ম্যারেজ প্রোপজাল পর্ব-৩৫+৩৬

0
2

#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#৩৫

“তূর্য সেদিন অফিসে গিয়েছিলো দুপুরের দিকে। কিন্তু সায়রা যায়নি। যে অবস্থা তূর্য তার করেছে। সায়রা বাড়িতেই ছিলো। তূর্য অফিসে এসে কেবিনে ঢুকলো। পেছন পেছন নাফিস ও এলো। তূর্য আজ স্যুট বুট এ নেই। আকাশী রঙের একটা শার্ট পড়ে এসেছে। নাফিস কেমন কেমন করে যেনো তাকাচ্ছে বারবার। তূর্যকে আজ কেমন তাজা টমেটোর মতো লাগছে। একেবারে ফ্রেশ। অন্য সময় ও লাগে। তবে আজ একটু বেশিই লাগছে। তূর্য নাফিসের দিকে চেয়ে বললো ”

_কি দেখছো নাফিস ?

_নাহ্ স্যার। আপনাকে দেখছিলাম। সুন্দর লাগছে আপনাকে।

“তূর্য নাফিসের দিকে চেয়ে হেসে বললো ”

_আজই লাগছে। অন্য সময় লাগে না ?

_যবে থেকে সায়রা খাতুনকে বিয়ে করেছেন তখন থেকেই লাগে স্যার।

“তূর্য হাসলো। সামর্থ্য বেগম আর নাফিস সব সময় বলেছে সায়রা তূর্যর জন্য বেস্ট। এখন তূর্য এটা মানে। ওই মেয়ে জীবনে আসার পর আর তূর্য জীবন নিয়ে বোরিং হয় না। এখন জীবন সুন্দর মনে হয়৷
তূর্যর ভাবনার মাঝেই নাফিস বললো ”

_স্যার। আপনাকে বিয়ে করে সংসারী হতে দেখে এখন আমার ও কেমন বিয়ে বিয়ে পাচ্ছে।

“শেষের কথাটা বলতে গিয়ে নাফিস বোধহয় লজ্জা ই পেলো।তূর্য শেষ ফাইলটা সাইন করতে গিয়ে বললো ”
_মেয়ে দেখবো। দাদীকে বলি। অনেক মেয়েকে চেনে ওই বুড়ি।

_নাহ্ স্যার। দরকার নেই। মাফ চাই আমি।

“নাফিস তূর্য দুজনেই এক সঙ্গে হেসে ফেললো। কারন সামর্থ্য বেগম তূর্যর জন্য মেয়েদের ছবির আ্যলবাম বানিয়ে ফেলেছিলো। একটা ও তূর্য চেয়ে দেখেনি। এখন যদি শুধু নাফিস একবার বলে মেয়ে দেখতে তাহলে আর রক্ষে থাকবে না ”

“সন্ধায় সায়রা সামর্থ্য বেগম এর সাথে এসে বসেছেন। একটু চা করে এনেছে। দুজনে বসে বসে গল্প করছে আবার টিভি ও দেখছে। তূর্য অফিসে যাওশার পর সায়রা লম্বা একটা ঘুম দিয়েছে। তবুও মনে হচ্ছে শরীর এ একটু ও শক্তি নেই।
ওমন সময় তূর্য বাড়িতে ফিরলো। বাড়িতে ঢুকতেই দেখলো সায়রা আর সামর্থ্য বেগম বসে। তূর্য সেদিকে এগিয়ে গেলো। সামর্থ্য বেগম তূর্যকে দেখে বললো ”

_আজ দুপুরে অফিসে গেলি যে। শরীর খারাপ নাকি তোর ?

“তূর্য সায়রার দিকে তাকালো। সায়রা মাথা নিচু করে বসে আছে। তূর্য বললো”

_হে, বুড়ি। শরীরটা ভীষণ খারাপ। মাথা ব্যথায় মরে যাচ্ছি।

“তূর্যর অভিনয় দেখে সায়রা হা করে চেয়ে আছে। এই লোক নাকি মাথা ব্যথায় মরে যাচ্ছে। সামর্থ্য বেগম আহ্লাদ করে বলে উঠে ”

_আহারে। যা যা রুমে যা। ফ্রেশ হয়ে গুম দে একটা।

“পরপর বললো

_এই সায়রা তুই যা এক কাপ কফি বানিয়ে দে ওকে।

” সায়রা জানে তূর্যর কোনো মাথা ব্যথা নেই। অফিসে যাওয়ার আগে ও এই লোক সায়রাকে জ্বালিয়ে গেছে। সায়রা তূর্যর দিকে তাকাতেই তূর্য চোখ মারলো। সায়রা ভেংচি কেটে উঠে রান্না ঘরে চলে গেলো। তূর্য গেলো রুমে ।
সায়রা সুন্দর করে এক কাপ কফি বানিয়ে উপরে গেলো। তূর্য তখন সবে সাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে। কোমরে সাদা তোয়ালে পেঁচানো। সায়রা এই অবস্থায় তূর্যকে দেখেই বলে উঠলো ”

_ছি ছি। এসব কি।

“তূর্য তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে সায়রার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো ”

_কি এসব ?

_এভাবে বের হয়েছেন কেনো অসভ্য লোক।

_কেন বেশি হট লাগছে।

“পরপর সায়রার একেবারে কাছে আছে চোখে চোখ রেখে বললো ”

_তুমি কি সিডিউস হচ্ছো?

“কথাটা বলেই তূর্য ভ্রু নাচালো।সায়রা এক হাত দিয়ে তূর্যকে ধাক্কা দিয়ে বললো ”

_আমি কি আপনার মতো নষ্ট নাকি। ধরুন কফি ধরুন।

_তোমাকে ও নষ্ট বানিয়ে দেবো। তখন তুমি নিজেই,,,।

“কথাটা বলে তূর্য চোখ মারলো। সায়রা বললো”

_অশ্লীল। ধরুন কফি নিন।

“সায়রা তূর্যর দিকে কফি এগিয়ে দিলো। তূর্য কফির মগটা নিয়ে সায়রাকে ও টেনে এনে পেছন থেকে জরিয়ে ধরলো। সায়রার কাঁধে থুতনি রেখে সায়রার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো ”

_কফি তো খেতে ইচ্ছে করছে না বউ।

_তাহলে কি খেতে ইচ্ছে করছে ?

“তূর্য সায়রার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো ”

_তোমাকে।

“সায়রা তূর্যর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করতে লাগলো।এই কোল আজ দুদিন তাকে জ্বালিয়ে মারছে। সায়রাকে একটু ও শান্তি দিচ্ছে। না। কিন্তু তূর্য কি ছাড়বে নাকি। সে সায়রাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। সায়রা বললো ”

_ছাড়ুন আমাকে৷

_উহু ছাড়লে আদর করবো কি করে। চলো বউ আবার একটু কাঁদাই তোমাকে।

“সায়রা তূর্যর কাছে থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না। তূর্য সায়রাকে কোলে তুলে নিলো। বিছানার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যেতে বললো ”

_একটু বউ। একটু।

“সায়রা তূর্যর গলা জরিয়ে ধরে তূর্যর বুকে মাথা রাখে। তূর্য সায়রাকে নিয়ে ই শুয়ে পড়ে। সায়রা বলে উঠে ”

_আপনি আপনার কথায় অটুট থাকেন না তূর্য।

_কোন কথার, কথা বলছো?

