুশনি এসে বললো ”
_ভাবী তূর্য ভাইয়া আপনাকে ওনার পড়ার কাপর নিয়ে নিচে যেতে বলেছে।
“সায়রা তূর্যর একটা পেন্ট আর একটা শার্ট আর তোয়ালে নিয়ে নিচে গেলো। দেখলো তূর্য ভিজে শরীরে বাইরের গোসলখানার সামনে দাড়িয়ে আছে। গায়ের সঙ্গে শার্ট লেপ্টে আছে। সায়রা এগিয়ে গিয়ে
তূর্যকে জামাকাপড় দিলো। তূর্য করলো কি জামাকাপড় নিয়ে সায়রা নাকটা টেনে নিয়ে চলে গেলো। সায়রা হা করে দাড়িয়ে আছে। এটা কি হলো।
সায়রা ফিরে আসতে নিতেই খেয়াল করলো ছাদে থেকে রাইসা চেয়ে আছে।সায়রা তাকাতেই রাইসা একটু সাইড হয়ে গেলো। সায়রা সামান্য হাসলো। ভালোই লাগছে তার। যে ছেলেকে সবার পছন্দ সে সায়রার একমাত্র বর। সায়রা সঙ্গে থাকে। সায়রার সঙ্গে ই সব৷ মা মেয়ে নিশ্চয়ই বেশ জ্বলছে। আরো একটু জ্বালালে মন্দ হয় না৷ এসব ভেবেই সায়রা হাসলো ”
“নাফিস আর জেরিন আজ দেখা করতে বের হয়েছে। কাল রাত থেকে হাজারবার বলে নাফিস জেরিনকে রাজি করিয়েছে। অফিস বন্ধ। এখন তো একটু বাইকে করে ঘুরতে যেতেই পারে৷ জেরিন রাজি হয়েছে। নাফিস বাইক চালাচ্ছে জেরিন পেছনে বসে।
ফুচকা খেতে নিয়ে যাবে। জেরিন মনে মনে খুশি হলে ও উপরে তা দেখাচ্ছে না। ঢাকার শহরে এতো নিরিবিলি জায়গা নেই। নাফিস জেরিনকে একটু দূরেই নিরিবিলি একটা জায়গায় নিয়ে গেলো। নদীর পার। বিভিন্ন ফুচকার স্টল ও আছে সাথে চুড়ি সহ নানা জিনিস। বাইক এসে থামতেই জেরিন নামলো। নদীর পার বলে এতো বাতাস৷ জেরিনের ওরনা উরছে। নাফিস বাইক রেখে এসে জেরিনের পাশে দাড়ালো। জেরিন নদী দেখছে। নাফিস বললো ”
_পছন্দ হয়েছে জায়গাটা ?
_ভীষণ ।
_হু। আমাকে ছাড়া তো সবই পছন্দ হয় তোমার কটকটি।
“জেরিন নাফিসের দিকে চেয়ে ভেংচি কাটলো। সব সময় উল্টা পাল্টা কথা বলবেই বলবে এই লোকটা।
নাফিস একটু একটু করে এগিয়ে গিয়ে জেরিনের একেবারে পাশে গিয়ে দাড়ালো। জেরিন বুঝতে পেরে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিতে চায়লে ও নাফিস সরলো না। জেরিন হেসে ফেললো ”
_আপনি সরবেন ?
_যখন কাছে আসতেই হবে। তখন দূরে সরে লাভ কি প্রিয়।
_ঢং।
_মহব্বত বুঝলা না তুমি কটকটি৷
_আপনার মনে মহব্বত থাকলে না বুঝবো।
_এখন কি তোমাকে অনন্ত জলিলের মতো কলিজা বের করে দেখাবো।
“নাফিসের কথা শুনে জেরিন এবার শব্দ করে হেসে ফেললো। নাফিস অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।
জেরিন নদীর পানিতে পা ভেজাচ্ছে। নাফিস নিজের ফোন বের করেকটা ছবি তুললো। দুজনে মিলে ঝগরা মারামারি করতে করতে ফুচকা খেলো। মোট কথা জেরিনকে এক দন্ড শান্তি দিবে না বলেই ঠিক করেছে নাফিস। একটু পরপট চুল ধরে টান দিচ্ছে জেরিন আবার গিয়ে নাফিসের চুল ধরে টান দিচ্ছে। নাফিস হুট করেই হাঁটতে হাঁটতে জেরিনের হাতে হাত চেপে ধরলো৷ জেরিনের শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো। জেরিন কিছু করার আগেই নাফিস বললো”
_হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলেই নদীতে নিয়ে ফেলে দিবো।
_আমি আপনাকে ছেড়ে দেবো নাকি?
