ম্যারেজ প্রোপজাল পর্ব-৩১+৩২

0
5

(কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত এই পর্ব)
#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#৩১

“বিকেলে আয়েশার হলুদের প্রোগরাম শুরু হলো। গ্রামের বিয়ে যেমন হয় তেমনই। পুরো বাড়ি লাইটিং করা হয়েছে। বাবুর্চিরা বিরিয়ানি রান্না করছে৷ আর হলুদ দেওয়া হবে ছাদে। বাড়ির মেয়েদের জন্য এক রকম শাড়ি দেওয়া হয়েছে৷ বিকেলের একটু আগে আগে আয়েশাকে সাজাতে এসেছে পার্লার এর লোক। বাড়িতে বিকেল হতেই মানুষ গিজগিজ করছে। কেউ কেউ তূর্যকে চেনে তারা এসে তূর্যর বউকে দেখতে চায়ছে। এসবের মধ্যে সায়রা রেডি ই হতে পারছে না৷ এরপর রুমানা বেগম এসে সায়রাকে ঘরে পাঠিয়ে দিলো। রুমি ওরা এসে বললো ওদের সাথে সাজতে। সায়রা বললো সে একাই রেডি হতে পারবে। শুধু শুধু রুমে ভীর বাড়িয়ে লাভ নেই। আয়েশা তাই সায়রাকে কিছু কাচা ফুলের গয়না দিলো। সায়রা সেসব নিয়ে উপরে চলে এলো। উপরে তেমন মানুষজন নেই এখনো। রুমে ঢুকেই দেখলো। তূর্য ঘুমাচ্ছে। এই অবেলায় কে ঘুমায়। সায়রা কিছু বললো না। শাড়ি নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো। শাড়িটা বেশ সুন্দর। হলুদ রঙের হলেও সায়রার ফর্সা গায়ে বেশ মানিয়েছে৷ সাথে হলুদ গোলাপের গয়না। কানের দুি, টিকলি৷ সায়রা শাড়ি পরে বের হয়ে হলো।
আয়নার সামনে বসে সাজতে বসলো ”

“তূর্য সেই দুপুরে খেয়ে এসেই ঘুমিয়েছে। মাএ ঘুম ভাঙ্গলো। চোখ খুলে তাকাতেই দেখলো সায়রা আয়নার সামনে হলুদ শাড়ি পড়ে বসে চোখে কাজল দিচ্ছে। তূর্য ওইভাবেই শুয়ে শুয়ে দেখতে লাগলো। এতো সেজে লাভ কি৷ তূর্য তো আর কাছে যেতে পারে না। তূর্য চেয়ে চেয়ে দেখতে লাগলো। তূর্য যে দেখছে এটা সায়রা বুঝতে পারেনি। সে তার মতো সেজে যাচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হলো চুলে গাজরা লাগাতে গিয়ে। কোনোভাবে ই লাগাতে পারছে না। তূর্য দেখলো সায়রা চেষ্টা করছে। তূর্য উঠলো বিছানা থেকে। নেমে এসে সায়রার পেছনে দাঁড়ালো। কোনো কথা না বলে কালো ক্লিপ দিয়ে গারজাটা লাগিয়ে দিলো পরপর বললো ”

_নাও পারফেক্ট ।

“সায়রা চেয়ে রইলো আয়নার দিকে। তূর্য সবে ঘুম থেকে উঠেছে। চুলগুলো এলোমেলো। চোখ ফুলে আছে। তূর্যর ঠোঁট জোড়া ও কেমন অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। সাদা রঙের টি শার্ট। হাতের পেশিবহুল ফুলেফেঁপে উঠছে। সায়রা চোখ ফিরিয়ে নিলো। আস্তে করে বললো ”

_ধন্যবাদ ।

“তূর্য হালকা হেঁসে বললো ”

_এতো সেজেগুজে কি হবে? যাবে কোথায় ?

_কেনো ছাদে যাবো।

“তূর্য কিছু বলতে যাবে তার আগেই দরজায় শব্দ হলো। তূর্য গিয়ে দরজা খুলে দিলো। দেখলো আকাশ দাড়িয়ে আছে। হাতে একটা পাঞ্জাবি। সেটা তূর্যর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো ”

_ভাই অনেক বউ রে সময়,দিছো। এবার পাঞ্জাবিটা পড়ে আসো প্লিজ ।

“কথাটা বলে তূর্যর হাতে পাঞ্জাবিটা ধরিয়ে দিয়ে আকাশ চলে গেলো। তার হাতে অনেক কাজ। তূর্য পাঞ্জাবিটা এনে বিছানায় রাখলো। সায়রা তখন হাতে তখন কাঁচের চুড়ি পড়ছিলো। তূর্য সায়রার দিকে একবার চেয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো।
বের হলো পাঞ্জাবিটা পড়ে। অন্য সময় হলে কখনোই পড়তো না। আজ মনে হলো পড়া উচিত। পাঞ্জাবি পড়ে বের হয়ে আয়নার সামনে এসে দাঁড়াতে ই সায়রা দেখলো আজ ও বুকের কাছের বোতাম লাগায়নি। সায়রা উঠে দাড়ালো। তূর্যর দিকে চেয়ে বললো ”

_আজ ও বোতাম লাগাননি। দেখি নিচু হয়ে দাড়ান।

“তূর্য একটু ঝুকে দাড়ালো। সায়রা তূর্যর বোতামগুলো লাগাতে শুরু করলো। সায়রার কপাল তূর্যর মুখের কাছে। তূর্য চেয়ে আছে সায়রার মুখের দিকে। বউটা তার আজ একটএ বেশি ই সেজেছে। কপালে টিপ। ঠোঁটে গাড় লাল রঙা লিপস্টিক। তূর্যর লোভ লাগছে। তাদের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক থাকলে হয়তো আজ তার এই শাড়ি পড়ে সায়রা বের হতে পারতো না। ওই অবস্থায় ই সায়রাকে তূর্য রাখতো না। এই মেয়ে কেন এতো কাছে এসে এসে তাকে পোড়াচ্ছে কে জানে। সায়রা বোতাম লাগিয়ে দিয়ে সরে দাড়ালো।
তখনই রুমি এলো। দরজা খোলা ই ছিলো। সায়রাকে দেখে বললো”

_ভাবী চলো।

“সায়রা রুমির সঙ্গে বেরিয়ে গেলো৷ সন্ধা নেমে যাবে একটু পর। ছেলের বাড়ি থেকেও আয়েশাকে হলুদ দিতে আসবে। সবাই গিয়ে আয়েশার উপরে ওরনা ধরলো এক কোনা সায়রা আরেকটা রুমি আরেকরা রুশনি আরেকটা রাইসা৷ মেয়েটা সেজেছে একেবারে। মনে হচ্ছে ওর ই বিয়ে। ছাদে সাউন্ড বক্স বাজছে। আয়েশাকে ছাদে নিয়ে পেন্ডেল এ বসিয়ে দিলো। রুমি আর সায়রা সব করছে হাতে হাতে। রুমি পুডিং বানিয়েছে। এটা ওটা সাজিয়েছে৷ সব গুছিয়ে রাখলো। বাড়ির বড়রা উঠবে ছাদে এখন।
আকাশ তূর্যকে টেনে ছাদে উঠালো। এতো মানুষের মধ্যে তূর্যর আসতে ভালোলাগে না৷
এদিকে তূর্যকে দেখে আয়েশার কয়েকটা বান্ধুবি হা করে চেয়ে আছে। একজন আরেকজনের সঙ্গে ফিসফিস করছে। এরপর আয়েশার কাছে গিয়ে তূর্যকে দেখিয়ে বললো ”

_এই আয়েশা ওই ছেলেটা কে রে?

_ওইটা। আমার ফুপাতো ভাই। কেন?