_এই যে একটু বউ। কিন্তু সেটা কি একটু থাকে। আপনি একটা বাজে লোক তূর্য। ভীষণ অসভ্য।

“কথাটা শুনে তূর্য সায়রার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো ”

_আমি যতোটা অসভ্য হবো। তুমি ঠিক ততোটাই তৃপ্তি পাবে বউ।

_ছিহ্। নির্লজ্জ।

“তূর্য হেসে বললো ”

_এখনো তো আমি অসভ্য ই হইনি। তোমার যেই শরীর। আমি আরো অসভ্য হবো। তোমাকে রোজ মারবো আমার প্রেমময় বিষে।

_দেখেছেন নির্লজ্জ লোক। আপনি আপনার কথায় অটুট থাকেন না।

“তূর্য সায়রা কপালে একটা চুমু খেয়ে সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”

_কনট্রোল হারালে তখন কথায় অটুট থাকা সম্ভব হয় না বউ। তখন শুধু গভীরে যেতে ইচ্ছে করে।

“সায়রা লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিলো। তূর্য সায়রাকে ফের ভালোবাসতে শুরু করলো। সায়রা ও গলে গেলো তূর্যর নরম ছোয়ায়। যদিও এ ছোয়া একটু পর আর নরম থাকবে না। তূর্য সায়রাকে কাঁদাবে। সায়রার চোখে আর্তনাদ দেখবে। সায়রার নমনীয় আওয়াজে মুখরিত হবে এই রুম ”

“পরেরদিন শুক্রবার। অফিস ছুটি। তূর্য সারাদিন বাড়িতে ই ছিলো। সায়রা রান্না করেছে তূর্যর পছন্দের খাবার। একসাথে খেয়েছে। বিকেলের দিকে সায়রা তূর্যর জন্য কফি নিয়ে রুমে এলো। তূর্য তখন বারান্দায় বসে। কিছু কাজ করছিলো। সায়রা গিয়ে কফিটা দিয়ে নিজেও পাশে বসলো। তবে চুপ করে রইলো তূর্য যেহেতু কাজ করছে। তবে তূর্য কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে সায়রাকে ও দেখছে। সায়র বাইরের দিকেচেয়ে আছে। তূর্য বুঝলো বাসায় থেকে থেকে হয়তো বোর হয়ে যাচ্ছে সায়রা।তূর্য সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”

_চলো বউ কোথাও থেকে ঘুরে আসি।

“সায়রা চমকে গিয়ে তাকালো তূর্যর দিকে। বললো ”

_কোথায় ?

_যেখানে তুমি বলবে। যাও রেডি হয়ে নাও। বাইকে করে ঘুরবো আজ।

“সায়রা খুশি হয়ে গেলো। এ বাড়িতে এসেছে পর থেকে সায়রা আর কোথাও যায়নি। আগে তো মাঝে মাঝে ভার্সিটি যাওয়া হতো। একটু ফুচকা খাওয়া হতো। তূর্য বলতে দেড়ি সায়রা উঠে গিয়ে সুন্দর সাদা রঙের একটা ড্রেস বের করে চলে গেলো ওয়াসরুমে। তূর্য চেয়ে চেয়ে দেখলো। সামান্য ঘুরতে নিয়ে যাবে বলায় এতো খুশি। বউ যদি ঘুরতে এতোই পছন্দ করে তূর্য তার বউকে সারা বাংলাদেশ ঘুরাবে।
তূর্য নিজেও রেডি হয়ে নিলো। সারা বিকাল ঘুরবে আজ।
সায়রা জামা পড়ে বের হলো। তূর্য তখন শার্ট পড়ছিলো আয়নার সামনে দাড়িয়ে। সায়রা এসে তূর্যর একটু সামনে দাড়ালো। হালকা একটু সাজগোজ করতেই হয়। তূর্য শার্ট পড়ে চুল ঠিক করছে। সায়রা চোখে কাজল দিচ্ছে। তূর্য চেয়ে চেয়ে দেখলো। তার বউ এতো সুন্দর কেন। এতো সুন্দর কেন এই মেয়ে। তূর্য তো ওই কাজল চোখে ঘায়েল হয়ে যাবে আজ।
তূর্য করলো কি হুট করে সায়রার কোমরে হাত রেখে নিজের কাছে টেনে নিলো। আয়নার দিকে চেয়ে বললো ”

_কাজল চোখের মেয়ে। আর কতোবার ঘায়েল করবে আমায়। আমার যে হৃৎপিণ্ড কেঁপে উঠে তোমার ওই চোখে তাকালে।

“সায়রা হতবাক হয়ে চেয়ে রইলো। এই লোক আজকাল এমন এমন কথা বলে। সায়রার মনে হয় সে এতোটাও সুন্দর নয় যতোটা তূর্যর বর্ননায় শোনায়
সায়রা হেসে তূর্যর দিকে ঘুরলো। তূর্যকে ইশারা একটু নিচু হতে বললো। তূর্য নিচু হলে সায়রা তূর্যর গলা জড়িয়ে ধরে বললো ”

_আমার ও আপনাকে দেখলো বুকটা কেঁপে উঠে। আমি ও রোজ আপনার ভালোবাসায়, যত্নে ঘায়েল হই মিঃ সাদমান শাহারিয়ার তূর্য ।

“তূর্য এবার সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”

_আচ্ছা নারীরা জীবনে কেমন পুরুষ চায় বলো তো ?

_কেমন আবার। লাভিং, কেয়ারিং, যে অনেক ভালোবাসবে।

“তূর্য ভ্রু কুচকে বললো ”

_ব্যাস। এইটুকু ই। আর কিছুই চায় না ?

_আর কি চাইবে ?

_ওইযে ওইসব।

“সায়রা অবাক হয়ে বললো ”

_কোন সব ?