_নাহ্। আমি তো চাই ই তুমি আমাকে ধরে রাখো। মজা ই লাগবে।
“কথাটা বলেই নাপিস বাঁকা হাসলো। জেরিন আরেক হাত দিয়ে একটা কিল বসিয়ে দিলো নাফিসের পিঠে”
_অসভ্য, ইতর। আপনার সাথে আমি থাকবো না৷
“নাফিস জেরিনের ঝুটি ধরে টান দিয়ে বললো ”
_সবাই তো চলেই যায়। তুমি ঝগড়া হলেও থেকে যেও। না থাকলে ও সমস্যা নেই৷ আমি থাকবো।
_আমি চলে গেলে কি একা থাকবেন ?
“নাপিস মুচকি হেসে বললো ”
_যেতে দেবে কে তোমায় হু? বিয়ে করে সোজা বাচ্চার মা বানিয়ে দেবো। আর চাইলে ও যেতে পারবে না।
“কথাটা বলেই নাফিস হাসতে লাগলো। কিন্তু জেরিনের বুকে গিয়ে লাগলো। ইস, সত্যি ই কি তার আর নাফিসের সংসার হবে ? কথায় বলে মেয়েরা যার প্রেমে পড়ে তাকে নিয়ে আমৃত্যু চিন্তা করে বসে। তার সংসার করবে। তার বাচ্চা গর্ভে ধারন করবে৷ রোজ করো খুনসুটি হবে। জেরিন ও তার উল্টো নয়। সে ও এসব ভাবছে তার হাঁটছে ”
“তূর্য রুমে আর আসেনি। সায়রা ই গোসল করে নিচে নেমেছে। পুরো বাড়ি সাজানো হয়েছে লাইটিং করে। বাড়ির সামনে গেট ও সাজানো শেষ। একটু পরে বাবুর্চি ও আসবে। কিন্তু দুপুরের খাবারটা তো খেতে হবে। তূর্যর আনা ইলিশ মাছ রুমানা বেগম ভেজেছেন বাড়ির সবার জন্য । তূর্যর মামা রা এ খবর পেয়ে রাগ দেখিয়েছে তূর্যর উপর। তূর্যর একটা ই কথা। সে তো রোজ আসবে না। সায়রা নিচে নামলে দুপুরে সবাই একসাথে খেতে বসলো। কিন্তু সমস্যা হলো তূর্য কাটা বাছতে পারে না। সায়রা তূর্যর চেয়ার থেকে একটু পাশেই দাড়িয়ে। সায়রা দেখছে তূর্য ভাত নাড়াচাড়া করছে। কিন্তু এতো মানুষের মধ্যে কিছু বলতে ও পারছে না। সামর্থ্য বেগম বিষয়টা খেয়াল করে বলে উঠলো ”
_সায়রা। তূর্যকে একটু সাহায্য কর। কাটা বাছতে পারে না ও।
“সায়রা ও বুঝেছে তূর্য কাটা বাছতে পারবে না৷ চামচ দিয়ে যেই লোক খাবার খায়। তাকে দিয়ে মাছের কাটা বাছাও অসম্ভব। সায়রা তূর্যর চেয়ারের পাশে এসে দাড়ালো। তূর্য হাত সরিয়ে নিলো প্লেট থেকে। সকলে বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবে নিলে ও তূর্যর মেঝো মামি হায় হায় করে মরে যাচ্ছে মনে মনে। এই ছেলে সে হাত ছাড়া করলো। মনটা তার উদাসীন।
সায়রার সময় লাগলো না কাটা বাছতে। তূর্য এরপর খেলো। কিন্তু চামচ দিয়ে। রুমি সায়রার কানে কানে বললো ”
_ভাবী। তোমার তো দেখছি বাচ্চা পালতে হচ্ছে। এখন আরেকটা হলে দুই বাচ্চা পালতে হবে৷ কিন্তু মোমেন্ট টা এতো কিউট লাগলো। ইস। আমার ও যে কবে এমন হবে।
“সায়রা হেসে ফেললো। তূর্য কি বাচ্চা। বয়স ও জানেনা সায়রা তূর্যর। এই বয়স্ক লোক নাকি বাচ্চা। যে কাটা চামচ দিয়ে খাবার খায় সে তো মাছের কাটা বাছতে পারবেই না। এই দুঃখ সায়রা কাকে বলবে। কেউ নেই বলার মতো ”
চলবে,,,