_দেখতে কি কিউট। ফোন নাম্বারটা একটু এনে দিবি ?

“আয়েশা হাসলো। এরপর সায়রার দিকে দেখিয়ে বললো ”

_রুমির সাথের ওই মেয়েটাকে দেখেছিস ?

“আয়েশার কথায় সামনে তাকালো মেয়েটা। রুমির সঙ্গে বসে বসে কথা বলছে সায়রা। মেয়েটা বললো ”

_হু দেখলাম। সুন্দরী আছে।

_হু। আর এই সুন্দরী মেয়েটাই আমার ফুপাতো ভাইয়ের বউ৷

“মেয়েটার হাসিখুশি মুখটা চুপসে গেলো। এই ছেলেটা ও বিবাহিত। আজকাল সব সুন্দর ছেলেরা বিয়ে করে নিচ্ছে তাড়াতাড়ি করে।
শুরু গলো আয়েশা কে হলুদ দেওয়ার পর্ব। সবাই একে একে হলুদ দিলো। এরপর তূর্য গেলো। সায়রা ও সঙ্গে গেলো। তূর্য হলুদ দিয়ে আয়েশাকে দশ হাজার টাকা হাতে গুজে দিলো।
এরপর ছাদে থেকে নেমে গেলো। তার,এসব হৈচৈ ভালো লাগে না৷
কিন্তু সায়রাকে কিছু বলেনি। সায়রা মজা করুক। এখানে সব মেয়েরাই।
তূর্য রুমে গিয়ে আগে পাঞ্জাবি খুলে শার্ট পড়ে নিলো। এরপর ফোন নিয়ে বসলো। হাতের কিছু কাজ আছে এখনি সেরে ফেলবে ভেবে ”

“তূর্য আয়েশাকে দশ হাজার টাকা দিয়েছে শুনে তূর্যর মেঝো মামি পারে না অজ্ঞান হয়ে যায়। তার নসিব এতো খারাপ কেন। মেয়ের বিয়েটা এই বড় লোকের সঙ্গে হলে কি এমন হতো।
এদিকে রাইসা ও সায়রাকে দেখছে আর ফুসছে। আজ সায়রাকে সবার সামনে অপদস্ত না করতে পারলে সায়রার শান্তি হবে না। বড়রা নিচে যাক। আজ রাইসা এমন কিছু করবে সায়রা কারো সামনে আর মুখ দেখাতে পারবে না৷
রাইসা সোজা নিচে গেলো। আকাশ ওরা আ্যলকোহল এর বোতল এনেছে। হয়তো বন্ধুরা মিলে খাবে বলে। রাইসা ফ্রিজ থেকে আগে কোকাকোলার বোতল বের করে আটটা গ্লাস নিয়ে তাতে ঢাললো। তবে একটা গ্লাস একটু ভিন্ন। সেটাতে একটু কোকাকোলা ঢেলে বাকিটা আ্যলকোহল ঢেলে দিলো। এটা খেলেই নেশা হয়ে যাবে সায়রার৷ উল্টা পাল্টা করবে। বাড়ির সকলে তা দেখবে। তূর্য নিশ্চয়ই মাতাল বউ নিয়ে সংসার করবে না৷ রাইসা মনে মনে মহা খুশি। সবগুলো গ্লাস একটা ট্রেতে করে ছাদে নিয়ে গেলো। ছাদে এখন তেমন কেউ নেই৷ সায়রা ওরা ই বসে গল্প করছে। সায়রা চলে আসতে চেয়েছিলো। কিন্তু রুমি দেয়নি৷
রাইসা হুট করেই কোকাকোলা নিয়ে হাজওর হলো। এসেই বললো ”

_দেখো সবার জন্য জি নিয়ে এসেছি। গরমে সবার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে তাই না। নাও সবাই।

“যে রাইসা নিজে এক গ্লাস পানি ঢেলে খায়না। সে আজ সবাইকে কোকাকোলা নিজের হাতে গ্লাস এগিয়ে দিয়ে খাওয়াচ্ছে। রাইসা একটা গ্লাস সায়রার দিকে এগিয়ে দিয়ে হালকা হেসে বললো

_নিন ভাবী।

” সায়রা হাসি মুখে নিলো গ্লাসটা। যেই গরম লাগছে। তারমধ্যে শাড়ি পড়েছে। ঠান্ডা কোকাকোলা পেয়ে সবাই খুশি। সায়রা একটু সময় নিয়ে খেলো পুরোটা। রাইসা সায়রার পাশেই বসলো। কখন একশন শুরু হবে। তূর্য আসবে। সবাই আসবে। ইস। একেবারে সিনেমা হয়ে যাবে আজ। তূর্যর যেনো ঘৃণা ধরে যায় সায়রার উপর।
অল্প কিছু সময়ের মধ্যে ই সায়রার মাথা কেমন ঝিম ধরে গেলো। গলায় কেমন দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। সায়রা বুঝলো না কি হচ্ছে। উঠে দাড়াতে ও পারছে না। রুমি বিষয়টা খেয়াল করলো। রুমি সায়রার হাত চেপে ধরে বললো ”

_কি হয়েছে ভাবী ?

_মাথা টা কেমন ঘুরছে।

“কথাটা বলতেই রুমি ভয় পেয়ে গেলো। সোজা দৌড়ে নিচে নামলো। তূর্য তখন নাফিসের সঙ্গে কথা বলছিলো। দরজায় বারবার শব্দ হওয়াতে তূর্য ভাবলো সায়রা এসেছে। দরজা খুলতেই দেখলো রুমি। রুমি সঙ্গে সঙ্গে বললো ”

_ভাইয়া ছাদে চলুন। ভাবী কেমন যেনো করছে।

“তূর্যর বুকটা মোচর দিয়ে উঠলো। সায়রার কি হলো। তূর্য সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে ছাদে উঠতে লাগলো। পেছনে রুমি ও গেলো। ছাদে উঠতেই দেখলো সায়রা মাথা চেপে ধরে বসে আছে। তূর্য কাছে এসে সায়রার মুখ তুলে ধরলো ”

_কি হয়েছে তোমার ?

“কিন্তু সায়রা তূর্যর দিকে চেয়ে উঠে দাড়াতে নিলো। কিন্তু তাল সামলাতে পারলো না।
এদিকে রাইসা পাশ থেকে চেয়ে আছে তূর্যর মুখের দিকে। ইস কখন একটা চর মারবে তূর্য সায়রার মুখে।
সায়রা তূর্যর বুকের কাছের শার্ট চেপে ধরলো। বারবার মুখে বলতে লাগলো ”

_তূর্য ।

“তূর্য বুঝলো কিছু একটা তো ঘটেছেই। তূর্য করলো কি সবার সামনে সায়রাকে হুট করে পাজা কোলে তুলে নিলো। সায়রা যেনো খুশি হয়ে গেলো। তূর্যর গলা জরিয়ে ধরলো । সায়রার মাথা কাজ করছে না। তূর্য সায়রাকে নিয়ে নিচে নেমে এলো।
এদিকে রাইসা হতবাক। এটা কি হলো। এমন তো হওয়ার কথা ছিলো না। এ মেয়ে তো সোজা কোলে উঠে গেলো। বুকটা জ্বলে যাচ্ছে রাইসার ”

“তূর্য সোজা রুমে নিয়ে এলো সায়রাকে। সায়রা দাড়াতে ও পারছে না। তূর্য সায়রাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে উঠে যেতে নিলেই সায়রা বাঁধা দিলো। তূর্যর হাত চেপে ধরে বাচ্চাদের মতো করে বললো”