“তূর্য সায়রা আরো একটু কাছে এসে বললো ”

_আদর, চুমু,সে,,,,,,,,,।

“শেষ এর কথাটা সায়রা বুঝে ফেললো তূর্য কি বলতে চেয়েছে। সায়রা তূর্যর মুখ চেপে ধরলো। এই লোক এমন অসভ্য সায়রা এই কয়দিনে বুঝে গেছে। অথচ আগে অফিসে দেখে মনে হতো এর থেকে নাদান আর কেউ হতে পারে না ”

_চুপ করুন। ছিহ্ কি বাজে কথা। এসব মুখে বলে কেউ।

_করতে পারলে। বলতে পারবো না কেন।

“সায়রা এবার রাগী চোখে তাকালো। এই লোকের মুখে কিছু আটকায় না ”

_চুপ করুন। খালি বাজে কথা।

“সায়রা আর তূর্য বের হলো এক সঙ্গে বাইকে করে। কোথায় যাবে সায়রা জানে না এখনো। বাইক চলছে।
সায়রা তূর্যর কাঁধে হাত রেখে বসে আছে। আশেপাশে দেখছে। অনেক মেয়েরাই তূর্যর দিকে তাকাচ্ছে। তূর্য আজ হেলমেট পড়েনি।
প্রায় অনেকটা সময় পর সায়রা দেখলো তূর্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট দিয়ে ঢুকছে। সায়রা অবাক। এখানে যে সায়রার আসার ইচ্ছে করছিলো তূর্য কি করে বুঝলো। বাইক এসে অনেকটা ভেতরে থামলো। যেখানে মানুষ কম। অল্প মানুষ। কিছু ফুচকার দোকান আইসক্রিম এর দোকান এসব। তূর্য বাইক থামালো সেখানে। ওখানে আগে থেকেই অনেকে বসে খাচ্ছিলো। তূর্য যদিও এসব জায়গায় খুব একটা যায় না। তবে সায়রার জন্য করা ই যায়। সায়রা বাইক থেকে নামলো। তূর্য ও নামলো। সায়রার খুশি কে দেখে। তূর্যর দিকে চেয়ে বললো ”

_আপনি কি করে বুঝলেন আমার এখানে আসতে ইচ্ছে করছিলো ?

_মন বুঝি ম্যাডাম। এবার বলুন কয় প্লেট ফুচকার অডার দেবো ?

_উম। আমরা তো দুজন। আপাতত দুই প্লেট অডার দিলেই হবে।

_কিন্তু আমি তো এসব খাবার খাবো না বউ। তুমি খাও।

“সায়রা গাল ফুলালো। একা একা ফুচকা খাওয়াতে মজা আছে নাকি। সায়রাকে গাল ফুলাতে দেখে তূর্য বললো ”

_ওকে ওকে খাবো। নিয়ে আসছি ওয়েট।

“সায়রা বাইকের কাছে দাড়িয়ে। তূর্য ফুচকার দোকানে গেলো। সায়রা এদিক ওদিকে দেখতে দেখতে হুট করে চোখ পড়লো তূর্যর দিকে। আশেপাশে যে কয়টা মেয়ে আছে সবগুলো তূর্যর দিকে চেয়ে আছে। তূর্য আজ সাদা রঙের শার্ট। সাথে কালো জিন্স। সাদা জুতা। হাতে ঘড়ি। তূর্য ওখানে দাঁড়িয়ে আছে ঠিকই কিন্তু কারো দিকে তাকাচ্ছে না। কিন্তু মেয়েরা যে চেয়ে আছে। সায়রার ইচ্ছে করছে গিয়ে কিছু বলতে। ততক্ষণে তূর্য দুই প্লেট ফুচকা নিয়ে বাইকের কাছে চলে এলো।
এসে সায়রার হাতে ফুচকার প্লেট দিলো। সায়রা তূর্যর দিকে চেয়ে বললো ”

_আপনি এখন থেকে মাস্ক পড়ে বের হবেন।

“তূর্য ভ্রু কুঁচকে বললো ”

_কিন্তু করোনা ভাইরাস তো বহু আগে চলে গেছে।

_তাতে কি৷ কিছু মেয়ে নামক ভাইরাস এখনো বাইরে ঘুরে বেড়ায় বুঝলেন।

“তূর্য এবার বুঝলো সায়রা কি বলেছে৷ তূর্য সায়রাকে আরো একটু রাগানোর জন্য বললো ”

_সমস্যা কি।ওরা ও একটু দেখুক। তুমি তো রোজ ই দেখো।

“সায়রা একটা ফুচকা মুখে দিতে যাচ্ছিলো। তূর্যর কথা শুনে সায়রা চোখ বড় বড় করে তাকালো। তূর্য একটু দুষ্টু স্বরে বললো ”

_এমন করে না বউ। ওরা তো ফুল ড্রেসআপ এ দেখছে। তুমি তো উইথ এন্ড উইথআউট ড্রেস দুটোতেই দেখো।

“কথাটা বলে তূর্য হেসে ফেললো। সায়রার কাশ উঠে গেলো। এই লোককে নিয়ে সে যাবে কই। সায়রা বললো ”

_আপনাকে একদিন আমি খুন করে দেবো। অসভ্য লোক।

“তূর্য আর সায়রা ফুচকা খেলো এক সঙ্গে। যদি তূর্য তিনটের মতো খেয়েছে। সায়রা নিজের প্লেট শেষ করেছে সাথে তূর্যর প্লেট এর বাকিগুলো ও খেয়েছে।
এরপর দুজনে ঠিক করলো হাঁটবে। লম্বা পথ। দুই ধারে গাছের সাড়ি। পরন্ত বিকেল। বাইক রেখে দুজনে হাঁটতে লাগলো পাশাপাশি। তূর্য সায়রাকে এর মাঝে একটা আইসক্রিম এনে দিলো। এবার দুজনে হাঁটছে। সায়রা এই ভার্সিটির ছাএী। তাই সে গল্প করছে সে এখানে কি কি করছে এতোদিন এটা ওটা।তূর্য চুপচাপ শুনছে। তূর্যর হাতের কব্জি ধরে রেখেছে সায়রা। তূর্য হুট করে সায়রার দিকে চেয়ে গভীর কন্ঠে বলে উঠলো ”

_জানো, যেদিন তোমায় প্রথম দেখেছিলাম। সেদিন ও বুঝিনি তুমি আমার এতোটা আপন আর কাছের হয়ে যাবে।

“সায়রা থমকে গেলো। তূর্যর দিকে চেয়ে মুচকি হেসে বললো ”

_আমি ও ভাবিনি। কখনো ভাবিনি। আমি যা কখনো পাইনি। তা আমি সব পাবো। তাও আপনার কাছে থেকে।

“তূর্য সামান্য হাসলো। সে জানেনা সায়রা অতীতে কি করে এসেছে। কি পেয়েছে৷ কি পায়নি। এখন সায়রা তূর্যর। তূর্য এখন সায়রাকে সব দেবে সব। সায়রা যাতে কখনো এই ভাবনা টা না হয় সায়রা কিছু পায়নি। রানি করে রাখবে তূর্য এই মেয়েকে। তার রাজ্যের রানি ”

“ওরা হাটছে এমন সময় দু’জনে ই দেখলো সামনে থেকে আরো দুজন হেঁটে আসছে। তূর্য চেয়ে রইলো। সায়রা ও থেমে গেলো। ওদের থাকা দুজন ও থেমে গেলো। কয়েক হাতের দূরত্ব তাদের মাঝে। তূর্য বললো ”

_ওটা নাফিস না।

“পরপর সায়রা বলে উঠলো ”

_পাশের মেয়েটা জেরিন। হে ওটা জেরিন ই তো।

“এদিকে নাফিস তূর্যকে দেখে থ মেরে দাড়িয়ে আছে৷ জেরিন সায়রাকে তূর্যর হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হা করে চেয়ে আছে। নাফিসকে বলছে”

_দেখো সায়রা। তূর্য স্যারের সাথে।

_চুপ করো মসিবতের বেটি। গেলাম ফাইসা।

_কি বললে তুমি।

“এদিকে তূর্য আর সায়রা এগিয়ে এলো। এখন ওরা মুখোমুখি। নাফিস তো তূর্যর বিষয়ে জানে। কিন্তু তূর্য। নাফিস তলে তলে এসব করছে তূর্যকে একবার বলে ও নি। তূর্য বললো ”

_কি নাফিস। সব ঠিকঠাক।

“নাফিস বেচারা মুখে হাসি টেনে বললো ”

_জি স্যার। সব ঠিকঠাক। আসলে স্যার,,,,,,।

“তূর্য থামিয়ে দিলো ”

_তোমাকে আমি দেখে নেবো নাফিস। তুমি আমার কাছ থেকে লুকালে।

“নাফিস বেচারা পারছে না কেঁদে ফেলতে। ভেবেছিলো তূর্যকে সুন্দর করে জানাবে। এমনভাবে ধরা খেয়ে যাবে তা ভাবেনি।
এদিকে সায়রা আর জেরিন একজন আরেকজনের দিকে চেয়ে আছে। জেরিন বললো ”

_তুই আমাকে বললি না। স্যার এর সাথে তোর,,,।

“নাফিস জেরিনকে থামিয়ে দিয়ে বললো ”

_আরে মসিবতের বেটি। আমরা তো প্রেম করি। এরা বিয়ে করে নিয়েছে। কয়েকদিন পর ওয়া ওয়া ও হয়ে যাবে।

“কথাটা জেরিন শুনে অবাক হওয়ার থেকে সায়রাকে গিয়ে খুশিতে জরিয়ে ধরলো। সায়রা, তূর্য, এমন কি নাফিস ও অবাক হয়ে গেছে। জেরিন সায়রাকে জরিয়ে ধরে বলতে লাগলো ”

_তোর বিয়ে গেছে তূর্য স্যার সাথে। বেবি হবে তোদের। আহা। কি যে খুশি লাগছে আমার ।
খালা হয়ে যাবো আমি। কেমনে কি। সব বলবি কিন্তু আমাকে।

“এদিকে সায়রা সহ তূর্য নাফিস অবাক। এই মেয়ে বলে কি। নাফিস জেরিনকে জিজ্ঞেস করলো ”

_খালা। কার খালা ?

_কেন আমি খালা। সায়রার বাচ্চার তো আমি খালাই তাই না।

“নাফিস হা করে এবার তূর্যর দিকে তাকালো ”

_স্যার। বাচ্চা ও,,,, ।

“তূর্য দাতে দাত চেপে বললো ”

_চুপ করো গাধা।

“সায়রা জেরিনের হাত ধরে ওকে শান্ত করে বললো ”

_তোকে আমি সব বুঝিয়ে বলবো। কোনো বাচ্চা নেই।

_কি বলিস।

“নাফিস এবার পরিস্থিতি ঠিক করতে বললো ”

_চলুন স্যার। এক সাথে হাঁটতে হাঁটতে গল্প করি।

_হে চলুন নাফিস ভাইয়া।

“এবার জেরিন আর সায়রা আগে আগে হাঁটছে। তূর্য নাফিস পেছনে পেছনে। জেরিন নিজের গল্প ও বলছে সায়রার থেকে ও শুনছে। কি করে বিয়ে হলো। সব কিছু। এদিকে তূর্য নাফিসের গলা চেপে ধরে হাটছে। নাফিস ছাড়তে বলছে তবুও ছাড়ছে না ”

_এর জন্য ই তোমার আজকাল বিয়ে বিয়ে পাচ্ছিলো তাই না নাফিস।

_বিশ্বাস করুন স্যার। আমি বলতাম। আপনি ছাড়া কি আমার বিয়ে হতো বলুন।

_প্রেম করে কটন ক্যানডি খেয়ে যাচ্ছো। আর আমি জানি ই না। তুমি ভন্ড হয়ে যাচ্ছো নাফিস। সেইম অন ইউ।

“ওরা পুরো বিকেল এক সঙ্গে কাটালো। এরমধ্যে তূর্যর ফোনে অনেকবার কল এসেছে। তূর্য বিরক্ত হয়ে কেটে দিয়েছে বারবার। পুরো সন্ধা এক সাথে বসে গল্প করপ চা খেয়ে নাফিস চলে গেলো জেরিনকে বাসায় পৌঁছে দিতে। তূর্য আর সায়রা বাইক করে আরো একটু ঘুরলো। রোজ বের হওয়া হয় না ওদের
আজ যখন সময় পেয়েছে পুরো শহর ঘুরবে ”

“অন্যদিকে রাগে ফুঁসছে রুহানি৷ কোনোভাবেই তূর্য ওর কল ধরছে না। রুহানির ফোনে তখন ই একটা ছবি এলো। ছবিটা দেখে রুহানির হাত কাঁপছে। এটা কি করে হতে পারে। রুহানি দেখলো ছবিটাতে এক সাথে বসে থাকা জেরিন নাফিস, তূর্য আর ওর ঠিক পাশে সায়রা বসে। হাসছে মেয়েটা। তূর্য ওর দিকে ই তাকানো। রুহানির চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো। তাহলে কি তূর্য আর তার নেই। এই সায়রা ছিনিয়ে নিয়েছে। রিলেশনে আছে ওরা। কিন্তু তূর্য। ও কি করে এমন করতে পারে। নাহ্। তূর্য এসব করতে পারে না। রুহানি মরে যাবে তূর্যকে ছাড়া। দরকার হলে কারো হতে দেবে না তূর্যকে। কিন্তু তূর্যকে ওর চাই। রুহানি চিৎকার করতে লাগলো। সয্য হচ্ছে না। তূর্যকে অন্য কারো পাশে এভাবে দেখে সয্য হচ্ছে না। রুহানি ফোনটা হাত থেকে ফেলে দিলো নিচে। হাটু গেড়ে বসে পড়লো। চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। তূর্যকে ও অন্য কারো হতে দেবে না৷
পর মুহুর্তে ই রুহানি ফোনটা হাতে নিলো৷ ছবিটা আবার দেখলো। বিশেষ করে তূর্য আর,সায়রাকে। লোক ঠিক করেছিলো তূর্যর খবর জানতে। কিন্তু তূর্য। ঠকিয়েছে তাকে তূর্য।
পরপর রুহানি কাউকে কল করলো। কথা শেষ করে রুহানি একটু শান্ত হয়ে বসে তূর্যর ফেসবুক আইডিতে গেলো। সেখানে ফলোতে সায়রা আজমীর আইডিটা পেতে সমস্যা হলো না খুব একটা।
আইডিতে ঢুকলো রুহানি। অনেকটা সময় লাগালো।
ইস সায়রার জন্য রুহানির নিজের ই এখন আফসোস হচ্ছে। কি দরকার ছিলো। তূর্যর দিকেই হাত বাড়ানোর”