_যাবেন না তূর্য। আমাকে রেখে যাবেন না।

“সায়রার কন্ঠ ও কেমন যেনো লাগছে। তূর্য সায়রার আরো একটু কাছে এগিয়ে যেতেই একটা অন্য রকম স্মেল এলো নাকে। তূর্য বুঝলো সায়রা ড্রিংক করেছে। কিন্তু সায়রা সেসব পাবে কোথায়? ইচ্ছে করে এসব খাওয়ার মেয়ে সায়রাকে তূর্যর মনে হয় না। নিশ্চয়ই কোণো ঘাপলা আছে। সেসবের আগে সায়রাকে ঠিক করতে হবে।
তূর্য সায়রাকে রেখে ফের উঠেতে নিলে সায়রা এবার তূর্যর হাত টেনে ধরে নিজের উপর তূর্যকে ফেলে দিলো। তূর্যর গলা জড়িয়ে ধরলো। তূর্যর দিকে চেয়ে অসহায় কন্ঠে বললো”

_যাবেন না বলেছি না। আমার সঙ্গে মিশে থাকুন তূর্য। আপনি থাকলে আমার ভীষণ ভালো লাগে।

“তূর্য বুঝলো সায়রা এসব নেশার ঘোরে বলছে। তূর্য সায়রার উপর থেকে তবুও উঠলো। সায়রা এবার নিজেও ও উঠে তূর্যর কোলের উপর বসে পরলো। এমনিই শাড়ি পরেছে। তার মধ্যে এমন করছে। তূর্যর তো জান যায় যায় অবস্থা। তূর্য সায়রার গাল চেপে ধরলো ”

_পাগলামি করো না। শান্ত হও। আমি লেবু পানি নিয়ে আসছি। সব ঠিক হয়ে যাবে।

_লাগবে না লেবু পানি। আমার আপনাকে লাগবে তূর্য।

_আমাকে দিয়ে কি করবে?

_খাবো আপনাকে।

“কথাটা কানে যেতেই তূর্য কেশে উঠলো। কি বলে যাচ্ছে এই মেয়ে। তূর্য সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”

_নেশার ঘোরে আছো তুমি৷ আমি নেই কিন্তু। কোলে থেকে নামো। যাবো আর আসবো।

“সায়রা এবার ঠোঁট উলটে ফেললো। আরো শক্ত করে তূর্যর গলা জরিয়ে ধরলো। তূর্য হাতের মোঠ শক্ত করে ফেললো। সায়রা ওর শার্ট চেপে ধরে রেখেছে। ঘারে সায়রার গরম নিঃশ্বাস পড়ছে। বসেছে কোলে। তূর্য কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না। ওর নিজের ই মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সায়রা তূর্যকে জরিয়ে ধরেছে ঠিকই কিন্তু তূর্য ধরেনি। সায়রা বললো ”

_কোথাও যেতে দিবো না। আপনি হারিয়ে যাবেন তাহলে। আপনাকে আমি চুমু খাবো। আপনি তো একটা ঢেরস। একটা চুমু ও খান না আমায়। দেখুন আমার ঠোঁট কতো সুন্দর।

“কথাটা বলে সায়রা ঠোঁট জোড়া উঁচু করলো বাচ্চাদের মতো। তূর্য একবার চেয়েই চোখ বন্ধ করে ফেললো। মেরেই ফেলবে আজ এই মেয়ে তাকে। তূর্য সায়রাকে নিজের কোলে থেকে নামানোর চেষ্টা করলো। সায়রা আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। সায়রার ঠোঁট একেবারে তূর্যর ঠোঁটের কাছে এসে ঠেকছে। একটা পর্যায় সায়রা তূর্যকে ধাক্কা দিয়ে শুইয়ে দিলো। তূর্য বাঁধা দিলো না। এদিকে সায়রার শাড়ির অবস্থা নাজেহাল। আচলটা ও ঠিক মতো নেই। তূর্য কিভাবে সয্য করবে এসব। তূর্যর উপরে সায়রা বসে। তূর্যর পুরো বুক জুড়ে হাত বুলাচছে। শার্ট উঠে গিয়ে তূর্যর পেটের পেশি বহুল দেখা গেলো। সায়রা সেখানে হাত রাখলো। তূর্য সায়রার হাত ধরে বাঁধা দিলে সায়রা বলে উঠলো ”

_এটা খুলে ফেলুন না। আপনাকে শার্টলেস দেখবো। আপনাকে শার্টলেস অবস্থায় অনেক হট লাগে তূর্য। আমি শুধু চেয়ে থাকি৷ দেখবো। খুলুন এটা।

“তূর্য এবার শেষ ই হয়ে যাবে। বড় বড় ঢোক গিলছে তূর্য। কোনো ভাবেই সে কনট্রোললেস হতে চাইছে না। তূর্য জানে সে দূর্বল হয়ে গেলেই সায়রা শেষ হয়ে যাবে তার ছোঁয়ায়। এটা তূর্য চাইছে না৷ কিন্তু সে তো পুরুষ। এভাবে কেউ উপরে বসে থাকলে এমন কথা বললে কোন পুরুষ সয্য করতে পারবে সেসব। সায়রা এদিকে তূর্যর শার্ট এর বোতাম খুলতে শুরু করেছে৷ শার্টের সব বোতাম খুলে ফেলেছে সায়রা। তূর্য বারবার বাঁধা দিয়ে ও পারছে না। একটা সময় তূর্য সায়রাকে নিচে ফেলে সায়রার উপরে উঠে গেলো। সায়রার হাত দুটো চেপে ধরলো বিছানার সঙ্গে । সায়রা কেমন অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। তূর্য হাঁপাচ্ছে রীতিমতো। সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”

_আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙো না। শেষ হয়ে যাবে তুমি।
আমি ভীষণ তৃষ্ণারত। তুমি বুঝতে পারছো না।

“সায়রা তূর্যর কথা শুনলো কিনা কে জানে। সায়রা হুট করে মাথা একটু উঁচু করে তূর্যর ঠোঁট চুমু খেয়ে বসলো। এই মুহুর্তে তূর্যর মনে হলো ওর সব ধৈর্য ভেঙে গড়িয়ে গেলো। তূর্য আর পারলো না নিজেকে ধরে রাখতে। সায়রা হাত ছেড়ে দিয়ে এক হাত দিয়ে সায়রার গাল চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। তূর্য পুরুষ মানুষ । এতো ধৈর্য তার নেই। সায়রাকে তূর্য এমনভাবে চেপে ধরেছে। সায়রা নিঃশ্বাস ও নিতে পারছে না। সায়রার ঠোঁট জোড়া যেনো কোনো অমৃত। এমন ভাবে শুষে নিচ্ছে তূর্য। সায়রা নিজেও পেরে উঠছে না তূর্যর সাথে। তূর্য শুধু চুমু ই খেয়ে থেমে থামেনি। সায়রার শরীরে ও চলছে তূর্যর হাতের বিচরন। সায়রা কেপে উঠছে বারবার । তূর্য ভীষণ অধৈর্য হয়ে উঠেছে। তূর্য সায়রা ঠোঁট ছাড়েনি এখনো। সাথে হাতটা ও স্থির নেই। সায়রার শাড়ির আচল সরে গেছে অনেক আগেই। তূর্য সায়রার ঠোঁট ছেড়ে দিলো। সায়রার দিকে দৃষ্টি রাখলো। তূর্যর নিজের শারীরের শার্ট টা এবার পুরোপুরি খুলে ফেললো। সায়রার দিকে তাকাতেই দেখলো সায়রা চোখ বন্ধ করে আছে। সায়রার বুকটা উঠানামা করছে অনবরত । তূর্যর দৃষ্টি সেখানে যেতেই তূর্যর বুকটা জ্বলে উঠলো। লোভ হচ্ছে ভীষণ তূর্যর ধিরে ধিরে এগিয়ে গেলো সায়রার দিকে। ফের ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো। এক হাত সায়রার পিঠের নিচে দিয়ে টান দিয়ে ব্লাউজ এর ফিতাটা খুলে ফেললো। সায়রা হুসে নেই। মাথা আর চলছে না তার। এদিকে তূর্য থামছে না। তূর্যর হাত এবার এক অনাকাঙ্ক্ষিত জায়গায় চলে এলো। সায়রা নিজেও যা সইতে পারছে না। বক্ষদেশে তূর্যর হাতের বিচরন। সায়রাকে পাগল করে দিচ্ছে। পীড়ায় সায়রা বারবার দূরে সরে যেতে চাইছে। কিন্তু পারছে না৷ তূর্য যে তার উপরে। অথচ বক্ষদেশের পীড়ায় সায়রার চোখে পানি চলে এসেছে। তূর্য ফের ঠোঁট ছাড়লো। ছেলেটা বোধহয় আজ উন্মাদ হয়ে গেছে। তূর্য এবার ধিরে ধিরে সায়রা
বক্ষদেশে নেমে এলো। সেখানে মুখ ডুবিয়ে দিতেই সায়রা কেমন আর্তনাদ করে উঠলো। বাঁধা দিতে চাইলো। কিন্তু তূর্য তা মানবে কেন ? তূর্যকে পাগল করে দিয়ে তূর্যর স্পর্শ সয্য করতে পারছে কেন এই মেয়ে।
তূর্য থামলো একটু। মাথা তুলে তাকালো সায়রার দিকে। সায়রার চোখে পানি। তূর্য একটু সময় নিলো। ঠিক হচ্ছে না কিছু। সব ভুল হচ্ছে। তূর্য জোড়ে জোড়ে কয়েকটা নিঃশ্বাস ফেললো। সায়রা একেবারে ই বেহুস। তূর্য সায়রার উপর থেকে উঠে সায়রাকে ফের কোলে তুলে নিলো। সোজা করে শুইয়ে দিলো। এবার ও উঠতে গেলে সায়রা জরিয়ে ধরলো। তূর্য চোখ বন্ধ করে ফেললো। সায়রার পাশেই শুয়ে সায়রাকে বুকে জড়িয়ে নিলো।
তূর্যর মধ্যে ঝড় চলছে। কেমন ঝড় তূর্য কাউকে বুঝাতে পারবে না। সায়রা অল্প সময়ের মধ্যে ই ঘুমিয়ে পড়লো। কিন্তু তূর্যর ঘুম এলো না৷ সায়রার পাশ থেকে উঠে বসে রইলো। গায়ে তার শুধু মাএ পেন্ট। জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস পড়ছে তূর্যর । ফিরে একবার ঘুমন্ত সায়রার দিকে তাকালো। পরপর সায়রার দিকে ঝুকে সায়রার কপালে একটা চুমু খেলো। সায়রার মুখের দিকে চেয়ে বললো ”

_দেখো, আমার অন্তর জ্বালিয়ে দিয়ে কতো আরামে ঘুমাচ্ছে। তুমি বুঝো আজ কি করেছো তুমি। আমার এতো বছরের ধৈর্য ভেঙে গুড়িয়ে দিলে। তবুও পুরোটা তোমায় পেলাম না মায়াবতী আমার৷ আমি ভীষণ পুড়ছি। ভীষণ । তুমি না কাঁদলে হয়তো আজ কোনো বাঁধা ই মানতাম না আমি। কাল সব ভুলে যাবে তাই না। বিশ্বাস করো মায়াবতী একদিন এই তূর্য তুমি কেঁদে মরে গেলে ও ছাড় দেবে না৷ একটু ও না।

“তূর্য সারারাত ঘুমাতে পারলো না। মাথায় অনেক কিছু ঘুরছে। মদ কোথায় পেলো সায়রা ? কাল যে করেই হোক তূর্য সব বের করবে। এমনি এমনি এসব ঘটেনি। কপউ তো আছেই এর পেছনে ”

“এদিকে রাইসা নিজের ঘরে এসে সব ভেঙেচুরে একাকার করে ফেলেছে। কোথায় ভাবলো সায়রাকে অপদস্ত করবে। তূর্য সায়রাকে কিছুই বললো না৷ সবার সামনে কোলে তুলে নিলো। এখনো ওদের ঘরের দরজা বন্ধ। কিছুই কি হয়নি৷ তূর্য কপন সায়রাকে এতো ছাড় দিচ্ছে। রাইসার বুক ফেটে কান্না আসছে। সায়রা কেন তূর্যর সঙ্গে থাকবে। তার থাকার কথা। নিশ্চয়ই ওই ঘরে অন্য কিছু চলছে। রাইসা কেঁদে কেটে ওভাবেই ঘুমিয়ে পড়লো। পছন্দের মানুষকে অন্যের সাথে দেখা বোধহয় দুনিয়ায় সব থেকে বেশি কষ্টের ”

“সকাল থেকে বাড়িতে হৈচৈ। মেয়ের বাড়ি। আজ খাওয়া দাওয়া চলছে। সায়রা বেঘোরে ঘুমাচ্ছিলো। হুট করেই ঘুম ভাঙলো। চোখ খুলে তাকাতেই দেখলো রুমে হালকা আলো। মাথাটা এখনো ঝিমঝিম করছে সায়রার। সায়রা যখন ভালো করে তাকালো। খেয়াল করলো সায়রার জামাকাপড় ঠিক নেই। পড়নে শাড়িটা আধ খোলা হয়ে আছে। সায়রার মনে পড়লো কাল রাতের কথা। তূর্য ওকে কোলে নিয়েছে ছাদে গিয়ে। রুমে এসে ও সায়রার অনেক কিছু মনে ছিলো। কি হয়েছে কাল রাতে ? সায়রা ভাবছে তখনই দেখলো তূর্য রুমে এলো। হাতে কফির মগ৷ সায়রা চাদর দিয়ে নিজেকে আরো একটু জড়িয়ে নিলো। তূর্য অন্য দিকে চেয়ে সায়রার দিকে কফি মগটা এগিয়ে দিয়ে বললো ”

_এটা খেয়ে তারপর উঠো। ভালোলাগবে।

“সায়রা কফি মগটা কাপাকাপা হাতে নিলো। তূর্য কিছু বলছে না কেন। সায়রা দেখলো তূর্য পকেটে হাত রেখে দাড়িয়ে আছে সায়রার দিকে চেয়ে। সায়রা বললো ”

_কাল রাতে কি হয়েছে ?

“তূর্য ভ্রু কুঁচকে বললো ”

_কেনো? কাল রাতে কিছু হওয়ার ছিলো ?

_আমি তো ছাদে ছিলাম। তারপর,,,,, ।

_কি খেয়েছিলে কাল রাতে?

“তূর্যর কথা শুনে সায়রা অবাক হয়ে তাকালো। সে আবার কি খেলো। গলায় কেমন যেনো লাগছে এখনো। সায়রা অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে বললো ”

_কি খেয়েছি ? আমি তো কিছুই খাইনি।

_আচ্ছা তাই। তুমি আ্যলকহোল খাওনি ?

“তূর্যর কথা শুনে সায়রা হা হয়ে গেলো। আ্যলকোহল। যা জীবনে সায়রা হাত দিয়ে ছোয়নি। খাবে তো দূরের কথা। সায়রা বললো ”

_নাউজুবিল্লাহ। আমি তো ছাদে কোকাকোলা খেয়েছিলাম। আ্যলকোহল কোথা থেকে এলো।

_কে দিয়েছিলো কোক ?