চলবে,,

#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#৩৬

“পরেরদিন তূর্য সায়রা এক সঙ্গে বের হলো অফিসের জন্য। তূর্য আজকাল সায়রার সঙ্গে চিপকে থাকাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। সায়রা ও কিছু বলে না৷ গাড়িতে বসে ও একটু পর পর সায়রার দিকে চেয়ে থাকবে। সায়রা বুঝতে পারে। অফিসে আসতে আজ দেড়ি হলো ওদের। তূর্য আজ আর সায়রাকে আগে নামালো না। একেবারে অফিসের পার্কিং এ নিয়ে গাড়ি থামালো। সায়রা চেয়ে আছে। তূর্য ইশারায় নামতে বললো।
সায়রা নেমে দাঁড়ালো। তূর্য ও নামলো। তখনই পেছন থেকে রুহানির গাড়িটা ঢুকলো। সায়রা আর তূর্য দু’জনেই তাকালো সেদিকে।
রুহানির গাড়িটা থামলো। রুহানি গাড়ি থেকে নামলো। সায়রা আর তূর্যকে এক সঙ্গে দেখে অবাক হলো না রুহানি। বরং তাচ্ছিল্য করে হাসলো। প্রেম করছে তাহলে এরা। রুহানি তূর্য আর সায়রার দিকে এগিয়ে এলো। তূর্যর সামনে এসে দাড়িয়ে বললো ”

_পিএ নিয়ে আজকাল সব জায়গায় যাচ্ছিস নাকি তুই ?

“তূর্য রুহানির দিকে তাকালো। চোখ মুখ কেমন ফুলে আছে। অন্য রকম লাগছে রুহানিকে। তূর্য জিজ্ঞেস করলো ”

_কি হয়েছে তোর ?

_কেন কিছু হওয়ার ছিলো ? ও তোর পিএ তাই বলে কি সব জায়গায় নিয়ে নিয়ে ঘুরবি তুই।

“সায়রা বুঝলো রুহানি এখন একটা অঘটন ঘটাবে। এখান থেকে তার এখন চলে যাওয়া ই ভালো। তূর্য বুঝুক। সায়রা আস্তে করে বললো ”

_আমি আসছি। আপনারা কথা বলুন।

“সায়রা যেতে নিলে তূর্য সায়রার হাত টেনে। হাত চেপে ধরে নিজের পাশে দাড় করিয়ে দিলো। রুহানি এটা আশা করেনি। মোটেই আশা করেনি৷ তূর্য সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”

_কোথাও যাবো না তুমি। এখানেই থাকো।

“পরপর রুহানির দিকে চেয়ে বললো ”

_বল তুই কি যেনো বলছিলি।

“রুহানি তূর্য আর সায়রার হাতের দিকে চেয়ে আছে। সায়রার হাতে ওই হিরের আঙটিটা জ্বল জ্বল করছে। নাহ্ রুহানি চিনতে ভুল করেনি৷ এটা ওই রিংটা ই। কিন্তু এটা তূর্যর বউয়ের হওয়ার কথা। তাহলে কি ?
রুহানি তূর্যর দিকে চেয়ে বললো ”

_তূর্য এই মেয়ে,,,,,,।

“তূর্য সায়রার হাতটা আরো শক্ত করে চেপে ধরে বললো”

_সি ইজ মাই ওয়াইফ রুহানি। বিয়ে করেছি আমি ওকে।

“এই বাক্যটা বোধহয় রুহানিকে আজ ভেতর থেকে ভেঙে দিলো। তূর্য আরো কিছু বললো রুহানিকে। কিন্তু সেসব আর রুহানির কানে গেলো না। তূর্য বিয়ে করো নিয়েছে। তূর্য অন্য কারো হয়ে গেছে। আর সেটা রুহানির অজান্তে। লুকিয়ে। তূর্য এবার জোড়ে বললো ”

_ঠিক আছিস ?

“রুহানি হুসে ফিরলো। তূর্য আর সায়রার দিকে চেয়েআজ কেনো যেনো একটা মিষ্টি হাসি দিলো রুহানি। তূর্যকে বললো ”

_অভিনন্দন তূর্য।

_ধন্যবাদ।

“তূর্য সায়রার হাত ধরে চলে এলো। রুহানি ঠায় দাড়িয়ে রইলো। তূর্য রুহানির এতো স্বাভাবিক আচরন দেখে একটু অবাক হলে ও খুশি হলো। সায়রা খুশি হতে পারলো কিনা জানেনা। ভয়,লাগলো তার রুহানিকে। হারিয়ে ফেলবে না তো সায়রা তূর্যকে।
লিফটে উঠতেই সায়রা তূর্যর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো। তূর্য বুঝলো সায়রা মনে মনে অস্থির হচ্ছে। তূর্য এই সব ঠিক করে দিবে। সব”

“অফিসে এসেই তূর্য নাফিসকে ডাকলো। নাফিসকে এলো। তূর্য সকল স্টাফদের স্পেশাল মিটিং এ ডাকতে বললো। নাফিস বুঝলো না তূর্যর হঠাৎ কি হলো। কিন্তু তূর্য যেহেতু বলেছে নিশ্চয়ই কোনো কারনে বলেছে। নাফিস তাই করলো তূর্য যা বললো। সকল স্টাফদের একটা বিশাল রুমে ডাকা হলো। সায়রা নিজেও অবাক। তূর্য হঠাৎ এসব করছে কেনো।
রুহানিকে নাফিস গিয়ে বললো। রুহানি ও গেলো। কি হচ্ছে বা হবে তাকে দেখতে হবে যে।
বিশাল বড় একটা রুম। সকলে গিয়ে যার যার মতো বসলো। রুহানি এসে একেবারে সামনে সাড়িতে গিয়ে বসলো। সায়রা ভয়ে আর সামনে যায়নি। পেছনেই দাড়িয়ে রইলো জেরিনের হাত ধরে।
তূর্য ঢুকলো কেবিনে। পেছনে নাফিস আর রকিব। কেউ জানেনা এসব কিসের জন্য হচ্ছে। তূর্য এসে দাঁড়ালো সামনে। সায়রা চেয়ে আছে তূর্যর দিকে। না জানি কি হয়েছে। তূর্য সায়রার দিকে তাকালো। পরপর বলতে শুরু করলো ”