_ওই যে রাইসা।

“এবার সায়রা তূর্য দুজনেই বিষয়টা বুঝতে পারলো। তূর্য রাগে ফেটে যাচ্ছে। রাইসা। ওইটুকু মেয়ে। এমন কাজ করতে পারে। সায়রা তো এটাও বুঝলো কেন রাইসা এমন করেছে। তূর্য রেগে চলে যেতে নিলো। সায়রা বুঝলো এখন গিয়ে তূর্য একটা অঘটন ঘটাবে। তূর্য যেতে নিলেই সায়রা নিজের শাড়ি বুকের সঙ্গে চেপে ধরে লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে দরজার কাছে গিয়ে দাড়ালো। তূর্য থেমে গেলো। সায়রা নিজেও জানেনা ওর কি অবস্থা ”

_প্লিজ যাবেন না। যা হওয়ার হয়েছে। আপনি এখন কিছু বললে ঝামেলা হবে। আমরা তো রোজ আসি না। প্লিজ ।

“তূর্য তবুও মানলো না। সায়রাকে সরিয়ে যেতে নিলে সায়রা তূর্যকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। সায়রা নিজেও জানেনা সে কি করছে। তূর্য থেমে গেলো। সায়রা তূর্যর বুকের কাছে মাথা রেখে বলতে লাগলো ”

_যাবেন না প্লিজ যাবেন না। আমি ছাড়বো না আপনাকে।

“তূর্য কিছু ই বলছে না। সায়রা তূর্যর বুক থেকে মাথা তুলে তূর্যর দিকে তাকাতেই তূর্য সায়রার থুতনিতে হাত রেখে সায়রার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো। সায়রা হাত থেকে চেপে ধরে রাখা শাড়ির অংশটা পড়ে গেলো। এটা কি হচ্ছে। সায়রা বরফ হয়ে গেলো। কাল রাতের কিছু ই সায়রার মনে নেই। কিন্তু এখন। তূর্য সায়রার ঠোঁট যেনো নিজের মুখের ভেতরে নিয়ে নিচ্ছে। সায়রা কিছু বুঝে উঠার আগেই তূর্য সায়রার ঠোঁট ছেড়ে দিলো। সায়রার চোখে চোখ রেখে বললো ”

_যতোবার এভাবে কাছে আসবে। চুমু ততো লম্বা হবে।

“সায়রা তূর্যকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। বললো ”

_আপনি কিন্তু শর্ত ভাঙছেন ।

“তূর্য হাত দিয়ে ঠোঁট মুছে। সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”

_ওটা তুমি আমার আগেই ভেঙেছো। তাই ওই শর্তের কোনো মূল্য নেই।

“কথাটা বলে তূর্য ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। সায়রা থ মেরে দাড়িয়ে রইলো। সায়রা শর্ত ভেঙেছে। কিন্তু কবে ? এই লোক এটা কি করে ফেললো। সায়রার সব কিছু কেমন লাগছে। তূর্য। কিভাবে। ইস। সায়রা ভাবতেই পারছে না। ওই লোক খুব খারাপ। সায়রাকে কি পুতুল পেয়েছে। সায়রা নিজের ঠোঁটে হাত দিয়ে কয়েক মিনিট আগে ঘটে যাওয়া কথা ভাবতে লাগলো। সে কেন বাঁধা দিতে পারছে না। তূর্যর প্রেমে পড়ছে কি সায়রা। এটা কি করে হয় ”

চলবে,,,

#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#৩২

“সায়রা সাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে। মাথাটা যেভাবে ধরেছে তাতে করে সাওয়ার না নিয়ে উপায় ছিলো না
তূর্য সেই যে তখন বের হয়েছে আর আসেনি উপরে।
রুমের বাইরে হৈচৈ শোনা যাচ্ছে। সায়রা একটা ড্রেস পড়ে একেবারে ফিটফাট হয়ে নিলো চুলগুলো ভেজা৷ সেগুলো ছেড়ে দিলো। এরপর রুম থেকে বের হতেই মুখোমুখি হলো রাইসার। রাইসা ও নিচে যাচ্ছিলো। সায়রাকে দেখেই থেমে গেলো। সায়রার ভেজা চুল চোখে পড়তেই আরো উওেজিত হতে শুরু করলো রাইসা। তারমানে কাল ওদের মধ্যে। না না রাইসা ভাবতেই পারছে না। এতো কিছুর পর ও তূর্য সায়রাকে আদর করেছে৷ কিচ্ছু বলেনি। আর রাইসা সারারাত না ঘুমিয়ে কেঁদে কাটিয়েছে।
সায়রা দেখলো রাইসার চোখ দুটো ফুলে আছে। হয়তো কেঁদেছে। সায়রা রাইসাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিতেই রাইসা সায়রার হাত চেপে ধরলো। এমনভাবে ধরেছে সায়রা থেমে গেলো। রাইসা বোধহয় নিজের মধ্যে আর নেই। সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”

_তুই আমার থেকে আমার তূর্যকে কেড়ে নিয়েছিস। তুই। তোর জন্য আমি তূর্যকে পাইনি। কাল না তোকে মদ খাওয়ালাম। তাতে ও কেন কিছু বললো না তোকে তূর্য। বল। তোকে মেরে ফেলবো আমি,,, ।

“রাইসা চিৎকার করে কথাগুলো বলছিলো। কেমন হিংস্র দেখাচ্ছিলো রাইসাকে৷ নিচে সবাই ছিলো৷ তূর্য ও। হুট করে এমন কথা সবার কানে আসতেই তূর্য দৌড়ে উপরে যেতে লাগলো। তূর্যর পেছনে পেছনে রাইসার মা,আকাশ, রুমি ওরা ও এলো। এসে দেখলো রাইসা সায়রার হাত মুচরে দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরেছে আর বলছে ”

_মেরে ফেলবো তোকে আমি৷ তুই কেড়ে নিয়েছিস আমার,,,,, ।

“রাইসা আর বলতে পারলো না। তূর্য এসে ধাক্কা দিয়ে রাইসাকে সরিয়ে দিয়ে সায়রার সামনে দাঁড়ালো। সায়রা ভয় পেয়ে গেছে৷ তূর্যকে পেছন থেকে চেপে ধরলো। রাইসা থামলো না আবার এগিয়ে আসতে নিতেই তূর্য পরপর দুটো থাপ্পড় বসালো রাইসার গালে। রাইসা ছিটকে গিয়ে পড়লো ফ্লোরে। ততক্ষণে সকলে সিঁড়িতে এসে জড়ো হয়েছে। রাইসার মা মেয়েকে গিয়ে চেপে ধরলো। রাইসা কেমন পাগলের মতো করছে। তূর্য রাইসার মায়ের দিকে চেয়ে বললো ”

_আপনার এই অসভ্য মেয়েকে সামলান মামি।

“রাইসার মা তূর্যর দিকে চেয়ে বললো”

_তুমি আমার মেয়েকে এভাবে থাপ্পড় মারলে ?

_হে মারলাম। তাও কম হয়ে গেছে। ও যা করেছে তাতে ওকে মেরে ফেলতে ও আমি দ্বিধা করতাম না।

“সকলে হা করে চেয়ে আছে। তূর্যর পেছনে সায়রা ভয়ে চুপসে আছে। তূর্য সায়রার দিকে ফিরে সায়রার হাতের দিকে তাকালো। রাইসা এতো জোড়ে চেপে ধরেছে সাথে রাইসার বড় বড় নখের আচরে রক্ত বের হচ্ছে হাত থেকে। সবাই তা দেখলো। তূর্য নিজের রাগ কনট্রোল করতে পারছে না। ইচ্ছে করছে আরো দুটো চর মেরে আসতে। কিন্তু সায়রা তূর্যর হাত চেপে ধরলো। তূর্য থেমে গেলো। আকাশ এসে বললো ”

_ভাই ঠান্ডা হও৷ ও ছোটো মানুষ বুঝেনি৷

“তূর্য চেয়ে আছে সায়রার হাতের দিকে৷ পরপর রুমির দিকে চেয়ে বললো ”

_ফাস্ট এইড বক্সটা দিয়ে যাবি বোন।

“রুমি দৌড়ে গেলো ওর ঘরে। তূর্য সায়রার হাত চেপে ধরে রুমে নিয়ে গেলো। এদিকে এসব কাহিনী তূর্যর বড় মামার কানে গেছে। রাইসার এমন ব্যবহার করার কারন কি তিনি জানতে চাইলে আয়েশা সবার সামনে বলে দিলো। রাইসার বাবা রাইসাকে মারতে এগিয়ে গেলো। তূর্য তো তাদের কখনো বলেনি বিয়ের কথা। এসব রাইসার মা রাইসার মাথায় ঢুকিয়েছে৷ তিনি নিজেও বুঝলেন এটা করা ঠিক হয়নি৷ মেয়ে তার তূর্যকে নিয়ে মনে নানা আশা বেঁধেছে। তার ফল ই আজ পাচ্ছে ”

“তূর্য সায়রাকে রুমে এনে বিছানায় বসিয়ে দিলো। সায়রা এখনো কিছু বলতে পারছে না। রাইসা ওকে যেভাবে চেপে ধরেছিলো। এর মধ্যে রুমি এসে ফাস্টএইড বক্স দিয়ে গেলো। তূর্য তা এনে সায়রার সামনে হাটু গেড়ে বসলো। সায়রার হাত নিয়ে ভালো করে দেখতে লাগলো। চারটা নখ একেবারে দাবিয়ে দিয়েছে। আচর ও দিয়েছে। সায়রা পুতুলের মতো বসে বসে তূর্যকে দেখে যাচ্ছে। তূর্য একটু তুলোতে হেসকসোসল নিয়ে সায়রার হাতে আলতো করে লাগিয়ে দওতে থাকলো। জ্বলছে পুরো। তূর্য হালকা করে ফু ও দিচ্ছে। সায়রা শুধু দেখে যাচ্ছে তূর্যর কান্ড এই লোকটা তার জন্য এভাবে লড়ে কেনো ? সায়রা তো তূর্যর আপন কেউ নয়৷ হে তারা বিবাহিত। কিন্তু তা তো নামে মাএ৷ স্বাভাবিক তো নয় তাদের সম্পর্ক। তূর্য সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”

_আর কোথাও কিছু করেছে ?

_উহু। কিছু করার আগেই তো আপনি চলে এলেন৷

“তূর্য কিছু বললো না। উঠে দাড়ালো। হাতের বক্সটা নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখলো। সায়রা তূর্যর দিকে চেয়ে থেকে বললো ”

_সবার সাথে এভাবে লড়ছেন কোনো আমার জন্য ?
শুধু শুধু আপনার সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে।

“তূর্য সায়রার দিকে ফিরে হালকা হেসে বললো ”

_আমার কারো সঙ্গে সম্পর্ক ই নেই। নষ্ট কি হবে।

_তবুও। এটাই তো শেষ না৷ বছর ঘুরলে আপনি এখানে আবার আসবেন৷ তখন তো আমি থাকবো না। কিন্তু আপনার মামি তো,,,,,।

“সায়রা কথাটা শেষ ও করতে পারলো না। তূর্য কেমন করে যেনো তাকালো সায়রার দিকে। যেনো কথাটা তার একটু ও পছন্দ হয়নি। কথাটা সে শুনতে ও চায়নি। তূর্য কিছু না বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
অস্থির লাগছে তার। তূর্য বেরিয়ে গিয়ে সোজা রাস্তায় চলে গেলো। একা থাকতে ইচ্ছে করছে। মাথায় শুধু ঘুরছে একটা ই কথা। বছর ঘুরবে৷ কিন্তু সায়রা থাকবে না৷ সায়রা না থাকলে তূর্যর কি কষ্ট হবে৷ ভীষণ কষ্ট হবে৷ এখনি হচ্ছে। বুকের ঠিক মাঝখানটায় হচ্ছে। সায়রা ধীরে ধীরে তূর্যর জীবনের একটা অংশ হয়ে যাচ্ছে তূর্য টের পাচ্ছে। সে আবার কাউকে হারানোর ভয় করছে। সায়রাকে থাকতে হবে৷ তূর্য বেঁধে রেখে দেবে ওই মেয়েকে৷ তূর্য থাকতে পারবে না ওকে ছাড়া।
তূর্য একাই হেঁটে গিয়ে একটা চায়ের দোকানে বসলো
দোকানদার লোকটা বয়স্ক। তূর্য গিয়ে বসে একটা সিগারেট চাইলো সঙ্গে এক কাপ চা।
তূর্যর দিকে দোকানদার একটু পর পর তাকাচ্ছে। তূর্যর দিকে একটা সিগারেট এগিয়ে দিলো। কয় মাস পর তূর্য সিগারেট খাচ্ছে নিজেও জানে না। সিগারেট ধরিয়ে খেতে লাগলো। দোকানদার চা বানাচ্ছে। তূর্যর দিকে চেয়ে হুট করে বললো ”

_কোনো সমস্যায় আছো নাকী নাতী ?

“তূর্য তাকালো লোকটার দিকে। সাদা দাড়ি গাল ভর্তি। হেসেই কথা বলছে। দেখে মনে হচ্ছে ভীষণ সুখী মানুষ। তূর্য বললো ”

_নাহ্ কোনো সমস্যা না৷

_আরেহ্। সমস্যা থাকলে কও। মন হালকা হইবো বুঝলা। সিগারেট আর চা খাইলে মন হালকা হয় না নাতী।

“তূর্য এবার অবাক হলো। লোকটা ভুল বলেনি। তূর্য আরেকবার সিগারেটে টান দিলো৷ এরপর ফেলে দিলো। লোকটার দিকে চেয়ে বললো ”

_ভীষণ সমস্যা আমার। জটিল ও বটে৷

_কি সমস্যা ?

_ আচ্ছা আপনি আমাকে বলতে পারবেন৷ জীবনে খুব করে চাওয়া মানুষকে কিভাবে নিজের কাছে ধরে রাখা যায়?

“লোকটা তূর্যর কথা শুনে হাসলো। হেসে বললো ”

_এইডা তো খুব সোজা। যারে ধইরা রাখতে চাও। তারে নিজের কইরা নাও। তিন কবুলে বাইধা ফেলো। দেখবা আর হারানোর ভয় হইবো না।

“তূর্য অবাক হয়ে বললো ”

_তিন কবুলে মানুষ থেকে যাবে ?

_মাইয়া মানুষ হইলে অবশ্যই থাইকা যাবে। মাইয়া মানুষ চায় সংসার। স্বামীর সময়,মহব্বত। এইডি দাও। দেখবা তোমারে রাজা কইরা রাখছে।

“কথাটা বলেই লোকটা হেসে উঠলো। তূর্য ভাবলো। তিন কবুল। আসলেই আটকে দেবে। লোকটা এবার নিজে থেকেই বললো ”

_আমার বউ। আমি ওরে মেলা ভালোবাসতাম। কিন্তু ওয় কইতো পারলে আমার তিন কবুলে বাঁধো। না হইলে আমারে আর পাইবা না। আমি কিন্তু হারায় যামু। আমার মহব্বত এর মানুষ। ওয় হারাইলে আমি বাচুম কেমনে। তহন আমি বেকার। তবুও সাহস কইরা বাইধা লইলাম নিজের লগে। এহনো আছে। বুঝলা। তিন কবুলের অনেক শক্তি।

“তূর্য লোকটার কথা গভীর ভাবে ভাবলো। এরপর আরো কিছু কথা বলে তূর্য লোকটার সাথে। দুপুর হয়ে যাচ্ছে। এদিকে তূর্যকে খুজতে খুঁজতে আকাশ এসে হাজির হয়েছে। আকাশ এসেই বললো ”

_ভাই তুমি এই জাগায় আইসা বইসা আছো। বাড়ি চলো। আব্বা ডাকছে তোমারে।

“তূর্য আর আকাশ হেঁটে হেঁটে বাড়ি এলো। তূর্যর এখন কেন যেনো একটু শান্তি লাগছে। বাড়ি এসেই দেখলো দুপুরের খাওয়া দাওয়ার জন্য মানুষ চলে এসেছে। তূর্য সোজা বাড়ির ভেতরে ঢুকলো। তূর্যর বড় মামা তূর্যকে ডেকে অনেক কিছু বলে বুঝালেন। তূর্যর রাগ হওয়া স্বাভাবিক। তার বউ সায়রা। তূর্য মামার সময় কথা বলে সোজা ঘরে গেলো। সায়রা তখন ঘরেই ছিলো। তূর্যকে দেখেই বললো ”

_কোথায় চলে গিয়েছিলেন আপনি ?