_হ্যালো এভরিওয়ান, সকলে একটু অবাক হচ্ছেন যে হুট করে কেনো এভাবে আপনাদের ডাকা হলো।
আসলে, আপনারা সকলেই জানেন বা মানেন হয়তো সাদমান শাহারিয়ার তূর্য তার পারসোনাল লাইফ একটু হাইডে রাখে। হে সেটা আমি বরাবর ই রেখে এসেছি। তবে এবারের বিষয়টা ভিন্ন। আমার মনে হলো সকলকে জানানো দরকার। কারন আমি না জানালে ও এটা অন্য কেউ এমনভাবে জানাবে বা ছড়িয়ে দেবে। সেটা বাজে লাগবে আমার কাছে। তাই নিজেই জানাচ্ছি। আমি কয়েকদিন আগে বিয়ে করেছি। অতি সাধারণ একজন মেয়েকে। আমি এখন হ্যাপিলি ম্যারিড।

“তূর্য এইটুকু বলার পড়েই পুরো রুম শান্ত হয়ে গেলো। রুহানি চেয়ে আছে তূর্যর দিকে। এতো অধপতন তূর্যর। নিজের বিয়ের খবর এভাবে সামনে আনছে। রুমে থাকা বেশিরভাগ মানুষ একবার তূর্যর দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার রুহানির দিকে। সকলে বলা বলা করছে তূর্য স্যার কি তাহলে এই রুহানিকে বিয়ে করেছে। এদিকে সায়রার গলা শুখিয়ে কাঠ। তূর্য এসব কি করছে। এর মধ্যে একজন বলে উঠলো”

_স্যার ম্যাডামকে দেখাবেন না ?

পরপর তূর্য আবার বললো ”

_অফকোর্স,

“তূর্য এবার এগিয়ে যেতে লাগলো মাঝের ফাঁকা জায়গা দিয়ে। সকলে চেয়ে আছে। তূর্য গিয়ে থামলো সায়রার সামনে। রুমে থাকা সকলে হতবাক। তূর্য সায়রার দিকে হাত বাড়ি দিয়ে বললো ”

_প্লিজ ওয়াইফি। কাম উইথ মি।

“সায়রা তূর্যর হাতে হাত রাখলো। সকলে ততক্ষণে বুঝে গেছে সায়রা ই তূর্যর বউ। রুম জুড়ে হৈচৈ শুরু হলো। তূর্য সায়রাকে এনে সামনে এসে নিজের পাশে দাড় করিয়ে দিয়ে বললো ”

_মিট মাই ওয়াইফ, মিসেস সাদমান শাহারিয়ার।

“সঙ্গে সঙ্গে রুমে হাত তালির শব্দ শোনা গেলো। বেশিরভাগ মানুষ খুশি। কারন তারা ভেবেছিলো রুহানিকে তূর্য বিয়ে করবে। আর সেটা অনেকেই পছন্দ করতো না। সায়রার মতো একটা মিষ্টি মেয়েকে তূর্য বিয়ে করেছে। নাফিস খুশিতে শিষ বাজিয়ে উঠলো। অবশেষে এই বিয়ে আর লুকোচুরি নেই। এখন সবাই জানবে সায়রা তূর্যর বউ।
এদিকে সায়রা লজ্জায় পারছে না মাটিতে মিশে যেতে। সবার সামনে তূর্য এভাবে হাত ধরে আছে।
এসব রুহানি সয্য করতে পারলো না। সে বেরিয়ে এলো। তূর্য চেয়ে রইলো। এটাই চাওয়া ছিলো তার। তূর্য এই বিষয়টা নিজে সামনে না আনলে রুহানি হয়তো অন্য ভাবে বিষয়টা সামনে আনতো। ওকে দিয়ে বিশ্বাস নেই। এতে সায়রা অসম্মান হতো। আর তা তূর্য কখনো হতে দিবে না ”

“তূর্য কেবিনে ফিরে এসেছে। সায়রা নিজের ডেস্কে ফিরে গেছে। অনেকে এসে সায়রাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। সায়রা শুধু ভাবছে তূর্যর কথা। এদিকে রুহানি নিজের কেবিনের সামনে থেকে সায়রাকে দেখে যাচ্ছে। সায়রাকে ইতিমধ্যে অনেকে ম্যাডাম ম্যাডাম ডাকছে৷ সায়রার হাতের ওই রিং। রুহানি তবুও যে শক্ত চোখে চেয়ে আছে সায়রার দিকে। বিষয়টা জেরিন খেয়াল করলে সায়রার কাছে এসে কানে কানে বললো ”

_রুহানি তোর দিকে কিভাবে তাকিয়ে আছে দেখ।

“সায়রা তাকালো রুহানির কেবিনের দিকে৷ কেবিনের সামনেই রুহানি দাড়ানো। সায়রা তাকাতেই রুহানি ও তাকালো সায়রার দিকে। চোখাচোখি হলো দু’জন। রুহানি হালকা ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। সায়রা বুঝতে পারলো না সেই হাসির মানে। খুশি মনে যে এই হাসি ছিলো না তা সায়রা বেশ বুঝতে পারছে। তবে সায়রা ও ভেঙে পরার মেয়ে নয়। সায়রা ও হাসলো রুহানির দিকে চেয়ে।তখনই সায়রার ফোনটা শব্দ করে উঠলো। দেখলো তূর্য মেসেজ পাঠিয়েছে। সায়রা উঠে তূর্যর কেবিনে চলে গেলো।
তূর্য কাজ করছিলো তখন। সায়রা কেবিনে ঢুকতেই তূর্য তাকালো। ইশারায় কাছে যেতে বললো। সায়রা এগিয়ে গিয়ে তূর্যর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। তূর্য হাতের কাজটা শেষ করে সায়রার দিকে চেয়ে সায়রার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কোলের উপরে বসিয়ে দিলো। সায়রা অবাক হয়ে গেলো। এই লোক করছে কি এসব। সায়রা নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলো ”

_আরেহ্। কি করছেন। এটা অফিস।

“তূর্য শুনলো ও না সায়রার কথা। সায়রার কোমর জরিয়ে ধরে সায়রার গলায় মুখ গুজে দিয়ে বললো ”

_তাতে কি ? আমার তো প্রেম প্রেম পাচ্ছে ওয়াইফি।

“সায়রা তূর্যর গালে হাত রেখে তূর্যর দিকে চেয়ে বললো ”

_সব জায়গায় প্রেম প্রেম পেতে নেই জনাব। ছাড়ুন কেউ এসে পড়বে।

“তূর্য গাল ফুলালো। তার বউটা এতো নিষ্ঠুর কেন? একটু ভালোবাসে না। তূর্য রাগ করেছে বুঝতে পেরে সায়রা হাসলো। কিছু হলেই অভিমান। সায়রা তূর্যর রাগ ভাঙাতে তূর্যর গালে টপ করে একটা চুমু খেলো। তূর্য অবাক হয়ে সায়রার দিকে তাকালো। সায়রা লজ্জা পেয়ে বললো ”