“তূর্য সায়রাকে পাশ কাটিয়ে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। হাতের ঘড়িটা খুলতে খুলতে বললো ”

_যেখানেই যাই। তোমাকে কেন বলবো। কে তুমি আমার ?

“শেষের কথাটা সায়রার দিকে চেয়ে বললো তূর্য। সায়রা অবাক হয়ে চেয়ে আছে৷ এই লোকের আবার কি হলো। সায়রা বললো ”

_কেউ না৷ কিন্তু বলতে কি সমস্যা।

_যে আমার কেউ না৷ তাকে কেন বলবো।

“কথাটা বলে তূর্য গায়ে থাকা শার্ট খুলতে লাগলো। সায়রা চেয়ে আছে। এই লোকের আজ হয়েছে কি।
সায়রা অন্যদিকে ফিরে গেলো। বললো ”

_ছিহ্। আমার সামনে শার্ট খুলছেন কেনো ? নির্লজ্জ পুরুষ।

“সায়রার কথা শুনে তূর্য ভ্রু কুচকে ফেললো। আজ সে নির্লজ্জ পুরুষ। কাল রাতে ছিলো না। যখন সায়রা তূর্যর শার্ট নিয়ে টানাটানি করছিলো। তূর্য সায়রার সামনে এসে দাড়ালো। শার্ট এর সামনের দিকের সবগুলে বোতাম খোলা। সায়রা চোখ ফিরিয়ে নিলো। তূর্য সায়রার গাল চেপে ধরলো। সায়রা চোখ বন্ধ করে রইলো। তূর্য বললো ”

_তাকাও।

_উহু। তাকাবো না। সরুন আপনি।

_তাকাও বলছি।

_সরুন নির্লজ্জ লোক। বডি দেখাতে চাইছেম আমাকে।

“তূর্য হেসে ফেললো। সায়রাকে এতো মিষ্টি লাগছে ইচ্ছে করছে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে চুমু খেতে।
কাল থেকে শুধু লোভ হচ্ছে। তূর্য বললো ”

_এখন আমি নির্লজ্জ লোক। আর তুমি ?

_আমি ভালো।

“সায়রা এবার চোখ খুলে একটু তাকালো। তূর্য ওর গাল ছেড়ে দিয়ে ওয়াসরুমে যেতে যেতে বললো ”

_সন্ধায় ঢাকা যাচ্ছি। সব গুছিয়ে নাও।

“সায়রা চেয়ে রইলো। ঢাকায়। আজই। কিন্তু ওদের তো কাল যাওয়ার কথা ছিলো। সায়রা তূর্যর কথা মতো হালকা পাতলা গুছিয়ে ফেললো। এর মধ্যে শুনলো বরযাএী এসেছে। সায়রা বউয়ের ভাবী। তাই তূর্যর ছোট মামী এসে সায়রাকে টেনে নিয়ে গেলো নিচে ”

“বিয়ে শেষ। সন্ধায় তূর্য যাবে শুনে তূর্যর বড় মামা রেগে গেলেন। কিন্তু তূর্য ও নাছোরবান্দা। সে আর থাকছে না মোহনগঞ্জ। সামর্থ্য বেগম ও অনেক বুঝালেন। কাল সকালে যাবে৷ কিন্তু না। তূর্য থাকবে না। শেষে সন্ধায় সত্যি ই ওরা যার জন্য তৈরি হলো। নিচে নেমে সকলে থাকলে ও রাইসা আর রাইসার মাকে দেখলো না। রুমি সায়রাকে ধরে কেঁদে ই ফেললো ”

_আবার আাবে কিন্তু ভাবী। তোমাকে অনেৃ মিস করবো।

“সায়রার ও খারাপ লাগছে। রুমিকে জড়িয়ে ধরে বললো ”

_আমি আসবো। তুমি ও যেও৷

“সায়রা সবার থেকে বিদায় নিলো। তূর্যর বড় মামা রাগ করলে ও শেষে ভাগিনাকে ধরে কেঁদেই ফেললো। আকাশ রিফাত ও মন খারাপ করলো। তূর্য গাড়িতে গিয়ে উঠে বসলো। সামর্থ্য বেগমরা পেছনে। সায়রা তূর্যর পাশে। সবাই ওদের বিদায় দিলো। তূর্য গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বের হলো ভূইয়া বাড়ি থেকে। ওদের যাওয়ার দিকে ছাদে থেকে চেয়ে চেয়ে দেখলো রাইসা। ওর গালে এখনো তূর্যর দেওয়া চরের দাগ বসে আছে ”

“তূর্য গাড়ি চালাচ্ছে। তার ভেতরে কোনো খারাপ লাগা নেই। সে তার মতো। কিন্তু সায়রার খারাপ লাগছে। বিশেষ করে বড় মামি আর রুমির জন্য। সামর্থ্য বেগম তূর্যকে বকে যাচ্ছে। এই রাত করে বের হলো। কেন। কাল সকালে বের হলে কি হতো। তূর্য বললো ”

_আগে বলতে বুড়ি। রেখে আসতাম তোমাকে।

_চুপ কর তুই। ঢাকায় তোর এমন কি কাজ।

_বিয়ে করবো আরেকটা বুড়ি।

“তূর্যর কথা শুনে সায়রা সামর্থ্য বেগম দুজনেই অবাক হয়ে তাকালো। সামর্থ্য বেগম বললো ”

_একটা ই করতে চাইছিলি না। এখন দুটো করবি?

_আমি তো চাইছি চারটা করতে। এক বউ দিয়ে হচ্ছে না।

_চুপ কর ফাজিল।

“তূর্য হেসে ফেললো। সায়রা চুপচাপ বসে বসে শুনছে। কিছু বলার নেই তার। চারটা কেন। তূর্য দশটা বিয়ে করুক। তাতে সায়রার কি। সায়রা এমনে ও থাকবে না ওমনে ও থাকবে না।
সায়রা দেখলো না ওর ভাবনার সময় পাশের মানুষটা কি মায়া ভরা দৃষ্টিতে ওকে দেখে।
রাত বাড়ছে। গাড়ি চলছে তার গতিতে। সামর্থ্য বেগম ঘুমিয়ে পড়েছে। সায়রা ও সিটের সঙ্গে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। হুট করেই সায়রা খেয়াল করলো তূর্য ওর হাত চেপে ধরছে। হাতর আঙুলের মধ্যে নিজের আঙুল ঢুকিয়ে হাতটা চেপে ধরেছে। সায়রা চোখ খুলছে না। কিন্তু অনুভব করছে। তূর্য হাতএা ছাড়ছে না। ধরেই রেখেছে। সায়রা পারছে না হাতটা ছাড়িয়ে নিতে। এই লোক হুটহাট এমন করে কি বুঝাতে চায়৷ সায়রা এই লোকের মায়ায় পড়ে এমনই হাবুডুবু খাচ্ছে। এবার প্রেমে টেমে না পড়ে গেলেই হয়। পড়ে সায়রা দেবদাস হয়ে ঘুরবে ”

“জেরিন রাগ করেছে নাফিসের উপর। কথা কাটাকাটি হলে জেরিন রাগ করে কল ই কেটে দিয়েছে। নাফিসের মনটা সেই থেকে আনচান করছে।
বেচারা আর বাড়ি বসে থাকতে পারলো না। এই রাতেই বের হলো বাইক নিয়ে। সব উল্টো যাক। আগে গার্লফ্রেন্ড এর রাগ ভাঙাতে হবে। নাফিস বাইক নিয়ে সোজা এলো জেরিনের বাসার গলির সামনে। এখন অনেক রাত।এই গলিতে তেমন মানুষ নেই। নাফিস আসার সময় একটা গোলাপ ফুল ও নিয়ে এসেছে। এসে আবার জেরিনকে কল করলো। জেরিন কয়েকবার কেটে দিলো। শেষের কলটা ধরলো ”

_এই মসিবতের বেটি। কল ধরো না কেন হু ?