_হয়েছে। এবার যাই।

_কোথায় যাবে সোনা। আগে একটু তৃষ্ণা মেটাই।

“কথাটা বলেই তূর্য সায়রার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যেতে নিবে তখনই নাফিস কেবিনে ঢুকলো। কেউ এসেছে বুঝতে পেরে সায়রা ছিটকে সরে গেলো তূর্যর কোলের উপর থেকে। নাফিস নিজে ও অপ্রস্তুত হয়ে গেছে। সায়রা সরে গিয়ে দাড়িয়ে পড়লো। তূর্য কপালে আঙুল ঘসছে। নাফিস বললো”

_সরি স্যার। আমি পড়ে আসছি তাহলে

“সায়রা বাঁধা দিলো নাফিসকে ”

_না না। নাফিস ভাইয়া। আপনি থাকুন। আমি যাচ্ছি। আমার কাজ আছে।

“কথাটা বলেই সায়রা তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলো। নাফিস বেচারা আবুলের মতো দাড়িয়ে আছে। সে ভুলেই গেছে তার স্যার এখন বিবাহিত। সুখী পুরুষ। কিন্তু অফিসের কেবিনের মধ্যে ও যে তার স্যার এর প্রেম পায় তা নাফিস বুঝে উঠতে পারেনি । নাফিস গিয়ে বসতে নিলে তূর্য ইশারায় কাছে যেতে বললো। নাফিস পাশে গিয়ে দাড়াতেই তূর্য উঠে দাড়িয়ে নাফিসের ঘারের পেছনে দিয়ে হাত দিয়ে গলা জরিয়ে চেপে ধরলো ”

_তোমার কি খুব দরকার ছিলো এমন সময় আসার।

“নাফিস ঠোঁট চিপে হাসছে। এরপর বললো ”

_দুঃখিত স্যার। আমি আসলে ভুলে গিয়েছিলাম। আপনি বিবাহিত।

_তুমি আমার প্রেম এ কাবাব মে হাড্ডি হলে না নাফিস। শুধু বিয়েটা করো একবার। সব শোধ তুলবো আমি।

_কিন্তু স্যার আপনি তো আমার বড়। পড়ে আপনি ই লজ্জায় পড়ে যাবেন তো।

_দরকার হলে আমার বাচ্চা দিয়ে হলে ও তোমার বাসর ঘরে আমি অশান্তি লাগাবো।

“তূর্য আর নাফিসের খুনসুটি চলতে থাকলো। নাফিস আজ হেসেছে ও। তার সেই বিয়ে করতে না চাওয়া স্যার আজ যেখানে সেখানে কনট্রোল হারাচ্ছে। জীবনে একটু না হাসা তূর্য এখন বেশ মজার মানুষ হয়ে ধরা দিয়েছে আপনজনদের কাছে। নাফিস আজকাল বেশ অবাক হয়। সাথে খুশি ও হয়। তূর্য বদলেছে। অনেক বদলেছে। সবটা ই সম্ভব হয়েছে সায়রার জন্য। নাফিস তো আগেই ঘোষনা করে দিয়েছে। সায়রা খাতুন নাফিসের ছোট্ট বোন। সে সব ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করবে আজীবন ”

“সেদিন সামর্থ্য বেগম জানলেন তার আদরের নাফিস এক মেয়েকে পছন্দ করেছে। বিষয়টা তূর্য ই বলেছে।
সেই থেকে নাফিসের বউ দেখার জন্য পাগল হয়ে গেছে। নাফিসকে ও কল করেছে সামর্থ্য বেগম। যেনো সেই মেয়েকে নিয়ে তাদের বাড়িতে আসা হয়৷
সায়রা ও জেরিনকে বলেছে একবার আসতে। সময় বের করে এক শুক্রবার নাফিস জেরিনকে নিয়ে এলো সকাল বেলা। সারাদিন থাকবে। বিকেলে জেরিনকে বাড়ি পৌঁছে দিবে।
সায়রা সেই সকাল থেকে রান্না ঘরে ঢুকেছে। জেরিনের পছন্দের খাবার সাথে নাফিসের পছন্দের পায়েস তৈরি করতে। সায়রা এখন মোটামুটি বেশ সংসারী হয়ে উঠেছে এই কয়েকদিনে। এমনি সময় না পাড়লে বন্ধের দিনটা সায়রা তূর্যর পছন্দের রান্না করে। শাড়ি পড়ে গয়না পড়ে ঘুরে বেরায়। তূর্য এসব দেখে শুধু মুচকি হাসে। কয়েকদিন হলো তাদের সংসার এর। এর মধ্যে ই সায়রা সব গুছিয়ে নিয়েছে।
জেরিন এলো প্রথমবার এই বাড়িতে। নাফিস তো একা। সেখানে জেরিন যায়নি কখনো। নাফিসের ভাস্যমতে এটা তার সেকেন্ড হোম। জেরিন আসতেই সায়রা এসে ওকে নিয়ে গেলো সামর্থ্য বেগম এর কাছে। সামর্থ্য বেগম আগের থেকে এখন অনেকটা ই অসুস্থ থাকেন। রুম থেকে বের হননা খুব একটা৷ জেরিনকে দেখে তিনি বেশ খুশি হলেন। নাফিস আর তূর্য ও এলো। ওরা দরজার কাছে দাড়ানো। সামর্থ্য বেগম নাফিসকে উদ্দেশ্য করে বললো ”

_তোরা দুটোই দেখি বউ পাগলা হয়েছিস রে।

“নাফিস বললো ”

_আমি নই। আপনার নাতী ই বউ পাগলা।

“সামর্থ্য বেগম হেসে বললেন ”

_সে আর বলতে। বিয়ে করবো না আমি। বলে বলে এখন দেখ কেমন সংসারী হয়ে গেছে। তুই ও এমন হবি। বউ আমার ভীষণ ভালো লেগেছে।

“সামর্থ্য বেগম জেরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
এরপর দুপুর সময় পরযন্ত সায়রার সঙ্গে জেরিন রান্না ঘরে কাটিয়েছে। গল্প করে করে। দুই বান্ধুবি এক সঙ্গে। জেরিন সায়রাকে এভাবে আগে দেখেনি। শাড়ূ পড়েছে। গায়ে হালকা গয়না। চেহারায় এখন আলাদা একটা সৌন্দর্য এসেছে। জেরিন বলে উঠলো ”

_তোকে একেবারে গিন্নিদের মতো লাগছে সায়রা।

“সায়রা হেসে বললো ”

_সত্যি ?

_হুম। দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এতো সৌন্দর্যের রহস্য কি বল তো? তূর্য স্যার ভালোবাসা নাকি হু?