_আপনাকে এখন ব্লক মেরে দেবো আমি।

_ব্লক মারো পারলে। বাসার নিচে দাড়িয়ে আছি কিন্তু। ব্লক করলে সোজা বেড রুমে চলে আসবো।

“জেরিন অবাক হয়ে গেলো ”

_বাসার নিচে মানে ?

_আমি তোমার বাসার নিচে। অনেক মশা। জলদি নিচে আসো।

“জেরিন দ্রুত বারান্দায় এলো। দেখলো নিচে আবছা আলোয় দাড়িয়ে আছে নাফিস। লোকটা কি পাগল ”

_এই আপনি কি পাগল। বাসার নিচে এসেছেন কেন?

_নিচে আসো কটকটি।

_এতো রাতে আমি নিচে যেতে পারবো না।

_আচ্ছা তাহলে আমি বসে রইলাম।

_পাগলামি করবেন না প্লিজ ।

_করছি তো। প্লিজ নিচে আসো বুলবুলি।

“জরিন মুচকি হাসছে। লোক টা সে একেবারে সলিড পেয়েছে। জেরিন রুম থেকে বেরিয়ে আগে দেখলো ওর বাবা মায়ের রুমের দরজা বন্ধ। ভাই বাসায় নেই। জেরিন ওরনা দিয়ে ঘুমটা টেনে নিচে নামলো পা টিপে টিপে। গেট দিয়ে বের হতেই দেখলো নাপিস বাইকের উপর বসে আছে। জেরিন গিয়ে সামনে দাড়ালো। রাগ এখন নেই। তবুও মখটা এমন করে রাখলো যেনো খুব রেগে আছে ”

-বলুন।

“নাফিস জেরিনের দিকে চেয়ে আগে হাতের ফুলটা এগিয়ে দিলো। জেরিন এবার আর অভিনয় করতে পারলো না। হেসে ফেললো ”

_পাগল লোক।

_তোমার জন্য ই পাগল আমি প্রিয় ।

_হয়েছে এবার বিদায় হন। কেউ দেখলে সমস্যা হবে।

“নাফিস করলো কি জেরিনের কথা না শুনে হুট করেই জেরিনকে জড়িয়ে ধরলো। জেরিন শক্ত হয়ে দাড়িয়ে রইলো। নাফিস জেরিনের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো ”

_এতো কষ্ট করে এলাম। একটা কিছু-মিছু দিতে ও তো পারো। এতো নিষ্ঠুর কেন তুমি৷

“জেরিন নাফিসকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। চলে যেতে যেতে বললো ”

_ইতর লোক। এই করতে এসেছেন আপনি৷ যান বাসায় যান।

“নাফিস হেসে পেছন থেকে ডাকলো জেরিনকে ”

_বুলবুলি। একটা কথা বলি ?

_বলুন।

_তোমাকে প্রথমবার দেখে। চোখে চোখ রেখে। কখন জানিনা আমি কেস খেয়েছি।

“গানটুকু গেয়েই নাফিস চোখ মারলো। জেরিন বললো ”

_আপনি এখন বাড়ি না গেলে আমি ই আপনার নামে কেস করে দিবো।

“নাফিস বাইকে উঠে বসে রইলো। জেরিন রুমে গিয়ে কল করলো এরপর নাফিস চলে এলো। প্রেম করতে গিয়ে বেচারার ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে ”

“রাত তিনটায় তূর্যরা ঢাকায় এসে পৌঁছালো। সায়রা ততক্ষণে ঘুমে বেহুস। সামর্থ্য বেগম ও অনেকটা সময় ঘুমিয়ে উঠেছে। অবশেষে দুই রাত তিনদিন পড় আবার বাড়ি এলো ওরা। গেট গাড়ি ঢুকলো। সায়রা তখন ও ঘুমে। সামর্থ্য বেগমকে তূর্য ধরে নামালেন। হাসিনা নেমে বললো ”

_বউরে ডাকবো ?

_নাহ্। আপনি দাদীকে নিয়ে ভেতরে যান।

“ওনারা ভেতরে চলে গেলো। তূর্যরা আজ ফিরবে তাই চুমকি ও বিকেলে ফিরেছে। তূর্য এবার এসে সায়রার দিকে দরজা খুললো। এই একবার ঘুমালে আর হুস ই থাকে না। তূর্য ডাকলো না সায়রাকে। সোজা কোলে তুলে নিলো। সায়রা ঘুমের মধ্যে ই তূর্যর গলা জড়িয়ে ধরলো। তূর্য বাড়ির ভেতরে ঢুকে সোজা রুমে গেলো।
সারারাত তূর্য জেগে। এদিকে শরীরটা ও তার আর চলছে না। সায়রাকে বিছানায় ঠিক করে শুইয়ে দিতেই সায়রা চোখ খুলে তাকালো। হুট করে চেয়েই তূর্যকে এভাবে নিজের দিকে ঝুঁকে থাকতে দেখে চোখ বড় বড় করে চেয়ে রইলো। এই লোক আবার কি করবো। তখনকার মতো যদি চুমু । সায়রাকে এভাবে চেয়ে থাকতে দেখে তূর্য ঠিক হয়ে দাড়ালো। সায়রা ওইভাবেই শুয়ে রইলো। রুমে লাইট জ্বলছে ।
দেখছে তূর্য কি করছে। তূর্য ওয়াসরুমে থেকে জামাকাপড় পরিবর্তন করে এলো। এসে দেখলো সায়রা এখনো চেয়ে আছে। তূর্য গিয়ে লাইট অফ করে দিয়ে বিছানায় এলো। আজ আর বিছানায় কোনো বর্ডার দেওয়া নেই বালিশ দিয়ে। সায়রা অন্যদিকে মুখ করে শুয়ে আছে। তূর্য করলো কি সায়রার ঠিক পেছনে এসে শুয়ে সায়রার উপর দিয়ে পেটের মধ্যে চেপে ধরে সায়রাকে৷ একেবারে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে ফেললো। সায়রা রীতিমতো কাঁপতে শুরু করেছে। কি করছে তূর্য এসব। তূর্য সায়রার ঘারে মুখ গুজলো। পরপর বলে উঠলো ”

_ভীষণ চোখ জ্বলছে। শান্তিতে একটু ঘুমাব। নড়চড় করবে না একদম।

“সায়রা নড়চড় করলো না। করতে পারলো না। তূর্য সায়রার পেটের উপর হাত রেখে চেপে ধরে রেখেছে। সায়রা চুপ করে রইলো। তূর্য এতো কাছে আসছে কেন তার। এটা ঠিক হচ্ছে না৷ তূর্য কেন ভুলে যাচ্ছে।
সায়রা ওভাবেই শুয়ে রইলো সারারাত ”

চলবে,,,