“কথাটা বলেই জেরিন হেসে উঠলো। সায়রা ও হাসলো। আসলেই কি তাকে গিন্নিদের মতো লাগে। সায়রা চায় তাকে বউ বউ লাগুক। সায়রার ভাবনার মাঝেই জেরিন হুট করে বলে উঠলো ”

_আমার মনে হচ্ছে তোর বাবু হবে সায়রা।

“জেরিন এর কথা শুনে সায়রা থমকে গেলো। বাবু হবে। এটা কি করে হয়। জেরিন কি পাগল হয়ো গেলো নাকি। সায়রা জেরিনের দিকে তাকালো। জেরিন বললো ”

_আরেহ্ এমনিই বললাম।

_আমার বিয়ের ই এক মাস হয়নি। পাগল হয়ে গেলি নাকি তুই।

“জেরিন হেসে ফেললো। আসলেই তো। বিয়ের ই তো এক মাস হয়নি। জেরিন হুট করে এই কথা বলে ফেললো।জেরিন ফের বললো ”

_আমার নানি বলতো। মেয়েদের বাচ্চা পেটে আসলে মেয়েদের কারো চেহারা ভেঙে যায় বা কারো অনেক সুন্দর হয়ে উঠে। তোকে দেখে কেনো যেনো সেই কথাটা মনে পড়লো। তাই বলে ফেলেছি।

“সায়রা হাসলো শুধু। জেরিনের সাথে আরো টুকটাক কথা বললে ও সায়রার মাথায় কেনো যনো বাচ্চার চিন্তা রয়ে গেলো।সায়রা মা হবে। ইস৷ এমন যদি সত্যি ই হতো। কিন্তু এটা কি সম্ভব। তূর্য তো কখনো বাচ্চা নিয়ে কিছু বলেনি সায়রাকে। তূর্যর কি বাচ্চা পছন্দ না। একদিন জিজ্ঞেস করবে সায়রা।
সারাদিন জেরিন আর নাফিস রইলো। এক সঙ্গে খাওয়া দাওয়া করলো। বিকেলে ছাদে গিয়ে এক সঙ্গে চা খেলো। জেরিন অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি তুললো এক সঙ্গে। কিছু ছবি গ্রুপ ছবি ও ছিলো। সন্ধায় জেরিন ওরা চলে গেলো। সারাদিন এর ক্লান্তি কাটাতে সায়রা ঘরে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। তূর্য একটু পড়েই রুমে এসেছে। সায়রাকে এভাবে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে থাকতে দেখে আর কিছু বললো না। সারাদিন অনেক কিছু করেছে মেয়েটা। এখন রেস্ট নিক ”

“রুহানি এসেছে আজ একজনের সঙ্গে দেখা করতে। বেশ কয়েকদিন ধরে মানুষটার সাথে রুহানির যোগাযোগ। তবে যেখানে দেখা করতে এসেছে। রুহানি এখানে কখনোই আসেনি৷ কেমন চিপা গলি। রুহানি একাই এসেছে। গাড়ি ও এই রাস্তায় ঢুকবে না৷ তবুও রুহানি এই লোকের সঙ্গে দেখা করবে। এই লোককে যে এখন ভীষণ দরকার রুহানির৷
অনেকটা পথ হেটে এসে রুহানি সেই কাঙ্ক্ষিত ডেরা টা পেলো। যেখানে আগে থেকেই কয়েকজন ছেলে পেলে দাড়িয়ে ছিলো। এই মহল্লা একটা নিষিদ্ধ মহল্লা বলা চলে। রুহানি ডেরায় ঢোকার আগেই একজন ছেলে পথ আটাকে দাঁড়ালো ”

_কাকে চাই ?

“রুহানি নাম বললো। লোকটা পথ ছেড়ে দিলো। রুহানি ডেরার ভেতরে ঢুকলো। এখানে আসলে কি হয় কে জানে। ভেতরে আরো কয়েকজন বসে। রুহানি সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে চিনতে পাড়লো না। শুধু নামটা ই জানে। ওখানে থেকে একজন বাকিদের বেরিয়ে যেতে বললো। রুহানিকে উদ্দেশ্য করে বললো ”

_আসুন আসুন রুহানি ম্যাডাম।

_আপনি ই ওই লোক ?

“লোকটা হেসে ফেললো কেমন করে যেনো। পরপর বললো ”

_কেন মনে হচ্ছে না ?

_নাহ্। তবে সেটা বড় বিষয় নয়। কাজটা ই বড় বিষয়।

_যথার্থ বলেছেন। বসুন, বসে আলাপ সারি।

“রুহানি বসলো। লোকটাকে তার মন্দ মনে হচ্ছে না৷ এই লোক ই পারবে তার কাজ করতে।
লোকটা দুটো চা আনতে বললো একজনকে। রুহানি যে আশা নিয়ে এসেছে তা পূরন হলেই সে খুশি ”

“ওখান থেকে রুহানি ফিরেছে কিছুক্ষন আগে। সোজা বাড়ি এসেছে। এরপর বসেছে বারান্দায়। মদের বোতল নিয়ে। মনটা তো তূর্য অশান্ত করে তুলেছে তার। শান্ত করবে কে। রুহানি মদ গ্লাস এ ঢেলে হাতে নিয়ে আড়াম করে বসলো। আজকাল জীবনের উপর ভীষণ হাসি পায় তার। ইচ্ছে করে সব কিছুতে আগুন লাগিয়ে দিতে।
রুহানি কয়েক ঢোক মদ গিললো। এরপর ফোন হাতে নিয়ে ঢুকলো ফেসবুকে। তূর্যর ছবি দেখবে। একটু তো শান্তি লাগবে। কিন্তু ফেসবুকে ঢুকে রুহানির মাথায় আরে আগুন ধরে গেলো। তূর্য একটু আগেই ওর রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস ম্যারিড দিয়েছে। সাথে উইথ সায়রা আজমীর দিয়েছে। রুহানি চেয়ে রইলো। এতো পরিবর্তন। এতো। তূর্যকে সে কখনো পরিবর্তন করতে পারেনি৷ কি করেনি রুহানি তূর্যর জন্য। এই প্রতিদান পাচ্ছে। তূর্যর আশেপাশে থেকেছে। কই তূর্য তো চেয়ে ও দেখিনি ওর দিকে। সায়রা কি রুহানির থেকে সুন্দর? রুহানির থেকে ও ভালো ফ্যামিলির। নাকি এসব কিছুই ওই মেয়ের চাল।
ধংস করে দেবে রুহানি। সব কিছু শেষ করে দেবে। রুহানি একা বসে বসেই পাগলের মতো হাসতে লাগলো। এতো কষ্ট কেন হচ্ছে। কেন ? এই কষ্ট রুহানি কেন পাবে। সায়রা পাবে এই কষ্ট। রুহানি শুরু থেকে ছিলো। সায়রা উড়ে এসেছে। রুহানি আবার ওই মেয়েকে উড়িয়ে দেবো। ভস্ম করে দেবে ”

চলবে,,